(Bengali Novel)
পুরো এক সপ্তাহ ভাবার পর মোহনা সিদ্ধান্ত নিল, চৌধুরী সাহিত্য কুটিরের দায়িত্ব সে নেবে। কিন্তু তার আগে শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রতিষ্ঠানের পুরো ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে। আরেকটা কাজও করতে হবে। সেটা অবশ্যই নীরবে এবং গোপনে। বর্তমানে সংস্থার কতটা নাম অবশিষ্ট আছে, কারা কারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও কতদূর অবধি তাদের নেটওয়ার্ক ছড়ানো, সেগুলোর পুরো বিবরণ তার চাই। পাশাপাশি, বর্তমানে যে সব স্টাফেরা রয়েছেন, তাঁরা যোগ দিলে কী কী অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারেন, তাঁদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী এগুলোও জানা দরকার। (Bengali Novel)
অবশ্য এর জন্য, নিয়মিত আগে অফিস যাওয়া শুরু করতে হবে। যতই তিনি একটা কর্পোরেট সংস্থার রিজিওনাল হেড হোন না কেন, প্রকাশনা সংস্থা আর অন্যান্য ব্যবসার ক্যালকুলেশন এক নয়। সাহিত্য জগত এখনও কর্পোরেট নয়, এখানে মানুষ বিশ্বাস করেন লেখক, প্রকাশক দুজনেই একটা মহৎ কাজ করছেন। (Bengali Novel)
আরও পড়ুন: জলকে চল: প্রথম পর্ব
কদিন পর রাতে, খাবার টেবিলে মোহনাই প্রথম এই প্রসঙ্গ তুলল। এ বাড়িতে দিনে একসঙ্গে খাওয়া না হলেও রাতে তারা চারজন একসঙ্গে খেতে বসে। স্নেহলতা এই বিষয়ে ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। (Bengali Novel)
তিনি বলেন- আমি যখন এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলাম, তখন আর বয়স কত! তেরো-চোদ্দ। বাপের বাড়িতে দেখতাম, বাবা কাকা, জ্যেঠামশাইয়ের খাওয়া হলে বাচ্চারা খেত, সবশেষে বাড়ির বিবাহিত মহিলারা। মানে মা-কাকিমা–জ্যেঠিমা। তা সে কাকিমার বয়স যদি বারোও হয়, তাকেও শেষেই বসতে হবে। এটাই নাকি নিয়ম! আমার বিয়ের সময় মা-ও আমাকে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল। শাশুড়ি মা যখন খেতে বসবেন তখনই খেতে বসবি। তার আগে নয়। খিদে পেলে জল খেয়ে নিবি। (Bengali Novel)

আমিও সেইরকম ভাবেই মনকে প্রস্তুত করছিলাম। বিয়ে-বউভাত-অষ্টমঙ্গলা, লোকজন আত্মীয়-প্রতিবেশীতে বাড়ি ভর্তি। তারপর সবাই চলে গেল। বাড়ি প্রায় ফাঁকা। আমার শাশুড়ি ভাত বাড়তে বাড়তে আমাকে ডাকলেন। শ্বশুরের পাশের চেয়ারটা আমাকে দেখিয়ে বসতে বললেন। আমি ভাবছি এটা কোনও নিয়ম হবে। দেখি আমার সামনেও থালা রাখা। তখন তো কাঁসার বাসন ব্যবহার হত। আমার থালাতেও মা ভাত বেড়ে দিলেন। আমি বললাম- আমি আপনার সঙ্গে খাব। (Bengali Novel)
মোহনা স্নেহলতাকে থামিয়ে বলল- তোমার শাশুড়ি মানে বিরজা সুন্দরী দেবী?
-হ্যাঁ। আমার মা। যেমন সুন্দরী, তেমন বিদুষী। আর সবচেয়ে যেটা ভাল ছিল মায়ের, ওই সময় জন্মেও মায়ের কোনও কুসংস্কার ছিল না। সারদা মায়ের ভক্ত ছিলেন। মনে করতেন মেয়েরা শিক্ষিত হতে না পারলে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে না। (Bengali Novel)
“আমি মনে প্রাণে চাই বাড়ির মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে আমাদের মতো সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজের জগতে যুক্ত হোক। আমরা যত গ্রন্থ প্রকাশ করি তার প্রথম পাঠক কিন্তু তোমার শাশুড়ি মা। পান্ডুলিপিও তিনি দেখেন সবার প্রথমে।”
মোহনা লক্ষ করছিল মায়ের কথা বলার সময় অমিতবাবুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলল-
মা, বলো তারপর কী হল?
-তোমার শ্বশুর ঠিকই বলছেন, তোমাদের ঠাকুমা এমনই ছিলেন। যা বলছিলাম, আমার কথা শুনে তিনি হাসলেন। বললেন, “আমিও এখনই বসব। খালি ভাতটা আমি বেড়ে দিই। বাকি সব আশার মা বেড়ে দেবে।” (Bengali Novel)
আমি তো লজ্জায় জড়সড় হয়ে গেছি। আমাদের বাড়িতে মাটিতে আসন বিছিয়ে খাওয়ার চল। তাছাড়া বাবারা সবাই দালানে বসে খেলেও আমরা মেয়েরা রান্নাঘরেই খেতাম। আর এখানে একে টেবিল চেয়ার, তার ওপর আবার সবার সঙ্গে! বোঝো আমার অবস্থা! (Bengali Novel)
“মেয়েরা এ বাড়িতে পড়াশোনা করে! বই পড়ে! আমাকে তো বর্ণ পরিচয়ের পর আর পড়তেই দিত না ঠাকুমা। তারা কী অফিসে গিয়ে পুরুষ মানুষের মতো পয়সা রোজগার করতে পারবে!”
শেষ অবধি শ্বশুরমশাই বললেন- বউমা, আমরা সাহিত্য নিয়ে, মানে বই-পত্র নিয়ে কাজ করি। আমাদের প্রকাশনা থেকেই মেয়েদের শিক্ষা, বাল্য-বিবাহ প্রথা রোধ, বিধবা বিবাহ এসব নিয়ে একের পর এক গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। আমি মনে প্রাণে চাই বাড়ির মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে আমাদের মতো সমান দায়িত্ব নিয়ে কাজের জগতে যুক্ত হোক। আমরা যত গ্রন্থ প্রকাশ করি তার প্রথম পাঠক কিন্তু তোমার শাশুড়ি মা। পান্ডুলিপিও তিনি দেখেন সবার প্রথমে। তাঁর ভাল লাগলে তবেই আমরা সেটা নিয়ে এগোই। (Bengali Novel)
এসব শুনে আমি অবাক! মেয়েরা এ বাড়িতে পড়াশোনা করে! বই পড়ে! আমাকে তো বর্ণ পরিচয়ের পর আর পড়তেই দিত না ঠাকুমা। তারা কী অফিসে গিয়ে পুরুষ মানুষের মতো পয়সা রোজগার করতে পারবে! এত ধিঙ্গিপনা কোনও শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবার মেনে নেবে না। বেশি পড়লে পাত্রও পাওয়া যাবে না। শুধু শুধু অর্থের অপচয়। তার চেয়ে বাড়ির কাজ শেখা ঢের ভাল। বারো বছর বয়স অবধি এসবই শুনে এসেছি। আর এরা বলে কী না সমান হতে হবে! (Bengali Novel)
মোহনা শাশুড়ির কথা শুনছিল। ভদ্রমহিলা খুব সুন্দর করে গল্প বলতে পারেন। যেন ছবির মতো দৃশ্যগুলো সামনে ফুটে ওঠে। সে স্নেহলতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল- তাহলে তুমি বিয়ের আগে পড়াশোনা জানতে না? (Bengali Novel)
“সচরাচর আমাদের বাড়িতে আগে যত মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সবার কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছে রান্না, সেলাই, ঠাকুর ঘরের কাজ জানে কী না! আর ইনি জানতে চাইছেন কবিতা জানি কী না!”
-একেবারেই জানতাম না বললে মিথ্যে বলা হবে। অ আ… এসব লিখতে পড়তে পারতাম। বানান করে করে দাদাদের স্কুলের বই পড়তাম। অবশ্য ঠাকুমাকে লুকিয়ে। (Bengali Novel)
-এ বাড়ির লোকেরা, মানে তোমার শ্বশুরমশাই চৌধুরী সাহিত্য কুটিরের প্রতিষ্ঠাতা সুমিতবাবু জানতেন সে কথা?
-সবটা জানতেন না। আমাকে দেখতে এসে তিনি হাতের লেখা দেখতে আর একটা কবিতা শুনতে চেয়েছিলেন। সেটুকু আমি পারতাম। ঠাকুমা অবাক হয়েছিলেন তাঁর জিজ্ঞাসায়। সচরাচর আমাদের বাড়িতে আগে যত মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সবার কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছে রান্না, সেলাই, ঠাকুর ঘরের কাজ জানে কী না! আর ইনি জানতে চাইছেন কবিতা জানি কী না! বাবাকে বলেছিলেন, মেজো খোকা কলকাতায় বিয়ে দেওয়ার কথা ভেব না, যে বাড়িতে এসব প্রশ্ন করা হয় সেখানে আর যাই হোক ধর্ম কর্ম হয় না। বোঝাই যাচ্ছে এ ম্লেচ্ছ বংশ। (Bengali Novel)

মোহনা জিজ্ঞেস করল- তারপরেও এখানে বিয়ে দিলেন তোমার বাবা?
-বাবার খুব যে ইচ্ছে ছিল তা নয়, তিনি মা অন্ত প্রাণ ছিলেন। কিন্তু আমার মা, জ্যেঠিমা আর জ্যাঠামশাই সেই প্রথম ঠাকুমার মতের অমতে গেলেন। (Bengali Novel)
-মা-জ্যেঠিমার কথা শোনা হত তোমার বাড়িতে?
-একবারেই নয়। তবে জ্যাঠামশাই তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যকে যথেষ্ট গুরূত্ব দিতেন। তিনি জমিদার বাড়ির মেয়ে ছিলেন। তাঁর বাড়িতে পণ্ডিতমশাই আসতেন লেখা-পড়া শেখাতে। আমাদের সব ভাই বোনের অক্ষর জ্ঞান তাঁর হাত ধরেই। তিনি জেদ ধরে জ্যাঠামশাইকে বললেন- স্নেহর বিয়ে এই বাড়িতেই হবে। আপনি মাকে রাজি করান। (Bengali Novel)
“প্রথম বই কার ছাপা হয়েছিল বল তো? এই গিরিবালা দেবীর। কেউ ভাবতেও পারেনি, ‘গিরিবালা দাসীর দিনলিপি’ এত জনপ্রিয় হবে।”
-ঠাকুমা রাজি হয়ে গেল?
-অত সহজে কী হয়? তবে বড় বউটিকে তিনিও একটু সমঝে চলতেন। জমিদারের মেয়ে, তাঁর বাপের বাড়ি থেকে প্রতি সপ্তাহের বাজার, চাল ডাল মাছ কাপড় আসে। রেগে গিয়ে বাপকে কখন বলে দেয় এই ভয় তাঁর ছিল। ফলে একপ্রকার বাধ্য হলেন, মেনে নিতে। (Bengali Novel)
আমিও এ বাড়ি এসে ধীরে ধীরে এঁদের মনের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। এই প্রতিষ্ঠান, শ্বশুরমশাই তাঁর ইচ্ছেতেই তৈরি করেছিলেন। তাঁর শাশুড়ি, চৌধুরী বাড়ির বড় গিন্নী, গিরিবালা দেবী, আমি তাঁকে চোখে দেখিনি, অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছিলেন দুটো সন্তান নিয়ে। একজন তোমার শ্বশুরের বাবা, আরেকজন জলে ডুবে মারা গিয়েছিল দশ বছর বয়সে। তিনি খুব কষ্ট করেই সামান্য কিছু জমিজমা থেকে পাওয়া অর্থে, ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। (Bengali Novel)
আমার শাশুড়ি যখন এ বাড়িতে বউ হয়ে এলেন তখন তিনি এগারো বছরের কিশোরী। তাঁর শাশুড়ি মা তাঁকে নানান গল্প বলতেন। আর আমার শাশুড়ি সেগুলো শুনে শুনে লিখে রাখতেন। গল্পগুলো শুনে তাঁর মনে হত এগুলো যেন তাঁরই ছোটবেলার গল্প। দুজনের খুব ভাবও ছিল। তখনকার দিনে খুব বসন্ত মানে পক্স রোগ হত। তাঁরও হল, তাতেই মারা গেলেন। এদিকে ছেলে তখন সবে কলেজ পাশ করে কিছু করবে ভাবছে। আমার শাশুড়ি তখন বুদ্ধি দিলেন একটা বইয়ের দোকান করো না কেন? (Bengali Novel)
আসলে শ্বশুরমশাই তখন নিজের পড়ার খরচ চালাবার জন্য সেই আমলের কিছু বিখ্যাত বইয়ের দোকান থেকে বই নিয়ে এসে ছাত্র, কলেজের মাস্টার মশাইদের কাছে বিক্রি করতেন। আর এর বিনিময়ে কিছু অর্থ পেতেন। এখন আমার শাশুড়ি বললেন, (Bengali Novel)
“তুমি বইয়ের দোকান দাও। আর নতুনদের লেখা ছাপাও।
-এর জন্য অনেক টাকা চাই বিরজা’
-আমার সোনার হারটা বন্ধক দাও। দোকান চললে ছাড়িয়ে নিও।”
“মোহনার কথায় যেন আকাশের চাঁদ পেলেন অমিতবাবু। যে স্বপ্নের সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল, তিনি না থাকলে কী হবে ভেবে তাঁর রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে মোহনার এই প্রস্তাবে তিনি যেন নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেলেন।”
প্রথম বই কার ছাপা হয়েছিল বল তো? এই গিরিবালা দেবীর। কেউ ভাবতেও পারেনি, ‘গিরিবালা দাসীর দিনলিপি’ এত জনপ্রিয় হবে। তারপর এক এক করে রাধারাণী দেবী থেকে শুরু করে অনেক নতুন লেখকদের লেখা ছাপা হল। ‘চৌধুরী সাহিত্য কুটির’ একটু একটু করে দাঁড়িয়ে গেল। সেসব দিন এখন আর নেই। সব কেমন যেন পালটে গেল চোখের সামনেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন স্নেহলতা। (Bengali Novel)
খানিক চুপ থাকার পর আবার বললেন–
শাশুড়ি মা আমাকে একেবারে গড়ে পিঠে নিয়েছিলেন। তিনি তো শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে পয়লা বৈশাখ দোকানেও যেতেন। পুজো পার্বণে কর্মচারীদের উপহার দিয়ে আসতেন নিজের হাতে। তোমার বর একটু বড় হওয়ার পর আমিও তোমার শ্বশুরের সঙ্গে বিশেষ বিশেষ দিনে দোকানে যেতাম। অবশ্য তাঁরাও সঙ্গে থাকতেন। কী যে ভাল লাগত বউমা কী বলব! নতুন শাড়ি, গহনা এসব আমাদের বাড়িতে একমাত্র দুর্গাপুজোতেই পরা হত। আর এখানে পয়লা বৈশাখে নতুন বইয়ের প্রকাশ হবে, সেই নিয়ে মাস তিনেক আগে থেকে উত্তেজনা। নতুন শাড়ি পরে, লেখক লেখিকাদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়। কত মহান সাহিত্যিকদের দেখলাম এতগুলো বছরে। মনে হয় এই পরিবারে না এলে জীবনটাই বৃথা হয়ে যেত। (Bengali Novel)
“শুধু পেশা করলে হবে না বউমা। এটাকে নেশাও করে নিতে হবে। তবেই পারবে। নইলে দিনের শেষে ক্লান্তি আসবে। স্নেহলতা বললেন।”
-তাহলে এখন এই প্রকাশনা তুলে দিলে ভাল লাগবে মা?
মোহনা আর স্নেহলতার কথা, খেতে খেতে চুপ করে শুনছিলেন অমিতবাবু। আর সেসব পুরোনো দিনের কথা মনে করে নিজের মনেই আনন্দ উপভোগ করছিলেন। মোহনার এই কথাটা কানে যেতে তিনি খাওয়া থামিয়ে বউমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন মোহনা কী বলতে চাইছে। (Bengali Novel)
মোহনাও এবার অমিত বাবুর দিকে তাকিয়ে সামান্য কিছু কথা মনের ভেতরেই গুছিয়ে নিয়ে বলল- বাবা তুমি অনুমতি দিলে কিছু কথা বলতে পারি।
-তুমি বলবে, তাতে অনুমতির কী প্রয়োজন? এই বুড়ো বাপের সঙ্গে কী তোমার তেমন সম্পর্ক মা? (Bengali Novel)

মোহনা এবার দ্বিধা কাটিয়ে বলে উঠল- আমি চাই না এই প্রকাশনা সংস্থা বন্ধ হোক।
-কিন্তু কে চালাবে মা? খোকা ফিরবে বলে মনে হয় না।
-তার কথা আমি বলতে পারব না। কিন্তু এ বাড়ির পুত্রবধু বা মেয়ে হিসেবে এ দায়িত্ব আমি নিতে চাই। অবশ্যই আমাকে যদি তোমরা উপযুক্ত মনে করো। (Bengali Novel)
মোহনার কথায় যেন আকাশের চাঁদ পেলেন অমিতবাবু। যে স্বপ্নের সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল, তিনি না থাকলে কি হবে ভেবে তাঁর রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে মোহনার এই প্রস্তাবে তিনি যেন নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেলেন। তবু দ্বিধা নিয়েই বললেন- কিন্তু তোমার চাকরি? দুটো কী একসঙ্গে সামলাতে পারবে? (Bengali Novel)
“তাঁর মন বলল, মোহনাই পারবে এই সংস্থাকে রক্ষা করতে। গিরিবালা দেবী, বিরজাসুন্দরী, স্নেহলতা, মোহনা…। মায়েরাই পারেন মা দুর্গা হয়ে সবকিছু আগলে রাখতে।”
-এখনই চাকরি ছাড়ব না, ভেবেছি দু-তিন মাসের ছুটি নেব। আমি তো এই সাহিত্য জগতের কিছুই জানি না। তুমি আমাকে দেখে নাও কতটা শিখতে পারছি এ কদিনে। যদি মনে হয় আমি পারব, তবে চাকরি ছেড়ে এটাই ফুল টাইম পেশা হিসেবে নেব। (Bengali Novel)
-শুধু পেশা করলে হবে না বউমা। এটাকে নেশাও করে নিতে হবে। তবেই পারবে। নইলে দিনের শেষে ক্লান্তি আসবে। স্নেহলতা বললেন। (Bengali Novel)
-বেশ, বেশ, আগে তো মোহনা যাওয়া-আসা শুরু করুক। তারপর দেখা যাবে এটা তার পেশা না নেশা হয়! মোহনার দিকে তাকিয়ে বললেন, তবে কাল থেকেই শুরু হোক। আমার সঙ্গেই যাবে। তারপর কী ভেবে বললেন- আচ্ছা না, তুমি একটু বেলা করেই এসো। আমার পাশের ঘরটা গুছিয়ে দিতে বলছি তোমার জন্য। (Bengali Novel)
“তারপর কেটে গেছে আরও ছ’ বছর। চৌধুরী সাহিত্য কুটির স্ব-মহিমায় পাল্লা দিচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। এখন আর কেউ চৌধুরী সাহিত্য কুটির এবং মোহনা চৌধুরীকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না।”
-না বাবা, এখনই আমার জন্য আলাদা কোনও ঘর নয়। আগে সবার সঙ্গে বসে হাতে কলমে কাজ শিখব। তারপর আলাদা ঘরের কথা ভাবা যাবে। (Bengali Novel)
সে রাতে খানিকটা ভারমুক্ত মনে ঘুমাতে গেলেন অমিতবাবু। তিনি কানাঘুষো শুনেছিলেন, প্রমিতের সঙ্গে সম্পর্কে মোহনার একটা ফাটল ধরেছে, সেটা প্রমিতের দৈনন্দিন কাজের প্রকৃতির জন্য নাকি এর পেছনে অন্য কোনও নারী আছে, তা দুজনের কেউই কখনও প্রকাশ্যে আনেনি। কঠোর ব্যক্তিত্ব আর প্রচন্ড বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মোহনা সেই সব কৌতূহল থেকে মানুষের মন তার কাজের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে। (Bengali Novel)
তাঁর মন বলল, মোহনাই পারবে এই সংস্থাকে রক্ষা করতে। গিরিবালা দেবী, বিরজাসুন্দরী, স্নেহলতা, মোহনা…। মায়েরাই পারেন মা দুর্গা হয়ে সবকিছু আগলে রাখতে। (Bengali Novel)
আরও পড়ুন: গল্প-স্বল্প : মন্থরা ও সীতা –এক কাল্পনিক সংলাপ
তিনি ঠিক করলেন, ল’ইয়্যারের সঙ্গে কথা বলে সংস্থার কর্ণধার হিসেবে মোহনার নামটাও যুক্ত করে নেবেন তাঁর ও স্নেহলতার নামের সঙ্গে। (Bengali Novel)
তারপর কেটে গেছে আরও ছ’ বছর। চৌধুরী সাহিত্য কুটির স্ব-মহিমায় পাল্লা দিচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। এখন আর কেউ চৌধুরী সাহিত্য কুটির এবং মোহনা চৌধুরীকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না। এমনকি তিন বছর আগে প্রমিতের বাবা মানে শ্বশুরমশাই যখন আকস্মিক হৃৎরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন, তখন তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়েই যেতে পেরেছিলেন যে তাঁর প্রতিষ্ঠান যোগ্য মানুষের হাতে পড়েছে, তাদের অতীত গৌরব এই পুত্রবধূ যে শুধু বজায় রাখবে তাই নয়, এর খ্যাতি আরও বাড়বে। (Bengali Novel)
(ক্রমশ)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যা
বিতস্তা ঘোষাল গল্পকার, কবি,প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। আধুনিক ইতিহাসে এম এ, লাইব্রেরি সায়েন্সে বিলিস। কলেজে সাময়িক অধ্যাপনা। প্রকাশনা সংস্থা ভাষা সংসদের কর্ণধার। ও অনুবাদ সাহিত্যের একমাত্র পত্রিকা ‘অনুবাদ পত্রিকা’-র সম্পাদক।
'বাংলা আকাডেমি' ,'সারস্বত সম্মান' 'বিবেকানন্দ যুব সম্মান', ‘একান্তর কথাসাহিত্যিক পুরস্কার,'কেতকী' কবি সম্মান, ‘চলন্তিকা’, দুই বাংলা সেরা কবি সম্মান, 'বিজয়া সর্বজয়া' 'মদন মোহন তর্কালঙ্কার সম্মান', 'বই বন্ধু সেরা লেখক ২০২৪ ' সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মান প্রাপ্ত।
বিতস্তার প্রকাশিত বই ৩৪টি। তাঁর কবিতা ও গল্প হিন্দি, ওড়িয়া, অসমিয়া ও ইংরেজি,ইতালি, গ্রীক ও স্প্যানিশে অনুবাদ হয়েছে। সম্প্রতি ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশিত তার গল্প সংকলন রূপকথার রাজকন্যারা।
দেশ বিদেশে কবিতা ও গল্প পড়ার ডাক পেয়েছেন একাধিকবার।বাংলা সবকটি জনপ্রিয় পত্রিকা ও সংবাদপত্রে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত।
নিজের কাজের গণ্ডীর বাইরে অফিস ও পরিবারেই স্বচ্ছন্দ বিতস্তা কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাটান নানান সামাজিক কাজে।
ভালোবাসা ছাড়া বাকি সব কাজ গুরুত্বপূর্ণহীন। তার নিজের কথায় ভালোবাসা ছাড়া কেউ কী বাঁচে?