Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

নাটক: ভালবাসা (শেষ পর্ব)

সুদীপ্ত ভৌমিক

আগস্ট ৬, ২০২১

Bengali play sudipta bhawmik
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

আগের পর্ব [] [] []

সুজাতা: আঃ, বসে কি আরাম লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। মোগলাই পরোটা বলি? সঙ্গে কী নেবেন, কষা মাংস? 

পীযুষ: না না, কষা মাংস লাগবে না। পরোটাই যথেষ্ট। 

(সুজাতা ভেতরে কাউকে বলেন) 

সুজাতা: এই, এখানে দুটো মোগলাই, আর পরে দুটো চা। (পীযুষকে) আপনার দুধ চিনি চলে তো? (পীযুষ ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলেন।) একটা দুধ চিনি, একটা লিকার। (পীযুষকে) হ্যাঁ এবার বলুন, যা বলছিলেন। 

পীযুষ: আমি বলব? ও হ্যাঁ। আসলে – ইয়ে মানে – একটা ব্যাপার জানতে চাইছিলাম। মানে, যদি আপনি কিছু মনে না করেন। 

সুজাতা: মনে করব কেন? বলুন না, কী জানতে চান বলুন। তবে আপনাকে বলেছি, বয়স কিন্তু আমি বলব না। (হাসে) 

পীযুষ: না না বয়স নয়। আসলে – মানে – কি হয়েছে জানেন – আমি বেশ কিছুদিন হল – ওই যাকে বলে –  একটু টেনশনে আছি – 

সুজাতা: টেনশনে আছেন? ওমা কেন? কী হয়েছে? 

পীযুষ: আসলে হয়েছে কি – মানে – বেশ কিছুদিন হল – এই পার্কে – আপনাকে দেখছি তো – (পীযুষ রীতিমত ঘামছে। ভেতরে তাকিয়ে ওয়েটারকে) এই যে ভাই, এখানে এক গেলাস জল দিয়ে যাও তো। (সুজাতাকে) আপনি জল খাবেন? (ভেতরে) দুই গেলাস – দুই গেলাস জল দিয়ে যাও না। জলদি। 

সুজাতা: কী হল পীযুষ? আপনি তো রীতিমত ঘামছেন। শরীর খারাপ লাগছে? 

পীযুষ: ঘামছি? কই ঘামছি না তো। শরীর ঠিক আছে – বেশ আছে। কোনও অসুবিধে নেই। 

(ওয়েটার জল দিয়ে যায়। পীযুষ ঢক ঢক করে জল খেয়ে গেলাস টেবিলে রাখে) 

পীযুষ: জল তেষ্টা পেয়েছিল – তাই বোধহয়। হ্যাঁ যা বলছিলাম – মানে – কি হয়েছে জানেন – আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব ভাবছি – মানে বেশ কিছুদিন হল ভাবছি – না মানে তেমন কোনও কথা নয় – কিন্তু আমার কাছে খুব – মানে খুবই – জরুরি। তাই ভাবছিলাম – মানে আপনি যদি কিছু মনে না করেন – না মনে আপনি করতেই পারেন – আমি আপনাকে দোষ দেব না – 

(সুজাতা ফিক করে হেসে ফেলে। পীযুষ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়) 

সুজাতা: আপনাকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানেন? একজন টিন এজার প্রেমিক, প্রেম নিবেদন করছেন। 

(সুজাতা খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ে) 

পীযুষ: প্রে – প্রে – প্রেম নিবেদন? আপনি – আপনি কি করে – 

সুজাতা: আপনি জানেন, আমার হাজব্যান্ড ঠিক এই ভাবে আমাকে প্রপোজ করেছিল। তখন ওর বয়স আঠের, আমার ষোল। ঘেমে নেয়ে একসা। শেষে আমাকেই বলতে হল। (হেসে গড়িয়ে পড়ে সুজাতা) 

পীযুষ: আপনার – আপনার হাজব্যান্ড? 

সুজাতা: সেই থেকে আমরা একসঙ্গে। আমার কিছু বন্ধুরা বলে, বাব্বাহ কী করে একটা মানুষের সঙ্গে এত বছর কাটালি? তোর বোর লাগে না? আমি বলি, বোর লাগবে কেন? বোর লাগলেই ঝগড়া করি। তারপর আবার ভাব! (আবার হাসে সুজাতা) 

পীযুষ: আপনাকে দেখে ঠিক বুঝতে পারিনি – 

সুজাতা: যে আমি বিবাহিত, তাই তো? হাতে শাঁখা নেই, কপালে সিঁদুর নেই। আসলে ওসব আমি কোনওদিনই পরিনি। সিঁদুর পরলে আমার এলার্জি হয়। আমার স্বামীও এসব পছন্দ করে না। বলে, তোমাকে কেন প্রমাণ করতে হবে তুমি বিবাহিত? আমাকে তো করতে হয় না। তবে এই একটা ছোট আংটি আমি পরি – ও বিয়েতে আমাকে দিয়েছিল। অনেকেই লক্ষ্য় করে না। আমার অবশ্য তাতে কিছু আসে যায় না। আমার হাজব্যান্ডের তো নয়ই। 

(ওয়েটার এসে মোগলাই পরোটা দিয়ে যায়।) 

সুজাতা: নিন, খান। 

পীযুষ: আপনার হাজব্যান্ডকে তো আপনার সঙ্গে হাঁটতে দেখি না। 

সুজাতা: কী করে দেখবেন? বছরের বেশির ভাগ সময়ই তো ও ফ্রন্টে। ও আপনাকে বলিনি না? আমার হাজব্যান্ড আর্মিতে ব্রিগেডিয়ার – ব্রিগেডিয়ার অর্ণব সেন। এখন কাশ্মীরে পোস্টেড। আমাকে বলেছিল যেতে। আমি বলেছি, না বাবা – ওই ঝামেলার জায়গায় আমি থাকতে পারব না। আমার কলকাতা কে ছেড়ে তো নয়ই।  তোমার যখন ছুটি হবে, তখন আসবে। সত্যি কথাটা কি জানেন, দূরে থাকলেই প্রেমটা জমে ভাল। কী, ঠিক বলিনি? 

পীযুষ: হ্যাঁ – ঠিকই তো। 

সুজাতা: অবশ্য অনেকে বলে, আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড! আমাকে সাবধান করে, এভাবে হাজব্যান্ডকে ছেড়ে দিস না সুজাতা। পুরুষ মানুষ, কখন কি করে বসবে, তখন তোর কপাল পুড়বে। আমি বলি, গাঁইয়ার মত কথা বলিস না তো? ও যদি কিছু করতে চায়, সে তো আমার সঙ্গে থেকেও করতে পারে। লোকে কি করছে না, বলুন আপনি? আমার কত বন্ধুর বিয়ে ভেঙে গেল। সেদিক দিয়ে তো আমরা অনেক ভাল আছি। তিরিশ বছর বিয়ে হয়ে গেল। এই রে, দিলাম তো ফাঁস করে? এখন তো আপনি আমার বয়স আন্দাজ করে নিতে পারবেন।  ভাববেন এই বুড়িটার সঙ্গে আর কতক্ষণ আমাকে সময় নষ্ট করতে হবে। 

পীযুষ: কী যে বলেন? আপনাকে দেখে চল্লিশের এক দিন বেশি মনে হয় না। 

সুজাতা: গ্যাস দিচ্ছেন? দিন দিন। শুনতে ভালই লাগছে। আমার হাজব্যান্ড আমাকে কি বলে ডাকে জানেন? বুড়ি। (হেসে গড়িয়ে পড়ে) 

পীযুষ: সে তো আদরের – ডাক। 

(পীযুষ হঠাত্‍ লক্ষ করে শেখর এসে একটু দূরে একটা টেবিলে বসেছে। চোখাচোখি হতেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।) 

সুজাতা: ও একটা পাগল। আস্ত পাগল। জানেন, ওর ইয়া বড় বড় গোঁফ। সেই রাজ স্থানি দারোয়ানদের মতো। আমার বিশ্রী লাগে। কতবার বলেছি কেটে ফেল, কিছুতেই কাটবে না। বলে ফৌজিদের গোঁফ কাটলে ইজ্জত থাকে না। তারপর বলে (থেমে) এই না এটা বলব না। এটা প্রাইভেট। 

পীযুষ: আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে খুব মিস করেন, তাই না? 

(সুজাতা হঠাত্‍ গম্ভীর হয়ে যায়। ওর চোখ জলে ভরে আসে।) 

পীযুষ: আমি দুঃখিত! আমার বোধহয় কথাটা বলা ঠিক হয় নি। 

সুজাতা (কান্নাভেজা কণ্ঠে): হ্যাঁ মিস করি, খুব মিস করি। (মুখ বুজে কান্না চাপার চেষ্টা করেন, তারপর হঠাত্‍ উঠে দাঁড়ান) আপনি বসুন, আমি একটু আসছি। 

(সুজাতা ক্যাফের ভেতরে চলে যায়। পীযুষ একটু ব্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে। শেখর পাশে এসে দাঁড়ায়।) 

শেখর: কি ব্যাপার কাকা? কেস তো জমে কুলপি। মোগলাই পরটা খাওয়াচ্ছ। 

পীযুষ: আঃ তুমি এখানে এলে কেন? আর মোগলাই আমি খাওয়াচ্ছি না, সুজাতা খাওয়াচ্ছে। 

শেখর: সেকি? তুমি তো ওস্তাদেরও ওস্তাদ গুরু! তা কেমন বুঝছ? আজ রাতেই? ওর বাড়িতে না তোমার? এই শোন, পোটেক্সান সঙ্গে আছে তো? না থাকলে বল, আমি দিচ্ছি। আমার ব্যাকপ্যাকে আছে। 

পীযুষ: তুমি থামবে! ওসব লাগবে না। 

শেখর: লাগবে না? ওইটা কোরও না কাকা। কখন কেস জন্ডিস হয়ে যাবে, তখন স্রেফ হাতে হারিকেন। 

পীযুষ: তুমি চুপ করবে? (থেমে) সুজাতা ম্যারেড – বিবাহিত। 

শেখর: যাহ্‌ কেলো! 

পীযুষ: ওর হাজব্যান্ড আর্মিতে ব্রিগেডিয়ার। কাশ্মীরে পোস্টেড। 

শেখর: মানে, এখানে থাকে না? 

পীযুষ: তাই তো বলল। 

শেখর: তাহলে তো লাইন ক্লিয়ার। কেস তো বিন্দাস হয়ে গেল। আরে বাবা, হাজব্যান্ড নেই মানে খিদে আছে। 

পীযুষ: না না তুমি বুঝছ না। ও ওর হাজব্যান্ডকে খুব ভালবাসে – খুব মিস করে। 

শেখর: তাই তো বলছি গুরু –  মিস করে। সেটাকে কাজে লাগাও। তুমি বলেছ? 

পীযুষ: কী? 

শেখর: আরে বাবা ওই ফোরকাস্টের ব্যাপারটা। ওটা বল, একেবারে চমকে চব্বিশ হয়ে যাবে। এমন ঘাবড়াবে যে রাতে তোমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকবে। 

পীযুষ: ওই ও আসছে। তুমি যাও। 

শেখর (চলে যেতে যেতে): চিন্তা কোরও না কাকা, আমি আছি। 

(সুজাতা এসে বসে। সুজাতা নিজেকে সামলে নিয়েছে। খুব গাঢ় করে লাল রঙের লিপস্টিক পরেছে।) 

সুজাতা: কে ওই ছেলেটা? আপনার চেনা? 

পীযুষ: হ্যাঁ আমার ভাইপো – মানে ভাইপোর বন্ধু। 

সুজাতা: কী বলছিল? 

পীযুষ: ইয়ে – মানে – একটা খারাপ খবর দিয়ে গেল। 

সুজাতা: কী খবর? আমি জানতে পারি? 

পীযুষ: আমি আগেই শুনেছিলাম। ও কনফার্ম করে গেল। (থেমে) আসলে ওই কথাটাই আমি আপনাকে তখন বলতে চাইছিলাম। 

সুজাতা: কি কথা? বলুন না? 

পীযুষ: একটা খবর বেরিয়েছে, বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী নাকি প্রেডিক্ট করেছেন – আমাদের এই পৃথিবীর আয়ু নাকি আর মাত্র দিন দশেক – বড় জোর দুই সপ্তাহ। তারপর নাকি এই পৃথিবী – এবং পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 

(সুজাতা কয়েক মুহূর্ত অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন। তারপর হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়েন) 

পীযুষ: আপনি হাসছেন? ব্যাপারটার ভয়াবহতাটা কল্পনা করতে পারছেন? সব শেষ হয়ে যাবে, আমি আপনি কেউ থাকব না। সব শেষ। 

সুজাতা (নিজেকে কিছুটা সামলে): আপনি এই সব কথা বিশ্বাস করেন? সিরিয়াসলি? 

পীযুষ: খবরটা কিন্তু সারা পৃথিবী তোলপাড় করে দিয়েছে। মন্দিরে, মসজিদে, চার্চে সবাই প্রার্থনা করছে।  

সুজাতা: কিচ্ছু হবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। এটা একটা হোক্স ছাড়া কিছু নয়। এরকম প্রায়ই হয়। 

পীযুষ: আমি জানিনা, আপনি এত কনফিডেন্টলি কি করে ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। যদি ব্যাপারটা সত্যি হয়। আমার কিন্তু ভয় করছে। একলা থাকি – হঠাত্‍ যদি এই  মহাপ্রলয় শুরু হয় – 

সুজাতা: আপনি এক কাজ করুন। আমার বাড়িতে চলে আসুন। কতদিন বললেন? দুই সপ্তাহ, তাই না। এই দুই সপ্তাহ আমার বাড়িতে কাটিয়ে যান। দুজনে গল্প করব, আড্ডা মারব। খুব মজা হবে। তারপর আপনার যখন বিপদ কেটে গেছে মনে হবে, নিজের বাড়ি ফিরে যাবেন। 

পীযুষ: আপনি আমাকে আপনার বাড়িতে থাকতে বলছেন? আপনার ভয় করবে না?

সুজাতা: ভয় কেন করবে? তাও এইরকম একটা বিশ্রী গুজবকে? ভুলে যাবেন না, আমি একজন ফৌজির স্ত্রী। (থেমে, মুখটা একটু তুলে) আমার লিপস্টিকটা লক্ষ্য করেননি? বাথরুমে গিয়ে লিপস্টিকটা লাগিয়ে এলাম। যেই লিপস্টিকটা আপনি কুড়িয়ে রেখে দিয়েছিলেন। কেমন লাগছে? 

পীযুষ: ভাল, খুব ভাল লাগছে। খুব লাল – একেবারে – 

সুজাতা: রক্তের মতো, তাই না? আপনাকে বলেছিলাম না, এই লিপস্টিকটা স্পেশাল। আসলে অর্ণব এটা আমাকে দিয়েছে। এই রঙটা ওর ফেবারিট। আমারও। যখনই আমার মন খারাপ হয়, ওকে মিস করি, এই লিপস্টিকটা ঠোঁটে লাগিয়ে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। আমার মন ভাল হয়ে যায়। মনে হয়, ও আমার পাশে দাড়িয়ে আমাকে দেখছে। এই লিপস্টিকটার আরও একটা স্পেশাল ব্যাপার আছে। দাঁড়ান দেখাই আপনাকে। (ব্যাগ খুলে লিপস্টিকটা বার করে। ঢাকনা খুলে লিপস্টিকটা দেখায়) এই যে, এটা কি বলুন তো? 

পীযুষ: কী মানে? লিপস্টিক। 

সুজাতা: না না, এই কেসটা – কেসটা কীসের? (পীযুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে) চিনতে পারলেন না তো? এটা একটা গুলি – মানে বুলেটের কেসিং। অর্ণবের। অর্ণব আমাকে দিয়েছে। আমি লিপস্টিক কেস বানিয়েছি। এটাকে আমি সবসময় আমার সঙ্গে রাখি – আমার বিবাহিত জীবনের চিহ্ন – আমার প্রোটেকশান। 

(পীযুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে) 

সুজাতা: তাই বলছিলাম, আপনি আমার কত বড় উপকার করেছেন আপনি জানেন না। আপনি না থাকলে আমি আমার স্বামীকে হারাতাম। (উঠে দাঁড়ায়) আজ চলি, একটু তাড়া আছে। একবার লাইব্রেরিতে যেতে হবে। আমি কিন্তু ভেতরে বিলটা মিটিয়ে দিয়েছি। আবার বলছি – থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি ভেরি মাচ। (বেরোতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়ায়) মিথ্যে ভয় পাবেন না। আমার এই সুন্দর পৃথিবী কক্ষনও ধ্বংস হবে না, কোনওদিনই না।  যেমন আছে তেমনই থাকবে। তবে আপনার যদি খুব ভয় করে (ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বার করে পীযুষের হাতে দিতে দিতে) আমার বাড়িতে চলে আসবেন – আমন্ত্রণ রইল। আপনার জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে। চলি। 

(পীযুষ হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। একটু বাদে খেয়াল করে শেখর হাত নেড়ে ওকে ডাকছে। শেখরের সঙ্গে বসে রয়েছে লীনা।  পীযুষ শেখরের কাছে এগিয়ে যায়।) 

শেখর: আরে কাকা, এদিকে এসো। লীনা কি বলছে শোন। কিরে লীনা, বল। 

লীনা: ওই সুজাতা সেন আপনার বন্ধু? 

পীযুষ: না মানে – হ্যাঁ বলতে পারো – বন্ধু। 

লীনা: কি রকম বন্ধু? খুব ক্লোজ? 

পীযুষ: না সেরকম কিছু নয় – আজই আলাপ হল।  কেন বলও তো? 

লীনা: তেমন কিছু না।  ভদ্রমহিলার মাথায় ছোট্ট করে একটু ক্র্যাক আছে – সাবধানে থাকবেন। 

পীযুষ: কী বলছ কী তুমি?  তুমি চেন ওকে? 

লীনা: অফ কোর্স চিনি। আমার বন্ধু তৃষার মাসি। ছোটবেলায় একবার ওর বাড়িতেও গেছি। 

শেখর: আরে কাকা, লীনা বলছে উনি ম্যারেড নন। 

পীযুষ: হোয়াট? কি আবোল তাবোল বলছ তুমি। ওনার হাজব্যান্ড ব্রিগেডিয়ার অর্ণব বসু। কাশ্মীরে পোস্টেড। 

লীনা: হ্যাঁ ছিলেন। মারা গিয়েছেন। সুইসাইড করেছিলেন – নিজের সার্ভিস রিভলভার দিয়ে নিজের মাথায় শুট করেছিলেন। লোকে বলে কাশ্মীরে কি একটা রেপ কেসে নাকি জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে সবচেয়ে ট্র্যাজিক ব্যাপার কি জানিস শেখর? ওই যে বুলেট দিয়ে ওর হাজব্যান্ড সুইসাইড করেছিলেন, সেই বুলেটের কেসিং দিয়ে উনি ওনার লিপস্টিকের কেস বানিয়েছেন। আমাকে তৃষা চুপি চুপি দেখিয়েছিল, দারুণ দেখতে কিন্তু। উনি নাকি সবসময় ওটা কাছে রাখেন। ওনার লাকি চার্ম। সো স্যাড। (শেখর কে) এই দেখ, যে কথাটা বলতে এসেছি সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। সুইসাইড বলতে মনে পড়ল। তুই খবরটা পড়েছিস তো? তোর ওই আমেরিকার স্বামীজি, অতুলানন্দ, যে বলেছিল পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, সে ব্যাটাও  নাকি সুইসাইড করেছে। সুতরাং, তোরও কোন আশা নেই। (লীনা উঠে দাঁড়ায়) আমি চলি। লাইব্রেরিতে শিবরাম চক্রবর্তীর এই বইটা ফেরত দিতে হবে – ঈশ্বর, পৃথিবী, ভালবাসা। দারুণ। না পড়া থাকলে পড়ে নিস। 

(লীনা বেরিয়ে যায়। পীযুষ আর শেখর সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আলো নিভে যায়।)    

সমাপ্ত

সুদীপ্ত ভৌমিক একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। ওঁর নাটক অভিবাসী জীবনের নানা দ্বন্দ ও সংগ্রামের কথা বলে। সুদীপ্তর নাট্যদল একতা (ECTA) উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ভাষানগর পুরস্কার, নিউ জার্সি পেরি এওয়ার্ড নমিনেশন, সিএবি ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এওয়ার্ড ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত সুদীপ্ত ড্রামাটিস্ট গিল্ড অফ আমেরিকার পূর্ণ সদস্য। ওঁর পডকাস্ট স্টোরিজ অফ মহাভারত অ্যাপল আইটিউনস-এ শ্রেষ্ঠ পডকাস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে।

Picture of সুদীপ্ত ভৌমিক

সুদীপ্ত ভৌমিক

সুদীপ্ত ভৌমিক একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। ওঁর নাটক অভিবাসী জীবনের নানা দ্বন্দ ও সংগ্রামের কথা বলে। সুদীপ্তর নাট্যদল একতা (ECTA) উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ভাষানগর পুরস্কার, নিউ জার্সি পেরি এওয়ার্ড নমিনেশন, সিএবি ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এওয়ার্ড ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত সুদীপ্ত ড্রামাটিস্ট গিল্ড অফ আমেরিকার পূর্ণ সদস্য। ওঁর পডকাস্ট স্টোরিজ অফ মহাভারত অ্যাপল আইটিউনস-এ শ্রেষ্ঠ পডকাস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে।
Picture of সুদীপ্ত ভৌমিক

সুদীপ্ত ভৌমিক

সুদীপ্ত ভৌমিক একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। ওঁর নাটক অভিবাসী জীবনের নানা দ্বন্দ ও সংগ্রামের কথা বলে। সুদীপ্তর নাট্যদল একতা (ECTA) উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ভাষানগর পুরস্কার, নিউ জার্সি পেরি এওয়ার্ড নমিনেশন, সিএবি ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এওয়ার্ড ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত সুদীপ্ত ড্রামাটিস্ট গিল্ড অফ আমেরিকার পূর্ণ সদস্য। ওঁর পডকাস্ট স্টোরিজ অফ মহাভারত অ্যাপল আইটিউনস-এ শ্রেষ্ঠ পডকাস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com