Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গন্তব্যের বাইরে: পর্যটন ভাবনা ও ট্রাভেল রাইটার্স ফোরামের সেমিনার

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

এপ্রিল ২৩, ২০২৫

Travel Writers Forum
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Travel Writers Forum)

ঝড়জলের শনিবারে (২২ মার্চ, ২০২৫) ট্রাভেল রাইটার্স ফোরামের আয়োজনে ‘সপ্তদশ বার্ষিক ভ্রমণ বিষয়ক সেমিনার ও স্লাইড প্রদর্শন’ অনুষ্ঠিত হল। এদিন সুজাতা সদন ভরে ছিল কানায় কানায়। বক্তা ছিলেন অর্পণ রায়চৌধুরী, অনিতেশ চক্রবর্তী ও সুপ্রতিম কর্মকার। এ ছাড়া বিশ্ব ঘুরে নিজের তোলা নানা পার্বণের ছবি দেখাতে দেখাতে বিবিধ গল্প শোনালেন লোপামুদ্রা তালুকদার

Travel Writers Forum
মঞ্চে সভাপতি ও বক্তারা

এ দিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শৌনক গুপ্ত। চমৎকার রসিকতা ও টানটান বাক্যের ব্যবহারে সঞ্চালনাকে উপভোগ্য করে তুলছিলেন তিনি। শুরুতেই অর্পণবাবু বললেন তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। অর্পণ রায়চৌধুরী একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক, দক্ষ আলোকচিত্রী এবং প্রখ্যাত পত্রপত্রিকার নিয়মিত লেখক। ‘দেখি বাংলার মুখ’ বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান আপামর বাংলার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বলেন, বাংলার পর্যটন সম্ভাবনা বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাপক। তীর্থভ্রমণ ছাড়াও কেউ পাহাড় ভালোবাসেন, কেউ জঙ্গল-নদী-ইতিহাস-মহাপুরুষদের ভিটেতে যেতে ভালোবাসেন। মরুভূমি বাদ দিয়ে এই বাংলায় কাঞ্চনজংঘা থেকে বঙ্গোপসাগর, মুকুট থেকে পায়ের ঘুঙুরের মতো বিস্তীর্ণ। পাশেই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যও রয়েছে। (Travel Writers Forum)

Travel Writers Forum
বক্তা অর্পণ রায়চৌধুরী

(Travel Writers Forum) পাহাড়ের দিকে তাকালে আমাদের রয়েছে দার্জিলিং-কার্শিয়াং-কালিম্পং-এর মতো নিসর্গ, ব্রিটিশ আমল থেকেই যা জনপ্রিয়। আবার এর পাশের ছোট ছোট গ্রামগুলো যেমন কোলাখাম-মংপু-সিটং-ইচ্ছেগাঁও-লামাহাটারও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অনেকে ট্রেকিং করতে যান এইসব অঞ্চলে। আবার পাখি দেখতে লোকে ছুটছেন লাটপাঞ্চার। নীচেই রয়েছে ডুয়ার্স। সেখানে গরুমারা-চাপড়ামাড়ি-ন্যাওড়াভ্যালি-জলদাপাড়ায় অভয়ারণ্যে গণ্ডার-হরিণ রয়েছে আর চা বাগানের সবুজ বিস্তার দেখতেই বারবার আমরা ছুটে যাই। বসন্তের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের শিমুল পলাশ দেখতে আমরা ভিড় জমাই। ইতিহাসের টানে যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের জন্য রয়েছে চন্দ্রকেতুগড়, মুর্শিদাবাদের নানা জায়গা। একই কারণে নাম করা যায় কলকাতার কাছেই চন্দননগর-শ্রীরামপুর অথবা আমাদের শহরের, যার সব কিছুই ব্রিটিশদের তৈরি। (Travel Writers Forum)

Travel Writers Forum
বক্তা অনিতেশ চক্রবর্তী ও লোপামুদ্রা তালুকদার

(Travel Writers Forum) কলকাতার কথায় চলে আসতে পারে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ভিক্টোরিয়া আরও কত কিছু। যাঁরা রাজবাড়িতে বেড়াতে ভালোবাসেন তাঁদের জন্য ধান্যকুড়িয়া বা কাশেমবাজার। এ ছাড়া নদীকে ঘিরেও বাংলায় পর্যটনের জায়গার অভাব নেই। উত্তরবঙ্গকে যদি আমরা বাদও রাখি, তবু জলঙ্গী-মাতলা-সুবর্ণরেখার মতো নদীর নাম করা যায়। টাকিতে যেমন বিজয়া দশমীর দিন দুই বাংলার মিলনের নদী চিত্র বিখ্যাত।

আরও পড়ুন: হরিদ্বার-হৃষিকেশ-মুসৌরিতে দেড় হপ্তা 

সাগরের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তাজপুর-দীঘা-মন্দারমণি-বকখালির-কথা। এসব জায়গায় আজ ট্যুরিস্ট স্পট তৈরি হয়েছে, যার তুলনা নেই। মেলার কথা বলতে গেলে সে প্রসঙ্গে আসে বইমেলা-খাদ্যমেলার পাশাপাশি শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা বা জয়দেবের মেলা বা অযোধ্যার বৈশাখী মেলা বা বিষ্ণুপুরের মেলা। আমাদের দুর্গাপুজো যেমন আজ ইউনেস্কোর বিশেষ ঐতিহ্যশালী উৎসবের মর্যাদা পেয়েছে, এই গর্বের কথাও জানান অর্পণবাবু। জানান, লোক সংস্কৃতি জানার জন্য আমরা ছুটে বেড়াই বাঁকুড়া-বীরভূম-পুরুলিয়ায়-মেদিনীপুরে। টুসু-ভাদু-চড়কের গাজনের মেলা দেখতে যাই সে জন্যে। মহাপুরুষের বাড়ির মধ্যে চৈতন্য-বামাখ্যাপা-রামকৃষ্ণ-রবি ঠাকুর সকলের বাড়ি দেখতেই ছুটি আমরা। মুখোশ গ্রাম, সাপের গ্রাম, নাট্যগ্রাম এসব জায়গাতেও মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। অথবা ধরা যাক খাদ্যের কথা, সেখানেও পিছিয়ে নেই বাঙালি, সে মালদার আম হোক বা বর্ধমানের মিহিদানা বা বেলিয়তোড়ের ম্যাচা সন্দেশও রয়েছে। (Travel Writers Forum)

Debarshi Bandyopadhyay_Review_Travel Writers Forum_1.4.2025
স্লাইড প্রদর্শন করছেন লোপামুদ্রা তালুকদার

(Travel Writers Forum) অর্পণবাবু, দীর্ঘ কথায় এ’দিন বারেবারেই বলেন, বিদেশের মতো বিপুল দূরত্ব না পেরিয়েও এত বৈচিত্র্য রয়েছে অথচ সরকারিভাবে তাকে রক্ষা করার সেভাবে চেষ্টা নেই।
পরবর্তী সুদক্ষ বক্তা অনিতেশ চক্রবর্তী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে স্নাতকোত্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গবেষক। উত্তরবঙ্গ নিয়ে তাঁর গবেষণার কথাকে গভীর ভাবে শোনান এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। অনিতেশ একজন ভ্রমণপ্রেমীও। ‘যে নিসর্গ খুঁজে বেড়াই, যে নিসর্গ দেখি’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন এক কঠিন সত্য। (Travel Writers Forum)

উত্তরবঙ্গ, নিসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর একটি অঞ্চল। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স, কালিম্পং প্রভৃতি জায়গা পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয়। ব্রিটিশ শাসনের সময় এই অঞ্চল ছিল তাদের অন্যতম প্রিয় গ্রীষ্মকালীন আশ্রয়স্থল। বিশেষ করে দার্জিলিংকে “সামার ক্যাপিটাল” হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তারা চা-বাগান প্রতিষ্ঠা, রেলপথ নির্মাণ ও পাহাড়ি নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের ভূপ্রকৃতি ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া বহু নথিপত্র, যেমন ভূমি জরিপ মানচিত্র, চা-বাগানের দলিল ও প্রশাসনিক প্রতিবেদন আজও ঐতিহাসিক গবেষণার মূল্যবান উৎস। (Travel Writers Forum)

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের চাপে উত্তরবঙ্গের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নির্বিচারে গাছ কাটা, প্লাস্টিক দূষণ, নদীভাঙন এবং জৈববৈচিত্র্যের ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের চাপে উত্তরবঙ্গের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নির্বিচারে গাছ কাটা, প্লাস্টিক দূষণ, নদীভাঙন এবং জৈববৈচিত্র্যের ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে। পাহাড়ে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণের ফলে ধসের প্রবণতা বেড়েছে। বিশিষ্ট গবেষক অনিতেশ চক্রবর্তী তাঁর আলোচনায় এই বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করেন এবং বলেন কীভাবে আধুনিক পর্যটনের চাপে অঞ্চলটি আজ এক সংকটময় দশায় পৌঁছেছে। এই অঞ্চলকে বাঁচাতে পরিবেশবান্ধব পর্যটন, সচেতনতা এবং নীতি নির্ধারণে কঠোরতা এখন সময়ের দাবি। (Travel Writers Forum)

বাঙালির নস্টালজিয়া পেরিয়ে আপাত কঠিন এক উত্তরবঙ্গের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। এই সত্যের খোঁজেই নিজের নিশ্চিত জীবন ছেড়ে বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। বলেন, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে তরাই ডুয়ার্স হয়ে কার্শিয়াং পাহাড়ের নীচের অংশ ও দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের কথা। তবে সবুজ যে নিসর্গ এখানে বাঙালির প্রিয় তা আসলে নিসর্গই না, বানানো নিসর্গ। (Travel Writers Forum)

Travel Writers Forum
বক্তা সুপ্রতিম কর্মকার

এই তৈরি করে তোলা বাণিজ্যিক ও নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে। সেখানে আগে ছিল বড় বড় ঘাস বন। ঘাস থেকে রোজগার হয় না, ঘাসের থেকে কাঠের রোজগার বেশি আর বড় বড় ঘাসে বিচরণের সুবিধে নেই। তাই সে ঘাস সব কেটে তরাই ডুয়ার্স সাফা করা হল, এমনকি বক্সার যে জঙ্গল আজ আমরা দেখি, অনিতেশ জানালেন, তা দেড়শো বছর আগে এমন ছিল না। হান্টার সাহেবরা মনে করেছেন, ঘাস বন রাষ্ট্রের পক্ষে সুবিধের না, তাই তা পোড়ানো উচিত। পাহাড়ের বন্যপ্রাণ শিকারের কথাও পাওয়া যায় হান্টারের লেখায়। এইভাবে ওখানকার নিসর্গকে সাফ করা হয়েছে দিনে দিনে। ম্যাগনোলিয়া, ওক, বার্চ এসব কেটে ফেলা হল। আদতে এটি একটি ঔপনিবেশিক প্রকল্প। নানা গাছ কেটে এক রৈখিক চা বা অন্যান্য চাষ করতেই চাইত তারা। তাই সেই মতো মাটি প্রস্তুত করা হত৷ এইভাবেই প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যক্তি মালিকানাধীন করা হল। এর ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নড়ল। পাইনের মতো খারাপ গাছ লাগানো হল, যা পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দিল। স্থানীয় মানুষদের জীবন, চাষ, বন্যপ্রাণ সবেতেই এর প্রভাব পড়ল। (Travel Writers Forum)

বহু প্রাণী হারাল, বাঘের সংখ্যা কমল, অনেক পাখিও হারিয়ে গেল। ভয়ংকর এক প্রভাব পড়ল সব দিকেই। পাহাড় কেটে এরপর রাস্তা হল। হল ‘ব্যাঘ্র প্রকল্প’ও, সেখানে সবার আগে হারাতে থাকল বাঘ! বাঘের খাবারের টান, ওদিকে চোরা শিকার, সব মিলে কমল বাঘের সংখ্যা।

বহু প্রাণী হারাল, বাঘের সংখ্যা কমল, অনেক পাখিও হারিয়ে গেল। ভয়ংকর এক প্রভাব পড়ল সব দিকেই। পাহাড় কেটে এরপর রাস্তা হল। হল ‘ব্যাঘ্র প্রকল্প’ও, সেখানে সবার আগে হারাতে থাকল বাঘ! বাঘের খাবারের টান, ওদিকে চোরা শিকার, সব মিলে কমল বাঘের সংখ্যা। অর্থাৎ, সাফারি পার্ক হিসেবে একটা নির্বিকল্প সুন্দর প্রোজেক্টের আড়ালে হারাতে থাকল আদি সভ্যতার পাহাড়ের মানুষ ও জনজীবন। অনিতেশ অনিবার্যভাবে এদিন তুলে ধরলেন এই আবহমানের রাজনীতি যা আজও বহমান। অরণ্যের অধিকার যাঁদেরকে ঘিরে, তাঁরাই আজ ব্রাত্য সেখানে। অরণ্য থেকে ‘অভয়ারণ্য’ বানানোর এই রাজনীতির কথাই বলেন এদিন অনিতেশ। (Travel Writers Forum)

Travel Writers Forum
বক্তা সুপ্রতিম কর্মকার

এরপর বক্তা ছিলেন সুপ্রতিম কর্মকার লোপামুদ্রা তালুকদার। ‘সুপ্রতিম কর্মকার, নদী চর্চার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য নাম’-এমনই বলেছিলেন সাহিত্যিক দেবেশ রায়। সুপ্রতিম কর্মকার পূর্ব ভারতের নদী নিয়ে চর্চা করছেন দীর্ঘ ২০ বছর। ২০১১ সালে প্রথম প্রকাশিত বই ‘নদীয়ার নদী ও জলাভূমি কথা’ কলেজস্ট্রিট-এর জে.এন.চক্রবর্তী অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। তিনি সরেজমিনে দেখেছেন পুরো দেশ জুড়ে নদীগুলিকে। ২০২২ সালে ধানসিড়ি প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয় ‘নদীজীবীর নোটবুক’। এই বইটি ২০২৩ সালে “নমিতা চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান”-এ ভূষিত হয় বাংলা আকাদেমির সভাগৃহে। ২০২২ সালে নদী গবেষণার কাজের জন্য পেয়েছেন ডাক্তার বীরেন্দ্র সরস্বতী স্মৃতি সম্মান। এছাড়া মুদ্রা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ‘জগদ্ধাত্রীর উৎস সন্ধানে’ তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।

‘চল নদী বেড়াতে যাবি’ শীর্ষক আলোচনায় এদিন সুপ্রতিম বলেন, নদীকে ঘিরে নানা উপকথার কথা। এগুলি হারিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ১৩ বছর ধরে সেগুলি সংগ্রহ করেন তিনি। স্থানীয় ইতিহাস, বিজ্ঞান ধরা ছিল এইসব উপকথায়। নানা ছড়ার কথার মধ্যে দিয়ে ও নানাভাবে এদিন তিনি বলেন সেসব। নীহাররঞ্জন রায়ের কথা বলেন, যিনি বলেছিলেন, বাংলার ইতিহাস আসলে নদীর ইতিহাস। নদ আর নদীর ফারাক দেখিয়ে পাগলাচণ্ডী, জলঙ্গী, কালজানি, তমাল নদীগুলিকে ঘিরে এইসব উপকথার কথা ও তা কীভাবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করেন, সে গল্প বিস্তারে বললেন সুপ্রতিমবাবু।

ক্ষীর নদী আসলে ক্ষীরাবতী নদী। একে ঘিরে একটি উপকথা প্রচলিত ছিল। বহুদিন আগে এক গোয়ালার এক মা মরা মেয়ে ছিল, নাম অঞ্জনা। সে গোয়ালা কালী ও কৃষ্ণর পুজো করতেন। সেই মেয়ে নদীতে জল আনতে গিয়ে কাদাতে পাঁকে জড়িয়ে পরে যায়। নদীর নাকি মা হওয়ার শখ হয়েছিল, তাই মেয়েটিকে নদী খেয়েছে এই খবর চাউর হয়।

সুপ্রতিমবাবু নদীদের ঘিরে উপকথার কথা বলছিলেন।

খোকা গেল মাছ ধরতে
ক্ষীর নদীর কূলে
মাছ নিয়ে গেল কোলাব্যাঙে
ছিপ নিয়ে গেল চিলে

ক্ষীর নদী আসলে ক্ষীরাবতী নদী। একে ঘিরে একটি উপকথা প্রচলিত ছিল। বহুদিন আগে এক গোয়ালার এক মা মরা মেয়ে ছিল, নাম অঞ্জনা। সে গোয়ালা কালী ও কৃষ্ণর পুজো করতেন। সেই মেয়ে নদীতে জল আনতে গিয়ে কাদাতে পাঁকে জড়িয়ে পরে যায়। নদীর নাকি মা হওয়ার শখ হয়েছিল, তাই মেয়েটিকে নদী খেয়েছে এই খবর চাউর হয়। তখন ওই বাবা এসে নদীকে বলে, আমার মেয়েকে তুই খেয়েছিস, তোর শরীর দু’টুকরো হবে এবং আজ থেকে তোর অস্তিত্ব থাকবে না। সেই বাবা নদীকে বলে, তোর নাম আজ থেকে অঞ্জনা। এভাবেই ক্ষীরাবতী থেকে অঞ্জনা নদীর জন্ম। এই অঞ্চলের জলবায়ুগত বৈচিত্র্য অনেক বেশি।

তমাল নামে একটি ছেলের গভীর অসুখ করে। নানা কবিরাজ এসেও কিছু করতে পারে না। তারপর এক ওঝা বা গুণিন এসে বলে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী মহিলার সঙ্গে বিয়ে দিলে ও সেরে উঠবে।

এমনই এক উপকথা আছে তমাল নদীকে ঘিরেও। তমাল নামে একটি ছেলের গভীর অসুখ করে। নানা কবিরাজ এসেও কিছু করতে পারে না। তারপর এক ওঝা বা গুণিন এসে বলে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী মহিলার সঙ্গে বিয়ে দিলে ও সেরে উঠবে। এ সময়ে এক কারিগর মূর্তি গড়ছিলেন। তাঁর এক সুন্দরী নারী মূর্তির ভেতর টিকটিকি ঢুকে যাওয়ায় প্রাণ সঞ্চারিত হয় এবং পরে ঝড়জলের মধ্যে পড়ে সেই নারী নদী হয়ে যায়। কিন্তু তমাল বলে এত আকাঙ্ক্ষার নারীও নদী হয়ে গেল! আমিও তবে নদী হব… এ থেকেই তমাল আর সুন্দরা দুই নদনদী এক যোগে চলেছে…
নদী কথাটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে সুপ্রতিমবাবু বলছিলেন, ন দান করা থেকে নদী শব্দের উৎপত্তি। প্রথম ‘ফোক টেলস অফ বেঙ্গল’ এ রেভারেন্ড লাল বিহারী দে, এই উপকথাগুলি সংগ্রহ করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরোণায় দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার গ্রাম বাংলার উপকথাগুলি নিয়ে ঠাকুমা ও ঠাকুরদাদার ঝুলি সংকলন করেন। এর অনেক পর লীলা মজুমদার লালবিহারী দে-র বইটির অনুবাদ করেন ‘বাংলার উপকথা’। তারও সত্তর বছর পর সুপ্রতিমবাবু এই উপকথাগুলি একত্র করে ‘জলের ইতিকথা নদীর উপকথা’ নামে লেখেন তেরো বছরের সংগ্রহ।

আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণের খোঁজে পুরুলিয়া

অনুষ্ঠানের শেষে ছিল ছবির স্লাইড ব্যবহার করে লোপামুদ্রা তালুকদারের নানা ঘোরার গল্প(মানুষের উৎসব উৎসবের মানুষ)। লোপামুদ্রা তালুকদার একজন জনপ্রিয় আলোকচিত্রী। তাঁর ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে এমন সব গল্প, যা শব্দে বলে ওঠা যায় না। স্পোর্টস ফটোগ্রাফিতেও নাম-ডাক কিছু কম নয়। রাশিয়া ও কাতার-এ অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ এমনকি প্যারিস অলিম্পিকও কভার করেছেন তিনি।

তাঁর লেন্সে উঠে এসেছে অবহেলিত মানুষের সংগ্রাম, সৌন্দর্য ও সাহস। হাতে ক্যামেরা নিয়ে এই পৃথিবীকে নতুন চোখে ধরে রাখতে চান। শুধু ছবি তোলাই নয়, কর্মশালা ও দেশ বিদেশে ফটো ট্যুর-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। একজন FujiFilm X-Photographer ও গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে, লোপামুদ্রা তালুকদারের যাত্রা আসলে এক খোঁজ, ক্যামেরা হাতে খুঁজে চলেছেন আরও অনেক না-বলা গল্প।

তিনি জানান, বিশ্বের নানা প্রান্তের উৎসব দেখে ছবি তুলতে তুলতে তাঁর মনে হয়েছে, একই রকম মানুষ ও তাঁদের উৎসবের নানা চেহারার কথা। গুয়েতামালা-মেক্সিকো-বেনারস-ইন্দোনেশিয়ার নানা ছবি দেখাতে দেখাতে বলেন, মানুষের আনন্দ বিষাদের মুহূর্ত ধরে রেখেই তিনি চেষ্টা করেন সময়গুলোর সাক্ষী থাকতে। সারা দুনিয়ার উৎসব একই সূত্রে বাঁধা বলেও মনে করেন তিনি। জানান, এর আগে ফিফা, অলিম্পিকের ছবি তুলতেও নানা জায়গায় ভ্রমণ করেন তিনি।

Travel Writers Forum
স্লাইড প্রদর্শন করছেন লোপামুদ্রা তালুকদার

এভাবেই ‘ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম’ এর এই অভিনব জমায়েতে ভ্রমণ যে কত বিস্তীর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ তা বোঝা গেল একটি মাত্র সন্ধ্যায়। সকল বক্তাদের কথাতেই উঠে এল ভ্রমণের গুরুত্ব। নানা রঙের রেখায় এভাবেই দর্শক সমাগম 
জমে উঠল। অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট পদযাত্রী ও ভূ-পর্যটক শ্রী রতনলাল বিশ্বাস। (Travel Writers Forum)

ছবি সৌজন্যে:
মৌসুমী দত্ত রায়
প্রান্তিক বিশ্বাস

Author Debarshi Bandyopdhyay

পেশা মূলত, লেখা-সাংবাদিকতা। তা ছাড়াও, গান লেখেন-ছবি বানান। শখ, মানুষ দেখা। শেল্ফ থেকে পুরনো বই খুঁজে বের করা। কলকাতার রাস্তা ধরে বিকেলে ঘুরে বেড়ানো।

Picture of দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

পেশা মূলত, লেখা-সাংবাদিকতা। তা ছাড়াও, গান লেখেন-ছবি বানান। শখ, মানুষ দেখা। শেল্ফ থেকে পুরনো বই খুঁজে বের করা। কলকাতার রাস্তা ধরে বিকেলে ঘুরে বেড়ানো।
Picture of দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

পেশা মূলত, লেখা-সাংবাদিকতা। তা ছাড়াও, গান লেখেন-ছবি বানান। শখ, মানুষ দেখা। শেল্ফ থেকে পুরনো বই খুঁজে বের করা। কলকাতার রাস্তা ধরে বিকেলে ঘুরে বেড়ানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com