Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আম্র বিলাসিতা

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

জুলাই ২২, ২০২৫

Mango Day
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Mango Day)

আমাদের জাতীয় ফল আম যে খুব একটা ‘আম’ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না! বরং বলা যায় আম জনতা এই ফলকে বেশ ‘খাস’ একটা জায়গা দিয়েছে নিজেদের মনে। তাই তার এই বিনয়ী নাম একেবারেই খাপ খায় না বাজারচলতি জনপ্রিয়তার সঙ্গে। (Mango Day)

আসা যাক জরুরি কথায়, ‘বিশ্ব আম দিবস’ যা, ‘জাতীয় আম দিবস’ নামেও পরিচিত— পালিত হয় ২২ তারিখ। দিনটি সুস্বাদু ও বহুজাতিক আমের সাংস্কৃতিক অভিপ্রায় পালনের জন্য নিবেদিত। কেবল ভারতেই নয়, পাকিস্তান ও ফিলিপিন্স রাষ্ট্রেও এটি জাতীয় ফলের মর্যাদা পায়। আর আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ‘জাতীয় বৃক্ষ’ আম গাছ। (Mango Day)

আরও পড়ুন: বাংলার পুতুলের শ্রমজীবী ধারা

১৯৮৭ সালে, ভারতীয় পর্যটন পর্ষদ, প্রথম ভারতে ‘মাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল’ করে, আন্তর্জাতিক স্তরে আমকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। রসালো সুমিষ্ট আম যেন গ্রীষ্ম মরসুমেরই সমার্থক। বসন্ত শেষ হব হব করছে, বসন্তের পিঠে সওয়ার হয়ে আমগাছে সুবাসিত মুকুলরা হেসে খেলে যাচ্ছে। ঠিক তখন থেকেই বাঙালির আনাজপাতির ঝুড়িতে কাঁচাআমের উঁকি শুরু। আহা কী সুবাস! (Mango Day)

Mango Day

কচি মুকুল থেকে সে তখন সদ্য নওলকিশোর। নিদারুণ এক কুড়িয়ে পাওয়া সবুজ সুখ। আম, আমবাঙালির পরম ভালোবাসা। শুধু বাঙালি কেন, সমস্ত ভারতীয় রসনার কাছেই গরমদিনে আম কেনা ও খাওয়া বেশ ঘরোয়া আটপৌরে ব্যাপারস্যাপার। (Mango Day)         

বস্তুত ভারতীয় উপমহাসাগরীয় দেশে আম প্রধান ও সুস্বাদু ফল হিসেবে বিবেচ্য। এর হলুদ-কমলা-লালের ছোঁয়ায় অথবা সবুজ রঙের অবয়বের সঙ্গে এর রসালো স্বাদ, ঘ্রাণ, গরিমা সবেতেই শ্রেষ্ঠ। (Mango Day)  

এদেশে মার্চ থেকে জুলাই, কখনও মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বজায় থাকে আমের উপস্থিতি। প্রদেশভেদে, মেলে নানান প্রজাতির আম। আম্রপালি, মধু কুলকুলি, ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, ত্রিফলা, গোপালভোগ, তোতাপুরি, অরুণা, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিস্রিদানা, নীলাম্বরী, কাঁচামিঠে, পেয়ারাফুলি, গোলাপখাস, কালাভোগ, বারোমাসি, সরিখাস, চৌসা, বোম্বাই, মোমফলি, চম্পা, সুর্মা-ফজলি, কালাপাহাড়, কোহিনুর এমনই কিছুটা শোনা কিছুটা অজানা কত যে আমের নাম রয়েছে। স্বাদে-বর্ণে-আঘ্রাণে– তাদের একেকজনের আভিজাত্যই আলাদা। প্রতিটি আমেরই আলাদা বনেদিয়ানা আছে, স্বাদে হোক বা বর্ণময়তায়। (Mango Day)         

“সেযুগে অলফন্‌সো-ডি-আলবুকার্ক নামের খ্যাতিবান পর্তুগিজ জেনারেল, যিনি ভারত ভূখণ্ডের গোয়ায় এসে পর্তুগিজ কলোনি গড়ে তোলেন, তাঁর নামেই এই আমটির ভিনদেশি নামকরণ।”

প্রতিটি প্রদেশের জলবায়ুর ফারাক ও বিশিষ্টতায় কোথাও পাকা আমের রসালো উপস্থিতি তার স্বাদে-গন্ধে। কোথাও সব্‌জেরঙা নধর আমের রসায়নটাই মুখ্য। কোনও আমের কাঁচা-পাকা মিশ্র জমজমাট স্বাদ। কোনও আম আকারে ছোট, কোনটা মাঝারি মাপের। আবার কোনও কোনও প্রজাতির আম বেশ ভারিক্কি ওজনের। পশ্চিমমুলুক মহারাষ্ট্রে ‘আলফান্‌সো’ আমের প্রসিদ্ধি একচেটিয়া। কোঙ্কণ উপকুলসহ মহারাষ্ট্রে আলফান্‌সো বা ‘হাপুস’ আমের কদর বিশ্বজোড়া। (Mango Day)  

কথিত আছে পর্তুগিজরা আমগাছের কলম নির্মাণ করে প্রথমেই কোঙ্কণউপকুল ও গোয়ায় রোপণ করেছিলেন। সেযুগে অলফন্‌সো-ডি-আলবুকার্ক নামের খ্যাতিবান পর্তুগিজ জেনারেল, যিনি ভারত ভূখণ্ডের গোয়ায় এসে পর্তুগিজ কলোনি গড়ে তোলেন, তাঁর নামেই এই আমটির ভিনদেশি নামকরণ। গোয়ার কোঙ্কণীভাষায় অলফন্‌সো থেকে ‘অফহস’ ও পরে মারাঠি ‘হাপুস’ নামের বিবর্তন। সমগ্র মহারাষ্ট্রে এই হাপুসের চাহিদা আকাশছোঁয়া। হাপুস আম হয় ফলের আঁটি থেকে চারা হয়ে। এই আমের ফলন মূলত পশ্চিমভারতেই। বিশেষত মহারাষ্ট্র রাজ্যের রত্নগিরি, সিন্ধুদুর্গ ও রায়গড় জেলায় এই আমের দেদার ফলন। (Mango Day)  

Mango Day

আরবসাগরতট থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাটির উর্বরাশক্তি ‘হাপুস’ তথা ‘আলফান্‌সো’ আমের ফলন উপযোগী। এই হাপুস আমের ওজনই একেকটা ১৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মধ্য মে পর্যন্ত ওই অঞ্চলের বাজারে হাপুসের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। প্রসঙ্গত এই আলফান্‌সো আমের আমরস, ক্যান্ডি, লজেন্স, স্কোয়াশের ব্যাবসা বজায় থাকে বছরভর। ‘পেপসি’ কোম্পানির ‘স্লাইস’, ‘কোকাকোলা’ কোম্পানির ‘মাজা’, ‘পার্লে অ্যাগ্রো’ কোম্পানির ‘মিনিট মেড’ অথবা ‘ট্রপিকানা’ কোম্পানির ম্যাঙ্গো জুস— প্রতিটারই অনবদ্য স্বাদ ও একরাশ তৃপ্তি। দামের গ্রেড হিসাবে আলফান্‌সো ৯০০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা কিলো। আবার ‘অর্গ্যানিক রত্নগিরি’ নামের গ্রেড হিসাবে যে আলফান্‌সোগুলি বিকোয়, সেগুলি পেটি হিসাবে ৩৫০০ টাকা কিলো প্রতি। এই আলফান্‌সো আম কিন্তু পাকার পর মাত্র সপ্তাহখানেক রাখা যেতে পারে। মহার্ঘ এই আলফান্‌সো বিশ্ববাজার থেকে প্রচুর বিদেশীমুদ্রা দেশে আনে। (Mango Day)  

আমের আহ্লাদে আটখানা অন্য প্রদেশের জনমানসও। গোয়া রাজ্যে যেমন আমের নামগুলো এক্কেবারে অন্যরকম। মানকুয়ার্দ, মালকোরেদো, কুয়ার্দ, কোরেদো, মলগেস, কুলাস, বিশপ, আফ্‌নস, জেভিয়ার, হিলারিও, মুক্সারত, ফার্দিনা এমনসব নাম আমের। দক্ষিণের অন্যান্য প্রদেশেও সুস্বাদু আমের বহুল প্রজাতি নজরে আসে। নীলম, সিন্দুরি, নাদান, পইরি, বাঙ্গানপল্লি, চন্দ্রকরণ, কেশর, সুবর্ণরেখা, তোতাপুরি, রাজাপুরি, মল্লিকা, সর্বানি, জৌহরি, সফেদা, আম্রপালি, কিশোনভোগ, কালপার্দ, বাদামি, থাম্বুর, মুলগুয়া, হিমায়থ, প্রিয়ুর, মুভান্দন, উন্দামাঙ্গা, রসাপুরি– এমনতর নানা আকৃতি-প্রকৃতি নিয়ে দাক্ষিণাত্যের আমের সংসার। (Mango Day)  

“অন্ধ্রের ‘হিমায়থ’ আমটি ‘ইমাম-পসন্দ’ নামেও বেশ পরিচিত। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে এই মিষ্টি আমটি পাওয়া যায়।”

আমাদের বাঙালিদের মতোই আমের গুণমুগ্ধ প্রাদেশিকরাও। যেমন কর্ণাটকের ‘মল্লিকা’ নামের আমটি সাধারণত বাজারে আসে একটু শেষের দিকেই। মে মাসের শেষের দিকে অথবা জুন মাসের দোরগোড়ায়। এর রসালো নির্যাস থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু আমরস। কেরালার ‘সুভান্দন’ আমটি অনেকটা সময় ধরেই পাওয়া যায়। এই আম আধ-পাকা অবস্থায় নুন-মশলায় জারিত করে বহুদিন পর্যন্ত রাখা যায়। অত্যন্ত মুখরোচক খাবার এটি, তামাম কেরালাবাসীর। কেরলের ‘প্রিয়ুর’ প্রজাতির আমটির বিশিষ্টতাই একে প্রতিবেশী দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে প্রাধান্য দিয়েছে। (Mango Day)  

অন্ধ্র আর কর্ণাটকে আরও একধরনের আম আছে ‘পেদ্দারসালু’। রসে টইটুম্বর এই আমকে সেখানকার মানুষরা আদর করে ‘রসাপুরি’ নামেও ডেকে থাকেন। রসালো এই আমটি কিছুটা আঁশযুক্ত। দক্ষিণের নিলম, নাদন, থাম্বুর, চন্দ্রকরণ এই আমগুলিও যথেষ্ট জনপ্রিয়। এরমধ্যে মহার্ঘ আম হল কর্নাটকের ‘চন্দ্রকরণ’। ঘরোয়া আমসত্ত্ব জাতীয় মিষ্টান্ন বানাতে চন্দ্রকরণ আমের বেজায় চল। কেরলের ‘থাম্বুর’ আমটির আঁটি বিশাল হলেও স্থানীদের কাছে এই অতীব মিষ্টি আমের চাহিদা প্রচুর। কেরলের ‘নাদন’ নামের কাঁচা আমটি সেখানকার বিবিধ রন্ধনপ্রণালীতে ব্যাবহৃত হয়। (Mango Day)

Mango Day

কর্নাটক ও কেরলে ‘নিলম’ আমটি জুন মাসের শেষদিকেই পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে নিলম আম, দামেও কিছুটা সস্তা। দক্ষিণেরই আর এক প্রজাতির নাম ‘মুলগুয়া’। কর্ণাটকের এই রসালো আমগুলি ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ওজনদার। দাঁড়িপাল্লায় একটা মুলগুয়াই ওজনে তিন, সাড়ে তিন কিলোগ্রাম। কেরালার হাইব্রিড জাতীয় ‘উন্দামাঙ্গা’ আমগুলি কিছুটা অম্লমধুর স্বাদের। অন্ধ্রের ‘হিমায়থ’ আমটি ‘ইমাম-পসন্দ’ নামেও বেশ পরিচিত। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে এই মিষ্টি আমটি পাওয়া যায়। (Mango Day)  

এবার খোদ উত্তরভারতের দিকে নজর ফেরানো যাক। দাক্ষিণাত্যের সঙ্গে উত্তরভারতের আমের প্রকরণভেদ আছে। যেমন দেশের পুবদিকে পশ্চিমবাংলার মালদা মুশির্দাবাদের আমের সঙ্গে পশ্চিমভারতে উৎপন্ন আমের প্রভেদ বিস্তর। মালদা মুর্শিদাবাদের আম বলতে বাঙালির ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোলাপখাস, গোলাপভোগ, ফজলি, ক্ষীরশাপাতি এসব তো রয়েছেই। উত্তরভারতের বিশিষ্ট আমগুলির মধ্যে প্রথম পর্বেই উঠে আসে ল্যাংড়া, দশেরি, সিন্দুরি, তোতাপুরি, চৌসা, পইরি, কেসর, গোলাপখাস, লক্ষৌই সফেদা নামের সর্বাধিক জনপ্রিয় আমগুলি। (Mango Day)  

আরও পড়ুন: হিন্দু-মুসলমানের চোখের জল মুছিয়ে দেন “আনোখা বিবি”

ইতিহাস জানায়, মোঘলসম্রাট আকবর বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলায় এক লাখ আমগাছ রোপন করিয়েছিলেন। দ্বারভাঙ্গার ল্যাংড়া আমেরও প্রশস্তি আছে খুব। বিহারের ভাগলপুরের ফজলির চাহিদাও প্রচুর। উত্তরপ্রদেশে আবার দশেরি, ল্যাংড়া, আম্রপালির আধিক্য। রামপুর গোলা উত্তরপ্রদেশের আরও একটি জনপ্রিয় আম। দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে সিঁদুররাঙা ‘সিন্দুরি’ আমটাই এর বিশেষত্ব চিনিয়ে দেয়। গাঢ় হলুদ শাঁস থেকে আমদুধের শরবত দারুণ হয়। (Mango Day)  

দিল্লির ‘মালদা’ নামের আমটিও আঁশহীন রসালো। অম্ল-মধুর স্বাদের এই আম চাটনি বা আচার বানানোর পক্ষে উপযোগী। আমবিলাসীদের কাছে ‘তোতাপুরি’ আমেরও কদর আছে বেশ! ভারতে অঞ্চলভেদে তোতাপুরি, তোতাপারি, কিলিমুকু, গিনিমোথি ইত্যাদি অনেকগুলো পরিচিতি আছে। গ্রীষ্মের আমের বাজার মুখ্যত এই তোতাপুরি আমেই শুরু হয়। ঈষৎ কাঁচা স্বাদের তোতাপুরীর তখন কাটতিও খুব। (Mango Day)

Mango Day

উত্তরপ্রদেশের ‘দশেরি’ ও ‘চৌসা’ আমের কদর রসিকমহলে। উত্তরপ্রদেশের মল্লিহাবাদের কাছে ‘দশেহরি’ গ্রামের দুশো বছরেরও অধিক পুরনো মূল গাছটির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। এই দশেরি আমের ত্বকের আড়ালে উজ্জ্বল হলুদ মিষ্টি শাঁসের চমৎকার সুঘ্রাণ। ওদিকে হলুদরঙের ‘চৌসা’ আমের মুখটা একটু দাঁত দিয়ে কেটে এর ভেতরের ভরপুর নির্যাস চুষে খাওয়াই রীতি। তাই হয়তো আমের নামটাও অমন। উত্তরপ্রদেশের হরদোঈ গ্রামের কাছে প্রথম উৎপত্তি এই আমের। নরম রসালো শাঁস ও মনোরম সুবাসের জন্য এই আম আলাদা স্বাদের দাবি রাখে। (Mango Day)  

উত্তরপ্রদেশেরই আর এক বিখ্যাত আম ‘গোলাপখাস’। লালচেরঙা আমটির গন্ধ এক্কেবারে গোলাপফুলের মতো। গোয়া আর গুজরাতের প্রসিদ্ধ ‘পইরি’ আম দিয়ে বোতলজাত আমরসের ব্যাবসা ও বিক্রয় বেশ ভালই। ঘন কমলা এই আমরস দিয়ে দুধ, শরবত, পুডিং, কাস্টার্ড, ডেজার্ট বা আমের অন্যান্য বাহারি পদ প্রস্তুতিতে জুড়ি নেই। পাঞ্জাবে যেমন বম্বে গ্রীন, যার পরিচিত ডাকনাম মালদা, সে আম পাকা অবস্থাতেও সবুজ থাকে। আর মহারাষ্ট্রের রত্নগিরির আলফান্‌সো। এই না হলে গ্রীষ্মকাল মানায়? কথায় বলে ফলের রাজা আম, সেকি এমনি? আবার জনপ্রিয়তার বিচারে আমের রাজা কারোর কাছে ল্যাংড়া তো কারও ব্যাক্তিগত পছন্দের হিমসাগর। (Mango Day)  

“একদিন স্বয়ং শিব পূজারীকে স্বপ্নাদেশ দেন, কাশীরাজ নির্মিত এই শিবমন্দিরের আম্রচারা ভক্তদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হোক, যাতে এই আমের স্বাদ সারা দেশের মানুষ উপভোগ করতে পারে। পূজারীও তাই করেন।”

বেনারসী ল্যাংড়ার খ্যাতি বিশ্ববন্দিত। পাতিলেবুর মতো আভা এর সর্বাঙ্গে। যেমন গন্ধ তেমনই অতুলনীয় স্বাদ। দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে এই ল্যাংড়া আমের ফলনও প্রচুর। পশ্চিমবঙ্গে মালদা জেলার প্রখ্যাত ল্যাংড়া ওঠে জ্যৈষ্ঠ নাগাদ। ওইসময় বঙ্গদেশে ‘জামাইষষ্ঠী’ পার্বণের একটি ঐতিহ্যবাহী উপঢৌকন তত্ত্ব ল্যাংড়া আম। সঙ্গে গ্রীষ্মের উপযোগী অন্যান্য ফল তো থাকেই। বেনারসী ল্যাংড়া সম্বন্ধীয় একটি প্রাচীন লোকশ্রুতি আছে। বেনারসে শতাব্দীপ্রাচীন এক শিবমন্দিরে জনৈক সাধু দূরদেশ ভ্রমণ শেষে থাকতে এলেন। (Mango Day)

শিবমন্দিরের পূজারী তাঁকে থাকার অনুমতি দেন। ওই সাধুর কাছে একটি আমের চারা ছিল, পূজারীর অনুমতিক্রমে সেই আমের চারা সাধু, মন্দিরচত্বরেই রোপন করেন। নিয়মিত যত্ন, জলসেচনে সেই চারা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং মাত্র চার বছরেই তাতে মুকুল ধরে। ক্রমে সুমিষ্ট আমও ফলতে শুরু করে। গাছের প্রথম ফল মন্দিরের শিবলিঙ্গের উদ্দেশ্যে পুজো দেওয়া এবং সেই ফল কেটে মন্দিরে আগত ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে বিলিয়ে দেওয়া হত। একদিন স্বয়ং শিব পূজারীকে স্বপ্নাদেশ দেন, কাশীরাজ নির্মিত এই শিবমন্দিরের আম্রচারা ভক্তদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হোক, যাতে এই আমের স্বাদ সারা দেশের মানুষ উপভোগ করতে পারে। পূজারীও তাই করেন। কথিত আছে সেই পূজারী নাকি ল্যাংড়া ছিলেন। তাই এই গাছের কলম থেকে প্রস্তুত গাছকে ‘বেনারসী ল্যাংড়া’ বলা হয়। (Mango Day)  

Mango Day

আমাদের ভারতীয় পাকশালায় আমের ব্যাবহার বেশ জুতসই। কাঁচা আমের চাটনি, আমচুর, আচার, জেলি, আমতেল, আমডাল, বেশ জনপ্রিয়। নিদেনপক্ষে সামান্য নুন ও লংকাগুঁড়ো দিয়ে মজিয়ে কাঁচা আম অনেকের কাছেই জিভে জল আনা এক খাবার। কাঠফাটা গরমে আমপোড়া শরবত লাজবাব। আবার পাকা আমের ক্কাথ দিয়ে মোরোব্বা, দুধ-আম, ম্যাঙ্গো-লস্যি, আমপান্না, আমসত্ত্ব। পাকা আম প্লেটে কেটে, কাঁটা-চামচ সহযোগে এক পিস করে মুখে তোলা– কী অসাধারন ব্যাপার। (Mango Day)  

আমাদের দেশীয় পুরাতত্ত্ব এবং ধর্মেও আমের মর্যাদা লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় কৃষ্টিতে আম শুভ কার্যের প্রতীক। আমগাছ হল প্রাচুর্য, উর্বরতা এবং সৌভাগ্যের দ্যোতক। বিবাহ ও অন্যান্য শুভকাজে তোরণদ্বারে আম্রপল্লব রাখা হয়। হিন্দু পুজোয় আম্রপল্লব দিয়েই যজ্ঞবেদীতে ঘি ছেটানো হয়। জৈনদেবী অম্বিকামাতাকে দেখা যায় আমগাছের নিচে উপবেশনরতা। হিন্দু পুজো আচারে মঙ্গল প্রতীকস্বরূপ আম্রপল্লব লাগেই। ভারতীয় ঘরানার পোশাকে, বিশেষত কাশ্মীরি শাল, বাংলার প্রসিদ্ধ বালুচরী শাড়িতে, দক্ষিণের কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ির সূক্ষ্ম সুতোর কাজের মোটিফেও আম বা আমপাতার ব্যাবহার লক্ষণীয়।(Mango Day)      

আরও পড়ুন: নাও ছাড়িয়া দে

আম নিয়ে লিখতে গিয়ে অজান্তেই মনে পড়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় ও তাঁর বর্ণপরিচয়-এর কথা। বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় স্বরবর্ণতে, ‘আ– আমটি আমি খাবো পেড়ে’। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসামান্য সৃষ্টি ‘আম আঁটির ভেপু’। রবিঠাকুরের শিশুবয়সের লেখনীতে, “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি তাহাতে কদলি দলি / সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে / হাপুস হুপুস শব্দ, চারদিক নিস্তব্ধ / পিপীলিকা কাঁদিয়া যায় পাতে”। ওই যে কবি বলেছেন, “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি”— আহা আমসত্ত্ব-দুধে ভিজিয়ে খানিক ফ্রিজে রেখে– উফ্‌ যেন অমৃত।

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Author Madhuchanda Mitra Ghosh

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, মধুছন্দার পাঠকসমাজে পরিচিতি মূলত ভ্রমণকথা, গদ‍্যলিখন ও কবিতার আনুকূল‍্যে। বাংলা ও বর্হিবঙ্গের প্রায় সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্র ও ম‍্যাগাজিন, লিটল ম‍্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক মধুছন্দার জায়মান অনুভবে ভ্রমণ আখ‍্যানের অনায়াস যাতায়াত। নিজস্ব ভ্রামণিক অভিজ্ঞতার নিরিখে উপলব্ধিগত জীবন ও অনুভবকে অক্ষরযাপনের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দেন আত্মমগ্ন উচ্চারণে।

Picture of মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, মধুছন্দার পাঠকসমাজে পরিচিতি মূলত ভ্রমণকথা, গদ‍্যলিখন ও কবিতার আনুকূল‍্যে। বাংলা ও বর্হিবঙ্গের প্রায় সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্র ও ম‍্যাগাজিন, লিটল ম‍্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক মধুছন্দার জায়মান অনুভবে ভ্রমণ আখ‍্যানের অনায়াস যাতায়াত। নিজস্ব ভ্রামণিক অভিজ্ঞতার নিরিখে উপলব্ধিগত জীবন ও অনুভবকে অক্ষরযাপনের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দেন আত্মমগ্ন উচ্চারণে।
Picture of মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, মধুছন্দার পাঠকসমাজে পরিচিতি মূলত ভ্রমণকথা, গদ‍্যলিখন ও কবিতার আনুকূল‍্যে। বাংলা ও বর্হিবঙ্গের প্রায় সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্র ও ম‍্যাগাজিন, লিটল ম‍্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক মধুছন্দার জায়মান অনুভবে ভ্রমণ আখ‍্যানের অনায়াস যাতায়াত। নিজস্ব ভ্রামণিক অভিজ্ঞতার নিরিখে উপলব্ধিগত জীবন ও অনুভবকে অক্ষরযাপনের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দেন আত্মমগ্ন উচ্চারণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য

সংস্কৃতি

আহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com