Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ডিজিটাল মানুষ কি আদতে আরেক ডার্ক নাইট?

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

জুন ২৫, ২০২৪

Spambot
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

ভুবনডাঙার চিঠি

স্প্যামবট(Spambot), লাইকবট, আর স্টকারের মধ্যে মিল কী?

এগুলো কল্পবিজ্ঞানের কোনও রোবটের নাম নয়। তিনটিই ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের তিনটি রূপ।

স্প্যামবট যেমন অন্যের অ্যাকাউন্টে বা গ্রুপে বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী থাকে। সাধারণ ভাবে এরা কোনও প্রশ্নেরও উত্তর দেয় না। মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই তৈরি হয় এটি।

লাইকবট অ্যাকাউন্টগুলো আবার শুধুই লাইক দিয়ে বেড়ায়। শুনলে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে এদের ‘লাইক’ কেনাও যায়।  অর্থ্যাৎ ‘লাইক’ দেওয়ার আড়ালে ব্যবসা এরাও করে।

স্টকার অবশ্য গোপন অনুসরণকারী। ডিজিটাল দুনিয়ায় নির্দিষ্ট কেউ কী করছে সেটা খেয়াল রাখাই তার মুখ্য কাজ। এবং অবশ্যই স্বপরিচয় গোপন রেখে তিন ধরনের অ্যাকাউন্টই খোলা হয়।

অর্থ্যাৎ নিজস্ব সত্ত্বাকে ছাড়িয়ে ডিজিটাল সত্ত্বার প্রকাশ হচ্ছে এখানে। ইতিহাস বলে সব সময় কিন্তু ছল চাতুরী চলে না। কোনও কোনও সময় ডিজিটাল সত্ত্বার কাছে হার মানতেও হয় নিজস্ব সত্ত্বাকে।

এমনই এক ঘটনা এটা যেখানে পাক্কা ষোলো বছর গা ঢাকা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ডিজিটাল পদচিহ্ন ঠিক প্রকাশ করে দিয়েছিল আসল পরিচয়।

কী হয়েছিল ঘটনাটা?

ফিনিক্সের অদূরেই ঘটল দুর্ঘটনাটি। ভোর রাতের আধো অন্ধকারে ঠিকমতো ঠাওর করতে না পেরে রাস্তার ধারের একটা ইলেকট্রিক মিটার বক্সে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারল গাড়িটা। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গেল গাড়িতে। আদান কোনওমতে বাঁচলেও সেই আগুনে প্রাণ হারাল আদানের বান্ধবী।

২০০২ সালের শেষ রাত। সারা রাত পার্টি করে ঝড়ের বেগে গাড়ি চালিয়ে মার্কিন রাজ্য আরিজোনার ফিনিক্স শহরে ফিরছিল বছর ষোলোর আদান পেরেজ হুয়ের্তা। পাশের আসনে বসা বছর উনিশের বান্ধবীকে নিয়ে।

ফিনিক্সের অদূরেই ঘটল দুর্ঘটনাটি। ভোর রাতের আধো অন্ধকারে ঠিকমতো ঠাওর করতে না পেরে রাস্তার ধারের একটা ইলেকট্রিক মিটার বক্সে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারল গাড়িটা। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গেল গাড়িতে। আদান কোনওমতে বাঁচলেও সেই আগুনে প্রাণ হারাল আদানের বান্ধবী।

তারপর যথারীতি থানা পুলিশ পর্ব শুরু হয়ে গেল। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখল আদানের রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা নিয়মমাফিক যা হওয়া উচিত তার দ্বিগুণ।

শুরু হল আদানের বিচারপর্ব। বছর ঘুরে ২০০৩ সালে যেদিন এই মামলার রায়ের দিন, সেদিন থেকে আদান বেপাত্তা। কোত্থাও তার কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না। ভোজবাজির মতো সে অদৃশ্য।

বছরের পর বছর ঘুরে যায়। আদানের আর কোনও খোঁজই মেলে না। মানুষটা যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে। একসময় পুলিশও প্রায় হাল ছেড়ে দিল।

কিন্তু সবাই হাল ছাড়লেও কিন্তু ফিনিক্সের পূব দিকের উপনগরী চ্যান্ডলারের এক গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার রণে ভঙ্গ দেননি। বরং বিগত বছরের শেষভাগ থেকে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে আদানের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের বিভিন্ন পোস্ট আর মন্তব্য খতিয়ে দেখতে শুরু করলেন। উদ্দেশ্য আদানের খোঁজ পাওয়া।

এরপরের কাহিনি অবশ্য সংক্ষিপ্ত। মার্কিন মার্শালরা টরোন্টোয় লুকিয়ে থাকা আদানকে গ্রেফতার করে। আর তারপরই তাঁকে আমেরিকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ ষোলো বছর পর ফের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে।

সবুরে মেওয়া ফলে। পরিচিতদের পোস্ট থেকে গোয়েন্দা বুঝতে পারছিলেন যে আদান কানাডার কোথাও লুকিয়ে আছে। অবশেষে একদিন আদান নিজেই পোস্ট করে বসল। ব্যস, আর বুঝতে বাকি থাকল না যে আদান লুকিয়ে আছে টরোন্টোতে।

এরপরের কাহিনি অবশ্য সংক্ষিপ্ত। মার্কিন মার্শালরা টরোন্টোয় লুকিয়ে থাকা আদানকে গ্রেফতার করে। আর তারপরই তাঁকে আমেরিকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ ষোলো বছর পর ফের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে।

এক মার্কিন পুলিশ কর্তার ভাষায়, “মানুষের পার্থিব শরীর নশ্বর হলেও ডিজিটাল সত্ত্বা কিন্তু রয়ে যায়। কারণ একবার নেটের দুনিয়ায় পা রাখলে ডিজিটাল পদচিহ্ন রয়েই যায়, সেটা মোছে না।”

অর্থ্যাৎ একই মানুষের দুই সত্ত্বা।

আরও একটা উদাহরণ সামনে আনা যাক। বেশ নামডাকওয়ালা এক অধ্যাপকের কাহিনি এটা। দীর্ঘ কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর ক্লাস মানে ছাত্রছাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ফলে দেশে বিদেশে ছড়ানো রয়েছে তাঁর অসংখ্য বন্ধুবান্ধব ছাত্রছাত্রী গুণগ্রাহীর দল।

স্বাভাবিকভাবেই তিনি ফেসবুকে আসা মাত্র দুনিয়া জুড়ে বন্ধু-পড়ুয়া-গুণগ্রাহী মহলে উথালপাথাল। যে মানুষটাকে ক্লাসরুম, লাইব্রেরির রিডিং রুম আর বাড়ির ছোট্ট বাগানের বাইরে দেখা যায় না, তিনি কি না আমজনতার ফেসবুকে? তিনি কোনও বিষয়ে মতামত জানিয়ে স্ট্যাটাস পোস্ট করলে তো কথাই নেই, ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা এক ঘর পেরোতে না পেরোতেই লাইকের সংখ্যা পাঁচ অঙ্ক ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই যখন মামুলি স্ট্যাটাসের দশা, তখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বন্ধু হওয়ার জন্য যে দুনিয়া জুড়ে হুড়মুড় শুরু হবে তাতে আর আশ্চর্য হওয়ারই বা কী আছে?

বড়ই বিড়ম্বিত হলেন অনুরোধ না রাখতে পেরে। ফলে উপয়ান্তর না পেয়ে টেনিদার সেই বিখ্যাত পোস্ট মজবুত করার জন্য বাড়তি ‘টি’ লাগানোর উদাহরণকে সামনে রেখে নিজের নামের ইংরেজি বানানে একটা বাড়তি এ যোগ করে ফেসবুকে আরেকটা প্রোফাইল খুলে বসলেন।

কিন্তু গোল বেঁধেছে এখানেই। ফেসবুকে একটা প্রোফাইলে নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে বন্ধু করা যায় না। ফলে বহুজনের বন্ধুত্ত্বের অনুরোধ রক্ষাই করতে পারলেন না অধ্যাপক। বড়ই বিড়ম্বিত হলেন অনুরোধ না রাখতে পেরে। ফলে উপয়ান্তর না পেয়ে টেনিদার সেই বিখ্যাত পোস্ট মজবুত করার জন্য বাড়তি ‘টি’ লাগানোর উদাহরণকে সামনে রেখে নিজের নামের ইংরেজি বানানে একটা বাড়তি এ যোগ করে ফেসবুকে আরেকটা প্রোফাইল খুলে বসলেন। প্রোফাইলের ছবিটা নিজেরই রাখলেন যাতে পরিচিত জনদের, তাঁকে খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধা না হয়। আর নতুন প্রোফাইল খোলার কথাটা পুরোনো প্রোফাইলের দেওয়ালে রীতিমতো স্ট্যাটাস লিখে টাঙিয়েও দিলেন।

কিন্তু তাতেও সমস্যা পুরোপুরি মিটল না। দেখা গেল দু’দুটি প্রোফাইলের ভাণ্ডারও তাঁর ভক্তকূলকে জায়গা দেওয়ার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। তাই আবার অধ্যাপকের ইংরেজি নামের বানানে এ এর সংখ্যা বাড়ল। তৃতীয় প্রোফাইলও আত্মপ্রকাশ করল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক পরিস্থিতি সামাল দিতে চার চারটি প্রোফাইল খুলে বসেছেন। এত বন্ধুর পোস্ট, দেওয়াল লিখন আর টিপ্পনী সামলাতে গিয়ে নিজেই আরো বেসামাল হয়ে পড়েছেন কি না, সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন।

সবাই যে জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভেসে যাওয়ার জন্যই একাধিক প্রোফাইল খোলে তা নয়। অনেকে আবার নিজের পরিচয় গোপন করার জন্যও ফেক প্রোফাইল খুলে বসে। অনেকে আবার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আর সময় ব্যয় না করে নতুন বন্ধু খোঁজে। একেবারে নতুন করে শুরু করাটাই শ্রেয় মনে করে তারা। তাই একাধিক প্রোফাইল।

বিষয়টাকে এরকমভাবে দেখা যেতে পারে। অধ্যাপক একজনই রক্তমাংসের ব্যক্তি। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর দুনিয়ায় রয়েছে তার নামে সব মিলিয়ে চার-চারটে অ্যাকাউন্ট। অর্থ্যাৎ আসল দুনিয়ায় একজন থাকলেও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় রয়েছে চারজন। সোস্যাল মিডিয়ার সাইটগুলো যখন তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা জানায় তখনও এই চারজনকেই হিসাবে ধরে তারা জানাচ্ছে।

তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? বাকি তিনজন তো সংখ্যামাত্র। থেকেও নেই। ঠিক কল্পবিজ্ঞানের মতো। ভার্চুয়াল। কবির ভাষায়-সবই মায়া।

যেহেতু ভার্চুয়াল জগতে সবই প্রায় অজানা, তাই মানুষ আদতে যা হতে চায় সেটাই দেখাতে চায় সেখানে। তাই ছদ্মনামের আশ্রয়। অনেকসময় ছদ্ম ছবির সাহায্যে সম্পূর্ণ নতুন রূপও নেওয়া হয়। যে যুগে মানুষ নিজস্বী তোলাতে বুঁদ হয়ে থাকে, সেখানে নিজেকে নবরূপে উপস্থাপনা খুব আশ্চর্যের কি?

ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় উলভারহ্যাম্পটনের সাইবার মনস্তত্ত্ববিদ ক্রিস ফুলউড আবার বিষয়টাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, এই ধরনের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা মানেই যে বিকৃত মানসিকতার পরিচয়, সব সময় সেটা নাও হতে পারে। যেহেতু ভার্চুয়াল জগতে সবই প্রায় অজানা, তাই মানুষ আদতে যা হতে চায় সেটাই দেখাতে চায় সেখানে। তাই ছদ্মনামের আশ্রয়। অনেকসময় ছদ্ম ছবির সাহায্যে সম্পূর্ণ নতুন রূপও নেওয়া হয়। যে যুগে মানুষ নিজস্বী তোলাতে বুঁদ হয়ে থাকে, সেখানে নিজেকে নবরূপে উপস্থাপনা খুব আশ্চর্যের কি?

বিশ্বজুড়ে পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করা ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টা জানাচ্ছে ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসে বিশ্বের ৫৩৫ কোটি নেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৫০৪ কোটিই সোশ্যাল মিডিয়া মুলুকে ঘোরাফেরা করেন। অর্থ্যাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ৬৬.২ ভাগ নেট ব্যবহার করেন। একই সময়ে ভারতের ৭৫ কোটি ১৫ লক্ষ নেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৬ কোটি ২০ লক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ার ভুবনে বিচরণ করে। মনে করা হচ্ছে ২০২৫ নাগাদ ভারতে ৯০ কোটি মানুষ নেট ব্যবহার করবেন।

অথচ ২০২০ সালে জুলাই মাসে বিশ্বের ৭৭৯ কোটি জনসংখ্যার ৫৯ ভাগ অর্থ্যাৎ প্রায় ৩৯৬ কোটি নেট ব্যবহার করেন। আর, ওই একই সময়ে সোশ্যাল নেটওর্য়াকিং ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩৯৬ কোটি। ভারতের ৬২ কোটি ২০ লক্ষ নেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৫১ কোটি ৮০ লক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ার ভুবনে বিচরণ করত।

পরিসংখ্যান আরও জানাচ্ছে বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১০ লক্ষ জন প্রথমবারের মতো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়্যাটসঅ্যাপ প্রভৃতিতে ঢুকছেন।

নিঃশ্বব্দে এর মধ্যে কতটা ভার্চুয়াল গ্রাহক ঢুকে রয়েছে তার কোনও হিসাব এখনও মেলেনি। কিন্তু সংখ্যাটা যে নেহাৎ ফেলনা হবে না তা বলাই যায়। ২০১৭ সালে এক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ফেসবুকের ১০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট হয় ভুয়ো নয়তো একজনের একাধিক অ্যাকাউন্ট। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলোতে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

অর্থ্যাৎ সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে হিসেবটা ৩৯৬ কোটির অনেক বেশি। অর্থ্যাৎ একই ব্যক্তি একাধিক স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘোরাফেরা করছে। আরও সহজভাবে বললে একই ব্যক্তির একাধিক ডিজিটাল স্বত্ত্বা আছে।

তাই এ বার ২০২০ এর জুলাই মাস পর্যন্ত এই ৩৯৬ কোটির হিসাবটাও দেখা যাক। এর মধ্যে ২৬০ কোটি ফেসবুক ব্যবহার করে। তবে একই ব্যক্তি তো টুইটার, ইনস্টাগ্রামেও আছে। ওই একইসময়ে ইনস্টাগ্রামে আছে ১০৮ কোটি ব্যবহারকারী, টুইটার ব্যবহার করেছে ৩৩ কোটি। এ ছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখতে অ্যাকাউন্ট খুলেছে ২০০ কোটি, হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করেছে ২০০ কোটি। অর্থ্যাৎ সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে হিসেবটা ৩৯৬ কোটির অনেক বেশি। অর্থ্যাৎ একই ব্যক্তি একাধিক স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘোরাফেরা করছে। আরও সহজভাবে বললে একই ব্যক্তির একাধিক ডিজিটাল সত্ত্বা আছে।

২০২৪-এ এসেও একই চিত্র। সোশ্যাল মিডিয়া ভুবনে ঘুরছে ৫০৪ কোটি ব্যবহারকারী অথচ একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায় ফেসবুক ব্যবহার করে ৩০০ কোটি, ইউটিউব ব্যবহার করে ২৫০ কোটি আর হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম দুটিই ব্যবহার করে ২০০ কোটি করে। এখানেও পরিষ্কার একই ব্যক্তির একাধিক ডিজিটাল সত্ত্বা আছে।

এখানে আরও একটা বিষয় পরিষ্কার করা যাক। মনে রাখতে হবে যখনই কেউ কোনও সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে আসছে তখনই তার ডিজিটাল সত্ত্বা তৈরি হচ্ছে। অন্যভাবে বলতে গেলে কারুর যদি ফেসবুক, টুইটার আর ইন্সটাগ্রাম, প্রত্যেকটি সাইটে একটি করে অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে একই ব্যক্তির তিনটি ডিজিটাল সত্ত্বা থাকবে।

অবশ্য অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে এটাই হয়তো ডিজিটাল সভ্যতার ভবিষ্যৎ। মানুষের পরিচয় এখন হাজারো ডিজিটাল পরিচয়ে বাঁধা পড়ছে। ভোটার পরিচয়পত্র থেকে এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্রান্ডেড দোকানের লয়ালটি কার্ড থেকে অধুনা আধার নম্বর- সবই ডিজিটালের নাগপাশ। মানুষের আস্ত পরিচয়টাকেই তথ্য ভাণ্ডারে ঢুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভার্চুয়াল জনসংখ্যা বাড়াটাই স্বাভাবিক নয় কি?

কিন্তু এর ভবিষ্যৎ চিত্রটা কী হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, টেলিযোগাযোগ শিল্প যে সুনামির তীব্রতা নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাতে এতদিনকার বহু সযত্নে লালিত ধ্যানধারণারই গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়েছে। ইন্টারনেট যে শুধু বিশ্বের তথ্যভাণ্ডারকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে তাই নয়, শুধু যে বিশ্বের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অশ্বমেধের ঘোড়াকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে তাই নয়, ব্যক্তি মানুষেরও পূর্ণাঙ্গ বিকাশের রাস্তা খুলে দিয়েছে।  আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেতুবন্ধন হওয়া অপার তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। তাই সেই দুনিয়ার তালা খোলার জন্যই ব্যক্তির ডিজিটাল পরিচয় থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ছে।

আরও একটা কারণে ব্যক্তির ডিজিটাল পরিচয় থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব বলছে ২০২০ নাগাদ চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি (যা আমজনতার কাছে ৪জি প্রযুক্তি নামেই বেশি পরিচিত) রাজ করবে পৃথিবীতে। তখন শুধু যে মানুষ যন্ত্রকে হুকুম দেবে তাই নয়, এক যন্ত্রও আরেক যন্ত্রকে নির্দেশ দেবে। ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকবে না। ভার্চুয়াল মানুষের হুকুমও মানবে যন্ত্র।

ভার্চুয়াল মানুষও কার্যত সফটওয়্যারে পরিণত হবে। বিশেযজ্ঞদের মতে, সেটা করাও মোটেও দুঃসাধ্য নয়। কারণ মানুষের ডিজিটাল পরিচয় তো গড়ে উঠছেই। তার সঙ্গে প্রোগ্রামিং করে সফটওয়্যার যুক্ত করা হবে। অর্থ্যাৎ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মানুষের পরিচিতিটা চলাচল করবে আসল মানুষটার বেশিরভাগ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। বাস্তবে মানুষটির মৃত্যু হলেও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সে বেঁচে থাকতেই পারে। কিন্তু এই ডিজিটাল অবয়ব কি সৃষ্টিধর্মী কোনও কাজ করতে পারবে? সে প্রশ্নের উত্তর মেলা এখনও বাকি কিন্তু এ কথা বলাই যায় অমরত্বের হাঁটা শুরু করতে চলেছে মানব সভ্যতা।

অর্থ্যাৎ ভবিষ্যৎ যুদ্ধে সমরাস্ত্র নিয়ে রণাঙ্গনে যেতেই পারে ভার্চুয়াল মানুষের বাহিনী। বা মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে, অজানা গ্রহে নামতে পারে। এক কথায় রক্তমাংসের মানুষ না পারলেও অসাধ্যসাধন করতে পারে ডিজিটাল মানুষ।

আপাতত অবশ্য ডিজিটাল পরিচয়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা ভাবা হচ্ছে। ধরা যাক কোনও বোমারু বিমানের চালকের ডিজিটাল অবয়বকে যদি তার বিমানের সঙ্গে কথা বলানো যায়, যদি ডিজিটাল চালকের নির্দেশ অনুসারে জঙ্গী বিমানটি লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে পারে তবে ডিজিটাল মানুষ গড়ার পথে বড় মাপের সাফল্য আসতে পারে। মনে রাখা দরকার ইতিমধ্যেই চালকহীন বিমানের উড়ান সম্ভব হয়েছে।

অর্থ্যাৎ ভবিষ্যৎ যুদ্ধে সমরাস্ত্র নিয়ে রণাঙ্গনে যেতেই পারে ভার্চুয়াল মানুষের বাহিনী। বা মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে, অজানা গ্রহে নামতে পারে। এক কথায় রক্তমাংসের মানুষ না পারলেও অসাধ্যসাধন করতে পারে ডিজিটাল মানুষ। ড্রোন, রোবট দিয়ে বিপ্লবের পথ চলা শুরু হয়েছে, সেটাই দৌড়াতে শুরু করবে ডিজিটাল মানুষকে পাশে পেয়ে। তাই সম্ভাবনার ব্রহ্মাণ্ড যে কতটা হতে পারে তার মাপজোকই করা হয়ে ওঠেনি। তাই নিছক মজা করার জন্য খাতায় কলমে একটা পরিচয়ের জন্ম দিলেও সেটাই কার্যত ভবিষ্যতের ডিজিটাল মানুষ করার সূতিকাগার।

তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?

ডিজিটাল সত্ত্বা যে শুধু নিজের ডিজিটাল প্রতিবিম্ব তৈরি করছে তাই নয়, নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শুধু যে রাষ্ট্র তার থেকে ফায়দা তুলতে পারে, নেট দুনিয়ায় একে ঢাল করে সংগঠিত অপরাধও হতে পারে। ডার্ক ওয়েব তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।

আরেক ডার্ক নাইটের রহস্যময় অবয়ব কি ডিজিটাল মানুষের পিছনে? শোনা যাচ্ছে?

kingshuk banerjee

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com