(Bengali Novel)
রাই একটা ট্রেতে দু-কাপ চা নিয়ে ফিরে এসেছে।
-আম্মা চা, বলে বিছানায় উঠে বসল। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, তারপর বলো আজকের কী প্ল্যান?
-কীসের প্ল্যান দিদুভাই?
-তুমি যে কদিন আগে বললে, ফেসবুকে তোমার পুরনো বান্ধবীকে খুঁজে পেয়েছ, তাঁর সঙ্গে কথা বলছ?
-বলতে তো চাই। কিন্তু সে বলে ছবি দিতে।
-কার ছবি?
-তোমার আমার, তোমার মায়ের, বাবার…
-বুঝেছি। পুরো ফ্যামিলির। তা দিচ্ছ না কেন?
-আমি কী এসব পারি? সে বলে হোয়াটস অ্যাপে দিতে। সেটা আর ফেসবুক কী আলাদা? (Bengali Novel)
আরও পড়ুন: জলকে চল: তৃতীয় পর্ব
-আম্মা তোমাকে নিয়ে আর পারি না। কতবার বলব দুটো পুরো আলাদা। ফেসবুক খুললে তুমি অনেকজনকে দেখতে পাবে, তোমাকেও অনেকে দেখতে পাবে। অবশ্য যদি তারা ফ্রেন্ডলিস্টে থাকেন। না থাকলেও দেখা যাবে। তোমার প্রোফাইল তো আর প্রাইভেট নয়, পাবলিক করা আছে।
-পাবলিক মানে তো জনগন।
-হুম, তবে এ জনগন মানে এফ বিতে যারা আছে। না থাকলে পাবে না।
-আর প্রাইভেট মানে?
-প্রাইভেট হল, আমি যদি চাই আমার পোস্ট বা ছবি দেখাতে তবেই দেখতে পাবে কেউ। নইলে পাবে না। বুঝলে? (Bengali Novel)

স্নেহলতা মাথা নাড়লেন। যদিও তাঁর দৃষ্টি বলে দিচ্ছিল নাতনির সব কথাই তাঁর মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। তিনি ফেসবুক ওপেন করে পরপর যা আসে দেখতে থাকেন। বেশিরভাগ সময় ঠাকুরের নাম গান, বাণী, গীতা পাঠ এসবই আসে। সেগুলোই দেখেন। এভাবেই দেখে ফেলেন খবরও। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না, বোঝেনও না। (Bengali Novel)
রাই বিছানায় পড়ে থাকা আম্মার মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, সন্ধ্যা দিদার সঙ্গে কথা বলবে নাকি ছবি পাঠাবে?
“হ্যাঁ। এটা জানো না? শরীর তো একটা মেশিন। রোজ তাকে তেল, জল, খাবার দিয়ে চালাতে হয়। গাড়ি যেমন ডিজেল বা পেট্রল না দিলে চলে না, এও তেমন।”
-কথা এখন বললে অন্য কাজ হবে না। সে একবার ধরলে বকবক করেই যায়। তার ছেলে, বউমা, নাতি নাতনি, গানের স্কুল, গান… এত কথা… আমার হাত কান ব্যথা হয়ে যায়।
-বেশ, তবে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। বলে আম্মার হোয়াটসআপে ঢুকল রাই। সন্ধ্যার নাম দেখে সেখানে পুরো পরিবারের ছবি পাঠিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে। ওপেন করব?
-নির্ঘাত গানের ভিডিও। সে মুখপুড়ি দিন রাত গান গায়, আর পাঠায়। (Bengali Novel)

-ভাল তো আম্মা। তুমিও এবার কবিতা রেকর্ডিং করে পাঠিয়ে দিও।
-সে হবে ক্ষণ। তুমি এখন ব্রেকফাস্ট কী করবে? বলেছ বীণাকে?
-না। নো ব্রেকফাস্ট। আমি চা-পান শেষ হলে স্নান করে লাঞ্চ করে নেব। ক্লাস আছে একটা থেকে।
-ওকে বস। তবে একটা কথা। রোজ ব্রেকফাস্ট না করলে মোটা হয়ে যাবে। গ্যাস্ট্রিক হবে।
-না খেলে মোটা হয়? (Bengali Novel)
-হ্যাঁ। এটা জানো না? শরীর তো একটা মেশিন। রোজ তাকে তেল, জল, খাবার দিয়ে চালাতে হয়। গাড়ি যেমন ডিজেল বা পেট্রল না দিলে চলে না, এও তেমন। ঠিক মতো খাবার না পেলে, সে নিজে থেকে রক্ত আর যা যা থাকে খুবলে খুবলে খেতে শুরু করে, কিছু না পেলে সেখানটায় গ্যাস জমে যায়। ফলে মেদ জমে। বুঝলে? স্নেহলতা বলল। (Bengali Novel)

-বুঝলাম। আমি জানতাম তুমি লিটেরেচারের লোক। কিন্তু তুমি যে ডাক্তার, সায়েন্সও জানো তা জানতাম না।
-ইয়ার্কি হচ্ছে? কিছু না জেনে এমনি এমনি চুল সাদা হয়ে গেল দিদুভাই?
-ঠিক। তবে অতিরিক্ত ফেসবুক দেখে দেখে তুমি এখন অনেক বেশি জেনে যাচ্ছ। অত না জানলেও চলবে। বলে, উঠে পড়ল রাই।
-যাও দিদুভাই। স্নান করে খেয়ে নিয়ে বসো। খালি পেটে কিছু হয় না। বিদ্যা তো নয়-ই। (Bengali Novel)
আরও পড়ুন: জলকে চল: দ্বিতীয় পর্ব
রাইয়ের চলে যাওয়ার পর বাকি ব্যায়ামটুকু সারলেন স্নেহলতা। এবার স্নান, পুজো। আজকাল এসব সারতে সারতে বেলা গড়িয়ে যায়। রোজই খেতে বসতে তিনটে। ভাগ্যিস মোহনা থাকে না। নইলে চিৎকার করে পাড়া মাথায় করত। রবিবার, তার ভয়ে তাই সব তাড়াতাড়ি সেরে নেয়। ঠিক ঘড়ি ধরে দেড়টায় খেতে ডাকে মোহনা। এর অন্যথা হবার জো নেই। স্নেহলতা নিজের মনেই হাসলেন। জীবনের কত ধাপ পেড়িয়ে গেল। একটার পর একটা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে এই জায়গায় পৌঁছেছেন। আর কত সিঁড়ি উঠলে গন্তব্যে পৌঁছাবেন কে জানে! তবে এখন একটু রয়ে সয়েই যেতে সাধ হয়। রাই তার জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছে। বড্ড ইচ্ছে তাই আরও কিছুদিন এই ভালবাসার মধ্যে থাকার। (Bengali Novel)
(ক্রমশ)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
বিতস্তা ঘোষাল ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। আধুনিক ইতিহাসে এম এ, লাইব্রেরি সায়েন্সে বিলিস। কলেজে সাময়িক অধ্যাপনা। প্রকাশনা সংস্থা ভাষা সংসদের কর্ণধার। ও অনুবাদ সাহিত্যের একমাত্র পত্রিকা ‘অনুবাদ পত্রিকা’-র সম্পাদক।
'বাংলা আকাডেমি', 'সারস্বত সম্মান', 'বিবেকানন্দ যুব সম্মান', ‘একান্তর কথাসাহিত্যিক পুরস্কার', 'কেতকী' কবি সম্মান, ‘চলন্তিকা’, 'দুই বাংলা সেরা কবি সম্মান', 'বিজয়া সর্বজয়া', 'মদন মোহন তর্কালঙ্কার সম্মান', 'বই বন্ধু সেরা লেখক ২০২৪' সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মান প্রাপ্ত।
বিতস্তার প্রকাশিত বই ৩৪টি। তাঁর কবিতা ও গল্প হিন্দি, ওড়িয়া, অসমিয়া ও ইংরেজি,ইতালি, গ্রীক ও স্প্যানিশে অনুবাদ হয়েছে। সম্প্রতি ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশিত তার গল্প সংকলন রূপকথার রাজকন্যারা।
দেশ বিদেশে কবিতা ও গল্প পড়ার ডাক পেয়েছেন একাধিকবার।বাংলা সবকটি জনপ্রিয় পত্রিকা ও সংবাদপত্রে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত।
নিজের কাজের গণ্ডীর বাইরে অফিস ও পরিবারেই স্বচ্ছন্দ বিতস্তা কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাটান নানান সামাজিক কাজে।
ভালোবাসা ছাড়া বাকি সব কাজ গুরুত্বপূর্ণহীন। তার নিজের কথায় ভালোবাসা ছাড়া কেউ কি বাঁচে?