Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চমচমের সাম্রাজ্যে: মালদার কানসাট বনাম বেলাকোবা

Chomchom
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Chomchom)

চমচম তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? রসগোল্লা ও লেডিকেনির জন্ম উত্তর কলকাতায়, সন্দেশের জন্মবৃত্তান্ত ধোঁয়াশায় থাকলেও স্পষ্ট, এটা দক্ষিণবঙ্গের সৃষ্টি। চমচম ব্যতিক্রমী। এর জন্মস্থান বাংলাদেশে, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে। এবং বাংলাদেশের অনেকেই বলে থাকেন, চমচম হল মিষ্টির রাজা। এবং এই বাংলায় দুটি বিখ্যাত চমচমের সৃষ্টিকর্তারাও এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। একটির উৎস টাঙ্গাইলে, একটির উৎস রাজশাহীতে। (Chomchom)

আরও পড়ুন: ডাক-হরকরার চিঠি: আজও রহস্যের মাঝে চিরবিপ্লবীর দুই বিদেশিনী স্ত্রী

শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির মাঝে ছোট্ট বেলাকোবা শহর। স্টেশন লাগোয়া লেভেল ক্রসিং খুব ভয়ঙ্কর। কখন যে আটকে যাবেন কেউ জানে না। এই লাইনে ট্রেনের পর ট্রেন। একবার আটকালে দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করতে হয় লেভেল ক্রসিংয়ের গেটে। এই লেভেল ক্রসিংয়ের দু’দিকেই কিছু মিষ্টির দোকান চোখে পড়ে। মিষ্টি থাকে অনেক রকম। তবে সব দোকানেই প্রধান আকর্ষণ বেলাকোবার বিখ্যাত চমচম। (Chomchom)

উত্তরবঙ্গে বেলাকোবার চমচমের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিতে পারে শুধু মালদার কানসাটের চমচম। শুধু উত্তরবঙ্গে নয়, পুরো বঙ্গেই। এবং দুটোতেই লেগে রয়েছে অখণ্ড বঙ্গের অমূল্য স্মৃতি। যা এখন শুধু পদ্মাপারের। একটিতে টাঙ্গাইলের, একটিতে রাজশাহীর। (Chomchom)

Chomchom

পাল্লা দিতে পারে, কথাটা লিখলাম। লেখার পর মনে হল, কথাটা বলা বুঝি ঠিক হল না। বরং লেখা উচিত বেলাকোবাকে ছাপিয়ে গিয়েছে মালদা। যদিও সারা বাংলায় ব্র্যান্ডের প্রচারের ক্ষেত্রে দুটোই সমান ব্যর্থ। (Chomchom)

বাংলার দুটো বিখ্যাত চমচমের মধ্যে মূল ফারাকটা কোথায়? বেলাকোবার চমচম অনেক মিষ্টি! একটা খেলেই গা গুলিয়ে যেতে বাধ্য! কানসাটের চমচম ততটা মিষ্টি নয়। দিব্যি একাধিক খেয়ে নেওয়া যায়। এ মিষ্টি বরং মুখে দিলে গলে যায়। (Chomchom)

আরও পড়ুন: স্মৃতির আকাশ থেকে: আলী আকবর খান

বেলাকোবায় চমচমের বৈচিত্র খুব কম। যে দোকানেই যান না, স্বাদ মোটামুটি একইরকম। মালদায় কানসাটের স্বাদের রকম ফের অনেক। এক এক জনের এক একটা দোকানের কানসাট ভাল লাগে। মকদমপুরের কাছে, শহরের সবচেয়ে পুরোনো কানসাটের দোকান কানসাট সুইটসের চমচম একটু বেশি রসালো, মিষ্টি একটু বেশি। রবীন্দ্র সরণির পাবনা সুইটসের আবার চমচমটা একটু সাদা। মিষ্টি কম। সাইজে অনেকটা বড়। রূপকথা সিনেমা হলের কাছে, রতন সুইটসে চমচম একটু লালচে। উপরে ক্ষীরের গুঁড়ো ছড়ানো থাকে বেশি। চারশো বিশ মোড়ের কাছে, রাধারানী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও বাসন্তী সুইটসের কানসাটের চমচম অনেকটা ওইরকম। (Chomchom)

প্রশ্ন তুলতেই পারেন, আপনি হঠাৎ চমচম নিয়ে পড়লেন কেন এত খাবার থাকতে?
কারণ একটাই। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগেও বাঙালির মিষ্টি বলতে পাঁচ মিষ্টিকে প্রধান ধরা হত। বিয়ে বাড়িতে এদেরই ছিল রাজকীয় উপস্থিতি। রসগোল্লা-চমচম-লেডিকেনি-সন্দেশ-বোঁদে। এদের দাপটে অন্য মিষ্টির প্রবেশ ছিল একেবারে নিষিদ্ধ। এই পঞ্চপান্ডবের মধ্যে আজ সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্থ চমচম। (Chomchom)

এসব পড়ে শৈশবে ভেবেছিলাম, দমদমেই বুঝি দেশ চমচমের। একবার দমদম টু নাগেরবাজার, নামী মিষ্টির দোকানে চমচম খুঁজতে গিয়েছিলাম। এবং হতাশ হয়ে ফিরি যথারীতি।

চমচমের জনপ্রিয়তা কতটা ছিল সে সময়, তা টের পাওয়া যায় বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক মোহিত ঘোষের লেখা ছড়া ‘চমচম’ এ। একটা সময় এ ছড়া মুখে মুখে ঘুরত। ‘চমচম ভাই চমচম তোর/ দমদমে কি দেশ?/ ইচ্ছে যে যায় এক কামড়ে/করবো তোরে শেষ/রসগোল্লার মাসতুতো ভাই/পানতুয়া তোর পিসে,/ছানার ফাঁকে মিষ্টি-মধুর/রস রয়েছে মিশে।/দুইদিকটা সরু সরু/চেহারাটা বেশ/চ্যাপ্টামুখো চমচম তোর/দমদমে কি দেশ?’ (Chomchom)

এসব পড়ে শৈশবে ভেবেছিলাম, দমদমেই বুঝি দেশ চমচমের। একবার দমদম টু নাগেরবাজার, নামী মিষ্টির দোকানে চমচম খুঁজতে গিয়েছিলাম। এবং হতাশ হয়ে ফিরি যথারীতি। বহু পরে জানতে পারি, মোহিতবাবুর বাড়ি আসলে জলপাইগুড়ি শহরে। বেলাকোবা থেকে কাছেই। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, চমচমের আসল জন্ম কোথায়। স্রেফ ছন্দের জন্যই দ্বারস্থ হয়েছিলেন দমদমের। (Chomchom)

যে রসগোল্লার মাসতুতো ভাই এবং যার পিসে পানতুয়া, সেই চমচম এখন বাঙালির বিয়ে বাড়িতে কার্যত পরিত্যক্ত। লেডিকেনিও হারিয়ে যাওয়া মুখে। লেডিকেনিকে পান্তুয়া বলে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে সর্বত্র, যা একেবারেই সত্যি নয়। তবু বাঙালি লেডিকেনি ও পান্তুয়ার ফারাকের স্বাদ ভুলে গিয়েছে। বিয়েবাড়িতে রসগোল্লা আজও গ্রামের দিকে চলতে পারে, তবে শহরে অচল। রসগোল্লা মানেই এখন শহুরে অনুষ্ঠানে আর কোনও আভিজাত্য নেই, তো চমচমের কি থাকবে? (Chomchom)

কলকাতার মিষ্টির দোকানে ঢুঁ মারলে এখনও অনেক চমচম পাবেন। অনেক মানে অনেক। শুনে ভাববেন, তা হলে চমচম বিপন্ন কোথায়? এর তো বিস্তার হয়েছে।

কলকাতার মিষ্টির দোকানে ঢুঁ মারলে এখনও অনেক চমচম পাবেন। অনেক মানে অনেক। শুনে ভাববেন, তা হলে চমচম বিপন্ন কোথায়? এর তো বিস্তার হয়েছে। মালাই চমচম, ক্ষীর চমচম, ক্রীম চমচম, কেশরিয়া চমচম, নলেন গুড়ের চমচম, বেকড চমচম, ফ্রুট চমচম, ডিলাইট চমচম, ম্যাঙ্গো চমচম, অরেঞ্জ চমচম, রোল চমচম, রাবড়ি চমচম, গুড় মালাই চমচম। (Chomchom)

তবে চমচম বলতে গিয়ে আমরা যে দুই দিকটা সরু সরু, চ্যাপ্টামুখো’ মিষ্টি বুঝে থাকি, সেই চমচমের অস্তিত্ব বিপন্ন। এই যে এত চমচম, সবই আসলে ফিউশনের নমুনা। বিখ্যাত গাঙ্গুরামের পরিবারের এখন শরিকী সমস্যার জন্য নানারকম দোকান। সেখানে বরং সব দোকানেই এখনও হরতনের মতো দেখতে চমচম পাওয়া যায়। চেহারাটা অন্য বলেও যে জিনিসগুলো দিয়ে তৈরি, তাতে পুরোনো মিষ্টির স্মৃতি কিছুটা লেগে রয়েছে। (Chomchom)

Chomchom

পুরোনো চমচম দিনদিন বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নটা করলে অধিকাংশ মিষ্টির দোকানে উত্তর পেয়েছি, ‘চমচম একটু বেশি মিষ্টির। তাই এখনকার লোকে পছন্দ করে না।’ (Chomchom)

মালদার কানসাটের চমচম সেখানে একেবারে স্বর্গীয় অনুভূতি। একেবারে অন্যরকম। কদম ফুলের মতো দেখতে রসকদম্ব সে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি। তবে সে শহরে লোকের বাড়িতে গেলে দেখবেন, অতিথিকে রসকদম্বের বদলে কানসাটের চমচমই দেওয়া হচ্ছে বেশি। মালদার পাবনা সুইটস বা কানসাট সুইটসে দুপুর বারোটার পরে আপনি চমচম পাবেন না। বেলাকোবার চমচমে মিষ্টি বেশি বলে অনেকদিন থেকে যায়। যেমন বহুদিন থেকে যায় মালদার রসকদম্ব। মালদায় কানসাট কিন্তু থাকে না বেশিদিন। কানসাটের রাজ্য বিস্তারের পক্ষে এটা একটা বড় বাধা। (Chomchom)

বেলাকোবা এবং মালদা, দুটোর বিখ্যাত চমচমের মার্কেটিংয়ের খারাপ দশা দেখলে অবাক লাগে। বিশেষ করে বেলাকোবার। শহর থেকে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি খুব কাছে। অথচ দুটোর কোনও শহরে আপনি বেলাকোবার চমচম পাবেন না।

বেলাকোবা এবং মালদা, দুটোর বিখ্যাত চমচমের মার্কেটিংয়ের খারাপ দশা দেখলে অবাক লাগে। বিশেষ করে বেলাকোবার। শহর থেকে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি খুব কাছে। অথচ দুটোর কোনও শহরে আপনি বেলাকোবার চমচম পাবেন না। শিলিগুড়ি শহরে ঘুরছি হয়তো, সেখানে গঙ্গারামপুরের দই পাবেন। নবদ্বীপের দই পাবেন। বহরমপুরের ছানাবড়া পাবেন। পাবেন জামালদহের আমদই। পাবেন না শুধু বেলাকোবার চমচম। অথচ তার জি আই ট্যাগের দাবিতে সরব স্থানীয় মানুষ। (Chomchom)

আরও পড়ুন: ম্যান ইটার্স অফ সাভো থেকে প্যালেস্তাইন ক্যাম্পেন

তিনটে কারণ থাকবে এর পিছনে। এক, বেলাকোবার গুটিকয়েক দোকানির চমচম মার্কেটিংয়ের কোনও বাড়তি উৎসাহ নেই। দুই, উত্তরবঙ্গেই বেলাকোবার চমচমের জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। তিন, বেলাকোবার সেই দক্ষ কারিগররা আর নেই। (Chomchom)

মালদার কানসাটের চমচমের জনপ্রিয়তা অক্ষত। তবে সেক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ের একটা নেতিবাচক দিক, সাধারণত দুদিনের বেশি থাকে না এই চমচম। মিষ্টি কম বলে। কানসাট সুইটসের চমচমে মিষ্টি বেশি বলে ওটা থাকে বেশিদিন। তবে কানসাটের চমচম একেবারে টাটকা খেতে যত অমৃতসমান, একটু সময় গড়ালে ফ্রিজে রেখে খেলে সেই স্বাদ থাকে না। কলকাতায় বিভিন্ন জেলা থেকে মিষ্টি নিয়ে এসে মিষ্টি মেলা হয় মাঝে মাঝেই। সেখানে কিন্তু মালদার রসকদম্বই দেখা যায় বেশি, কানসাটের চমচম নয়। (Chomchom)

পরে কোথাও লিখতে গিয়ে ভুলে যাব, এখানেই জুড়ে দেওয়া ভাল। খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মজার তথ্য। এই যে আমরা কানসাটের চমচম, কানসাটের চমচম করে যাচ্ছি, এই কানসাট কিন্তু আসলে বাংলাদেশের এক গ্রাম। আগে ছিল রাজশাহি জেলার। এখন চাঁপাই নবাবগঞ্জের। এই বাংলায় সম্ভবত কানসাটের চমচমই একমাত্র মিষ্টি, যে নামের মধ্যে বাংলাদেশের চিহ্ন বহন করছে। লোকে দোকানে গিয়ে বলে না, কানসাটের চমচম দিন। বলে কানসাট আছে? আর কোনও বাঙালি মিষ্টিকে বাংলাদেশের জায়গার নামে ডাকা হয় বলে জানা নেই। (Chomchom)

নবীন দাস ও ভীম নাগের উত্তরসূরিদের দোকান আজও দৃশ্যমান। সন্দেশের জন্মবৃত্তান্ত ধোঁয়াশায় থাকলেও এটা স্পষ্ট, এই মিষ্টি দক্ষিণবঙ্গের সৃষ্টি। চমচম ব্যতিক্রমী। এর জন্মস্থান টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে। জিআই ট্যাগ রয়েছে সেখান থেকে।

চমচম? চমচম তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? চমচম আসলে বাংলাদেশের সৃষ্টি। রসগোল্লা ও লেডিকেনির উত্তর কলকাতায় জন্ম। নবীন দাস ও ভীম নাগের উত্তরসূরিদের দোকান আজও দৃশ্যমান। সন্দেশের জন্মবৃত্তান্ত ধোঁয়াশায় থাকলেও এটা স্পষ্ট, এই মিষ্টি দক্ষিণবঙ্গের সৃষ্টি। চমচম ব্যতিক্রমী। এর জন্মস্থান টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে। জিআই ট্যাগ রয়েছে সেখান থেকে। এবং বাংলাদেশের অনেকেই বলে থাকেন, চমচম হল মিষ্টির রাজা। এবং এই বাংলায় দুটি বিখ্যাত চমচমের সৃষ্টিকর্তারাও এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। একটির সূত্র টাঙ্গাইলে, একটি সূত্র রাজশাহীতে। (Chomchom)

আমরা আমজনতা বাংলাদেশের খাবার বলতে ইলিশই বুঝি শুধু। বছর তিনেক আগে খাবার নিয়ে এক বিশ্বজোড়া সমীক্ষা ধারণাটা পাল্টে দিতে পারে। টেস্ট ‌অ্যাটলাস সমীক্ষা করেছিল বিশ্বের সেরা কুইজিন্সের। সেখানে দেশ হিসেবে ইতালি হয়েছিল এক নম্বর। তারপর গ্রিস, স্পেন, জাপান। পাঁচে ছিল ভারত। বাংলাদেশ ৪৩ নম্বর। (Chomchom)

আসল চমক এখানেই। বাংলাদেশের সেরা ১০ খাবারের মধ্যে ছিল ফুচকা, বিভিন্ন পদের ভর্তা, চমচম, পান্তা ইলিশ, ইলিশ মাছের পাতুরি, সর্ষে ইলিশ, মাছের ঝোল, জিলিপি, বিরিয়ানি ও চটপটি। কেন চমচমকে সেখানে মিষ্টির রাজা বলে, বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই। (Chomchom)

পোড়াবাড়ি হল টাঙ্গাইলের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। দুশো বছর আগে চমচম তৈরি করেছিলেন যশরথ হালুই নামে এক কারিগর। যিনি আসলে অসমের লোক। এই লালচে রংয়ের চমচমের সঙ্গে দেখতে অনেক মিল কানসাটের চমচমের।

পোড়াবাড়ি হল টাঙ্গাইলের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। দুশো বছর আগে চমচম তৈরি করেছিলেন যশরথ হালুই নামে এক কারিগর। যিনি আসলে অসমের লোক। এই লালচে রংয়ের চমচমের সঙ্গে দেখতে অনেক মিল কানসাটের চমচমের। এখন দেখতে দেখতে টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজার ছেয়ে গিয়েছে চমচমের দোকানে। অন্তত ২৫টি মিষ্টির দোকান সেখানে। নামই হয়ে গিয়েছে মিষ্টিপট্টি। সেখানে বছর খানেক আগে টাঙ্গাইল সুইটসের মালিক দীপোজ্জ্বল সাহা চালু করেছেন মিনি চমচম। সেটাও এখন হচ্ছে আরও অনেক দোকানে। (Chomchom)

বেলাকোবার চমচমের পিছনে রয়েছে টাঙ্গাইলের হাত। দেশভাগের সময় বেলাকোবায় চলে আসেন টাঙ্গাইলের দুই বন্ধু ধীরেন সরকার ও কালীদাস দত্ত। তাঁদের হাত ধরেই তৈরি হয় বেলাকোবার চমচম। টাঙ্গাইলের চমচম থেকে একটু আলাদা করার ভাবনা দুই বন্ধুরই। তবে মূল সুতোটি টাঙ্গাইলেরই। পোড়াবাড়ির চমচমের ঘরানার সঙ্গে বেলাকোবার চমচমের ঘরানার পার্থক্য কী? পোড়াবাড়ির চমচম আসলে কড়াপাক। কিন্তু বেলাকোবায় কড়াপাকের সঙ্গে যুক্ত হয় অনেক ক্ষীর। এত ক্ষীরের ব্যবহার টাঙ্গাইলে হয় না। (Chomchom)

আর একটা আকর্ষণীয় তথ্য। গ্রাম বাংলায় অনেক দোকানেই দেখবেন সাদা রংয়ের চমচম। এখানেও রয়েছে টাঙ্গাইলের যোগসূত্র। পোড়াবাড়ির পাশাপাশি টাঙ্গাইলের বিলপাড়ার চমচমও জনপ্রিয়। পোড়াবাড়ি ঘরানার চমচম যেখানে গাঢ় বাদামি বা লালচে, বিলপাড়ার চমচম সাদা বা হালকা বাদামি।

আর একটা আকর্ষণীয় তথ্য। গ্রাম বাংলায় অনেক দোকানেই দেখবেন সাদা রংয়ের চমচম। এখানেও রয়েছে টাঙ্গাইলের যোগসূত্র। পোড়াবাড়ির পাশাপাশি টাঙ্গাইলের বিলপাড়ার চমচমও জনপ্রিয়। পোড়াবাড়ি ঘরানার চমচম যেখানে গাঢ় বাদামি বা লালচে, বিলপাড়ার চমচম সাদা বা হালকা বাদামি। এই চমচম বাইরের দিকে হালকা শক্ত। ভেতরে অনেকটা নরম। (Chomchom)

এখন কলকাতা শহরে বেলাকোবার চমচমের প্রতিফলন পাবেন আনোয়ার শা রোডের হরগৌরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। সেখানে যে চমচম মেলে, তার স্বাদ অনেকটা বেলাকোবার মতো। নাম কী? প্রশ্ন করলে কাউন্টারের ভদ্রলোক বলবেন, পোড়াবাড়ির চমচম। এই পোড়াবাড়ি কিন্তু সেই টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির। টাঙ্গাইল কানেকশন এই দোকানের মিষ্টিতে এল কী করে? আসলে এই দোকানের মালিকরাও ভারতে এসেছিলেন টাঙ্গাইল থেকে। স্টাইলটা তাই বেলাকোবার স্টাইল হয়ে গিয়েছে। লেখাটার জন্যই খেতে গিয়েছিলাম। একেবারে বেলাকোবার কথা মনে হল। মিষ্টি অত্যন্ত তীব্র। যারা প্রচুর মিষ্টি খেতে ভালবাসেন, তাঁদেরই শুধু পছন্দ হতে পারে। যদিও ওখানে দোকানিরা একদিন বলছিলেন, চমচম যায় বিদেশেও। চাহিদা যথেষ্ট ভাল। (Chomchom)

Chomchom

কানসাটের চমচম কী করে এল মালদায়?

দেশভাগের সময় রাজশাহীর কানসাটের অনেক মিষ্টি ব্যবসায়ী চলে আসেন এই বাংলায়। কানসাটের চমচমের আলো প্রথম দেখিয়েছিলেন মহেন্দ্রনাথ সাহা। তাঁর ছেলে বিজয় কুমার সাহা মালদায় চলে এসে শুরু করেন কানসাটের চমচম। ওঁদেরই দোকান কানসাট সুইটস। খুব ছোটখাটো দেখতে। পুরোনো। দেখলে শ্রদ্ধা হবে না তেমন। মিষ্টিগুলো যে ভাবে রাখা হয়, মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। বর্তমান মালিকরাও খুব গম্ভীর, হাসেন না। বেশি কথা বলেন না। কিন্তু কানসাটের চমচমের স্বাদ তুলনাহীন। (Chomchom)

মজা লাগবে শুনতে, বাংলাদেশের কানসাটের চমচমের কিন্তু অতটা দেশজোড়া খ্যাতি নেই। বরং জিআই ট্যাগ নিয়ে বসে আছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। শেষ তিনটি ট্যাগ পেয়েছে সবে, গত বছর। টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ি ও বিলেপাড়ার চমচমের সঙ্গে পাল্লা দেয় রাজবাড়ীর চমচম। কানসাট বরং বেশি বিখ্যাত আমের জন্য। মালদার মতো সেখানেও ঢেলে আম হয় প্রতিবার। (Chomchom)

অবশ্য এখানেও একটা বড় মোচড় রয়েছে। বাংলাদেশে এই অঞ্চলের চমচমকে বলে আদি চমচম। যা নবাবি আমল থেকে হয়ে আসছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের চমচম বলতে বোঝানো হয় শিবগঞ্জ উপজেলার মিষ্টি। শিবগঞ্জের কাছেই কানসাট, মনকষা বাজার।

অবশ্য এখানেও একটা বড় মোচড় রয়েছে। বাংলাদেশে এই অঞ্চলের চমচমকে বলে আদি চমচম। যা নবাবি আমল থেকে হয়ে আসছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের চমচম বলতে বোঝানো হয় শিবগঞ্জ উপজেলার মিষ্টি। শিবগঞ্জের কাছেই কানসাট, মনকষা বাজার। সেখানকার অধিকাংশ মিষ্টিই বিখ্যাত। দমমিষ্টি বা প্যাড়া, রসকদম্ব, ছানার জিলিপি, জিলিপি স্পঞ্জ গোল্লা, মোতিচুরের লাড্ডু। এখানেই সবচেয়ে জনপ্রিয় আদি চমচম। এক সময় একটা চমচমের ওজন ছিল এক মণ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের মানুষের পক্ষ থেকে ৩৫ কেজি ওজনের একটি চমচম দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদকে দেওয়া হয়েছিল ২৮ কেজি ওজনের চমচম। বোঝাই যায়, বাংলাদেশে কানসাটের মিষ্টি শিবগঞ্জের মিষ্টির মধ্যেই পড়ে যায়। (Chomchom)

কী ভাবে বানানো হয় বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের সর্বোত্তম চমচম?

ঢাকার প্রথম আলো কাগজে পড়লাম, জিআই ট্যাগের জন্য আবেদনের সময় এই মিষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘গাঢ় বাদামি রঙের লম্বাটে আকৃতির এমন চমচমের বাইরের আকৃতি কিছুটা শক্ত হলেও ভেতরে রয়েছে ফাঁপা। আর ফাঁপার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে থাকা রসালো অংশে কামড় দিলেই বুঝতে পারা যায় এর আসল স্বাদ। বাইরে থেকে কেউ টাঙ্গাইলে এলে বা টাঙ্গাইল থেকে কোথাও গেলে এই চমচম সঙ্গী হবেই, এর কোনও বিকল্প নেই।’ (Chomchom)

বাংলাদেশের বন্ধুদের কাছে শুনলাম, পাঁচ কেজি ছানার সঙ্গে মেশানো হয় ২৫০ গ্রাম ময়দা। ভালো করে মেখে মিষ্টির আকার দিয়ে চিনির সিরায় জাল দিতে হয় অন্তত আধঘণ্টা। ক্রমে পোড়া ইঁটের রং হবে ওই মিষ্টিগুলোর। সেই মিষ্টি ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হবে দুধ জাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি করা গুঁড়ো ক্ষীর। (Chomchom)

টাঙ্গাইলের চমচম নিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক মৌলানা ভাসানীর একটি গল্প রয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশিদের গভীর এক বিশ্বাস। সেই চমচমের চমৎকার স্বাদের পিছনে নাকি বড় ভূমিকা রয়েছে ধলেশ্বরী নদীর জলের।

টাঙ্গাইলের চমচম নিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক মৌলানা ভাসানীর একটি গল্প রয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশিদের গভীর এক বিশ্বাস। সেই চমচমের চমৎকার স্বাদের পিছনে নাকি বড় ভূমিকা রয়েছে ধলেশ্বরী নদীর জলের। শহর লাগোয়া ধলেশ্বরী ছিল স্বচ্ছ। সবুজ ঘাস ছিল নদীর চরে। সেই ঘাসই খেত গরুর দল। দুধ হত অসাধারণ। সেই যোগসূত্র তুলে ধরে প্রবীণ কারিগররা বলতেন, ধলেশ্বরীর পানি ছাড়া এত ভাল চমচম হত না। তা ভাসানির গল্পটা সেই তত্ত্বই সমর্থন করে। (Chomchom)

ভাসানি তখন থাকতেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। সেখানকার বিখ্যাত জমিদারদের মেয়ের বিয়ে ছিল কলকাতায়। এই সন্তোষের জমিদারের নামেই কিন্তু সন্তোষ ট্রফি। ভদ্রলোক ছিলেন আইএফএ প্রেসিডেন্ট। জমিদার পোড়াবাড়ির চমচম খাওয়াবেন বলে কলকাতা নিয়ে গেলেন পোড়াবাড়ির কারিগরদের। অনেকদিন চেষ্টা করেও তারা ভালো সুস্বাদু চমচম বানাতে পারলেন না। কেন এমন হল? সবাই তখন একমত, ধলেশ্বরীর জল ছিল না বলেই গঙ্গাতীরে ভাল চমচম হল না। কেমন মিথ ছিল চমচমকে ঘিরে, কী জায়গায় পৌঁছেছিল চমচমের কৌলীন্য, ভাবলে বিস্ময় জাগে। (Chomchom)

দক্ষিণবঙ্গে চমচমের রমরমা কি পরবর্তীতেও ওই একই কারণে হল না? ধলেশ্বরীর ছোঁয়া দূর ভাবনাতে হলেও কিছুটা রয়েছে তিস্তা ও মহানন্দায়। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ নদীতে তা নেই। তাই হয়তো পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির চমচম বলতে এখনও দুটি ধারাই রয়ে গিয়েছে। মালদা ও বেলাকোবার। (Chomchom)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Rupayan Bhattacharjee

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন
মুন্সী প্রেমচাঁদ

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার

বিহার

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com