(Vishvakarma Puja)
হুগলিতে প্রচলন রয়েছে এক অদ্ভুত রকমের বিশ্বকর্মা পুজোর। উৎসবে মেতে ওঠে হুগলির মানুষ। জেলার রাজবলহাট, আটপুর, বেগমপুর গ্রামের বাসিন্দারা উৎসবে মেতে ওঠেন। চার দিন ধরে চলে পুজো। তবে এই ভাদ্র মাসে নয়। পুজো হয় শীতকালে। এটাই এখানকার বিশেষত্ব। (Vishvakarma Puja)
সেই কবে, নীহাররঞ্জন রায় বাঙ্গালীর ইতিহাসে লিখেছেন, ‘প্রাচীন বাঙালির ধর্ম-কর্মগত জীবনের সুস্পষ্ট একটি চিত্ররচনা দুরূহ। স্বভাবতই ধর্ম-কর্মগত মানস- জীবন ব্যবহারিক জীবন অপেক্ষা অনেক বেশি জটিল।’ (Vishvakarma Puja)
ভাদ্র মাসে বিশ্বকর্মা পুজোর সময়, এলাকায় এলাকায় পুজো হয় না। তখন সকাল থেকে প্রতিটি তাঁতঘরে কাপড় তৈরির ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। কারণ সামনেই আর এক অকালবোধন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর পুজো ঘিরে জামা-কাপড় তৈরির জন্য এই সময় সকাল থেকে রাত অব্দি একটানা কাজ করে যেতে হয়। (Vishvakarma Puja)

শীতকালে বিশ্বকর্মা পুজো হওয়ার কারণ হল, গ্রামের মানুষরা বলেন এই সময় গ্রামের তাঁতিরা প্রত্যেকেই পুজোর জন্য শাড়ি তৈরিতে দিন রাত ব্যস্ত থাকেন। এই পুজো শীতকালে হয়। এমন রীতি বহুকাল ধরে চলে আসছে। তাঁত শিল্পের বিকাশ সেভাবে না হলেও, পুজোর কটা দিন গ্রামের মানুষ খুব আনন্দ করেন। নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়। (Vishvakarma Puja)
“বলা হয়, ঘোড়ার খুড়ের শব্দের সঙ্গে নাকি তাঁতের মাকুর খট খটা খট শব্দের এক মিল আছে। তাই এখানে হাতির পরিবর্তে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়ার পুজো হয়।”
ভাদ্র মাসের পরিবর্তে শীতে পৌষ মাসে এই ব্যতিক্রমী পুজোর জন্য, তাঁত শিল্পীরা অপেক্ষা করে থাকেন। বিশ্বকর্মার চেহারাতেও এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে। বিশ্বকর্মার বাহন এখানে হাতি নয়। তার বদলে, বাহন ঘোড়া। বলা হয়, ঘোড়ার খুড়ের শব্দের সঙ্গে নাকি তাঁতের মাকুর খট খটা খট শব্দের এক মিল আছে। তাই এখানে হাতির পরিবর্তে বিশ্বকর্মার বাহন ঘোড়ার পুজো হয়। তাঁত ঘরগুলোতে যে বিশ্বকর্মার পুজো হয় সেগুলো এক ধরনের কারুশিল্পর নিদর্শন। শোলা দিয়ে নির্মিত হয় এই বিশ্বকর্মা। মালাকাররা বানান এই বিশেষ ধরণের ঠাকুর। শোলার ছাল থেকে তৈরি। দেখতে লাগে ঘোড়ার পিঠে বসে আছেন যেন এক যোদ্ধা। আসলে ঘোড়ায় চড়ে আছেন বিশ্বকর্মা। (Vishvakarma Puja)

পুজোর পর এই ঠাকুরকে মাকুর একপাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আবার পরের বছর পুজোর সময় সেই ঠাকুর পরিবর্তন করা হয়। এমনই এক আশ্চর্য বিশ্বকর্মা ঠাকুরের পুজো দেখা যায় হুগলি ও নদীয়ার কিছু গ্রামে-গঞ্জে। (Vishvakarma Puja)
তথ্যসূত্র:
১) নীহাররঞ্জন রায়
২) সুধীর কুমার মিত্র
ছবি: মুকুট তপাদার
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মুকুট তপাদার। ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চার। ইতিহাস-শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে ফটোগ্রাফি ও লেখালেখি। গবেষণার বিষয় গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের ইতিহাস ও শিল্পকর্ম।