(Salil Chowdhury)
সুরকার সলিল চৌধুরীর সামগ্রিক সঙ্গীত প্রতিভার মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞারা করবেন, আমি বরং তাঁর চলচ্চিত্র যোগাযোগ নিয়ে দু’চারটি কথা বলার চেষ্টা করি, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের, ষাটের দশকের শুরু অব্দি। লেখার মধ্যে গানের রেফারেন্সে যেখানে সম্ভব গানের লিঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে কেউ মনে করলে গানটির এক ঝলক শুনে নিতে পারবেন। (Salil Chowdhury)
সলিল চৌধুরী সিনেমায় প্রথম সুরারোপ করেন, আলোড়ন ফেলা একটি ছোটদের ছবি, পরিবর্তন(১৯৪৯)-এ। সিনেমাটিতে শুধু সত্যেন বোসের পরিচালনায় হাতেখড়ি নয়, মুখ্য ভূমিকায় অভিনয়ও করেন তিনি। পরিবর্তন, প্রযোজকের দাবি অনুযায়ী ভারতের প্রথম কিশোরচিত্র। দুটি গান ছিল, যাতে তেমন একটা সালিলোচিত ছাপ নেই। এরই হিন্দি সংস্করণ জাগৃতিও সারা ভারতে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল। (Salil Chowdhury)
পরের ছবি সত্যেন বোসেরই বরযাত্রী (১৯৫১), শিবপুরের গনশা ঘোতনার কাণ্ডকারখানা নিয়ে হাসির ছবি, আজও উপভোগ্য। এই গল্প টিভিতে রিমেক হয়েছে। ভারতী বসুর গাওয়া, শিমুল শিমুল শিমুলটি গানে সলিলের ছাপ বোঝা যায়। (Salil Chowdhury)
এই ছবিতে সলিলের টুপিতে আর একটি পালক- সুরারোপ ছাড়া গীত রচনাও সলিল তাঁর।
১৯৫২ তে পাশের বাড়ি, পরিচালক হিসেবে সুধীর মুখার্জির ও অভিনেত্রী সাবিত্রী চ্যাটার্জির প্রথম ছবি। সলিলের এই তৃতীয় সিনেমাটিতে তাঁর সংগীত প্রতিভা পূর্ণ মর্যাদা পায়। প্রীতি ব্যানার্জির কণ্ঠে, ও পলাশ বনের মুকুল, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য গাওয়া ও অভিনীত তিনটি গান, রূপ সায়রের বুকে, নয়নে তার ভোমরা কাজল এবং বিশেষ করে এই ঝির ঝির ঝির বরষায় সেদিনের মতো আজও সমান জনপ্রিয়। (Salil Chowdhury)
ছবিটি সে বছরের হিট ছবিগুলোর অন্যতম। দক্ষিণের চারটি ভাষাতে এবং হিন্দিতে (পড়োসন), পাশের বাড়ির সার্থক রিমেক। বাংলা সিনেমাতে সাময়িক যতি টেনে সলিল সুরারোপিত হিন্দি ছবিগুলোর দিকে তাকানো যাক। (Salil Chowdhury)
অশোক কুমারের আহ্বানে উদয়ের পথে খ্যাত বিমল রায় তাঁর দলবল নিয়ে কলকাতা থেকে বম্বেতে গিয়ে হিন্দিতে মা নামে (১৯৫২) একটি সামাজিক সিনেমা বানালেন, কিন্তু সমালোচক বা দর্শক, কারুরই আশীর্বাদ পেলেন না। বম্বেতে তাঁর দ্বিতীয় ছবির জন্যে বাছলেন রিকশাওয়ালা নামে সলিল চৌধুরীর একটি গল্প, নাম ভূমিকায় আই পি টি এর বলরাজ সহানি। রবীন্দ্রনাথের থেকে ধার করে নাম দিলেন দো বিঘা জমিন (১৯৫৩)। হিন্দি সিনেমা জগতে বাস্তবধর্মী নান্দনিক চলচ্চিত্রের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল। ছবিটির সঙ্গীত রচনা ছাড়াও সলিল কাহিনিকার হিসেবে প্রশংসা পেলেন। সলিল চিরকাল দেশজ লোকগীতি, পাশ্চাত্য আধুনিক ও ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন। যেমন রাশিয়ার রেড আর্মির মার্চিং সং-এর সুর ধার করে দো বিঘা জমিন-এ মান্না দে আর লতাকে দিয়ে গাওয়ালেন, ধরতি কহে পুকারকে। (Salil Chowdhury)
পরবর্তীকালে হৃষিকেশ মুখার্জি পরিচালিত ছায়া সিনেমাতে মোজার্টের ৪০ তম সিম্ফনি জি মাইনর ব্যবহার করে, তালাত মাহমুদকে দিয়ে গাওয়ালেন, ইতনা না মুঝসে তু প্যার বড়া। (Salil Chowdhury)
গানটির দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তাই প্রমাণ করে সলিলের এই এক্সপেরিমেন্ট কতটা ফলপ্রসূ হয়েছিল।
প্রথা ভেঙে হৃষিকেশেরই পরিচালিত প্রথম ছবি মুসাফিরে (১৯৫৭), সলিল নায়ক দিলীপকুমারকে লতার সঙ্গে ডুয়েট গাওয়ালেন, লাগি নাহি ছুটে রাম। (Salil Chowdhury)
ক্রেডিট টাইটেলে কিন্তু দেখা গেল, গায়কের নাম দিলীপকুমার নয়, ইউসুফ খান। এ ছাড়া আর কোনও সিনেমায় দিলীপ বা ইউসুফকে গাইতে শোনা যায়নি। (Salil Chowdhury)
রাজ কাপুর যখন কলকাতা শহরের ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি রাতের ঘটনা নিয়ে শম্ভু মিত্র ও অমিত মৈত্রের পরিচালনায় দ্বিভাষী ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র জাগতে রহো/ একদিন রাত্রে বানালেন, সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন সলিল চৌধুরীকে। সব গানই আশাতীত জনপ্রিয়তা পেল, বিশেষ করে মান্না দের কণ্ঠে, মদ্যপ ছবি বিশ্বাসের লিপে- এই দুনিয়ায় ভাই, হিন্দিতে একই সিনে মতিলালের লিপে মুকেশের, জিন্দেগী খোয়াব হ্যায়। (Salil Chowdhury)
এই দুনিয়ায় ভাই, গানটি সলিলের কথায় ও সুরে, মান্না দের কণ্ঠে ও ছবি বিশ্বাসের অভিনয়ে যে মাত্রা পেয়েছে তা বোধহয় এই তিন জিনিয়াসের পক্ষেই সম্ভব ছিল। অবশ্যই রাজ কাপুর ও দুই পরিচালকও এই কৃতিত্বের অংশীদার। সহৃদয় পাঠক লিংক থেকে গানটা শুনলে ও সলিলের লেখা কথাগুলো (আপাত ননসেন্স কিন্তু গভীরভাবে ফিলসফিক্যাল) লক্ষ্য করলে প্রতিবেদকের বক্তব্যের সাথে একমত হবেন। (Salil Chowdhury)
বিমল রায় দো বিঘা জমিন এর পর থেকে প্রায় অল্টারনেটলি তাঁর সিনেমাগুলোতে সঙ্গীতের ব্যাপারে সলিল ও শচীন কর্তার ওপরই নির্ভর করেছেন। বিমল রায় প্রোডাকশনের সলিলকৃত সিনেমাগুলো- বিরাজ বহু, নৌকরি, মধুমতী, পরিবার, পরখ (এটিরও গল্প সলিলের), কাবুলিওয়ালা, প্রেমপত্র (সাগরিকার হিন্দি)। সবকটির গানেই সলিল চৌধুরীর ঘরানা সুস্পষ্ট। (Salil Chowdhury)
কাবুলিওয়ালা রহমতের গলায় মান্না দের- এয়ে মেরে প্যারে ওয়তন, গানটিতে আফগানি রবাবের ব্যবহার খুবই সুপ্রযুক্ত, গানটি আজও প্রথম পছন্দের দেশাত্ববোধক গান হিসেবে গাওয়া হয়ে থাকে। আর, গঙ্গা আয়ে কাঁহাসে (আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরের, হিন্দি ভার্সন), হেমন্তর শ্রেষ্ঠ হিন্দি গানগুলির অন্যতম। (Salil Chowdhury)
আর মধুমতীর কথা কি বলব! ১৯৫৮ সালের “Highest grossing film”- উইকির তথ্য। এই ব্যবসায়িক সাফল্যের পেছনে সলিলের সংগীতের অবদান কিছু কম ছিল না। যদিও দিলীপ কুমারের প্রথম পছন্দের সুরকার ছিলেন নৌশাদ, বিমল রায় আপোস করেননি। ১৯৫৮-র হিন্দি ছবির মধ্যে মধুমতী ৯টি ফিল্মফেয়ার (১৯৫৯) পুরস্কার পেয়ে (যার মধ্যে সলিল- শ্রেষ্ঠ সুরকার ও লতা শ্রেষ্ঠ গায়িকা– আজা রে পরদেশী) যে রেকর্ড স্থাপন করল, তা ৩৭ বছর অক্ষুণ্ণ ছিল। (Salil Chowdhury)
১৯৯৬ তে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে ১০টি প্রাইজ পেয়ে সে রেকর্ড ভাঙলেও, যথার্থ বিচারে ১৯৫৮র সঙ্গে ১৯৯৬, মোটেই তুলনীয় নয়। কারণ ১৯৫৮-এ মোট ১২ টি পুরস্কারের মধ্যে মধুমতী পায় ৯ টি (৭৫%) আর ১৯৯৬ এ মোট ৩০ টির মধ্যে দিলওয়ালে পায় ১০ টি অর্থাৎ ৩৩%। (Salil Chowdhury)
সলিলের প্রতিভা শুধুমাত্র সুর করা, গান লেখা ও গল্প লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি হিন্দিতে পিঞ্জরে কি পঞ্ছি (১৯৬৬) নামে একটি ছবির পারিচালনাও করেছিলেন, মীনাকুমারী, বলরাজ সাহনী, অভি ভট্টচার্য্য ও মেহমুদকে নিয়ে। দু’তিনটে গান ওঁরই বাংলা গান থেকে সুর নেওয়া, মান্না দের গাওয়া, আইসা হোগা কভি হোগা (ইস্যা করে পরাণডারে), লতার- মেরে নয়ন পাখি (কাছাকাছি শব্দে লতারই বাংলা গান)। (Salil Chowdhury)
বাংলার শিল্পী সবিতা চৌধুরী ও দ্বিজেন মুখার্জিকে দিয়ে হিন্দি সিনেমাতে গান গাইয়েছেন। দ্বিজেনের, এয় দিল কাঁহা তেরা মঞ্জিল, দেব আনন্দের লিপে, মায়া সিনেমাতে (এক দিন ফিরে যাব চলে’র হিন্দি) আজও রীতিমত হিট। সপ্নে সুহানে ছবিতে, লতা ও মান্না দের সঙ্গে, নাম মেরে নিম্মোর (ঝিলমিল ঝাউয়ের বনে ঝিকিমিকির সুরে) মতো একটু দ্রুত লয়ের হেলেনের নাচের গানে দ্বিজেনকে ব্যবহার করা একটি সাহসী পদক্ষেপ। (Salil Chowdhury)
শোনা যায় মধুমতীর একটি গান শ্যামলকে দিয়ে গাওয়ানোর ইচ্ছে ছিল, যে কোনও কারণে শেষ অব্দি হয়নি। হতাশ শ্যামল বোম্বে থেকে ফিরে সে বছর (১৯৫৭) পুজোয় গাইলেন- এই পথে যায় চলে, ঝরা পাতা যায় দলে। মধুমতীর, সুহানা সফর অউর মৌসম হাঁসি’র সাথে মিল লক্ষ্যণীয়। (Salil Chowdhury)
মৃণাল সেন তাঁর প্রথম সিনেমা রাতভোর (উত্তম অভিনীত পরিচালকের একমাত্র ছবি) এবং দ্বিতীয় নীল আকাশের নিচের কৃতিত্ব খুব একটা ওন করতেন না, মনে করতেন, বাইশে শ্রাবণ থেকেই তাঁর পরিচালক সত্তার বিকাশ শুরু হয়েছে। প্রথম ছবি রাতভোরের সঙ্গীত পরিচালনার ভার দেন এক সময় আইপিটিএর সহযাত্রী সলিল চৌধুরীর ওপর। পল্লীগীতির মিশেলে স্বল্পশ্রুত গানগুলো আজও শ্রুতিমধুর। আমার দুখের সীমা নাই (সতীনাথ), বনে নয় মনে আজ (সন্ধ্যা), ও মাঝি রে (শ্যামল) এবং রিম ঝিম ঝিম তালে (সন্ধ্যা), গানগুলো যাঁরা শোনেননি অনুরোধ করব শুনে নিতে –
গ্রাম বাংলার মেঠো সুরের আর একটি উৎকৃষ্ট প্রয়োগ, ১৯৬০-এ সলিল দেখালেন, রাজেন তরফদারের গঙ্গা ছবিতে। প্রতিটি গান লোকগীতি, ভাটিয়ালির আঙ্গিকে সলিল সৃষ্টি করেছেন- গঙ্গা গঙ্গার তরঙ্গে, সজনী ও সজনী হইবে নি মোর ঘরণী, ও রে সুন্দইরা গাঙের মাঝি, শিবের আজ বড় রঙ্গ, পঙ্কজ মিত্রের- ইস্যা করে পরাণডারে, আর অবশ্যই মান্না দের- আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে, শুনলে আজও প্রথম শোনার রোমাঞ্চ টের পাই। (Salil Chowdhury)
মধুমতীর গান যদি আপামর ভারতীয় শ্রোতাকে আপ্লুত করে থাকে, গঙ্গা ভাসাল গান পাগল বাঙালিকে।
ঋত্বিকের (এ বছরটা এই বিরল প্রতিভারও শতবর্ষ) কোমল গন্ধার (১৯৬১) বাংলার অপেশাদারী নাট্যদলগুলোর গল্প, তাদের ভাঙাগড়া, সদস্যদের দ্বেষ, অসূয়া, কোন্দল এবং সমান্তরাল ভাবে ভৃগু (অবনীশ বন্দো) ও অনসূয়া (সুপ্রিয়ার) ভালবাসার গল্প। যদিও জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ছিলেন সুরকার, ঋত্বিক ভারতীয় গণনাট্যের দিনগুলির বন্ধু সলিলকে, কোমল গান্ধারের নায়ক নায়িকার জন্যে একটা প্রেমের গান তৈরি করতে অনুরোধ করলেন। (Salil Chowdhury)
আমরা পেলাম একটি কালজয়ী গান- আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা, কথা ও সুর দুইই সলিলের। সেই সাথে গল্পের প্রয়োজনে সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের অবাক পৃথিবী গানটিতে সুরারোপ করে দেবব্রতকে দিয়ে গাওয়ালেন। দুঃখের বিষয় সিনেমা থেকে ‘আমি ঝড়ের কাছে’ বাদ পড়ল, হয়তো ঘটনা প্রবাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছিল না বলে। বুকলেটে কিন্তু ১৪ টি গানের শেষ গান হিসেবে থেকে গেল। মন্দের ভাল, একই বছর ১৯৬১ তে পুজোয় আমি ঝড়ের কাছে, হেমন্তের গলায় বেরল বেসিক গান হিসেবে- সেই ঝড়ে বাকি সব উড়ে গেল। (Salil Chowdhury)
রেকর্ডের পেছনের গানটিও সলিলের লেখা ও সুর করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক গান- মনের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে গেছে। জানতে ইচ্ছে করে, ঝড়ের কাছে, যদি কোমল গান্ধারের জন্যে গাওয়া হয়ে গিয়েছিল, কে গেয়েছিলেন, হেমন্ত না অন্য কেউ? (Salil Chowdhury)
বেশির ভাগ বাঙালি সুরকার তাঁদের ছবিতে মাঝে-মধ্যে দু’একটা রবীন্দ্র সংগীত ব্যবহার করেছেন। আবার যে বাঙালি সুরকাররা হিন্দি সিনেমাতে সুর দিয়েছেন তাঁরা তাঁদের গানে রবীন্দ্র সংগীতের সুর ব্যবহার করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ১৯৫২ সালে পঙ্কজ মল্লিক জলজলা (রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায়, জার্মান পরিচালক পল জিলস নির্দেশিত) ছবিতে নিজেরই গাওয়া- পবন চলে জোর, সুরে ও কথায়, খরবায়ু বয় বেগের অনুসারী। অনিল বিশ্বাস ওযারিসে (১৯৫৪) তালাত ও সুরাইয়ার গাওয়া- রাহী মতওয়ারে, ওরে গৃহবাসীর একটি সার্থক রূপান্তর এবং আজও খুব জনপ্রিয়। আর শচিনদেব বর্মন- সেদিন দু’জনে দুলেছিনু বনে, থেকে অফসারে (১৯৫০) নয়ন দিওয়ানে, সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। (Salil Chowdhury)
সলিল বাংলা লাল পাথরে, আলো আমার আলো ওগো, রবীন্দ্র সংগীতটি বাংলায় ও জার্মান ভাষায় ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া সলিলের অন্য কোনও সিনেমাতে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করেছেন বলে এই প্রতিবেদকের জানা নেই। আর হিন্দিতে প্রেমপত্র সিনেমাতে (১৯৬২)- সাওন কি রাতোমে, শুধু সুর নয়, গুলজারের লেখা বাণীও (প্রথম স্তবক), রবীন্দ্রনাথের- যেতে যেতে একলা পথে, গানটি অনুসৃত। (Salil Chowdhury)
এর বাইরে সলিলের অন্য কোনও গানে রবীন্দ্র সংগীতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। এখানে বলা প্রয়োজন সলিলের সাহিত্যিক সত্তার কদর বিমল রায় করেছিলেন প্রেমপত্রের (বাংলা সাগরিকার হিন্দি) চিত্রনাট্যের ভার সলিলের ওপর দিয়ে, এবং তার আগে সলিলের দুটি মৌলিক গল্প চলচ্চিত্রায়িত (দো বিঘা জমিন ও পরখ) করে। (Salil Chowdhury)
শুরুতেই স্বীকারোক্তিতে জানান হয়েছে, সলিল চৌধুরীর বেসিক গান, গাঁয়ের বধূ, রানার, উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা বা গণনাট্যের গানগুলো আজকের প্রতিবেদনে রাখা হয়নি। এমনকি সলিলের প্রথম পর্যায়ের সব সিনেমা ও তাদের গান নিয়ে আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়, তাই এই প্রতিবেদন তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সময়কালের প্রথম এক যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলাম। মূলত স্মৃতি নির্ভর এ লেখাতে ত্রুটি বিচ্যুতি এবং জরুরি তথ্য অনুল্লেখিত থাকতেই পারে। সলিল চৌধুরীর মতো এক প্রতিভাবান সুরকারের বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষার সিনেমাতে অবদানের কিছুটা পরিচয় দিতে চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। (Salil Chowdhury)
তথ্য সহায়তা- প্রণয় কুমার ঘোষ, গুগল ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
ছবি ঋণ: লেখক
গোপাল বিশ্বাস (৭৯) পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৭-এ স্টিল অথরিটি (SAIL) থেকে অবসর নিয়েছেন। বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহের এবং সংগৃহিত জিনিস নিয়ে লেখালেখির শখ। INTACH-এর আমন্ত্রণে ২০১৯ সালে গ্র্যান্ড হোটেলে Heritages of Calcutta Hotels and Restaurants বিষয়ে প্রেসেন্টেশন দিয়েছেন। ২০০৮ -২০১৭ বেশ কয়েকবার ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল একজিবিশানে Postal History of India উচ্চপ্রশংসিত ও পুরস্কৃত। এই বছরের (২০২৫) শুরুতে, কলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে চিঠিপত্র ও ম্যাচ লেবেলের প্রদর্শন।
বহুবিধ বিষয়ের মধ্যে সংগ্রহের ও অনুসন্ধানের বিষয়, কলকাতার ইতিহাস, বাংলা চলচ্চিত্র, ম্যাচ লেবেল, বিখ্যাত মানুষদের চিঠিপত্র, ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয়, কলকাতা আর বাংলা সম্বন্ধে যা কিছু।
চাকরি সূত্রে প্রথম জীবন কলকাতার বাইরে, আর গত ৩০ বছর কলকাতায় সস্ত্রীক অবস্থান। দুই কন্যা বিদেশে উচ্চপদে কর্মরত।
