ইরাকের একটি জলাধারে খরার কারণে জলতল নেমে যাওয়ায় জেগে উঠল একটি প্রাচীন প্রাসাদ। একে তো দীর্ঘ দিন ধরে বৃষ্টি নেই, অন্যদিকে মসুল ড্যামের জল ছেড়ে দেওয়ার জন্য জলাধার শুকিয়ে উদ্ধার হল মিত্তানি সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। ১৯৮০ সালে যখন মসুল ড্যামটি তৈরি হয়, তখনই এক ভয়াবহ বন্যায় এই অঞ্চলটি ডুবে জলের তলায় চলে গিয়েছিল। তাই এত কাল আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষটির ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর সুযোগ পাননি প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জার্মানি এবং ইরাকের কুর্দিস্তান থেকে সম্প্রতি একটি খননকারী দল এসে খুঁড়ে বের করেছেন এই প্রাসাদের মধ্যকার বিভিন্ন ঘর, দেওয়াল চিত্র, মাটির ফলক।
একটি মাটির চাকতির ওপর পাওয়া গেছে কীললাকার বা কিউনিফর্ম লিপি, যা থেকে জানা যাচ্ছে ওই প্রাসাদটির নির্মাণ স্থলের নাম আর সময়। ‘কেমুন’ নাম এই অঞ্চলটির। সময় ১৮০০ খ্রিষ্টপূর্ব অর্থাৎ মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ। কুর্দিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আহমেদ কাসিম জানিয়েছেন, ‘বিগত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। আমরা ২০১০ সালেই এটি প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম, ড্যামের জলতল কম ছিল বলে, কিন্তু খনন কাজটি এখন শুরু করা গেল’।

টিউবিগেন ইন্সটিটিউট ফর এনসিয়েন্ট নিয়ার ইস্টার্ন স্টাডিজ-এর ইভানা পুলজিজ জানিয়েছেন, ‘আমরা দেওয়াল চিত্রের কিছু ভগ্নাবশেষ পেয়েছি, খুব রঙিন সেগুলি, লাল আর নীলের শেডে বেশিরভাগ কাজ’। খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে এরকম দেওয়াল চিত্র রাজপ্রাসাদগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। কিন্তু সেগুলি সংরক্ষিত অবস্থায় খুব কমই পাওয়া গেছে। সেজন্যই কেমুনের এই দেওয়াল চিত্রগুলো আবিষ্কার করে স্বভাবতই উত্তেজিত প্রত্নতত্ত্ববিদরা। পশ্চিম এশিয়ার এই মিত্তানি সাম্রাজ্য নিয়ে ইতিপূর্বে প্রায় কোনও গবেষণাই হয়নি বললেই চলে। মিত্তানি সাম্রাজ্য সময়কালীন স্থাপত্যের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় সিরিয়ার টেল বার্ক এবং নুজি ও আলালাখ শহর থেকে। মিত্তানি সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল তাও জানা যায় নি। অনুমান করে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই আপাতত। তবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যোগ করবে এই অঞ্চলের ইতিহাস গবেষণার কাজেও