Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তিব্বত, টিনটিন অথবা এক প্রেম কাহিনি

TinTin
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Tintin)

রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন তাঁর গানই চিরভাস্বর হয়ে থাকুক। আর জর্জেস রেমি ওরফে অ্যার্জে? তাঁর কি ইচ্ছা ছিল? এ ব্যাপারে বেলজিয়াম কমিকস শিল্পী খোলসা করে কিছু না বললেও গবেষকদের মতে, বিপ্লব পূর্ববর্তী চিনে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এর প্রতি ছিল তাঁর সবিশেষ দুর্বলতা। এর অন্যতম প্রধান কারণ হয়তো চিনা ভাস্কর চ্যাঙ চোঙ রেনের সঙ্গে অ্যার্জের আজীবন বন্ধুত্ব। এই ব্ন্ধুতাকে অমরত্ব দিতে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ব্লু লোটাস’এ চ্যাংকে তিনি নিয়ে আসেন চ্যাঙ চোঙ চেন নামে। (Tintin)

আরও পড়ুন: অন্ধকার সময় বা অ্যার্জের কাহিনি

দুনিয়া জুড়ে থাকা টিনটিন ভক্তকূল অবশ্য এখানে সামান্য ভিন্ন মত পোষন করেন। তাঁদের মতে, ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত টিনটিন পত্রিকায় প্রকাশিত ও পরবর্তীকালে ১৯৬০ সালে প্রকাশিত টিনটিন সিরিজের বিংশতিতম কাহিনি ‘টিনটিন ইন টিবেট’ হল সেই সৃষ্টি যার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্ম অ্যার্জেকে মনে রাখবে। এখানেও কাহিনির অন্যতম প্রধান চরিত্র সেই সাংহাইয়ের বন্ধু চ্যাং যাকে খুঁজতেই তিব্বতের তুষার মরুভূমির অন্দরে টিনটিন, ক্যাপ্টেন আর্চিবাল্ড হ্যাডক আর কুট্টুসের অভিযান। আর সেখানেই তুষার মানব বা ইয়েতির (স্থানীয় নাম মিগু) সঙ্গে তাদের মোকাবিলা। (Tintin)

TinTin
‘টিনটিন ইন টিবেটকে’ বন্ধুত্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্দশন হিসাবে গণ্য করা হয়।

এমনিতে বিশ্ব কমিকস সাহিত্যে ‘টিনটিন ইন টিবেটকে’ বন্ধুত্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্দশন হিসাবে গণ্য করা হয়। এই সেই কাহিনি যেখানে জীবনের বাজি রেখে শত বিপদ উপেক্ষা করে চ্যাংকে উদ্ধার করে টিনটিন। শুধু কি তাই? যখন বিপদসঙ্কুল ভাবে ক্যাপ্টেন হ্যাডক ঝুলছিল খাদের উপরে আর টিনটিন পারছিল না তাকে টেনে তুলতে, তখন দু’জনের বাঁচার জন্য হ্যাডক বার বার টিনটিনকে বলছিল দড়িটা কাটতে যাতে অন্তত টিনটিন বেঁচে যায়। কিন্তু টিনটিন সে রাস্তায় হাঁটেনি। বরং বলেছে, “তা হয় না। মরলে একসঙ্গে মরব।” বন্ধুত্বের সীমা যে মনুষ্যত্বর জীব অবধি ব্যপ্ত তাও তো তুষারমানবের সঙ্গে চ্যাং-এর বন্ধুত্বে অ্যার্জে দেখিয়েছেন। চ্যাং চলে যাওয়ার সময় দিগন্তব্যাপী হাহাকার করেছে ইয়েতি। আর শেষ দৃশ্য তো নিঃসন্দেহে গোটা টিনটিন সিরিজের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য। দূর পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে টিনটিনদের সঙ্গে চ্যাং চলে যাচ্ছে। পাহাড়ের খাঁজে দাঁড়িয়ে তা দেখছে তুষারমানব। এমন এক নীরব অনুচ্চারিত বেদনা অ্যার্জের মতো শিল্পীই কেবল আঁকতে পারেন। (Tintin)

তবে ‘তিব্বতে টিনটিন’ কাহিনি লেখার অন্তরালে অন্য এক কাহিনিও আছে। সে কাহিনি হৃদয়ের চূড়ান্ত টানাপোড়েনের। অ্যার্জে কি আসলে শ্বেতশুভ্র প্রান্তর, নিঃশর্ত বন্ধুত্বের এক কাহিনি রচনা করে নিজের মনের শান্তি খুঁজেছিলেন? (Tintin)

এই ‘টিনটিন ইন টিবেট’ (যা বাংলায় অনুদিত হয়েছে ‘তিব্বতে টিনটিন’ নামে) এর অন্তলীন মানসিক টানাপোড়েনকেই সামনে এনে শুরু হল সপ্তম পর্ব।

১৯৫৮ সাল। অ্যার্জে রাতের পর রাত অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছেন।

অ্যার্জে দেখলেন বাড়িতে তিনি একা। হঠাৎ দেখলেন পুরো বাড়ি বরফে ঢাকা। বাইরে বাচ্চারা খেলা করছে। অ্যার্জে বাইরে বেরিয়ে বরফের গোলা বানিয়ে বাচ্চাদের দিকে ছুঁড়লেন। শিশুর দল অদৃশ্য হয়ে গেল। কেন জানি না, তাঁর বেশ লাগল। বরফের মাঝে একটা কালো পাথর নজরে পড়ল। পাথরের দিকে এগোলেন। গিয়ে দেখলেন সেটা আদতে একটা সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়লেন অ্যার্জে। (Tintin)

প্রথমে সুড়ঙ্গের রাস্তা ঠিকঠাকই ছিল। এরপর ধীরে ধীরে খাড়াই হতে শুরু করল। বড় বড় পাথর পথ আটকাতে শুরু করল। অ্যার্জে কোনওক্রমে পাথর সরিয়ে সুড়ঙ্গপথে এগোতে লাগলেন।

প্রথমে সুড়ঙ্গের রাস্তা ঠিকঠাকই ছিল। এরপর ধীরে ধীরে খাড়াই হতে শুরু করল। বড় বড় পাথর পথ আটকাতে শুরু করল। অ্যার্জে কোনওক্রমে পাথর সরিয়ে সুড়ঙ্গপথে এগোতে লাগলেন। ক্রমে পথ আরও খাড়াই হল, আরও বড় বড় পাথর পথ আটকাল, সুড়ঙ্গ পথও ক্রমশ সরু হয়ে এল। শেষে পেলেন এক মই। চিমনি সদৃশ গর্ত দিয়ে মই উঠেছে। মুখটা বেরিয়ে রয়েছে সেই কালো পাথরে। নীচ থেকে অ্যার্জে সেই পাথরের গর্তে মুখ দিয়ে আলো ঝলসানো এক টুকরো  নীলাকাশ দেখলেন আর চারিদিকে ধূ ধূ করা বরফে ঢাকা প্রান্তর। (Tintin)

মই দিয়ে ওপরে উঠতে চেষ্টা করেন অ্যার্জে। কিন্তু মাঝপথেই কে যেন মইটাকে দুমড়ে মুচড়ে বাঁকিয়ে দিয়েছে। তিনি আর উঠতে পারছেন না। গর্তের মধ্যেই আটকে গিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বাঁকানো মইটা অবিকল গির্জার জানলার রূপ নিয়েছে। (Tintin)

TinTin
দেখলেন এক শ্বেতশুভ্র টাওয়ারে তিনি আটকে পড়েছেন।

হ্যারি থম্পসন তাঁর ‘টিনটিন=অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন’এ রাতের পর রাত এই ধরনের সীমাহীন বরফের মাঝে আটকে পড়ার স্বপ্ন অ্যার্জের দেখার কথা বলেছেন। (Tintin)

১৯৫৯ সালের এপ্রিলে আরও ভয়াবহ স্বপ্ন দেখলেন। দেখলেন এক শ্বেতশুভ্র টাওয়ারে তিনি আটকে পড়েছেন। চারিদিকে ঝরা পাতার দল। হঠাৎ শ্বেত আলখাল্লা পরিহীত এক কঙ্কাল তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক চোখ ঝলসানো সাদা হয়ে গেল। (Tintin)

কেন দেখছেন এমন সব স্বপ্ন? মনস্তত্ত্ববিদরা বললেন, অ্যার্জে এক ভয়ঙ্কর মানসিক দ্বিধায় রয়েছেন। সেখানে তিনি এক এমনই মানসিক সমস্যায় বিপর্যস্ত, যে তিনি কোনও সমাধানের কূল কিনারা করতে পারছেন না। তিনি নিজে এই সমস্যার ঘূর্ণাবর্তে ক্রমশ বন্দী হয়ে পড়ছেন। (Tintin)

সত্যিই কি তাই? এর উত্তর খুঁজতে গেলে টিনটিন স্রষ্টার ব্যক্তিগত জীবনে আলোকপাত করতে হবে। অ্যার্জের জীবন যদি আতসকাচের তলায় ফেলা যায় তাহলে দেখা যাবে এই অসামান্য শিল্পীর জীবনে প্রণয় এক বড় ভূমিকা রেখেছে। (Tintin)

স্কুল জীবনে জর্জেস রেমির প্রথম প্রেম ছিল ম্যারি লুই ভন কটসেম ওরফে মিলু। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বেলজিয়ামের মতো গোঁড়া ক্যাথলিক সমাজে স্কুল জীবনেই গার্ল ফ্রেন্ড রাখা ছিল রীতিমতো ঘটনা। সে প্রেম অবশ্য পূর্ণতা পায়নি মুখ্যত জর্জেসের শিল্পী হওয়ার বাসনা থাকার কারণে। মিলু-র বাবা মায়ের মনে হয়েছিল এই বাউণ্ডুলে ছেলের হাতে নিজেদের আদরের মেয়েকে দেওয়া মোটেই সমীচিন নয়। (Tintin)

তাই মিলুকে ঘরণী করা হল না জর্জেসের। কিন্তু মিলুকেও ভুলে যাননি তিনি। পরে যখন তিনি টিনটিন চরিত্রায়ন করছেন তখন বয় রিপোর্টারের সঙ্গী হিসাবে মিলুকে নেবেন ভাবলেন। কিন্তু বেলজিয়ামের গোড়া ক্যাথলিক সমাজে কিশোরদের কমিকসে গার্লফ্রেন্ড তো নৈব নৈব চ।

তাই মিলুকে ঘরণী করা হল না জর্জেসের। কিন্তু মিলুকেও ভুলে যাননি তিনি। পরে যখন তিনি টিনটিন চরিত্রায়ন করছেন তখন বয় রিপোর্টারের সঙ্গী হিসাবে মিলুকে নেবেন ভাবলেন। কিন্তু বেলজিয়ামের গোড়া ক্যাথলিক সমাজে কিশোরদের কমিকসে গার্লফ্রেন্ড তো নৈব নৈব চ। প্রশ্ন উঠে যাবে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে টিনটিন রাত্রিবাস করছে দেখালে। আবার মিলুকে যেনতেন প্রকারেণ রেমি রাখতে চান। অনেক ভেবে একটা উপায় বেরোল। মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে সারমেয়কে ধরা হয়। রেমি ব্রাসেলসের যে রেস্তোরায় খেতে যান তার মালিকের শ্বেত ফক্স টেরিয়ারটি তাঁর বেশ পছন্দের। তাই ঠিক হয় মিলু টিনটিনের সঙ্গেই থাকবে, তবে মানুষ নয়, সারমেয় হিসাবে। টিনটিন কমিকসের মূল ফরাসীতে বয় রিপোর্টারের ফক্স টেরিয়ারের নাম হল মিলু, যা ইংরেজি আর বাংলা অনুবাদে হল যথাক্রমে স্নোয়ি আর কুট্টুস। (Tintin)

তবে রেমির প্রণয় পর্বের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটেনি। পরবর্তী পর্বের পর্দা উঠছে ১৯২৭ সালে ইলাসট্রেটর হিসাবে যোগ দেওয়া মুসোলিনী ভক্ত অ্যাবে নর্বার্ট ওয়ালেজের গোড়া ক্যাথলিক কাগজ ল্য ভ্যামসিয়েম সেঁকনাতে। (এই অ্যাবের উৎসাহেই রেমির টিনটিনকে নিয়ে আসা) অ্যাবের সেক্রেটারি জের্মাইন কিকেনস এর সঙ্গে ভাব হল তরুণ রেমির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প চলল দুজনের। জের্মাইনের ঘোর প্রেমে পড়লেন তরুণ রেমি। কিন্তু জের্মাইনের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি প্রথম দিকে। সদ্য একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। তাই রেমির আগ্রহে সাড়া দিতে, দ্বিধাগ্রস্থ তিনি। জর্জেসকে ঠিক যথাযথ পুরুষসঙ্গী হিসাবেও হয়তো ভাবছিলেনও না তিনি। তাঁর কাছে জর্জেসের হাবভাব অনেকটাই ‘ম্যাচিওর’ নয়। তাই জর্জেস তাঁর অপত্যস্নেহ জাগাত। (Tintin)

TinTin
হঠাৎ দেখলেন পুরো বাড়ি বরফে ঢাকা। বাইরে বাচ্চারা খেলা করছে।

কিন্তু একইসঙ্গে এটাও ঠিক এই প্রতিভাবান শিল্পীর আমোঘ আকর্ষণ তিনি পুরোপুরি উপেক্ষাও করতে পারছেন না। রেমির সঙ্গে বার কয়েক ডেটেও গেলেন জের্মাইন। ১৯২৮ সালে জর্জেস বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যান তিনি। বছর চারেক বাদে ১৯৩২ সালে বেশ ধূমধাম করেই বিয়ে হয় তাঁদের। টিনটিন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মিলনে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছিলেন জর্জেসের মেন্টর অ্যাবে নর্বার্ট ওয়ালেজ স্বয়ং। উল্লেখ্য এই ওয়ালেজের আনুকূল্যেই জর্জেসের প্রথম টিনটিনকে নিয়ে আসা। (Tintin)

কেমন ছিল দুজনের দাম্পত্য জীবন? মূল ফরাসী থেকে ইংরাজিতে টিনটিনের অনুবাদিকা লেসলি লন্সডেল কুপারের মতে, (যখন ইংরাজিতে কমিকসকে কেউ আমল দিতেই চাইত না সেই ১৯৫৮ সালে মাইকেল টার্নারের সঙ্গে মিলে ‘দ্য ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লস’ ইংরাজিতে বিনা পারিশ্রমিকে অনুবাদ করেন লেসলি। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। গোটা ইংরেজি ভাষাভাষি বিশ্ব আদতে কুইবেকের বাসিন্দা এই মহিলার অনুবাদেই টিনটিন পড়েছে) আসলে অ্যার্জের জীবনে মায়ের স্থানটা পূরণ করেছিলেন জের্মাইন। মায়ের মানসিক বিকারগ্রস্থতার কারণে জর্জেসের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক গড়ে ওঠেনি। সেই শূণ্যস্থানই আদতে ভরাট করেছিলেন তিনি। জর্জেসের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। জর্জেসের কোট আর স্কার্ফও থাকত তাঁর কাছে। স্বামীর সব খুঁটিনাটির খেয়াল রাখতেন তিনি। (Tintin)

শুধুই কি সুগৃহীনি ছিলেন জের্মাইন? রেমি দম্পতিকে একদম কাছ থেকে দেখা অ্যার্জের দলের অন্যতম প্রধান শিল্পী বব ডি মুর মোটেই তা মনে করেন না। মুরের মতে, জের্মাইন যথেষ্ট সৃষ্টিশীল ছিলেন।

শুধুই কি সুগৃহীনি ছিলেন জের্মাইন? রেমি দম্পতিকে একদম কাছ থেকে দেখা অ্যার্জের দলের অন্যতম প্রধান শিল্পী বব ডি মুর মোটেই তা মনে করেন না। মুরের মতে, জের্মাইন যথেষ্ট সৃষ্টিশীল ছিলেন। তান্তিন ছদ্মনামে ছোটদের গল্প লিখেছেন। ছিলেন এক প্রাণচঞ্চল কর্মঠ মহিলা। ভাল রসবোধ ছিল তাঁর। সব কাজ সুচারু করার যে গুণ জের্মাইনের ছিল তা কেরিয়ারের প্রথম দিকে জর্জেসের ভালই কাজে লেগেছিল। (Tintin)

কিন্তু ‘খেয়াল রাখাই’, কাজ গুছিয়ে দেওয়াই কি সব? জর্জেস কি আরও সৃষ্টিশীল কোনও সহযোগিতা চাইছিলেন? আদতে বারংবার প্রেমে কি এইজন্যই পড়তেন জর্জেস? প্রেমের সঙ্গে কি সৃষ্টিশীলতাও খুঁজতেন? আর তা না পেয়েই ফিরে আসতেন জের্মাইনের কাছে? স্বীকারও করতেন সব। জের্মাইন নিশ্চয়ই ব্যথিত হতেন, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হত। আবার সব ভুলে জর্জেসের পাশেও থাকতেন। (Tintin)

সমস্যা বাঁধল যখন একইসঙ্গে প্রেম আর সৃষ্টিশীলতা দুইয়ের মেলবন্ধনের দেখা পেলেন অ্যার্জে। পেলেন স্টুডিও অ্যার্জেতেই। ১৯৫০ সালে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শিল্পী। যোগ দেন বব ডে মুর, জ্যাকোয়েস মার্টিন, রজার ল্যুঁপের মতো স্বনামধন্য বেলজিয়াম কমিকস শিল্পীরা যাঁরা মূলত গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রযুক্তিগত আঁকা আর ছবিগুলো রঙিন করার কাজ করতেন। অ্যার্জে করতেন গল্প ও তার চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ। ১৯৫৬ সালে বছর ২২-এর ফ্যানি ভ্ল্যামিঙ্ক আর ফ্রান্স ফেরারি স্টুডিওতে কালারিস্ট হিসাবে কাজে যোগ দিলেন। ৪৯ বছরের অ্যার্জের জীবনে নতুন বসন্ত এল। (Tintin)

থম্পসন জানাচ্ছেন, ঝকঝকে উচ্ছ্বল ফ্যানির প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগল না অ্যার্জের। তবে এখানে অন্য একটা কারনও উল্লেখ করেছেন তিনি। জের্মাইন দীর্ঘদিনের সঙ্গী। তাই অ্যার্জের সাফল্যে তিনি খুশি হন। কিন্তু সে খুশির উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ কম। অপর দিকে ফ্যানির চোখে অ্যার্জে জিনিয়াস। মনে হয় সব দেবতাই সুউচ্চ স্তুতি পছন্দ করেন। (Tintin)

TinTin
ক্রমে পথ আরও খাড়াই হল, আরও বড় বড় পাথর পথ আটকাল, সুড়ঙ্গ পথও ক্রমশ সরু হয়ে এল।

এরপর যা হওয়ার তা হল। ধীরে ধীরে অ্যার্জের জীবন থেকে জের্মাইন সরে যেতে শুরু করলেন। এতে অ্যার্জে নিশ্চিতভাবেই মানসিক দিক থেকে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে ফ্যানি তাঁর জীবনে আসার প্রায় তিন দশক আগে তীব্রভাবে ভালই বেসেছিলেন। সুখে দুঃখে জের্মাইন তাঁর পাশে ছিলেন। যুদ্ধের পরে যখন তাঁকে দেশদ্রোহী বলা হয়, জীবনের সেই অন্ধকার অধ্যায়ে জের্মাইনের হাত তাঁর হাতে ছিল। এটাও সত্যি যে ওই সময়ে অ্যার্জের মানসিক শক্তির কেন্দ্র ছিলেন জের্মাইনই। তাই কি এক চিরন্তন বন্ধুত্বের কাহিনি রচনা করে আসলে শান্তি খুঁজেছেন অ্যার্জে? (Tintin)

মনস্তত্তবিদের কাছে অ্যার্জের অকপট স্বীকারোক্তি -“এটা সিরিয়াস মোরাল ক্রাইসিস। বিবাহিত অথচ ভালবাসি অন্যকে। স্ত্রীর সঙ্গে থাকা অসম্ভব কিন্তু তাঁকে তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। স্কাউটের প্রতিশ্রুতির নড়চড় হয় না। এ এক ভয়াবহ অবস্থা। আমি পুরোপুরি খানখান হয়ে গিয়েছি।” (Tintin)

আদতে বন্ধুত্বের মর্যাদা সবসময় দিয়ে এসেছেন অ্যার্জে। তা সে মিলুকে অমর করাই হোক বা লুকিয়ে দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত বন্ধুদের সাহায্য করাই হোক।

আদতে বন্ধুত্বের মর্যাদা সবসময় দিয়ে এসেছেন অ্যার্জে। তা সে মিলুকে অমর করাই হোক বা লুকিয়ে দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত বন্ধুদের সাহায্য করাই হোক। বন্ধুদের হাত পারতপক্ষে ছাড়েননি তিনি। স্বাভাবিকভাবে জের্মাইনের ব্যাপারে কোনও সির্দ্ধান্ত নিতে তিনি এতটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। (Tintin)

অ্যার্জের এই মানসিক টানাপোড়েন চলবে আরও প্রায় দুই দশক। ১৯৭৭ সালে জের্মাইনের সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ফ্যানির সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। (Tintin)

১৯৮৩ সালের ৩রা মার্চ ব্রাসেলস এর ক্লিনিকে ৭৫ বছর বয়সে অ্যার্জে প্রয়াত হন। তখন শয্যা পার্শ্বে ছিলেন ফ্যানি। স্ত্রী ফ্যানিকেই উত্তরাধিকারী করে যান শিল্পী। পরবর্তীকালে স্টুডিও অ্যার্জে বন্ধ করে শিল্পীর সব কাজ দেখভালের জন্য অ্যার্জে ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন ফ্যানি। (Tintin)

সব মহৎ শিল্পীই তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে তাঁদের মহান সৃষ্টি রচনা করেন। ‘টিনটিন ইন টিবেট’ সেই ঘরাণারই আরেক উজ্জ্বল উদাহরণ। (Tintin)

তথ্যসূত্র:
(১) টিনটিন অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন-হ্যারি থম্পসন
(২) দ্য রিয়েল অ্যার্জে-সিয়ান লি
(৩) দ্য কমিকস অফ অ্যার্জে-হোয়েন দ্য লাইন্স আর নট সো ক্লিয়ার-সম্পাদনা জো স্যাটক্লিফ স্যান্ডার্স
(৪) তিব্বতে টিনটিন-অ্যার্জে
(৫) টিনটিন ইন টিবেট-অ্যার্জে

ছবি সৌজন্য- আন্তর্জাল

ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত

Author kingshuk banerjee

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

আইভি চট্টোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার

বিহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
শক্তিপদ ভট্টাচার্য
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com