Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাংলার লোকগানে বিরহ

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

জুন ১৩, ২০২৪

Bengali Folk Song
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

এদেশ গানের দেশ, প্রাণের দেশ। এ দেশের লোকগানে(Folk Song) জীবনের সমস্ত বিষয় অতি যত্নে উঠে এসেছে, বাদ পড়েনি বিরহ(Sadness) কিংবা বিয়োগ ব্যথা, বরং তা এসেছে হৃদয়ের গভীরতম অংশ হতে।

দারিদ্রের কষাঘাত, প্রকৃতির খেয়ালখুশি, সমাজের নির্মমতা, প্রিয়জনের ব্যথা সব মিলিয়ে এদেশে সর্বত্রই বিরহের একটা পর্ব যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা রয়েছে এবং স্বভাবতই প্রাকৃত জনগোষ্ঠীর গীতিলেখ্য কিংবা সুরেলা প্রকাশেও তা হয়ে উঠেছে আরো জীবনমুখী ও বাঙ্ময়। এই বিরহ লোকজীবনের আনন্দ ও উদ্বেল প্রকাশ ছাপিয়ে যায়নি ঠিকই তবে ছাপ রেখে গেছে জীবন ও সংসারের পাতায় পাতায়।

এ তো হল বাংলার গল্প, বাংলাদেশের গল্প, যেখানে লোকেরা ফসল তোলার আনন্দে গানে মেতে ওঠে। তেমনি প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তা বিরহের সুর হয়ে বেজে ওঠে। সর্বনাশা বলি স্রোতস্বীনি বলি যুগে যুগে পদ্মা-মেঘনা-যমুনাকে আনন্দের ভাগীদার আর বিরহের সাক্ষী হওয়ার মিনতি জানিয়েছে প্রাণের আকুতিতে। বাংলা লোকগানে বিষয়ে যেমন বৈচিত্র্য আর উদ্ভাসিত জীবনের রং এর চমক রয়েছে তেমনি বিরহের বেলাতেও বেজেছে নানা সুর, নানা তাল ও কত না ছন্দ। এখানে গানের বিষয় ও ভাবের বৈচিত্র্য এবং বৈপরিত্য দুটোই আঁকা হয়েছে সুর আর লয়ের গাঁথুনিতে। একই গানে কিংবা উৎসবের সুরে আনন্দ এবং বিরহের প্রবাহ এই বাংলায় বুঝি খুব সহজে সম্ভব। বিয়ের গানগুলোতে দেখা মেলে এই আনন্দ আর বিরহের মিলিত ধারা। আবার কিছু কিছু লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিরহই একমাত্র উপজীব্য হয়ে উঠেছে। সে বিরহ ছুঁয়ে গেছে বিরহী বধূর হৃদয় থেকে একাকী কবির কলম অবধি।

যদি আমরা বিভিন্ন ধারার বাংলার লোকগানে বিরহ খুঁজি তাহলে সে বিরহের শেকড়-বাকড় আর ফুল পাতার যে বৈচিত্র্য দেখতে পাব তা আমাদের চমৎকৃত করবে বৈকি?

এ প্রসঙ্গে আমরা আবার মারসির কথা উল্লেখ করতে পারি। মারসি গানে প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায় কাতর বাঙালি ললনার হৃদয়ের ক্রন্দন ধ্বনিত হয়। কখনও স্বামীর দীর্ঘ প্রবাস, কখনও মাতা-পিতা ছেড়ে যাওয়ার বিলাপ আবার কখনও নাড়িছেঁড়া ধন-সন্তান হারা হয়ে জননীর উন্মাদনা। হৃদয়ের হাহাকার যখন সুরের মাত্রায় ওঠে আসে গানে। সে হোক দোতারা কিংবা হাসুয়া, তাতে হৃদয়ের ভাব প্রকাশের ব্যাকুলতার কোনও কমতি হয় না। তা যেন হৃদয়ের তার ছুঁয়ে বেজে যায় বাঙালির প্রাণে। আর তাই বুঝি এত এত গান আর সংস্কৃতির ভার সয়েও বাংলার লোকগান বেজে চলে আজো সকলের প্রাণে।

এ দেশের লোকজ সাহিত্যের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ধর্মীয় ভজন, বন্দনাগীতি ও কাহিনি। সেক্ষেত্রে কারবালার কাহিনি বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে। বাংলার চারণ কবিগণ কারবালায় কাহিনিতে বাংলা ছন্দের বিভিন্ন প্রয়োগ ঘটিয়েছেন এবং বাঙালিয়ানা ঢং দিয়ে মেলে ধরেছেন। যেমন-

হায় হায় ফাতেমা কান্দে, আরশে ধনিয়া/ইমাম-হোসেন শহীদ হইছে কারবালাতে গিয়া/ফাতেমার বলন্ত ইমাম দুইন্যাই ছাইড়াছে/ছন্দমুখ, জোয়াব নাই মা বলিব কে?

আরও পড়ুন : বই পড়তে ভাল্লাগে না – জাহাঙ্গীর আলম শোভন

কারবালার কাহিনিতে বিশেষ কান্নার ভঙ্গিতে গীতি-বিলাপ আছে যাকে বলে মাতম। গ্রাম-বাংলার মানুষরা মাতম দ্বারা দারুণ প্রভাবিত হয়। ভক্তদের হৃদয়ে ইমাম-হাসান ও হোসেন সম্পর্কে গভীর প্রেম জাগ্রত হয়। আছে মার্সিয়া, সেও ভাবপ্রধান বিরহী গাথা। পুরনো ঢাকায় মহররমের মহিমা গীত হয় একটি বিশেষ ধরনের সঙ্গীতে, নাম-কাসিদা। জারি গান- লোক সঙ্গীতের অন্যতম শাখা। স্মৃাতিকাতর গল্পনির্ভর বড় জারি গানগুলো শ্রোতার মনে গভীর আঁচড় কাটে। এসব জারি গানে কখনও কখনও বিরহী বা ট্রাজিক পরিণতি কিংবা বিরহী পর্ব লোকের মুখে, মনে আর স্মৃতিতে বাজিয়ে যায় সমবেদনার স্বরলিপি।

জারি গানের বাস্তব এবং কল্পনার জগতকে এ অঞ্চলের মানুষ একসময় গভীর সত্য বলে মনে করত অথচ বেশিরভাগ জারি মূলত একটি আলোচিত ঘটনার কল্পিত শাখা-প্রশাখাসহ প্রকাশ মাত্র। তবুও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অঞ্চলভেদে মূল গান শেষে কোরাসে করুণ পরিণতি অথবা প্রার্থনা বর্ণনা হত। একে বলে জারি গানের মইছরা। জারি গানের হৃদয় পাগল করা ধুয়া ও কখনও কখনও দুঃখ জাগানিয়া হত। যেমন- ‘‘মরি হায়রে হায়, দুঃখে পরাণ যায়’’।

একটি ভিন্ন শাখা ও মাত্রায় শুধুমাত্র রাধা আর কৃষ্ণের মিলন বিরহের কত যে গান আজো দুই বাংলার মাঠে ঘাটে বাজে তার কি ইয়ত্তা আছে?

গবেষকগণ লোকগানের শাখা নির্দেশ করতে গিয়ে মেয়েলি গান শাখাটা রাখেন। কারণ সমস্ত বাংলায় এমনকি ভারতের পশ্চিম বাংলায়ও কিছু গান রয়েছে যা শুধু মেয়েরাই গায় এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানাদি ও পর্ব বিশেষে গানও নির্দিষ্ট করা যাবে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভূমিকার কারণেই গানটা মেয়েদের কণ্ঠে চলে গেছে এবং সত্য কথা হল এগুলোর সুর ও কথা যথার্থ মেয়েলি। এসব গানের গীতিকারের সন্ধান না মিললেও এতটুকু বলা যায় যে, এগুলো এ-দেশের বৌঝিদের বানান গান। যেমন- ‘‘ময়নার বাপে কান্দন কান্দে চালের বাতা ছোটে/ময়নার মায়ে কান্দন কান্দে গাছের পাতা ঝরে’’। (ড. আশুতোষ ভট্টাচার্যের সংগ্রহ হতে)

এ যাবত সংগৃহীত ও প্রকাশিত লোক পালাগুলোতে প্রেম-বিরহের চিরন্তন বাংলারূপ খুবই জ্বাজ্বল্যমান। এসব লোক পালা হয়তো বিয়োগান্তক পরিণতিতে বিরহী হয়ে আছে অথবা মিলন সুখের পূর্বে দীর্ঘ বিরহ দীর্ঘ সংকট এগুলোতে বিরহী-সজীব রূপে রূপদান করেছে। সে ময়মনসিংহ গীতিকা বা পূর্ববঙ্গ গীতিকা, মহুয়া, মলুয়া বা কাজল রেখা সবই বিরহের তুলিতে আঁকা বা বিরহের আবহে বাঁধা। এখানে মহুয়া পালার একটা অংশ তুলে ধরা হল ‘‘এই দেশে দরদি নাইরে কারে কইবাম কথা/ কোনজনে বুঝিবে আমার পুড়া মনের ব্যথা/মনের সুখে তুমি ঠাকুর সুন্দর নারী লইয়া/আপন হালে করছ ঘর, সুখেতে বান্ধিয়া’’।

বাংলাদেশের অঞ্চল ভেদে সুর, টান ও প্রকাশে ভিন্নতা থাকলেও বিষয়ের ক্ষেত্রে যে মিল রয়েছে তা এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ও জীবনযাত্রার মিলকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। নদী, ফসল, ঋতু, প্রিয়জন, দায়গ্রস্থ পিতামাতা এবং এসবের প্রতি অন্তরের অনুভূতি সে এক অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে দিয়ে এক করে দিয়েছে। আর তার শ্রুতিধর প্রকাশেও হৃদয়মন ব্যথায় উদ্বেলিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশের অঞ্চল ভেদে সুর, টান ও প্রকাশে ভিন্নতা থাকলেও বিষয়ের ক্ষেত্রে যে মিল রয়েছে তা এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ও জীবনযাত্রার মিলকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। নদী, ফসল, ঋতু, প্রিয়জন, দায়গ্রস্থ পিতামাতা এবং এসবের প্রতি অন্তরের অনুভূতি সে এক অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে দিয়ে এক করে দিয়েছে। আর তার শ্রুতিধর প্রকাশেও হৃদয়মন ব্যথায় উদ্বেলিত হয়ে যায়। পালা বা গানের সেইসব চরিত্রদেরও এইসব মানুষেরা অতি আপন করে নেয়। তাদের দুঃখে রাত জেগে কাঁদে।

রংপুরের পালা হীরামনি কন্যার অংশ বিশেষ ‘আইক্কোসেরো দ্যাশেতে জয়নাল কান্দিয়া কান্দিয়া ফেরে/হাঁটতে হাঁটতে গ্যালো দোন ডাকিনী ঘরে’। (রংপুরের পালাগান ২য় খণ্ড মজিদুল ইসলাম বাঙলা একাডেমী-ফাল্গুন-১৩৯১)

উত্তরাঞ্চলের ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া গানের কথা নতুন করে কি বলার আছে? ‘‘ও কী গাড়িয়াল ভাই- কতো রবো আমি পন্থের দিকে চাহিয়ারে’’ (আব্বাস উদ্দীন)। এ গানের হৃদয় ছেঁড়া টানে কে উতলা না হয়ে পারে? অথবা ‘‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা কোন দূরে যাও চইলা’’ (খুব সম্ভব রফিকুল হক দাদু ভাই-এর লেখা) গাড়িয়াল আর মাঝির দূরপাল্লা ভ্রমণে ঘরের বধূটি কেমন বিরহী যন্ত্রণায় পোড়ে। আর সে যন্ত্রণার যদি এমন শৈল্পিক ও প্রাণভরা প্রকাশ ঘটে তবেই না হয়ে ওঠে সম্পদ। আর তাই বুঝি বাংলা গানের সৌন্দর্য ও গর্ব ক্রমেই হীরের ন্যায় ক্ষুরধার হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন ‘‘দিবানিশি আমি ভাসিরে তার তরে নয়ন জ্বলে/ভালজেনে ভেসেছিলাম জানি না এমন বলে।’’ (অজ্ঞাত) ভাটিয়ালি ও ভাওয়াইয়া গানে প্রেমে ও বিরহের মধুর চিত্র দুলে ওঠে শ্রোতার মনে।

পারস্য সংস্কৃতির সুফি তত্ত্বের প্রভাব এ-দেশের শিল্প, সংস্কৃতি মানুষের জীবন এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাসে এক আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে যা আজও একটি নির্দিষ্ট স্রোতধারায় বহমান। সুফি তথা মারফতি তত্ত্বের প্রভাবে জন্ম নেয় ভাব সঙ্গীত অবশ্য ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারও ছিল। ভাবসঙ্গীতে, প্রার্থনা, বন্দনা ও কাহিনি প্রবাহের সঙ্গে কখনও স্থান করে নিয়েছে বিরহ। তবে এ বিরহ কখনও ভাব বিরহ আবার কখনও রূপক আবার কখনও সার্বজনীন কিংবা বিশ্ব চরাচরের নির্মম ঘটনা সত্যিই বিরহ হয়ে ধরা দিয়েছে। লালনভূমি কুষ্টিয়া ছাড়াও বিভিন্ন পীর ফকির, সন্যাসী, বাউলদের কল্যাণে সারা বাংলায় ভাববিরহী সঙ্গীত দেখা যায়। দেখা যায় সিলেটেও যেখানে হাছনরাজা ও রাধা রমনের মতো দার্শনিক ভাব সঙ্গীত স্রষ্টারা ছিলেন। যেমন ‘‘সজনী সই বলগো তোরা/কই গেলে কোথায় পাই/প্রাণবন্ধু মনচোরা’’। (রাধা রমণ) এখানে সিরাজুদ্দিন কাছিমপুরী সংগৃহীত সিলেট অঞ্চলের আরেকটি প্রেম-বিরহের গান উদ্ধৃত করছি ‘‘হায়রে হায় গোলাবী ফুল, কেন রইলায় ফুটিয়া/ মোর সোয়ামী ঘরে নাই কে দিব মালা গাঁথিয়া’’। গানটির ভাব-ভালবাসা আর আবেদন নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন : একাত্তরের মুক্তির গান: পর্ব ২ – ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

এদেশে উৎসব আছে, গান আছে, বিরহ আছে, আছে হাসি কান্না সব। নদী ভাঙনের গান, বর্ষার আগমনের, চৈতালী হাওয়ার গান, বসন্তের গান, গান আর গান। এ দেশের মানুষের জীবনের গানের আরেকটি উর্বর ক্ষেত্র হল বিবাহ বা বিয়ে অনুষ্ঠান। বিয়ে অনুষ্ঠান কী আনন্দের না বিরহের? কনে বিদায় পর্বের গানে দুঃখের বাজনা বেজে উঠলেও প্রতি পর্বেই গানের ভিতর থাকে কনের বাপের পথটি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়ায় নিদারুণ অধ্যায়। একটি বিয়ের গান ‘‘ভইনী গো ভাবিরে আমার কইয়া বুঝাইও/এই জাম পাকিব/ভাবী আমার কান্দিব/ভইনী গো ভাবিরে কইয়া বুঝাইয়া’’ (প্রচলিত গান)। বিদায় পর্বে কনের আকুতি।

 লোকগানের ক্ষেত্রে সংগ্রহ ও গবেষণার ফলে সিলেট, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, নোয়াখালী, বগুড়া, কুষ্টিয়া ইত্যাদি অঞ্চলের জন্য উদাহরণ পাওয়া সহজ হয় বৈকি। কিন্তু বিয়ের গানের রেওয়াজ এপার-ওপার দুই বাংলার সর্বত্রই ছিল এবং মিলনের পাশাপাশি বিরহের কথাও সমানভাবে রয়েছে। ফরিদপুরের একটি গান- ‘‘জোয়ারে ভাসাইয়া নিলো হারে বৈদেশী নাইয়া/ আজ আমি জোয়ার পাইয়া কোন বা দেশে যাই/দয়াল বাণিজ্যেতে যায়/সোনার খড়ম রাঙ্গা পায়’’ (সংগ্রহ থেকে)

পল্লী কবি জসীমউদ্দিন আজলা ভরে এ অঞ্চলের লোকগানকে যত্নে তুলে দিয়ে গেছেন সবার সামনে। আর বিরহকে তিনি রূপায়িত করেছেন বর্ণিল অলংকারে, তার কাব্যে লোকসাহিত্যের প্রেম-বিরহের আঁচ পাওয়া যায়। সাংসারিক মান অভিমানকে ছাপিয়ে সামষ্টিক সমস্যাও কখনও ধরা দিয়েছে বাংলা গানে বিরহের নতুন আখ্যান হিসেবে।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর দেশে অভাব দেখা দিয়েছে সেটার করুণ চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রামের তৎকালীন একটি আঞ্চলিক গানে। ‘পোয়া দুয়া, মাইয়া তিন্না, কান্দি আইযার খুন/ঘরত নাইরে যে একমুঠ চইল, খাবাইয়াম কইত্তন/ বাজাররত গেলাম চৈল বেচের তিন পা, আজ্জোর চাইলাম আমি/ চইল অলা কয় শালা কত্তুন আইছস লামি।’ (ওয়াহিদুল আলমের সংগ্রহ) চট্টগ্রামের সাধারণ লোকগান এবং আঞ্চলিক গানে বৈচিত্র্যও যেমন ছিল তেমন ছিল পরিবর্তন প্রবণতা। তবে রোমান্টিকতায় কখনও ঘাটতি ছিল না যেখানে বিরহ ও স্বরূপে এসেছে অর্থাৎ একেবারে শৈল্পিক অবয়বে। এ অঞ্চলের গানে মারফতি চিন্তা ব্যাপকহারে ছড়ালেও নদী সমুদ্র আর প্রকৃতি নিয়ে ভয়-শঙ্কা, মান-অভিমান ও দুঃখের স্মৃতি, আশা-হতাশা সর্বদা প্রকাশিত হয়ে আসছে হৃদয় তরঙ্গিত ছন্দে। হাল আমলের একটি গান বেশ দাগকাটে ‘‘কর্ণফূলীরে স্বাক্ষী রাখিলাম তোরে, অভাগীনির দূ:খের খতা (কথা) খবি (বলবি) বন্ধুরে’’ (সঞ্জিত আচাইয়া)

আরও পড়ুন : বাবার গল্প (পর্ব ৫) – মৈনাক বিশ্বাস

লোকগানের অন্যান্য শাখা যেমন- বাইচালী, হুলোই গান, নইলা গান, পটুয়া সঙ্গীত, জাগ গান, হেঁচড়া, তরজা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিরহ অতটা প্রাধান্য পায়নি, অবশ্য গাজীর গান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ভিক্ষে করার জন্য যে এক ধরনের সঙ্গীত বিশেষ করে ভাবপ্রধান বিরহী-প্রেমের প্রচলন ঘটেছিল। বিষয় এবং দ্যোতনা থেকে আমরা এসবকে বিরহী সঙ্গীতের দলে হিসেব করতে পারি। কারণ এতে দুঃখের কাহিনি বর্ণনা করে করুণা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। আব্বাস উদ্দিনের দরদি কণ্ঠে উত্তরের গানে প্রেম ও বিরহ যে মাত্রায় ফুটে উঠেছে তাতে একলাফে বাংলার লোকগান চলে গেছে এইচএমভিতে এবং সেখান থেকে সর্বত্র।

আমরা আজ পল্লীগীতি বলি কিংবা লোকসঙ্গীত বলি এসব গানে প্রেম, প্রকৃতি, সংসার, ভাব-ভক্তি সব কিছুর মাঝেই বিরহ এসেছে। হয়তো প্রেমের আর ভাব বা তাত্ত্বিক সঙ্গীতের বিরহের ক্ষেত্রে প্রায়োগিক পার্থক্য থাকতে পারে। আবার আঞ্চলিক গানগুলোর ক্ষেত্রে বিরহে পারিবারিক আবহ প্রাধান্য পেয়েছে। বিশেষভাবে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। আর নারী-পুরুষ সম্পর্ক বা প্রেম-বিরহের গীত এখানে একটি মাত্রা লাভ করেছে। এমন গানের সংখ্যা অনেক।

তথ্যসূত্র:

  • রংপুরের পালাগান ২য় খন্ড মজিদুল ইসলাম বাঙলা একাডেমী-ফাল্গুন-১৩৯১
  • চট্টগ্রামের লোকগান লোককবি- মোহাম্মদ শেখসাদি
  • বাংলা লোকগান, আবু ইসহাক হোসেন
  • উত্তর বঙ্গের লোক সঙ্গীত, ড মোহাম্মদ আব্দুল জলিল
  • বাংলার লোক ও পল্লীগীতি, ‍উস্তাদ বাবু রহমান
  • লোক জীবনের আয়না-জাহাঙ্গীর আলম শোভন
Author Jahangir Alam Shovon

একজন বাংলাদেশী লেখক, পর্যটক ও সমাজকর্মী। পেশায় একজন কমার্শিয়াল কনটেন্ট রাইটার। লেখালেখি করেন ছাত্রজীবন থেকে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬টি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্ব উত্তর প্রান্ত থেকে সর্বদক্ষিণ প্রান্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন। ৪৬ দিনে ১২৭৬ কিলোমিটার পদব্রজে ভ্রমণের গল্প নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার' অর্জন করেন। লেখালেখিতেও পেয়েছেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ই-কমসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

Picture of জাহাঙ্গীর আলম শোভন

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

একজন বাংলাদেশী লেখক, পর্যটক ও সমাজকর্মী। পেশায় একজন কমার্শিয়াল কনটেন্ট রাইটার। লেখালেখি করেন ছাত্রজীবন থেকে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬টি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্ব উত্তর প্রান্ত থেকে সর্বদক্ষিণ প্রান্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন। ৪৬ দিনে ১২৭৬ কিলোমিটার পদব্রজে ভ্রমণের গল্প নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার' অর্জন করেন। লেখালেখিতেও পেয়েছেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ই-কমসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
Picture of জাহাঙ্গীর আলম শোভন

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

একজন বাংলাদেশী লেখক, পর্যটক ও সমাজকর্মী। পেশায় একজন কমার্শিয়াল কনটেন্ট রাইটার। লেখালেখি করেন ছাত্রজীবন থেকে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬টি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্ব উত্তর প্রান্ত থেকে সর্বদক্ষিণ প্রান্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন। ৪৬ দিনে ১২৭৬ কিলোমিটার পদব্রজে ভ্রমণের গল্প নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার' অর্জন করেন। লেখালেখিতেও পেয়েছেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ই-কমসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com