Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উত্তমকুমারকে নিয়ে বাংলায় ‘আনন্দ’ করতে চেয়েছিলেন হৃষীকেশ মুখার্জী

সোমনাথ রায়

জুলাই ২৪, ২০২০

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সত্যজিৎ রায়ের প্রথম যে ছবিটিতে উত্তমকুমারকে নায়ক হিসাবে আমরা দেখেছিলাম তার নামও ছিল ‘নায়ক’ (১৯৬৬)। কিন্তু তারও আগে সত্যজিৎ রায়ের একটি ছবিতে উত্তমকুমারের অভিনয় করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ‘পথের পাঁচালী’ করারও আগে থেকে নানা সময়ে সত্যজিৎ রায়ের মনে রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’ নিয়ে একটি ছবি করার ইচ্ছে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যেত। নানা কারণে সেই সময়ে ছবিটি আর করা হয়নি সত্যজিৎ রায়ের। ‘অপরাজিত’ ছবির শ্যুটিং –এর সময় পা ভেঙ্গে কিছুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন সত্যজিৎ। তখন একবার অসুস্থ সত্যজিৎকে দেখতে এসেছিলেন উত্তমকুমার। সেই সময় তাঁকে ‘ঘরে বাইরে’ ছবিটি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেন সত্যজিৎ এবং সন্দীপ -এর ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। নিখিলেশ -এর ভূমিকায় থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উত্তমকুমারের মনে হয়েছিল সন্দীপ চরিত্রটি ভিলেনের। তাই কিছুদিন বাদে তিনি তাঁর অসম্মতি জানিয়ে দেন। একটি দারুণ ছবির সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। 

দায়ী কে ছবির বিজ্ঞাপন

ঠিক এই রকমই আরএকটা সম্ভাবনাও অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে গেছিল হৃষীকেশ মুখার্জীর একটি ছবির সঙ্গে। ‘আনন্দ সংবাদ’ বলে একটা বাংলা ছবি করবেন বলে ঠিক করেন হৃষীকেশবাবু। তাঁরই লেখা কাহিনি। ছবির মুখ্য দুই চরিত্রে তিনি ভেবেছিলেন উত্তমকুমার ও রাজ কপূরকে। বাংলা ছবির এক বুকলেটের চতুর্থ পৃষ্ঠায় ছবিটার একটি প্রাথমিক বিজ্ঞাপনও বেরিয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত হিন্দিতেই ছবিটা করতে মনস্থ করেন হৃষীকেশবাবু—‘আনন্দ’ নামে। তখন এই দুই শিল্পীর পরিবর্তে আসেন রাজেশ খান্না এবং অমিতাভ বচ্চন। সে অন্য এক গল্প। উত্তমকুমারের না-হওয়া অন্যান্য ছবির হদিশ দেওয়ার আগে ফিল্ম বুকলেট সম্বন্ধে দু চার কথা বলে নেওয়া দরকার। সে যুগে সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটররা প্রত্যেক ছবির একটা করে বুকলেট ছাপাতেন, যেটা ফিল্ম চলাকালীন হলে হাফটাইমে বিক্রি হত। তাতে কলাকুশলীদের নাম, প্রযোজক পরিচালকের পরিচয় ছাড়াও থাকত ছবির সবকটা গানের লিরিক। কোনও ছবির গান খুব হিট হলে পরে স্বরলিপিও প্রকাশ করা হত। যেমন হয়েছিল মুক্তি, কুহক এসব ছবির ক্ষেত্রে। এইসব বুকলেটেই ডিস্ট্রিবিউটরের আগামী কিছু ছবির বিজ্ঞাপন দেওয়া থাকত। এই লেখায় আমরা বেশ কিছু বুকলেটের কথা বলব এবং ছবি দেখব।

শারদীয়া উল্টোরথে ইন্দ্রধনুর বিজ্ঞাপন

প্রয়াত অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের একবার ইচ্ছা হয়েছিল একটি বাংলা ছবি পরিচালনা করার। নিজের তৈরি এক কাহিনিসূত্র ‘হব ইতিহাস’ অবলম্বনে চিত্রনাট্য রচনা করে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য উত্তমকুমারকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন শুভেন্দুবাবু। উত্তমকুমার প্রাথমিক ভাবে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু এক অজানা কারণে (সম্ভবত প্রযোজক না পাওয়ায়) কাজ এগোয়নি। উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর এই কাহিনিসূত্র অবলম্বনেই প্রয়াত পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী তাঁর প্রথম ছবিটি পরিচালনা করেন। সেই ছবির নাম — ‘শত্রু’। উত্তমকুমারের যে চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রঞ্জিত মল্লিক।

[the_ad id=”266918″]

উপরের তিনটে ছবিই পরিকল্পনার স্তরে রয়ে গিয়েছিল। ভাবনা থেকে চিত্রনাট্যে বাস্তবায়িত হয়ে আর্ক লাইটের মুখোমুখি হতে পারেনি। কিন্তু এমন বেশ কিছু ছবিতে উত্তমকুমারের অভিনয় করার সম্ভাবনা ছিল যেগুলো শুধুমাত্র পরিকল্পনার স্তরেই আবদ্ধ থাকেনি। কিছু ছবির আগাম বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল এবং কিছু ছবি শ্যুটিং ফ্লোরেও পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর বিবিধ সব কারণে – যার মধ্যে প্রধান অর্থাভাব, ছবিগুলি তৈরির কোনও না কোনও অধ্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। বলা যায় তাদের অকালমৃত্যু ঘটে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলে নেওয়া ভাল। ছবিগুলির অকালমৃত্যুর জন্য কোনওভাবেই উত্তমকুমারকে দায়ী করা চলে না। তাঁর একটা ঐকান্তিক চেষ্টা থাকত ছবিগুলিকে সম্পূর্ণ করার। কিন্তু তাঁরও কিছু দায়বদ্ধতা ও চেষ্টার সীমাবদ্ধতা ছিল। 

প্রথমে উত্তম-সুচিত্রাকে শ্রেষ্ঠাংশে রাখা অসমাপ্ত ছবিগুলির কথা বলি। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সত্তরের দশকের প্রথমার্ধ অবধি বাংলা ছবির জগতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি ছিল সেরা বাজি। এই দুজনকে নায়ক নায়িকা ভেবে ছবি করতে গিয়ে তা অসমাপ্ত থেকে যাওয়া ছিল খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে প্রদত্ত বিজ্ঞাপন এবং সেকালের পত্রিকাগুলি থেকে  জানা যাচ্ছে যে এমন আশ্চর্য ঘটনা চার চারবার ঘটেছিল। এদের মধ্যে একটা ছবি শুধু বিজ্ঞাপনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, শ্যুটিং-এর কাজও এগিয়ে গিয়েছিল। 

১৯৫৩ থেকে ১৯৭৫ অবধি ২২ বছরের লম্বা সফরে উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত মোট ছবির সংখ্যা ৩০। এর চেয়ে বেশি ছবি উত্তমকুমার করেছিলেন অন্য দুই নায়িকার সঙ্গে – সুপ্রিয়া চৌধুরী (৩৩) এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (৩৩)। অথচ উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ছবির সংখ্যা হতে পারত ৩৪। উত্তম-সুচিত্রা জুটির হিট ছবিগুলির অধিকাংশই মুক্তি পেয়েছিল পঞ্চাশ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে। এটা যখনকার কথা তখন  পোস্টারে উত্তম-সুচিত্রা নয়, সুচিত্রা-উত্তম লেখা হত। তারই আশেপাশের সময়ে দু-তিন বছরের মধ্যে এই জুটির আরও চারটে ছবি তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। 

এটা তখনকার কথা যখন পোস্টারে সুচিত্রা-উত্তম লেখা হত

এর মধ্যে প্রথম ছবির পরিকল্পনা হয় ১৯৫৪ সালে। ছবির নাম – ‘দায়ী কে’। শ্যুটিংও কিছুটা এগিয়েছিল। তার থেকে একটি ভিতর দৃশ্য ছবির প্রচারের জন্য ‘রূপাঞ্জলী’ পত্রিকায় পাঠান হয়েছিল (খবর সহ)। পত্রিকার ২৩.০১.১৯৫৫ সংখ্যায় ‘ছায়ালোকের সংবাদ’ বিভাগে ‘দায়ী কে’ ছবিটি সম্বন্ধে জানান হয়েছিল: “ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে গৌড়ীয় চিত্রপীঠ লিমিটেডের আগামী আকর্ষণ ‘দায়ী কে’ হিতেন মজুমদারের পরিচালনায় এবং এম মাতিনের প্রযোজনায় দ্রুত সমাপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। কাহিনিকার শ্রী সুধীর রায় সমাজের বুকে বিভিন্ন রকম নিষ্ঠুর অপরাধের অন্য দায়ী কে তারই এক চমৎকার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন এই নির্মিয়মান চিত্রে। বিভিন্ন ভূমিকায় ধীরাজ ভট্টাচার্য, উত্তমকুমার, শিশির মিত্র, বেড়ু সিংহ, জহর রায়, সুচিত্রা সেন, জয়শ্রী, নমিতা, সুমনা, মঞ্জু ও আরও অনেকে রয়েছেন। রাজেন সরকার ‘দায়ী কে’ –র সংগীত পরিচালনা করছেন। এতদূর এগিয়েও ছবিটি আর সম্পূর্ণ হয়নি। উত্তম-সুচিত্রার সোনার জুটি ছবিতে থাকা সত্ত্বেও প্রযোজক যে কেন প্রায় নিশ্চিত বাণিজ্যিক সাফল্য হাতছাড়া করেছিলেন তা কে জানে!

উত্তম-সাবিত্রীর সবার শেষে ছবির বিজ্ঞাপন

সিনে সাহিত্য পত্রিকায় প্রদত্ত বিজ্ঞাপন থেকে উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে দ্বিতীয় যে ছবিটির অঙ্কুরিত হবার খবর পাওয়া গিয়েছিল তার নাম— ‘ইন্দ্রধনু’। এই ছবিটি সম্বন্ধে বিশদে কোনও তথ্য পাইনি। শুধু ১৯৫৮ সালের শারদীয়া উল্টোরথে এই ছবির একটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছিল উত্তম-সুচিত্রার মুখের ছবি। ডিউপ করা ছবিতে ডার্ক আউটলাইন দেওয়া। বিজ্ঞাপনে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে দীপক বসুর প্রযোজনা ও  পরিচালনায় এই ছবি তৈরি হতে চলেছে। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন রবীন চট্টোপাধ্যায়। অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল পাহাড়ী সান্যাল, অসিতবরণ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজরী গুহ প্রভৃতিদের। 

সিনে পত্রিকা ছাড়া ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে প্রদত্ত বিজ্ঞাপন থেকেও উত্তম-সুচিত্রার আরও দুটি ছবির সম্ভাবনার কথা জানা যায়। যে দুটি ছবির বুকলেটের প্রচ্ছদে (৪র্থ) উত্তম-সুচিত্রার ছবির (সম্ভাব্য) বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হিয়েছিল সেই দুটি ছবি ‘ভোলা মাস্টার’ এবং ‘অন্তরীক্ষ’ যথাক্রমে ১৯৫৬ এবং ১৯৫৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল। আগেই বলেছি, সময়টা ছিল উত্তম-সুচিত্রা জুটির স্বর্ণযুগ। যে ছবিই মুক্তি পাক না কেন হয় হিট, নয়ত সুপারহিট হবেই। প্রযোজক-পরিচালকরা সেই সম্ভাব্য বাণিজ্যিক সাফল্যের সুযোগ নেবেন সেটাই স্বাভাবিক। 

নমস্কার ছবির সচিত্র বিজ্ঞাপন

‘ভোলা মাস্টার’ ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে উত্তম-সুচিত্রার যে ছবিটির কথা বিজ্ঞাপিত হয়েছিল তার নাম— ‘মর্ত্যের মৃত্তিকা’। চতুর্থ প্রচ্ছদে মোট সাতটি ছবির কথা বিজ্ঞাপিত হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম এই ‘মর্ত্যের মৃত্তিকা’। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ‘ভোলা মাস্টার’ ছাড়াও আরও কয়েকটি বাংলা ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে এই একই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল। তিন লাইনের বিজ্ঞাপনে অতি সাদামাটাভাবে জানান হয়েছিল যে, সুধীর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মর্ত্যের মৃত্তিকা’ ছবিটি উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনের অনুপম অভিনয় নৈপুণ্যে ভাস্বর। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। 

আর ‘অন্তরীক্ষ’ ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে উত্তম-সুচিত্রার আরও একটি সম্ভাব্য ছবির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল যার নাম— ‘স্বাগতম’। প্রচ্ছদে যে চারটি ছবির নাম বিজ্ঞাপিত হয়েছিল তার মধ্যে তিনটিই উত্তম-সুচিত্রা জুটির ছবি। এর মধ্যে দুটি ‘চন্দ্রনাথ’ এবং ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ সম্পূর্ণ হয়ে যথা নিয়মে মুক্তি লাভ করেছিল। কিন্তু তৃতীয় ছবি ‘স্বাগতম’ অসম্পূর্ণ এবং অসমাপ্তই থেকে যায়। অবশ্য ছবির বিজ্ঞাপনেও বেশি কিছু তথ্য ছিল না। নায়ক-নায়িকার নাম ছাড়া শুধু পরিচালক হিসেবে ‘অগ্রগামী’ –র নাম উল্লিখিত ছিল। 

চন্দ্রনাথ, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত এবং স্বাগতম ছবির বিজ্ঞাপন

বাকি যে অসমাপ্ত ছবিগুলির খোঁজ পাওয়া গেছে সেগুলিতে বিস্তারিত তথ্য খুব একটা ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে শুধু নায়িকার নাম, কিছু ছবির নায়িকাসহ অন্যান্য সহশিল্পীদের নাম এবং কিছু ছবির পরিচালকের নামের উল্লেখ পাওয়া গেছে। এমন বিজ্ঞাপনও পাওয়া যায় যেখানে উত্তমকুমারের নাম ছাড়া আর কোনও কিছুর উল্লেখ নেই। এর মধ্যে আবার একটি ছবি তৈরি সমাপ্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সেই ছবিতে উত্তমকুমার আর অভিনয় করেননি। যেমন, ‘কালস্রোত’ (১৯৬৪) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে চারটি ছবির বিজ্ঞাপনের মধ্যে একটির নাম ছিল উত্তমকুমার-কালী বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত ‘চৈতালী’—পরিচালনায় সুধীর মুখোপাধ্যায় এবং সংগীত পরিচালনায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। পরবর্তিকালে ছবিতে বিশ্বজিৎ-তনুজা জুটিকে দেখা যায়। পরিচালক এক থাকলেও নতুন সঙ্গীত পরিচালক হয়েছিলেন শচীন দেব বর্মন।

‘বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’ (১৯৭২) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদেও এই ধরনের আরএকটি ছবির প্রাথমিক বিজ্ঞাপন ছিল। সলিল সেন পরিচালিত ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় উত্তক কুমার। বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে চন্ডীমাতা ফিল্মসের আরও তিনটি ছবির বিজ্ঞাপন ছিল– অভিনেতা এবং পরিচালকের উল্লেখ সহ। সেই ছবিগুলি যথাযথভাবে মুক্তি পেলেও ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে উত্তমকুমারের জায়গায় অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং নায়িকার চরিত্রে অপর্ণা সেন। ‘রাণী রাসমণি’ (১৯৫৮) ছবির চতুর্থ বুকলেটের প্রচ্ছদে কানন দেবী ও উত্তমকুমার অভিনীত শ্রীমতী পিকচার্সের ‘দেবত্র’ (মুক্তি লাভ করেছিল) ছবির পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনের ডান পাশে ছোট করে ‘ছায়া সঙ্গিনী’ ছবির বিজ্ঞাপনে শিল্পী তালিকায় উত্তমকুমারের নামও ছিল। ছবিটি মুক্তি লাভ করলেও ছবিতে শেষ পর্যন্ত উত্তমকুমার আর ছিলেন না। 

[the_ad id=”266919″]

এরকমই একটা গোলমেলে কান্ড ঘটেছিল আরেকটি অসমাপ্ত ছবি ‘যমুনা কী তীর’ –এর বেলায়। ‘মা ও মেয়ে’ (১৯৬৯) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে পুরো পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে দেওয়া ছিল সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত, অনিল বাগচী সুরারোপিত এবং মহাশ্বেতা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ‘যমুনা কী তীর’ ছবির। নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় আছেন উত্তম-তনুজা। কিন্তু ‘সীমাবদ্ধ’ (১৯৭১) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে প্রদত্ত একই ছবির বিজ্ঞাপনে দেখা গেল অন্য সব কিছু এক থাকলেও নায়িকার ভূমিকায় তনুজার পরিবর্তে এসেছেন অপর্ণা সেন। তবে  শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়ে ওঠেনি। 

যমুনা কে তীর ছবির বিজ্ঞাপন

উত্তম-বাসবী অভিনীত এমনই এক না-হওয়া ছবির বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায় ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’ (১৯৫৮) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে। রাজকুমারী চিত্র মন্দির প্রযোজিত সেই ছবির পরিচালক ছিলেন মানু সেন। ছবির নাম ‘মুখোস’। অনুরূপভাবে তৈরি হয়নি প্রস্তাবিত নীরেন লাহিড়ী পরিচালিত এবং সন্তোষ মুখোপাধ্যায় সুরারোপিত, উত্তম-কাবেরী অভিনীত ন্যাশনাল সিনে কর্পোরেশনের ‘কান্ডার কথা ছবিটি। যার সচিত্র বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল ‘ধুমকেতু’ (১৯৫৮) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে। বিজ্ঞাপনের বহর দেখে মনে হয়েছিল ছবিটি হয়ত শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়ে মুক্তি পাবে। ‘বিল্বমঙ্গল’ (১৯৭৬) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে তিনটি ছবির বিজ্ঞাপন ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল উত্তম-সাবিত্রী অভিনীত ‘সবার শেষে’ ছবির বিজ্ঞাপন। এছাড়া ‘ওগো শুনছ’ (১৯৫৭) ছবির বুকলেটের চতুর্থ প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়েছিল ‘নমস্কার স্যার’ ছবির সচিত্র বিজ্ঞাপন। শ্রেষ্ঠাংসে উত্তমকুমার। এই দুটোর একটাও তৈরি হয়নি।

উত্তম-বাসবীর মুখোস ছবির বিজ্ঞাপন

এবার একটি হিন্দি ছবির সম্ভাবনার কথা বলে এই প্রবন্ধের ইতি টানব। রাজ কাপুর যখন ‘সঙ্গম’ তৈরি করেন তখন রাজেন্দ্র কুমার অভিনীত ‘গোপাল’ চরিত্রটি তিনি উত্তমকুমারকে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু উত্তমকুমার সহনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হননি। এই প্রত্যাখ্যানে রাজ কাপুর খুব ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। শোনা যায়, ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবি প্রযোজনা করতে গিয়ে উত্তমকুমারকে বম্বের শিল্পী ও কুশীলবদের অসহযোগীতায় যে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তার পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন স্বয়ং রাজ কপুর।

সোমনাথ রায় 'এখন সত্যজিৎ' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে পুরনো বাংলা ছবি নিয়ে গবেষণা করেন। বাংলা ছবির পাবলিসিটি মেটিরিয়ালস নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করেছেন। 'হাসি গল্পে সত্যজিৎ' 'A Monograph on Hiralal Sen', 'সিনেমা ধাঁধা' ইত্যাদি একাধিক সিনেমা সম্বন্ধীয় বইয়ের লেখক। এছাড়া তিনি পুরনো ছবির ফিল্ম বুকলেটের সংগ্রাহক।

Picture of সোমনাথ রায়

সোমনাথ রায়

সোমনাথ রায় 'এখন সত্যজিৎ' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে পুরনো বাংলা ছবি নিয়ে গবেষণা করেন। বাংলা ছবির পাবলিসিটি মেটিরিয়ালস নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করেছেন। 'হাসি গল্পে সত্যজিৎ' 'A Monograph on Hiralal Sen', 'সিনেমা ধাঁধা' ইত্যাদি একাধিক সিনেমা সম্বন্ধীয় বইয়ের লেখক। এছাড়া তিনি পুরনো ছবির ফিল্ম বুকলেটের সংগ্রাহক।
Picture of সোমনাথ রায়

সোমনাথ রায়

সোমনাথ রায় 'এখন সত্যজিৎ' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে পুরনো বাংলা ছবি নিয়ে গবেষণা করেন। বাংলা ছবির পাবলিসিটি মেটিরিয়ালস নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করেছেন। 'হাসি গল্পে সত্যজিৎ' 'A Monograph on Hiralal Sen', 'সিনেমা ধাঁধা' ইত্যাদি একাধিক সিনেমা সম্বন্ধীয় বইয়ের লেখক। এছাড়া তিনি পুরনো ছবির ফিল্ম বুকলেটের সংগ্রাহক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস