Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উত্তুরে ধারাজল

অপূর্ব দাশগুপ্ত

অক্টোবর ৩১, ২০২২

North Bengal Flood
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

আলোটা আসছে আকাশ থেকেই,গত তিন দিনের সম্পূর্ণ লোপাট আকাশ থেকে। প্রথম থেকেই বাতাস দিয়ে শুরু, পরে বৃষ্টি এসেছে। যেন, দিন তিনেক আগে বুধবারে, এখানকার আকাশে,বাতাসই কোথাও থেকে খেদিয়ে নিয়ে এল মেঘ। তারপর বাতাসই সেগুলোকে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে,ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আকাশ আর তিস্তার মাঝখানের ফাঁকটা সপূর্ণ ভরে দিল। দিনের বেলা সূর্য দেখা যাচ্ছে না- আলোও মাঝেমধ্যে এত কমে আসছে যেন প্রায়ই আকাশে সন্ধ্যা ঘনিয়ে উঠছে আর ওপরে মেঘ, নীচে নদীর জলের মাঝখানে আকাশ জুড়ে বাতাসে একেবারে দাপটে বেড়াচ্ছে। এই বাতাসে জল বাড়ে। এ বাতাস এখানকার বন্যার বাতাস না। ওপরে,পাহাড়ের ভেতরে কোথাও বর্ষা শুরু হয়েছে- সেই বর্ষা যা মাটির তলায় ঢুকে যায়, তারপর সেখান থেকে মাটি ফুঁড়ে, গাছ উপড়ে, পাথর টলিয়ে নেমে আসে নদীকে একেবারে দ্বিগুণ তিনগুন চওড়া করতে-করতে। এখন তো তিস্তার প্রায় মাথা থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁধে মোড়ানো। কিন্তু, বাঁধ তো আর মাটিকে গভীর করে তুলতে পারে না। খাত-পাওয়া জল ফুঁসে উঠে বাঁধের গায়েই ধাক্কা মারতে চায় তারপর আবার বিপরীত আক্রোশে ফিরে আসে কিছু মাটি খুবলে নিয়ে।

(দেবেশ রায়, তিস্তা পারের বৃত্তান্ত) 

তিস্তার এই যে প্রাক-বন্যা বিবরণ,তা আসলে উত্তরবঙ্গের সমস্ত প্রধান নদীগুলির বর্ণনা হিসেবে ধরে নেওয়া চলে। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে যে অন্তহীন খেলা চলে আসছে সৃষ্টির সেই অনাদি কাল থেকে, তার মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় হয়তো বন্যা। প্রকৃতির একটা নিজস্ব নিয়ম থাকে,সেই নিয়মকে আমরা শৃঙ্খলা বলতে পারি, কিন্তু এই শৃঙ্খলার মধ্যে অতি দীর্ঘ সময় বাস করেও মানুষ কি শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে পেরেছে? কোনও কোনও দার্শনিক মনে করেন, প্রকৃতির এই শৃঙ্খলার মধ্যে কাটিয়ে মানুষ হয়ে ওঠে যুক্তিবাদী আর তার সঙ্গে যখন যুক্ত হয় নৈতিকতা, তখন মানুষ আদর্শ সমাজ তৈরি করতে পারে আর প্রকৃতির সঙ্গেও চলতে পারে নিপুন বোঝাপড়া। কিন্তু মানুষ তা হয়ে উঠতে পারেনি। প্রকৃতি তার নিজের রাজ্যে একধরনের সমন্বয় বজায় রাখতে চায়। যেমন হিমালয়ের সঙ্গে নেমে আসা নদীগুলির সমন্বয় বজায় রাখতে প্রকৃতির নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। এই যে নদীর পাড় ভেঙে যায়, নদীর চলার পথ পরিবর্তিত হয় বারে বারে, অথবা আকস্মিক প্লাবন আসে– এ সবই প্রকৃতির সমন্বয় রক্ষার পন্থা। কিন্তু মানুষ বারে বারে প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে হস্তক্ষেপ করেছে। উন্নয়নের নামে, বসতি স্থাপনের নামে, সেই বসতগুলিতে  জীবন ধারণের উপকরণ পৌঁছনোর নামে তৈরি করেছে রাস্তা, সেতু, নষ্ট করেছে বনজসম্পদ। তৈরি করা হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র,কর্মসংস্থানের ব্যব্যস্থা করতে অরণ্যভূমি পরিনত হয়েছে কৃষি জমিতে। প্রকৃতিকে নিজের নিয়মে থাকতে না দেবার উদাহরণ আরো আছে কিন্তু তার সংখ্যা আর বাড়িয়ে লাভ নেই।

ভারতবর্ষে বন্যা একটি আবর্তক ঘটনা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বছরে অন্তত পাঁচবার বা তারও বেশি বড়রকমের বন্যা হয়ে থাকে। বন্যা-প্রবণ অঞ্চলে তো বটেই, ইদানীং বন্যাপ্রবণ নয় বলে পরিচিত স্থানেও বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। আর বন্যা মানেই মানুষ, বন্যপ্রাণী ও গবাদি পশুর জীবনহানি। বিনষ্টির আওতায় আসে সম্পত্তি,বহু অর্থব্যয়ে গড়ে ওঠা পরিকাঠামো। বন্যা প্রবণ এলাকাগুলিতেও বাড়ছে বসতি, নগরায়ণ, তার হাত ধরে আসে ‘উন্নয়ন’ নামের কার্যকলাপ ও বিবিধ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ। ক্ষতি তাই দিন-কে-দিন বাড়তেই থাকে। যাইহোক, আলোচনার ব্যপ্তি কমিয়ে আনতে এবার উত্তরবঙ্গের বন্যা প্রসঙ্গে আসা যাক। উত্তরবাংলার দুটি জেলায় আমাদের নজর থাকবে– জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার। বহু বছর ধরেই জেলাদুটি বন্যাপ্রবণ। তবে জলপাইগুড়িতে ১৯৬৮ সালে আর আলিপুরদুয়ারে ১৯৯৩ সালের প্লাবন দুটি মানুষ মনে রেখেছেন। কারণ, এ দুই প্লাবনের জল, মাঠঘাট গ্রাম ছাড়াও ভাসিয়েছিল শহর। মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণ গিয়েছিল অজস্র। এ লেখায় এই দুটি বন্যার কথা বলব। 

উত্তরবঙ্গের অবস্থান হিমালয় ও হিমালয়ের ক্রমবিন্যাসের পদপ্রান্তে। ছোটখাটো প্লাবনের কথা যদি উপেক্ষাও করি তবু বারংবার,অসংখ্যবার এই অঞ্চল ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে ছোটবড় নদীর অভাব নেই। তাছাড়াও আছে অগন্য ঝোরা, একটি থেকে আর একটির দূরত্ব বেশি না। এই নদীগুলির উৎস উচ্চ হিমালয়ের হ্রদগুলিতে অথবা তুষার-রাজ্যে। সরকারি নথিতে জলপাইগুড়ির প্রথম নথিভূক্ত বন্যার খবর হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে  ১৭৮৭ সালের বন্যা। এই বন্যার পূর্বে তিস্তা নদী মিশত গিয়ে গঙ্গায়। ১৭৮৭ সালের বন্যার পর তার গতিপথের আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটল। পুরনো একটা খাত ধরে সে তার যাত্রা শেষ করল ব্রহ্মপুত্রে। উত্তরঙ্গের বন্যার বর্ণনা প্রসঙ্গে বারবার এসে পড়ে তিস্তা নদীর কথা তাই এর সংক্ষিপ্ত একটা পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। পূর্ব হিমালয়ের পাউহানরি পাহাড়ে তিস্তার জন্ম। আমাদের দেশের অনেকগুলি স্থান ছুঁয়ে সে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। ভারতে তার চলার পথে পড়েছে গ্যাংটক, কালিংপং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা,বাংলাদেশে পৌঁছে সে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে। 

ভারতবর্ষে বন্যা একটি আবর্তক ঘটনা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বছরে অন্তত পাঁচবার বা তারও বেশি বড়রকমের বন্যা হয়ে থাকে। বন্যা-প্রবণ অঞ্চলে তো বটেই, ইদানীং বন্যাপ্রবণ নয় বলে পরিচিত স্থানেও বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। আর বন্যা মানেই মানুষ, বন্যপ্রাণী ও গবাদি পশুর জীবনহানি। বিনষ্টির আওতায় আসে সম্পত্তি,বহু অর্থব্যয়ে গড়ে ওঠা পরিকাঠামো। বন্যা প্রবণ এলাকাগুলিতেও বাড়ছে বসতি, নগরায়ণ, তার হাত ধরে আসে ‘উন্নয়ন’ নামের কার্যকলাপ ও বিবিধ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ। ক্ষতি তাই দিন-কে-দিন বাড়তেই থাকে। 

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার অঞ্চলে বন্যার মূল কারণগুলি দেখা যাক এবার। ক্ষুদ্র অববাহিকায় স্বল্পবর্ষণ এবং বড় অববাহিকায় বেশ কয়েকদিন ভারী বর্ষণ, সেইসঙ্গে পাহাড়চূড়ায় বরফ গলাই মূলত উত্তরবঙ্গে প্লাবনের হেতু। এছাড়া নদীগুলিতে ক্রমাগত পাড় ভাঙতে থাকে এবং তারা চলার পথ ক্রমশ পরিবর্তন করে। উপরন্তু জলপাইগুড়ির জল নিকাশী ব্যবস্থা বন্যার অনুকূল নয়। জলপাইগুড়ি অঞ্চল হিমালয়ের নিকটবর্তী হবার কারণে এখানে বৃষ্টিপাত অবিশ্রান্ত। ভূসংস্থানিকভাবে জলপাইগুড়ি অঞ্চল অনতিউচ্চ হওয়ায় নদী থেকে উপচে যাওয়া জল শুষ্ক অঞ্চলের ভূখন্ডগুলিকেও সহজে ভাসিয়ে দেয়। উপজাতিদের জীবনধারনের কথা মাথায় রেখে অরণ্যাঞ্চলে গোচারণের অবাধ সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বনজাত অপ্রধান বা গৌন বনজ সম্পদ সংগ্রহের অধিকারও তাদের রয়েছে। তাই নদীর তীরবর্তী অরণ্যভূমিতে গবাদিপশু ও মানুষের অবাধ বিচরণ চলে। ফলে যে সমস্ত নালা বা খাত বেয়ে বর্ষার জল বন থেকে এসে নদীতে পড়ে, সেই খাতগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং খাতগুলির পলি টানার ক্ষমতাও কমে যায়। 

এর উপর আছে অরণ্যবিনাশ। অরণ্যবিনাশের অনেকগুলি ক্ষতিকর দিক আছে, যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিপর্যয়,আবহাওয়ার পরিবর্তন, বায়ু দূষণ এবং ভূমিক্ষয়। একসময় জলপাইগুড়ি ছিল অরণ্যভূমি। শ্বাপদসংকুল গহীন বনরাজ্য। চা-বাগান পত্তনে ধ্বংস হয়েছে বনভূমি। চাষের জন্যেও বনের বিনাশ ঘটেছে। তৈরি হয়েছে রাস্তা, বসেছে রেললাইন। ফলে ধস, ‘সিট ইরোসন’, ’স্লোপ ফেইলিয়র’ এবং উচ্চ আববাহিকায় ঘন ঘন ধস নামার কারণে হিমালয়বাহী প্রধান নদীগুলিকে প্রচুর পরিমাণ রাবিশ বহন করতে হয়। নদীর দুকূলে জমতে থাকে পলি। এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে নদীগুলির পার্শ্বিক দূরত্ব কম হওয়ায় নদীগুলি প্রায়ই মিলিত হয় এবং নদীপথের চলন প্রায়সই দিক পরিবর্তন করে। উত্তরবঙ্গের প্রধান নদীগুলি, যেমন তিস্তা, রায়ডাক্‌, তোর্সা, কালজানি ইত্যাদি নদীগুলি বারংবার দিক পরিবর্তন করেছে। নদীর উপর বা রাস্তা নির্মাণের সময় যে সেতুগুলি তৈরি করা হয় তার পিলার বা খুঁটিগুলি নদীর স্বাভাবিক ভারবহনের ক্ষমতার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে জমতে থাকে মাটি, বোল্ডার ও জল-বাহিত ডালপালা, যেগুলি নদীর চলার পথকে ক্ষীণ করে তোলে। তার উপর বেশ কয়েকবছর ধরে উত্তরঙ্গে  ‘পর্যটন’ বৃদ্ধি পাওয়ায় দূষণ বাড়ছে। জয়ন্তী,মূর্তি ইত্যাদি নদীর তীরে অগুন্তি রিসর্ট তৈরি হয়েছে। ফলে নদীর দুই তীর প্ল্যাস্টিক ও আবর্জনায় ভরে উঠছে।

Bengal Flood

১৯৬৮। জলপাইগুড়ি। 

জলপাইগুড়িতে অজস্রবার বন্যা হয়েছে। ১৯৬৮ সালের বন্যা তার মধ্যে  অন্যতম। আমরা এই ’৬৮ সালের বন্যাটির দিকে দৃষ্টি রেখে এই জেলার বন্যার গতিপ্রকৃতিকে বুঝে নেবার চেষ্টা করব। ১৯৬৮ সালের বন্যা এতটাই ভয়াবহতা নিয়ে এসেছিল যে অনেকে বলেন, তা জলপাইগুড়ির ভবিষ্যত উন্নয়ন এবং প্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’৬৮-এর বন্যা ছিল আকস্মিক আর এই আকস্মিকতার কারণে তা ছিল সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক। মানুষ যেমন, তেমনি গবাদিপশুরাও অসহায় ভাবে এই বন্যায় মারা গিয়েছে। সে বছরে তিস্তার অববাহিকায় নিদারুণ ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। সিকিম এবং দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল ১ অক্টোবর থেকে। একটানা সেই দুর্যোগ চলেছিল ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। ফলে তিস্তার জল ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। 

তিস্তা নদীর উপরে অ্যান্ডারসন ব্রিজে বর্ষার স্বাভাবিকের তুলনায় ১২ মিটার উপরে জল উঠে গিয়েছিল সে বারে। কেবিল ব্রিজ ধুয়ে মুছে গিয়েছিল। সেবক থেকে মেখলিগঞ্জ প্রায় ধংসপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পাহাড়পুরে বাঁধ ভেঙে জলের স্রোত এসে ঢোকে করলা নদীতে এবং তার গতিপথ বাঁক নেয় শহরের দক্ষিণ দিকে। করলার ঘোলা কর্দমাক্ত জল প্রবেশ করে শহরের বাড়িতে, রাস্তায়, গলিতে গলিতে। জলপাইগুড়ি শহরে জল ঢুকেছিল গভীর রাতে। শহরের সমস্ত এলাকা জলপ্লাবিত হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রায়কতপাড়া, সমাজপাড়া, সেনপাড়া, পুরনো পুলিশলাইন, শান্তিপাড়া, দেশবন্ধুপাড়ার মতো জায়গাগুলি। তিস্তা সেবার ৬ লক্ষ কিউসেক জল বহন করে এনেছিল। দার্জিলিং ও সিকিমে এই বিষম বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার জলরাশি হঠাৎ দ্রুতবেগে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। এতটাই আকস্মিক ও দ্রুত ছিল সে উত্থান যে মানুষ সাবধান হবার সময়টুকু পায়নি। তাছাড়া তখন তো রাতের আঁধার। জলের প্রাণঘাতী স্রোত থেকে তাদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি। জলপাইগুড়ি আর আশপাশের অঞ্চল প্রায় তিন থেকে ছয় ফুট জলের তলায় ৩৬ ঘণ্টা থাকার পর জলস্তর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছিল। অনেক জায়গায় সাতদিন পর্যন্ত লেগেছিল জল নামতে।

একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে শহরের মধ্যে ২১৬ জন মানুষ, ১৩৭০টি গবাদিপশুর জীবনহানী হয়েছিল এবং ৩৪৫৬টি বসতবাড়ি ধসে গিয়েছিল। এ বন্যার অন্যতম কারণ ছিল বাঁধগুলিতে ভাঙন এবং নদীর বুকে পলির স্তর বেড়ে যাওয়া। তিস্তার জল খরখড়িয়া দিয়ে ঢুকে পাঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে এহেন বিরাট রূপ নেয়। প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেনি কারণ সাধারণ মানুষের মতো প্রশাসনও সজাগ ছিল না। ৫ অক্টোবর জলপাইগুড়ির ডেপুটি কমিশনার নানা বাধা পেরিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছতে পারেন এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সাহায্যের জন্য আবেদন পাঠান। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ির মানুষেরা উল্লেখযোগ্য ত্রাণের ব্যবস্থা নেন। আসেন ভারত সেবাশ্রম এবং রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবীরা। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা আমার দিদির কাছে ’৬৮-এর বন্যার অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাইছিলাম। একটি ঘটনা তার পাড়াতেই, তার পাশের বাড়ির ঘটনা। পাশের বাড়ির মানুষটির পরিবারে তিনি ছাড়া ছিলেন স্ত্রী ও দুটি ছোট ছেলে। উঠোনে পাশাপাশি দুটি ঘর। উচ্চতায় একটি অন্যটির তুলনায় খানিকটা বড়। তাঁরা বসবাস করতেন ছোট ঘরটিতে। বাড়ি বলতে উত্তরবঙ্গে এককালে যেমন বাড়ি ছিল তেমন। টিনের চাল কাঠের দেওয়াল। 

অরণ্যবিনাশের অনেকগুলি ক্ষতিকর দিক আছে, যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিপর্যয়,আবহাওয়ার পরিবর্তন, বায়ু দূষণ এবং ভূমিক্ষয়। একসময় জলপাইগুড়ি ছিল অরণ্যভূমি। শ্বাপদসংকুল গহীন বনরাজ্য। চা-বাগান পত্তনে ধ্বংস হয়েছে বনভূমি। চাষের জন্যেও বনের বিনাশ ঘটেছে। তৈরি হয়েছে রাস্তা, বসেছে রেললাইন। ফলে ধস, ‘সিট ইরোসন’, ’স্লোপ ফেইলিয়র’ এবং উচ্চ আববাহিকায় ঘন ঘন ধস নামার কারণে হিমালয়বাহী প্রধান নদীগুলিকে প্রচুর পরিমাণ রাবিশ বহন করতে হয়।

জল যখন রাতের দিকে এলো এবং ঘরে ঢুকতে শুরু করল, আর সবার মতোই তিনিও ভেবেছিলেন বৃষ্টির জমা জল ঘরে প্রবেশ করেছে। তিস্তা যে ভয়ংকর রূপ নিয়ে বাঁধ ভেঙে শহরে হানা দিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেননি। যখন বুঝলেন, জল তখন খাট ডিঙিয়ে আরো উঠে পড়েছে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই জলের উচ্চতা বাড়ছে, তখন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুই পুত্রকে নিয়ে উঠোনে নামলেন, পাশের ঘরটির টিনের চালে আশ্রয় নেবেন বলে। গৃহস্বামী প্রথমে দুই পুত্রকে চালের উপর তুললেন। স্ত্রীকে তোলা সহজ হল না। তিনি এবার নিজে প্রথমে চালে উঠে তারপর স্ত্রীকে টেনে তুলবেন মনস্থ করে চালে উঠলেন। কিন্তু বন্যার জলের উচ্চতার সঙ্গে জলের টানও বাড়ছিল। দুই পুত্র ও স্বামীর চোখের সামনে স্ত্রী ভেসে গেলেন। পরদিন বিকেলে কিছুটা জল নামলে মানুষটি পুত্রদের চালের উপরে বসিয়ে রেখেই একটা বড় গাছের ডাল নিয়ে যেদিকে মহিলা ভেসে গেছেন, প্রাণ হাতে নিয়ে সেদিকে চললেন। বেশিদূর যেতে হল না, একটু দূরেই বড় একটি উৎপাটিত গাছের মধ্যে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হল। 

এখন, এতবড় একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতে পারে, প্রশাসনের কাছে কি কোনও খবর ছিল না? ৪ অক্টোবর জলপাইগুড়ির প্রশাসন কি আসন্ন দুর্যোগের কোনও খবরই পায়নি? পেয়ে থাকলে সে খবর নগরবাসীকে জানায়নি কেন? এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। অনেক মানুষই নাকি কমিটির কাছে বলেছিল যে তারা সকাল থেকে গুজব শুনছিল, সরকারি দপ্তরে খবর এসেছে যে তিস্তা থেকে বিপদ আসতে পারে। অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে। সেখানে তাঁরা খবর পান যে, মণ্ডলঘাটে বন্যা হতে পারে কিন্তু জলপাইগুড়ি নিরাপদ। অতীতে বহুদিন পর্যন্ত কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় মানুষকে সতর্ক করে দেবার ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীন ছিল। বন্যা যেদিন এলো, সেদিন সকাল সাড়ে সাতটায় একবার এবং সাড়ে আটটা নাগাদ আর একবার কালিংপং থেকে সতর্কবার্তা এসেছিল। কিন্তু জলপাইগুড়ির জনসাধারণকে তা জানানো হয়নি। যদি ঢাক পিটিয়ে অথবা সাইকেল রিক্সায় মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হত তবে অনেক প্রাণ বেঁচে যেতেও পারত। বিশেষত মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধেরা। ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’ সংবাদপত্রে লেখা হয়: উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ৩০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। জলপাইগুড়ি শহর ১৫ ফুট জলের তলায়। ৮ অক্টোবর ‘অমৃতবাজার’ খবর  করেছিল: জলপাইগুড়ি এখন মৃতের শহর। শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে শহরের বুকে। বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, সামনে মহামারীর আশঙ্কা।

North Bengal Flood

১৯৯৩। আলিপুরদুয়ার। 

পূর্ব ডুয়ার্সের বড় জনপদ আলিপুরদুয়ার। সবচেয়ে বড় শহরও বটে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কালজানি নদী। কালজানি তোর্সার শাখানদী। মাঝে এর সঙ্গে মিশেছে ডিমা নদী। আলিপুরদুয়ারের আর এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নোনাই। কিছুটা দূরে,এই জেলার মধ্যেই রয়েছে আরও কতগুলি নামকরা নদী, যেমন তোর্সা, রায়ডাক, জয়ন্তী, সংকোশ ইত্যাদি। বেড়াতে গিয়ে আমরা প্রায়ই দেখি এসব নদীগুলির এপার ওপার প্রায় বালি আর বোল্ডার দিয়েই আচ্ছাদিত। হয়তো মাঝখান দিয়ে অথবা পাড়ের কাছাকাছি ক্ষীণ জলধারা বয়ে চলেছে। আমরা যা দেখতে পাই না বা কল্পনাও করতে পারি না, তা হল নদীগুলির বর্ষার ভয়াল রূপ। 

আলিপুরদুয়ার বরাবরই বর্ষাপ্রবণ অঞ্চল। মোটামুটিভাবে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এখানে নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি চলে। শহরে প্রায় প্রতি বছরই জল ঢোকে অল্পবিস্তর। তবে মাঝে মাঝে ভয়ানক আকার নেয়। যেমন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। গত শতকের ষাট সত্তর দশকেও আলিপুরদুয়ারের আশপাশের চা-বাগানে বৃষ্টির প্রাচুর্য থাকলেও চা-বাগানে বন্যা দেখা যায়নি। চা-বাগানে জল জমে না বলেই এখানকার মাটি চা চাষের উপযোগী। কিন্তু এ শতকের প্রথম থেকেই চা বাগান সন্নিহিত নদীগুলির আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। নদীর অভিমুখ ঘুরে গিয়ে জল ঢুকছে চা বাগানে। এদিকে অত্যাধিক পলিবহন করার ক্ষমতা নদীর আর নেই। তাই পাড় উপচে জলপ্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চব। আলিপুরদুয়ার শহরে অন্তত একলক্ষ মানুষ প্রতিবছর গৃহহারা হন অথবা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন নদীগুলো থেকে। এ অঞ্চলের প্রায় সব নদীরই জন্মস্থান ভুটান পাহাড়ে। পাহাড়ে বৃষ্টি হলে তাই নদীগুলি হিংস্র রূপ নেয়। এ তো বলা হল বৃষ্টির কথা। কিন্তু এর মধ্যেও যে সময়টা গরম পড়ে, কিছুদিনের জন্যে হলেও তা কিন্তু তুচ্ছ নয়। এ সময়ে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকে। এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভবনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনুস্রবণের (percolation) অনুপাতও হ্রাস পায়। মাটির জল শোষণের মাত্রা কমে যায়। অতিবৃষ্টির জল মাটির উপর দিয়ে বয়ে চলে ও শেষে নদীতে গিয়ে পড়ে। এই জল যখন কালজানি নদীতে পড়ে তখন প্লাবনের জল পাড় ভাসিয়ে দেয়, আলিপুরদুয়ার শহরে জল ঢুকে পড়ে। 

পাহাড়পুরে বাঁধ ভেঙে জলের স্রোত এসে ঢোকে করলা নদীতে এবং তার গতিপথ বাঁক নেয় শহরের দক্ষিণ দিকে। করলার ঘোলা কর্দমাক্ত জল প্রবেশ করে শহরের বাড়িতে, রাস্তায়, গলিতে গলিতে। জলপাইগুড়ি শহরে জল ঢুকেছিল গভীর রাতে। শহরের সমস্ত এলাকা জলপ্লাবিত হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রায়কতপাড়া, সমাজপাড়া, সেনপাড়া, পুরনো পুলিশলাইন, শান্তিপাড়া, দেশবন্ধুপাড়ার মতো জায়গাগুলি।

ভুটানে যে নদীগুলির উৎস, যেমন তিস্তা, যার থেকে কালজানি নদীর উৎপত্তি, সেগুলিতে ভুটান ভূমিতে কোনও বাঁধ নেই,জলাধারও নেই। অন্যদিকে ভুটানের পাহাড়ে ডলোমাইট কাটা হয়। নদীগুলি দিয়ে তাই প্রচুর পরিমানে ডলোমাইটের চূর্ণ বাহিত হয়। ভেসে আসে নুড়িপাথর ও বোল্ডার। উচ্চ অববাহিকা থেকে সে সব এসে জমা হয় নীচের কালজানি অথবা ডিমার মতো নদীতে। আলিপুরদুয়ারয়ে ১৯৯৩ সালে শহরে আবর্জনা নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। প্রতিটি বাড়ির আবর্জনা বাড়ির বাইরে ফেলা হত। কাপড়জামা কাচা হত কালজানির দুই পাড়েই। শহরের যত আবর্জনা নদীর দু’পাড়ে জমে যেত। সেবার আলিপুরদুয়ারে কেউ কিছু ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই শহরে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। জলপাইগুড়ির বন্যার সঙ্গে এর তফাত ছিল এই যে, জলপাইগুড়িতে জল ঢুকেছিল গভীর রাতে আর আলিপুরদুয়ারে বিকেল তিনটে-সাড়ে তিনটে নাগাদ। তাই জলপাইগুড়ির মতো প্রাণহানী না হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নেহাত কম ছিল না। মারা গিয়েছিল প্রায় ৬২/৬৩ জন মানুষ। গবাদি পশুগুলি অসহায়ভাবে মারা গেছে অনেক। কদিন থেকেই আলিপুরদুয়ারে চলছিল নিরবচ্ছিন্ন বর্ষণ। বাড়ির উঠোনে, মাঠেঘাটে জল জমছিল। এসব তো প্রতিবারই হয়। বিকেলের দিকে যখন ঘোলা জল ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতে শুরু করল তখন চারদিক থেকে শোনা যেতে লাগল, কালজানির লকগেট ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে শহরে। সে সময় আলিপুরদুয়ারের বেশিরভাগ বাড়ি ছিল একতলা। টিনের চাল। প্রতিটি পাড়ায় দু’একটা বাড়ি হয়তো ছিল কাঠের দোতলা। সেগুলিও প্রাচীন ও নড়বড়ে। একতলার বাসিন্দারা যখন বুঝতে পারল যে ঘরে আর থাকা চলবে না, তখন পাড়ার সেসব দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিতে তারা রওনা হল। কোমরসমান জল, বৃদ্ধ ও শিশুদের পিঠে কাঁধে নিয়ে যুবকেরা বেড়িয়ে পড়ল। 

এ শতকের প্রথম থেকেই চা বাগান সন্নিহিত নদীগুলির আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। নদীর অভিমুখ ঘুরে গিয়ে জল ঢুকছে চা বাগানে। এদিকে অত্যাধিক পলিবহন করার ক্ষমতা নদীর আর নেই। তাই পাড় উপচে জলপ্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চব। আলিপুরদুয়ার শহরে অন্তত একলক্ষ মানুষ প্রতিবছর গৃহহারা হন অথবা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন নদীগুলো থেকে। এ অঞ্চলের প্রায় সব নদীরই জন্মস্থান ভুটান পাহাড়ে। পাহাড়ে বৃষ্টি হলে তাই নদীগুলি হিংস্র রূপ নেয়। 

আশ্রয় তো মিলল, কিন্তু খাবার? সেসব গৃহস্থবাড়িতে যতটুকু চাল ডাল ছিল তাই রান্না করে সবাইকে দেওয়া হল। চার/পাঁচ জনের পরিবার পেল এক ছোট প্লেটের খিচুড়ি। শিশুদের সেটুকু দিয়ে অভুক্ত রইলেন বড়রা। দু’দিন এভাবেই কাটল। আমার এক বন্ধু গল্প বলেছিল, তাদের একতলা বাড়ির খাট ছাড়িয়ে জল উঠে গেলে তারা আর সাহস পায়নি বৃদ্ধা ঠাকুমা, বাবা-মাকে নিয়ে জলে নামতে। তাদের দোতলা ছিল না কিন্তু উপরে ওঠার সিঁড়িটুকু ছিল। সেখানেই তারা আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু তার শিশুটির কী হবে? সে খাবে কী সিঁড়িতে বসে থাকলে? সে সময় দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিল পাড়ারই পরিচিত এক রিক্সাওয়ালা, তাদের খবর নিতে। সে একটা ঝুড়ির উপর শিশুটিকে বসিয়ে মাথায় করে পৌঁছে দেয় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে। দু’দিন পরে কোচবিহার ও আশেপাশের নানা জায়গা থেকে যে সাহায্য এসেছিল তা অপ্রতুল। দু’দিন পেরিয়ে গেছে। সকলে বাড়ি ফিরে দেখল যে ইঞ্চি চারেক পলি জমে গেছে ঘরে। কোনওকিছুই ব্যবহারযোগ্য আর নেই। এ সময়ে এক অভিনব উপায়ে মানুষের চালের অভাব কিছুটা মিটল। নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল একটি চালবোঝাই মালগাড়ি। সুষ্ঠুভাবেই তার বন্টন হয়েছিল। 

আসলে, আমাদের প্রজন্মের জীবনের প্রথম ভাগে প্রকৃতির অবক্ষয় নিয়ে মানুষকে এতটা ভাবতে দেখিনি, যা এখন ভাবতে হচ্ছে। বনভূমি ছিল তার আদিমতা নিয়ে। জংগলের কাঠ চুরির গল্প ও পন্থা এতটা আগে শুনিনি। আদিবাসীদের পায়ের তলায় কিছু খনিজ পদার্থ থেকে থাকলেও এতো লোভ তো মানুষের দেখিনি যে তাদের ঠাঁইনাড়া করতে হবে! মানুষকে উচ্ছেদ করে বাঁধ, সেতু, বাড়ি তৈরি করা, আরো কত কী। সমস্ত ধরনের ক্ষমতা যাদের হাতে, তাদের প্রকৃতি ধ্বংসের নেশা অসহায় মানুষকে নানা ভাবে কষ্ট দিচ্ছে। তাই ‘মুক্তধারা’ নাটকের এই গানটি আজ সকলকে স্মরণে রাখতে বলি-

“ভাবছ,হবে তুমি যা চাও,
জগতটাকে তুমিই নাচাও,
দেখবে হঠাৎ নয়ন মেলে
হয়না যেটা সেটাও হবে।”

তথ্যসূত্র: 
1.Changes in river bed terrian and its impact on flood propagation – a casestudy of river jayenti,west Bengal by Ankita Paul & Mery Biswas
2. Causes of flood: A case studyof Jalpaiguri District.
Interview with: Nilima Dasgupta, Gautam Das. Bansari Sen Sharma.
*ছবি সৌজন্য: Business Standard

অপূর্ব দাশগুপ্ত 'পুরোগামী' পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অবসরপাপ্ত বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক।

Picture of অপূর্ব দাশগুপ্ত

অপূর্ব দাশগুপ্ত

অপূর্ব দাশগুপ্ত 'পুরোগামী' পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অবসরপাপ্ত বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক।
Picture of অপূর্ব দাশগুপ্ত

অপূর্ব দাশগুপ্ত

অপূর্ব দাশগুপ্ত 'পুরোগামী' পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অবসরপাপ্ত বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com