Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

‘উই আর নট রিফিউজিস, উই হ্যাভ আ হোম’— উদ্বাস্তু সমস্যা ও ‘দ্য সুইমার্স’

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

জুন ২০, ২০২৩

review Netflix Movie The Swimmers
review Netflix Movie The Swimmers
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

ধরা যাক একটি শরীর, একটি সমগ্র দেহসত্তার ভেতর প্রতিটি অংশ আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের নিয়ে ভাবছে, নিজেদের নাড়াচাড়া নিয়ে ভাবছে। ব্যক্তিগত রক্তচলাচলে নিয়ত, অথচ শরীরটি টার্মিনালি ইল। ক্যানসারাস। সময় বেশিদিন নেই। আর তাই প্রত্যঙ্গদের অস্বাভাবিক সাবলীলতায় অর্থ নেই কোনও। অথচ প্রত্যঙ্গেরা সবকিছু জেনেও, কেমন যেন ধীর-স্থির। দে আর রিজয়েসিং, বিটিং। এইসব কথা মনে হতে পারে স্যালি এল-হুসেনি পরিচালিত ছবি ‘দ্য সুইমার্স’ (২০২২) দেখতে দেখতে। দুটি দৃশ্যের কথা বলছি। এক, শুরুতেই দামাস্কাসের একটি নাইট পাবে ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র দুই বোন উদ্দাম নাচে ব্যস্ত, অন্যান্য বন্ধু ও শহরবাসীর সঙ্গে। আলো, চিৎকার, তুমুল ডিজে এবং খুব দূরে রুফটপের সেই হ্যালোজেনিক এক্সট্যাসির বাইরে, শহরের দিগন্তে চেইন অফ বম্বিং, একের পর এক। নাচ থেমে গেলে ছবির প্রোটাগনিস্ট ইউসরা একা একা ক্লান্ত হয়ে সেই বিস্ফোরণের দিকে তাকিয়ে। ঠিক ভীত নয়, ক্লান্ত। অসম্ভব ক্লান্ত, এবং নির্বাক। দৃশ্য দুই। গ্রিসের এক সমুদ্রসৈকতে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দুই বোন, এবং সঙ্গে অন্য এক সহযাত্রী পুরুষ নিজেদের চুল, পোশাক একটু পাল্টে দুরন্ত স্মার্টনেসে চলে যায় সমুদ্রসৈকতের ভেতর। বহুদিন পর তারা স্নান করে। শরীরে জলের ধারা। দৃষ্টির সমান্তরালে সেই সমুদ্রেই স্কাইডাইভিং এবং অন্যান্য সি-স্পোর্টস। এই সমুদ্রেই দুদিন আগে জীবনের ভয়ংকরতম এক অভিজ্ঞতা রেখে এসেছে সেই রিফিউজি দল। সমুদ্রের ভয়ংকরতা দেখে এসেছে তারা। অথচ সেসব নিয়ে কী অবিশ্বাস্য নির্বিকার, নির্লিপ্ত পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের মানুষ, বলা ভালো, সমুদ্রের ঠিক এপারের মানুষ। ‘দে হ্যাভ নো আইডিয়া পিপল আর ডায়িং ইন দ্যাট সি’।

The Aegean Sea
ভয়ংকর ইজিয়ান সমুদ্র

এই নির্লিপ্তি এবং সামগ্রিক প্যাশনের গল্প ‘দ্য সুইমার্স’। টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রিমিয়ার হওয়া এই ছবি সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে এসেছে। সিরিয়ান উদ্বাস্তু সমস্যার ডি্টেইলিং, স্পোর্টস ড্রামা এবং চলচ্চিত্রের টেকনিক্যাল দিক— আলোচনায় এসব দিক স্বতন্ত্রভাবে আসতে পারে। বা কখনও মিশে যেতেই পারে। দেখতে দেখতে মনে হয়, স্যালি কখনও চেতনে, অবচেতনে মিশিয়েছেন, আলাদা করেছেন। কোথায়, কতটা বাড়তি কথা আছে, রিফিউজি সমস্যার কতটা ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়েছে স্যালির পক্ষে— তা বলার আগে একটু ছবির প্লটের ব্যাপারে জেনে নিই। সিরিয়ার রিফিউজি পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বোন ইউসরা এবং সারা মারদিনির জীবনের গল্প, যেখানে দুজনই পেশাগতভাবে দক্ষ সাঁতারু। নিজের সাঁতার কেরিয়ার অকালে শেষ হয়ে যাওয়ার খেদ সামলে দুই মেয়েকে নিজেই ট্রেনিং করান তাদের বাবা। অথচ সেই প্রশিক্ষণেই কাঁটা সিরিয়ান ক্রাইসিস। দুই বোনের জেদ, সংকল্প, এবং বাধ্যতামূলক ইওরোপ তথা জার্মানি চলে যাওয়ার চিন্তা। অনিচ্ছুক বাবা একসময় রাজি হয়েও শর্ত রেখে দেন— ছোট মেয়ে, অনেক বেশি প্রতিভাবান, স্থির, দৃঢ়চেতা এক নারী ইউসরা যেন তার সুইমিং কেরিয়ার না ভোলে। যেন ভেতরে ভেতরে রেখে দেয়— তার মিশন রিও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আঙ্কারা থেকে ইস্তাম্বুলের বিমানে উঠেই কাজিন নিসার বোন ইউসরার উদ্দেশে ছুড়ে দিয়েছিল সতর্কবার্তা— ‘উই আর আ বাঞ্চ অফ হোমলেস রিফিউজিস নাও’। উত্তরে ইউসরা বলেছিল, ‘উই আর নট রিফিউজিস, উই হ্যাভ আ হোম’। এই দুই মারদিনি বোন, নিসার, এবং বাকি বেশ কিছু উদ্বাস্তু ক্রমশ স্মাগলিং যোগাযোগে তুরস্কের ইজমি থেকে গ্রিসের লেসবোসে আসে, এবং সেই আসার মাঝেই পড়ে থাকে ছবির ভয়ঙ্করতম অধ্যায়। কঠিন ইজিয়ান সমুদ্র। ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া প্রায় কাঠের চেলার নামান্তর এক নৌকোকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সমুদ্রে নেমে সাঁতরে সাঁতরে লেসবোসের মাটিতে টেনে আনেন মারদিনি বোনেরা এবং আরও দুই সহযোদ্ধা। তার পরেরটুকু ইউসরার নিজের গল্প। স্টোরি, টু টাচ দ্য ড্রিম…

The Swimmer

ইজিয়ান সমুদ্রকে নিয়ে একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। তুরস্কের ইজমির থেকে গ্রিসের লেসবোস— মূলত এই শিপিং রুট পেরনোর চ্যালেঞ্জে মারদিনি বোনেরা জিতে গেছিলেন। অনেকেই জিততে পারেননি। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আঙ্কারার মধ্যে চুক্তিপত্র অনুযায়ী তুরস্ক সরকারের তরফে এই বিপজ্জনক এবং অবৈধ মাইগ্রেশন আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। আগের থেকে অবৈধ মাইগ্রেশন অনেকটা কমলেও আজও ইজিয়ান সাগরে ইতিউতি মাইগ্র্যান্ট শরীর খুঁজে পাওয়া বিরল নয়। লেসবোসের ফিশারম্যান নিকোস জ্যানথোপলস বলছেন, প্রতিদিন ইজিয়ান সৈকতে জালে আটকে থাকা প্রায় তিন চারটে শরীর খুঁজে পান তিনি। একদিন এক মায়ের সঙ্গে তাঁর দুই শিশুপুত্রের জড়ানো শরীর পেয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পুরনো শরীর। গ্রিস থেকে সম্প্রতি ৯২টি ক্ষতবিক্ষত রিফিউজি শরীরের ছবি ভাইরাল হল, যার দায় সম্পূর্ণ তুরস্কের ওপর বর্তালো। কারণ চুক্তির পরেও মাইগ্র্যান্টদের বিকল্প জীবিকা বা বেঁচে থাকার তেমন কোনও রসদ কোনওভাবেই দেওয়া হচ্ছে না তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মাগলিং চেইনে, প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ফল্টি ইঞ্জিনের নৌকোয় কোনওরকমে কয়েকটি পরিবারকে তুলে দেওয়া হয় ইজিয়ান সমুদ্র লাগোয়া এভ্রোস নদীতে। ইঞ্জিন বিগড়োয়। শরীর জলে মিশে যায়।

migrant life
আজও ইজিয়ান সাগরে ইতিউতি মাইগ্র্যান্ট শরীর খুঁজে পাওয়া বিরল নয়

এই ভয়ংকর এবং বৃহত্তর এক সমস্যার মাঝে ‘দ্য সুইমার্স’-এর উপস্থাপনা। ছবির গল্পের ভেতরের ছবিটি আসলে যাঁদের নিয়ে, সেই মারদিনি বোনেদের সম্পর্কে একটু বলে নিই। দামাস্কাসের দারাইয়া টাউনশিপের ইউসরা তাঁর বাবার ট্রেনিং এবং নিজের জেদের ভরসায়, সিরিয়ান অলিম্পিক কমিটির সাহায্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণে যেতেন, প্রতিটি পেশাদার সাঁতারুর মতো ভাবতেন অলিম্পিক, ভাবতেন হায়েস্ট লিমিট অফ ড্রিম। দেশের হয়ে ফিনা ওয়ার্ল্ড সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেও আটকে গেলেন সিরিয়ান গৃহযুদ্ধে। ২০১৫ সালে দিদি সারা এবং কাজিন নিসারকে নিয়ে জার্মানি এলেন। মাঝে লেবাবন, তুরস্ক হয়ে ১৮ জন মাইগ্র্যান্টের সঙ্গে ইজিয়ান সাগর পেরনো। দুই বোন এবং আরও দুই সহযোদ্ধার সঙ্গে ইঞ্জিন বিগড়নো নৌকোকে টেনে নিয়ে গেলেন সাড়ে তিন ঘণ্টার এক অবিশ্বাস্য ম্যারাথন সাঁতরে। গ্রিস থেকে বালকান, হাঙ্গেরি হয়ে বেশ কিছুটা হেঁটে, গাড়িতে এবং সীমান্তে গুলি থেকে বেঁচে একসময় জার্মানি। সেই জার্মানির পলিটিকাল অ্যাসাইলামে গিয়েও ফ্ল্যাশব্যাকে বাবার কথা মনে হচ্ছিল – ইউসরা, ফাইন্ড ইওর লেন, ফাইন্ড ইওর লেন। সেই লেন খুঁজতে খুঁজতে ইউসরা একদিন পেয়ে গেলেন বার্লিনের সুইমিং কোচ স্যার শ্যেন স্প্যানক্রেবসকে। সেই ক্ষিদ্দা, সেই ফাইট… ফাইট… ফাইট…

২০১৬-র রিফিউজি অলিম্পিক টিমের হয়ে যোগদান, ১০০ মিটার বাটারফ্লাই হিটে অনেকটা এগোলেও চূড়ান্ত রাউন্ডে যেতে পারলেন না আর। যদিও ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিয়ে রিফিউজি অলিম্পিক দলের ফ্ল্যাগবিয়ারার ছিলেন সেই ইউসরাই। 

Yusra Mardini portrait
ইউসরা মারদিনি

এই ইউসরা মারদিনির গল্পের একটু বাইরে তাঁর দিদি সারার গল্প। পেশাগতভাবে সাঁতারু হলেও একসময় সাঁতারের ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে সারা বার্লিনের বার্ড কলেজ থেকে স্কলারশিপ পেয়ে জীবন বাঁকিয়ে দেন অন্য কাজে। লেসবোসে এমারজেন্সি রেসপন্স সেন্টার ইন্টারন্যাশনাল (ERCI) এনজিওর হয়ে নারকীয় মরিয়া রিফিউজি ক্যাম্পে একটি মেডিকেল টিমের সঙ্গে থেকে উদ্বাস্তুদের হয়ে ট্রান্সলেটরের কাজ করতেন। সেখান থেকেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে বার্লিনে ফেরার পথে সহযোদ্ধা, কর্মী সিন বাইন্ডারের সঙ্গে ধরা পড়েন লেসবোস এয়ারপোর্টে। কী চার্জ? এসপায়োনেজ, হিউম্যন ট্রাফিকিং, টাকার তছরুপ ইত্যাদি। বিনা বিচারে ১০৬ দিন জেল খেটে জামিন এবং তার পরেই আইনি কচকচি এবং লাগাতার হ্যারাসমেন্টে এখনও ভয়ংকর এক ট্রায়ালের মধ্যে আছেন সারা। অপরাধে অভিযুক্ত হলে ২৫ বছর জেল।

আরও পড়ুন: বইয়ের কথা: বসন্ত চৌধুরী- কিংবদন্তি নায়ক, আভিজাত্য আর ঐতিহ্য সচেতন বাঙালি

ফোকাস শিফট করে ছবিতে ঢুকে যাই। স্যালি এল-হোসেনির ট্রাম্পকার্ড ছিল, দুই মারদিনি বোনের চরিত্রে রাখবেন বাস্তবিক দুই বোনকে, নাতালি এবং মানাল ইসসা— তুলনায় অভিনয়ের তেমন কোনও বড়সড় ট্র্যাকরেকর্ড না থাকলেও অনবদ্য ইসসা সিস্টার্স। তাঁদের খুনসুটি, পরিস্থিতির চাপে পড়ে তৈরি হওয়া নিজস্ব ক্রোধ, অভিমান, পারস্পরিক বিশ্বাস রচনা— ইত্যাদিতে যথেষ্ট বাস্তবিক মানাল এবং নাতালি। পাশাপাশি অসম্ভব স্মরণীয় ক্রিস্টোফার রসের সিনেমাটোগ্রাফি, মূলত একটি অবিস্মরণীয় দৃশ্যের জন্য। ইজিয়ান সমুদ্র পেরিয়ে গ্রিসের লেসবোস ঢুকছেন ১৮ জনের ওই উদ্বাস্তু দল— দুদিকে এতদিনকার বহু উদ্বাস্তু দলের ছেড়ে আসা লাইফজ্যাকেট, পোশাক, ব্যবহৃত সরঞ্জাম। ক্রমশ হাই অ্যাঙ্গেল। ক্ষুদ্র, পিঁপড়ের মতো দেখতে ছোট ওই মাইগ্র্যান্ট দল, এই সময়ের ভয়ংকরতম ক্রাইসিসের সামনে, কী অবিশ্বাস্য নির্লিপ্ত তাঁরা। নির্বিকার। তাঁরা জেনে গেছেন তাঁরা একা নন, আগে পরে দেয়ার ইজ আ ট্রেইল অফ মিলিয়নস অফ মিসহ্যাপস…

Sarah_Mardini
ইউসরা মারদিনির দিদি সারা

এখানে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে বিগত কয়েকবছরের কিছু ছবির কথা বলতে হয়। ২০১৫-র ক্রিস টেমপ্ল-জ্যাক ইংগ্রাসির ডকু-ফিকশন ‘সালাম নেবার’, ২০১৮-য় শোরগোল ফেলা নাদিন লাবাকির লেবানিজ ড্রামা ‘ক্যাপারনাম’, ২০২০-র ব্রিটিশ ডেডপ্যান কমেডি ‘লিম্বো’ বা ২০২১-এর অ্যানিমেটেড বিভাগে অ্যাকাডেমি নমিনেশন পাওয়া জোনাস রাসমুসেনের অ্যাডাল্ট অ্যানিমেটেড ডকুফিকশন ‘ফ্লি’, প্রসঙ্গত এই ফ্লি-এর সঙ্গে কিছু সরাসরি বিষয়গত সাদৃশ্য আছে ‘দ্য সুইমার্স’-এর। অবশ্য এই প্রতিটি ছবিই রিফিউজি ক্রাইসিসের ভেতরে গিয়ে পরিবেশিত হলেও ‘দ্য সুইমার্স’ ক্রীড়াগত প্রেক্ষিতে আলাদা হয়ে গেছে। স্যালি নিজেও সরাসরি রিফিউজি সমস্যার ভেতরে না ঢুকে একটু ওপর ওপর দেখিয়ে ঢুকে গেছেন ইউসা মারদিনির নিজস্ব স্বপ্নপূরণের গল্পে। এখানে স্যালির জয় নিশ্চিত, সন্দেহ নেই। আবার অন্যদিকে এটাও মনে হতে পারে, অলিম্পিক কি ইউসরা মারদিনির শেষ স্বপ্নপূরণ ছিল?

পরবর্তীকালের UNHCR-এর গুডউইল অ্যামবাসাডর ইউসরাকে ছবির প্রায় শেষে দিদি সারা যা বলছিলেন তার সংক্ষেপ করলে এটাই দাঁড়ায়, ‘ইউ উইল সুইম ফর দ্য আদার্স, ইউ উইল সুইম ফর আস’। পরবর্তীকালে বাস্তবের ইউসরা মারদিনি বলেছিলেন – ‘After the Olympics, I realised that it’s not just my story anymore. I realised that my responsibility is to raise awareness and bring hope to millions of refugees around the world and speak for all of those who do not have a voice.’ ঠিক এই কারণেই খেদ থেকে যায় প্লট নির্বাচনে, বা জ্যাক থর্নের চিত্রনাট্যে। কেন শেষে এসে দুই বোনের পরিণতি স্রেফ স্ক্রল করে বেরিয়ে যাওয়া হল? অলিম্পিক পরবর্তী ইউসরা মারদিনির লড়াই, মেডিকেল ক্যাম্পে সারা মারদিনির দিনরাত এক করা শ্রম— কেন গল্পে সেসব থাকবে না? দিনের শেষে স্রেফ একটি প্রেডিক্টেবল ফিল-গুড স্পোর্টস মুভি হয়ে থেকে যাবে ‘দ্য সুইমার্স’?

The_Swimmers poster

শেষ একটু পরিসংখ্যান দিই। গোটা পৃথিবীর ১০০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুর একটি বিরাট অংশ অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে জলপথ অতিক্রমের পথে পা বাড়াচ্ছেন। ২০১৪ থেকে ২০২২ অবধি প্রায় ২৩,০০০ উদ্বাস্তু ইউরোপের সমুদ্রসৈকতে আসার আগেই জলে ভেসে গেছেন, শরীর কখনও পাওয়া গেছে, কখনও যায়নি। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের পক্ষ থেকে জুলিয়া ব্ল্যাক বলেছিলেন— ‘We have hundreds of records of bodies that are washed up to Mediterranean shores when we don’t know of any known shipwreck’। সম্প্রতি জুন মাসেই ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের পাইলোস লাগোয়া অঞ্চলে জাহাজডুবি হয়ে ৭৫০ জনের একটি উদ্বাস্তু দল এক ভয়ংকর দুর্ঘটনায় পড়ে, যার ভেতর শেষমেশ বেঁচে ফেরে ১০৪ জন। এই উদ্বাস্তু দলের প্রতিনিধি হিসেবে দুই ভাই গ্রিসের কালামাতা অঞ্চলে একটি লোহার শিকের দুদিকে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্যভাবে কেঁদেছিলেন অনেকক্ষণ, যে ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান, সুদান – মূলত এই চারটি দেশের মাইগ্র্যান্ট-প্রধান এই ২৩,০০০ মৃত্যুর ডেটাবেস, তথা ১০০ মিলিয়ন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য Arab News পত্রিকার সাংবাদিক রামজি বারোদের কথাগুলো – “The world’s refugees, who are estimated to number more than 100 million, are not ‘celebrated’, but mostly vilified.”

Greece migrant brothers
গ্রিসের কালামাতায় দুই ভাইয়ের কান্না

এই ১০০ মিলিয়নের অন্যতম, সম্ভবত ভয়ংকরতম দুর্ভাগ্যের শিকার ২০১১ পরবর্তী সিরিয়ান পপুলেশন। গৃহযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার ভেতর দেখা গেছে প্রতি দশজনের আটজনই দারিদ্ররেখার নীচে বাস করছেন। গোটা সিরিয়ান জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ হিসেব করলে ১২.৪ মিলিয়ন অধিবাসী রাতে অভুক্ত অবস্থায় শুয়ে পড়ছেন রোজ। ২২ মিলিয়নের অর্ধেক অংশ নিজের ঘর ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। অন্তত ১৩.৪ মিলিয়ন অধিবাসীর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্টেন্স জরুরি হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ায় এই ক্রাইসিস অত্যন্ত প্রকট, যা সাম্প্রতিক অতিমারির পরে প্রকটতম হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে ঘরছাড়া সিরিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটাপন্ন এই অংশকে সাহায্যের জন্যই অন্তত ৩.৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রয়োজন, যার অর্ধেকও সেভাবে এসে পৌঁছয়নি। 

২০ জুন আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু দিবসের প্রাক্কালে ‘দ্য সুইমার্স’ উদ্বাস্তু সমস্যার তেমন গভীরে না ঢুকেও উঠিয়ে দিল একটি মূলগত প্রশ্ন। সাহিত্যে, সিনেমায় অল্পবিস্তর এলেও দৈনন্দিন আলোচনায়, ভাবনায়, কথাবার্তায় কতটা উঠে আসছে ইউসরা, সারাদের গল্প? বাকি পৃথিবী? নিরাপদ পৃথিবী? আদৌ কিছু ভাবছে? নাকি শুরুতেই প্রসঙ্গ আনা গ্রিক সমুদ্রসৈকতের সামনে মারদিনি বোনেদের সেইসমস্ত সলিলোকিই একটা সিলমোহর হয়ে বসে যাচ্ছে বৃহত্তর পৃথিবীর গায়ে– 

‘দে হ্যাভ নো আইডিয়া পিপল আর ডায়িং ইন দ্যাট সি …’

 

*ছবি সৌজন্য: লেখক, Wikipedia, Pixabay, Netflix

Anirban Bhattacharyya

অনির্বাণ ভট্টাচার্য পেশায় প্রসারভারতীর অধীনে দিল্লি দূরদর্শন কেন্দ্রের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ। লিখেছেন গদ্য, কবিতা, প্রবন্ধ। বিশেষ আগ্রহ - চলচ্চিত্র, প্রাচীন স্থাপত্য, মন্দির-শিল্প এবং ক্রীড়াজগত।

Picture of অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ভট্টাচার্য পেশায় প্রসারভারতীর অধীনে দিল্লি দূরদর্শন কেন্দ্রের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ। লিখেছেন গদ্য, কবিতা, প্রবন্ধ। বিশেষ আগ্রহ - চলচ্চিত্র, প্রাচীন স্থাপত্য, মন্দির-শিল্প এবং ক্রীড়াজগত।
Picture of অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ভট্টাচার্য পেশায় প্রসারভারতীর অধীনে দিল্লি দূরদর্শন কেন্দ্রের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ। লিখেছেন গদ্য, কবিতা, প্রবন্ধ। বিশেষ আগ্রহ - চলচ্চিত্র, প্রাচীন স্থাপত্য, মন্দির-শিল্প এবং ক্রীড়াজগত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com