(Lal Behari Dey)
প্রায় দুশো বছর আগের কলকাতা। শহর তখন সবে গড়ে উঠছে। হয়ে উঠছে ইংরেজ শাসনের কেন্দ্র। জীবিকার তাগিদে সেই কলকাতায় আছেন বর্ধমান জেলার সোনাপলাশী গ্রামের এক দরিদ্র বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী সুবর্ণবণিক, রাধাকান্ত দে। কাজ করছেন বিল-সরকারি আর দালালির। ইংরেজি পড়তে-লিখতে জানেন না। এদিকে ফারসিকে সরিয়ে সরকারি কেরানির ভাষার দখল তখন নিচ্ছে ইংরেজি। রাধাকান্ত বুঝেছিলেন সেই বাস্তবতা। তাই পুত্র লালবিহারীর ন’বছর বয়স হতেই গ্রামের পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে নিয়ে এলেন কলকাতায়, ইংরেজি স্কুলে পড়ানোর জন্য। (Lal Behari Dey)
কিন্তু কোন স্কুলে ভর্তি করবেন? ১৮৩০-এর দশকের সে কলকাতায় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে হিন্দু কলেজ, ডাফ সাহেবের স্কুল বা জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন, হেয়ার সাহেবের স্কুল, গৌরমোহন আঢ্যের স্কুল বা ওরিয়েন্টাল সেমিনারি— এই কটিই। হিন্দু কলেজে বেতন মাসিক পাঁচ টাকা, ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে তিন টাকা। লালবিহারীর পরিবারের তা অসাধ্য। হেয়ার স্কুলে বাছাই করে ছাত্র নিতেন ডেভিড হেয়ার, সে বড় কঠিন পরীক্ষা। তখন “ফিরিঙ্গি কমল বসু”র বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ডাফ সাহেবের স্কুলে বেতন নেওয়া হত না। ডাফ সাহেব আবার ছিলেন গোঁড়া খ্রিস্টান। প্রকাশ্যেই বলতেন, খ্রিস্টধর্ম শেখানোর জন্যই তাঁর স্কুল। লালবিহারীর পরিজনদের আশঙ্কা ছিল ডাফ সাহেবের স্কুলে পড়লে লালবিহারী পরে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যাবেন। তবু রাধাকান্ত অর্থাভাবের জেরে সে স্কুলেই ছেলেকে ভর্তি করলেন। (Lal Behari Dey)
আরও পড়ুন: “আমরা পারিব, যদি খুঁজি”: শতবর্ষে ঋত্বিক ঘটক
ইংরেজি শিখেছিলেন লালবিহারী দে। রাধাকান্তের অকালমৃত্যুর পরেও অতি কষ্টে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে লাগলেন। স্বপ্ন দেখতেন হিন্দু কলেজে পড়ার। সে কালে স্কুল সোসাইটির টাকায় হেয়ার সাহেবের স্কুলের নির্বাচিত কয়েকজন ছাত্র সে সুযোগ বিনামূল্যে পেত। সে কথা মাথায় রেখে, লালবিহারী দেখা করলেন ডেভিড হেয়ারের সঙ্গে। কিন্তু হেয়ার ধর্মান্তরকরণের ঘোর বিরোধী ছিলেন। ডাফ সাহেবের স্কুলের ছাত্রকে তিনি সুযোগ দিলেন না। লালবিহারী দে আর ডেভিড হেয়ারের কথোপকথন লিখেছেন মন্মথনাথ ঘোষ, তাঁর সেকালের লোক বইয়ে:
“মহাশয়, আমার ইচ্ছা আমি আপনার বিদ্যালয়ে প্রবেশ করি।” “তুমি কোন্ বিদ্যালয়ে পড়?” “আমি এক্ষণে জেনারেল এসেমব্লিজ ইনষ্টিটিসনে পড়িতেছি।” “তুমি কি কি পুস্তক পড়িতেছ?” “আমি মার্শম্যানের ইতিহাস, লেনীর ইংরাজী ব্যাকরণ, ভুগোল, জ্যামিতি (২য় খণ্ড), বাইবেল এবং বাঙ্গলা পড়িতেছি।” “তুমি জ্যামিতির সপ্তম প্রতিজ্ঞা প্রমাণ করিতে পার? বোর্ডে গিয়া বুঝাইয়া দাও দেখি?” (লালবিহারী প্রতিজ্ঞাটি প্রমাণ করিলে হেয়ার সাহেবের সহিত পুনরায় কথোপকথন হইল।) “তুমি বেশ শিক্ষালাভ করিতেছ দেখিতেছি; তুমি কেন জেনারেল এসেমব্লিজ ইনষ্টিটিউসন হইতে চলিয়া আসিতে চাহ?” “লোকে বলে আপনার বিদ্যালয়ে আরও ভাল পড়া হয়, বিশেষতঃ, আমি আপনার স্কুল হইতে হিন্দু কলেজে যাইবার বাসনা করি।” (Lal Behari Dey)

“জেনারেল এসেমব্লিজ ইনষ্টিটিউসনে নিশ্চয়ই খুব ভাল পড়া হয়, ডাক্তার ডফ মিষ্টার ক্যাম্বেল নামক একজন নূতন ধর্মপ্রচারক পাঠাইয়াছেন।” “জেনারেল এসেমব্লিজ ইনষ্টীটিউসনে ক্যাম্বেল নামে কেহ নাই, বোধ হয় আপনি মিষ্টার ম্যাকডোনাল্ডের কথা বলিতেছেন?” হাঁ, হাঁ, মিষ্টার ম্যাকডোনাল্ড, সকলে বলে তিনি বেশ বিচক্ষণ লোক। আচ্ছা তুমি যে বিদ্যালয়ে পড়িতেছ সেইখানেই থাক।” (Lal Behari Dey)
“না মহাশয়; অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাকে আপনার স্কুলে লউন।” “তুমি বাইবেল পড়— তুমি অর্দ্ধেক খ্রীষ্টান। তুমি কি আমার ছাত্রদিগকে নষ্ট করিবে?” “আমাদিগের বিদ্যালয়ের পাঠ্য পুস্তক বলিয়াই আমি বাইবেল পড়ি— বাইবেলের ধর্ম্মে আমার বিশ্বাস নাই। আমি আপনার ছাত্রগণের ন্যায় হিন্দু— খ্রীষ্টান নহি।” “মিষ্টার ডফের সব ছাত্রই অর্দ্ধেক খ্রীষ্টান। আমি তাহাদিগের কাহাকেও আমার স্কুলে লইব না। আমি তোমাকে লইব না— তুমি অর্দ্ধেক খ্রীষ্টান— তুমি আমার ছেলেদের খারাপ করিবে।” তার পরেও বহু কষ্টে লালবিহারী লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেননি। ১৮৪৩-এ তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। (Lal Behari Dey)
“১৮২৪ সালের আজকের দিনে লালবিহারীর জন্ম। তাঁর সমসাময়িক মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তিনিও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু নিজের দেশকে কোনওদিন অবহেলা করেননি।”
ডাফ সাহেবের খ্রিস্টধর্ম প্রচার সম্পর্কে বিনয় ঘোষ লিখেছেন, “ডাফ সাহেব অবশ্য শিক্ষার প্রগতির জন্য যতটা না উৎফুল্ল হয়েছিলেন, তারচেয়ে অনেক বেশি আশান্বিত হয়েছিলেন, তরুণ শিক্ষিতসমাজের মধ্যে তাঁর খ্রীষ্টধর্মের বাণী প্রচারের পথ সুগম হবে ভেবে। খানিকটা যে সে-পথ সুগম হয়নি, তা নয়। তিনি ও তাঁর সহযোগী পাদরি-সাহেবরা কেবল ‘লেকচার’ দিয়ে এই সময় (১৮৩০-‘৩১ সালে) কলকাতার বাঙালী সমাজে যে কি বৈপ্লবিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তা ভাবা যায় না। কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, লালবিহারী দে’র মতো নব্যবঙ্গের রত্নতুল্য ইন্টিলেকচ্যুয়ালদের তিনি খ্রীষ্টধর্মে আকৃষ্ট ক’রে ধর্মান্তরিত করেছিলেন।” (Lal Behari Dey)
আরও পড়ুন: অবাক আলোর লিপি: শতবর্ষে তৃপ্তি মিত্র
১৮২৪ সালের আজকের দিনে লালবিহারীর জন্ম। তাঁর সমসাময়িক মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তিনিও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু নিজের দেশকে কোনওদিন অবহেলা করেননি। তাঁর লেখা একটা বই অনুবাদের সূত্রে বাঙালির শৈশব-স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। লাল মলাটে সোনালি রংয়ে নাম-লেখা সে বই বাঙলার উপকথা, লালবিহারীর ফোক টেলস অব বেঙ্গল-এর লীলা মজুমদারের করা অনুবাদ। কিন্তু শুধু ফোক টেলস অব বেঙ্গল-ই লালবিহারী দে-র পরিচয় নয়। ডাফ সাহেবের চার্চে ধর্মযাজক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। সরকারি শিক্ষাবিভাগে এবং বহরমপুরে কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষকতা করেন। তারপরে কিছু দিন বহরমপুর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপনা করে হুগলী মহসীন কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক পদে নিযুক্ত ছিলেন। (Lal Behari Dey)

আজ প্রায়-বিস্মৃত সেই জীবন উজ্জ্বল শস্য ছড়িয়ে রেখেছে নানা দিকে। বেঙ্গল ম্যাগাজিন, ফ্রাইডে রিভিউ, ইন্ডিয়ান রিফর্মার, অরুণোদয় প্রভৃতি নানা পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। এই অরুণোদয় পত্রিকাতেই মাতৃভাষায় শিক্ষার পক্ষে তিনি জোর সওয়াল করেছিলেন। আর এখানেই শুরু হয়েছিল তাঁর বঙ্গীয় উপকথার সংগ্রহ প্রকাশ, তাঁর পরবর্তী বিখ্যাত গ্রন্থ ফোক টেলস অব বেঙ্গল-এর সূত্রপাত এটাই। অরুণোদয় পত্রিকায় ক্রমশ প্রকাশিত উপকথাগুলিতে লেখকের নাম ছিল না। তখন তিনি বর্ধমানের অম্বিকা-কালনায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও স্কুল পরিচালনায় ব্যস্ত। বাংলার গ্রামের জীবনযাত্রা, উৎসব-অনুষ্ঠানের চিত্রবৈচিত্রের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় ঘটছে তাঁর। সেই সময়েই অরুণোদয়ে লিখলেন,
সমালোচনার উপসংহারে তিনি লিখিয়াছিলেন, “যাঁহারা বাঙ্গালীর লেখাকে ‘বাবু ইংলিশ’ বলিয়া বিদ্রূপ করেন তাঁহাদের জানা উচিত যে, বাঙ্গালীর মধ্যে এমন বিশুদ্ধ লেখক আছেন, মেসার্স রো এণ্ড ওয়েব কোম্পানী যাঁহার জুতার ফিতা খুলিবারও অযোগ্য।”
প্রায় প্রত্যেক রজনীযোগে বঙ্গরাজ্যে উত্তমাধম পরিবার মাত্রেই প্রায় উপকথা ব্যবহার করিয়া থাকেন। আর বালক বালিকাকুল উপকথা শ্রবণ মানসে আপনাদিগকে অতি উতসুক দেখায়, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে অনেক উপকথা নীতিগর্ভ নহে। যাহা হউক বঙ্গে যে সকল নীতিজনক উপকথা ব্যবহার হইয়া থাকে, তাহার মধ্যে কতকগুলিন উপকথা সর্বসাধারণগোচরজন্য এই পত্রে ক্রমশ প্রকাশে প্রবৃত্ত হইলাম। (Lal Behari Dey)
লালবিহারী দে-র মৌলিক বাংলা উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল এই পত্রিকাতেই। চন্দ্রমুখীর উপ্যাখ্যান (১৮৫৯)। এর রচয়িতা যে লালবিহারী দে-ই তা প্রমাণ করেছেন দেবীপদ ভট্টাচার্য। ১৮৫৭-৫৯-এ উপন্যাসের ধারাবাহিক প্রকাশ। বঙ্কিমচন্দ্রের আগে বাংলা উপন্যাসের জমি তৈরি করছিলেন যে-কজন লেখক তাঁদের মধ্যে লালবিহারীও একজন। তাঁর আর এক বিখ্যাত গ্রন্থ বেঙ্গল পেজান্ট লাইফ বা গোবিন্দ সামন্তর সূচনা অবশ্য এক প্রবন্ধ থেকে। (Lal Behari Dey)

১৮৭১-এ উত্তরপাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন এক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার। “বাঙলার শ্রমজীবিগণের সামাজিক ও গার্হস্থ্য জীবন” সম্পর্কে বাংলা বা ইংরাজী ভাষায় লেখা সেরা প্রবন্ধটির জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। পরের বছর প্রবন্ধ পাঠালেন লালবিহারী। সেটিই সেরা প্রবন্ধ হিসেবে বিবেচিত হল। তার সঙ্গে আরও তিনটি অধ্যায় যোগ করে রূপ বদলে প্রকাশিত হল গোবিন্দ সামন্ত উপন্যাস। সে বই পড়ে চার্লস ডারউইন লেখককে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখলেন, “I see that the Rev. Lal Behari Day is Editor of the ‘Bengal Magazine’ and I shall be glad if you would tell him, with my compliments, how much pleasure and instruction I derived from reading a few years ago, his novel, Govinda Samanta.” (Lal Behari Dey)
গোবিন্দ সামন্ত যখন প্রকাশিত হল তখন হুগলী কলেজে লালবিহারী দে-র সহকর্মী ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক মিস্টার রো। হুগলী কলেজে লালবিহারীর ছাত্র যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে সেকালে লিখছে, ‘গোবিন্দ সামন্ত’ প্রকাশিত হইলে রো সাহেব নাকি উহার সমালোচনায় বলিয়াছিলেন “written in baboo English” অর্থাৎ বাঙ্গালীর ইংরাজী ভাষায় লিখিত। ইহার কিছুদিন পরে রো এবং ওয়েব উভয় শ্বেতাঙ্গ অধ্যাপক মিলিত হইয়া একখানি ইংরাজী ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। সেই ব্যাকরণ সাধারণতঃ ‘Row’s Hints নামে খ্যাত। ঐ পুস্তক প্রকাশিত হইলে লালবিহারী দে তাঁহার সম্পাদিত ‘বেঙ্গল মিস্লেনি’ নামক ইংরাজী পত্রে ঐ ব্যাকরণের সমালোচনায় অসংখ্য ভাষার ভুল দেখাইয়াছিলেন। (Lal Behari Dey)
আরও পড়ুন: রক্তকরবী: বইয়ের শতবর্ষ, নাটকের নয়
সমালোচনার উপসংহারে তিনি লিখিয়াছিলেন, “যাঁহারা বাঙ্গালীর লেখাকে ‘বাবু ইংলিশ’ বলিয়া বিদ্রূপ করেন তাঁহাদের জানা উচিত যে, বাঙ্গালীর মধ্যে এমন বিশুদ্ধ লেখক আছেন, মেসার্স রো এণ্ড ওয়েব কোম্পানী যাঁহার জুতার ফিতা খুলিবারও অযোগ্য।” এই ঘটনার পর একদিন নাকি হুগলী কলেজে লালবিহারী দে-র সহিত রো সাহেবের হাতাহাতি হইবার উপক্রম হইয়াছিল এবং রো সাহেব লালবিহারী দে-র সহিত এক কলেজে অধ্যাপনা করিতে অনিচ্ছুক হইয়া কৃষ্ণনগর কলেজে চলিয়া যান। (Lal Behari Dey)
ভারতীয়ের অপমান সম্পর্কে এমনই সজাগ ছিলেন লালবিহারী দে। সমকালীন সমাজও তাঁর গভীর আগ্রহের বিষয় ছিল। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য-সম্পর্ক গড়ে ওঠার পক্ষেও বাধা ছিল সামাজিক অবস্থা। সারাদিনে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হত না। সে যুগের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধে দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর দেখা হওয়া নিতান্ত অপরাধ বলে ভাবা হত। লালবিহারী দে লিখছেন, ‘…এতদ্দেশীয় বামাগণ রজনী ব্যতীত ভর্তার সহিত নিশ্চিন্তে কথা কহিবার আর সুযোগ পান না। দিবসে পাকাদি ও গৃহকার্য্যে নিযুক্তা থাকেন আর অবসর পাইলেও লজ্জা-প্রযুক্তা স্বামীর সহিত একত্রে বসেন না ও অধিক কথাও কহেন না। যে তরুণী দিবাভাগে পতির সহিত কথোপকথন করেন তাহাকে প্রতিবাসীরা বিশেষত স্থবিরাগণ শিথিলা কহেন। সুতরাং পরস্পরের দেখা-সাক্ষাতের সময় যখন রাত, তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী ধরনের দাম্পত্য-প্রণয় গড়ে উঠত তার উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন।’
উনিশ শতকের সচেতন, চিন্তাশীল এই আধুনিকমনা লালবিহারী দে-কে আমরা মনে রাখিনি।
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
আশিস পাঠক বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের প্রকাশনা ও বিপণন আধিকারিক।
আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা সময়ে যুক্ত থেকেছেন সাহিত্য অকাদেমি, বাংলা আকাদেমি, কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা বিভাগের নানা প্রকল্পে, নানা পুরস্কারের বিচারক হিসেবে। সংস্কৃতির নানা মহলে তাঁর আগ্রহ, বিশেষ আগ্রহ রবীন্দ্রনাথ ও গ্রন্থবিদ্যায়।
