Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আলোর দিশারী— বেগম রোকেয়া

শিখা সেনগুপ্ত

ডিসেম্বর ৯, ২০২৩

Article on Feminist Social Reformer Begum Rokeya
Article on Feminist Social Reformer Begum Rokeya
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

“নিষ্ঠুর নিদয় শশী, সুদুর গগনে বসি, কি দেখিছ, জগতের দুঃখ তাপ রাশি?” —এমন মরমী কবিতা যিনি লিখতে পারেন, সেই মানবদরদী কবি ছিলেন একাধারে গল্পকার, ঔপনাসিক, প্রবন্ধকার এবং উনবিংশ শতাব্দীর নারী জাগরণের অগ্রপথিক। আত্মবিস্মৃত বাঙালি আমরা আজ তাঁকে ভুলতে বসেছি। ২০০৪ সালে বিবিসির এক সারণীতে, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে তাঁকে ষষ্ঠ স্থান দেওয়া হয়। তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন (Begum Rokeya)

অবিভক্ত ভারতবর্ষের রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর এই মহীয়সী রমণী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলি হায়দার একজন শিক্ষিত জমিদার ছিলেন। তিনি নিজে আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা জানতেন; অথচ নারী-শিক্ষার, নারী-স্বাধীনতার তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। রোকেয়ার বড় দুই ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবুল আসাদ ও খলিলুর রহমান কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অধ্যয়ন করে আধুনিকমনস্ক হয়ে ওঠেন। বড় বোন করিমুনেচ্ছাও  ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও সাহিত্যানুরাগী। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের উপায় ছিল না। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাসকালে রোকেয়া (Begum Rokeya) একজন মেম শিক্ষয়িত্রীর কাছে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের ভ্রুকুটির জন্য তাও বন্ধ করে দিতে হয়। তবুও রোকেয়া দমে যাননি। বড় ভাইবোনদের সমর্থন ও সহায়তায় তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি ও আরবি আয়ত্ত করেন।

Begum_Rokeya

 যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন সম্বন্ধে তাঁর ‘বঙ্গের মহিলা কবি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “বঙ্গের মহিলা কবিদের মধ্যে মিসেস আর এস হোসেনের নাম স্মরণীয়। বাঙ্গালাদেশের মুসলমান নারী প্রগতির ইতিহাস-লেখক এই নামটিকে কখনও ভুলিতে পারিবেন না। গভীর রাতে সকলে ঘুমাইলে চুপিচুপি বিছানা ছাড়িয়া বালিকা মোমবাতির আলোকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে ইংরাজি ও বাংলায় পাঠ গ্রহণ করিতেন। পদে পদে গঞ্জনা সহিয়াও এভাবে দিনের পর দিন তাহার শিক্ষার দ্রুত উন্নতি হইতে লাগিল। কতখানি আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকিলে মানুষ শিক্ষার জন্য এরূপ কঠোর সাধনা করিতে পারে, তাহা ভাবিবার বিষয়।”

আরও পড়ুন- নারীর অধিকার রক্ষায় অদ্বিতীয়া রোকেয়া

১৮৯৮ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেন-এর সঙ্গে। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তদুপরি সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। উদার, মুক্তমনা স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় রোকেয়া দেশি বিদেশি লেখকদের রচনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান এবং ক্রমশই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাতও ঘটে স্বামীর অনুপ্রেরণায়।

Begum Rokeya With Husband
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর সঙ্গে বেগম রোকেয়া

 ১৯০২ সালে কলকাতার ‘নভপ্রভা’ পত্রিকায় ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যজগতে তাঁর পদার্পণ। ১৯০৪ সালে প্রকাশিত ‘মতিচুর’ প্রবন্ধগ্রন্থে নারী পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম অধিকারের বলিষ্ঠ দাবি করেছেন। শিক্ষার অভাবকে নারী পশ্চাৎপদতার কারণ হিসাবে দেখাতেও ভোলেননি। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ’সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাস ইউটোপিয়ান সাহিত্যের ক্লাসিক নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে তাঁর লেখাগুলি নবনুর, সওগাত, মোহাম্মদি ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

Sultana's Dream
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন রচিত উপন্যাস, 'সুলতানার স্বপ্ন'-এর ইংরেজি অনুবাদ, ১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়

১৯২২ সালে মতিচুর প্রবন্ধসংগ্রহ দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯২৪-এ ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাস ও ১৯৩১ সালে ‘অবরোধবাসিনী’ উপন্যাস ইত্যাদি ছিল তাঁর সৃজনশীল রচনা। ‘অবরোধবাসিনী’তে তিনি অবরোধ প্রথাকে তীব্র বিদ্রূপবাণে জর্জরিত করেছেন। তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও লিঙ্গ সমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস ও ব্যঙ্গবিদ্রূপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন। শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারীমুক্তি আসবে না, সে কথা বলেছেন। ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিজ্ঞান, কল্পকাহিনি ও শ্লেষাত্বক রচনায় রোকেয়ার স্টাইল ছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁর প্রবন্ধের বিষয় ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। সমকাল থেকে তাঁর চিন্তাভাবনার পরিধি ছিল অনেকটা এগিয়ে। সেই সুতীক্ষ্ণ রচনার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক…
“কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলন করিয়াছেন,অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে…আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ এই ধর্মগ্রন্থগুলি ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া প্রচার করিয়াছেন…”
“পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয় তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডি কেরাণী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডি ম্যজিস্ট্রেট, লেডি ব্যরিস্টার, লেডি জজ সবই হইব। উপার্জন করিব না কেন?”

Begum Rokeya

রোকেয়ার বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯০৯ সালের ৩রা মে সাখাওয়াৎ হোসেন মারা যান। ইতিপূর্বে তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে অকালেই মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯১১ সালের ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩ নং ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে তিনি সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালের মধ্যে ছাত্রীসংখ্যা একশ পেরিয়ে যায়। বর্তমানে এটিই দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, যেখানে এখন কয়েক হাজার ছাত্রী লেখাপড়া করেন।

স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত  রাখেন রোকেয়া। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম নারীদের সংগঠন, ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারীশিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সম্মেলনে রোকেয়া বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন, সে যুগের পরিপেক্ষিতে সেটি ছিল দুঃসাহসিক কাজ।

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে বেগম রোকেয়া মারা যান। সে সময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। নারীজাগরণের এই আলোকবর্তিকাকে আমরা মনে রাখিনি। পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে সোদপুরে তাঁর সমাধি আবিষ্কার করেন।

১৯৮০ সালে বেগম রোকেয়ার জন্মশতবর্ষে তাঁর স্কুল, সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে তখনও অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল, কে এই বেগম রোকেয়া? নারীশিক্ষার জন্য প্রাণপাত করা এই মহাপ্রাণ আজ বিস্মৃতপ্রায় হয়েছেন।

বেগম রোকেয়ার ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গুগল তাদের হোম পেজে বেগম রোকেয়ার গুগল ডুডল প্রদর্শন ক’রে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করেন। গুগল ডুডলটিতে দেখা যায় সাদা পোশাকে চশমাপরা বেগম রোকেয়া বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন।আপামর বাঙালির পক্ষ থেকে স্মৃতিতর্পণে এই মহীয়সী নারীকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

*ছবি সৌজন্য: লেখক, Wikipedia

Author Shikha Sengupta

শিখা সেনগুপ্ত বিজ্ঞানের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার নেশা, book worm বলা যায়। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। অফিস জীবনেও আনন্দবাজার সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিশেষ কলাম ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি ব্যাংক থেকে অবসরের পরে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দেশ, ভ্রমণ ও আনন্দবাজারে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

Picture of শিখা সেনগুপ্ত

শিখা সেনগুপ্ত

শিখা সেনগুপ্ত বিজ্ঞানের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার নেশা, book worm বলা যায়। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। অফিস জীবনেও আনন্দবাজার সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিশেষ কলাম ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি ব্যাংক থেকে অবসরের পরে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দেশ, ভ্রমণ ও আনন্দবাজারে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
Picture of শিখা সেনগুপ্ত

শিখা সেনগুপ্ত

শিখা সেনগুপ্ত বিজ্ঞানের স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার নেশা, book worm বলা যায়। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। অফিস জীবনেও আনন্দবাজার সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিশেষ কলাম ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি ব্যাংক থেকে অবসরের পরে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দেশ, ভ্রমণ ও আনন্দবাজারে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com