Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রোধ করো প্লাস্টিক দূষণ

তপন সাহা

জুন ৫, ২০২৫

World Environment Day
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(World Environment Day)

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP), ২০২৫ সালের ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ‘রোধ করো প্লাস্টিক দূষণ’ এই ভাবনাকে বেছে নিয়েছে। আজ সারা বিশ্ব জুড়ে অন্যান্য দূষণের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণও সহযোগী হিসাবে সার্বিক পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে পৃথিবীর ষষ্ঠ গণবিলুপ্তিকে তরান্বিত করছে। প্লাস্টিক আমাদের সর্বাঙ্গীন কাজের সঙ্গে গত একশো বছর ধরে, ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যদিও তার ব্যবহার খুব বেশি দিন আগের নয়। (World Environment Day)

প্লাস্টিক আবিস্কারের প্রয়াস শুরু হয় ১৮৫৫ সালে, আলেকজেন্ডার পার্ক্স প্রাকৃতিক সেলুলয়েডের সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক মিশিয়ে প্রথম প্লাস্টিক তৈরি করেন ও সেই আবিস্কারকে পেটেন্ট করেন। ১৮৬৯ সালে জন ওয়েসলি হায়াতকে আমেরিকার একটি কোম্পানি বলে, যে তুমি যদি হাতির দাঁতের কোনও বিকল্প আবিস্কার করতে পারো তাহলে তোমাকে ১০ হাজার ডলার দেওয়া হবে। উনি প্লাস্টিক তৈরি করার প্রথম যে শর্তের কথা বলেন তা হল কোনও একটি পদার্থের ক্ষুদ্র অজস্র কণাকে মালার মতো গেঁথে পলিমার তৈরি করা। সেই প্রযুক্তিতে সুতোর তন্তুর সেলুলোজ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পলিমার প্রস্তুত করেন এবং কৃত্রিম হাতির দাঁত তৈরি করেন। ১৯০৭ সালে লিও ব্যাকল্যান্ড প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ পেট্রোলিয়াম থেকে এক রকমের প্লাস্টিক “ব্যাকেলাইট” আবিস্কার করেন যার কোনও অনু, প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। (World Environment Day)

Plastic_Tapan_Saha_05.06.2025_VB
আলেকজেন্ডার পার্ক্স

“ব্যাকেলাইট” মূলত বৈদ্যুতিক অপরিবাহী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এখনও স্যুইচ সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে যুদ্ধের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হতে শুরু হয় এবং তার প্রচলন দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। তার মধ্যে নাইলন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক হচ্ছে পলিমার যা হাইড্রোজেন ও কার্বন–এর চেইন। এই হাইড্রোকার্বন সাধারণত, পেট্রোলিয়াম থেকে নিষ্কাশন করা হয়। হাইড্রোকার্বনের চেইনগুল কীভাবে সজ্জিত আছে তার উপরে প্লাস্টিকের ধর্ম অর্থাৎ কতটা শক্ত বা নরম হবে, অন্য কোনও রাসায়নিক পদার্থ সংযোজন (Chemical Additives) করেও নিজেদের প্রয়োজনমতো চরিত্রের প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয়। যে রাসায়নিক পদার্থগুলি সংযোজন করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বর্তমানে মোট খনিজ তেলের পরিমানের ৬ শতাংশ প্লাস্টিক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। (World Environment Day)

১৯৫০ সালে পৃথিবীতে মোট প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছিল ২০ লক্ষ টন। গত ৭০ বছরে বার্ষিক উৎপাদন রকেটগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের বার্ষিক উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টন।

প্লাস্টিক এখন অপরিহার্য

বাড়িতে– দাঁত মাজার ব্রাশ, বালতি, মগ, জলের বোতল, মশলা বা খাদ্য-দ্রব্য রাখার আধার, থালা, বাটি, গ্লাস, চামচ, দড়ি, জলের ট্যাঙ্ক, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, খেলনা ইত্যাদি। বাড়ির কাঠামো তৈরি, বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো, জলের পরিকাঠামো (পাইপ, জলের কল ইত্যাদি) দরজা-জানালা ইত্যাদি। পরিবহন ক্ষেত্রে- মোটরবাইক, গাড়ি ও উড়োজাহাজ ইত্যাদি। প্যাকেজিং- সমস্ত খাদ্য দ্রব্য, জামাকাপড়, প্রসাধনী, ষ্টেশনারি ইত্যাদি। আধুনিক ইলেক্ট্রোনিক সরঞ্জাম- মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি সহ তাদের সব সহায়ক জিনিস ইয়ার ফোন, চার্জার, রাউটার। ক্যারি ব্যাগ- তরিতরকারি, ফল, মাছ ও মাংস ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য বহন। পরিধান- রেইন কোট, জ্যাকেট, চপ্পল, জুতো, চিকিৎসা ক্ষেত্রে- ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, স্যালাইন বোতল, রক্তের ব্যাগ, ক্যাথেটার, গ্লাভস, ডাক্তার, নার্স সহ চিকিৎসা ব্যাবস্থার সাথে যুক্ত ব্যাক্তিদের বিশেষ পরিধান। (World Environment Day)

World_Environment_Day_Tapan_Saha_05.06.2025_VB
শহরাঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমা

১৯৫০ সালে পৃথিবীতে মোট প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছিল ২০ লক্ষ টন। গত ৭০ বছরে বার্ষিক উৎপাদন রকেটগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের বার্ষিক উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টন। ২০৫০ সাল নাগাদ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে বছরে হবে প্রায় ১১০ কোটি টন। পৃথিবীতে ১৯৫০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অর্থাৎ ১২০০ কোটি, বা ৫৫ শতাংশ মাত্র ২০ বছরে অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। সারা পৃথিবীতে যদি যত পরিমাণ প্লাস্টিক আছে, তার ওজন বিবেচনায় আনা যায় সেটা পৃথিবীতে স্থলজ ও জলজ প্রাণীর মোট ওজনের দ্বিগুণ। আমেরিকায় একজন প্রতি বছর গড়ে ১০৯ কিলোগ্রাম, ইউরোপে ৬৫ কিলোগ্রাম এবং ভারতে ১১ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক ব্যবহার করে। মাথা পিছু প্রতিদিন প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ভারতবর্ষের মধ্যে গোয়াতে সর্বোচ্চ – ৬০ গ্রাম ও দিল্লীতে ৩৭ গ্রাম। (World Environment Day)

আরও পড়ুন: দাবানলে জ্বলছে পৃথিবী

প্লাস্টিক নিয়ে উদ্বেগের শুরু

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে আমেরিকাতেই সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু হয়। যেহেতু প্লাস্টিক অপচনশীল এবং এর কোনও ক্ষয় নেই, তাই ১৫ -২০ বছরের মধ্যেই ওখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দেয় যা পরিবেশের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। ১৯৬০ সাল নাগাদ প্রথম সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। মূলত- প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ, ও ছোট পাউচ দ্বারা পরিবেশ ও প্রাণিকূলের স্বাস্থ্যের ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে পেতে গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে তা রকেট গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। শহরে পয়ঃপ্রণালী প্রবাহ রোধ হয়ে বর্ষায় জলজমা, গ্রামাঞ্চলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস, নদী ও সমুদ্রের জীবকূলের ধ্বংস, বিভিন্ন পাখি ও গৃহপালিত পশু সহ বন্য প্রাণী প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে তাদের অস্তিত্বের সংকট এবং বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি, পাহাড়ে ধ্বসের বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রবণতাও দ্রুতহারে বাড়তে শুরু করে। (World Environment Day)

সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সান্তা বারবারা বিশ্ববিদ্যালয় একটি যৌথ গবেষণায় দেখিয়েছে ৮৩০ কোটি মেট্রিক টন প্লাস্টিক ১৯৫০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত উৎপাদিত হয়েছে যার মধ্যে ৬৩০ কোটি মেট্রিক টন অর্থাৎ ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। ৯ শতাংশ বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার হয়েছে, এর আবার ১০ শতাংশ এক বারের বেশি পূনর্ব্যবহার হয়েছে। ১২ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য জমিতে, সমুদ্রে ও বিভিন্ন জলাশয়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা যত প্লাস্টিক ব্যবহার করি তার ৫৩ শতাংশ একবার মাত্র ব্যবহার করে ফেলে দিয়ে থাকি। প্লাস্টিক বর্জ্যের আবার অনেকটাই উন্নত দেশগুলি থেকে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পুনর্ব্যাবহারের জন্য বেআইনিভাবে চালান করা হয়। প্রতি বছর সমুদ্রে ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ টন প্লাস্টিক নিক্ষেপ করা হয়। ২০টি সবচেয়ে দূষিত নদী এই পরিমাণ প্লাস্টিক সমুদ্রে নিয়ে আসে। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক দূষণের দ্বারা আক্রান্ত ১০টি নদীর মধ্যে ৮টি নদীই এশিয়া– প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত, নদীতে প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৯৫ শতাংশ দায়ী হচ্ছে এই অঞ্চল। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৩৮ থেকে ৪৬ শতাংশ জীববৈচিত্র লোপ পেয়ে যাবে। এই প্লাস্টিক দূষণের দ্বারা ২১৭০টি প্রজাতি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও কালিফোর্নিয়ার মাছের বাজারে বিক্রিত মাছের, ২৫ শতাংশের পেটে প্লাস্টিক পাওয়া যায়। (World Environment Day)

আরও পড়ুন: পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব

ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ২০১৮ – ২০১৯ সালের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করে যে ভারতবর্ষে ৩৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৩ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় প্রতি বছর, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৯২০০ টন। প্রতিদিন সারা ভারতে সমস্ত পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পদার্থের মিলিত পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৫.৫ – ৬.৫ কোটি টন, অর্থাৎ প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হচ্ছে মোট পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পদার্থের মিলিত পরিমানের ৫ – ৬ শতাংশ। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ১২ শতাংশ, গুজরাট ১১ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গ ১১ শতাংশ, কর্ণাটক ৮ শতাংশ, দিল্লী ও উত্তরপ্রদেশ ৭ শতাংশ এবং বাকি রাজ্য ২৮ শতাংশ ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ২৪ শতাংশ উৎপাদন করে। দিল্লী, কলকাতা, সুরাট, রায়পুর ইত্যাদি শহরে কঠিন বর্জ্য ফেলা হয় সেখানে প্রতিদিন মোট কঠিন বর্জ্যের প্রায় ১০ শতাংশ থাকে প্লাস্টিক বর্জ্য। (World Environment Day)

নদীতে প্লাস্টিক দূষণ

মাইক্রো প্লাস্টিক

২০১৭ সালে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পালা, জাকর্তা, ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক শহর থেকে ১২৯টি কলের জলের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৩ শতাংশ কলের জলে অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্লাস্টকের সন্ধান পেয়েছে। আমহার্স্টারডামের ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় ২০২২ সালের মার্চ মাসে কয়েকজন মানুষের রক্ত ও অন্যান্য অঙ্গে মাক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পায়। তারপর তাঁরা গরু ও শুয়োরের উপরে সমীক্ষা চালায়, তিন-চতুর্থাংশ গরু ও শুয়োরের মাংস এবং রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। গবেষকরা মনে করছেন এই প্রাণীদের মাংস খাওয়ার কারণে, মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করেছে। সুপার মার্কেট থেকে ২৫টি দুধের নমুনা নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখা যায় প্রত্যেক নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি আছে। ২০২১ সালেই সুইজারল্যান্ডে দুধের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার খবর পাওয়া যায়। গঙ্গার নীচের দিকে সমুদ্রের কাছাকছি হুগলী নদীর জল ও পলিতে প্রচুর পরিমানে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিস উৎপাদন করতে প্রায় ১৩০০০ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়, যদিও তার অধিকাংশই সংযোজিত রাসায়নিক (Additives Chemicals) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাধ্যমে এই সমস্ত রাসায়নিক মানুষ, মাছ সহ সব ধরণের প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে। এই সমস্ত রাসায়নিকের মধ্যে ৩২০০ রাসায়নিক পদার্থকে মানুষের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছ, হরমোনজনিত রোগ, বন্ধ্যাত্ব, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সার, থাইর‍য়ডের সমস্যা এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের বিপদের আশঙ্কার বৃদ্ধি। (World Environment Day)

মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিস্তার

প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা

প্লাস্টিক বর্জ্যের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-এর নির্দেশিকাঃ

  • ১। প্রথমিক পুনর্ব্যবহারঃ প্লাস্টিক বর্জ্যগুলিকে যান্ত্রিকভাবে ছোট ছোট দানায় পরিবর্তন করে তাকে বর্জ্য তৈরি হওয়ার আগে যা ছিল তার অনুরুপ রূপান্তর করে ব্যবহার
  • ২। দ্বিতীয় পর্যায়ের পুনর্ব্যবহারঃ প্লাস্টিক বর্জ্যগুলিকে যান্ত্রিকভাবে ছোট ছোট দানায় পরিবর্তন করে বর্জ্য তৈরি হওয়ার আগে যা ছিল তার অনুরুপ রূপান্তর করা সম্ভব না হলে প্লাস্টিকের অন্যান্য ব্যবহারযোগ্য পণ্য বানানো যেতে পারে।(Plastic)
  • ৩। তৃতীয় পর্যায়ের পুনর্ব্যবহারঃ প্লাস্টিক তৈরির মূল কাঁচামাল হচ্ছে পেট্রোলিয়াম। প্লাস্টিক বর্জ্যকে আবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ডিজেলে রূপান্তর করা বা অন্যান্য রাসায়নিকে রূপান্তর করা।
  • ৪। চতুর্থ পর্যায়ের পুনর্ব্যবহারঃ প্লাস্টিক পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সে ক্ষেত্রে সঠিক বায়ু দূষণ নিরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা নির্মানে অন্যান্য উপাদানের সাথে ৬০ মাইক্রনের নীচের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। (World Environment Day)

বায়োপ্লাস্টিক নামে এক ধরণের প্লাস্টিক ইতিমাধ্যেই তৈরি হয়েছে যা পচনশীল। এই বায়োপ্লাস্টিক পেট্রলিয়াম থেকে তৈরি হয় না, সাধারণত বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হচ্ছে। ক্যারি ব্যাগের মতো পাতলা জিনিস তৈরি করা যায় যা পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু এখনও এর উৎপাদন খুব সীমিত। এর উৎপাদন ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার আবিস্কার করার চেষ্টা করছেন, যা প্লাস্টিককে ভেঙে ফেলবে বা পচনশীল করে তুলবে। (World Environment Day)

World Environment Day
বায়োপ্লাস্টিক

ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রক ১৯৯৯ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে প্রথম আইন প্রণয়ন করে যাতে তারা ২০ মাইক্রনের নীচে ক্যারি ব্যাগ সহ সমস্ত প্লাসটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০০৩ সালে এই আইনকে সংশোধন করে বলা হয় কোনও খোলা খাবারকে বহন ও প্যাকেজিং-এর জন্য পুনর্ব্যবহারকৃত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি নোটিফিকেশন করে জানায় ৪০ মাইক্রনের নীচে পাতলা ও ১৪ X ১২ ইঞ্চি সাইজের কোনও প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার করা যাবে না। ২০১৬ সালে ভারত সরকার “প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রুল ২০১৬” (Plastic Waste Management Rule 2016) নামে একটি রুল জারি করে। এই রুলে আছে যারা প্লাস্টিক উৎপাদন করছে তাদেরই দ্বায়িত্ব নিতে হবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তা পুনর্ব্যবহার করার। (World Environment Day)

এই রুলকে ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তর একটি নোটিফিকেশন জারি করে জানায় ১২০ মাইক্রনের নীচে পাতলা কোনও প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার করা যাবে না। একবার ব্যবহার করা যায় (প্লস্টিকের কাপ, চামচ, থালা, টুথপিক, কান খোচানোর বাড, বেলুন বা আইস্ক্রীমের স্টিক বা ফ্ল্যাগ স্টিক, সাজসজ্জার জন্য থার্মোকল ব্যবহার ইত্যাদি) এমন প্লাস্টিকের কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে না। এই বিষয়গুলির সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিব্যাগের বিকল্প ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতার লক্ষ্যে মিউনিসিপ্যালিটি ও পঞ্চায়েত সহ প্রশাসনিক স্তর, স্কুল, কলেজ, দোকান-বাজার, অফিস-কাছারি সর্বত্র উদ্যোগ নিতে হবে। (World Environment Day)

ছবি সৌজন্য

ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Author Tapan Saha

পরিবেশ বিজ্ঞানী, দীর্ঘদিন ধরে জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি।

Picture of তপন সাহা

তপন সাহা

পরিবেশ বিজ্ঞানী, দীর্ঘদিন ধরে জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি।
Picture of তপন সাহা

তপন সাহা

পরিবেশ বিজ্ঞানী, দীর্ঘদিন ধরে জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

অরূপ গঙ্গোপাধ্যায় 
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বিপুল দেব নাথ

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
শক্তিপদ ভট্টাচার্য
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com