Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

প্রবাসীর নকশা: পর্ব ২৯

সিদ্ধার্থ দে

ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩

Cricket world cup and Indian immigrants
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

আগের পর্ব পড়তে: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮] [১৯] [২০] [২১] [২২] [২৩] [২৪] [২৫] [২৬] [২৭] [২৮]

জন্মভূমি না কর্মভূমি : কার দলে আমি?

সপ্তাহখানেক আগের কথা। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, পরদিন সন্ধ্যায় বিশ্বকাপের ফাইনালে (Cricket world cup) ভারত কীভাবে ভয়ংকর অস্ট্রেলিয়ার মোকাবিলা করবে সেই চিন্তায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে WhatsApp-এ সঞ্জয়ের বার্তা পেলাম। লন্ডন-নিবাসী বিবিসির সাংবাদিক সঞ্জয় দাশগুপ্ত প্রশ্ন রেখেছে— সিদ্ধার্থদা, আজ আপনার সমর্থন কার দিকে: জন্মভূমি না কর্মভূমি?

সঞ্জয়ের সঙ্গে আমার বছর দুয়েক আগে পরিচয় বেশ অদ্ভূতভাবে। আমার একটি লেখা নিয়ে ফোনে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল সে। জমিয়ে আড্ডা হয়েছিল নির্ধারিত দিনে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্নাতক হলেও কর্মজীবন কেটেছে সাংবাদিকতা করে। বেশ কয়েক বছর আনন্দবাজার গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকার পর গত পঁচিশ বছর বিবিসিতে। গল্পের স্টক অফুরান, দুর্ভাগ্যবশত সেগুলি এই কলামে লেখা যাবে না গোপনীয়তার কারণে।

সাংবাদিকতার সাথে সাথে কয়েকটি কৌতূহলোদ্দীপক উপন্যাসও লিখেছে সঞ্জয়। উদ্যোগ নিয়ে আমাকে ক্যানবেরাতে পাঠিয়েছে দুটি বই। রীতিমতো সুখপাঠ্য।

প্রথম আলাপের পর মাঝে মাঝেই সময় করে আন্তর্মহাদেশীয় আড্ডা হয়। নানা বিষয়ে। সঞ্জয় আবার রীতিমতন খাদ্যানুরাগী— ইংরেজিতে যাকে বলে foodie আর কী! কলকাতার অলিগলির নানা রেঁস্তরার খবর রাখে। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে দু’জনেই দেশে যাব, ইচ্ছে আছে উত্তর কলকাতায় ‘জগন্মাতা ভোজনালয়’ নামে একটি পাইস হোটেলে দুজনে লাঞ্চ করার একদিন।

সামাজিক মাধ্যম এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি দূরকে সত্যিই নিকট করেছে। আমার এই হাবিজাবি লেখার সুবাদে কত গুণী মানুষের সঙ্গেই না পরিচয় হল!

BBC Logo

সঞ্জয়ের প্রশ্নের উত্তরটা সোজাসাপটা। একই প্রশ্ন অফিসের দৈনিক Stand-Up- (এই শব্দবন্ধটি বেশ কয়েকবছর পর সাময়িকভাবে কর্মক্ষেত্রে ফেরার পর শিখেছি। Work From Home-এর জমানায় দিনের শুরুতে বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছেটানো কর্মীদের একটি ১৫ মিনিটের মিটিং-এর নাম হল Stand-up প্রাথমিক সৌহার্দ্য বিনিময়ের পর কাজের বিষয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়, একটু আধটু অন্য আলোচনাও চলে) কেটলিন প্রশ্ন করেছিল। আমি যে বিভাগে কাজ করি সেটির দায়িত্বে আছে বছর চল্লিশের এই সুশ্রী মহিলা। দুই পুত্রের জননী সপ্রতিভ কেটলিন উচ্চশিক্ষিতা এবং অত্যন্ত ভদ্রসবচেয়ে বড় গুণ অধস্তন কর্মীদের স্বচ্ছন্দ রাখার ক্ষমতা। যাইহোক, রাজনৈতিক সততা মেনে উত্তর দিয়েছিলাম : I sort of sit on the fence। বুদ্ধিমতী কেটলিন হেসে বলেছিল: that’s a very diplomatic answer!

মজার ব্যাপার হল: ৮০ শতাংশ অজিদের মতো কেটলিনের ক্রিকেটে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। বয়সকালে প্রতিযোগিতামূলক নেটবল খেলেছে। অন্যান্য অজি সহকর্মীদের মধ্যে কেউ রোয়িং করে, কেউ স্কিয়িং করে, আর অনেকেই ওই মারদাঙ্গা রাগবি খেলে।

বিশ্বকাপ চলাকালীন ভারতের হাটেবাজারে, অফিসে, পাড়ার চায়ের দোকানের আলোচনার সিংহভাগ জুড়ে ছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের কথা জানি না, ঘুমন্ত ক্যানবেরাতে ভারতীয় তথা উপমহাদেশীয় সম্প্রদায় বাদ দিলে বোঝার উপায় ছিল না এত বড় একটা প্রতিযোগিতা চলছে। 

cricketer-silhouette
ভারতে আলোচনার সিংহভাগ জুড়ে তখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ

জীবনের ৩৩ বছর এই দেশে কাটালেও আজও আমি ১০০ শতাংশ ভারতের পক্ষে।

কিছু মানুষ half chance পেলেই আমাকে গালমন্দ করে। ক্রিকেটে সমর্থনের প্রসঙ্গে হয়তো বলবে, লোকটা পাক্কা বিশ্বাসঘাতক। গরিব দেশের করদাতার পয়সায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সাহেবদের দেশে গোলামি করছে। সারাজীবন ডলার কামিয়েও অকৃতজ্ঞ লোকটা তেড়েফুঁড়ে ভারতকে সমর্থন করে। উত্তরে বলব: কী আর করি বল— জন্ম যে মীরজাফরের বঙ্গে!

কেউ কেউ আবার ভারতে বাস করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের সঙ্গেও তুলনা করতে পারেন। মিথ্যে বলব না, বারকয়েক আমিও সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতের পতাকা উড়িয়েছি। মূলস্রোত অজিদের অব্যক্ত প্রতিক্রিয়া অনুমেয়়।

***

আসলে আমার মতো একটা স্যুটকেস সম্বল করে সম্পূর্ণ অন্য সংস্কৃতির এক দেশে জীবন শুরু করা মানুষদের সঙ্গে উদ্বাস্তুদের মনোভাবের খুব একটা তফাত নেই। একদলের লক্ষ্য মোহনবাগানকে ফুটবলে হারানো, আমাদের চূড়ান্ত আনন্দ অস্ট্রেলিয়াকে ক্রিকেটে হারানো। ওদের দেশে গিয়ে হারালে তো সোনার সোহাগা! এই আচরণের সঙ্গে যুক্তি বা কৃতজ্ঞতাবোধের কোনও সম্পর্ক নেই।

ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সাম্প্রতিক সাফল্যের কারণে মূলস্রোত অজিরা হালে আমাদের একটু হলেও অন্য চোখে দেখে। মানে দেখতে বাধ্য হয়। মাসখানেক আগে প্রিয়া নাম্নী এক দক্ষিণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী ছুটিতে যাওয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট বেশ কিছুদিনের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল। গত শতাব্দের নব্বইয়ের দশকে এরাই আমাদের একদম অন্য চোখে দেখত, ক্ষেত্রবিশেষে রীতিমতো বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণও করত কেউ কেউ। ক্রিকেট মাঠে উগ্র অস্ট্রেলিয়া-বিরোধিতা কিছুটা ছিল এই ধরনের আচরণের (বলতে দ্বিধা নেই, একধরণের victim mentality-ও কাজ করত) প্রতিক্রিয়া। থাকতে থাকতে এই উগ্রতাটা অবশ্য অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে।

Sydney Cricket Ground
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড

কুণ্ঠাহীনভাবে স্বীকার করব, কিছু অপ্রাপ্তি সত্ত্বেও দেশটা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। কখন যেন পাতানো দেশটাকে ভালবেসে ফেলেছি। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা প্রাপ্তি ছাড়াও দেশটাকে ভালবেসে ফেলার নানা কারণ আছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন নিশ্চিন্তে জীবন উপভোগ করা খুব বেশি দেশে সম্ভব নয়। আমেরিকা এবং ইউরোপে জীবন সংগ্রাম অনেক কঠোর।

মেয়েদের বিশ্বকাপ চলাকালে ভীষণভাবে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য কামনা করেছিলাম। বছরখানেক আগে জোফ্রা আর্চারের বলে মাথায় আঘাত পেয়ে স্টিভ স্মিথ মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় রীতিমতো উদ্বিগ্নও হয়ে পড়েছিলাম।
তবুও পারস্পরিক সংঘর্ষে জন্মভূমি অনেক এগিয়ে জীবনের অর্ধেকটা কাটানো দেশটার চেয়ে।

বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রায় প্রতি রাতেই রাত তিনটে অবধি বোকা বাক্সের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ভারতের অশ্বমেধের ঘোড়া ফাইনালের আগে অবধি অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছিল।

Steve Smith
স্টিভ স্মিথ

এই অস্ট্রেলিয়দের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য— এরা হারার আগে হারতে জানে না। জীবনের সব দিকেই। আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসটি একটি উদাহরণ। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এরা ভয়ংকর।

টানা বারোটি ম্যাচ (এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচ ধরে) জেতার পর ফাইনালটা ছিল তেরো নম্বর খেলা। কে যেন বলছিল ১৩ সংখ্যাটা খুব একটা শুভ নয়। তাই ভয়ে ভয়েই ছিলাম। আমার আশঙ্কাটাই বাস্তবে পরিণত হল ফাইনালে। অস্ট্রেলিয়া সহজেই হারালো ভারতকে।

এই নিয়ে ছ’বার বিশ্বজয়ী। এর পরে ভারত দুবার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবার। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং ইংলন্ড একবার করে। ফাঁকতালে এক আধবার সেরা হওয়া যায়। ছ-ছ বার নয়।

আশাভঙ্গের হতাশা প্রশমিত হতে বেশ কয়েকদিন লাগল। নৈর্ব্যক্তিক ভাবে এই বিপর্যয়ের কিছু কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম তারপর।

ক্রিকেট বড় জটিল খেলা। জটিলতাগুলো আরও বেশি প্রকট হয় রাতের ম্যাচে। সূর্যাস্তের পর ফ্লাডলাইটের আলো, শিশিরপাত পরিস্থিতিটা অনেকটাই পালটে দেয়। এই কারণে টসে জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টসে হেরে ভারত শুরু থেকেই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়রা পিচের চরিত্র সঠিকভাবেই জরিপ করে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল।

দীর্ঘদিন এদেশে বাস করছি। পুত্রকেও বালক বয়সে স্থানীয় ক্লাবে ভর্তি করে দিয়েছি। শুরুর দিকের, মানে পাঁচ থেকে সাত বছর অবধি খেলাটা স্রেফ মজার জন্য। নাম ‘Have a Go’ বাবা মায়ের তত্ত্বাবধানে শিশুরা খেলার নিয়মকানুন শেখে, প্রাথমিক দক্ষতা আয়ত্ব করে। অনেক শিশুই বুঝে যায় ক্রিকেট খেলাটা তাদের জন্য নয়। তারা অন্য কোনও খেলায় মনোনিবেশ করে।

এর পরের ধাপে, মানে সাত আট বছর বয়স থেকে অল্প অল্প প্রতিযোগিতামূলক খেলা শুরু হয়। শনি রবিবার বিভিন্ন বালক বালিকাদের ক্লাবের মধ্যে ম্যাচ হয়। ক্যানবেরায় ছড়ানোছেটানো কমপক্ষে কুড়িটি মাঠে পুত্রকে নিয়ে গেছি। অভিভাবকরাই আম্পায়ার, কোচস্কোরার এবং মাঠকর্মী। কখন যেন ছেলেমেয়েরা ক্রিকেটের সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলি শিখে যায়। এই প্রক্রিয়ায় একসময়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অংশ নেওয়া বাবা-মায়ের অবদানও কম নয়।

Australia children cricket
বাবা মায়ের তত্ত্বাবধানে শিশুরা খেলার নিয়মকানুন শেখে

টেকনিকাল দক্ষতার সাথে সাথে মানসিক শক্তি এবং দলগত সংহতির উপর অল্প বয়স থেকেই জোর দেওয়া হয়। এদের সংস্কৃতির একটা বিশাল অঙ্গ mateship কথাটার আক্ষরিক অর্থ বন্ধুত্ব হলেও আদতে সম্পর্কটা অনেক গভীর। অজিরা শব্দটিকে উচ্চারণ করেমাইটবলে। মাইটদের জন্য এরা জান লড়িয়ে দেবে। ব্যাপারটা চলে আসছে সেই উপনিবেশের শুরুর দিনগুলো থেকে। কয়েদিরা কর্তৃপক্ষের বেত্রাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থাতেও কয়েদি বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতেন না। একই আচরণ খেলার মাঠেও দেখা যায়, কয়েকজন ব্যর্থ হলেও বাকিরা পরিস্থিতি সামাল দিতে আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যায়। এই Aussie Spirit ব্যাপারটার গোপন অনুরাগী (secret admirer) ছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। সৌরভের প্রচেষ্টাতেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছুটা এই আগ্রাসী আচরণ এসে গেছে, তারাও শ্বেতাঙ্গ দেশগুলির চোখে চোখ রেখে লড়াই করে বর্তমানে। 

দল যখন ঝিমিয়ে পড়েছে কোচকে চেঁচিয়ে বলতে শুনেছি: keep the talk up, মানে পরস্পরকে অনুপ্রাণিত রাখো কথার মাধ্যমে। দরকার পড়লে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের গালমন্দও কর— যেটার আরেক নাম sledging।

ফিরে আসি বিশ্বকাপ ফাইনাল প্রসঙ্গে। সেদিন অস্ট্রেলিয়া অসাধারণ ফিল্ডিং করেছিল। মাছি গলতে পারছিল না। নিশ্চিত চারের শটে বড়জোর এক রান পাচ্ছিল ভারত, তৎপর ফিল্ডিং-এর জন্য। ট্র্যাভিস হেড যে অবিশ্বাস্য ক্যাচটি ধরে রোহিত শর্মাকে ফেরত পাঠালেন তাতেই ভারতের ছন্দপতনের শুরু। এই ফিল্ডিং-এর খুঁটিনাটি বাচ্চা বয়স থেকেই শেখানো হয় নানারকম অভিনব পদ্ধতিতে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। অনুশীলনের সময়ে দেখেছি, কয়েক ওভার অন্তর কোচকে ফিল্ডিং-এর পরিবর্তন করতে। প্রতিটি পজিশনেই অন্যরকম দক্ষতার প্রয়োজন। ডিপ থার্ডম্যানে ক্যাচ ধরার দক্ষতা বা রান বাঁচানোর কৌশলের সঙ্গে স্লিপ বা কভার পয়েন্টের দক্ষতার বিস্তর পার্থক্য। কচি বয়স থেকেই অজিরা বিভিন্ন পজিশনে ফিল্ডিং করার সূক্ষ্ম দক্ষতাগুলি রপ্ত করে নেয়।

এছাড়া আছে রান নেওয়ার টেকনিক। অন্যান্য দল যে শটে এক রান নেবে অজিরা সেখানে হাসতে হাসতে দু রান নেয়। দু রানের জায়গায় তিন রান। Athleticism-এর একটা বড় অবদান আছে এই অতিরিক্ত রান চুরি করে নেওয়ার অন্তরালে।

যাইহোক, ফাইনালে ফিল্ডিং-এর সময়ে অজিরা কমপক্ষে তিরিশ রান আটকে দিয়েছিল, আর ব্যাট করার সময়ে অন্তত দশ পনেরোটি অতিরিক্ত রান নিয়েছে, প্রথম রানটা তাড়াতাড়ি নিয়ে। ৫০টি অতিরিক্ত রানই অজিদের সাফল্যের পথ সুগম করেছিল।

India Vs Australia

আমার সচিন সৌরভদের নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখে বেন ফিলিপ্স নামে এক সহকর্মী প্রশ্ন করেছিল, তোমরা এই ক্রিকেটারদের নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কর কেন বল তো? কুইন্সল্যান্ডে আমার পাশের বাড়িতে গ্রেগ চ্যাপেল থাকতেন, আসা যাওয়ার পথে দেখা হয়ে গেলে সৌহার্দ্য বিনিময় ছাড়া কোনদিনও বাক্যালাপ অবধি হয়নি।

সমর্থকদের অত্যুৎসাহ এবং প্রত্যাশার চাপ ভারতের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে। লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে ভারতীয় ক্রিকেটাররা এই মানসিক চাপ সামাল দিতে পারেননি, যেটার প্রভাব পড়েছিল খেলায়। তুলনায় অজিরা অনেক চাপমুক্তভাবে খেলেছিল। ফাইনালে হারলেও সামাজিক মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের কাটা-ছেঁড়া হবে না। পরদিন সকালে পাড়ার ক্যাফেতে নিশ্চিন্তে ব্রেকফাস্ট করতে পারেন, কেউ বিরক্ত করবে না।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার মনে হয় দেশটার সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য মানুষের খাওয়া পড়ার চিন্তা নেই। দরিদ্রতম ঘরের সন্তানরাও পুষ্টিকর খাবার খেয়েই বড় হয়। একনাথ সোলকার, যশস্বী জয়সওয়াল বা বিনোদ কাম্বলির মতো গরিব ঘর থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার এদেশে বিরল।

শেষে বলব, এই ব্র্যাডম্যানের দেশের  ক্রিকেট প্রশাসন খেলাটা বোঝেন। কয়েকটি উদাহরণ দেব। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ অবধি অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয় দলের কোচ ছিলেন জন বুকাননখেলোয়াড় হিসাবে যিনি ছিলেন অতি সাধারণ। টেস্টে অভিষেকের সময়ে মারনাস লাবুশান মাত্র কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছিলেন, গড় ছিল ৩০ এই লাবুশানই বিশ্বকাপ ফাইনালে উতরে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। এদেশে একটা কথা খুবই চলে: horses for courses মানে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। পাঠকের হয়তো মনে থাকবে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে কুনেম্যান এবং মারফি নামে দুই স্পিনারকে আনা হয়েছিল। পরে এদের নাম শোনা যায়নি বিশেষ। কিন্তু ভারতের ঘূর্ণি উইকেটে এই দুই অনভিজ্ঞ বোলার রীতিমতো সাফল্য পেয়েছিলেন। ফাইনালে সূর্যকুমারকে কার্যত অকেজো করে দেওয়াও এই খেলা বোঝার আরেকটি উদাহরণ। 

অনেক কিছু লিখলাম। তর্কসাপেক্ষ হলেও এতটা কথা বলবঅস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ক্ষমতা রাখে কেবল ভারত। একবার নয়, পরপর দুটি সিরিজে কাজটা করেও দেখিয়েছে ভারত। 

*ছবি সৌজন্য: FlickrWikipedia, Vector stock

*পরবর্তী পর্ব প্রকাশ পাবে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

Siddhartha Dey

জন্ম ১৯৫৫ সালে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। জীবনের অর্ধেকটা প্রবাসে কাটালেও শিকড়ের টান রয়েই গেছে। অধিকাংশ স্বপ্নের ভাষা আজও বাংলা-- প্রেক্ষাপট কলকাতা। আই আই টি খড়গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক হলেও অবসরজীবন জুড়ে আছে বাংলা সাহিত্য। আর টুকটাক কিছু লেখালেখি।

Picture of সিদ্ধার্থ দে

সিদ্ধার্থ দে

জন্ম ১৯৫৫ সালে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। জীবনের অর্ধেকটা প্রবাসে কাটালেও শিকড়ের টান রয়েই গেছে। অধিকাংশ স্বপ্নের ভাষা আজও বাংলা-- প্রেক্ষাপট কলকাতা। আই আই টি খড়গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক হলেও অবসরজীবন জুড়ে আছে বাংলা সাহিত্য। আর টুকটাক কিছু লেখালেখি।
Picture of সিদ্ধার্থ দে

সিদ্ধার্থ দে

জন্ম ১৯৫৫ সালে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। জীবনের অর্ধেকটা প্রবাসে কাটালেও শিকড়ের টান রয়েই গেছে। অধিকাংশ স্বপ্নের ভাষা আজও বাংলা-- প্রেক্ষাপট কলকাতা। আই আই টি খড়গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক হলেও অবসরজীবন জুড়ে আছে বাংলা সাহিত্য। আর টুকটাক কিছু লেখালেখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com