Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাঙালির ফ্যাশন: অদলবদলের তেত্রিশ বছর

প্রগতি বৈরাগী একতারা

জুলাই ৩১, ২০২৩

globalisation and fashion
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

নরম গানের সঙ্গে টিভির পর্দায় ভেসে বেড়াতেন ওঁরা। ঝকঝকে উজ্জ্বল, অথচ পাশের বাড়ির রেলিং ভরিয়ে তোলা মাধবীলতাটির মতোই পেলব তাঁদের সাজ। বাঙালি মেয়ের ঈষৎ ঢেউতোলা খোলা চুলে কানের পাশে গোঁজা একগুচ্ছ ফুল, শঙ্খলতা একাবেণী অথবা খেজুরপাতা বুনন খোঁপা। মানানসই গয়না, ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক আর অঙ্গশোভাবিজ্ঞাপনের বিশেষ শাড়িটি। 

বিজ্ঞাপনের অন্তে, শাড়ি প্রতিষ্ঠানের নামটি মনে পড়িয়ে দিত জগদ্বিখ্যাত চিত্রশিল্পীকে। তাঁর কল্পনায় বাঙালি রমণী চিত্রপটে বারবার মূর্ত হয়েছেন চিরন্তনী আটপৌরে সজ্জায়, পূজারিণী, গণেশজননী, বধূরূপে। শাড়ির বিজ্ঞাপনের সেই নারীরা পরতেন মূলত ফ্লোর‍্যাল বা জিওমেট্রিক প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, বাটিক অথবা হাল্কা কাঁথাকাজের সুতির শাড়ি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কলকাতা, শহরতলি বা মফঃস্বলের তরুণী গৃহিণী, মাঝবয়সী মহিলারা এমন সব শাড়িতেই ঘরেবাইরে, অফিসবাজার সামলাতেন। একটু উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরে চলত মঞ্জুষা আর তন্তুজর শাড়ি। তাছাড়া ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠা দক্ষিণাপন মার্কেট এবং অন্যান্য বড় শাড়ি প্রতিষ্ঠানের সূত্রে বিশেষ দিনে দক্ষিণী কলমকারি, কাঞ্জিভরম, নারায়ণপেট, বিহারি মধুবনি, গুজরাতি ঘারছোলা শাড়ির মাধুর্যেও ক্রমে সড়গড় হয়ে উঠছিল কলকাতা। এদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করত পিওর সিল্ক আর সেই সময় রমরম করে রমণীহৃদয় আর বাজার ছেয়ে ফেলা বিমল আর গার্ডেনের শাড়ি, রেয়ন সিল্ক।

Rekha in 1980s saree ad
আশির দশকের শাড়ির বিজ্ঞাপনে রেখা

অনুষ্ঠানবাড়ির সন্ধ্যায় একাধিপত্য করত টকটকে লাল, মরকত সবুজ, ফিরোজা, গোলাপি, মেরুন বেনারসি আর দিনের অনুষ্ঠানে, দুপুর আলোকরা বালুচরী, স্বর্ণচরী, ঢাকাইয়া জামদানিরা। অবরে সবরে ছাদের আসরে রোদ খাওয়া আর নিমপাতা, নুনের পুঁটুলির যত্ন থেকে বেরিয়ে এসে আসর মাতিয়ে তুলত তারা। তা বলে পিছিয়ে থাকত না শান্তিপুর, ফুলিয়া, ধনেখালির দরাজপাড় তাঁতপরিরাও। ল্যাকমে, পন্ডস ক্রিম, পাউডারের আলতো প্রলেপ, লিপস্টিক, কাজল, লাইনারের সামান্য প্রসাধন, রজনীগন্ধা, জুঁই, গোলাপের সুবাস আর সবার আড়ালে প্রিয়জনের চোখের আশকারাবড় অল্পে অপরূপা হয়ে উঠতেন নব্বইয়ের নারীরা।

হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটের পাশাপাশি পুজোর আগে সদ্য তরুণী স্কুলকলেজ ছাত্রীদের অবশ্যতীর্থ ছিল সেইসময়ের শহরবিখ্যাত লেডিস টেইলরিং হাউসগুলো। টিভির পর্দায় চিত্রহার, রঙ্গোলি, সুপারহিট মুকাবলা-র মতো হিন্দি ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠান আর সিনেমার পর্দার পাশাপাশি নব্বইয়ের ফ্যাশনিস্তাদের বাইবেল ছিল সিনেমা আর লাইফস্টাইল পত্রিকাগুলি। আনন্দলোক, সানন্দার পাতায় ঝলমল করতেন আরবসমুদ্রতীরের, টালিগঞ্জের সুন্দরীরা। তাদের ব্লাউজের কাট, চুড়িদারকুর্তার গলা, হাতার ডিজাইন, স্কার্টের ঝুল হয়ে উঠত ফেস্টিভ সিজনেরস্টেট অফ দি আর্টফ্যাশন ট্রেন্ড। নব্বই দশকের মাঝামাঝি, পুজোর ঠিক আগে অগস্ট মাসে মুক্তি পেল রাজশ্রী প্রোডাকশনের ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’ ছবিটি। পর্দায় মোহময়ী মাধুরী দীক্ষিত। কখনও সোনালি রুপোলি জারদউজি কাজের ব্যাকলেস চোলিকাট ব্লাউজে আর গাঢ় বেগুনি শাড়িতে উজ্জ্বল হাসিতে খান খান রহস্যময়ী, আবার কখনও সবুজ সাদা ঘাগরাচোলিতে কপট রাগে দাউদাউ খুঁড়ে চলেছেন দর্শকের হৃদয়। সে বছর পুজোয় কলকাতা আর শহরতলীর মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখেছিল হাজার হাজার মাধুরীরা। 

Madhuri Dixit and 1990s bollywod fashion
গাঢ় বেগুনি শাড়িতে উজ্জ্বল হাসিতে মাধুরী

নারী, পুরুষ সবার জন্যই এইসময় পর্যন্ত ফ্যাশন ছিল আঞ্চলিক আর বলিউড সিনেমাসম্বল। ১৯৮৬ সালে আক্ষরিক অর্থে প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের ঢেউ এসে লাগে ভারতীয় সাজপোশাকে। মিনিস্ট্রি অব টেক্সটাইলের উদ্যোগে আর নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন ইন্সটিউট অব টেকনোলজির সহায়তায় দিল্লির হজ খাসে গড়ে ওঠে ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (NIFT)। ফ্যাশন মানেই যে শুধু ভারি, ঝলমলে পোশাক আর অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক নয়, তা যে প্রতিদিনের সুন্দরের উদযাপন, সেই ভাবনা আর তেমন পোশাক ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে দিতে থাকেন প্রশিক্ষিত ফ্যাশন ডিজাইনাররা। ৯০ দশকের মাঝামাঝি তৈরি হল নিফট কলকাতা, যার উজ্জ্বলতম ফসল সব্যসাচী মুখার্জি (Sabyasachi Mukherjee)। দেশের সফলতম ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী বাংলার প্রাচীনতম সূচিশিল্প, কাঁথাকাজ, অ্যাপ্লিক, মুর্শিদাবাদি সিল্ক, মলমলকে যেমন তুলে এনেছেন ফ্যাশন মানচিত্রে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিকেও করে তুলেছেন ফ্যাশনপ্রবণ, পরতে এবং পড়তে… দুই ভাবেই।

অনুষ্ঠানবাড়ির সন্ধ্যায় একাধিপত্য করত টকটকে লাল, মরকত সবুজ, ফিরোজা, গোলাপি, মেরুন বেনারসি আর দিনের অনুষ্ঠানে, দুপুর আলোকরা বালুচরী, স্বর্ণচরী, ঢাকাইয়া জামদানিরা। অবরে সবরে ছাদের আসরে রোদ খাওয়া আর নিমপাতা, নুনের পুঁটুলির যত্ন থেকে বেরিয়ে এসে আসর মাতিয়ে তুলত তারা। তা বলে পিছিয়ে থাকত না শান্তিপুর, ফুলিয়া, ধনেখালির দরাজপাড় তাঁতপরিরাও।

বাঙালি বিয়েবাড়ির সাজের কথা লিখছিলাম। কনেসাজের কথা না লিখলে সে গল্প আধেক থেকে যায়। গায়েহলুদ পর্বের পর সোনারবরণ শ্যামলী অথবা গৌরী কন্যাকে সাজাতে আসতেন পাড়ায় সদ্যবিয়ে হয়ে আসা রূপসী বউটি অথবা কাকিমা যার পরিপাটি সাজগোজের প্রশংসা সবার মুখে। টুকটুকে অথবা মেরুন বেনারসিটি আর সোনার গয়না পরানো হলে চুলে খোঁপা বেঁধে তাতে রজনীগন্ধা, গোলাপের আভরণ। আঙুরফল অথবা রানি প্যাটার্নের খোঁপা, মুখ পরিষ্কার করে প্রসাধনের পর কনেচন্দন। তারপর মোহন কারুকাজের শোলার মুকুট আর লাল-সোনালি ওড়নার আড়াল।

নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে বইতে শুরু করলেও মাঝামাঝি এসে জোরালো হয়ে ওঠে খোলা বাজার, উদারীকরণের হাওয়া। এতদিন দুষ্প্রাপ্য এবং মহার্ঘ্যতম বিদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য, জুতো, ব্যাগ, ঘড়ি, বিদেশি পোশাকে ভরে গেল বাজার। লিভাইজ, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, টমি হিলফিগরএর মতো বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড এসে গেল হাতের মুঠোয়। জাতীয় টেলিভিশন এবং ক্রমে কেবল টিভির কল্যাণে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল সে খবর বিজ্ঞাপনের চমকে ধমকে। শুধু যোগান নয়, বাঙালি মধ্যবিত্তের চাহিদা আর ক্রয়ক্ষমতায়ও এল আমূল পরিবর্তন।

Sabyasachi Mukherjee Indian fashion designer
NIFT কলকাতার উজ্জ্বলতম ফসল সব্যসাচী মুখার্জি

বেসরকারিকরণ আর ভুবনগ্রাম জুড়ে আই টি সেক্টরের বিপুল চাহিদা বাঙালির চাকরিক্ষেত্রকে ছড়িয়ে দিল দ্রুত, দক্ষিণের শহর ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, তারপর বিদেশ পাড়ি। অর্থ এবং এক্সপোজার, কালচারকনশাস বাঙালি হয়ে উঠল ব্র্যান্ডকনশাসও। এতদিন টাইমেক্স আর টাইটানে অভ্যস্ত মণিবন্ধের দিব্য শোভা হল মাইকেল কর্স, এম্পরিও আর্মানির ঘড়ি। কাবার্ডের শেলফ সেজে উঠতে শুরু করল শ্যানেল সুগন্ধি, ভিক্টোরিয়া সিক্রেটের অন্তর্বাস আর প্রাডার পোশাকে। তাই বলে সিক্স ইয়ার্ড ম্যাজিকের মোহ ভোলেনি বাঙালি।

কথায় আছে, প্রবাসে পাঁচ বাঙালি একজোট হলে দুটি কাজ করেন, এক দুর্গাপুজো, দুই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এমন সব অনুষ্ঠানে বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া চিরন্তন শাড়ি, ধুতি পাঞ্জাবির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে সব্যসাচী বা অনামিকা খান্নার (Anamika Khanna) ডিজাইনার পোশাক। শাড়িমুগ্ধ বহু বিদেশিনী পরার কায়দাকৌশল শিখে নিয়েছেন, শাড়িক্ল্যাড লুকে চমকে দিয়েছেন পরের অনুষ্ঠানে। এভাবেই ফ্যাশন মিলে গেছে, মিলিয়ে দিয়েছে।

Anamika Khanna and her design
অনামিকা খান্না ও তাঁর ডিজাইন করা পোশাক

কেবল বিদেশবাসী বাঙালি নয়, ইন্টারনেটের দৌলতে মফঃস্বলের সদ্যকিশোরীর কাছেও পৌঁছে গেছে প্রিয় বসন্তদিনের স্প্রিংসামার ফ্যাশন ট্রেন্ডের খবর। কলকাতা এবং শহরতলীতে আশির দশক থেকে শুরু হলেও মফঃস্বলে সেমিফর্ম্যাল আর ক্যাজুয়াল পশ্চিমী ফ্যাশনের ঢল নামল ৯০এর শেষ আর একুশ শতকের শুরুতে। নতুন ট্রেন্ডের পাইওনিয়ার হয়ে উঠল সদ্য কলেজ, টিউশনমুখী তরুণ তরুণীরা। ছেলেদের ব্যাগি ট্রাউজার, রাউন্ডনেক, পোলোনেক টিশার্ট, শীতে টার্টলনেক পুলোভার আর ডেনিম জ্যাকেটের পাশাপাশি ঝলমলে ছিল সাইকেলসখী তরল কিশোরীরাও। চুড়িদার কুর্তা, সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি তারা দিব্য অভ্যস্ত হয়ে উঠল জিন্স কুর্তা, টিউনিক, লং ফ্রক, সেমিফর্ম্যাল প্যান্ট আর টপে। পাড়াতুতো অভিভাবকদের রূঢ় দৃষ্টি সয়ে গেল কোচিং ক্লাসের নতমুখ মুগ্ধ কিশোরটির হঠাৎ চোখ তুলে তাকানোয়।

মিলেনিয়ামের ফ্যাশন প্যালেটের আর এক চমকপ্রদ সংযোজনফ্যাশন টিভি। অন্যরকম সুন্দরীরা ততোধিক অন্যরকম পোশাক পরে উদাসকঠিন, মোহিনীমুখে চলে যেত ফ্যাশন র‍্যাম্প পার করে। ২০০১ সালে দেশে ফ্যাশন টিভির সেই আদিম যুগে এইগা ছমছম, কী হয়, কী হয়চ্যানেল লালদাগে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল নিষিদ্ধের খাতায়। অন্য অন্য মন্দ জিনিসের মতোই লুকিয়ে চুরিয়ে পরখ করতে গিয়ে ধরা পড়ে খোয়ার হওয়ার দিন সে সব! স্মার্টফোন এসে আলগা করে দিল সেইসব নিষেধগ্রন্থি। নিজস্ব ফোন, নিজস্ব স্ক্রিনটাইম, আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব চলে এল আঙুলের ডগায়। 

fashion and globalisation
পোশাক থেকে অ্যাকসেসরিজ কিছুতেই পিছিয়ে নেই আমরা

ফ্যাশন দুনিয়ার আপ্তবাক্য আর কঠিন সত্য হল পরিবর্তন। দ্রুত বদলাও, বদলে যাও নিত্য নতুনে, নইলেডেডস্টক’ হয়ে পড়ে থাকতে হবে শেলফের সবথেকে অন্ধকার কোণে। ২০০৮ ইউটিউব এবং পরে পরেই কমার্স ফ্যাশন ওয়েবসাইট এসে পড়ায় তেমনই দ্রুত বদলে যেতে লাগল বাঙালির ফ্যাশন। ফ্যাশন ভ্লগার, ইনফ্লুয়েন্সাররা ইউটিউবে দিতে লাগলেন বাজেট এবং হাইফ্যাশন শপিংএর খুঁটিনাটি খবর, আর তার সঙ্গে ফ্যাশন স্টাইলিংএর চমকপ্রদ পরামর্শ। প্রসঙ্গে মনে পড়ে ঠাকুরবাড়ির বিদুষী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কথা। বম্বেপ্রবাসের সময় তিনি পারসি শাড়ি পরার ধরনের সঙ্গে সৌন্দর্যবোধ এবং ব্যবহারিক প্রয়োজন মিশিয়ে আধুনিক শাড়ি পড়ার নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন। শেমিজ, ব্লাউজ, পেটিকোট, জ্যাকেটের মেলবন্ধনে ভেবে ফেলেছিলেন বাঙালি নারীর প্রথম অন্তর্বাসের কনসেপ্ট। এই পোশাকে দীর্ঘ জাহাজযাত্রায় সমুদ্রপাড়ি দিয়ে সন্তানদের নিয়ে একা পৌঁছে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ড। শুধু তাই নয়, বামাবোধিনি প্রত্রিকা নামে একটি ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপনও করেছেন তাঁর মতো করে শাড়ি পরার প্রশিক্ষণ দিতে। সেই অর্থে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে আধুনিক ভারতের প্রথম ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার অভিধা দেওয়া যেতেই পারে। এই সময়ের ফ্যাশন ইনফ্লুন্সাররাও তাঁদের ফলোয়ারদের শেখাচ্ছেন শাড়ি পরার নতুন কায়দা, কালারব্লকিং-এর কৌশল। ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন স্টাইলিং-এর আধুনিকতম টিউটোরিয়াল।

Jnanadanandini Devi fashion icon
জ্ঞানদানন্দিনী আধুনিক ভারতের প্রথম ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার

তবে এ তো গেল সেই গ্রাহকদের কথা, পর্যাপ্ত অর্থের বিনিময়ে বাজার যাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ফলটি। কিন্তু যাদের রুচি সাধ দুই আছে, তবে সাধ্য নেই, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম লাইভের রিটেইল সেলাররা তাঁদের জীবনও সহজ করে দিয়েছেন। পোশাক, ব্যাগ, জুতো, অ্যাকসেসরিজ, সবকিছুর যোগান দিচ্ছেন এই রিটেইল সেলাররা। প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার পর বেশ কয়েকটি ইনস্টলমেন্টে দাম মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। প্রোডাকশন হাউস থেকে তারা নিয়ে আসছেন মহার্ঘ্য ব্র্যান্ডের পোশাক, ব্যাগের ফার্স্ট কপি। খুব কাছ থেকে খুঁটিয়ে না দেখলে যা কপি বলে বোঝাই যায় না। মাইকেল কর্সের চল্লিশ হাজারি ব্যাগের ফার্স্ট কপি শেওড়াফুলির নিতান্ত মধ্যবিত্ত হোমমেকারের হাতে এসে যাচ্ছে সাড়ে চার হাজারে, তাও তিনচারটি ইন্সটলমেন্টে শোধ দেওয়ার কড়ারে। প্যান্ডেমিকের কঠিনতম পৃথিবী বদলে দেওয়া সময়ে চাকরি হারানো অনেকেই এই নতুন পেশায় এসেছেন। বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন আর ক্রমে আরও শক্তিশালী বাজার হয়ে অনলাইন রিটেল বিজনেস ফুলে ফেঁপে উঠেছে। 

লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্পে, সারাবছর কাজকর্ম সামলে একদিনের জন্য গ্রাম্য মেলায় গিয়ে গ্রামের বউ শখ মেটাতে বেশি দাম দিয়ে ব্যাপারীর কাছ থেকে কিনেছিল সোহাগী সাবান। আজকের সেইসব গৃহিণীরাও দীঘা,পুরী, দার্জিলিং বেড়াতে যাচ্ছেন। তাদের পরনে জারার ফার্স্ট কপি ড্রেস, হাতে দামি ব্র্যান্ডের ফার্স্ট কপি ব্যাগ।

ফ্যাশন ঢুকে পড়েছে বাঙালির অন্তঃপুরে। মিলিয়ে মিশিয়ে দিচ্ছে একাল সেকাল। হ্রাস করে আনছে প্রাদেশিক রীতিনীতি, আচারের ফারাক। বাঙালি বিয়েতে কবে যেন জুড়ে গেছে ককটেল নাইটের ব্লেজার আর ইভনিং গাউন, মেহেন্দির সবুজ লেহেঙ্গাচোলি। ফ্যাশন উৎসাহীর আলমারিতে দিব্য সহাবস্থান করছে মেক্সিকান চিরহরিৎ প্রিন্টের মনোকিনি, ঈষৎ উন্নাসিক শাদা-ধূসর ফ্রেঞ্চ সান্ধ্যপোশাক আর অধিক রাত্রির আকাশের মতো রুপোলি জরির নভোনীল বেনারসি সিল্ক শাড়িটি।

আমার অধুনা প্রবাসী, মফঃস্বলে বড় হয়ে ওঠা ফ্যাশন ডিজাইনার বন্ধু বালি দ্বীপে বেড়াতে গেলে বাতাবিলেবু রঙের স্নান-পোশাক পরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। আবার দুর্গাপুজোয় বাড়ি ফেরার জন্য ছুটি জমিয়ে রাখে,পছন্দের শাড়ি জমিয়ে রাখে পঞ্চমী থেকে দশমী সাজিয়ে তোলার জন্য। শুধু আমার মিলেনিয়াল বন্ধু নয়, ‘জেন-জি’ প্রজন্ম অর্থাৎ যাঁদের জন্ম ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১০-এর মধ্যবর্তী সময়ে, তারাও অপেক্ষায় থাকে অষ্টমী আর সরস্বতী পুজোর শাড়িদিনের। অপেক্ষায় থাকে নতমুখ অকস্মাৎ চোখ তুলে তাকানো।

ছবি সৌজন্য: Wikipedia

PRAGATI BAIRAGI

প্রগতি বৈরাগী একতারা পেশায় এবং প্রশিক্ষণে ফ্যাশন ডিজাইনার। বর্তমানে হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে ফ্যাশন ডিজাইনের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এছাড়া ফ্রিল্যান্স স্টাইলিং করেন, ফ্যাশন কলাম লেখেন।
ছবি আঁকেন, নিবিড়তা খুঁজে পান বাউল জীবন এবং বৈষ্ণব সাহিত্যে। প্রগতির অকাট্য উষ্ণতা সমুদ্র, সূর্যাস্ত, ফিনিক্স এবং ফ্রিডা কাহলোর প্রতি।

Picture of প্রগতি বৈরাগী একতারা

প্রগতি বৈরাগী একতারা

প্রগতি বৈরাগী একতারা পেশায় এবং প্রশিক্ষণে ফ্যাশন ডিজাইনার। বর্তমানে হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে ফ্যাশন ডিজাইনের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এছাড়া ফ্রিল্যান্স স্টাইলিং করেন, ফ্যাশন কলাম লেখেন। ছবি আঁকেন, নিবিড়তা খুঁজে পান বাউল জীবন এবং বৈষ্ণব সাহিত্যে। প্রগতির অকাট্য উষ্ণতা সমুদ্র, সূর্যাস্ত, ফিনিক্স এবং ফ্রিডা কাহলোর প্রতি।
Picture of প্রগতি বৈরাগী একতারা

প্রগতি বৈরাগী একতারা

প্রগতি বৈরাগী একতারা পেশায় এবং প্রশিক্ষণে ফ্যাশন ডিজাইনার। বর্তমানে হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে ফ্যাশন ডিজাইনের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এছাড়া ফ্রিল্যান্স স্টাইলিং করেন, ফ্যাশন কলাম লেখেন। ছবি আঁকেন, নিবিড়তা খুঁজে পান বাউল জীবন এবং বৈষ্ণব সাহিত্যে। প্রগতির অকাট্য উষ্ণতা সমুদ্র, সূর্যাস্ত, ফিনিক্স এবং ফ্রিডা কাহলোর প্রতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com