(Eli Cohen)
আলেকজান্দ্রিয়া ছেড়ে, ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি কেটে জাহাজ চলেছে ইজরায়েলের দিকে। জাহাজের ডেকে পূবপানে তাকিয়ে রয়েছেন এলি কোহেন। হর্ষ-বিষাদের এক বিচিত্র খেলা চলছে তাঁর মনে। একদিকে মা-বাবা-ভাই, পুরোনো বন্ধুবান্ধব, শৈশব কৈশোর কাটানো আলেকজান্দ্রিয়ার সেই সব মহল্লা গলি রাস্তা ছেড়ে আসা, অন্য দিকে ইজরায়েল-দু’হাজার বছর পর ফের ইতিহাসের পাতা থেকে জীবন্ত প্রোমিজড ল্যান্ডের হাতছানি।
শুরু হল এলি কোহেন অষ্টম পর্ব…(Eli Cohen)
আরও পড়ুন: ইতিহাসের পাতায় মিশরীয় জাতীয়তাবাদ
মোশের কথা
“ইয়াং ম্যান, ডেকে দাঁড়িয়ে একমনে কী এত ভাবছ?”
জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে সত্যিই এলি কোহেন সাত-পাঁচ ভাবছিল। তাই খেয়ালই করেনি মাঝবয়সী শক্তসমর্থ একজন কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। লোকটার কথায় তাই চমকে উঠল। পাশে তাকিয়ে দেখল জাহাজে এর সঙ্গে আগেই অল্প আলাপ হয়েছে। এঁর নাম মোশে। একসময় প্যালেস্তাইনকে তুর্কি শাসন থেকে মুক্ত করতে ইহুদি ব্রিগেডের হয়ে লড়েছে এই মানুষটি। একথা জানার পর এলি সমেত জাহাজের সব ইহুদি যাত্রীই মোশেকে সম্ভ্রমের চোখে দেখতে শুরু করেছে। সবাই যে স্বাধীন ভূমির দিকে চলেছে, তার দ্বার তো খুলেছিল এই ইহুদি ব্রিগেড। তাই মোশেকে অন্য চোখে দেখবেই জাহাজের অন্য ইহুদি যাত্রীরা। (Eli Cohen)
মোশের প্রশ্নে স্মিত হাসল এলি।
“কিছু না। এমনি দাঁড়িয়ে আছি।”
মোশে অবশ্য অত সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। “তা হঠাৎ ইজরায়েল চললে কেন?” (Eli Cohen)

এবার আর প্রশ্ন এড়াল না এলি। দৃঢ় স্বরে জবাব দিল, “আমার মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে চাই। এইসময়ে চুপচাপ নিস্ক্রীয় হয়ে বসে থাকতে পারি না।”
তরুণের এই কথা শুনে মোশের চোখ উজ্জ্বল হল। (Eli Cohen)
“একদম ঠিক। তবে সাহস আর বুদ্ধি লাগবে। যুদ্ধ চলছে তো। আমাদের প্রাণপন প্রতিরোধ করে মাতৃভূমিকে বাঁচাতেই হবে।”
সত্যি বলতে কি দ্বিধাদ্বন্ধে পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা এলির কাছে মোশের কথাগুলি যেন তার মাতৃভূমি রক্ষার আদেশ মনে হল।
ভূমধ্যসাগরের উত্তাল সুনীল জলরাশি পেরিয়ে, জাহাজ চলেছে নবজাতক ইজরায়েলের হাইফা বন্দরের দিকে। (Eli Cohen)
“১৯৪৮ সালের ১৪ মে তেল আভিভ মিউজিয়ামে দাঁড়িয়ে জিউস পিপলস কাউন্সিলের প্রধান হিসাবে ডেভিড বেন গুরিয়ন ইজরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার সঙ্গেই শেষ হয় সেদেশে ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটর মেয়াদ।”
ইজরায়েলের রক্তস্নাত আত্মপ্রকাশ
আসলে জন্মাবধি যৌবনের দ্বারপ্রান্ত অবধি আলেকজান্দ্রিয়ায় কাটানো এলিকে বাধ্য হয়েই মিশর ছেড়ে ইজরায়েল যাত্রা করতে হয়েছে। (Eli Cohen)
এমনিতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আশৈশব চেনা আলেকজান্দ্রিয়া এলির চোখের সামনে বদলে যাচ্ছিল। এলি নিজেকে মিশরীয় বলে জানতেন। কিন্তু কায়রোর দাঙ্গা যখন তার দীর্ঘ ছায়া ক্রমশ এই সুপ্রাচীন বন্দরনগরীতে পড়তে লাগল, তখন তাঁর মতো জাতীয়তাাবাদীরও মনে প্রশ্ন দেখা দিল। চারিদিক থেকে ইহুদি দোকান সম্পত্তি লুঠের খবর এমনিই কান পাতলে আসছিল। বাজারে, ট্রামে শোনা যাচ্ছিল ইহুদিদের লক্ষ্য করে ‘বিদেশি কুত্তা’, ‘ইহুদি দালাল’ গোছের নানান বিজাতীয় সম্ভাষণ। (Eli Cohen)
(এখানে উল্লেখ্য ১৮৬৩ সাল থেকে আলেকজান্দ্রিয়াতে ট্রাম পরিষেবা রয়েছে। আফ্রিকার সর্বপ্রাচীন এই ট্রাম পরিষেবার বৈদ্যুতায়ণ হয় ১৯০২ সালে। বর্তমানে বন্দরনগরীর অল রামিয়া অংশে দোতলা ট্রামও চলে, যা একমাত্র হংকং ও ব্ল্যাকপুলে দেখা যায়)
“স্বাধীন দেশ হিসাবে ইজরায়েল আত্মপ্রকাশ করে। একই সঙ্গে পুরো আরব বিশ্বজুড়ে নেমে আসে তীব্র ইহুদিবিদ্বেষের দিগন্তব্যাপী ঘনঘটা। পড়শি দেশ মিশরও এর থেকে বাদ পড়ে না।”
ক্রমশ বিষয়টা আর মুখে সীমাবদ্ধ রইল না। ইহুদি নানা আইন বলবৎ হতে লাগল। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুরু হল রাত-বিরেতে থানায় ডেকে আটকে রাখা, কোনও কারণ না দেখিয়ে গ্রেফতারি করা, বেছে বেছে ইহুদিদের দোকান সিল করে দেওয়ার মতো পুলিশি নির্যাতন। আদতে মিশরের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকড় রয়েছে পড়শি দেশ ইজরায়েলে। (Eli Cohen)
১৯৪৮ সালের ১৪ মে তেল আভিভ মিউজিয়ামে দাঁড়িয়ে জিউস পিপলস কাউন্সিলের প্রধান হিসাবে ডেভিড বেন গুরিয়ন ইজরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার সঙ্গেই শেষ হয় সে দেশে ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটের মেয়াদ। স্বাধীন দেশ হিসাবে ইজরায়েল আত্মপ্রকাশ করে। একই সঙ্গে পুরো আরব বিশ্বজুড়ে নেমে আসে তীব্র ইহুদিবিদ্বেষের দিগন্তব্যাপী ঘনঘটা। পড়শি দেশ মিশরও এর থেকে বাদ পড়ে না। (Eli Cohen)

ড্যানিয়েল গর্ডিস তাঁর ‘ইজরায়েল-আ কনসাইজ হিস্টরি অফ আ নেশন রিবর্ন’ পরিষ্কার বলেছেন, যতদিন প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড ব্রিটিশ ছত্রছায়ায় ছিল ততদিন মিশর সহ আরব দুনিয়া, কিছুটা হলেও সংযত ছিল। কিন্তু ব্রিটেন সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংযমের রাশ ছুঁড়ে ফেলে দিল আরব দুনিয়া। এমনিতেই বিদেশ থেকে দলে দলে আসা ইহুদিদের সহ্য করতে পারত না স্থানীয় প্যালেস্তিনীয়রা। তাদের মূল অভিযোগ ছিল ইহুদিরা এসে তাদের পিতৃপুরুষের জমি দখল করে নিচ্ছে।
যদিও ইহুদি বসবাসকারীরা বলছিল তারা রীতিমতো অর্থের বিনিময়ে জমি কিনেছে, কিন্তু কে শোনে কার কথা? তাই ইহুদি বসবাসকারীদের অভিযোগ ছিল, আশপাশের গ্রাম থেকে প্যালেস্তিনীয়রা সুযোগ পেলেই তাদের খামার থেকে ফসল চুরি করে, ফসল নষ্টও করে যায়। ব্রিটিশরা সব সময় যে সব কিছু সামাল দিতে পারত, বা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করত তা নয়, তবু তাদের উপস্থিতিটা আরব পড়শিদের কাছে একটা বাধা ছিল। (Eli Cohen)
ফলে ব্রিটিশরা তল্পি গোটানোর পর সেই নামমাত্র ভয়ও যে থাকবে না, বেন গুরিয়নও সেটা ভালমতই জানতেন। তাই স্বাধীনতার উৎসবমুখর রাতে সাইমন পেরেজকে (পরবর্তীকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হন পেরেজ) বেন গুরিয়ন বলেছিলেন, “আজ সবাই কত না খুশি। কাল কিন্তু রক্ত ঝরবে।” (Eli Cohen)
আরও পড়ুন: পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এলি কোহেন- বিদ্রোহ, ধ্বংস ও আগামীর স্বপ্ন
বেন গুরিয়নের শঙ্কা যথার্থ ছিল। ইজরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণার পরদিন ১৫ই মে থেকেই পড়শিরা নবজাতক ইহুদি রাষ্ট্রের নাশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্যালেস্তিনীদের হয়ে লড়তে ময়দানে নেমে পড়ে মিশর, সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, লেবানন আর ইয়েমেন। ১৯৪৯ সালের ১০ই মার্চ পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধ ‘প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধেই গাজার অনতিদূরে ফালুজা গ্রামে নিজেদের বাহিনীকে রক্ষার লড়াইয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করে পাদপ্রদীপের তলায় চলে আসেন মিশরীয় সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়নের বছর তিরিশেকের স্টাফ অফিসার গামাল আব্দেল নাসের। (Eli Cohen)
মিশরীয় ইতিহাসে এই যুদ্ধের শেষে মিশরীয় সেনাবাহিনীর গাজা ভূখণ্ড দখল করা (যা ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের পর থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইজরায়েলের ছত্রছায়ায় ছিল। ২০০৭ থেকে প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি সংগঠন হামাস ছিল ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ভূখণ্ডের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ইজরায়েলের উপর হামলার পর তেল আভিভের সঙ্গে যুদ্ধে গাজার কর্তৃত্ব হারিয়েছে হামাস। গাজা এখন ইজরায়েলি সেনার দখলে)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলেও ঐতিহাসিকরা আসল গুরুত্ব দেন নাসেরের উত্থানকে। (Eli Cohen)

আসলে নবজাতক ইজরায়েলকে ধ্বংস করার যে খোয়াব নিয়ে মিশরীয় সুলতান ফারুক যুদ্ধে যান, তার ফল হয়েছিল আদতে উল্টো। ১৯৪৭ সালে প্যালেস্তাইনকে দ্বিখণ্ডিত করে ইজরায়েল গঠনের রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগ সোচ্চার ছিল। তাই ইজরায়েল স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশর, সিরিয়াসহ পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো ইজরায়েলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু যেটা আরব জগৎ বোঝেনি সেটা হল, বেন গুরিয়ন আগেভাগেই এই যুদ্ধ আঁচ করেছিলেন। তাই স্বাধীনতার সময় ইজরায়েলের হাতে ছিল তৎকালীন অত্যাধুনিক ৩০টা স্পিটফায়ার ও চেক নির্মিত মেসেরস্মিট যুদ্ধবিমান যা যুদ্ধজয়ে বিপুল ভূমিকা নেয়। (Eli Cohen)
ফলে অল্প কয়েকটি স্পিটফায়ার, ইতালি নির্মিত মাচি, ডাকোটা নিয়ে মিশরের পক্ষে ইজরায়েলের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের বাইরে গিয়ে মিশরের কাছ থেকে বিরশেবা, নেগেভের একাংশ ছিনিয়ে নিল ইজরায়েল। হাজার দেড়েক মিশরীয় সেনার মৃত্যু হল। বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও হল। ফলে ফারুকের বিরুদ্ধে জনমানসে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে লাগল। বস্তুত এই ক্ষোভের আগুনে ফারুক প্রশাসনকে ঝলসে পরবর্তীকালে ক্ষমতা দখল করেন নাসের। (Eli Cohen)
“১৯৩৩ সালের বছর পনেরোর আলেকজান্দ্রিয়ার রস অল-তিন স্কুলের ছাত্র নাসের বিক্ষোভ মিছিলে শুধু যোগই দেননি, পুলিশের গুলিতে আহতও হন।”
আলেকজান্দ্রিয়া ও নাসেরের উত্থান
ইতিহাসের পরিহাসে এলি কোহেনের জন্মশহর আলেকজান্দ্রিয়া নাসেরেরও জন্মস্থান। আলেকজান্দ্রিয়ার উপকণ্ঠে বাকোসের কানায়োতি স্ট্রিটের একতলা বাড়িতে ১৯১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি নাসেরের জন্ম হয়। অর্থ্যাৎ আলেকজান্দ্রিয়ায় ইহুদি মহল্লায় ১৯২৪ সালে জন্মানো এলি কোহেনের চেয়ে নাসের বয়সে বছর ছয়েকের বড়। এলি কোহেন যেমন ছোট থেকেই ইহুদি জাতীয়তাবাদের পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন, নাসেরও বড় হয়েছেন মিশরীয় জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে।
১৯৩৩ সালের বছর পনেরোর আলেকজান্দ্রিয়ার রস অল-তিন স্কুলের ছাত্র নাসের বিক্ষোভ মিছিলে শুধু যোগই দেননি, পুলিশের গুলিতে আহতও হন। এর বছর দুই পরে, ১৯৩৫ সালের ১৩ নভেম্বর কায়রোতে এক বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে ফের আহত হন। পরদিন মিশরীয় কাগজ অল-গিয়াদে বড় বড় করে প্রকাশিত হল, স্কুল ছাত্র নাসের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্বদান কালে পুলিশের গুলিতে আহত। সেই প্রথম নাসেরের নাম ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হল। পরবর্তীকালে মিশরীয় রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নাসেরের কার্যকলাপ কোহেনের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। (Eli Cohen)

কারণ নাসের ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক নাম দিয়ে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত মিশরের সঙ্গে সিরিয়াকে জুড়ে দেন। এই সময়ে মিশরীয় ডিরেক্টোরেট অফ জেনারেল ইনটেলিজেন্স এর আওতায় সিরিয়ায় ইনটেলিজেন্স দেখছিলেন আব্দুল হামিদ অল সরাজ। নাসেরের কট্টর সমর্থক আব্দুল হামিদ ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক জমানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। (Eli Cohen)
যা জানা যায়, ১৯৬২ সালে যখন এলি এসে পৌঁছান দামাস্কাসে, ততদিনে অল সারাজ কায়রোতে চলে গিয়েছেন। এলি কোহেন সিরিয়ায় পা রাখেন সিরীয় ব্যবসায়ী কামাল আমিন থাবেটের ছদ্মপরিচয়ে। দহরম শুরু করেন সিরীয় সেনাবাহিনী ও রাজনীতিবিদদের উচ্চমহলে। এর মধ্যে অনেকেই অল সারাজের সঙ্গে সিরিয়া থেকে কমিউনিস্ট গুপ্তচর খুঁজে নিকেশ করার কাজ করেছে।
“এলির পাঠানো সাংকেতিক বার্তাগুলোর মর্মোদ্ধার করতে সাহায্য করে মিশরীয় গোয়েন্দারা। সিরীয় সেনা অফিসারদের এলির কথোপকথন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে বক্তব্যের মধ্যে স্ববিরোধিতা বার করে ফেলে মিশরীয় গোয়েন্দারা।”
তাই অল সারাজ চলে গেলে কী হবে, মিশরীয় ইনটেলিজেন্সের সঙ্গে, তখনও যথেষ্ট মাখামাখি ছিল সিরীয় ইনটেলিজেন্সের। ভুলে গেলে চলবে না মিশরীয় গোয়েন্দাদের নজরে আলেকজান্দ্রিয়াতে থাকাকালীন এলির মতো ইহুদি অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন। ফলে যখন কামাল আমিন থাবেটের নামে এই হঠাৎ প্রভাব বিস্তার করতে থাকা সিরীয় ব্যবসায়ীর উপর সন্দেহ শুরু হল, তখন তাঁর আলেকজান্দ্রিয়ার অতীত খুঁড়ে বার করে আনতে বিশেষ সময় লাগল না। জানা যায় প্রথমে শত অত্যাচারে মুখ না খুললেও মিশরীয়দের সাহায্যে কোহেনের মোসাদের চর হওয়া সিরিয়া বার করে ফেলে। (Eli Cohen)
এলির পাঠানো সাংকেতিক বার্তাগুলোর মর্মোদ্ধার করতে সাহায্য করে মিশরীয় গোয়েন্দারা। সিরীয় সেনা অফিসারদের এলির কথোপকথন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে বক্তব্যের মধ্যে স্ববিরোধিতা বার করে ফেলে মিশরীয় গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: গণহত্যার অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো
আদতে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে, ইজরায়েলের কাছে হারের ক্ষত তখনও মিশরীয়দের শুকোয়নি। এর উপর পশ্চিম এশিয়া জুড়ে মোসাদ অপ্রতিরোধ্য গতিতে তখন এগোচ্ছে। ১৯৫৪ সালের অপারেশন সুশান্নাহ, ১৯৫৭ সালের উল্ফগ্যাঙ লোজ মিশন, ১৯৬২ সালের অপারেশন ডামোশেলস এর মতো মোসাদ অভিযান মিশরকে চূড়ান্ত লজ্জায় ফেলেছে। তাই কোহেনকে বাগে পেয়ে মিশর বা সিরিয়া কেউই ছাড়তে চায়নি।
নাসেরের মিশর-সিরিয়া এক করার পরিকল্পনা কাল হয়ে দেখা দিল এলির জীবনে। (Eli Cohen)
অবশ্য সেসব এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত এলিকে নিয়ে ভূমধ্যসাগরের জলরাশি ভেদ করে জাহাজ চলেছে ইজরায়েলের দিকে। এলি কোহেনের জন্য ইতিহাস অপেক্ষা করছে সেই ‘প্রোমিজড ল্যান্ডে’। (Eli Cohen)
তথ্যসূত্র:
(১) ড্যানিয়েল গর্ডিস-ইজরায়েল- আ কনসাইজ হিস্টরি অফ আ নেশন রিবর্ন
(২) জ্যাক্সন হ্যালে-এলি কোহেন- দ্য স্পাই হু নিয়ারলি বিকেম আ সিরিয়ান মিনিস্টার-
(৩) এলি কোহেন- আ লাইফ অফ এসপিওনাজ অ্যান্ড স্যাক্রিফাইস
(৪) সইদ কে আবুরিশ- নাসের দ্য লাস্ট আরব
(৫) এনসাইক্লোপেডিকা ব্রিটানিকা
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
