(Zubeen Garg)
-দিদি, এবার পুজোর অ্যালবাম কোথায়?
-গতবারের অ্যালবাম কেমন লেগেছিল?
ছয় বছর আগে পুজোর মুখে এমন একটা অসামান্য বুদ্ধিদীপ্ত পোস্ট করেছিলেন লোপামুদ্রা মিত্র।
তাঁর একটা প্রশ্নোত্তর পর্বই বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, পুজোর গানের সাম্প্রতিকতম সমস্যা কোথায়। বর্তমান শ্রোতাদের অধিকাংশের সাম্প্রতিকতম গান এবং গান-বাজনার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। (Zubeen Garg)
জানেনই না, বহুকাল হল পুজোর গানের প্রচলিত ধারণা উঠে গিয়েছে। গানের অ্যালবাম আর বেরোয় না। গায়কদের কিছু করার নেই, রেকর্ড কোম্পানিগুলোই উঠে গিয়েছে, তো গান হবে কী করে? রাসবিহারীর মোড়ের বিখ্যাত গানের দোকান মেলোডির এক কর্মী বছর কয়েক আগে আমার কাছে দুঃখ করেছিলেন, ‘লোকে তো কানে কর্ড লাগিয়ে নেট থেকে গান ডাউনলোড করে শুনে যায়। আমাদের দোকানে এসে গানের সিডি কিনবে কে?’ (Zubeen Garg)
আরও পড়ুন: দুর্নীতির শিকড় ও ডালপালার খোঁজে
শারদীয় পত্রিকাগুলো টিমটিম করে বেরোয়, আগের মতো বিক্রি হয় না, তবু বেরোয়! সংবাদপত্রগুলো টিকে রয়েছে বলে! লিটল ম্যাগ আগের মতো না চললেও সম্পাদক পুজোর সময় গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। তাই এসময়টা শারদ সংখ্যাটা বেরোয়। শারদীয় গান বের করবে কে? (Zubeen Garg)
এইচএমভির সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বহু আগেই গান নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ৯০ দশকের শুরুতে যখন একদিকে জীবনমুখী মাতাচ্ছে, অন্যদিকে রিমেক— সেই সময় কিছু ছোট ছোট কোম্পানি ব্যক্তিগত আগ্রহে গান নিয়ে নেমেছিল বাজারে। সাগরিকা, আটলান্টিস, গাথানি, বিটোফেন, অ্যাকর্ড, আশা। তাদের মালিকরা হয় আগ্রহ হারালেন, না হয় প্রয়াত হলেন। বাংলা পুজোর গানের সেখানেই ইতি। (Zubeen Garg)

যেদিন থেকে এইচএমভি তাদের ঐতিহ্যের শারদ অর্ঘ্য পত্রিকা বন্ধ করে দিল, সেদিন থেকেই মৃত্যুমুখে পা বাড়িয়েছিল বাঙালির পুজোর গান। তা শেষ হয়ে যায় ছোট ছোট কোম্পানিগুলো ঝাঁপ ফেলে দেওয়ায়। (Zubeen Garg)
“প্রতিবেশী রাজ্য অসমের গায়ক জুবিন গর্গের আকস্মিক মৃত্যু সবদিক থেকে চোখ খুলে দেয় আমাদের। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাঁদছেন এক গায়কের জন্য। বিস্তৃত রাজপথের চারপাশে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অজস্র বেদনাবিধুর মুখ।”
এখন পুজো এলে অবধারিতভাবে কাগজে কাগজে পুজোর গান নিয়ে লেখালেখি হয়। সেখানে প্রতিটি লাইনই নস্টালজিয়া আক্রান্ত। বর্তমান বলে কিছু নেই। লেখাগুলো তাই অধিকাংশ সময় দাঁড়ায় শারদ সংখ্যার মতো। কভারে শুধু বাংলা বছরটা পাল্টে দিলে যেমন একইরকম লাগে প্রতিবছর। মাঝে মাঝে কয়েকজন হয়তো ইউটিউবে নিজেদের গান পোস্ট করেন, কোথাও বা দু’তিন জন মিলে গান হল। লক্ষ্য সেই ফেসবুক, ইউটিউবের লাইক। (Zubeen Garg)
লোপামুদ্রার সেই পোস্টে সে সময় অনেক বিশিষ্ট গায়ক মন্তব্য করেছিলেন। তার মধ্যে শ্রীকান্ত আচার্যের কথাটা বেশ মনে আছে। শ্রীকান্ত লিখেছিলেন, এবার কোনও সিডি বের করছেন না? এই প্রশ্নের জবাবে আমি পালটা প্রশ্ন করি, “আপনার বাড়িতে সিডি প্লেয়ার আছে?” প্রশ্নকর্তা আমতা আমতা করে বলেন, “না, তা নেই… আসলে এখন তো আর ঠিক… ইয়ে, মানে…” আমি তখন আর একটি প্রশ্ন করি, “তাহলে আমি সিডি বের করলাম কী না করলাম, তাতে আপনার কী এসে যায়?” বাক্যালাপের এখানেই ইতি ঘটে।”
সত্যি তো, এখানেই ইতি টেনে দেওয়া ছাড়া কীই বা করণীয়? (Zubeen Garg)

বাঙালির পুজোর গানের এই জরাজীর্ণ দশার পাশে দুটো জিনিস নজর কাড়ল সম্প্রতি। একটি অস্থির করার মতো। একটি নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়ার মতো। প্রথমটা আগে বলি। পশ্চিমবঙ্গে সরকারের কিছু মন্ত্রী, নেতা, আমলার দৌলতে গানের জগৎ একেবারে স্পষ্ট দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছে। সরকারি মঞ্চের সব অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে কিছু শিল্পী হাজির। জুনিয়রদের মধ্যে জনা তিনেক, তাঁরাও একের পর এক কমন নাম। তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চেও একই নামের ঘোরাফেরা। যে রাজ্যে দুই গায়ক মন্ত্রী, সেখানে এমন ভাগাভাগির গান কি ভাল শোনায়? (Zubeen Garg)
সরকারি অনুষ্ঠানে কবীর সুমন, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, জয়তী চক্রবর্তী, শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো প্রতিষ্ঠিতদের সেভাবে দেখা যায় না কেন, কে জানে! তার চেয়েও বিরক্তিকর একই গায়ক গায়িকার গেয়ে যাওয়া। আম বাঙালির অনেককে প্রশ্ন করুন, অধিকাংশ বলবেন, মন্ত্রী হয়ে নিজের গায়ক সত্তার ক্ষতিই করেছেন ইন্দ্রনীল সেন ও বাবুল সুপ্রিয়। বিশেষ করে বাবুল। (Zubeen Garg)
“জুবিন অসমিয়াদের হৃদয়ে শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শেষ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই। তাঁর গলার রোমান্টিসিজম ও আবেগ কোথাও গিয়ে ধাক্কা মেরেছিল অসমিয়াদের হৃদকমলের তারে।”
আমাদের বাংলায় গান নিয়ে এই খেয়োখেয়ির পাশে প্রতিবেশী রাজ্য অসমের গায়ক জুবিন গর্গের আকস্মিক মৃত্যু সবদিক থেকে চোখ খুলে দেয় আমাদের। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাঁদছেন এক গায়কের জন্য। বিস্তৃত রাজপথের চারপাশে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অজস্র বেদনাবিধুর মুখ। কোথাও অঝোরে কাঁদছেন পুলিশ অফিসার, বিমানবন্দরে হাউ হাউ করে কাঁদছেন নিরাপত্তারক্ষী, বিমানবন্দরের কর্মীরা। ছোট ছোট শহর থেকে রাজ্যের রাজধানীতে লোকে ভিড় করছে তাঁকে শেষবার দেখতে। কুড়ি লক্ষ লোকের ভিড়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তাঁর শেষ যাত্রা। এমন সম্মান লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়রাও পাননি। জুবিনের নিজের রাজ্য অসমে, ভূপেন হাজারিকা ভারতরত্ন পেলেও এত সমুদ্রময় ভালবাসা পাননি শেষ যাত্রায়। (Zubeen Garg)
কোনও গায়কের জন্য ধর্মা ধর্মে বিধ্বস্ত একটি রাজ্যে এক হয়ে যাচ্ছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ? সব পার্টির নেতারা একসঙ্গে কাঁদছেন অন্তর থেকে? অসম কেন, এ দৃশ্য প্রথম দেখল ভারতও। জুবিনের শেষ যাত্রার জনসমাগমের সঙ্গে তুলনা চলছে রানি এলিজাবেথ, পোপ ফ্রান্সিস, মাইকেল জ্যাকসনের শোক মিছিলের। এক গায়কের জন্য এত এত ভালবাসা রেখে দেওয়া যায়? (Zubeen Garg)
কীভাবে এই সমুদ্রসম আবেগের বিস্ফোরণ ঘটাতে পেরেছিলেন জুবিন? খুবই কর্কশ এবং বাস্তব তথ্য বলছে, প্রথমদিকে দারুণ সাড়া ফেললেও ‘ইয়া আলি’র গায়ক পরের দিকে মুম্বইয়ে তলিয়ে যাচ্ছিলেন। বলিউডে গায়কদের সাফল্যের পরিমাপক ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে কিন্তু সেরা গায়কের একটা নমিনেশন পর্যন্ত পাননি জুবিন। (Zubeen Garg)
আরও পড়ুন: ফুলের জলসায় ফুলমালা ডোরে কলকাতা
তিনি নিজে মুম্বইকে উপেক্ষা করে অসমে ফিরে গিয়েছিলেন, না তাঁর অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্য মুম্বই-ই তাঁকে উপেক্ষা করেছিল, এ নিয়ে তর্ক চলবে বহুদিন। তবে যা নিয়ে তর্ক করার উপায় নেই, সেটা হল, জুবিনের মধ্যে বহু দিন বাদে এক মহানায়ককে খুঁজে পেয়েছিল অসমের নতুন প্রজন্ম। ভূপেন হাজারিকা মুম্বই প্রবাসী হয়ে যাওয়ার পর অসমের লোকেদের হাতে কোনও গর্ব করার মতো তারকা ছিল না। না সিনেমায়, না গানে। তারপর এই আকস্মিক বেদনাদায়ক চলে যাওয়া তাঁকে ইতিহাসে ঢুকিয়ে দিল। এমন অকাল প্রয়াণ তারকাদের অনেককে এমনিতেই আরও মহান করে দিয়ে যায়। (Zubeen Garg)
জুবিন অসমিয়াদের হৃদয়ে শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শেষ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই। তাঁর গলার রোমান্টিসিজম ও আবেগ কোথাও গিয়ে ধাক্কা মেরেছিল অসমিয়াদের হৃদকমলের তারে। যে রোমান্টিসিজম এখন আর বেশি ধরা পড়ে না কোনও গায়কের গলায়। ওই রোমান্টিসিজম স্নিগ্ধ আলোর মতো তাঁর সেরা ফর্মের গলায় জড়িয়ে ছিল বলেই জুবিন যখন পুড়ে যাচ্ছেন, সেই আগুন ঘিরে কয়েক হাজার জনতা গাইছিল তাঁর প্রেমেরই অমর গান— মায়াবিনী রাতির বুকুট, দেখা পালু তুমার সবি। (Zubeen Garg)

তাঁদের সাধের ‘জুবিনদা’র জন্য অসমিয়াদের সব প্রজন্মের সঙ্গে এ গান গাইছিলেন গুয়াহাটির বাঙালি, মারওয়ারি, বিহারি, পাঞ্জাবিরা। মুখ্যমন্ত্রী, তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নেতা থেকে জনতা, হিন্দু থেকে মুসলিম সবাই এক হয়ে ‘মায়াবিনী’ গাইছিলেন সজল চোখে। শুধু অসম বা জোড়হাটে নয়, এ দৃশ্য দেখেছে সমগ্র ভারত। জুবিনই একবার বলেছিলেন, ‘আমি মারা গেলে পুরো অসম এ গান গাইবে।’ যাঁর নামে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল, সেই সুরস্রষ্টা জুবিন মেহতা আজও বেঁচে। এত মায়াময় শেষযাত্রার ছবি জানলে তিনিও অবাক হবেন। (Zubeen Garg)
এ তো গেল গানের কথা। গানের বাইরেও জুবিনের সাদাসিধে কথাবার্তা, সাধারণের সঙ্গে নিমেষে এক হয়ে যেতে পারার ক্ষমতা, রাজনৈতিক নেতাদের মন না যুগিয়ে নিজের কথা বলার সাহস জুবিনকে সুপারহিরো করে দেয়। সেখানে তুচ্ছ হয়ে যায় তাঁর যাবতীয় নেশা, শরীর খারাপ ও মাঝে মাঝেই বেসুরো হয়ে পড়া। তাঁর মৃত্যৃতে অসমের অচল ও স্তব্ধ হওয়ার দৃশ্য স্তব্ধ হয়েই দেখতে হয়। যে ভবিষ্যদ্বাণীটা করে গিয়েছিলেন জুবিন নিজে, ‘আমি মারা গেলে মুম্বইয়ে কিছু হবে না। বাংলাতেও কিছু হবে না। কিন্তু অসম ৭ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।’ এইসব অবাক করা ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য তাঁকে ভারতীয় গানের চে গেভারার মতো বিপ্লবী মনে হয়। (Zubeen Garg)
“কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়া তাঁকে টানত। ২০১৯ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা নামের এক বাণিজ্যসফল সিনেমা পর্যন্ত বানিয়েছিলেন জুবিন। পরিচালক, লেখক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, নায়ক, সুরকার— সবই তিনি।”
সত্যিই তো, কোন গায়ক বিজেপির শক্তিশালী মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে বলতে পেরেছেন, ‘আমি বিজেপিও নই, আমি কংগ্রেসেরও নই। আমি আসলে সোশ্যালিস্ট লেফট’! অসমজুড়ে সিএএ নিয়ে ভয়ঙ্কর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সেখানে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন জুবিন। ২০১৬ সালে বিজেপির প্রচারে গান বেঁধেছিলেন তিনি। তারপরেই সরে এসে গান বাঁধেন— ‘পলিটিক্স ন করিবা বন্ধু।’ রাজনীতি করো না বন্ধু। এই বাংলায় কোনও পরিচিত গায়ক পারবেন এমন গান গাইতে? (Zubeen Garg)
ভুলে যাবেন না, অসমের ইতিহাসে কখনওই শক্তিশালী নয় বামেরা। সে রাজ্যে ‘আমি বামপন্থী’ বলতে বুকে ধক লাগে। যে অসমে দল বদলিয়া হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিয়ে চলে যাচ্ছেন হিন্দু রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে, সেই অস্থিরতার মধ্যে দাঁড়িয়ে জুবিন স্বচ্ছন্দে বলেছেন, ‘আমার কোনও জাতি নাই, আমার কোনও ধর্ম নাই। আমার কোনও ভগবান নাই। আমি মুক্ত। আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা।’ কোন গায়ক সাহস দেখাবেন এমন কথা বলতে? (Zubeen Garg)

কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়া তাঁকে টানত। ২০১৯ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা নামের এক বাণিজ্যসফল সিনেমা পর্যন্ত বানিয়েছিলেন জুবিন। পরিচালক, লেখক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, নায়ক, সুরকার— সবই তিনি। কার্যত সব্যসাচী ছিলেন জুবিন। নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। আবার প্রতিষ্ঠানবিরোধী বোহেমিয়ানও। (Zubeen Garg)
এই মুক্ত মনের, কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো ঝকঝকে হৃদয়ের মানুষ অকপটে ঢুকে যেতে পারতেন রাস্তার ধারের ঝুপড়ির দোকানে। সেখানে কাগজের প্লেটে হয়তো খেয়ে নিলেন সামান্য রুটি আর তরকারি। স্টারডম সরিয়ে সাধারণ পোশাকে নেমে আসতে পারতেন জনতার মাঝে। ওই পোশাকটাই হয়ে উঠত তাঁর ব্র্যান্ড। সব মানুষের জন্য বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। কোভিডের সময় নিজের বাড়িটা খুলে দিয়ে বলেছিলেন এখানে কোভিড কিওর সেন্টার করে দিন। প্রচুর লোককে খাওয়াতেন তিনি। বন্যা এল, জুবিন আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন বন্যার্তদের সাহায্যে। অনুরাগীদের কাছ থেকে জোগাড় করলেন জামাকাপড়, টাকা। (Zubeen Garg)
“আজকের যন্ত্রণাবিদ্ধ ভারতে কারও শেষ যাত্রায় লক্ষ লক্ষ হিন্দু এবং মুসলমান একসঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছেন, মিশে গিয়েছে সব প্রজন্ম— এটা কল্পনা করা কঠিন! জুবিন দেখিয়ে গেলেন এও সম্ভব!”
মুম্বই ছেড়ে আসামে চলে যাওয়ার পর তাঁর প্রতি অসমের মানুষের ভালবাসা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল। আজকের যন্ত্রণাবিদ্ধ ভারতে কারও শেষ যাত্রায় লক্ষ লক্ষ হিন্দু এবং মুসলমান একসঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছেন, মিশে গিয়েছে সব প্রজন্ম— এটা কল্পনা করা কঠিন! জুবিন দেখিয়ে গেলেন এও সম্ভব! (Zubeen Garg)
গায়ক সত্তার পাশে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর মানবিকতা, স্টারসুলভ সত্তা সরিয়ে রাখার ক্ষমতা। এগারো বছর আগে মধ্যরাতে গাড়ি নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। হঠাৎ দেখেন, রাস্তা দিয়ে পালাচ্ছে এক কিশোরী। তাকে তাড়া করেছে একটা লোক। তাকে ধরে নিয়ে সেই লোক যখন ফিরে যাচ্ছে, বাধা দেন জুবিন। জানতে পারেন, মেয়েটি গৃহসহায়িকা। তার ওপর অত্যাচার চলে। মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় অভিযোগ জানিয়ে তাকে নিয়ে আসলেন বাড়ি। মামলা মোকদ্দমা করে কাজলি নামের মেয়েটিকে দত্তক নিলেন। এভাবে আরও ১৫ শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী গরিমা। একটা চ্যারিটি চালাতেন দু’জনে— কলাগুরু আর্টিস্ট ফাউন্ডেশন। এর পাশে কখনও গাছ এবং পশুদের বাঁচানোর জন্য মেতে উঠেছেন। (Zubeen Garg)
আরও পড়ুন: খোলো, জাগো নাটমন্দির
এখানেই একাধিক প্রশ্ন উঠবে। এমন মানবিক ভাবমূর্তি বাংলার কোনও গায়ক কি তৈরি করতে পেরেছেন? এভাবে স্পষ্ট করে নিজের কথা বলার দুঃসাহস কি দেখাতে পেরেছেন ভারতের কোনও গায়ক? (Zubeen Garg)
প্রশ্ন দুটো তুললে কী উত্তর আসবে, তা আপনিও জানেন, আমিও জানি। তার চেয়ে বরং বাঙালির পুজোর গানের নস্টালজিয়া নিয়ে কিছু স্মৃতি ও বেদনার কথা ভাগ করে নিই চলুন! (Zubeen Garg)
অলঙ্করণ: আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।