এক। বসন্ত
কে পাখি তুমি গো?
কোন পাখি তুমি?
ঢলোঢলো দিন এল…খুলুখুলু বাজু…
কত খুশি হব আমি? তত আনা ভয়
কে পাখি তুমি গো?
উড়ে যাবে কবে?
দুই। আঘ্রাণ
এমন কোকিল তার বস্ত্রময় হুড়োহুড়ি ওড়া
শহরের অলি গলি আনাচে কানাচে
বসন্ত লুটায়
এমন কোকিল তার চক্ষুজোড়া নেশা
মাতাল মাতাল নাচ, অহোরাত্র চন্দ্র জেগে থাকে
এমন কোকিল তার ঠোঁটস্থ গোলাপি
রাখা মাত্র
ঠোঁট
দাবানল দাবানল জ্বলেছে পৃথিবী
তিন। শাপ
সবুজ এমনতর সবুজ কেন যে?
নীল এত নীল কেন? কেন যে হলুদ এত কাঁচা?
দিন আর রাত পার হয়
বনময় ঘুরে চলে পৃথুল যৌবন
কাঁচা ফল কাঁচা নীল হলুদ সবুজ
নখে কাটে ঠোঁটে ছেঁড়ে…হাহাকার করা
চাঁদ এক আকাশে উদিত
কেন খেলি সাপ নিয়ে? কেন নেশা সাপে এত?
নীল এত নীল?
শহরে উদিত
আমার পৃথুল হাহাকার
চার। একা
গন্ধ উড়ে গেল
যত্রতত্র যায় উড়ে — যত্রতত্র ছিল সূচনায়
গন্ধ যে উড়ন্ত, সে তো উড়তে উড়তে যায়
পাতা,সে তো ঝরা পাতা — গন্ধ তার
কোমল পতন
ছুঁয়ে, উড়ে যায়
পাতা, সে তো ঝরা পাতা- বিকেলের পড়ে আসা
রোদ তার প্রিয়
পাঁচ। বিরহ
ঘরে আছে ঘরের কোকিল
কোকিল আমার
ঘরে ফেরে নাই
জামার বোতাম ছুঁয়ে ছিল
ঠোঁট ছুঁয়েছিল কুহু — কুহু কুহু করে
মাত্রা হল ভুল
ভুল নামে ছন্দ এক কলম জড়ায়
কলমে কোকিল ভরি — ঘরের কোকিল
ঘরে ফেরে নাই
ছয়। চিরদিন
যমুনা দিনের কথা ভাবি
অহোরাত্র শ্যাম বাজনা বাজি
গুণ ধরে, ফুলে ছন্দ গাছ
ভেজা ভেজা নীল নীল গাছ
যমুনা দুপুর হয়ে এল
যমুনা বিকেলে খুব হাওয়া
যমুনা সন্ধ্যায় এসে দেখি
সারা জীবনের ছাড়াছাড়ি
দোঁহে থেকে একা একা একা
সাত। উৎসর্গ
তবু কিছু গন্ধ রয়ে গেল —
আনাচে কানাচে শরীরের
গন্ধ বাক্য রয়ে গেল ভাষার গঙ্গায় —
তবু কিছু নেশাগন্ধ জোড়াচক্ষু দিয়ে গেল
গ্রীষ্মদিনে ছায়া
বাবুই তোমার ঠোঁট এভাবেই আজ বুনে দিল
আমার বিরহ বাড়ি কী দারুণ কী নিপুণ —
শিল্পিত রচনা!
*ছবি সৌজন্য: Pixabay
দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ের পরিচিতি এককথায় বলা প্রায় অসম্ভব। তাঁর যে পরিচয়টি সর্বজনবিদিত তা হল, তিনি 'দেবভাষা' নামক বই ও শিল্পের আধার সংস্থাটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও চালিকাশক্তি। তিনি কবি। তিনি প্রকাশক। তিনি সম্পাদক। তবে কোনও পরিচয়েই নিজেকে বেঁধে ফেলননি এখনও। মনে করেন, কুলীন বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি আজও বহিরাগত। যদিও তাঁর প্রকাশিত কবিতার বই 'আঙুরভাব শেয়ালভাব' বাংলা কাব্যভাষায় নতুনত্বের দিশারী।