Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

দাঁড়াও পথিকবর

শেখর গুহ

জুলাই ২৬, ২০২৪

Leander Paes
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

এশিয়ার প্রথম পুরুষ হিসাবে বিশ্ব টেনিস হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত হলেন তিনি। আমাদের পরিচিত মুখ, লিয়েন্ডার পেজ। টেনিস তারকা লিয়েন্ডার (Leander Paes)! তবে কেবল টেনিসই একমাত্র যোগসূত্র নয়, তাঁর মুখের আদলের সঙ্গে যেন পুরোনো এক যোগ রয়েছে বাঙালির। হয়তো বলে দিতে হবে না মাইকেল মধুসূদন দত্তের আত্মীয় তিনি। অদ্ভুত এক মিল দুজনের মুখে। আর সেই মিল ধরেই আজকের এই যাত্রা, এই গবেষণামূলক যাত্রা তাঁর পারিবারিক যোগসূত্র আবিষ্কারের।

কলকাতার মাটিতেই ১৯৭৩ সালের ১৭ই জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ। এই শহর দেখেছে তাঁকে ছোট থেকে বড় হতে। টেনিসের হাতেখড়ি, স্কুল লা মার্টিনিয়ার-এ। বাবা ভেস পেজ, জন্মসূত্রে গোয়ান, কিন্তু মা জেনিফার কলকাতারই মেয়ে। খেলাধূলার জিন তাঁর রক্তে। তাঁর বাবা ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী ভারতীয় হকি টিমের একজন মিডফিল্ডার ছিলেন এবং মা ছিলেন ১৯৮০ সালে এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক। বাকিটা ইতিহাস। তাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস ডাবলস খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ডেভিস কাপে সর্বাধিক ডাবলস জয়ের রেকর্ড তাঁর নামে। পেজ আটটি পুরুষ ডাবলস এবং দশটি মিক্সড ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন।

১৮ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী পেজকে খেলোয়াড় বিভাগে এবং অমৃতরাজ অবদানকারী বিভাগে তাঁর স্থান অর্জন করেছেন বিশ্ব টেনিস হল অফ ফেমে (International Tennis Hall of Fame)। কলকাতা খুশি, ভারি খুশি এই আনন্দের খবরে। প্রবাসে বসে এখনও সেই বহু যুগ আগে ফেলে আসা শহর আর তার মানুষেরা মনের কাছেই রয়ে গেছে। প্রতিদিনকার যাপনচিত্রে জ্বলজ্বল করে সেই শহরের ইতিহাস, বর্তমান আর ভবিষ্যত।

কলকাতার এই টেনিস তারকা আমাকেও গর্বিত করে তুললেন। আর সে যে কলকাতার রেনেসাঁস যুগের কবি মাইকেল মধুসূদনের বংশধর তা এখন অনেকেই জানেন। লিয়েন্ডারকে ইন্টারন্যাশনাল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন শিরোপা দেওয়ার খবরে, একটি ভিডিও আসে আমাদের কলকাতা কথকতা নামক বিখ্যাত সংগ্রাহকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, তাতে কেও মন্তব্য করেন, “লিয়েন্ডারকে দেখতে মাইকেল মধুসূদনের মতনই লাগছে না?” – চটজলদি এক মন্তব্য, কিন্তু আমার গবেষক মনকে একটু উস্কে দিল যেন, লেগে পড়লাম! আজকাল আর কিছু না হোক, এধরণের গবেষণা একটু সুলভই বটে। এই প্রশ্ন জেগে উঠল, “মধুসূদনের অনেক সন্তানের মধ্যে কার সঙ্গে লিয়েণ্ডারের সরাসরি সম্পর্ক?” সে কৌতূহল মেটাতে গিয়ে আমি কবির নানা বংশধরদের বিষয়ে যেটুকু জেনেছি তা নিয়েই লেখা!

মধুসূদনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রেবেকা ম্যাকটেভিশ (Rebecca Thompson McTavish) নামে এক নীলকর সাহেবের কন্যা। ১৮৪৮ সালে ওঁদের বিয়ে হয় মাদ্রাজে এবং ওঁদের চার সন্তানের মধ্যে দুজন, এক ছেলে ও এক মেয়ে- জীবিত ছিলেন বড় বয়স অব্দি। মেয়ের সম্বন্ধে খুব একটা তথ্য জানা না থাকলেও, ছেলের নাম ম্যাকটেভিশ দত্ত (McTavish Dutt)। তিনি মাদ্রাজের আদালতে কাজ করতেন।

১৮৫৫ সালে কবি মধুসূদন ওঁদের ছেড়ে গেলেও রেবেকা ওখানেই থেকে গিয়েছিলেন আমৃত্যু। তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯২ সালে। Emilia Henrietta Sophie White (1858–1873)।
রেবেকা ও তাঁর সন্তানদের ছেড়ে মধুসূদন বিয়ে করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের ফরাসি অধ্যাপকের মেয়ে এমিলিয়া হেনরিয়েটা (বা ফরাসি কায়দায় আঁরিয়েত্তা) সোফিয়া ডিক কে (Emilia Henrietta Sophie Dique), এবং কবির শেষ দিন (১৮৭৩) অবধি সঙ্গী ছিলেন তিনিই।

(মাইকেলের অন্য একটি জীবনীতে লেখা আছে যে তাঁর দুই বন্ধু গৌরদাস বসাক ও রাজনারায়ণ বসুর মতে হেনরিয়েটা মোটেই কোনও ফরাসি অধ্যাপকের মেয়ে ছিলেন না। তিনি ছিলেন ইংরেজ-তনয়া।)
১৮৫৮ সালে মধুসূদন চলে আসেন কলকাতায়। ১৮৫৯ সালে তাঁর প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ প্রকাশিত হয় এবং তাঁর মেয়ে হেনরিয়েটা এলিজাবেথ শর্মিষ্ঠার (Henrietta Elizabeth Sermista) জন্ম হয়।
১৮৭৩ সালে চরম দারিদ্রের মধ্যে মাইকেল মারা যান, এবং তার দিন তিনেক আগে মৃত্যু হয় উশৃঙ্খল স্বামীর নানা যথেচ্ছ ব্যবহার সহ্য করে পাশে থাকা সাঁইতিরিশ বছর বয়সী হেনরিয়েটার।

চোদ্দ বছরের কিশোরী শর্মিষ্ঠা কোর্ট চলাকালীন ব্যারিস্টার উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জীর কাছে গিয়ে তাঁর বাবার শেষ কৃত্যের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। ছোট দুই ভাইকে (Frederick Michael Milton and Albert Napoleon) নিয়ে সম্বলহীন মেয়েটির কী অবস্থা হয়েছিল ভাবলে শিউরে উঠতে হয়!
হেনরিয়েটার সমাধি মাইকেলের ফলকের কাছেই। যদিও সেখানে তাঁর বয়স ভুলবশত সাতাশ বছর লেখা আছে :
The Burial Register of the Lower Circular Road cemetery at Calcutta contains the following entry : —

“26th June 1873. Emelia Henrietta Sophia Dutt, aged 27 years, wife of Michael: buried by J. Lewis and Co., in a katcha grave 23 feet south of Mrs. L. J. MacCarthy’s headstone, 5th range of graves, 6th walk south from the 1st gate, south-east quarter. C.R.B.G.”
তাঁর প্রথম স্বামী ডাবলিউ ডাবলিউ ফ্লয়েড (W. W.Floyd) মারা গেলে শর্মিষ্ঠা ডাবলিউ বি নিসকে (W. B. Nyss) বিয়ে করেছিলেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে শর্মিষ্ঠাও মারা যান!

শর্মিষ্ঠার দুই ভাইয়ের একজন ছিলেন ফ্রেডরিক মাইকেল ডাট (Frederick Michael Milton Dutt), যিনি সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন, কিন্তু চোদ্দ বছর বয়স না হতেই তাঁরও মৃত্যু হয়।

তাঁদের সবচেয়ে ছোট ভাই অ্যালবার্ট নেপোলিয়ন ডাট (Albert Napoleon Dutt) সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র ছিলেন। তাঁর সুন্দর চেহারা ও নম্র ব্যবহার সহপাঠীরা অনেকেই মনে রেখেছিল। হুঁকোমুখো হ্যাংলার মামা শ্যামাদাসের মতো তিনিও আফিমের থানাদার ছিলেন, তবে কলকাতায় নয়, লখনৌতে। ১৯০৯ সালে চল্লিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
শর্মিষ্ঠার এক ছেলে – তাঁর নাম উইলিয়াম ব্রাইটম্যান স্যামুয়েল নিস্ (William Brightman Samuel Nyss)। তিনি দার্জিলিঙে আবগারি বিভাগে কাজ করতেন। ইনিই সম্ভবত মধুসূদনের সরাসরি পৌত্র যাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে।

কোনও লেখাতে উল্লেখ না পেলেও আমি আন্দাজ করছি এই স্যামুয়েল নিস-এর দুই ছেলে গারনি (Garney) এবং এরল (Errol) আর মেয়ে রুবি মার্টল নিস্ (Ruby Myrtle Nyss)।

বহুমুখী প্রতিভাধর গারনি জন্মেছিলেন ১৯১৬ সালে। আট বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবার থেকে একটি বক্স ক্যামেরা উপহার পান, এবং তখন থেকে দার্জিলিঙের ছোট ট্রেনের ছবি তোলায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাঁর ভাই এরলও অপেশাদার থেকে ক্রমশ ছবি তোলায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং দুই ভাই মিলে ১৯৩০ সালে কলকাতায় নিস্ ফোটোগ্রাফি (Nyss Photography) নামে ছবি তোলার দোকান খোলেন। সারা ভারতে তোলা গারনির ছবির সংগ্রহ নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ১৯৪০ সালে একটি দামী বই প্রকাশ করে। কিন্তু ছবি তোলার চেয়েও তাঁর বেশি উৎসাহ ছিল স্টিল গিটার বাজানোতে, একটি ব্যান্ড শুরু করেছিলেন ১৯৩৮ সালে। গারনি নিস্ বাংলার ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট দলের অংশ ছিলেন, ব্যাডমিন্টন খেলাতেও পারদর্শী ছিলেন বলে জানা যায়। লাগাতার আঠারো বছর বাংলার হকি দলে খেলেছেন। হিমালয়ের পাখি এবং মাদার টেরেসাকে নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র। পক্ষীবিদ্যায় তাঁর জ্ঞানের পরিধি দেখে সালিম আলি তাঁর সঙ্গে একত্রে একটি বই লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন – কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এসবের সঙ্গে ১৯৪০এর দশকে গারনি এইচ এম ভি রেকর্ড কোম্পানির জন্য প্রায় ষাটখানা হাউয়াই দ্বীপের সঙ্গীতের রেকর্ড করেন। ক্যালকাটা স্কুল অফ মিউজিকে তিনি শেষ জীবন অবধি সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন, এবং স্টিল গিটারে শুধু হাওয়াই এর বাজনা নয়, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও যে বাজানো যায় তা শেখাতেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মারা যান।

এরপর থেকে তথ্য সবই সহজলভ্য। গারনির বোন রুবি নিস্ ও তাঁর স্বামী মাইকেল ডাটনের (Michael Dutton) মেয়ে জেনিফার ডাটন (Jennifer Dutton) ভারতীয় বাস্কেটবল দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। বিয়ের পরে তাঁর নাম হয় জেনিফার পেজ। তাঁর ছেলেই আমাদের গর্ব, লিয়েন্ডার।

সুতোর জট ছাড়ানো গেল অবশেষে, অর্থাৎ লিয়েন্ডার হলেন মধুসূদনের প্রো প্রো পৌত্রীর পুত্র। আরেক রেনেসাঁস পুরুষ, যিনি ভারতকে জগৎ সভায় স্থান করে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

Author Shekhar Guha
শেখর গুহ
শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।
Picture of শেখর গুহ

শেখর গুহ

শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।
Picture of শেখর গুহ

শেখর গুহ

শেখর গুহ পেশায় আলোকবিজ্ঞানী। তাঁর শখ কলকাতা ও বাংলার ইতিহাস ঘাঁটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com