
লকডাউনে ‘ঘর হইতে কাজ’ বা ‘ওয়র্ক ফ্রম হোম’ বলিয়া যে ধারণার উদ্ভব হইয়াছে, তাহা প্রকৃতপক্ষেই কর্মযোগীগণকে নাগা সাধুতে রূপান্তরিত করিয়াছে। একে তো লকডাউনে বিছানায় যাইবার এবং বিছানা ছাড়িবার সমস্ত রুটিন হ্যাঁচকাইয়া গোল পাকাইয়া আস্তাকুঁড়ে স্থান করিয়া লইয়াছে, তারই সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় যুক্ত হইয়াছে কাকভোর হইতে একের পর এক অনলাইন মিটিংসমূহ, যেখানে সমস্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, কী করিয়া জানা নাই, সর্বদাই সুটেড বুটেড হইয়া অধিষ্ঠিত থাকেন।
আমাদিগের ন্যায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটাণুসম কর্মিগণ হাঁচোড় পাঁচোড় করিয়া কোনওক্রমে শয্যাত্যাগ করিতে না করিতেই মুষ্টিফোন টিরিরিং টিরিরিং করিয়া জানাইয়া দেয়, মিটিংয়ের কাল সমাগত। এদিকে দন্তমঞ্জন, হস্তমুখ প্রক্ষালন, প্রাতঃকৃত্যাদি সকলই অর্ধপথে। কিন্তু যন্ত্রগণকের বোতাম টিপিতেই গুগলদেবী ঘন নীল বোতাম লইয়া দিপদিপ করিয়া কহিতে থাকেন ‘ক্লিক টু জয়েন!’ অর্থাৎ মিটিংয়ে যুক্ত হইবার নিমিত্র বৈদ্যুতিন ইঁদুরের বাম স্কন্ধে ক্লিক শব্দে টিপুন। অতঃপর অর্ধোলঙ্গ অবস্থায়, কোনওক্রমে ঊর্ধ্বাঙ্গে একটি ইস্ত্রিবিহীন কোঁচকানো শার্ট চাপাইয়া, নিম্নাঙ্গের লেঙ্গুটি ঢাকিতে ঢাকিতে কেদারায় অধিষ্ঠানপূর্বক ‘ক্লিক’ শব্দে কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করিতে হয়।
অনন্ত সে মিটিং আর অনন্ত সে বাক্যালাপ। নিম্নাঙ্গের পেন্টুল নামক কটিবস্ত্র কোমরবন্ধনী-সহ টেবিলতলে ন্যাতাজোবড়া হইয়া পড়িয়া থাকে। ঘড়ির কাঁটা আপনমনে আগাইয়া চলে। চা-প্রাতঃরাশের সময় বিগত হইয়া দ্বিপ্রহরের দিকে ধাবিত হয়। প্রাত্যহিক প্রাকৃতিক প্রয়োজনে ত্রাহিরব ছাড়িবার নিমিত্ত রসনা শুলশুল করিয়া উঠে। তবু গম্ভীর মুখে অকুণ্ঠ মনোযোগে নির্নিমেষ নেত্রে চাহিয়া থাকিতে হয় মিটিংরত আমারই ন্যায় হতভাগ্য কর্মিবর্গের দিকে। মনে মনে ভাবি, আমাদের নিমিত্তই কি কবি লিখিয়াছিলেন তাঁহার সেই অমোঘ পংক্তি: ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে!
শুভজিৎ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ফলিত কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠরত।বিভিন্ন ধরনের ইলাস্ট্রেশন, কার্টুন, ক্যারিকেচার, পোট্রেট ও অ্যানিমেশন পছন্দ করেন। অবসরযাপনেও এসব করতেই ভালবাসেন। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে পেশাদারিভাবে অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার।