Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গণহত্যার অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো

Eli Cohen
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Eli Cohen)

এলি কোহেনের কাহিনির সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে ইজরায়েলের জন্মগ্রহণের ইতিহাস। তাই এলি কোহনকে বুঝতে গেলে তাঁর সময়কে চেনা জরুরি। শেষ হিসাবে এই সময়ই, এলি কোহেনকে তাঁর পথ নির্দেশ করে। (Eli Cohen)

শুরু হল এলি কোহেন তৃতীয় পর্ব।

আরও পড়ুন: ম্যান ইটার্স অফ সাভো থেকে প্যালেস্তাইন ক্যাম্পেন

‘ইরেত ইজরায়েল‘

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ অনুসারে ঈশ্বর প্যালেস্তাইনে  ‘ইরেত ইজরায়েল‘ বা ইজরায়েলি ভূখণ্ড আব্রাহাম, আইজাক আর জেকব ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতির কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিশ্বাস করে এসেছে। উনবিংশ শতকের শেষে এই ‘প্রোমিজড ল্যান্ডের’ রূপায়ণের পথে প্রথম পা বাড়ান অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় আইনজীবী তথা সাংবাদিক থিওডোর হেরজেল। ১৮৯৭ সালে রাইন নদীর তীরে সুইস শহর বাসেলে তাঁর আহ্বানে অনুষ্ঠিত প্রথম ইহুদি কংগ্রেসে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া ইহুদি প্রতিনিধিদের সামনে  প্যালেস্তাইনকে ইহুদিদের বাসভূমি হিসাবে চিহ্নিত করেন হেরজেল। (Eli Cohen)

Eli Cohen
ইহুদি বিরোধী দাঙ্গায় জনা পঞ্চাশেক ইহুদি খুন হয়, ৬ শতাধিক আহত হয়, ৬০০ ইহুদি মহিলা ধর্ষিত হয়, ১১০০ দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু ঘটনার গতি অন্যদিকে গড়ায়। ব্রিটেন নিজের স্বার্থে কেনিয়াতে ইহুদি ভূমি করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হেরজেল তখনই তাতে সায় দেননি। এদিকে প্যালেস্তাইন তখন অটোমান সাম্রাজ্যের আওতায়। ইস্তানবুলের সঙ্গে হেরজেল আলোচনায় বসলেও খুব একটা আশাপ্রদ কিছু হল না। (Eli Cohen)

কিশিনেভ পোগ্রোম

এরই মধ্যে ১৯০৩ সালের ১৯ থেকে ২১ এপ্রিল তৎকালীন রাশিয়ার (মল্ডোভিয়ার) কিশিনেভে এমন একটা ঘটনা ঘটল যা বারংবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইজরায়েলের ইতিহাসে। ইহুদি ঐতিহাসিকরা এর নাম দিয়েছেন ‘কিশিনেভ পোগ্রোম’ (প্রাচীন রুশ ভাষায় পোগ্রোম অর্থ বজ্র অথবা ঝঞ্ঝা বলা হয়েছে। ইহুদিরা এই শব্দটাকে ইহুদিদের উপর অত্যাচার হিসাবে দেখেন) যাতে দিন তিনেকের এক ইহুদি বিরোধী দাঙ্গায় জনা পঞ্চাশেক ইহুদি খুন হয়, ৬ শতাধিক আহত হয়, ৬০০ ইহুদি মহিলা ধর্ষিত হয়, ১১০০ দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সামান্য এক গুজব থেকে এত বড় হত্যালীলার পরে ইহুদিরা যে ইউরোপে আর মোটেই নিরাপদ নন তা বুঝতে হেরজেলের কোনও অসুবিধা হল না। তখন বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ প্রস্তাবে তিনি নিমরাজি হন। (Eli Cohen)

এখানে কিশিনেভ পোগ্রোম নিয়ে দু’চার কথা বলা দরকার।

“হিব্রু সাহিত্যে যাকে রুশ ঔপনাসিক ফিওদোর দস্কয়েভস্কির সমতুল্য মনে করা হয়, সেই জোসেফ হাইম ব্রেনার ১৯০৩ সালের সেপ্টেম্বরে এক চিঠিতে লিখছেন, ”দুনিয়ায় এখন এক ও একমাত্র খবর কিশিনেভ।”

কিশিনেভ হত্যাকাণ্ড ইজরায়েলি মননে গভীর এক ক্ষত। তাঁদের মতে, বিংশ শতাব্দীতে তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করেছিল, কিশিনেভ ছিল তার প্রথম ইঙ্গিত। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ড্যানিয়েল ই কোশল্যান্ড অধ্যাপক স্টিভন জে জিপেরস্টেইন তাঁর ২০১৮ সালের ‘পোগ্রোম-কিশিনেভ অ্যান্ড টিল্ট অফ হিস্টরি’তে বলেছেন, ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষ কী নারকীয় রূপ নিতে পারে তার প্রথম ঝলক ছিল কিশিনেভ। ইজরায়েলি ঐতিহাসিক অনিতা শাপিরার মতে, মধ্যযুগীয় বর্বতার মূর্ত রূপ হল কিশিনেভ। হিব্রু সাহিত্যে যাকে রুশ ঔপনাসিক ফিওদোর দস্কয়েভস্কির সমতুল্য মনে করা হয়, সেই জোসেফ হাইম ব্রেনার ১৯০৩ সালের সেপ্টেম্বরে এক চিঠিতে লিখছেন, ”দুনিয়ায় এখন এক ও একমাত্র খবর কিশিনেভ। আমরা যদি এ নিয়ে দিবারাত্র চিৎকার করি, সেটাও যথেষ্ট নয়।“ (Eli Cohen)

ইহুদি আন্দোলনের দিকে চোখ ফেরানো যাক। কেনিয়াকে ইহুদি বাসভূমি করার ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রস্তাবে যে তিনি রাজি তা হেরজেল ১৯০৩ সালের ২৩ শে অগস্ট বাসেলে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ইহুদি কংগ্রেসে জানান। এতে বিনা মেঘে বাজ পড়ে সম্মেলনে। এতদিন প্যালেস্তাইন বলে আসার পরে হঠাৎ এই স্থান বদলে, পূর্ব ইউরোপের প্রতিনিধিরা প্রবল আপত্তি করে। সভায় প্রচণ্ড গণ্ডগোল হয়। একদল প্রতিনিধি ওয়াকআউটও করে। তবে নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন হেরজেল। কারণ সদ্য হয়ে যাওয়া কিশিনেভ গণহত্যা কার্যত তাঁর সামনে কোনও পথ খোলা রাখেনি। তাই সভার গণ্ডগোলে বিরক্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ”এদের গলায় দড়ি। তাও মানতে চাইছে না।“ (তবে হেরজেল নিজেও কিন্তু প্যালেস্তাইন লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। মৃত্যুর আগেও বলে গিয়েছেন প্যালেস্তাইনে বাসভূমিই হল ইহুদি আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এর থেকে পিছু হঠা যাবে না।) (Eli Cohen)

Eli Cohen
ইহুদি আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ রুশ ইহুদি সাংবাদিক ভ্লাদিমির জাবোতিনস্কি

ইতিহাস বলে সে যাত্রায় কোনওক্রমে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠের সায় পান হেরজেল এই বলে যে এই পূর্ব আফ্রিকা পরিকল্পনা সাময়িক। পরিস্থিতি বিচারে আপাতত এই প্রস্তাব মানা হচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেসের চূড়ান্ত লক্ষ্য প্যালেস্তাইনে ইরেত ইজরায়েলই প্রতিষ্ঠায় থাকছে। সেই লক্ষ্য থেকে কোনও নড়চড় হবে না। (Eli Cohen)

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কেনিয়া ওরফে উগাণ্ডা পরিকল্পনা ধোঁপে টেকেনি। তার এক বড় কারণ হল ১৯০৪ সালের ৩রা জুলাই নিম্ন অস্ট্রিয়ার এডলাচ গ্রামে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে হেরজেলের মৃত্যু। ফলে পূর্ব আফ্রিকা প্রস্তাবের মূল সমর্থকই না থাকায় এটা কমজোরি হয়ে পড়ে। শেষে ওই বছরের ডিসেম্বরে এক ইহুদি প্রতিনিধিদল পূর্ব আফ্রিকা সফরও করে। তাদের বিরূপ রিপোর্ট উগাণ্ডা প্রস্তাবের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয়। উগাণ্ডা পরিকল্পনার অপমৃত্যু ঘটে। (Eli Cohen)

“পরিসংখ্যান বলছে উনবিংশ শতকের শেষ ১৫ বছরে লক্ষাধিক ইহুদি পূর্ব ইওরোপ থেকে ব্রিটেনে চলে আসে।”

কেন শীতঘুম?

এরপর এই ‘ইরেত ইজরায়েল’ বা ইজরায়েলি ভূখণ্ড নিয়ে লন্ডন কার্যত শীতঘুমে চলে গিয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, পুরো বিষয়টিই আদতে লন্ডন তাঁর সামরিক ও রাজনৈতিক অঙ্ক কষেই করছিল। উগাণ্ডা প্রস্তাব যখন দেওয়া হয়েছিল তখন তার পিছনে ইংলণ্ডের কী উদ্দেশ্য তা আগেই বলা হয়েছে। যখন উগাণ্ডা প্রস্তাব হালে পানি পেল না তখন ব্রিটেন দেখল কালক্ষেপণে কোনও অসুবিধাই নেই। হেরজেলের মৃত্যু ইহুদি আন্দোলনকে অনেকটাই গতিহীন করেছে। ফলে ইহুদিদের জন্য ভূখণ্ড খোঁজার মতো বিষয়টা কিছুদিন ধামাচাপা দেওয়া যেতেই পারে। এই ‘ধীরে চলো’ নীতি ব্রিটেনের পশ্চিম এশিয়া নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ ইস্তানবুলের তুর্কিরা উত্তরের রুশ জার আর পশ্চিম এশিয়ায় ব্রিটিশ আধিপত্যের মধ্যে বাফার হয়ে দাড়িয়ে আছে। তুর্কি অধীন প্যালেস্তাইন নিয়ে বেশি উদ্যোগী হলে ইস্তানবুল হয় বাধা দেবে, না হলে রুশদের সঙ্গে হাত মেলাবে। কোনওটাই প্রাক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্বে ব্রিটেনের স্বার্থের অনুকূল ছিল না। বরং নিস্ক্রীয় হয়ে থাকাই বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। (Eli Cohen)

ব্রিটেনের এই ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণের আরও একটি অন্তঃসলিলা কারণ ছিল। উনবিংশ শতকের শেষ দিকে পূর্ব ইওরোপে যখন ইহুদি বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করল, নানা অজুহাতে ইহদি নিপীড়ন শুরু হল, তখন দলে দলে ইহুদিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চ্যানেল পেরিয়ে ব্রিটেনে চলে আসতে শুরু করল। অন্য ইউরোপীয় দেশের মতো ব্রিটেনে প্রকাশ্যে রাস্তায় ইহুদি হত তো নাই বরং সরকার থেকে ইহুদি স্কুলগুলোকে অনুদান দেওয়া হত। ইহুদিরা নিরাপদে নিজেদের ধর্মাচারণ করতে পারত, অন্য ইউরোপীয় দেশের মতো সিনাগগের মধ্যেই খুন হয়ে পড়ে থাকতে হত না। ফলে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে ব্রিটেনে ক্ষুদ্র ইহুদি জনগোষ্ঠী আগে থেকেই বাস করছিল। (Eli Cohen)

“ব্রিটিশ লেফটানেন্ট কর্নেল জন হেনরি প্যাটারসনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের ২৩শে অগস্ট ইহুদি সেনা নিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে জিউস রেজিমেন্ট গঠন করা হয়।”

পরিসংখ্যান বলছে উনবিংশ শতকের শেষ ১৫ বছরে লক্ষাধিক ইহুদি পূর্ব ইওরোপ থেকে ব্রিটেনে চলে আসে। এরা মূলত ইস্ট এণ্ড লন্ডন ও ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, লিভারপুলের মতো শিল্পশহরগুলোর কল কারখানায় কাজ করতে থাকে। প্রথমদিকে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখলেও পরে ক্রমশ বাড়তে থাকা ইহুদি কলোনিগুলোর বিরুদ্ধে স্থানীয় অসন্তোষ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ব্রাদার্স লিগের মতো সংগঠন প্রকাশ্যে বলতে থাকে ‘ইউরোপের আর্বজনা ফেলার জায়গা নয় ব্রিটেন।‘ শেষমেশ ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘বিদেশি আইন’ জারি করে ইংল্যান্ডে শরণার্থী স্রোত নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট হয়। কাগজে কলমে যে কোনও শরণার্থি হলেও, আদতে আইনটা অবশ্য ছিল ইহুদি শরণার্থির ঢল রোখার জন্য। তখন লিবারেল দলের উদীয়মান নেতা উইন্সস্টন চার্চিল এই আইনের বিরোধিতা করেন। (Eli Cohen)

তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পুরো বিষয়টাকেই অন্যখাতে ভাসিয়ে দিল। সঙ্গে পাল্টে গেল ব্রিটিশ স্বার্থও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক অক্ষশক্তিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যালেস্তাইন আক্রমণ করতে বাধা রইল না। কিন্তু তাও প্রথম দিকে ব্রিটেন দ্বিধায় ছিল। কারণ দু’টো গোপন সমঝোতা। (Eli Cohen)

মিশরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যর হেনরি ম্যাকমোহন আর হেসেমাইট নেতা শরীফ হাসানের মধ্যে ১৯১৫ সালের জুলাই থেকে ১৯১৬ সালের মার্চের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। এতে ম্যাকমোহন শরীফকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কথা বলেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্রিটিশ সাহায্য করা হবে বলে জানানোও হয়। তবে এতে ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। (Eli Cohen)

আরও পড়ুন: পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এলি কোহেন- ঊনবিংশ শতকের প্রেক্ষাপট

ম্যাকমোহান- হাসান চিঠি চালাচালির পরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দুই কূটনীতিক যুদ্ধে জেতার পরে নিজেদের দুই দেশের মধ্যে অটোমান সাম্রাজ্যের ভাগ বাঁটোয়ারা করার গোপন চুক্তি করেন। ১৯১৬ সালের মে মাসে ব্রিটিশ কূটনীতিক স্যার মার্ক সাইকেস ও ফরাসী কূটনীতিক ফ্রাঁসোয়া জর্জেস পিঁকোর এই গোপন চুক্তিতে যুদ্ধের পরে ইস্তানবুলের আওতায় থাকা পশ্চিম এশিয়ার অংশ শ’দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি করার কথা বলা হয়। বলা হয় প্যালেস্তাইনকে আন্তর্জাতিক দেখভালের আওতায় রাখার কথা। মোদ্দা কথা তখনও ইজরায়েল নিয়ে কারুরই তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। (Eli Cohen)

ব্যালফুর ঘোষণাপত্র

তবে যুদ্ধের গতি পরিবর্তনের সঙ্গেই লন্ডনের মতিও পাল্টায়। ১৯১৬, রণাঙ্গন মোটেই সুবিধার ছিল না ইংরেজদের। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্রিটিশ যুদ্ধমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল লর্ড কিচেনার ২৭ এপ্রিল মার্কিন সহায়তা চেয়ে বসলেন। এর ঠিক দু’দিন পরে তুর্কিদের ইংরেজদের বড় পরাজয় হল ইরাকের কূটে। জুলাইয়ের শুরুতে সোম রণাঙ্গণে প্রথম দিনেই ষাট হাজার ব্রিটিশ সেনার মৃত্যু হল। (Eli Cohen)

Eli Cohen
ব্যালফুর ঘোষণাপত্র

ফলে এই সময়ে, ব্রিটেনে ইহুদিদের মধ্যে যুদ্ধে যোগ দিয়ে তুর্কিদের হাত থেকে প্যালেস্তাইন ছিনিয়ে নেওয়ার আগ্রহ শুরু হল। ব্রিটিশ লেফটানেন্ট কর্নেল জন হেনরি প্যাটারসনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের ২৩শে অগস্ট ইহুদি সেনা নিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে জিউস রেজিমেন্ট গঠন করা হয়। ১৯২২ সালে লেখা ‘উইথ দ্য জুডিয়ান্স ইন দ্য প্যালেস্টাইন ক্যাম্পেন’-এ প্যাটারসন স্পষ্ট লিখেছেন ব্রিটিশ বাহিনীতে থেকে কোনও জাতি নিজেদের ‘প্রোমিইজড ল্যান্ড’ এর জন্য লড়ছে, এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ইহুদি বাহিনী ইংলণ্ডের প্লাইমাউথে প্রশিক্ষণ নিয়ে জর্ডন,প্যালেস্তাইন ও সিনাইতে লড়ে। এই দীর্ঘ যু্দ্ধই প্যালেস্তাইনে অটোমান শাসনের অবসান ঘটায় এবং এশিয়া মাইনরের এই ভূখণ্ডকে মিশরের সঙ্গে ব্রিটেনের শাসনাধীনে নিয়ে আসে। (Eli Cohen)

“ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ মন্ত্রীসভার বিদেশমন্ত্রী আর্থার জেমস ব্যালফুর ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটেনে ইহুদিদের নেতা লর্ড ন্যাথান মেয়ার রথসচাইল্ডকে এক চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র গড়ার ব্যাপারে ব্রিটেনের সম্মতির কথা জানানো হয়।”

প্যাটারসন লিখেছেন ”ইহুদি আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ রুশ ইহুদি সাংবাদিক ভ্লাদিমির জাবোতিনস্কি নিজে এই বাহিনীতে সার্জেন্ট হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন ঈশ্বর তাঁকেই সহায়তা করেন যিনি নিজে চেষ্টা করেন। তাই তিনি মনে প্রাণে চাইতেন হারিয়ে যাওয়া ভূখণ্ড ফিরে পেতে ইহুদি বাহিনী নিজে যুদ্ধ করুক।“ (Eli Cohen)

লন্ডনের নজর, আসলে ছিল সুয়েজ খালের দিকে। ফলে পাশেই যদি বন্ধুভাবাপন্ন ইহুদি রাষ্ট্র থাকে তাহলে তো লন্ডনেরই লাভ। ফলে ইহুদি সেনাবাহিনী গঠনের পাশাপাশি ইংল্যান্ড যে সর্বতোভাবে ইহুদি আন্দোলনের পাশে সেটা বোঝানোও জরুরি হয়ে পড়েছিল। এর অন্য কারণও ছিল। আমেরিকাতে তখন প্রায় ১৫ লক্ষ ইহুদি বসবাস করে। ফলে ওয়াশিংটনের আস্থা পেতে হলে এরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (Eli Cohen)

ফলে ১৯১৭ সালের ব্যালফুর ঘোষণাপত্রকে সেই আস্থা অর্জনের পথে হাঁটা বলাই যায়। ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ মন্ত্রীসভার বিদেশমন্ত্রী আর্থার জেমস ব্যালফুর ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটেনে ইহুদিদের নেতা লর্ড ন্যাথান মেয়ার রথসচাইল্ডকে এক চিঠি লেখেন। (Eli Cohen)

“বড়দিনের পরদিন এলি কোহেন জন্ম নিলেন, তখন ইহুদি জাতীয়তাবাদ পূর্ণ মাত্রায়। ‘ইরেত ইজরায়েল‘ তখন আর উপকথা নয়। বাস্তবের কাছাকাছি।”

এই চিঠিতে প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র গড়ার ব্যাপারে ব্রিটেনের সম্মতির কথা জানানো হয়। এটাই পরিচিত হয় ব্যালফুর ঘোষণাপত্র হিসাবে। এই ঘোষণাপত্রের উপর ভিত্তি করেই ১৯১৯ সালে তৎকালীন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ও বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রুশ বংশোদ্ভূত চেম ওয়াইজম্যানের (যিনি স্বাধীন ইজরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন) সঙ্গে আরব নেতা আমির ফজলের (১৯২১ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত ব্রিটিশ অধীন ইরাকের রাজাও ছিলেন ফজল) এক সমঝোতা হয় যাতে প্যালেস্তানীয় ভূখণ্ডে ইহুদিদের থাকার ব্যাপারে ফজল রাজি হন। (Eli Cohen)

তবে রাষ্ট্র্র হিসাবে ইজরায়েল আত্মপ্রকাশের পথে প্রকৃত গতি আসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্যারিস শান্তি সন্মেলনে। এই সস্মেলনে শুধু যে প্যালেস্তাইনে ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ব্যপারে ব্যালফুর ঘোষণাপত্রকেই মাণ্যতা দেওয়া হয় তাই নয়, প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হল ইংল্যান্ডকেই। এই সম্মেলনে ইহুদি প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে ওয়াইজম্যান প্যালেস্তাইনে ইহুদিদের স্বায়ত্তশাসিত বাসভূমির বিষয়টি তোলেন। (Eli Cohen)

বস্তুত থিওডোর হের্জেলের আহ্বানের আগে থেকেই, প্যালেস্তাইনে ইহুদিদের যাওয়া শুরু হয়েছে। হিব্রুতে এই যাওয়াকে’আলিয়া বলা হয়। ১৮৮১ সাল থেকে শুরু হওয়া আলিয়াতে ২০ থেকে ২৫ হাজার ইহুদি প্যালেস্তাইনে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। এদের বেশির ভাগই জেরুজালেমে থাকতে শুরু করেন। ১৮৮১ থেকে ১৯০৩ সাল চলা প্রথম আলিয়াতেই ইহুদিরা ভবিষ্যত ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা শুরু করেন। এক হিসাব বলছে ১৮৮১ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ ইহুদি প্যালেস্তাইনে গিয়ে ৪৪ টা কৃষি খামার আর প্রচুর শহর আর গ্রাম গড়ে তোলেন। ওয়াইজম্যান-ফজল সমঝোতার পর ১৯১৯ থেকে ১৯২৬ পর্যন্ত ৯০ হাজার ইহুদি প্যালেস্তাইনে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। (Eli Cohen)

আরও পড়ুন: অন্ধকার সময় বা অ্যার্জের কাহিনি

অর্থ্যাৎ ১৯২৪ সালে সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে আলেকজান্দ্রিয়ায় পালিয়ে আসা ধর্মভীরু ইহুদি পরিবারে যখন বড়দিনের পরদিন এলি কোহেন জন্ম নিলেন, তখন ইহুদি জাতীয়তাবাদ পূর্ণ মাত্রায়। ‘ইরেত ইজরায়েল‘ তখন আর উপকথা নয়। বাস্তবের কাছাকাছি। (Eli Cohen)

আদতে জন্মকাল থেকেই এই প্রাচীন মিশরীয় বন্দরনগরীর জ্ঞান বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে জগৎজোড়া খ্যাতি। একসময়ে এই নগরীতে যেমন ছিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার তেমনই এই শহরের প্রাচীন পাথুরে রাস্তায় রোমান, গ্রিক, অটোমান সেনাবাহিনীর বিশালতা দেখেছে এই প্রাচীন বন্দরী। এরপর সে ইহুদি জাতীয়তবাদের উত্থানও দেখবে। আর তাতেই মিশে থাকবে কোহেনের জীবনের অনেকখানি। (Eli Cohen)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ছবি- আন্তর্জাল

তথ্যসূত্র-
(১) স্টিভন জে জিপেরস্টেইন- পোগ্রোম-কিশিনেভ অ্যান্ড টিল্ট অফ হিস্টরি
(২) জন হেনরি প্যাটারসন- উইথ দ্য জুডিয়ান্স ইন দ্য প্যালেস্টাইন ক্যাম্পেন

Author kingshuk banerjee

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সৌম্যদ্বীপ চক্রবর্তী
সুকান্ত ভট্টাচার্য

সংস্কৃতি

আহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com