মেয়েদের হোস্টেল। সে এক রহস্যময় অন্দরকথা, যেখানে বাইরের জগতের প্রবেশাধিকার নেই। তাদের ঘর বারান্দায় যে ফিসফাস, তাদের খাটের বাজুতে যে মেয়েলি সেন্টের গন্ধ, তাদের জীবনযাপনে যে আটপৌরে কথামালা, তেমনটি আর কোত্থাও মেলে না। তেমনই এক মেয়েলি হস্টেলের গল্প শুনিয়েছেন অহনা বিশ্বাস, তাঁর ‘মেয়েদের হস্টেল জীবন’ বইতে। শান্তিনিকেতনের মেয়ে-হোস্টেলের চার দেয়ালের পলেস্তারা, ঘুলঘুলি আর ঝুল-কালিতে লেগে থাকা মেয়েমহলের গোপন কথার স্বরূপটি ধরা পড়েছে তাঁর লেখনীতে।
ধুলো ঝেড়ে বের করি পুরনো দোয়াত
দেখতে দেখতে প্রায় দু যুগ হয়ে গেল। দু যুগ কি খুব বেশি সময়? নিজের কাছে তো নিজের ছেলেবেলা এই সেদিনের লাগে। তবু বহু পুরনো সে সময়। যে কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষণে হস্টেলে ঢুকেছিলাম, আর প্রায় দশ বছর পর ঝানু হয়ে সেখান থেকে বের হয়েছিলাম, সে যুগ আর এ যুগে বহু তফাত। সে সময় কারও হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। ঘরের মধ্যে কেউ কম্পিউটার, ল্যাপটপ রাখত না। কদাচিৎ এক-আধ জন ছেলেদের পোশাক অর্থাৎ প্যান্ট পরতে ভালবাসত। আমাদের এই আধা শহর আধা গ্রাম শান্তিনিকেতনের পাড়ায় পাড়ায় তখনও বিউটি পার্লার গজায়নি। সে দিক দিয়ে সে এক আলাদা জমানা।
সে জমানা যে আজকের দিনে এই বাংলায় কোথাও কোথাও নেই এমনটি নয়। একটা যুগের মধ্যেই যে কত স্তর থাকে। আজকের ল্যাপটপহীন, মোবাইলহীন নিম্নবিত্ত মেয়েদের হস্টেলের জীবনের সঙ্গে যে আমাদের মিলবেই এমন নয়, আবার কোথাও কোথাও সাদৃশ্য তো থাকবেই।
তবু এরই মধ্যে আমাদের সময় যেন গল্পকথা হয়ে গেল। আসানসোল শহরে আমি দশ ক্লাস পাশ করে শান্তিনিকেতনে পড়তে আসি। যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি শান্তিনিকেতনে পড়তে যাবার। আমি একা নৈ, আমার এক বান্ধবী ছিল। সে গান গাইত। আমার মন ছিল ছবিতে, গল্পের বই-এ। কিন্তু পড়াশোনার জন্য শুধু নয়, কে জানে কেন আমার মনে হয়েছিল, শান্তিনিকেতনে গেলে পাব অবাধ স্বাধীনতা। মায়ের শাসনমুক্ত একটা খোলা দুনিয়া। ফলে পাশ করার অন্য কোথাও অ্যাপ্লাই না করেই চোখ-কান বুজে ‘উত্তর শিক্ষা সদন’-এ ভর্তি হয়ে গেলাম। ভর্তি হয়ে গেল আমার সেই বান্ধবীটিও। দুজনেই খুব খুশী সেকারণে।
আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে নিত্যকার আটপৌরে পোশাক হিসাবে নাইটি পরার চল আছে। নাইটি যে রাত্রিকালীন পোশাক, এ প্রায় মানুষ ভুলতে বসেছে। বেচারা মেয়েটি সেই পোশাক পরেই হস্টেলের বাইরে (কিন্তু গায়ে লাগানোই) জেনারেল কিচেনে খেতে গিয়েছিল। অমনি বহু বালিকাই তাকে সতর্ক করেছে, নিষেধ করেছে। যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে দেরি আছে, তাদের বকাঝকাতে বড়ই পীড়িত হয়ে পড়েছিল আমার বন্ধুটি।
দুপাশে বড় বড় গাছে ছাওয়া রাস্তার পাশে আমাদের আটটি বেডের ডর্মিটরি। দুটো বিছানার মাঝে এক হাত জায়গা। আর পাওয়া গেল একটা তিন তাকের জিনিসপত্র রাখার শেল্ফ আর একটি টেবিল। তখনও আমাদের সব রুমে টিউবলাইট আসেনি। হলুদ বাল্বের আলো। জানলাগুলি জাল দিয়ে ঘেরা। অনেক পুরনো বাড়ি। নাম শ্রীসদন। সামনে বাগানে কালো কালো পাতার মাঝখানে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা কাঠগোলাপ ফোটে। অনেক গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলদে পলাশ বহু গাছের ভিড়ে গরবিনি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রথম দিন হস্টেলে আসার পথে বাসের মধ্যে জ্বর এসেছিল। সারা দিন শুয়ে থেকে বিকেলবেলায় মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে হল। কিন্তু এরই মধ্যে আমার বান্ধবীটি হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করেছে। সে এই হস্টেলে আর থাকতে চায় না। কিন্তু কারণ কী?
আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে নিত্যকার আটপৌরে পোশাক হিসাবে নাইটি পরার চল আছে। নাইটি যে রাত্রিকালীন পোশাক, এ প্রায় মানুষ ভুলতে বসেছে। বেচারা মেয়েটি সেই পোশাক পরেই হস্টেলের বাইরে (কিন্তু গায়ে লাগানোই) জেনারেল কিচেনে খেতে গিয়েছিল। অমনি বহু বালিকাই তাকে সতর্ক করেছে, নিষেধ করেছে। যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে দেরি আছে, তাদের বকাঝকাতে বড়ই পীড়িত হয়ে পড়েছিল আমার বন্ধুটি। অতএব থাক লেখাপড়া, থাক গানবাজনা, মা-বাবার সঙ্গে অর্ধদিন হস্টেলে কাটিয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে চিরতরে বাড়ি ফিরল।
কিন্তু আমার তো আর ফিরলে চলবে না। অনেক দূরের পথ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। আমাকে হস্টেলেই ফিরতে হয়।

সেই থেকে আমি একা। দুজনের সব পরিকল্পনা, স্বপ্ন হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে নিজের মতো করে যুঝতে থাকি। বন্ধুত্ব হতে থাকে, ভাঙতে থাকে। কখনো মনে ধাক্কা পাই, কখনো সব ঝেড়েঝুড়ে একসঙ্গে ফুর্তি করি। ওদের সুরের সঙ্গে আমার বেসুরো কণ্ঠ মিলিয়ে দিই। ভালবাসি, ভালোবাসা পাই, ভালবাসতে শিখি। আসলে বড় হতে শিখি।
হস্টেল থেকে বের হয়ে যখন চাকরি করি, তখন আমাদের এক দিদিমণি আমাকে শান্তিনিকেতনের হস্টেলের জীবন নিয়ে লিখতে বলেন। বললেন, সব যেন পজিটিভ কথা লিখি।
শান্তিনিকেতনের মেয়েদের হস্টেলের যা কিছু সদর্থকতা তা সবই উত্তরাধিকার বাহিত। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর টানে ছুটে আসা বহু মনীষীর, নামি অনামি বহু গুণিজনের ভাবনায় গড়া জীবনচর্যা। আর যা কিছু নঞর্থক বা যা কিছু যেমন তেমন, তার সব কিছুই আমাদের দেশের যে কোনও হস্টেলের মতোই। কিছুমাত্র আলাদা নয় সে যুগের ছবি।
গোলাপি নীল ডোরা বিচিত্র প্রজাপতি জীবন
নানা জায়গা থেকে নানা পরিবার থেকে নানা উদ্দেশ্যে মেয়েরা এই হস্টেলে জড়ো হয়। হস্টেলে এসেই প্রথম উপলব্ধি করি, প্রতিটি মেয়েই আলাদা আলাদা পরিবার থেকে এসেছে। প্রত্যেক পরিবারের খাওয়া দাওয়া, আচার-আচরণ, এমনকী জীবনের আদর্শও ভিন্ন ভিন্ন। তবু একসঙ্গে এতগুলি মেয়ের থাকা, পারস্পরিক প্রভাব এটিও কম কথা নয়।
এখানে বহু মেয়ে আছে যারা হয়তো ক্লাস টু-তে এসে হস্টেলে ঢুকেছে, আর বের হচ্ছে গবেষণা শেষ করে। এক এক জন হয়তো দীর্ঘ কুড়ি বছর হস্টেলে আছে। হস্টেলের সঙ্গে এমনই একাত্ম তারা, হস্টেলের জীবন তাদের কাছে এমনই স্বস্তিদায়ক, যে বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারে না।
ছোটদের হস্টেলে আমি থাকিনি। ছোটদের আনন্দ উচ্ছ্বাস স্বাধীনতা সব কিছুই কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাভাবিক ভাবে। আমরা শুধু দূর থেকে দেখি ওরা বৈতালিকে উপাসনা করছে। তেঁতুল পাড়ছে, লাইন করে সমস্বরে গান গাইতে গাইতে খেতে যাচ্ছে। যখন যে ঋতু, তখন সেই ঋতুর গান। গোটা গায়ে লাল ধূলো মেখে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। আর বোর্ডে লিখে রাখছে পুজোর ছুটি আর মাত্র ২১ দিন বাকি। বলাবাহুল্য সেই সংখ্যাটা প্রতিদিন বদলাচ্ছে।
এই সব ছোটরা আমাদের গায়ে ঘেঁষে থাকত সেদিন পর্যন্ত। ওদের দেখলেই খুশি জাগত মনে। আমার বন্ধু সংহিতা, যে ছোটবেলা থেকে পড়ত, সে বলেছিল, ‘জানিস তো ছোটবেলায় একটুও মন খারাপ করত না। এখানে এত খেলাধূলো, সেসবেই মেতে থাকতাম। যত বড় হই, তত মা-বাবার জন্য মন খারাপ করে। আমরা মা-বাবার সঙ্গ প্রতিদিন কত হারাচ্ছি বল দেখি।’

আমাদের হস্টেলে বাবা কাকা দাদারা ঢুকতে পারত না। তারা ওয়েটিং রুমে বসে থাকত। মা-দিদিরা এলে আমাদের ঘরে আনতে পারতাম। তখন খাওয়া-দাওয়া গল্পগুজব। অনেক মেয়েই মন খারাপ করত বাবাকে নিজেদের রুমে নিয়ে আসতে না পারার জন্য। অনেকের কাছেই আক্ষেপ শুনেছিঃ আচ্ছা বাবাকে ঢুকতে দিলে এমন কী ক্ষতি হবে!
আমাদের হস্টেল খোলাই থাকত। পাশের ঘরে সুপার ওয়ার্ডেনরা থাকতেন। কখনো মাসিরা দরজার দিকে লক্ষ রাখত, কখনো কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াত। কেউ ডাকতে এলে বীরভূমি টানে লম্বা ডাক দিত। ‘সঙ্গীতভবনের উমা ব্যানার্জি মাসি, তোমার বাবা এসেছেন।’ কি, ‘বিদ্যাভবনের রঞ্জিতা, তোমাকে বাইরে ডাকছে গো।’ কিংবা ‘ডেকে ডেকে সারা হলাম, কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটা। তাড়াতাড়ি এসো।’ ফোন এলেও এমন হাঁকডাক।
দরজা খোলাই থাকত। এত মেয়ের থাকার জায়গা শ্রীসদন হস্টেল। খুবই বড়,অনেকটা জায়গা নিয়ে অলিগলিতে ভরা বড় রহস্যময় এই ছাত্রীনিবাস।
তবু এই রহস্য ভেঙে যে কেউ খুব একটা ঢুকে পড়ত, এমনটা নয়।
কোন রঙের মাতন উঠল দুলে
এখনও যদি ট্রেনে-বাসে কিংবা রাস্তায় হঠাৎ কোনও পুরনো বন্ধুকে দেখি হলুদ শাড়ি পরে হেঁটে যেতে, তখনই বলে উঠি, কীরে, বসন্ত লেগে গেল নাকি!
শীত একটু কমে আসতেই, মৃদুমন্দ হাওয়া গায়ে লাগলে এখনও হস্টেলের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। একটু গরম পড়তে পড়তেই হস্টেলের বারান্দায় বসে, কিংবা সামনের মাঠে শিরীষ গাছের তলায় বসে সম্মিলিত ভাবে বসে বসন্তের গান গাওয়া হত কত দিন ধরে। কত দিন এ ভাবে উতল হাওয়া আর দখিন হাওয়া মাখামাখি চলত। সবাই যে সব গান বিধিমতো কারও কাছে শিখেছিল এমন নয়। শুনতে শুনতে শিখে যাওয়া, গলায় তুলে নেওয়া, মনে গেঁথে নেওয়া। নইলে প্রকৃতির বদলের সঙ্গে সঙ্গে গানের বদল হবে কী করে!
শান্তিনিকেতনের কত উৎসব। তার মধ্যে সেরা বসন্তোৎসব। তবে সে উৎসব মূলত যেন মেয়েদের হস্টেলেরই। সপ্তাহখানেক আগে থেকে আমাদের সাজগোজের প্রস্তুতি চলত। যার হলুদ শাড়ি আছে তার আছে, যার নেই সে তার সাদা শাড়িটি ধোপার কাছে হলুদ রং করতে দিত। দোলের পর সেই ধোপারই দায়িত্ব ছিল ফের শাড়িটিকে সাদা করে দেবার। এইভাবে শাড়ি ব্লাউজ জোগাড় করে রাখা হত। এর পর শুরু হয় নাচের জন্য লাঠি সংগ্রহ করার পালা। আগের বছরের লাঠিটি অনেকেই যত্ন করে রেখে দেয়। সেই লাঠিতে লাল-হলুদ কাগজ চিটিয়ে সুদৃশ্য করে তোলা হয়। তার পর আছে জোড়া খোঁজার পালা।
দোলের নাচ সবসময়ই জোড়া জোড়া হয়। জোড়া ছেলে-মেয়ে, কিংবা জোড়া মেয়ে বা জোড়া ছেলেরা মিলে লাঠি নাচ নাচে। ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল – গানের সঙ্গে শোভাযাত্রা করে নাচতে নাচতে যাবার আনন্দে সবাই ভাগীদার হতে চায়। আবার না নাচলে সামনে বসে মঞ্চের অনুষ্ঠানও দেখতে পাব না। তাই নাচতেই হবে। আর নাচলেই জোড়া চাই। ছেলেবন্ধুকে জোড়া নিলে হস্টেলের বাইরে তাকে মহড়া দিয়ে নিতে হবে। নইলে ভুলভাল হলে নিজেকেই লাঠির বাড়ি খেতে হবে।
আমাদের এক বন্ধু সোমা, তাকে কাতর অনুনয় জানাল, ‘আমাদের ফুল পেড়ে দিবিরে ভাই।’ সেই গলায় একটু শান্তিনিকেতনি সুর ছিল, যাকে কেউ কেউ ন্যাকামি বলে। তা, সে ভাই তো রেগে কাঁই। কেন না সে তো আসলে আমাদের অনেক সিনিয়র দাদা। সে রেগেমেগে বলল, ‘এইটুকু মেয়ে সব, পাকামি করার জায়গা পাওনি। এক্ষুনি এখান থেকে যাও, নইলে প্রিন্সিপালের কাছে ধরে নিয়ে যাব।’ আমরা সাততাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচলাম।
কিন্তু আমাদের অধিকাংশের মেয়েই জোড়া। দুদিন আগে থেকে হস্টেলের ভেতরের পথে তার মহড়া চলত। দোলের ঠিক আগের দিন সকাল থেকে আমরা পলাশ ফুল কুড়োতে যেতাম। আজকের মতো তখন পলাশ ফুলের মালা বিক্রি হত না। গাছের তলায় তলায় ঘুরে ফিরতাম। কোনও কোনও ছেলে বন্ধু অনুকূল হলে গাছে উঠে ফুল পেড়ে দিত। মনে আছে একবার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি গাছের নীচে গিয়ে গাছটাকে ঝাঁকাতে দেখি ওপরে একটি ছেলে রেয়েছে। আমাদের এক বন্ধু সোমা, তাকে কাতর অনুনয় জানাল, ‘আমাদের ফুল পেড়ে দিবিরে ভাই।‘ সেই গলায় একটু শান্তিনিকেতনি সুর ছিল, যাকে কেউ কেউ ন্যাকামি বলে। তা, সে ভাই তো রেগে কাঁই। কেন না সে তো আসলে আমাদের অনেক সিনিয়র দাদা। সে রেগেমেগে বলল, ‘এইটুকু মেয়ে সব, পাকামি করার জায়গা পাওনি। এক্ষুনি এখান থেকে যাও, নইলে প্রিন্সিপালের কাছে ধরে নিয়ে যাব।’ আমরা সাততাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচলাম।
ফুল জোগাড় হলে আগের দিন সন্ধেবেলা থেকে আমরা সবাই একসঙ্গে ফুলের মালা গাঁথতে বসতাম। তারই ফাঁকে একবার রাত ন’টার বৈতালিকে, ‘ও আমার চাঁদের আলো’ গেয়ে আসতাম। তখন হাত পলাশের রেণুতে হলুদ হয়ে যেত। পলাশে এক রকম খুদি খুদি কালো পোকা হয়, সেগুলো হাতে বেশ কামড়াত। অনেক রাত জেগে আমরা মালা তৈরি করতাম। সাজতে তখন যে কী ভালবাসতাম! চুলে, কানে, হাতে, গলায় ফুলের গয়না চাই। দোলের দিন ভোরবেলা থেকে আমরা একে অন্যকে সাজাতাম। হলুদ শাড়িতে, আগুন পলাশে, আবিরের টিপে দলবেঁধে সুন্দরীরা নাচের লাঠি হাতে খালি পায়ে দৌড়ে দৌড়ে নাচের শোভাযাত্রার লাইনে দাঁড়াতাম।

অনুষ্ঠান শেষ হলে আবির খেলা। এই সময় সবাই সবার কপালে আবির ছোঁয়ায়। বড়দের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে। আমাদের সময় থেকেই দেখেছি এই প্রীতিমধুর সম্পর্কটির সুযোগ নিয়ে অনেক ট্যুরিস্ট বিভিন্ন রকম অসভ্যতা করত। হস্টেলে ফেরার পথে আমাদের নাচের লাঠিগুলিই ছিল আত্মরক্ষার সবচেয়ে বড় ভরসা। এই সময় একটি ঘটনায় একজন হস্টেলের মেয়ে বেশ আহত হয়েছিল শরীরে-মনে।
তবু এইসব কদর্যতা উপেক্ষা করেই আমরা বন্ধুদের দলবল নিয়ে কোনও গাছের তলায় বসন্তের গান গাইতে বসে যেতাম। ‘এসো হে, এসো হে, এসো হে, আমার বসন্ত এসো।’ বন্ধুরা এক এক করে নাচত। এই সময় কত পুরনো দাদা-দিদিরা আসত, যারা আগে এখানে পড়ে গেছে তারাও নাচত। একই গান আমরা প্রতি বছর গাইতাম, কিন্তু কখনও পুরনো হত না। এই ভাবে সারাবেলা নেচে গেয়ে সুরে রঙে রসে জাল বুনে, আপাদমস্তক আবিরে ভূত হয়ে আমরা কিচেনে খেতে যেতাম। সেখানে তো দেরি করবার জো নেই। বেলা একটার মধ্যে খেতেই হবে।
তবে বৃষ্টিতে ভিজেছি খুব। ভিজতে ভিজতে সমস্বরে গান গেয়েছি। এক বার ক্যানেলে বন্যা দেখতে গিয়েছিলাম। একান্তই শহরের মেয়ে। লাল ঘোলা জল প্রায় পাড় উপচে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। বৃষ্টিভেজা তার পিছল পাড়ে অ্যাডভেঞ্চারে এসে ভয় করত। আর গল্প শুনতাম, কার কার যেন ভেসে যাবার কথা।
এদিন খেয়েদেয়ে স্নান। চানের জন্য বাথরুমে লম্বা লাইন পড়ত। শ্রীসদনের বিশাল মহীরুহ-প্রায় চালতা গাছের নীচে সার সার ঠান্ডা বাথরুমের বড় বড় চৌবাচ্চার জলে আরাম করে আমরা চান করতাম। দোলের দিন চান করতে আমাদের কারও কারও বিকেল পর্যন্ত গড়িয়ে যেত। আর বিকেলবেলা তো আবার অনুষ্ঠান।
নাই রস নাই
বসন্তের পরই গরম পড়ত। কাঁকুরে মাটিতে দুপুরবেলায় খুবই তাপ। লু বইত। গরমের ছুটি হত ঠিকই। গরমের ছুটির পর পর পরীক্ষা হত বলে আমরা অনেকেই ছুটিতে হস্টেলে থেকে যেতাম। ভবন থেকে, লাইব্রেরি থেকে নাকে-মুখে কাপড় ঢাকা দিয়ে, সাইকেলে করে তালপাতার টোকা মাথায় দিয়ে সব হুস করে হস্টেলে ঢুকে যেত। এখন আর টোকা মাথায় দেওয়া ছাত্র-ছাত্রী দেখতেই পাই না। কিন্তু অনেকটা তাপ তাতে আড়াল হত, দেখতেও ভারী আকর্ষণীয় লাগত। বাইরেটা যতই গরম হোক, আমাদের হস্টেল বেশ ঠান্ডা ছিল। দরজা-জানলা বন্ধ করে মাঝে মাঝেই দুপুরে বেশ আরামদায়ক ঘুম দিতাম। লাইব্রেরি থেকে ফেরবার পথে কখনো বকুল, কখনো কুর্চি, তার গন্ধ দিয়ে আমাদের আটক করত। সন্ধেবেলায় অনেক সময়ই হস্টেলের সামনের শিরীষ গাছের তলায় অনেকে মিলে বসে থাকতাম। সন্ধে থেকে আর তেমন গরম থাকত না। হাওয়া দিত খুব। কখনো কখনো কালবৈশাখীতে পড়ে যেতাম। তখন দৌড়ে দৌড়ে ফেরা। অনেকদিনই ঝড়-জল-বিদ্যুৎচমকের মধ্যে কিচেনে খেতে যেতে বড় ভয় করত। তার ছিঁড়ে যেত বলে একটু ঝড় হলেই লোডশেডিং হয়ে যেত। তখন আমরা আলো না জ্বালিয়ে অন্ধকারে বসে একসঙ্গে গান গাইতাম। নানা রকম মজাদার গান। কিন্তু গ্রীষ্মবন্দনার গান খুব একটা আমরা ছাত্রীদের গাইতে শুনিনি।
আষাঢ় মাসের প্রথম বৃষ্টি ভাল লেগেছিল
উঁচু উঁচু বিচিত্র সবুজ গাছগাছালির পিছন দিয়ে রাজপুত মিনিয়েচার ছবির মতো হলুদ রঙের হস্টেল-বাড়িটির মাথার ওপর কালো কালো মেঘ আসত বর্ষার। আগে শান্তিনিকেতনে গাছ ছিল না। মেঘ একটুখানি উঁকি দিয়েই পালাত। এখন প্রভূত বৃক্ষ, প্রচুর মেঘ-বৃষ্টি। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সময়ে জানলার পাশে বসে যে বন্ধুটি একা একা গাইছে, ‘আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে/ তারি ছায়া পড়েছে শ্রাবণগগনতলে’, তাকে বিরক্ত করিনি। ঘরে এসে নিজের খাটে চুপ করে বসেছি বই পড়ার ছলে, কিংবা কিছু জিনিস নিয়ে বের হয়ে গেছি।
তবে বৃষ্টিতে ভিজেছি খুব। ভিজতে ভিজতে সমস্বরে গান গেয়েছি। এক বার ক্যানেলে বন্যা দেখতে গিয়েছিলাম। একান্তই শহরের মেয়ে। লাল ঘোলা জল প্রায় পাড় উপচে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। বৃষ্টিভেজা তার পিছল পাড়ে অ্যাডভেঞ্চারে এসে ভয় করত। আর গল্প শুনতাম, কার কার যেন ভেসে যাবার কথা।
বর্ষার দুপুরবেলাগুলো ছিল খুবই মনখারাপ করা। জানলার ধারে আমরা বসে থাকতাম। ঝোপজঙ্গলের মধ্যে বুনো পাখিদের দেখতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অনেক খেলত। বিকেলবেলায় কোথাও একটু বেড়াতে যাবার জন্য আকুল হতাম। কাউকে না কাউকে ধরে চড়তে বের হতাম।
বর্ষামঙ্গল হত এই সময়। যারা নাচত তারা নীল আর সবুজ রঙের শাড়ি পরত। নীল আর সবুজ তাঁতের শাড়ি জোগাড় করা খুব কঠিন ছিল। সারা বছরই বড় দিদি, এমনকী শিক্ষিকাদের শাড়ির দিকেও নজর দেওয়া হত। তার পর যথা সময়ে চেয়ে নিয়ে পরা। হাজার বার ছিঁড়ব না কথা দিলেও সেসব শাড়ি সেফটিপিনে ছিঁড়ে যেত না এমন নয়। তবু সেভাবে তিরস্কার প্রাপ্য হত না। যারা নাচত তারা সামান্য কলকা আঁকত কপালে, কোমরে গলায় উত্তরীয় ঝোলাত। নিজস্ব রূপটি তাতে অপ্রকট হত না।
বর্ষার দুপুরবেলাগুলো ছিল খুবই মনখারাপ করা। জানলার ধারে আমরা বসে থাকতাম। ঝোপজঙ্গলের মধ্যে বুনো পাখিদের দেখতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অনেক খেলত। বিকেলবেলায় কোথাও একটু বেড়াতে যাবার জন্য আকুল হতাম। কাউকে না কাউকে ধরে চড়তে বের হতাম।
বর্ষাকালটা লাল কাদামাটিতে হস্টেলের করিডোরটা ছোপ ছোপ হয়ে থাকত। এমনিতেই আমার শাড়ি-শায়া লাল হয়ে থাকত ধুলোতে, এই সময় প্রায় অর্ধেক ভিজেই থাকত। আর তখন কত রকমের গন্ধ যে পেতাম। মালতী ভিজে একশা হয়ে গন্ধ বিতরণ করত। জারুলের সাদা বেগুনি ফুলে হস্টেলের সামনের রাস্তাটা একাকার হয়ে যেত। সব মিলিয়ে একটা বুনো গন্ধ বর্ষাকালটায় হস্টেলটাকে ঘিরে থাকত। অনেকগুলো গাছগাছালির মধ্যে লুকোনো একটি নিঃসঙ্গ তালগাছ থেকে ডালপালার ভেতর দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভারী গম্ভীর আওয়াজ করে তাল পড়ত। এক বার সেই তাল দিয়ে, গুঁড়ো দুধ দিয়ে তালক্ষীর বানানো হয়েছিল।
এই সময়ই ২২শে শ্রাবণ। সকালবেলায় মন্দিরে উপাসনা। দুপুরে বৃক্ষরোপণ। এই বৃক্ষরোপণের অনুষ্ঠানে পঞ্চকন্যার ভূমিকা ছিল। কলাভবনের মেয়েরা পঞ্চকন্যা হত। বেশিরভাগ হস্টেলের মেয়েরাই এই ভূমিকা পালন করত। পঞ্চকন্যার সাজও অন্যরকম। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোমের প্রতিনিধিত্ব করত এই মেয়েরা। ক্ষিতি পরত সবুজ রঙের শাড়ি, অপ নীল, তেজ লাল, মরুৎ হলুদ আর ব্যোম ধূসর রঙের শাড়ি পরত। ফুলের গয়না তৈরি করা হত এদের জন্য। সে গয়নারও পাঁচ প্রকার বিশেষ গঠন ছিল। যা বছরের পর বছর একই প্রতীকসমৃদ্ধ হয়ে আমাদের কাছে ধরা দিত, অথচ পুরনো হত না। কাঁঠাল পাতার ওপর টগরের কুঁড়ি, রঙ্গন ফুল ইত্যাদি সেলাই করে গয়না বানানো হত। এসব বিষয়ে পারদর্শী এক এক জন থাকত। তারা আবার কাউকে উত্তরাধিকার দিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে নিত। বৃক্ষরোপণের মূল অনুষ্ঠান ভিরের জন্য দেখতে পাওয়া যেত না প্রায়ই। কারও কারও স্বপ্ন শুধু মুখে অস্ফুটে প্রকাশ পেত – যখন পঞ্চকন্যা হব, তখন প্রাণভরে বৃক্ষরোপণ দেখব।
মালপোয়া হল আসলে জেলিফিশ
শরতে মাঠের মাঝখান দিয়ে শিশিরে পা ডুবিয়ে আমরা ক্লাসে যেতাম। ‘শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে’ – গানটা আমাদের মধ্যে খুবই প্রচলিত ছিল। খুবই গাইতাম। বিকেলবেলায় নাট্যঘরে শারদোৎসবের নাটক দেখতে যেতাম। নিজের নিজের ভবনের নাটক নিয়ে উত্তেজনা থাকলেও আমরা ভালকে ভাল বলতে দ্বিধা করতাম না।
এই সময় সোনার রোদ মেখে আমাদের হস্টেলটা সুন্দরী হয়ে বসে থাকত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কতক্ষণ আমরা জানলার পাশে বসেই থাকতাম। আমাদের লেখাপড়ায় সবসময় ফার্স্ট হওয়া বন্ধু বনিতা সেকারণে সকাল থেকে জানলা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়ে পড়ত। নইলে জানলা দিয়ে তার মন কোথায় হারিয়ে যাবে, পড়া আর হবে না।

পুজোর ঠিক আগেই ‘আনন্দমেলা’ হত। ছোটরা আনন্দমেলায় নানা রকম হাতের কাজ তৈরি করত। আমরা তা কিনতাম। চন্দনবীজের মালা তখন একমাত্র আনন্দমেলাতেই পাওয়া যেত। সারা বছর আমরা উত্তরশিক্ষার ছেলেমেয়েরা যে বাটিকের কাজ, চামড়ার কিংবা কাঠের কাজ করি, সেগুলো এসময় আমরা নিজেরাই শুধু কিনি এমন নয়, লোক ধরে জোর করে ছোটদের মতো আমরাও বিক্রি করি।
আনন্দমেলার খাবার বিক্রি হয় খুব। কোনও কোনও শিক্ষিকার বাড়ি আমরা দল বেঁধে যাই খাবার তৈরি করার জন্য। তারপর সেই খাবারের নাম দেওয়া। যেমন মালপোয়ার নাম কেউ রাখল ‘জেলিফিশ’, চায়ের নাম কেউ রাখল ‘অমৃতসুধা’। নাম দেখে বোঝা মুশকিল কি খাব। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে শলাপরামর্শ হয়।
এই দিন ভোর থেকে সানাই আর ঢাক বাজে। সারা দিন ধরে তৈরি হত আনন্দমেলার দোকান। বার বার এটা ওটা নিয়ে হস্টেলে আনাগোনা। ক্ষণে ক্ষণে ছেলে বন্ধুদের ডাক আর দৌড়াদৌড়ি। মহালয়া তিথিটিতে আনন্দমেলা হয়। ওই দিন ভোরবেলায় সানাই শুনতে শুনতে শিউলি ফুল কুড়োই। হস্টেলের প্রবেশপথে ফুল দিয়ে লিখি ‘শারদোৎসব’, ‘আনন্দমেলা’। পাশে দুর্গার মুখ আঁকি ফুল দিয়েই।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কতক্ষণ আমরা জানলার পাশে বসেই থাকতাম। আমাদের লেখাপড়ায় সবসময় ফার্স্ট হওয়া বন্ধু বনিতা সেকারণে সকাল থেকে জানলা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়ে পড়ত। নইলে জানলা দিয়ে তার মন কোথায় হারিয়ে যাবে, পড়া আর হবে না।
এই সময় যুদ্ধজয়ে যাবার মতো আমরা বেড়াতে যেতাম বন্ধুরা মিলে। ক্যানালের পাড়ে, খোয়াই-এ, সোনাঝুরি বনে, সাঁওতাল গ্রামে। সোনাঝুরি গাছের হলুদ রেণু আমাদের গায়ে লেগে যেত। আর তার প্যাঁচানো প্যাঁচানো সবুজ ফল আমরা কানের দুলের সঙ্গে লাগিয়ে বড় বড় দুল পরতাম। কাশফুলে ঘেরা সাঁওতালি গ্রাম আবিষ্কার করতাম যেন। আমাদের ছবি আঁকিয়ে বন্ধুরা হয়তো প্রায়ই আসত, কিন্তু আমরা এক-আধদিন এসে খুব আনন্দ পেতাম। ওদের বাড়িতে জল চেয়ে খেতাম।
কিন্তু শরৎটাকে যে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করব, সে সুযোগ আমাদের কখনোই হয়নি। কারণ পুজোর ছুটি। যত আনন্দ তত দুঃখ। এ ক’দিন বন্ধুদের ছেড়ে থাকতে হবে বলে। চিঠি লেখার পণ করে বাড়ি যাই। মহালয়ার পরদিন থেকে রিকশা ডাকা, আর রিকশায় ব্যাগ তোলা বাড়ি যাবার জন্য। রিকশাওয়ালারা কেউ কেউ অবশ্য হস্টেলে ঢুকতে পেত ভারী মাল বয়ে নিয়ে আসার জন্য। বাড়িতে একটুও পড়া হত না। তবু ব্যাগ ভর্তি করে বই নিয়ে যেতাম। নিজেরা বইতে পারতাম না। রিকশাওলারা সেই ব্যাগ হস্টেল থেকে নিয়ে বাসে বা ট্রেনে উঠিয়ে দিত।
ক্লাসের কোনও কোনও ছেলে বলত, ইস, আমি যদি রিকশাওয়ালা হতে পারতাম।
*অহনা বিশ্বাস রচিত “মেয়েদের হস্টেল-জীবন -অন্দরের কথামালা” (প্রকাশক -গাঙচিল) গ্রন্থ থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে পুনর্মুদ্রিত। মূল নিবন্ধের বানান ও যতিচিহ্ন অপরিবর্তিত।
কবি ও কথাকার অহনা বিশ্বাসের জন্ম ১৯৭০-এ আসানসোলে। বিদ্যাচর্চা, গবেষণা শান্তিনিকেতনে। পেশা অধ্যাপনা। নিয়মিত লেখালিখি করেন। দেশ, সানন্দা, বর্তমান, প্রতিদিন-সহ একাধিক প্রথম সারির পত্রিকার নিয়মিত লেখক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - অষ্টাবক্ররমণীকথা, সবুজশাড়িপরাদের দেশ। গল্পগ্রন্থ - অহনার গল্প। উপন্যাস - আরশিনগরে তাঁবু, আমাদের মায়াবী সময় ইত্য়াদি। অহনার আগ্রহ মানুষ, পরিবেশ ও শিল্পকলায়।
3 Responses
কি মায়াময় লেখা! হস্টেল লাইফ আর এজন্মে পেলাম না তবে লেখার গুণে অনুভূত হল।
chhabiguli apporba.bisheshata hostel er gharer pratham chhabiTi.
Khub bhalo laglo…hariye gelam