(Rahul Dev Burman)
মৃত্যুর পর তিন যুগ অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও তিনি সমানভাবে বেঁচে আছেন, আমাদের সঙ্গীত জগৎ জুড়ে। অসংখ্য গ্রামোফোন রেকর্ড, সিডি, ক্যাসেট, চলচিত্রের সাউন্ডট্র্যাক এবং ব্যক্তি সংগ্রহে থেকে যাওয়া রেকর্ডিং– এসবের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাঁর সুরের মূর্ছনা আমাদের মনে আলোড়ন তোলে। প্রজন্মান্তরে ভারতীয় লঘুসঙ্গীত তাঁর হাত ধরে বিশ্বসঙ্গীতের সঙ্গে বেঁধেছে এক সাঁকো, যে পথে আজও চলে দেওয়া নেওয়ার সফর। ত্রিপুরা রাজপরিবারের অন্যতম সঙ্গীত প্রতিভা শচীন দেব বর্মণের সন্তান রাহুল দেব বর্মণ বা পঞ্চম, আসলে ছিলেন এই পথের দিশারী। (Rahul Dev Burman)

একটু পিছিয়ে যাই, সত্তরের দশকের শুরুতে।
২০ শে জুলাই, ১৯৬৯, নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পৌঁছে বলেছেন- “One small step for man, one giant leap for mankind”। ১৯৭০ সালে- জেনারাল মোটরস, ফোর্ড এবং ক্রাইসলার পেয়েছে মার্কিন দেশের Big Three Automakers এর শিরোপা। বিশ্বের তৃতীয় মহিলা শাসক হিসেবে গোলডা মেয়ার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বোয়িং ৭৪৭ “জাম্বো জেট” শিরোপা নিয়ে পাখা মেলেছে আকাশে। পৃথিবীর প্রথম এ.টি.এম চালু হয়েছে মার্কিন দেশে। সঙ্গীতের জগতে “বিটলস” মঞ্চে তাঁদের শেষ অনুষ্ঠান করে অবসর নিয়েছে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে আর উডস্টকের হাত ধরে সঙ্গীত পেয়েছে এক অন্যরকম মুক্তির স্বাদ, সেই বছরের অগাস্ট মাসে। বারো ইঞ্চি ব্যাসের হালকা লং প্লেয়িং রেকর্ডের সঙ্গে অসম যুদ্ধে, ভারী ৭৮ আর পি এম এর রেকর্ড প্রায় পরাজিত। (Rahul Dev Burman)
বিদায় অভিশাপ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৬০ এর দশকের সায়াহ্ন পেরিয়ে ক্রমশ সত্তরের ঊষাতে জাগছে পৃথিবী। বোম্বের সিনেমা সংস্কৃতিতেও একটু একটু করে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সিনেমার পর্দা, সাদা কালো থেকে যেমন রঙিন হল, পঞ্চাশ ষাটের দশকের নায়ক নায়িকার বেশভুষা, কথাবার্তার ধরণ গেল বদলে। যে প্রেম ছিল সঙ্গোপনে– দেখা-অদেখার আলো আঁধারিতে মোড়া– তা যেন দিনের আলোর মতো প্রকাশিত হয়ে পড়ল আর পাঁচজনের মাঝে। (Rahul Dev Burman)
হিপি প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটল যুবসমাজের একটা শ্রেণীর। হলিউডের কাহিনির আদলে বদলে গেল সিনেমার গল্প বলার ঢং। তার সঙ্গে মিশেল হল ভারতীয় সমাজের দেশীয় সেন্টিমেন্টের।
হিপি প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটল যুবসমাজের একটা শ্রেণীর। হলিউডের কাহিনির আদলে বদলে গেল সিনেমার গল্প বলার ঢং। তার সঙ্গে মিশেল হল ভারতীয় সমাজের দেশীয় সেন্টিমেন্টের। তিরিশের দশকে প্লেব্যাক প্রযুক্তির আবির্ভাবে, ভারতীয় উপমহাদেশের সিনেমায় বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে গান। হিন্দি ছবির গান ও পি নাইয়র, সি রামচন্দ্রন, অনিল বিশ্বাস, নৌশাদ, সলীল চৌধুরী, খইয়াম, জয়দেব প্রমুখদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সত্তরের দশকে, একমাত্র শচীনদেব এবং মদনমোহন ছাড়া, এঁরা সবাই ক্রমশ পিছনের সারিতে সড়ে গেলেন। জায়গা করে দিলেন লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল, কল্যাণজী আনন্দজী, শঙ্কর জয়কিষণ এবং অবশ্যই পঞ্চমের মতো নতুন কিছু মুখকে। (Rahul Dev Burman)

শুরু হল বোম্বের ফিল্ম দুনিয়ার এক নতুন ধারা। যে ধারার অন্যতম ধারক, বাহক, চালক এবং কারিগর অবশ্যই পঞ্চম। আমরা যারা ঐ সত্তরের দশকে শৈশব ছেড়ে কৈশোরের পৈঠা পার করছি, সে সময়ে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে হিন্দি সিনেমা দেখা এবং তার গান শোনা ছিল এক ভয়ঙ্কর অপরাধের বিষয়। টেলিভিশন আসেনি। রেডিওর কান মুচড়ে শোনা যায় চারটি ষ্টেশন– কলকাতা ‘ক”, কলকাতা “খ”, যুববাণী এবং বিবিধ ভারতী। এর মধ্যে বিবিধ ভারতীর ‘পঞ্চরঙ্গি প্রোগ্রাম’ ছিল মূলত হালকা গান বাজনা শোনার প্রচার তরঙ্গ– সে হিন্দি হোক বা বাংলা! (Rahul Dev Burman)
সুতরাং হিন্দি ছবির নায়ক নায়িকার লিপে গান শুনতে হলে যেতে হবে সিনেমা হলে– নয়তো গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে কিনতে হবে রেকর্ড। সেদিক থেকে বিবিধ ভারতী বিনি পয়সার বিনোদন।
সুতরাং হিন্দি ছবির নায়ক নায়িকার লিপে গান শুনতে হলে যেতে হবে সিনেমা হলে– নয়তো গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে কিনতে হবে রেকর্ড (ক্যাসেট টেপ তখনও বাজারে আসেনি)। সেদিক থেকে বিবিধ ভারতী বিনি পয়সার বিনোদন। এর সঙ্গে ছিল সাগরের ওপারে রেডিও সিলন থেকে প্রচারিত “বিনাকা গীতমালা” যার শুরু আসলে পঞ্চাশের দশকে চলচ্চিত্রের গানের প্রতি সরকারি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অবজ্ঞাপূর্ণ মনোভাবের কারণে। (Rahul Dev Burman)
আর ঠিক এই জায়গায় পঞ্চমের সুর কোথা থেকে বয়ে নিয়ে এল এক খোলা হাওয়া। দেশজ সঙ্গীতের সঙ্গে মিলেমিশে গেল পশ্চিমা Jazz, Blues, Latino অথবা Country Music এর সুর-তাল-ছন্দ। প্রকাশিত গানের হিসেব ধরলে পঞ্চমের সুর দেওয়া হিন্দি ছবির সংখ্যা ২৯২, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছবি তৈরি হয়েছিল সত্তরের দশকে। ‘কটি পতঙ্গ’, ‘অমর প্রেম’, ‘বুড্ডহা মিল গয়া’, ‘কারওয়া’, ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, ‘আপনা দেশ’, ‘বম্বে টু গোয়া’, ‘মেরে জীবন সাথী’, এরকম হরেক ছবি তৈরি হয়েছিল দশকের প্রথম ভাগে। (Rahul Dev Burman)

কিন্তু যে ছবিটিকে একসময় বিবিসি অভিহিত করেছিল “The Film of the Millinnieum” হিসেবে এবং যেটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৫ সালের, ১৫ই অগস্ট, দেশের স্বাধীনতা দিবসে। পঞ্চাশ বছরের দোর গোড়ায় এসে দাঁড়ানো সেই ‘শোলে’ ছবিতে সুরকার এবং আবহ সঙ্গীতকার হিসেবে রাহুল দেব বর্মণের কাজ একটা মাইলস্টোন বলা যেতে পারে। (Rahul Dev Burman)
পরিচালক রমেশ সিপ্পি পরিচালিত “শোলে” –কে বেশ কিছু কারণেই ভারতীয় সিনেমা জগতের ক্ষেত্রে “প্রথম” বলা যায়। প্রথমত, দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে তৈরি হওয়া ছবির নেপথ্যে ছিল হলিউডের বিখ্যাত ছবি “The Magnificent Seven” এর ছায়া, যা আসলে সে সময়ে জনপ্রিয় “Western Cinema” -র আদলে তৈরি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঘোড়ায় চড়া কাউবয়, বন্দুকধারী ডাকাবুকোদের দুঃসাহসিক জীবনযাত্রা ছিল এই ধরণের ছবির বিষয়বস্তু। দ্বিতীয় আকর্ষণ, রঙিন ৭০ মিলিমিটারের বড় পর্দায়, স্টিরিওফোনিক শব্দ প্রক্ষেপণের প্রযুক্তি। তৃতীয়ত, রাহুল দেবের সুরারোপিত গানের পাশে পাশে, সেলিম-জাভেদের লেখা সংলাপ ছিল “শোলে”-র অপর উপাদেয় উপাদান, এক কথায় একে অন্যের পরিপূরক। পলিডর রেকর্ড প্রকাশ করেছিল পুরো ছবিটির সংলাপের রেকর্ডিং– যা ভারতে কোনও সিনেমার ক্ষেত্রে প্রথম। চতুর্থত, বাণিজ্যের নিরিখে “শোলে” একটা সর্বকালীন রেকর্ড তৈরি করেছিল– দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সেই ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল বোম্বে শহরের মিনারভা হলে। (Rahul Dev Burman)
বদলের বিভিন্ন মাত্রা: রবীন্দ্রনাথ: শুভেন্দু দাশমুন্সী
একটু গভীরে গিয়ে দেখলে বোঝা যাবে “শোলে”-র আবহ সঙ্গীতের ব্যাপারে পঞ্চম ছিলেন খুবই সংযমী। ১৮৮ মিনিটের বোম্বাই মার্কা “একশন ফিল্মে” জোরদার আবহসঙ্গীত যোগ করবার প্রবণতা থাকাটা অস্বাভিক নয়। কিন্তু এখানেই পঞ্চমের সাঙ্গিতিক মনন যা তাঁকে বেঁধে রাখে স্পষ্ট এক সীমার মধ্যে। পঞ্চমের মৃত্যু পরবর্তী এক সাক্ষাৎকারে রমেশ সিপ্পি স্বীকার করেছিলেন “শোলে”-র আবহসঙ্গীতের ব্যাপারে পঞ্চম কিছু অভাবনীয় আইডিয়া কাজে লাগিয়েছিল। ঘোড়ার গাড়ির পশ্চাদ্ধাবনের দৃশ্যে কাজে লাগানো হয়েছিল একটি তবলা, একটি ঢোলক এবং তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ঘুঙরু এবং ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ। অতি সাধারণভাবে তৈরি এই আবহের প্রভাব কিন্তু ছিল সাঙ্ঘাতিক!” (Rahul Dev Burman)
অপর এক দৃশ্যে ঘুমিয়ে পড়া গ্রামের অন্ধকারে, ঠাকুর সাহেবের বাড়ির সিঁড়িতে বসে জয় (অমিতাভ বচ্চন) বাজায় তার প্রিয় মাউথ অরগান, খানিক দূরে বারান্দায় এক এক করে বাতি নিভিয়ে যায় ঠাকুর সাহেবের বিধবা পুত্রবধূ রাধা (জয়া ভাদুরি) –দুজনের মধ্যে নৈঃশব্দ্য তৈরি করে এক বন্ধন। রাতের অন্ধকারে বেজে ওঠে এক করুণ সুর- যা হারমনিকায় বাজিয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ভানু গুপ্তা। পঞ্চমের তৈরি করা এই সুর আজও বেঁচে আছে মানুষের মনে “শোলে”-র একটি সিগনেচার টিউন হয়ে! (Rahul Dev Burman)
ভানু গুপ্তা বলেছিলেন এই সুর যদিও রেকর্ড করা হয়েছিল “ডি” স্কেলে, কিন্তু পরবর্তীকালে যখন ফিল্মে বসানো হয় তখন পঞ্চম সেটিকে বদলে “ডি- শার্প” এ করে নেন। ভুপেন্দ্র সিং, আর কে দাস এবং ভানু নিজে- তিনজনের হাতে একসঙ্গে বেজেছিল সেদিন রিদিম গীটার- “You can say that it was an eighteen-string guitar with three of us!”
“শোলে”-র অপর সিগনেচার টিউনটি নিঃসন্দেহে দু’মিনিট চল্লিশ সেকেন্ডের টাইটেল মিউজিকটি, যা ১৯৭৩ সালেই রেকর্ড করা হয়েছিল– রাজকমল স্টুডিওতে, সিক্স ট্র্যাক রেকর্ডারে। এখানেও পঞ্চমের মুন্সিয়ানা। ভাল করে শুনলে বোঝা যায় সুরটি জুড়ে বেজেছিল গীটারের সাধারণ একটি কর্ড, ফ্রেঞ্চ হর্ন, তবলা, বঙ্গ, বিবিধ পারকাশান- যা শেষ হয়েছিল দক্ষিণা মোহন ঠাকুরের সানাইয়ের তানে। পশ্চিমের শহুরে সুরের সঙ্গে পুবের মেঠো সুর মাখামাখি হয়ে তৈরি করেছে এক অদ্ভুত শ্রুতি সুখকর যাদু। (Rahul Dev Burman)
ভানু গুপ্তা বলেছিলেন এই সুর যদিও রেকর্ড করা হয়েছিল “ডি” স্কেলে, কিন্তু পরবর্তীকালে যখন ফিল্মে বসানো হয় তখন পঞ্চম সেটিকে বদলে “ডি- শার্প” এ করে নেন। ভুপেন্দ্র সিং, আর কে দাস এবং ভানু নিজে- তিনজনের হাতে একসঙ্গে বেজেছিল সেদিন রিদিম গীটার- “You can say that it was an eighteen-string guitar with three of us!” (Rahul Dev Burman)
আসা যাক “শোলে”-র গানে। ছবিতে গানের সংখ্যা সাত, যার মধ্যে “ইয়ে দোস্তি”-র দুটি ভার্সন। জানা যায় রেকর্ডিং কোম্পানি পলিডর রীতিমতো বাজি রেখেছিল “শোলে”-র গানের কপিরাইট নিয়ে। বাজারের নিয়মে রিলিজের দু’মাস আগেই প্রায় ৩০০০০ রেকর্ডের কপি ছাড়া হয়েছিল।
আসা যাক “শোলে”-র গানে। ছবিতে গানের সংখ্যা সাত, যার মধ্যে “ইয়ে দোস্তি”-র দুটি ভার্সন। জানা যায় রেকর্ডিং কোম্পানি পলিডর রীতিমতো বাজি রেখেছিল “শোলে”-র গানের কপিরাইট নিয়ে। বাজারের নিয়মে রিলিজের দু’মাস আগেই প্রায় ৩০০০০ রেকর্ডের কপি ছাড়া হয়েছিল। ডিলারদের জন্য ঘোষণা, যত ইচ্ছে রেকর্ড নিয়ে যান, কিন্তু শর্ত একটাই, ১৫ই অগাস্টের আগেই অবিক্রিত সমস্ত কপি ফেরত দিতে হবে কোম্পানিকে, বাজার চলতি নিয়মে তখন মাত্র ৭.৫% অবিক্রিত কপি ফেরত নিত রেকর্ডিং কোম্পানিগুলো। কিন্তু শোলের গান পঞ্চমের হাত ধরে যে হতে চলেছে অন্যরকম কিছু, এ বোধহয় আন্দাজ করা গিয়েছিল শুরুতেই। পরবর্তীকালে চাহিদার চাপে সেই রেকর্ড পলিডরের কাছ থেকে ডিলারদের নিতে হয়েছিল বেশি দামে। এও হয়তো কোনও ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে প্রথম। (Rahul Dev Burman)

“মেহেবুবা মেহেবুবা” গানটি গেয়েছিলেন পঞ্চম নিজে। নিজের গলায় এটাই যেমন ছিল তাঁর প্রথম প্লে ব্যাক, এই গানটির সুর সংযোজনার ক্ষেত্রেই তাঁকে কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছিল যা জীবনের শেষ অবধি তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু সেই সুরকারের হাতেই তো তৈরি হয়েছিল “ইয়ে দোস্তি”–র মতো গান যা আজও বন্ধুত্বের ভাবনাকে তরতাজা করে, “হোলি কি দিন”–র মতো উৎসবের গান যা এখনও বসন্তের রঙ ছড়িয়ে দেয় মনের মাঝে। এভাবেই রাহুল দেব বর্মণ আর “শোলে” একাত্ম হয়ে গেছে আমাদের কাছে। (Rahul Dev Burman)
১৯৯৪ সালের ৪ঠা জানুয়ারির ভোর রাতে চলে যান পঞ্চম। একটা লম্বা সময় প্রায় নির্বাসিত ছিলেন কাজের জগৎ থেকে। আসলে ফিল্মের দুনিয়া, বলা ভাল, বিনোদনের দুনিয়া বড় নিষ্ঠুর– সে ততক্ষণই পাদ প্রদীপের আলো জ্বালে যতক্ষণ শিল্পী দিতে পারেন; তারপর মঞ্চে নামে আঁধার। সেই আঁধার পেরিয়ে পঞ্চম ফিরেছিলেন আগুনের পাখি হয়ে– “১৯৪২– এ লাভ স্টোরি”–র সঙ্গীত ভাবনাকে সঙ্গী করে আর মাত্র মাস তিনেক পরে। আমরা সাক্ষী থাকলেও– সেই মানুষটি সেদিন আর নেই। (Rahul Dev Burman)
“আর ডি” এই দুটি অক্ষর আসলে এক অনুঘটকের নাম। সলীল চৌধুরী তাঁর অনুজের জীবনাবসানের পরে লিখেছিলেন–‘ক্ষণজন্মা প্রতিভারা এভাবেই আসে অপ্রত্যাশিত, অসম্ভব অকল্পিত প্রত্যাশার সৃষ্টি করে, আবার চলে যায় অপ্রত্যাশিত…”!
“আর ডি” এই দুটি অক্ষর আসলে এক অনুঘটকের নাম। সলীল চৌধুরী তাঁর অনুজের জীবনাবসানের পরে লিখেছিলেন–‘ক্ষণজন্মা প্রতিভারা এভাবেই আসে অপ্রত্যাশিত, অসম্ভব অকল্পিত প্রত্যাশার সৃষ্টি করে, আবার চলে যায় অপ্রত্যাশিত…”! অনুঘটকের তো ঐ ধর্ম– নিজগুণে সে বিক্রিয়া ঘটায়– নতুনকে গড়ে। কয়েক বছর আগে সলীল চৌধুরীর পুরনো ডাইরির পাতায় পাওয়া যায় রাহুল দেবের স্মরণে লেখা এই কবিতাটি, যা আরও একবার মনে করিয়ে দেয় সুরের পঞ্চমকে। (Rahul Dev Burman)
“In death all the waves calm down
And an equilibrium is achieved
Which the achiever never knows!
In death the time frame becomes zero
Buds prefer to remain buds
Dreams become impersonal
But the dreamer never knows!
In death you get an eternal life of non-living
When living beings bore you to death
With the shameless display
Of their arrogant sympathy
You see much more
Than your living eyes could ever see
Penetrating through the funeral pyre
Your eyes become fire
But the see-er never knows!
In death the hills becomes statues
Statues you have never seen
They start roaming about
Breaking all the citadels of life
Of hypocrisy and narrowness
They make you ride on their shoulders
In the orgy of their destruction
But the rider never knows!
In death all tomorrows become yesterday
And like a python shedding its scales
You throw away all the agony
And shame and shamelessness
The glory and the ignominy
You treat them alike
You begin an existence of non-existence
But the beginner never knows!
In death you get everything because
You want nothing
You become one with
The wind and the seas
The throbbing nebular Milky way
Which originated the sun
Before life began with the Big Bang
You become one with them
Never wanting to have life again
Because you start enjoying
The lifeless life of the eternal element
But the enjoyer never knows!
In death you become
The consciousness itself
That is why you are never conscious
Like the eye which does not see itself
You go beyond singing and composing
You become music itself
But the composer never knows!”
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
চিত্র ঋণ- আন্তর্জাল
সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।