বৃষ্টি এল, অনেকদিন পরে… দগ্ধদিনের প্রাত্যহিকতায় এতদিন সে যেন নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল কোন পরবাসে! আবার ফিরে এল হঠাৎ করেই নিজের শব্দ-স্পর্শ নিয়ে… আমাদের স্মৃতির ঘরেও যখন বৃষ্টি নামে, এমনই দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় বিস্মৃতির আবরণ, ফিরে আসে প্রিয় ধ্বনি, শব্দেরা।
কিছু মানুষ,যাঁরা চলে গেছেন না-ফেরার নীরব দেশে, তাঁদের কথাও এইভাবেই একদিন হঠাৎ ফিরে আসে। তখন বুঝতে পারি, তাঁরা আমাদের ভালবাসার অবিস্মরণীয় ধারাপাত। সঙ্গেই থাকেন, কখনও হারান না।
এভাবেই কিছুদিন আগে কথাপ্রসঙ্গে মনে এলেন মঞ্জু দে। সেইদিন থেকে আমার মনের আকাশে তিনি মেঘ হয়ে ভাসছেন, বৃষ্টি হয়ে ঝরছেন। সেই ধারাপতন বরং কিছু কথায় গাঁথা হোক এ লেখায়।
দু’একটি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ হয়তো এই আপনকথনে আসবে। আশা করি সেই দুর্বলতাটুকু নিজ গুণে মার্জনা করে নেবেন পাঠকেরা।

দুএকটা ভোর যদি চিরকালীন স্মৃতি হয়ে থেকে যায়, কেমন হয় বলুন তো? আমাদের সকলেরই জীবনে বোধহয় এমন দুএকটা অপার্থিব ভোর এসেছে। তেমন এক ভোরের কথা দিয়ে শুরু করি এই লেখা।
তখন আমি তৃতীয় শ্রেণী। কলকাতার ফার্ন রোডে আমাদের বাড়ি। নাগরিক শৈশব। ফেরিওয়ালার দ্বিপ্রাহরিক হাঁক ছাড়া মনকে ছুটির রাজ্যে উধাও হওয়ার হাতছানি আর কেউ দেয় না। এমনই এক ভোরে তিনি আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।স্টিয়ারিং তাঁর হাতে। ভোরের ঢিমে তেতালায় বাজা শহর ছাড়িয়ে একরাশ সবুজের বুক চিরে সেই আমার প্রথম দূরপাল্লার যাত্রা। শান্তিনিকেতন। আমার ভাবীকালের প্রাণের আরামের মাটিতে সেই প্রথম পা রাখা।
এই ভোরের মতো আরও অনেক আপনজনের সকাল সন্ধেকে রঙিন করে তোলাই ছিল তাঁর প্রিয় অবসর যাপন। তিনি মঞ্জু দে।

আশৈশব সময়ের নিরিখে ব্যতিক্রমী ছিল তাঁর যাপন। ১৯২৬ সালের ৭ মে বহরমপুরে মামার বাড়িতে তাঁর জন্ম। বাবা অমরেন্দ্রনাথ মিত্র আর মা কমলা দেবী। মঞ্জু দে ছিলেন তাঁদের দ্বিতীয়, তথা কনিষ্ঠ সন্তান। তাঁর এক দাদা ছিল, দিলীপ মিত্র, তিনি পরবর্তী জীবন প্রবাসেই কাটিয়েছিলেন।
জীবিকার বাইরে শখের হোমিওপ্যাথি করতেন অমরেন্দ্রবাবু, এ ব্যাপারে তাঁর সুনামও ছিল। পরে তাঁরা কলকাতায় চলে আসেন, থাকতেন কর্নফিল্ড রোডে।
মঞ্জু দে শুরু থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। পড়াশোনার বাইরে নানারকম খেলাধুলোতেও তিনি ছিলেন পারঙ্গম। এন সি সি করতেন, রাইফেলে ছিল অভ্রান্ত নিশানা। সাইক্লিং-এও দক্ষতা ছিল দেখার মতো। পরের দিকে শিখে নেন হর্স রাইডিং ও ড্রাইভিং। প্রসঙ্গত বলি, ১৯৫৪ সালে অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ও ক্যালকাটা মোটর স্পোর্টসের উদ্যোগে কলকাতা থেকে জামশেদপুর পর্যন্ত এক কার র্যালিতে তিনি অংশ নেন এবং প্রথম হন। শুধু তাই নয়, ১৯৫৯-র কমনওয়েলথ মোটরিং কনফারেন্সে তিনি ভারতের প্রথম মহিলা প্রতিনিধি হয়ে লন্ডন যান। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রানি এলিজাবেথের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল সে যাত্রায়।

ইতিমধ্যে আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন তিনি, ভর্তি হয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ক্লাসে। বিষয়, বাংলা সাহিত্য। ১৯৪৫ সাল। অল্প কয়েকদিন আগেই মুক্ত হয়েছেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর বীর সৈনিকেরা।দেশপ্রিয় পার্কে আয়োজন করা হয়েছে তাঁদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের অনুষ্ঠান। সেই মহতী অনুষ্ঠানের জন্য গড়ে তোলা হল এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সেদিনকার সেই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন মঞ্জু দে। তাঁর নেতৃত্বে এই বাহিনী গার্ড অফ অনার দেয় সেই দেশপ্রেমিকদের। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সুশীল মজুমদার। তখন তিনি ‘সিপাহীকা স্বপ্না’ নামে এক ছবি করছিলেন। সেই ছবিতে একটি বিশেষ ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন তিনি মঞ্জু দেকে। চলচ্চিত্রের আঙিনায় এই তাঁর প্রথম পদার্পণ।
সুশীল মজুমদারের ছবিটি অবশ্য বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে পর্দায় খুব অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও মঞ্জু দে’র সহজ সাবলীল অভিনয় নজর কেড়েছিল। বস্তুত স্বাভাবিক জীবনমুখী অভিনয়, যাকে আমরা ন্যাচরাল অ্যাক্টিং বলি, চলচ্চিত্রে তাকে ক্যামেরা-বন্দি করার ধাঁচটি সমকালে সেভাবে প্রচলিত ছিল না, বরং কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিলই বলা চলে। মঞ্চাভিনয়ে স্বাভাবিকভাবেই যে উঁচু পর্দার অভিনয় বা অতিনাটকীয়তা দেখা যায়, সেটি যে রুপোলি পর্দার ক্ষেত্রে অনুপযোগী, এ কথা তখনও বোধহয় সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনীনভাবে নির্ধারিত হয়নি। সেই সময়ে প্রথম যাঁরা সিনেমার পর্দায় সেই বাঞ্ছিত অভিনয়-ধারার নিদর্শন রেখেছিলেন নিঃসন্দেহে তাঁদেরই একজন ছিলেন মঞ্জু দে।

১৯৪৮ সালে অর্থনীতির খ্যাতনামা অধ্যাপক ক্ষেমেশচন্দ্র দে’র বড় ছেলে সত্যব্রত দে-র সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। পরিবারের সকলেই ঐকান্তিকভাবে চাইতেন বাড়ির বড়বউয়ের বিচিত্রমুখী গুণাবলী ঘরের চৌহদ্দিতে যেন আটকে না থাকে। (প্রসঙ্গত বলি, তিনি দেশি বিদেশি সব ধরনের রান্নাতেও অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন।) পারিবারিক উৎসাহেই অভিনয়ের জগতে পাকাপাকি পা রাখেন তিনি। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে পরিচালক হেমেন গুপ্তর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি তখন ‘৪২’ ছবিটির পরিকল্পনা করছেন। মঞ্জু দে’কেই ছবির নায়িকার ভূমিকায় নির্বাচিত করলেন তিনি। নায়ক ছিলেন প্রদীপকুমার। একটি বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন শম্ভু মিত্র। আর ছিলেন বিকাশ রায়। ছবির শুটিং শুরু হয় ১৯৪৯-এ, তার এক বছর পর ১৯৫০ সালে ছবি রিলিজড হয়।
এ ছবির প্রজেকশন দেখেই একে একে দেবকী কুমার বসু, অজয় কর, কালিদাস বটব্যাল ও নরেশ মিত্র তাঁদের ‘রত্নদীপ’, ‘জিঘাংসা’, ‘পলাতক’ ও ‘নিয়তি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন মঞ্জু দেকে। ছবিগুলি পরপর প্রেক্ষাগৃহে আসে এবং উচ্চ প্রশংসিত হয় তাঁর অভিনয়।
সহজাত দক্ষতায় অভিনয়ের মাধ্যমে নানারকম চরিত্রকে দর্শকদের সামনে বিশ্বস্তভাবে অনায়াসেই ফুটিয়ে তুলতে পারতেন মঞ্জু দে। ফ্লোর জোন নির্বাচন, সঠিক এঙ্গেলে ক্যামেরার মুখোমুখী হওয়া ইত্যাদি টেকনিক্যাল বিষয়গুলি অতি দ্রুত রপ্ত করে নিয়েছিলেন তিনি। আমার তো মনে হয়, সে সময়ের ক্যামেরা পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক কোন মাপের মুখভঙ্গি বা শরীরী ভাষা দাবি করছে, সেটাও তিনি ভাবতেন। কোনও ম্যানারিজম ছিল না তাঁর। কণ্ঠস্বরে ছিল তীক্ষ্ণতা ও মাধুর্যের এক স্বাভাবিক সমাহার, উচ্চারণ ছিল শুদ্ধ এবং সেই স্বরের ওঠানামা স্বাভাবিকভাবেই নাট্য-মুহূর্তের দাবি মেটাত। এক কথায় অভিনয়ে আধুনিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’ বা যাত্রিক পরিচালিত ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের কথা বলা যেতে পারে। ঠিক এই কারণেই শেষ বয়সে এক ঝাঁক নবীন ও তরুণ শিল্পীদের পাশাপাশি তিনি যখন তরুণ মজুমদারের ‘পথভোলা’ ছবিতে অভিনয় করেন, তাঁকে একটুও বেমানান লাগেনি। তাঁর সমকালীন নায়কদের মধ্যে প্রদীপকুমার, বিকাশ রায়, উত্তম কুমার, অসিতবরণ, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধামোহন ভট্টাচার্য প্রমুখ সকলের সঙ্গেই তিনি ছিলেন মানানসই অথচ স্বকীয়তায় দীপ্ত।

সূচনাপর্বেই নিজের অভিনয় প্রতিভার উৎকর্ষ প্রমাণের পর তাঁকে আর থেমে থাকতে হয়নি। একের পর এক বিভিন্ন ছবিতে নানারকম চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন। কাজ করেছেন নানান পরিচালকের সঙ্গে, তার মধ্যে সুধীর মুখোপাধ্যায়, বিকাশ রায় প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তপন সিংহের চারটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মঞ্জু দে, তার মধ্যে দুটি একটির সহ-প্রযোজকও ছিলেন তিনি। আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে এসব তথ্য অনায়াস লভ্য, তাই বিশদে বলা একরকম বাহুল্য হবে বলেই মনে হয়।
অভিনয় ছাড়াও তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গৌরবগাথা শোনা যাক। অসামান্য আত্মবিশ্বাসী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন মঞ্জু দে। তিনিই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মহিলা পরিচালক। ছবির নাম ‘স্বর্গ হতে বিদায়’। ও হেনরির একটি ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি এই ছবিটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। এ ছবির একটি গান ‘আমি চাই ছোট্ট একটি বাসা’ খুবই সুপ্রযুক্ত ও জনপ্রিয় হয়েছিল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন গায়িকা। এরপর ১৯৭৪-এ ‘অভিশপ্ত চম্বল’ নামে আরেকটি ছবি পরিচালনা করেন। তিনিই ছিলেন এ ছবির প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। এই ছবি তৈরির সময় মধ্যপ্রদেশের পুলিশ প্রধানের কাছে তিনি চম্বল উপত্যকায় শুটিংয়ের অনুমতি চেয়ে প্রথমে প্রত্যাখ্যাত হন। কারণ কোনও মহিলাকে ওই বিপজ্জনক জায়গায় শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়ার ঝুঁকি তারা নিতে চাননি। তখন মঞ্জু দে তাঁর একটি জীবনপঞ্জি পাঠান সেখানে। তাঁকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। স্বাভাবিকভাবেই তারপর তিনি শ্যুটিংয়ের অনুমতি তো পেয়েছিলেন বটেই, উপরন্তু তাঁকে নিরাপত্তা দিতে সরকারি তরফে সারাক্ষণের জন্য চারজন সশস্ত্র প্রহরীও নিযুক্ত করা হয়।

তাঁর অভিনয়প্রীতি নতুন নতুন মাধ্যমের দিকে তাঁকে আকর্ষণ করেছে বারবার। সে সময় বেতারনাটক ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুধুমাত্র কণ্ঠস্বরের নিয়ন্ত্রণে সেই নাটককে মনোগ্রাহী করে তুলতে হত। এ রকম বহু বেতারনাটকে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৬৩ সালে পেশাদার প্রসেনিয়াম মঞ্চে আসেন মঞ্জু দে। টানা দু’বছর স্টার রঙ্গমঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে ‘তাপসী’ নাটকে অভিনয় করেন। এখানে তাঁর সহ-অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তারপর বিশ্বরূপায় করেন ‘চৌরঙ্গী’, মিনার্ভাতে ‘ব্যভিচার’ নাটকেও অভিনয় করেন। সব ক্ষেত্রেই তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। এরপর তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ ঘটে যাত্রামঞ্চে। ১৯৭৫ -৭৬ সাল নাগাদ নিউ বীণাপাণি অপেরার ‘পসারিণী’তে প্রথম অভিনয়, তারপর একে একে জনতা অপেরার ‘ফুলন দেবী’, ক্যালকাটা অপেরার ‘অভিশপ্ত চম্বল’। এই শেষোক্ত পালাটিতে তিনি অভিনয় ছাড়া পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তাঁর অভিনীত শেষ পালাটি ছিল বর্ণপরিচয় প্রযোজিত ‘ইন্দিরা’। এই যাত্রাটির সুনাম বহুদূর বিস্তৃত হয় এবং তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সামনে অভিনীতও হয়।

বাইবেল বলে, ব্যক্তি যে গুণাবলীতে ভূষিত, তার সদ্ব্যবহার না করা অন্যায়। না, মঞ্জু দে তা করেননি। প্রায় তিন দশক সময়কাল জুড়ে তিনি যুক্ত থেকেছেন অভিনয় শিল্পের সঙ্গে। কাজের পাশাপাশি সহকর্মীদের আনন্দে-যত্নে রাখার চেষ্টাও করে গেছেন নিরন্তর। প্রিয়জনেদের ভরসাস্থল হয়ে থেকেছেন আজীবন।
তাঁর এই কর্মনিষ্ঠা নানা গৌরব তুলে দিয়েছে তাঁর হাতে। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের তরফ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। ১৯৫২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আবার জাকার্তায় ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে দেশের তরফে হাজির ছিলেন তিনি।

এই কর্মব্যস্ততার আড়ালে মঞ্জু দে’র ব্যক্তিগত পরিসরে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে ততদিনে। পরিবারে মৃত্যু হানা দিয়েছে। চাকরিসূত্রে নানাজন নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছেন। স্বামী অসুস্থ। তাঁরা নিঃসন্তান। স্বাস্থ্য ভেঙেছে, বয়সও নিজের নিয়মে বেড়েছে। নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরেছে নিঃশব্দে।
তিনি টালিগঞ্জে এক সুদৃশ্য বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এছাড়া নিরিবিলিতে মাঝে মাঝে থাকার উদ্দেশ্যে কল্যাণীতেও একটি বাড়ি করেছিলেন তিনি। সেটি তাঁর দীর্ঘদিনের সচিবকে দান করে দিয়েছেন। ইউরোপ গিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে, কিন্তু এ দেশেই ছিল তাঁর শান্তির আবাস। ক্রমে সেই শান্তিও যেন পলাতক হয়ে পড়ে। এমনই এক মানসিক টালমাটাল সময়ে এক গুরুর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সেই দুর্বল সময়ে তিনি ঐ গুরুর দ্বারা প্রভাবিত হন এবং ১৯৮২তে দীক্ষা নেন। তাঁর মতো বিজ্ঞানমনস্ক, সচেতন ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এ ঘটনা যেন ব্যাখ্যাতীত মনে হয়!
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সেই গুরুকেই তাঁর যথাসর্বস্ব দান করে যান মঞ্জু দে। ভগ্ন স্বাস্থ্য ও বার্ধক্যজনিত কারণে ১৯৮৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বরে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
তাঁর বইয়ের সেলফে পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিল- ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘Living Biographies of the Great Poets’, ‘Discovery of India’, ‘Complete Works of Shelley’, ‘Wartime Stories’ সহ আরও কত বই, তালিকা বাড়ালাম না। তাঁর সংগ্রহের এই বৈচিত্র্য বোধহয় তাঁর বহুমুখী আগ্রহের ইঙ্গিত দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটা ঋণ স্বীকার করি। এই বইগুলির উত্তরাধিকার তিনি আমাকেই দিয়ে গেছেন।
তাঁর বইয়ের সেলফে পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিল- ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘Living Biographies of the Great Poets’, ‘Discovery of India’, ‘Complete Works of Shelley’, ‘Wartime Stories’ সহ আরও কত বই, তালিকা বাড়ালাম না। তাঁর সংগ্রহের এই বৈচিত্র্য বোধহয় তাঁর বহুমুখী আগ্রহের ইঙ্গিত দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটা ঋণ স্বীকার করি। এই বইগুলির উত্তরাধিকার তিনি আমাকেই দিয়ে গেছেন।
অনন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী ছিলেন মঞ্জু দে, তার তরঙ্গ যেন আজও অনুভূত হয়।
“বৃষ্টি এখনও পড়ছে, পড়েই চলেছে…”
*লেখক সম্পর্কে মঞ্জু দে’র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, সেই সূত্রেই তাঁর এই স্মৃতিচারণ…
ছবি সৌজন্য: Facebook, লেখকের ব্যক্তিগত অ্যালবাম
আত্মপরিচয়ে ছাত্র, জীবিকা অধ্যাপনা। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। ভালোবাসেন শিক্ষার্থী যৌবনকে, বই পড়তে, মূলতঃ শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস আর হ্যাঁ, খেলাধুলা। অঙ্কটা কম জানেন বলে দাবি করেন, কিন্তু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের গণিত বুঝে নেওয়ার আগ্রহ প্রবল।
One Response
হ্যাঁ।অভিশপ্ত চম্বল ছিলো মঞ্জু দে পরিচালিত আরেক ছবি।পুতলী বাই এর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়করেছিলেন।এ ছাড়া পরিচালনা করেছিলেন সজারুর কাঁটা।