(Amala Shankar)
অমলা নন্দীর জন্ম, ১৯১৯-এর ২৭ জুন আর তাঁর মৃত্যু হয় ২০২০-র জুলাই ২৪-এ। একশো এক বছরের সুদীর্ঘ সুসমৃদ্ধ এক শিল্পময় অনুপম জীবন পেরিয়েছেন অমলা। অথচ তাঁর কর্মকাণ্ডের কথারম্ভে যে পরিচয়টি দিয়ে তাঁকে আখ্যায়িত করা হয়েছে চিরদিন, তা হল, প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের স্ত্রী তিনি। সুনিশ্চিত সে পরিচয় তাঁর পরম সৌভাগ্যের। কিন্তু সেই একটি পরিচয়ের আধারে তাঁর মূর্তিটিকে প্রাণান্ত গড়বার প্রচেষ্টায় চির অবহেলিত আর মুখ্যত অনালোচিত থেকেছে তাঁর সামগ্রিক অস্তিত্বের বিচরণ ক্ষেত্রটি। (Amala Shankar)

বাংলাদেশের যশোরে ছিল অমলার আবাস। শিক্ষিত, উদারচেতা বাবা অক্ষয়কুমার নন্দী পেশায় স্বর্ণকার হলেও ব্রতী ছিলেন দেশসেবায়। গোঁড়া ধর্মচিন্তা আর কূপমণ্ডুক শিক্ষাধারার উল্টো পথে চলত তাঁর মেজাজ। পড়তে ভালোবাসতেন অমলা, ছবি আঁকার হাত ছিল তুলনারহিত। ১৯৩১-এ প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এগজিবিশন থেকে আমন্ত্রণ পেলেন অক্ষয়। অমলার গায়ের রঙ কালো। বিবাহের নিক্তিতে মেয়েটির জীবনে আসন্ন উৎপাতের কথা চিন্তা করে তিনি সঙ্গে নিলেন, এগারোর অমলাকে। স্থির করলেন ইংল্যান্ড অথবা সুইৎজারল্যান্ডের কোনও নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেবেন কন্যাকে। স্বাধীন প্রশস্ত শিক্ষাচিন্তায় বেড়ে উঠুক অমলা, এই ছিল তাঁর ইচ্ছা। (Amala Shankar)
আরও পড়ুন: নৃত্য যেথা ভয়শূন্য
ইউরোপে বাবার সঙ্গে ঘুরতে বেরোতেন। এক ঢাল চুল, শাড়ি পরিহিতা হাসিখুশি অমলাকে দেখে, পথে-ঘাটে মৃদু হেসে লোকজন বলতেন, ত্রে জোলে, ত্রে জোলে। বিমর্ষ অমলা ভাবলেন, তবে কি এরাও বলছে, তুমি কালো মেয়ে! খোঁজ নিয়ে দেখলেন, তার অর্থ, খুব সুন্দর। রূপ বিষয়টির যেমন থাকে দৃষ্টিকোণ, তেমনই থাকে চেয়ে-দেখবার প্রস্তুতিও। বোধকরি সেইদিন টের পেলেন অমলা। (Amala Shankar)
“ইউরোপে বাবার সঙ্গে ঘুরতে বেরোতেন। এক ঢাল চুল, শাড়ি পরিহিতা হাসিখুশি অমলাকে দেখে, পথে-ঘাটে মৃদু হেসে লোকজন বলতেন, ত্রে জোলে, ত্রে জোলে। বিমর্ষ অমলা ভাবলেন, তবে কি এরাও বলছে, তুমি কালো মেয়ে! খোঁজ নিয়ে দেখলেন, তার অর্থ, খুব সুন্দর।”
সেই যাত্রায় অমলা দেখেছিলেন নিরানব্বইটি মিউজিয়ম। সেন্ট পিটার, ম্যাদেলিন, নতরদাম গির্জা প্রভৃতি তো ছিলই, সঙ্গে ছিল গ্রেভা আর লুভরও। দেশে ফিরে মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে, অমলা লিখলেন বই, ‘সাত সাগরের পারে’। তখন তিনি বালিকা বটে, কিন্তু একটি দেশ মানে যে, শুধু তাঁর দ্রষ্টব্য স্থান নয়, কী অবলীলায় সেই কথাখানা ধরা পড়েছিল তাঁর সুকুমার চিত্তে। একটা দেশ, তার জল-হাওয়া, মানুষজন, সামাজিক রীতি-রেওয়াজ, বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, একটা সামগ্রিক অভিরুচিকেই যেন মেলে ধরেছিলেন তাঁর লেখায়, ওই অতটুকুন মেয়েবেলায়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশংসা করেছিলেন সেই রচনার। (Amala Shankar)
প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এগজিবিশনে প্রদর্শনীর সঙ্গে থাকত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বন্দোবস্তও। অক্ষয় ব্যস্ত থাকতেন তাঁর কাজে, অমলা ঘুরে বেড়াতেন প্রদর্শনীর চারপাশ। সেইখানেই ওরিয়েন্টাল ডান্সের কর্ত্রী ছিলেন দক্ষ নৃত্যশিল্পী নিয়তা নিয়কা। অক্ষয় নন্দীর কাছে নিজের দলের জন্য তিনি চাইলেন অমলাকে। অমলা, এর পূর্বে নাচ শেখেননি কখনও। তাঁর চেতনায় শুধু ধরা রয়েছে বৃন্দাবনের হোলি নৃত্যে পল্লীবালাদের সেই স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি আর দাক্ষিণাত্যে দেবদাসীদের মন্দির প্রাঙ্গণের স্বর্গীয় সমর্পণ। সেইটুকু মূলধন করেই এই শিল্পযজ্ঞে অনুপ্রবেশ ঘটল তাঁর। নিয়তা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, কেমন করে কলসি কাঁখে জল আনে তার দেশের মেয়েরা? কেমন করেই বা নৈবেদ্য সাজায় দেবতার উদ্দেশে, ঈশ্বরের কাছে প্রণতির ভঙ্গিটির স্বরূপই বা কেমন? সেই শুরু হল তাঁর নৃত্যের অনুশীলন। ইউরোপীয় নৃত্যে গুরুত্ব পায় পায়ের গতি, ভারতীয় নৃত্যে হাত ও অঙ্গের ভঙ্গিমা। এই পর্যায়ে সেই দুই ধারা এসে মিশল তাঁর কারুবোধে। নিয়তার কৃষ্ণনৃত্যে অংশগ্রহণ করতেন অমলা। সেই পরিবেশনে তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন খোদ প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মসিঁয়ে ডুমার। (Amala Shankar)

প্যারিসে এই প্রদর্শনীতেই উদয়শঙ্করকে প্রথম দেখলেন অমলা। যেমন নান্দনিক তেমন গুণী এই মানুষটিকে ভাল লেগেছিল তাঁর। কিন্তু স্টেজে যখন প্রথমবার দেখলেন তাঁকে, এক আশ্চর্য বিভায় যেন বিমোহিত হয়ে রইলেন তিনি। উদয়শঙ্করও তখন সদ্য গড়েছেন তাঁর নাচের দল। খ্যাতির সোপানে রয়েছেন তিনি। দেশ-বিদেশের খাস সব মানুষ জড়ো হয়েছেন তাঁর কর্মোদ্যোগে। অমলার নাচও দেখেছেন উদয়, তিনি চাইলেন অমলাও যুক্ত হোক তাঁদের দলে। উদয়শঙ্করের মা হেমাঙ্গিনী দেবীও সেই অনুমতি চাইলেন অমলার পিতা অক্ষয়ের কাছে। দেশ থেকে স্ত্রীর সমর্থন এসে পৌঁছলে, তারপর সম্মত হলেন অক্ষয়। অমলা রইলেন প্যারিসে হেমাঙ্গিনীর স্নেহাশ্রয়ে আর চিরদিনের মতো স্মৃতিতে অক্ষয় হয়ে রইল সেইসব আশ্চর্য দিনগুলি। উদয়শঙ্করের ছোট ভাই সেতার ঘরানার কিংবদন্তি রবিশঙ্কর তখন নেহাত বালক। অমলার চেয়ে মাত্র একবছরের ছোট, ওখানে তাঁর একমাত্র খেলার সঙ্গী। সারাদিন নাচের পর কখনও পাশবালিশ নিয়ে রবির সঙ্গে নাচছেন ‘ব্লু ড্যানিউব’, তো কখনও হেমাঙ্গিনীকে পড়ে শোনাচ্ছেন কৃত্তিবাসী রামায়ণ। (Amala Shankar)
উদয়শঙ্করের বাবা শ্যামশঙ্কর ছিলেন খুব উঁচুদরের পণ্ডিত। ছিলেন উদয়পুরের মহারাজার পারিবারিক শিক্ষক। প্যারিসে একত্র থাকাকালীন শ্যামশঙ্কর পড়াতে বসাতেন এই দুই বালক-বালিকাকে।
উদয়শঙ্করের বাবা শ্যামশঙ্কর ছিলেন খুব উঁচুদরের পণ্ডিত। ছিলেন উদয়পুরের মহারাজার পারিবারিক শিক্ষক। প্যারিসে একত্র থাকাকালীন শ্যামশঙ্কর পড়াতে বসাতেন এই দুই বালক-বালিকাকে। কিন্তু সেই সব নীরস কর্তব্য-কর্ম থেকে নিষ্কৃতি পেতে ফন্দি আঁটতেন ছোট্ট রবি। উদয়শঙ্করের দলের সঙ্গে নানা স্থানে পরিভ্রমণ আর নৃত্য পরিবেশনের পর ১৯৩২-এ হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে অমলা ফিরলেন দেশে। (Amala Shankar)
প্রখ্যাত রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ছিলেন অক্ষয় নন্দীর বন্ধুস্থানীয়। একদিন অক্ষয়ের কাছে ফোন এল প্রশান্ত মহলানবিশের। তাঁদের বরাহনগরের বাড়িতে আসছেন রবীন্দ্রনাথ। সেইদিনটিতে অমলাকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী রানি মহলানবিশ একবার এনে রাখতে চান তাঁদের কাছে। সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে দেখলেন অমলা। কী অপরূপ এক মানুষ! রবীন্দ্রনাথের সামনে অমলা পরিবেশন করলেন ‘দেবদাসী’ নৃত্য। নাচ শেষ হলে রবীন্দ্রনাথ বললেন, তুমি যাবে শান্তিনিকেতনে? অমলা প্রণাম করলেন তাঁকে। (Amala Shankar)
আরও পড়ুন: রবির গানে অষ্টনায়িকা— একটি সংগীত ও নৃত্য আলেখ্য
বিকেলে রানিমাসির গাড়ি পৌঁছে দেবে তাঁকে, গাড়িতে উঠতে গিয়ে চমকে গেলেন অমলা, ভেতরে বসে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি চলেছেন কোনও অনুষ্ঠানে। কালো সিল্কের পাঞ্জাবি। কালোর ওপর ব্রোকেট সুতোর হায়দরাবাদি নকসা। রবীন্দ্রনাথের কত কথাই তো রয়েছে মস্ত-মস্ত বই জুড়ে কিন্তু এমন মরমি স্মৃতির আখ্যানে যেন অমলা ভরিয়ে দেন আমাদের। অমলা লক্ষ্য করলেন, ওঁর হাতের ওপর হাতখানা রাখা। গাঢ় গোলাপি আভায় মনে হয় বুঝি পদ্মফুল। গাড়ি চলছে ধীরে। রাস্তার লোক সব চমকে যাচ্ছে, পাশের লোককে ডেকে বলছে, অ্যাই রবীন্দ্রনাথ! অ্যাই রবীন্দ্রনাথ! অমলা তাকিয়ে আছে পাশে বসা অবিচল ওই মানুষটির দিকে, যেন রয়েছেন কোন অগম পারে। কিশোরী অমলা বিস্মিত হয়ে ভাবেন, চলেছি কোন মানুষের সঙ্গে, যাঁকে সবাই চেনে আর দেখে থ বনে যান মুহূর্তে? (Amala Shankar)

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দীর্ঘ সংস্রবে ছিলেন লেনার্ড এলমহার্স্ট। শান্তিনিকেতনের পল্লীপুনর্গঠন, গ্রামোন্নয়ন এবং শিক্ষা সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ডের ডেভেনশয়ারে এলমহার্স্ট নির্মাণ করেন ডার্টিংটন হল। আবার লেনার্ডের সঙ্গে সম্বন্ধসূত্রে তাঁর কর্মধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৩৯ সালে উদয়শঙ্কর আলমোড়ায় গড়ে তুললেন ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার’। সক্রিয়ভাবে পাশে থাকলেন লেনার্ড ও তাঁর স্ত্রী ডরোথি। ভারতবর্ষের তাবড় গুণী-জ্ঞানী-প্রাজ্ঞরা যুক্ত হলেন এই কলাকেন্দ্রে। এলেন গুরু শঙ্করন নাম্বুদ্রি, আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব, আলি আকবর খান, বালা সরস্বতীর গুরু ভরতনাট্যম কলাকার কন্ডাপা পিল্লাই, মণিপুরি নৃত্যশিল্পী গুরু অমোবি সিং, জোহরা, উজরা প্রমু্খ। রবিশঙ্করের সঙ্গে গুণী অন্নপূর্ণার বিবাহ হল এই আলমোড়ায়, এখানেই রইলেন উদয়শঙ্করের আরেক ভাই রাজেন্দ্রশঙ্কর আর অশেষ গুণের অধিকারী, তাঁর স্ত্রী, লক্ষ্মীশঙ্করও। ভারত-শিল্পের ইতিহাসে এক দৃষ্টান্ত তৈরি করল আলমোড়া। (Amala Shankar)
কবি দ্বিজেন্দ্রলালের পুত্র ও অক্ষয় নন্দীর সুহৃদ দিলীপকুমারের কাছে একবার অমলার নাচ দেখবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর বন্ধু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নাচ দেখবার পর দুটি কথা জানিয়েছিলেন, অক্ষয় নন্দীকে। প্রথমত, নাচের সঙ্গে অমলার সম্বন্ধ যেন ছিন্ন না হয় কখনও। দ্বিতীয়ত, অমলার যোগ্য স্থান হবে উদয়শঙ্করের আলমোড়া। এই ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন উদয়ও। আলমোড়ায় এলেন অমলা। শুধুমাত্র নৃত্যশিক্ষা নয় সার্বিক মনুষ্যত্ববোধের উন্নয়নটিকে মাথায় রেখে করা হয়েছিল এর পরিকল্পনা। সকালে মুভমেন্টের ক্লাস, সন্ধেবেলায় ইম্প্রোভাইজেশন। হত বিখ্যাত বিষ্ণুদাস শিরালির গানের ক্লাস। সকালে ধ্রুপদি নৃত্যের সঙ্গে গুরু নাম্বুদ্রির কাছে শিক্ষার্থীরা শিখতেন অভিনয়। অবসরে ছিল ব্যাডমিন্টন আর টেনিসের ব্যবস্থা। চলত অনুষ্ঠানের মহড়া। সেসময় এখানে ছাত্র ছিলেন গুরু দত্ত, শচীনশঙ্কর, প্রভাত গাঙ্গুলি, নরেন্দ্র শর্মার মতো গুণী শিল্পীদল। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ভারত সংস্কৃতিতে পরবর্তীকালে যাঁরা কারুচর্চায় হয়ে উঠবেন এক-একজন দিকপাল। (Amala Shankar)
“সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে দেখলেন অমলা। কী অপরূপ এক মানুষ! রবীন্দ্রনাথের সামনে অমলা পরিবেশন করলেন ‘দেবদাসী’ নৃত্য। নাচ শেষ হলে রবীন্দ্রনাথ বললেন, তুমি যাবে শান্তিনিকেতনে? অমলা প্রণাম করলেন তাঁকে।”
আলমোড়ায় থাকতেই উদয় আর অমলা টের পেলেন একে অপরের প্রতি তাঁদের প্রেমানুভূতি। বিবাহ স্থির হল আলমোড়াতেই। ১৯৪২, ৮ মার্চ। বিবাহের দিন, এমনকি অনুষ্ঠানের মাত্র আড়াই ঘণ্টা আগে, অনাবিল সেই অপেক্ষার মুহূর্তেও নিজের তীব্র অনুভূতিকে ব্যক্ত করে উদয় চিঠি লিখলেন অমলাকে। অমলা হলেন অমলাশঙ্কর। (Amala Shankar)
ঠিক এই সময়টিতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উন্মত্ত সময়ে তখন ব্যস্ততাও অনেকটা স্তিমিত সেন্টারে। এই অবসরে প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র ‘কল্পনা’র পরিকল্পনা শুরু করলেন উদয়শঙ্কর। প্রথমে স্থির হয়েছিল কলকাতার ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে হবে শুটিং। পরে সে সিদ্ধান্ত বদলে কাজ শুরু হল, তখনকার মাদ্রাজ, এখনকার চেন্নাইয়ের জেমিনি স্টুডিয়োতে। সে এক সুবিশাল আয়োজন, যেমন বড় তার সেট, তেমন তার শিল্পী-সংখ্যা! দু-বছর ধরে চলল ছবি তৈরির প্রথম পর্বের কাজ, পরে প্রায় সাত বছর ধরে চলল ছবির সম্পূর্ণ নির্মাণ আর সম্পাদনা ও অন্যান্য আয়োজন। এই ছবিতে অমলা গ্রহণ করলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ছবি তৈরির আগে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন অমলা, স্টুডিয়োতে শুটিংয়ের সময়ে ছোট্ট আনন্দশঙ্করের যত্ন নিতেন মা অমলা। পরে তাঁদের জীবনে এলেন কন্যা মমতাশঙ্কর। (Amala Shankar)

‘কল্পনা’ এক পরিণত শিল্পীর অভিজ্ঞতা আর জীবনবোধ থেকে নির্মিত এক অ-ভূতপূর্ব চলচ্চিত্র। তা কেবল এক ছবি নয়, দেশীয় শিক্ষা, রাজনীতি, গ্রামোন্নয়ন, অর্থবৈষম্য, সমাজ-ভাবনার এক অসামান্য নৃত্যভাষ্য। বিষয়ের দিক থেকে তো বটেই, কাহিনি কথনের আঙ্গিকেও ‘কল্পনা’ সমকালের থেকে প্রাগসর। (Amala Shankar)
এই শিল্পময় দাম্পত্য কেবল রচনা করেনি এক নৃত্য-আবহের নীড়, তা শিল্পসৃজনেও যেন অনন্য এক নিদর্শন এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারতশিল্পের মানচিত্রে।
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
তথ্য ও চিত্র কৃতজ্ঞতা: আন্তর্জাল
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। দীর্ঘ তেইশ বছর অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস' কলেজের বাংলা বিভাগে। গবেষণার বিষয় ছিল: রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যতত্ত্ব। রবীন্দ্রনাথ, বাংলা ছোটোগল্প, সিনেমা আর শিশুসাহিত্য বিষয়ে লিখেছেন অজস্র প্রবন্ধ। উদয়শঙ্কর ও অমলাশঙ্করের জীবনীনির্ভর তাঁর লেখা বই: 'শঙ্করসরণি'।