(Durga Puja)
পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রসেনজিৎ দাস ও চিকিৎসক তাঁর দিদি মৌমিতা দাস ১৫ বছর আগে ঠিক করেন দুর্গাপুজো করবেন। তবে মহাপুজো নয়। তাঁরা পুজো শুরু করবেন কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে। আরও ঠিক করেন, পুজোর সব কাজ করবেন নিজেরাই। প্রসেনজিৎবাবু আরও জানান, প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি তিনি ও দিদি মৌমিতা সংস্কৃত শিখতে শুরু করেন। কিন্তু ভাষা শিখে নিলেও পুজোর রীতি-প্রথা জানা সম্ভব ছিল না। তাই প্রসেনজিৎ স্থির করেন পুরাণ, বেদ ও উপনিষদ পড়বেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার শেষে তিনি চলে যান বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শেখেন বেদ। এর পরেই শুরু হয় দাস পরিবারের দুর্গাপুজো। (Durga Puja)
আরও পড়ুন: ফটো স্টোরি: বিনা পয়সার স্কুল চালাচ্ছেন বিশ্বনাথ নাড়ু
পটুয়াপাড়ায় প্রতিমায় তুলির শেষ টান এখনও পড়েনি। তার মধ্যে সোমবার খাস কলকাতার একটি বাড়িতে শুরু হল পুজো। কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথির আদ্রা নক্ষত্র মেনে শুরু হওয়া এই পুজো অবশ্য পুরনো নয়। ট্যাংরার শীল লেনের দাস পরিবারের বাড়ি এ দিন সকাল থেকেই গমগম করে ওঠে লোকজনের আনাগোনায়। বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দারা আনন্দ পালিত রোডে থাকলেও পুজো হয় শীল লেনে, দাসদের দুই পুরুষের আদি বাড়িতেই। (Durga Puja)

সেখানে বাড়ির দেবতা রাধা-কৃষ্ণের ঘরের পাশেই দুর্গাপুজোর স্থান। সারা বছর রাধাকৃষ্ণের পুজো করেন অন্য পূজারী। প্রসেনজিৎবাবু আরও জানান, বেশ কিছু জায়গায় মূলত স্মৃতিকার রঘুনন্দনের তত্ত্ব মেনে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। কিন্তু তাঁদের পুজো হয় স্মৃতিকার শূলপাণীর মতে। তবে সোমবার বোধন হলেও সপ্তমী পর্যন্ত পুজো হবে বাড়ির দেবতার নিত্যপুজোর মতো করে। সপ্তমী থেকে শুরু হবে মহাপুজো। তখন অঞ্জলি, হোম, বলি-সহকারে মহাপুজোর সব নিয়ম মানা হয়। (Durga Puja)

ট্যাংরার শীল লেনের দাস পরিবারের দুই সন্তানই বাড়ির পুজোর উদ্যোক্তা৷ এই বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব হল- প্রত্যেক বছর পুজোর নিয়ম বদলায় এবাড়িতে৷ এবারে মায়ের মূর্তিতে সিংহের গড়নে ঘোড়ার ছায়া হল আরও এক বিশেষত্ব৷ আগে তাঁর দিদি চিকিৎসক মৌমিতা দাসও ভাইয়ের সঙ্গে পৌরহিত্য করতেন৷ তবে, বিয়ের পর তিনি আর তা করেন না। থাকেন নেপথ্যে। এই পুজোয় কোনও স্বপ্নাদেশের কাহিনি নেই। যা রয়েছে, তা হল ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতিকে ধরে রাখা। (Durga Puja)

দাস বাড়িতে মা দুর্গা পূজিত হন কন্যা রূপে। প্রতিবছর কৃষ্ণপক্ষের আদ্রা নক্ষত্র মেনে দেবীর বোধন হয় অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে এই পুজো শুরু হয়৷ সেমতো এবার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মা দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠেছে দাস পরিবার৷ এই পুজো চলে দুর্গানবমী পর্যন্ত। শাস্ত্রবিধি মেনেই তৈরি হয় এই মূর্তি৷ (Durga Puja)

দেবী এখানে বাড়িতে ষোড়শ উপাচারে পূজিতা হন, যার মধ্যে রয়েছে মধুপর্ক, মাল্য, কাজল, রক্তচন্দন৷ পরিবারের সদস্যদের থেকে কথা বলে জানা গেল, সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে চারটি বলি হয় দাস বাড়িতে। চালকুমড়ো বলি হয় ৷ সন্ধিপুজোর সময় যখন বলি হয় তখন কাউকে মায়ের সামনে বসতে দেওয়া হয় না। মায়ের তখন রুদ্র মূর্তি। নবমীতে কুমারী পুজোও হয়। আর দশমীতে পান্তা আর কচুর লতি নিবেদন করা হয় মাকে। (Durga Puja)
ছবি ঋণ: লেখক
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
নেশা ও পেশা ফটোগ্রাফি। ডকুমেন্টারি স্টোরি টেলিং, স্ট্রিট ও ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী।