Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ব্যবসা বাণিজ্যের ভারত বনাম ইন্ডিয়া

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

আগস্ট ২০, ২০২৫

Street Vendors
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Street Vendors)

হঠাৎই দেখে রীতিমতো অবাক। রুবি হাসপাতালের কাছে বাইপাস দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। দেখি, রাস্তার ধারে সার দিয়ে রাখা অন্তত গোটা পাঁচেক ঠেলাগাড়ি। গাড়ি উপচে পড়ছে নানা রকম জিনিসপত্রে। অধিকাংশই প্লাস্টিকের।
কারা রেখে গেল এতগুলো ঠেলাগাড়ি? একইরকম দেখতে সব। (Street Vendors)

আরও পড়ুন: গান যখন পথের, পথ যখন গানের

আরও একটু এগিয়ে দেখি, রাস্তার পাশে ছোট ছোট গাছের ছায়ায় বসে আছে জনা পাঁচেক তরুণ। সকালের রোদ অতীব তরুণ ও তরতাজা। কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। ছেলেগুলো বিশ্রাম নিচ্ছে গাছের ছায়ায়। বিশ্রাম মানে আর কতটুকু? সামান্যই। একটু পরে আবার এগোতে হবে। যতদূর যাওয়া যায়। (Street Vendors)

বহু বছর আগে বাংলার বিভিন্ন শহর ও মফস্বলে অবাঙালি মহিলারা আসতেন কাঁসা- পেতলের জিনিস নিয়ে। পুরোনো শাড়ির বদলে দিয়ে যেতেন বিভিন্ন জিনিসপত্র। আমাদের মা-কাকিমারাও কত নিয়েছেন সে সব জিনিসপত্র। (Street Vendors)

Street Vendors
‘হরেক মাল দশ টাকা’ বা ‘হরেক মাল বিশ টাকা’ বলে জিনিস ফেরি করার সেই কণ্ঠস্বরও হারিয়ে যেতে বসেছে।

সেই মহিলাদের আর বেশি দেখি না। ‘হরেক মাল দশ টাকা’ বা ‘হরেক মাল বিশ টাকা’ বলে জিনিস ফেরি করার সেই কণ্ঠস্বরও হারিয়ে যেতে বসেছে। জিনিসের গড় দাম বেড়েছে। তবে প্লাস্টিকের জিনিসের উপচে পড়া ঠেলাগাড়ি নিয়ে এমন তরুণদের কিছু জায়গায় দেখা যায়। (Street Vendors)

ডুয়ার্সের চা বাগানে রাস্তায় এই লোকগুলো গেলে অবধারিতভাবে তাদের পেছন পেছন ছুটবে কিশোর-কিশোরীর দল। এখন অম্লান সেই শৈশব। কিছু দূর অন্তর যেতে যেতেই তাদের থেমে যেতে হয়। ঘিরে ধরে ওই বাচ্চাদের মায়েরা। অনেক কিছু কিনতে হবে তো। অনেক কিছু কেনার আছে। (Street Vendors)

“ম্ফল আর চূড়াচাঁদপুরের মাঝে জায়গাটার নাম মৌরাং। সেখানেই নেতাজির আই এন এ প্রথম এসেছিল। সেই স্মারকস্তম্ভের সামনে এঁদের সঙ্গে দেখা। বলছিলেন আবার ফিরে যেতে হবে বাংলায়।”

ফাঁসিদেওয়ার কাছে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামে দেখেছি একবার এরকম একটা গাড়ি ঢুকলে গোটা গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছে। কীই বা জিনিস সেখানে, কতই বা আর দাম! তবু নিত্য প্রয়োজনীয় তো বটেই। (Street Vendors)

এবং ঠিক সেখানেই বোঝা যায়, এক এক সময় কত অল্পে সন্তুষ্ট হতে পারে সাধারণ মানুষ। কতটুকুই বা চাহিদা তাঁদের। কত সাধারণ জিনিস পেলেই তৃপ্তি। সেখানকার টিনএজারদের মুখচোখের সঙ্গে বড় শহরের সমবয়সীদের মুখচোখের অভিব্যক্তিরই কত বিশাল ফারাক! (Street Vendors)

Street Vendors
সেখানেই নেতাজির আই এন এ প্রথম এসেছিল। সেই স্মারকস্তম্ভের সামনে এঁদের সঙ্গে দেখা। বলছিলেন আবার ফিরে যেতে হবে বাংলায়।

কলকাতার বাইপাসে বিশ্রামরত তরুণদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বেশিরভাগই মুর্শিদাবাদের ছেলে। অস্থায়ী ডেরা বাঘাযতীন স্টেশনের কাছে। এসব প্লাস্টিকের জিনিসপত্র কেনে বড়বাজারে। সবাই মিলেই কেনে। তারপর ভ্যান ঠেলতে ঠেলতে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তরে। রাতে ডেরায় ফিরে আবার গুলতানি আর আড্ডাবাজি। (Street Vendors)

এদের দেখে মনে পড়ছিল দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে এরকমই দুই বাঙালি মধ্যবয়সীর কথা। তাঁরাও থাকেন কষ্ট করে। এভাবে জিনিস ফেরি করে নিয়ে বেড়ান। ইম্ফল আর চূড়াচাঁদপুরের মাঝে জায়গাটার নাম মৌরাং। সেখানেই নেতাজির আই এন এ প্রথম এসেছিল। সেই স্মারকস্তম্ভের সামনে এঁদের সঙ্গে দেখা। বলছিলেন আবার ফিরে যেতে হবে বাংলায়। কেননা এখানে শহরের জিনিস নেই। জিনিস থাকলেও ফেরি করে বেড়ানো আর সম্ভব হচ্ছে না। এই ধরণের মানুষদের কত জ্বালা! (Street Vendors)

“রাস্তায় ফেরি করা এই মানুষগুলো বারবার বুঝিয়ে দেন, ভারতের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আরেকটা ভারত। বারবার বুঝিয়ে দেন ইন্ডিয়া আর ভারতের মধ্যে ফারাক রয়ে গিয়েছে অনেকটাই।”

ইচ্ছে করেই এঁদের আর পরিযায়ী বলছি না। বলা উচিতও নয়। সেদিক দিয়ে দেখলে তো রাজ্য ছেড়ে যাঁরা ভিনরাজ্য বা ভিনদেশে গিয়েছেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, বিজ্ঞানী, আইটি কর্মী—

সকলেই পরিযায়ী। সেটা কি বলা ঠিক?
আমরা বড় শহরের লোকেরা বিভিন্ন মলে ঘুরে ধরেইনি, জীবন এক রকম। লোকে আর ছোটখাটো দোকান থেকে জিনিস কেনার জায়গায় নেই। তবে রাস্তায় ফেরি করা এই মানুষগুলো বারবার বুঝিয়ে দেন, ভারতের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আরেকটা ভারত। বারবার বুঝিয়ে দেন ইন্ডিয়া আর ভারতের মধ্যে ফারাক রয়ে গিয়েছে অনেকটাই। এ ফারাক সহজে মেটার নয়। (Street Vendors)

এই শতাব্দীর গোড়া থেকেই ভারত বনাম ইন্ডিয়া নিয়ে প্রচুর তত্ত্বকথা লেখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন কাগজে। প্রচুর তত্ত্বকথা আলোচনা হয়েছে দেশের বিভিন্ন টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাস্তবে খুব সহজ কথায় এই লোকগুলো দেখিয়ে যাচ্ছেন, ফারাকটা এখনও দূর হয়নি। দূর হওয়াটা এখন দূর অস্ত। (Street Vendors)

“ইন্ডিয়া বনাম ভারত এই তত্ত্ব বহু বছর ধরে চলছে। দুটোর ব্যবধান যত কমবে, যত দ্রুত কমবে দেশের পক্ষে মঙ্গল।”

শনি রবির রাতে আপনারা কেউ যদি দেশের বড় শহরে কোনও বড় শপিংমলের ফুড কোর্টে যান, মনে হবে যেন সমুদ্রের ঢেউ উঠেছে। লোক আসছে আর যাচ্ছে, বিরামহীন। ফুৎকারে উড়ে যাচ্ছে টাকা পয়সা। কত রকমের খাবার সেখানে। এই ঠেলাওয়ালাদের টার্গেট অডিয়েন্স যেখানে, তাঁরা এসব কল্পনাই করতে পারবেন না। (Street Vendors)

স্বাধীনতার এত বছর পরেও এত ফারাক দুটো শ্রেণীর মাঝে। আমরা শহরের লোকেরা এটা এখনও বুঝতে পারি না। বুঝতে পারি না বলেই আমাদের হিসেব মাঝে মাঝে, ভুল বললাম, অধিকাংশ সময়ে গন্ডগোল হয়ে যায়। খবরের কাগজে বা টিভিতে যা বেরোয়, তা দেখে আমরা ভাবি, দেশের পরিস্থিতি এক রকম। বাস্তবে তা একেবারে অন্যরকম। (Street Vendors)

Street Vendors
ফাঁসিদেওয়ার কাছে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামে দেখেছি একবার এরকম একটা গাড়ি ঢুকলে গোটা গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছে।

মাঝে একদিন প্রিয়জনের শেষকৃত্যে কেওড়াতলা শ্মশানে গিয়েছি। সেখানে দেখি, বেশ কিছু নারী তাদের আন্দাজে রীতিমতো দামি শাড়ি পরে এসেছেন ওখানে। হয়তো কোনও শ্মশানযাত্রীদের সঙ্গে গিয়েছেন, গিয়েই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছেন। পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ হচ্ছে সেখানে। স্বজনহারা মানুষ দাঁড়িয়ে। সব উপেক্ষা করে গ্রামীণ নারীরা উঁকিঝুঁকি মেরে সবিস্ময় দেখে চলেছেন কীভাবে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে পুড়ে যায় মানুষ। চোখে মুখে বিস্ময়ের শেষ নেই।পাশের মানুষগুলোর যন্ত্রণা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। (Street Vendors)

ইন্ডিয়া বনাম ভারত এই তত্ত্ব বহু বছর ধরে চলছে। দুটোর ব্যবধান যত কমবে, যত দ্রুত কমবে দেশের পক্ষে মঙ্গল। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? ব্যবধান যেন থেকেই যাচ্ছে। এই ব্যবধান অর্থ এবং শিক্ষার, অথবা সঠিকভাবে লিখতে গেলে শিক্ষা এবং অর্থের। (Street Vendors)

“বেশিরভাগ বাজারে ঘুরতে থাকুন পুজোর মুখে। দোকানদারদের গলায় শুনবেন আক্ষেপের বন্যা। অনেক দোকানেই মাছি তাড়ানোর দৃশ্য।”

সোশ্যাল মিডিয়া দেখে উপলব্ধি আরও গভীর হবে এই ব্যাপারে। এখানে আমরা শহুরে মানুষ ভাবনাতেই আনি না, গ্রামের মানুষের ভাবনার কথা। সাধারণত আপনি যে মতে বিশ্বাসী স্বাভাবিকভাবেই আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা ওই মতেই বিশ্বাসী থাকবে। ধরা যাক, আপনার ৫০০০ বন্ধু। এই বন্ধুদের বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে আপনি যা নিয়ে আলোচনা করছেন, যা সত্যি ধরছেন, তা যদি গোটা দেশ বা রাজ্যের প্রেক্ষাপটে ভেবে ফেলেন, তাহলে তা অত্যন্ত হাস্যকর হয়ে দাঁড়াবে। হিসেবের গরমিল অনিবার্য। (Street Vendors)

আপনি আমি যা লিখছি, তাতে আমাদের বন্ধুরা লাইক দিয়ে বলছেন দারুণ দারুণ। এই পরিস্থিতি থেকে উল্লসিত আমি, আপনি যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, সেটাও হবে মারাত্মক ভুল। সেটাই হয়। আমি আপনি যা বলছি, তা বাকিদের কাছে শিরোধার্য নাও হতে পারে। মাথাতে থাকা দরকার, গ্রামীণ ভারত কিন্তু থেকেই যাবে চিরকাল। (Street Vendors)

Street Vendors
শনি রবির রাতে আপনারা কেউ যদি দেশের বড় শহরে কোনও বড় শপিংমলের ফুড কোর্টে যান, মনে হবে যেন সমুদ্রের ঢেউ উঠেছে।

লেখাটা শুরু করেছিলাম বিক্রিবাটার প্রসঙ্গ দিয়ে। তাই ওখানেই ঘুরে ফিরে আসি। শহরের মাঝখানেই কিন্তু এই জগতে স্পষ্ট দু’ভাগ। বেশিরভাগ বাজারে ঘুরতে থাকুন পুজোর মুখে। দোকানদারদের গলায় শুনবেন আক্ষেপের বন্যা। অনেক দোকানেই মাছি তাড়ানোর দৃশ্য। এমনিতেই বিজ্ঞাপন কম, তারপর এ সব লেখা হলে বিজ্ঞাপন আরও কমে যাবে বলে এই ব্যাপারটা লেখা হয় না। কিন্তু কঠোর বাস্তব কি জানেন? দুটো জিনিসের জন্য এই খুচরো বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা শেষ নেই— (Street Vendors)

এক, মফস্বলেও এখন জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে অনলাইনে। সেখানে অনেক বেশি ছাড়। আগে লোকে ভয় পেত অনলাইনে জিনিস কিনলে খারাপ থাকার সম্ভাবনা নাকি বেশি। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই আশঙ্কা অমূলক। খারাপ হলে নির্দ্বিধায় জিনিস ফেরত নিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা ফেরত দিয়ে। (Street Vendors)

আরও পড়ুন: আমির খানের উপেক্ষিত, বিবর্ণ সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে

দুই, অনলাইনে যাঁরা কিনছেন না, তাঁরা চলে যাচ্ছেন শপিং মলে। অবশ্যই সেখানে উইন্ডো শপিংয়ের সুযোগ অনেক বেশি, তুলনামূলক দাম দেখে জিনিস যাচাই করে নেওয়ার সুবিধাও। সঙ্গে শপিংমলে বাজার করার গ্ল্যামার এবং ফুড কোর্টে খাওয়া-দাওয়ার লোভ তো রয়েছেই। (Street Vendors)

তাহলে মাঝের লোকগুলো যাবেন কোথায়? এখানেই ইন্ডিয়া এবং ভারতের মাঝের আরেকটা নামের দরকার হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি বলে, যে কোনও ব্যবসায় টার্গেট অডিয়েন্স একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে, আপনার ব্যবসাটা ঠিক কোন ধরণের ক্রেতাদের জন্য। মল এবং রাস্তার হকারের মধ্যে পড়ে থাকা অসংখ্য ব্যবসায়ীকে কিন্তু এ জায়গাতে অনেকটাই বিভ্রান্ত দেখি। নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, শ্যামবাজারের অনেক ব্যবসায়ীকে স্বীকার করতে শুনলাম, অনলাইনের দৌলতে তাঁদের বিক্রিবাটা অনেক কমেছে। বহুদিনের পরিচিত ক্রেতাদের পরের প্রজন্ম আর সেখানে কিনতে আসতে নারাজ। ফলে একটা বাড়িতে পোশাকের চাহিদা যত ছিল আগে, অনেকটা কমে গিয়েছে। (Street Vendors)

“মল কালচারে বাংলা যে আজও অনেক পিছিয়ে, তাতে প্রশ্ন নেই। দেশের প্রথম বাংলার সবচেয়ে বড় মল সাউথ সিটির আয়তন ১০ লক্ষ স্কোয়ার ফিট। দু’নম্বর কসবার অ্যাক্রোপলিস ৮ লক্ষ স্কোয়ার ফিট।”

আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও পাড়া বা বাজারের দোকানগুলোতে লেখা থাকত, ‘আজ নগদ কাল ধার’। এখন সে সব দেখা যায় না বেশি। আসল কারণটা ঠিক জানি না। তবে অনেক দোকানদারকে বলতে শুনলাম, ‘আমরা এটা আর রাখি না। পাছে ক্রেতারা কিছু মনে করে।’ তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ সত্যিই অনেক বেশি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুইগির ইনস্টামার্ট, জোমাটোর ব্লিঙ্কিটের সৌজন্যে ক্রেতা এখন কম দামে জিনিস পেয়ে যাচ্ছেন ঘরে বসে। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাই নিজেরাই ক্রেতার বাড়ি জিনিস পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাতেও যে লড়াই অসম। এবং ছোট ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে যে মাঝারি দোকানদাররা জিনিস দিয়ে যেত, তাঁদের অবস্থা ভাবুন! (Street Vendors)

এসবের মাঝে কপাল খুলেছে আবাসনগুলোর ধারে যাঁরা নতুন দোকান খুলেছেন। ছোট দোকান ফুলেফেঁপে উঠছে আবাসনের মানুষদের দৌলতে। আবাসনের অনেক প্রবীণ বাজার করতে ভালবাসেন। অথচ দূরে যেতে পারেন না। সকালবেলা উঠেই কিছু মনে পড়ল, কিনতে হবে কিছু। ওই দোকানগুলোই হয়ে উঠছে তাঁদের ভরসা। ঠিক যেমন আবাসনের সিকিউরিটি গার্ডদেরও। তবে সংখ্যাটা আর কত হবে সেখানে? (Street Vendors)

এসব পড়তে পড়তে ভাবতে ভাবতে দেখতে দেখতে কলকাতাবাসী অনেকেরই মনে পড়বে বছর বাইশ আগের কথা। মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি তখন কলকাতায় আসছে। বাইপাসের ধারে বিশাল শোরুম বানানোর কাজ চলছে। বামফ্রন্টের মধ্যে তখন অধিকাংশ সোচ্চার, এ ধরণের প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দেওয়া মানে, দেশজ কৃষিজীবীদের কার্যত মেরে ফেলা। ওরা স্থানীয়দের শাকসবজি কিনে নিজেরা বিক্রি করবে? চলবে না, চলবে না। চাষীদের যে এতে লাভ, এটা বুঝতে চাইতেন না। (Street Vendors)

Street Vendors
তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ সত্যিই অনেক বেশি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুইগির ইনস্টামার্ট, জোমাটোর ব্লিঙ্কিটের সৌজন্যে ক্রেতা এখন কম দামে জিনিস পেয়ে যাচ্ছেন ঘরে বসে।

ভাগ্য ভাল, কিছু নেতার সুবুদ্ধির উদয় হওয়ায় মেট্রোকে কলকাতা থেকে সরে যেতে হয়নি। সেই সময় বিদেশি জিনিস বিক্রি নিয়ে অনেক নেতার আপত্তি ছিল। প্রচুর পোস্টারও পড়ত সিটু ও সিপিএমের। এখন তো সব একাকার। বাড়িতে বসেই অনেক বিদেশি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। মেট্রো ক্যাশ ‌অ্যান্ড ক্যারির অভাবনীয় সাফল্যে ২০২৩ সালে তা কিনেই নিয়েছে রিলায়েন্স। (Street Vendors)

কিছু কঠিন তথ্য ও পরিসংখ্যান না থাকলে অর্থনীতি সংক্রান্ত নিবন্ধের মূল্য থাকে না আর। বেশি দেরি না করে এখানেই জুড়ে দেওয়া যাক কিছু। যা দেখলে এখনও বাংলার ছোট ব্যবসায়ীদের চিন্তার কিছু নেই। বড়বাজারে আজও যা দৈনিক বিক্রি, বাংলার সব শপিং মল মিলে তা কল্পনা করতে পারবে না। রাজ্যে এখন প্রতিষ্ঠিত শপিং মলের সংখ্যা ৩৯। সবচেয়ে পুরোনো মল কলকাতার এলগিন রোডের ফোরাম মল। হয়েছিল ২০০৩ সালে। নবীনতম, মালদার পিআরএম সেন্টার পয়েন্ট মল। হয়েছে ২০২৫ সালে। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বাড়ির সামনে ফোরাম মলের আয়তন ১ লক্ষ ২৫ হাজার স্কোয়ার ফিট। মালদারটা সেখানে ২ লক্ষ স্কোয়ার ফিট। (Street Vendors)

“এখনও সন্ধ্যে নামলে মফস্বলের ম্লান পথবাতির নিচ দিয়ে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে যায় কোনও ঝালমুড়িওয়ালা। কাঁধে তার কাচের বাক্স। দুপুরে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে গেটের সামনে তৎপরতা বেড়ে যায় আচার বা আইসক্রিম বিক্রেতার।”

মল কালচারে বাংলা যে আজও অনেক পিছিয়ে, তাতে প্রশ্ন নেই। দেশের প্রথম বাংলার সবচেয়ে বড় মল সাউথ সিটির আয়তন ১০ লক্ষ স্কোয়ার ফিট। দু’নম্বর কসবার অ্যাক্রোপলিস ৮ লক্ষ স্কোয়ার ফিট। হায়দরাবাদের শরৎ সিটি ক্যাপিটাল সে জায়গায় ২৭ লক্ষ স্কোয়ার ফিটের। তারপর তিরুবনন্তপুরমের ও লখনউয়ের লুলু মল (২২ লক্ষ স্কোয়ার ফিট)। কোচির লুলু মল ও নয়ডার ডিএলএফ মল ২০ লক্ষ স্কোয়ার ফিটের। (Street Vendors)

দেশে প্রায় হাজার খানেক মল। সব জায়গাতেই যে হৈ হৈ করে বাণিজ্য চলছে, তা তো নয়। অনেক পুরোনো মল এখন ব্যবসার পরিভাষায় ভৌতিক। কলকাতার প্রথম শপিং মল ফোরামে ঢোকার মুখেই ছিল সুগন্ধীর বিশাল লাউঞ্জ। ঢুকলেই গন্ধে গন্ধে মনে হত, বিদেশে চলে এলাম বুঝি। কদিন আগে গিয়ে দেখলাম, নতুন মলের তুলনায় সেটা যেন অনেক ঝিমিয়ে। তবে একটা ভাল দিক হল, বিদেশে অনেক জায়গায় অনলাইনের দাপটে বহু মল মৃত্যুমুখী। ব্যবসা ভাল নেই। ভারত সেখানে ব্যতিক্রম। সেখানে ব্যবসা ভালই। (Street Vendors)

Street Vendors
অনলাইনে যাঁরা কিনছেন না, তাঁরা চলে যাচ্ছেন শপিং মলে। অবশ্যই সেখানে উইন্ডো শপিংয়ের সুযোগ অনেক বেশি, তুলনামূলক দাম দেখে জিনিস যাচাই করে নেওয়ার সুবিধাও।

হিসেব চান? সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বছরে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটির ব্যবসা হয় মলগুলোতে। অন্তত ১.২ কোটি লোক সেখানে কাজ করছেন। ভারতের জিডিপিতে এই সেক্টরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এয়ারলাইন ইনডাস্ট্রির থেকে বেশি আয় এখানে। স্বচ্ছন্দে তুলনা করা যায় হোটেল ইনডাস্ট্রির সঙ্গে। ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মানুষদের টানার ক্ষেত্রে আপাতত তুলনাহীন। (Street Vendors)

আবার খারাপ দিক হল, হাজারের মধ্যে মাত্র ২৮টি মল বিলিয়ন রুপি ক্লাবের সদস্য হতে পারছে। যে মলগুলোর মাসিক টার্ন ওভার ১০০ কোটি, সেগুলোই এই ক্লাবে ঢোকার অধিকারী। ২০২৪ সালের রিপোর্ট বলছে, ২৮টির মধ্যে নয়াদিল্লি ও মুম্বইয়ের ৫, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরুর ৩, চেন্নাইয়ের ২। বাকি ১০টি কোন শহরের, তা স্পষ্ট হল না। (Street Vendors)

এ তো আসলে লিখে চলেছিলাম ইন্ডিয়ার ব্যবসার ছবি। ভারতের ছবিটা কী তাহলে?

আরও পড়ুন: ডাক-হরকরার চিঠি: আজও রহস্যের মাঝে চিরবিপ্লবীর দুই বিদেশিনী স্ত্রী

ওখানে টাকার অংকের নিখুঁত হদিশ নেই। কত লাভ হল, কীভাবে চললে আরও লাভ হতে পারে, কীভাবে বাড়ানো যায় ব্যবসা, সেই ধারণাও স্পষ্ট নয় অনেক ব্যবসায়ীর। অনেকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তবে সেই সংখ্যাটা এতটাই কম, ধর্তব্যে আনা কঠিন। দিন আনি, দিন খাই— ভাবনাই বেশি। সব নেতিবাচক দিক আটকে দিয়ে যাচ্ছে লড়াইয়ের খিদে আর আকাশছোঁয়া আন্তরিকতা। (Street Vendors)

এখনও সন্ধ্যে নামলে মফস্বলের ম্লান পথবাতির নিচ দিয়ে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে যায় কোনও ঝালমুড়িওয়ালা। কাঁধে তার কাচের বাক্স। দুপুরে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে গেটের সামনে তৎপরতা বেড়ে যায় আচার বা আইসক্রিম বিক্রেতার। মৃদু শীত পড়লেই পথের ধারে হাজির ভাপা পিঠে বিক্রেতারা। যা দেখে আকুল হয়ে ওঠে কিশোর-কিশোরীর মন। কিছুক্ষণের জন্য আড়ালে চলে যায় বহুজাতিক কোম্পানির খাবারের হাতছানি। (Street Vendors)

ঠিক ওখানেই মনে হয় ভারত শব্দের মধ্যে এখনও জেগে রয়েছে অচেনার আনন্দ। সেখানে বেশ কিছু আধুনিকতার যোগসূত্র নেই যেমন, তেমন আছেও অনেক কিছু। হারিয়ে গিয়েছে অনেক কিছুই। সবই তো হারায়নি এখনও। (Street Vendors)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Rupayan Bhattacharjee

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সৌম্যদ্বীপ চক্রবর্তী
সুকান্ত ভট্টাচার্য

সংস্কৃতি

আহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com