বিয়ে মানেই জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক। না! এখন অবশ্য এই কথাটা আর মোটে খাটে না। এক জন্ম কেটে গেলেই অনেক। বিয়ে টিকিয়ে রাখাটা আজকের দুনিয়ায় একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। একে অপরকে বোঝা, পরস্পরকে সম্মান করে, মানিয়েগুছিয়ে চলা, যেগুলোকে এতকাল বিয়ের স্তম্ভ বলে মনা করা হত, তা এখনই শুধুমাত্র খাতায়-কলমেই থেকে গেছে। এখন তো স্বামী নাক ডাকলেও ডিভোর্স, স্ত্রী রান্না করতে পারে না বলে ছাড়াছাড়ি। ব্য়াপারটা অনেকটা ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ থুড়ি ‘ডিভোর্স চাই’। সম্পর্কের জটিলতা ডিভোর্সের আধার হতেই পারে, কিন্তু চা বানাতে অস্বীকার করায়, ডিভোর্স হয়েছে এরকম ঘটনা কখনও শুনেছেন কি? অবাক হবে না, তালিকায় আরও আছে। সারা পৃথিবীতে তো বটেই, ভারতবর্ষেও আজগুবি কারণে ডিভোর্সের কেস আছে।
১। স্বামী বড় কেয়ারিং
স্বামী আমার বড্ড ভাল। খুব খেয়াল রাখে। সর্বদা আমাকে খুশি করতে চায়। এমন স্বামী নিয়ে গদগদ হওয়ারই কথা। কিন্তু কোথায় কী! স্বামীর এত বেশি ভালবাসা নাকি সহ্য হত না আমিরশাহির এক মহিলার। ওঁর অভিযোগ স্বামী ভীষণ বেশি ভালবাসেন। কখনও ঝগড়া করেন না। এমনকী বাড়ির কাজেও সাহায্য করেন। রান্নাবান্না করেন। উপরন্তু ওঁকে সব সময় উপহার দেন। আর এতেই নাকি বেজায় চটেছেন তিনি। ভালবাসার জেরে নাকি তাঁর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এক বছরের বিয়েতে এই দম বন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি চান। ডিভোর্স ছাড়া তাই আর কোনও গতি নেই। বুঝুন ঠেলা! সিংহভাগ মহিলারা যখন স্বামীর মনোযোগ পান না বলে নালিশ করেন, ইনি আবার একেবারেই উল্টো। স্বামী বেচারা পারফেক্ট হওয়ার চক্করে সোজা হাজির হতে হল কাঠগড়ায়!
২। ডিভোর্সের কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প
২২ বছরের সম্পর্ক। রাতারাতি তাতে দাঁড়ি টানলেন গেল ম্যাককরনিক। ৭৩ বছরের মহিলার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক বেশ ভালই ছিল। কিন্তু যে দিন জানতে পারলেন যে স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিতে চলেছেন, আর কোনও কথা বাড়াননি। ওঁর মনে হল এতগুলো বছর ওঁর স্বামী ওঁকে ঠকিয়েছেন, মিথ্য়ে প্রতারণা করেছেন। এমন দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়ে সোজা ডিভোর্সের সিদ্ধান্তই নিলেন তিনি।
এই তালিকায় আরও এক জন আছেন। হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কমিউনিকেশন ডিরেকক্টর অ্যানথনি স্কারমুক্কির স্ত্রী যেদিন জানতে পারলেন যে তাঁর স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করবেন, সেদিনই ডিভোর্সের আর্জি পেশ করেন আদালতে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ আছে জানা ছিল, কিন্তু তাতে যে বিয়ের সম্পর্কে ইতি পড়তে পারে, তা বোধহয় কেউ কল্পানতেও আন্দাজ করতে পারেননি।
৩। ‘ফ্রোজেন’ ম্যারেজ
শীতল সম্পর্ক বা সম্পর্কে উষ্ণতার আমেজ নেই, এই ধরনের অভিযোগ এনে ডিভোর্স করার ঘটনা প্রচুর। কিন্তু স্বামীর সিনেমা পছন্দ হয়নি বলে ডিভোর্স করেছেন স্ত্রী, এইটা নিশ্চয় আগে শোনেননি। ঘটনাটি ঘটেছে জাপানে। আর এর কেন্দ্রে আছে ‘ফ্রোজেন’ সিনেমাটি। বন্ধুদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে স্ত্রী একাধিকবার ফ্রোজেন ছবিটি হলে দেখেছিলেন> কিন্তু চাইছিলেন যে স্বামীকও সেই ছবি দেখুন। বহু কষ্ট করে স্বামীকে অ্য়ানিমেটেড সিনেমাটি দেখান উনি। কিন্তু হল থেকে বেরিয়ে স্বামী জানান, সিনেমাটি সেরকম কিছু নয়। মাঝারি মানের। ব্যাস আর যায় কোথায়! স্ত্রী তো পুরো রেগে কাঁই। ওঁর অভিযোগ যে স্বামী ফ্রোজেনের মতো সিনেমা ভালবাসতে পারেন না, তিনি মানুষটাই ভুল। রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন।
৪। স্ত্রীর ব্রণ অসহ্য
ব্রণ নিয়ে অনেক মহিলাই অসন্তুষ্ট, বিরক্ত। কিন্তু তার কারণে যে ডিভোর্স হতে পারে তা কিন্তু ভাবাই যায় না। ঘটনাটি ঘটেছে মুম্বই শহরেই। সম্বন্ধ করে বিয়ে করার পর স্বামী-স্ত্রী রওনা দেন হনিমুনে। ওখানে গিয়ে স্বামী দেখেন, স্ত্রীয়ের মুখের আশেপেশা যখন তখন ব্রণ বেরচ্ছে। তা দেখেই স্বামীর নাকি সাংঘাতিক অস্বস্তি হতে শুরু করে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, স্ত্রী-এর ‘একনে ভালগারিস’ (ত্বকের সমস্যা) আছে। এর পর নাকি আর একটিও মুহূর্তে নষ্ট করেননি স্বামী। স্ত্রীর মুখের দিকে নাকি উনি তাকাতেই পারেন না, এই অভিযোগে ডিভোর্সের কেস দায়ের করেন।
৫। মাতৃভাষায় কথা বলা বারণ
স্ত্রী দক্ষিণ ভারতীয়, স্বামী উত্তর ভারতের বাসিন্দা। আলাপ, প্রেম তারপর বিয়ে। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, যেন মিষ্টি কোনও প্রেমের ছবি। কিন্তু বাঁধ সাধল ভাষা। না স্বামী-স্ত্রী-র মধ্যে কমিউনিকেশন বেজায় মজবুত। কিন্তু স্বামী নাকি পারবারিক ডাক্তার আর চার্টাড অ্য়াকাউনটেন্টের সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলতেন। আর তাতেই আপত্তি জানান স্ত্রী। ডাক্তার আর সিএ পাল্টে ফেলতে বলেন। স্বামী রাজি হননি। ফলে স্ত্রী আর স্বামীর সঙ্গে না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তলিপতল্পা গুটিয়ে ফিরে যান নিজের বাড়ি আর ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন।
৬। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি
নতুন বিয়ে। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত কনে। আর তার জেরেই যত সমস্যা। বিয়ের দিন স্ন্যপচ্যাট ছবি প্রকাশ করেন কনে। স্বামী তাতে বেজায় রেগে যান। কারণ বিয়ের আগেই যে তাঁদের মধ্যে প্রিনাপ এগ্রিমেন্ট সাইন হয়ে গেছিল, যাতে লেখা ছিল স্ত্রী কোনও রকম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্য়াটফর্মে ব্যবহার করতে পারবেন না। টুইটার, ইনস্ট্যাগ্র্যাম বা স্ন্যাপচ্যাট-এ দিতে পারবেন না কোনও ছবি। কিন্তু আনন্দের চোটে স্ত্রী তা ভুলে যান। স্বামী অবশ্য মোটে কোনও শর্ত ভোলেননি। তাই যা হওয়ার তাই হল। ডিভোর্স ছাডা় আর কোনও উপায় রইল না এই দম্পতির কাছে।