Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চ্যাট-জিপিটি, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ও শিল্প-সৃষ্টি

শান্তনু ভদ্র

মে ২২, ২০২৩

chat GPT can replace Human Art
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

চ্যাট-জিপিটি নামটি না শুনে থাকলে বলতে হবে আপনি বিজ্ঞানের এমন একটি অগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন যেটা মানব সমাজে আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার-জনিত সামাজিক পরিবর্তন কোনও নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু কোনও আবিষ্কারই মানব জাতির সৃজনশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করেনি— বরং তাকে উজ্জ্বল করেছে। চ্যাট-জিপিটির আবির্ভাব সেই সৃজনশীলতাকে শুধু চ্যালেঞ্জই করেনি, সমাজে শিল্পের কদরকেও এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।

কিন্তু কী এই চ্যাট-জিপিটি? একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন যে, এটি এমন একটি ‘সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন’ যা আমাদের সঙ্গে অন্য মানুষের মতোই সংলাপ আদানপ্রদান করতে পারে— অর্থাৎ আপনি যদি কোনও প্রশ্ন করেন, চ্যাট-জিপিটি গুছিয়ে তার উত্তর দিতে প্রস্তুত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে চ্যাট-জিপিটির লেখা উত্তর একজন মানুষের লেখা উত্তরের থেকে আলাদা কিনা বোঝা মুশকিল। এর কারণ, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনটি আমার-আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারদর্শী, তা মানুষের ভাষা শেখার পদ্ধতি অনুসরণ করেই তৈরি। একটি শিশু যেমন তার মা-বাবা এবং পারিপার্শ্বিক অন্য মানুষের কথা শুনে, তাদের বলে দেওয়া শব্দ ব্যবহার করে ভাষা শেখে এবং ভুল ধরিয়ে দিলে তা শুধরে নিতে পারে— চ্যাট-জিপিটিও তেমনই ট্রেনিং-এর মাধ্যমে জগতকে চেনার ও প্রকাশ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের মস্তিষ্কের ডেভেলপমেন্ট মডেলকে অনুকরণ করে তৈরি কম্প্যুটার প্রোগ্রাম চ্যাট-জিপিটির বুদ্ধিমত্তার প্রধান উৎস, এবং তদুপরি অফুরন্ত ‘ডিজিটাল মেমরি’ সমৃদ্ধ তার এই কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা মানুষকে টেক্কা দিতেও প্রস্তুত। ইন্টারনেট-এ অগণিত তথ্য ঘেঁটে আমি-আপনি যে প্রবন্ধ লিখতে হয়তো কয়েক মাস সময় নেব, চ্যাট-জিপিটি তা এক লহমায় লিখে ফেলতে পারদর্শী।

AI v/s Human art and literature
ইন্টারনেট-এ অগণিত তথ্য ঘেঁটে আমি-আপনি যে প্রবন্ধ লিখতে হয়তো কয়েক মাস সময় নেব, চ্যাট-জিপিটি তা এক লহমায় লিখে ফেলতে পারদর্শী

এক্ষেত্রে অনেকেই বলতে পারেন, মানুষের লেখা সাহিত্যের মধ্যে যে শিল্প থাকে তা চ্যাট-জিপিটির দ্বারা সম্ভব নয়। ভয়-কৌতুক-আনন্দ-বিষাদ, এইসব মানবিক আবেগ তৈরি করতে চ্যাট-জিপিটি অক্ষম। যাই হোক সে তো আর মানুষ নয়! এ ধারণা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক নয়। প্রথমত, বেশ কিছু পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে চ্যাট-জিপিটি যেমন ভয়ের পরিস্থিতি অথবা হাস্যকৌতুকের সৃষ্টি করতে পারে, তেমনই আলঙ্কারিক ভাষার প্রয়োগ অথবা ছন্দোবদ্ধ কবিতাও লিখে ফেলতে সক্ষম।  ইন্টারনেটে প্রাপ্ত যাবতীয় শিল্প-সাহিত্য তার ‘মেমরিতে উপস্থিত এবং তাকে শেখানো হয়েছে কোন্‌ শব্দ বা কী ধরণের বাক্যগঠন কোন্‌ ধরণের আবেগের উদ্রেক করতে পারে। এরপর শুধু তার বিশাল স্মৃতিভাণ্ডার হাতড়ে কিছু উপাদান সংগ্রহ করে প্রস্তুত করা শিল্প আমাদের চমকে দেবার জন্য যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, চ্যাট-জিপিটির বর্তমান রূপ একটি শিশুর সমতুল— তার মস্তিস্ক সবে মানব জগতকে চিনতে শুরু করেছে, এবং আমাদের ভাষার সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক বুঝতে শুরু করেছে। তার সৃষ্টিকে এই মুহূর্তে কোন পরিপক্ক শিল্পী-সাহিত্যিকের সঙ্গে তুলনা করে তার সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করা ঠিক নয়; বরং এই পর্যায়ে তার দক্ষতাকে ভবিষ্যতের ‘অতিমানবিক’ ক্ষমতারই নিদর্শন বলা যায়।

আরও পড়ুন: একটা নতুন ফেলুদা হয়ে যাক

একথা ঠিক যে, চ্যাট-জিপিটির সৃষ্টিকর্ম মানব জীবনের জটিলতাকে এখনও স্পর্শ করতে পারেনি; কিন্তু এও মানতে হবে যে আমাদের জটিল ভাবাবেগ আমাদের জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতারই সংমিশ্রণ— আর সেই ভাবাবেগকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা সাহিত্যের মাধ্যমে এতদিন সম্ভব হয়ে থাকে, সেই সাহিত্যের ভাষাকে ‘ডিকোড’ করা কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার কাছে খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে হ্যাঁ, প্রথমে অবশ্যই তাকে কিছুটা বুঝিয়ে দিতে হবে মানুষের জীবনের নানা ওঠাপড়ার সঙ্গে মানুষের আবেগের নানান যোগ। কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার নিজস্ব অনুভূতি না থাকলেও, সে অসংখ্য জীবন-চরিত থেকে উপাদান একত্রিত করে দিলে তাকে একটি নতুন জীবন-কাহিনি মনে হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এ অনেকটা অভিনয় করে দর্শককে আবেগপ্রবণ করার মতো কাজ— সবক্ষেত্রে অভিনেতা নিজেও যে সেই আবেগ অনুভব করেন, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না।

Chat GPT artificial emotions

চ্যাট-জিপিটি তার কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে মানুষের মতো শিল্পী হয়ে উঠতে পারবে কিনা সে বিতর্ক না হয় আপাতত তোলা থাক। বরং এই মুহূর্তে সমাজ যে দ্বন্দের সম্মুখীন সেই দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। শিল্পের দুটি প্রধান দিক— এক, সৃজনশীলতা, যার ‘মৌলিকত্ব’ অনেকাংশেই গ্রহণযোগ্যতা পায় বিবিধ সূত্র ঘেঁটে একটি নতুন যৌগিক সৃষ্টির মাধ্যমে। এ কাজে চ্যাট-জিপিটি অনেকটাই এগিয়ে বললে ভুল হবে না। দুই, মানবিক যোগ, যার উৎস আমাদের আবেগ-জনিত অনুভব। এক্ষেত্রে চ্যাট-জিপিটির কোনও মানবিক সত্তা না থাকায় তার পদ্ধতি ভিন্ন। আবেগানুভূতি আর তা প্রকাশের ভাষার মধ্যে সম্পর্ক বুঝে নিয়ে পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয় ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের মনে আবেগের উদ্রেক ঘটানো। এ কাজে চ্যাট-জিপিটি আপাতত পিছিয়ে। এই পরিস্থিতির ফলস্বরূপ উঠে এসেছে এক নতুন উপায়ে শিল্প-সৃষ্টি, যা একাধারে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের যুগলবন্দি। যেখানে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা তার ফর্মুলা অনুযায়ী একটা প্রাথমিক ধাঁচা তৈরি করে ফেলল, তারপর কোনও মানুষ সেই সৃষ্টির মানবিক যোগের খামতিটুকু ঢেকে দিল, শেষে আবার কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আরও কিছুটা ‘অ্যাডজাস্ট’ করে তৈরি হয়ে গেল নতুন গল্প-নাটক-কবিতা। প্রশ্ন হল এক্ষেত্রে শিল্পী হিসেবে সেই মানুষটির কতটা কদর প্রাপ্য বা আদৌ প্রাপ্য কিনা! শিল্প যদি মানুষের চিন্তা-বুদ্ধি-মনন-এর প্রকাশ হয়ে থাকে, সেই শিল্প-কর্মে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার অংশীদারি কতটা গ্রহণযোগ্য? 

এ দ্বন্দ শুধু লেখালেখির জগতেই নয়, সংগীত বা চিত্রকলার জগতেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। যেহেতু সংগীত বা চিত্রকলা ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি করা সম্ভব, অজস্র ডিজিটাল সংগীত বা চিত্রকলার সংমিশ্রণে নতুন সংগীত বা চিত্রকলা তৈরি করা কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার আয়ত্তের বাইরে নয়। সত্যি কথা বলতে কি, শিল্প-সৃষ্টির একটা বড় অংশ বরাবরই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জানা-অজানা শিল্পের থেকে ‘অনুপ্রেরণা’ নিয়েই সংগঠিত। শিল্পের বিবিধ বিস্তারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরিশ্রম শিল্পীর সাধনার অঙ্গ হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার দৌলতে সেই পরিশ্রমের দরকার প্রায় নেই বললেই চলে। কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নির্মিত শিল্প তাহলে কোন্‌ মাপকাঠিতে বিচারযোগ্য?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রযুক্তির সঙ্গে সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। শিল্পক্ষেত্রে প্রযুক্তির আনাগোনা এবং সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বদলে দেওয়া নতুন ঘটনা নয়। যেটা লক্ষ করার বিষয় তা হল, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ওয়াকিবহাল মহল দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে পড়ে— একদল পুরনোপন্থী, যারা ঐতিহ্যের ধ্বজা ধরে শিল্পের বিচারে মত্ত হয়ে পড়ে; আরেকদল নতুনপন্থী, যারা এই পরিবর্তনকেও সৃষ্টির অঙ্গ হিসেবে মেনে এগিয়ে চলতে রাজি। ‘ফটোগ্রাফি’র দুনিয়ায় ফিল্ম-ক্যামেরা থেকে ডিজিটাল-ক্যামেরায় উত্তরণের সময় কিংবা অভিনয়ের জগতে ‘থিয়েটার’ থেকে ‘মোশন-পিক্‌চার’-এ নাম লেখানোর সময়কালের কথা মনে করলে সেই উদাহরণ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ কিন্তু এই বিবাদের উর্দ্ধেই থাকেন। তাঁরা শিল্প-সৃষ্টির প্রক্রিয়া নিয়ে যত না আগ্রহী তার থেকে অনেক বেশি আকৃষ্ট হন শিল্পের অন্তিম রূপ অনুযায়ী, এবং সেটাই স্বাভাবিক। শিল্পের জনপ্রিয়তা তার বাণিজ্যিক দিকটির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ঐতিহ্যের বাঁধ ভেঙে ডিজিটাল-ক্যামেরা বা মোশন-পিক্‌চার আজ অনেক বেশি জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার নিরিখে পুরনো পদ্ধতিতে তৈরি শিল্প যখন আর পেরে ওঠে না, সেই যুগের সেরা সৃষ্টিগুলিকে তখন ‘ক্লাসিক’ তকমা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।

Artificial Intelligence
কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের যুগলবন্দি

এর থেকে বোঝা যায় যে, শিল্পীকে কদর দেবার খাতিরে শিল্প-সৃষ্টিতে প্রযুক্তির পরিবর্তন সাধারণত থেমে থাকেনি। বিশেষজ্ঞ সমাজ শুধু অসম প্রতিযোগিতাকে সাময়িকভাবে আটকে রাখার একটা চেষ্টা করে থাকে মাত্র। একসময় যখন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের দরুণ এক নতুন শিল্পগোষ্ঠীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, তখন সেই প্রযুক্তি আর শিল্পাঙ্গনে ব্রাত্য থাকে না। ক্রীড়া জগতের উদাহরণ থেকেও এটি কিছুটা বোঝা যায়। যেমন দাবা খেলায় কম্পিউটারের কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা আজ মানুষের বুদ্ধিমত্তার থেকে অনেক-গুণ বেশি। তাই দাবা খেলার যেকোনও প্রতিযোগিতার পূর্বে বিশ্বের সেরা দাবারুও কম্পিউটারের সাহায্যে নিজেকে প্রস্তুত করে থাকে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন অবশ্য কম্পিউটারের প্রবেশ নিষিদ্ধ, আর তা সম্ভব হয় যেহেতু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। শিল্পের মঞ্চ কিন্তু উন্মুক্ত। শিল্পীর জয়জয়কার নিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার মারফৎ নির্ধারিত হয় না; আর তাই শিল্প-সৃষ্টির মাপকাঠিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আটকে রাখাও মুশকিল।

একসময় যখন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের দরুণ এক নতুন শিল্পগোষ্ঠীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, তখন সেই প্রযুক্তি আর শিল্পাঙ্গনে ব্রাত্য থাকে না। ক্রীড়া জগতের উদাহরণ থেকেও এটি কিছুটা বোঝা যায়। যেমন দাবা খেলায় কম্পিউটারের কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা আজ মানুষের বুদ্ধিমত্তার থেকে অনেক-গুণ বেশি। তাই দাবা খেলার যেকোনও প্রতিযোগিতার পূর্বে বিশ্বের সেরা দাবারুও কম্পিউটারের সাহায্যে নিজেকে প্রস্তুত করে থাকে।

শিক্ষাজগতের উদাহরণও টানা যেতে পারে। ক্লাসরুমের পরীক্ষায় চ্যাট-জিপিটির ব্যবহার আটকে রাখা গেলেও, এর দৌলতে ক্লাসের বাইরে করা ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এ ছাত্রছাত্রীর নিজস্ব অবদান নির্ধারণ করা শিক্ষকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু শিক্ষাবিশারদের মতে চ্যাট-জিপিটির ব্যবহারকে পুরোপুরি ‘চিটিং’-এর পর্যায়ে না ফেলে, বরং এর ব্যবহারকে ধরে নিয়ে পাঠক্রম সাজানোই শ্রেয়।

সুতরাং, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টির অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতায় চ্যাট-জিপিটি বা তার থেকেও উন্নত কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার প্রবেশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখনকার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী বা লেখকদের কাছে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ভীষণ রকমের ‘আন-রোমান্টিক’ লাগতেই পারে, কিন্তু তাতে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর শিল্পীর সংখ্যা না বাড়ার কোনও কারণ নেই। আর কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর শিল্প জনপ্রিয় হলে প্রকাশক-বন্ধুরাও যে সেদিকেই ঝুঁকবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Chess-playing robot
দাবা খেলায় কম্পিউটারের কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা আজ মানুষের বুদ্ধিমত্তার থেকে অনেক-গুণ বেশি

এখন তাহলে প্রশ্ন হল, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর শিল্প কি জনপ্রিয় হতে পারে? ‘অ্যানিমেশন’-এ তৈরি চরিত্র,  ‘অটো-টিউন’ করা গান, কিংবা ‘অ-ক্রিকেটিয় শট’-এ ভরা টি-২০ ম্যাচ যদি জনপ্রিয় হতে পারে, চ্যাট-জিপিটি কেন নয়! এসব ক্ষেত্রে তো প্রক্রিয়াগত বিভাজন জেনেও মানুষ তাকে বিনোদনের আঙিনায় ঠাঁই দিয়েছে; যেখানে সেই প্রক্রিয়াও অন্তরালে, সেখানে তো সম্ভাবনা আরও বেশি বৈ কম নয়।

শিল্প-সৃষ্টিতে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার অন্তরালে থাকার একটা বড় কারণ হল ‘ইন্টেলেক্চুয়াল প্রপারটি রাইট’ সংক্রান্ত আইনে এখনও ব্যক্তির বাইরে কোনও প্রযুক্তির অবদানকে আলাদা করে দেখানোর বাধ্যতা নেই। আমাজনের ই-বুক ভাণ্ডারে চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে লেখা প্রায় কয়েকশো বই ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে। সেই বই বিক্রিও হচ্ছে। আশঙ্কা হয়,এমন আরও অনেক বই থাকা অস্বাভাবিক নয়, যেখানে চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে লেখা সত্ত্বেও লেখক সেই তথ্য গোপন করেছেন। এক লেখকের মন্তব্য অনুযায়ী, চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে একটি প্রায় একশো পাতার গল্প লিখতে এক দিনের বেশি সময় লাগা উচিত নয়। যে সব লেখক ইতিমধ্যেই স্বনামধন্য তাদের কথা আলাদা, কিন্তু বাকিদের কাছে এই চ্যাট-জিপিটি নামক কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার সাথে বন্ধুত্বের হাত না মেলানো আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এখানে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো যে, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা কিন্তু অনুবাদের কাজেও ক্রমাগত পারদর্শীতা লাভ করে চলেছে। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা চ্যাট-জিপিটির পক্ষে খুব একটা বাধার কাজ নয়। শুধু তাই নয়, তাকে যদি আঞ্চলিক ভাষায় সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, সেই ভাষায় সে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে সক্ষম।

আমাজনের ই-বুক ভাণ্ডারে চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে লেখা প্রায় কয়েকশো বই ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে। সেই বই বিক্রিও হচ্ছে। আশঙ্কা হয়,এমন আরও অনেক বই থাকা অস্বাভাবিক নয়, যেখানে চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে লেখা সত্ত্বেও লেখক সেই তথ্য গোপন করেছেন। এক লেখকের মন্তব্য অনুযায়ী, চ্যাট-জিপিটির সাহায্যে একটি প্রায় একশো পাতার গল্প লিখতে এক দিনের বেশি সময় লাগা উচিত নয়। যে সব লেখক ইতিমধ্যেই স্বনামধন্য তাদের কথা আলাদা, কিন্তু বাকিদের কাছে এই চ্যাট-জিপিটি নামক কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার সাথে বন্ধুত্বের হাত না মেলানো আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তবে কি যে শিল্পী তথাকথিত ঐতিহ্যের গণ্ডি না পেরনোর পণ করবেন, সমাজে তার সৃষ্টির কোনও দাম থাকবে না! ঠিক তাও নয়। সেই শিল্পের কদর অনেকটা পর্যবসিত হবে, কম্পিউটার-এর যুগে মুখে-মুখে বড়-সড় যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করে দেখানোর পর বাহবা মেলার সামিল অথবা হেলিকপ্টার-এর যুগে পায়ে-হেঁটে এভারেস্ট জয় করে পুরস্ক্‌ত হবার সামিল। অর্থাৎ, মানুষের সীমিত ক্ষমতার মাপকাঠিতে প্রায় অসাধ্য সাধন করে দেখানোকে সমাজ কিছুটা হলেও কুর্নিশ জানাতে ভুলবে না। সেখানেও দুটি শর্ত প্রযোজ্য হওয়া স্বাভাবিক— এক, প্রযুক্তির সাহায্য-বর্জিত কাজ চোখের সামনে করে দেখাতে হবে, নইলে বিশ্বাস জন্মাবে না। আর দুই, শিল্পী ও দর্শক উভয়েরই হাতে যথেষ্ট সময় থাকতে হবে সেই শিল্পকলা প্রদর্শনের জন্য, অন্তত যেটুকু দরকার। শর্ত দুটি এতটা আক্ষরিক না হলেও, এর অর্থ বুঝে নেওয়া কঠিন নয়। টেস্ট ক্রিকেটে কঠিন ‘পিচ’-এ রাহুল দ্রাবিরের ম্যাচ-বাঁচানো ইনিংসের শিল্প আজ ক’জন যুবককে ক্রিকেটের দিকে অনুপ্রাণিত করে তা আন্দাজ করা বাতুলতা। নতুন প্রজন্ম যে শিল্পকে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টা করবে না, তা কিন্তু ওই ‘ক্লাসিক আর্কাইভ’-এই অবগুণ্ঠিত হয়েই দিন কাটাবে। এ অবগুণ্ঠন লজ্জার না হলেও বিস্মৃতির কারণ হয়ে যেতেই পারে।

সবশেষে একথাও বলা দরকার, শিল্পের বাণিজ্যিক দিকটাকে বাদ দিতে পারলে, প্রযুক্তির উপর শিল্পীর সার্থকতা নির্ভর করে না। পুরনো প্রক্রিয়াতেও গুটিকতক ‘রোমান্টিক’ অনুগ্রাহী তৈরি হওয়া উচ্চস্তরের শিল্প-সাধনারই ফসল বলে মনে করা হয়। আর তা না হলেও শিল্পীর নিজস্ব আনন্দ-প্রাপ্তিই তার পরম সার্থকতার মাপদণ্ড নয় কি! সেই অর্থে চ্যাট-জিপিটি-কে ‘হ্যাট’ বলে নিজস্ব প্রাকৃতিক-বুদ্ধিমত্তার বলে লিখে যাওয়ার তাগিদ কিন্তু চিরকাল রয়ে যাবেই বলে মনে হয়।

ছবি সৌজন্য: Pixabay, Shutterstock

Author Santanu Bhadra

শান্তনু ভদ্র প্রযুক্তি জগতের মানুষ। পেশাগতভাবে তিনি একজন সফল শিক্ষাবিদও। যুক্ত আছেন আই আই এম রায়পুরের সঙ্গে। পড়ানো আর গবেষণার পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেও ভালবাসেন।

Picture of শান্তনু ভদ্র

শান্তনু ভদ্র

শান্তনু ভদ্র প্রযুক্তি জগতের মানুষ। পেশাগতভাবে তিনি একজন সফল শিক্ষাবিদও। যুক্ত আছেন আই আই এম রায়পুরের সঙ্গে। পড়ানো আর গবেষণার পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেও ভালবাসেন।
Picture of শান্তনু ভদ্র

শান্তনু ভদ্র

শান্তনু ভদ্র প্রযুক্তি জগতের মানুষ। পেশাগতভাবে তিনি একজন সফল শিক্ষাবিদও। যুক্ত আছেন আই আই এম রায়পুরের সঙ্গে। পড়ানো আর গবেষণার পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেও ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com