(Little Magazine)
এরই মাঝে এক সকালে একটা মরা কুকুর ফেলে রেখে যায় কেউ। খাকি রঙের পুরুষ্টু কুকুরের দেহটি, একটি পা কঠিন হয়ে শূন্যে ঠিকরে আছে, ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কুঁচকির থেকে তলপেটের সাদা চামড়ায় কয়েকটি অপুষ্ট স্তনবৃন্ত। ফ্ল্যাটবাড়িগুলির এ-ব্যালকনির চোখ ও-ব্যালকনিতে তাকায়। চোখে চোখে প্রশ্ন। বিরক্তি। ব্যস্ত চোখগুলি অন্তর্হিত হয়। গন্ধটা ওঠে একদিন পর। (Little Magazine)
উঠতি ছেলেরা নতুন সাইকেলে পাড়ার অলিগলি এঁকেবেঁকে বেরিয়ে যায় বাতাসে ঝড় তুলে। একঝাঁক সাইকেল একসঙ্গে ব্রেক কষে সশব্দে দাঁড়ায় তেমনই কোনো বাড়ির ভাঙা গেটে।
শীত আসছে। সন্ধের পর গেটের বাইরে দাঁড়ানো বাইকের সিটে হিমের ঘাম। তল্লাটে নতুন বাড়িঘর আর তৈরি হচ্ছে না। পুরনো বাড়ি কিনে ঘষেমেজে রঙ বুলিয়ে নতুন বাসিন্দাও তেমন আসছে না পাড়ায়। মলিন বাড়িগুলি প্রোমোটার কিনে নিচ্ছে। একটি দুটি ছোট পুকুর সহ, আম বাগান সহ, অপরাজিতার ঝোপ, লতায় নীলসাদা ফুল ধরে থাকে, ক্ষয়াটে একতলা কিছু বাড়ি, কিছু পরিত্যক্ত, কিছু হন্টেড। শহরের প্রতিটি পাড়ায় একটি দুটি করে ভূতের বাড়ি বাড়ছে। উঠতি ছেলেরা নতুন সাইকেলে পাড়ার অলিগলি এঁকেবেঁকে বেরিয়ে যায় বাতাসে ঝড় তুলে। একঝাঁক সাইকেল একসঙ্গে ব্রেক কষে সশব্দে দাঁড়ায় তেমনই কোনো বাড়ির ভাঙা গেটে। লতাপাতার স্তুপ মাথায় নিয়ে একেকটা হতচ্ছিন্ন বাড়ি। কিছুক্ষণ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ভাঙা দরজা গলে একে একে ভীরু পায়ে ভেতরে যায়, ভাঙা খাটের বেডরুম থেকে এককালের ফেলে যাওয়া রান্নাঘর, ছাদে যাবার ঘোরানো ছায়াময় সিঁড়ি। ধাপে বসে তারা লুকিয়ে আনা একটিই সিগারেটে জনে জনে টান দেয়। মুখে উদ্বেগ, ধোঁয়া ছাড়ে। (Little Magazine)
এ-বাড়িতে একটা খুন হয়েছিল না?
কেউ একটু চমকে সিলিঙয়ে তাকায়।
হুঁ, ব্যানার্জি আন্টি। এখন বাড়িটা এমনিই পড়ে থাকে।
কেউ মুখ গম্ভীর করে।
খুন হওয়া বাড়ি কে কেনে?
শৈশব জানে, যেমনই হোক, বাড়ি কখনও শূন্য থাকে না। কেউ না কেউ থাকে। মানুষ না হলে অন্য কেউ। যে সামনে নেই, দেখা যায় না তার হাজিরায় গা ছমছম করে। (Little Magazine)
কোন বাড়িতে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ দম্পতির জোড়া দেহ আবিষ্কার হয়েছে এক সকালে। মিত্র বাড়ির বউটি ফ্যান থেকে ঝুলেছিল কবে। প্রতিবার অল্পবিস্তর লোকের ভিড় জমে, অনুচ্চ স্বরে কথা। তার মাঝে উৎপাতের মতো একগুচ্ছ সাইকেল শব্দ করে ছুটে গেলে, বিরক্তি নিয়ে তাকায়। নিরিবিলি, শান্ত এই পাড়া মাঝে মাঝে চমকে ওঠে ভরদুপুরের তন্দ্রায়, বিকেলের চা’য়ে, এমনকি সংসারের কলহের ভেতর সাইকেল ছুটে গেলে মুহুর্ত থেমে যায় সব। মিউনিসিপ্যালিটির শববাহী গাড়ি এলাকা ঘুরে বডি নিয়ে যায়। মাথার কাছে কয়েকটা ধূপ, কিছু ফুল ছড়ানো। দাহকার্যের জন্য পাড়ারই দু-একজন গাড়ির সঙ্গে থাকে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সাইকেলগুলো দেখে মৃতের বাড়ি। দেখে মৃত শরীরের দিকে চেয়ে থাকা কার ছায়া জানালা থেকে সরে গেল। কেবল তারাই এই অ-দৃশ্যগুলি দেখতে পায়। (Little Magazine)
পুকুরের জল, তার ধারে অল্পবিস্তর গাছপালা, জলে পড়া পাতার ছায়া, বুনো ঝোপ, লতাপাতা অস্বাভাবিক দ্রুততায় উবে যায়। বছর ঘোরে না, টানটান মাথা তোলে চৌকস ফ্ল্যাট, একই আকার আকৃতি আদল।
অকালমৃতর বাড়ি পড়ে থাকে, বিক্রি হয় না। বছর ঘুরে দেয়ালে নোনা হাওয়া লাগে, বৃষ্টির দাগ, ঘরের চামড়া খসে পড়ে। সেগুলিও বিক্রি হয়ে যায়। ভালো দাম পেয়ে বুলডোজারে মাথা কোটে শহরের ইতিউতি পড়ে থাকা ক্ষয়িষ্ণু বাড়িগুলি। পুকুরের জল, তার ধারে অল্পবিস্তর গাছপালা, জলে পড়া পাতার ছায়া, বুনো ঝোপ, লতাপাতা অস্বাভাবিক দ্রুততায় উবে যায়। বছর ঘোরে না, টানটান মাথা তোলে চৌকস ফ্ল্যাট, একই আকার আকৃতি আদল। অনেককাল পর কেউ ফিরে এলে সব অচেনা ঠেকে। ফ্ল্যাটের সৌখীন নাম দেখে গুগল-ম্যাপে মানুষ নিজেরই বহু বছরের চেনা পরিসরটির তলাশ করে। (Little Magazine)
ফ্ল্যাটে মানুষ বাড়ে। ফুল,পাতার স্তূপীকৃত টবে গোঁজা ব্যালকনির রেলিঙয়ে শুকোয় বারমুডা, জাঙিয়া, ভেজা অন্তর্বাসের ঝুলে থাকা স্ট্র্যাপের মুখ থেকে জলের একটি ফোঁটা সাততলা থেকে মাটির টানে নিচে নেমে আসে। ময়লা-গাড়ি ঘোরে শহরময়। সকালে তীক্ষ্ম বাঁশির শব্দে বনানী বউদি আনাজের খোসা ভরা সবুজ বালতি হাতে গেটে দাঁড়িয়ে হাই তোলে। একপ্রান্তের ময়লা, শহরের অপরপ্রান্তে গিয়ে জমা হয়, রাস্তার ধার, নালা উপচে পড়ে। মানুষ যত তার তিনগুণ ময়লা, এক-দুটি গাড়িতে কুলোয় না। শহরে ময়লা ফেলবার জায়গা নেই। ভ্যাট সব দখলে গেছে। আইনি জট, শরিকি বিবাদে বঞ্জর পড়ে থাকা ঘরবাড়িফ্ল্যাটগুলির ঠিক মধ্যিখানে বৃত্তাকার এক-আধ টুকরো ভূমি ভরে ওঠে বাতিল কাগজ, প্লাস্টিকের স্তূপে, ফাটা বালতি, তুবড়ানো বোতল, দুমড়ানো কন্ডোম-প্যাকেটে নারীর আশ্লেষ, ভাঙা প্যাকিং-বাক্স, ফোনের নষ্ট চার্জারে। কাকের মতো দেখতে কাগজ কুড়নো একজন দুজন লোক বস্তা পিঠে ময়লা ঘাঁটতে আসতো মাঝে-মধ্যে, চোর সন্দেহে সিকিউরিটির তাড়া খেয়ে তারা এদিক আর মাড়ায় না। স্তূপ জমে ওঠে, ঢিবি হয়, ঢিবির গা বেয়ে আগাছায় ফুটে থাকে পার্থেনিয়ামের ফুল। কুকুরের দেহটা সেখানেই ফেলে রেখে গেছে কেউ। (Little Magazine)
কয়েক টুকরো রোদ নিজের মনে খেলা করে। মৃদু বাতাস লাগে টবের পাতায়। বাড়ির অভ্যন্তরের সঙ্গে সম্পর্কহীন বৃদ্ধার মতো, সারাটা দিন নিঃসঙ্গ চেয়ারে বাইরে বসে থাকা, অপেক্ষা করা, কেউ ডাকবে, কেউ এসে দাঁড়ালে দুটো কথা বলতে পারে সে।
পরস্পরের দিকে মুখ বাড়িয়ে থাকা টুকরো বারান্দাগুলি শূন্য পড়ে থাকে। কয়েক টুকরো রোদ নিজের মনে খেলা করে। মৃদু বাতাস লাগে টবের পাতায়। বাড়ির অভ্যন্তরের সঙ্গে সম্পর্কহীন বৃদ্ধার মতো, সারাটা দিন নিঃসঙ্গ চেয়ারে বাইরে বসে থাকা, অপেক্ষা করা, কেউ ডাকবে, কেউ এসে দাঁড়ালে দুটো কথা বলতে পারে সে। কেউ আসে না। সন্ধে নামলে সামান্য ঝুঁকে ধীরে ঘরে উঠে যায়। ঘর হল দেহ,-ব্যালকনিটুকু তার মন, যে-যার সত্তা নিয়ে একে অপরের গায়ে লেগে নিরর্থক ঝুলে থাকে। সিগারেট খেতে কেউ এসে দাঁড়ায়, মোবাইল কানে ওধারের ব্যালকনিতে কেউ। দুজনেই কুকুরের বডিটা দেখে। দেখতে দেখতে সিগারেট খায়, দেখতে দেখতে গলা নামিয়ে ফোনে কথা বলে। হলদেটে মুখটা ফেটে হাঁ হয়ে আছে, দু-পাটি বিকট দাঁতের ফাঁক গলে মুখের ভেতর ঢুকে পড়েছে নাছোড় মাছির দল। তলপেটের চামড়া কালো হতে শুরু করেছে। তার ওপর বসে নীল মাছির বিনবিনে চাক। ছেলেদের সাইকেল বাতাস কাঁপিয়ে ছুটে গেলে চাকটা একবার উড়ে উঠে আবার বসে পড়ে। (Little Magazine)
শীতের সন্ধে নামলে ফ্ল্যাটের জানালায় ধাপে ধাপে আলো জ্বলে। সাততলা, দশতলা থেকে সেই আলো দেয়াল হড়কে নেমে আসে অতলে আধটুকরো ময়লা ফেলা স্থানটিতে, মরা কুকুরের গায়ে গিয়ে পড়ে তারই আভা। রাত বাড়ে। ঘরের আলো একে একে নিভতে থাকে। জায়গাটা ডুবে যায় আঁধারে। অন্ধকার, এতকিছু ভুলিয়ে রাখে। রাত চুঁইয়ে পড়া মিহি জল জমা হয় কুকুরটার নিঃসাড় লোমে। (Little Magazine)
রোদ বাড়লে গন্ধটা দেহ ছেড়ে সরু ফিতের মতো পাকিয়ে উঠে লাফিয়ে বাতাসে গিয়ে আছাড় খায়। ফ্ল্যাটবাড়ির সবাই অল্পবিস্তর গন্ধটা পায়। নাক কুঁচকে জানালার বাইরে তাকায়। তলপেট থেকে পচনটা বাকি জায়গার দিকে অগ্রসর হয় ধীরে।
রোদ বাড়লে গন্ধটা দেহ ছেড়ে সরু ফিতের মতো পাকিয়ে উঠে লাফিয়ে বাতাসে গিয়ে আছাড় খায়। ফ্ল্যাটবাড়ির সবাই অল্পবিস্তর গন্ধটা পায়। নাক কুঁচকে জানালার বাইরে তাকায়। তলপেট থেকে পচনটা বাকি জায়গার দিকে অগ্রসর হয় ধীরে। প্রথমে চামড়ার একটি সুতো পচে খসে পড়তেই ছালের বাকি জালটি ঢিলে হয়ে ভেতরের ফিকে গোলাপি মাংস দেখা দেয়। দিগ্বিদিগে থাকা মাছিরা এই পচন গন্ধে দিশাহারা হয়ে ছুটে এসে দেহে বসে। গন্ধ তীব্র হয়। গন্ধের ধূমায়িত জাল বিস্তৃত হয় ফ্ল্যাটঘরবাড়িগুলির কোণায়। জানালা-দরজা রুদ্ধ করেও আটকাতে পারে না। সমস্ত রন্ধ্রপথে ঢুকতে থাকে। ঘরের বাতাসে ঘোরেফেরে, অতিষ্ঠ করে মারে। জানালা আবার খুলে দিতে হয়। আবার বন্ধ করে আসে। পথচারীরা নাকেমুখে কাপড় চেপে জায়গাটা ছুটে পেরিয়ে যায়। কেউ মনে করে কুকুরটাকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার। কেউ চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করে-
কোথায় সরাবেন, একটাই তো ফেলবার জায়গা!
দশহাত মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিলে হয়, মাটি ফুঁড়ে গন্ধের উঠে আসার ক্ষমতা নেই!
পুড়িয়ে দিলেও তো হয়। আগুনে পুড়ে গন্ধও ছাই হয়ে যায়!
কিন্তু কারোরই এসব কাজে সময় বিশেষ নেই। থাকলেও গা-ওগরানো জীবটার কাছে ঘেঁষতে চাইছে না কেউ। কুকুরটার কাছে গেলে কারও বউ বার দুই চান করাবে। নাকে গন্ধ নিয়ে কেউ কাজে বেরিয়ে যায় সময়ের আগে, লেটে ফেরে। রাতে ঘরে ফিরে তীব্র বদগন্ধে হাঁসফাঁস করে। রুম ফ্রেশনার, দামি পারফিউম ঘরের বাতাসে স্প্রে করায় দু-রকম গন্ধ মিলে উৎকট পরিস্থিতি হয়। টের পায়, অসীম বলশালী এই দেহপচা গন্ধ। বাকি সুগন্ধিগুলিকে চেরা জিভ দিয়ে শুষে-গিলে নিজের মতো বানিয়ে ফেলে। টেবিলে রাখা খাবারের প্রতিটি ঘ্রাণ খেয়ে ফেলছে। ধোঁয়া ওঠা রান্নাগুলি থেকে অস্থির পচন গন্ধ, ভাসে রাখা ফুল, এমনকি বিছানায় একান্ত নারীটির দেহের রোমে নাক ডুবিয়ে মরা কুকুরের লোমের গন্ধ নাকে ছিটকে এসে লাগে! কারও ছুটে গিয়ে বেসিনে ওয়াক তোলার শব্দ আসে। নির্ঘুম রাত অথবা তন্দ্রাচ্ছন্নে মনে হয় নাসারন্ধ্র দিয়ে অভ্যন্তরে ঢুকে গন্ধটা সমগ্র শরীরের দখল নিচ্ছে! আচ্ছন্নতার ভেতর সশব্দে কারা সাইকেল নিয়ে ছুটে যায়, চমকে উঠে বসে। (Little Magazine)
গন্ধও অবসন্ন করে, সয়ে আসে। জানালা থেকে তলায় তাকিয়ে দেখে। মাছির দলকে ত্রাতা মনে হয়। পচতে থাকা মাংসে লোভনীয় ওম ওঠে, সেই তাপ বোঝা মানুষের অসাধ্য, মাছিদের আহ্লাদ হয়। খাবলা হয়ে মাছির চাক বসতে থাকে সমগ্র দেহে। মাছিতে দেহটা ঢেকে যায়, যেন কুকুরাকৃতি মাছিরই এই দেহ! তারা মুখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা লালা ফেলে ছালে, মাংসে, অতি ক্ষুদ্র মাংস-কণায় ভেঙে দেয়, শরীরের রসটুকু অগুন্তি শুঁড়ে, সূক্ষ্ম প্রোবোসিসে একটু একটু শুষে নিতে থাকে। আস্ত কুকুর-মাংসের মিলিত মহাভোজ। এভাবে গোটা দেহটা তারা একদিন সাবাড় করে ফেলবে। (Little Magazine)
ভাবে কতদিনে শেষ হবে এই গন্ধ-যাপন? ততদিন, এই গন্ধে অভ্যস্ত হতে হবে। মাছিদের মতো ভালবাসতে হবে গন্ধকে নইলে বাঁচা দায়! কানের ভেতর সারাক্ষণের ভনভন ধ্বনি। টিকে থাকতে হবে, একমাত্র টিকে থাকাই মনুষ্যজন্ম। অদ্ভুত, অনির্দেশ্য এই শরীর নিয়ে ঘোরতর সংশয় ঘিরে ধরে!
মাটি থেকে উঠে আসে সহযোগী কীটেরা, তলপেট খেয়ে ফেলে প্রকাণ্ড এক কৃষ্ণগহ্বর। দেহের প্রাচীর কুরে খেয়ে রাস্তা করে দেয়। নরম চোখ খেয়ে ফেলে দুটি অন্ধকার গর্ত রেখে যায়। মাছির সৈন্যদল দেহের সুড়ঙ্গপথে ঢুকে পড়ে। সবে মিলে অক্লান্ত খেয়ে যাবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেহগঠন বীভৎস, বিকৃত হতে থাকে রোজ। এরপর ভুক্তাবশেষ খাবে, হাড়ের গায়ে লেগে থাকা গন্ধটুকু নিঃশেষে চেটে খাবে তারপর। ভাবে কতদিনে শেষ হবে এই গন্ধ-যাপন? ততদিন, এই গন্ধে অভ্যস্ত হতে হবে। মাছিদের মতো ভালবাসতে হবে গন্ধকে নইলে বাঁচা দায়! কানের ভেতর সারাক্ষণের ভনভন ধ্বনি। টিকে থাকতে হবে, একমাত্র টিকে থাকাই মনুষ্যজন্ম। অদ্ভুত, অনির্দেশ্য এই শরীর নিয়ে ঘোরতর সংশয় ঘিরে ধরে! (Little Magazine)
এক সন্ধে নামার আগে সাইকেলের ছেলেরা দাঁড়ায় আধখাওয়া কুকুরটাকে ঘিরে। খুঁটিয়ে দেখে। লাঠি খুঁচিয়ে মাছিগুলোকে উড়িয়ে দেয়, দূরে সরে গিয়ে তারা ঘুরপাক খায়। হাঁ করা মরা করুণ মুখটা, নিরুপায় খোকলা শরীর। কেউ সাইকেল নিয়ে ছুটে গিয়ে প্লাস্টিক বোতলে খানিকটা পেট্রোল বয়ে আনে। শুকনো আবর্জনার স্তূপ হয় দেহটার ওপর। আগুন ধরিয়ে দেয়। লকলক জ্বলে। ধোঁয়া উঠতে থাকে ফ্ল্যাটগুলোর মাথা ছাড়িয়ে। আগুনকে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে তারা হাতে সেঁক নেয়, চিতার আগুন থেকে একটা সিগারেট ধরায়। সেটা হাতে হাতে ফেরে।
হ্যাঁ রে, কুকুর মরে ভূত হয়?
কে জানে!
সাইকেলগুলো হলকা তুলে বেরিয়ে যায়। (Little Magazine)
শববাহী শকট ঘোরে শহরময়। কাচঢাকা গাড়িতে দেহ চলে যায়। ফেলে যাওয়া ঘরের দরজার সামান্য ভেতরে আবছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকে কেউ, নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে নিজেরই অক্ষম দেহকে বিদায় জানায়।
ভূতের বাড়ি সব মুড়িয়ে বহুতলের ইমারত ওঠে। কিশোর সাইকেলের দল গলিপথে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় এ-প্রান্তে, সে-প্রান্তে। খুঁজে যায় কোথাও একটি-দুটি লতাগুল্ম ঢাকা ছায়াচ্ছন্ন ঘর টিকে আছে কীনা। বিরাটকায় দেয়ালেগুলিতে দৃষ্টি ঠোক্কর খেয়ে ফিরে আসে। অপমরণের বাড়িতে দীর্ঘশ্বাস ঘুরেছে শীতল হাওয়া হয়ে। বহু তলার গভীরে চাপা পড়া রুদ্ধশ্বাস এই প্রাগৈতিহাসিক সময় পেরিয়ে সমস্ত নিরেট ভেঙে তীব্র গন্ধ হয়ে বাতাসে ফেটে পড়বে একদিন। শববাহী শকট ঘোরে শহরময়। কাচঢাকা গাড়িতে দেহ চলে যায়। ফেলে যাওয়া ঘরের দরজার সামান্য ভেতরে আবছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকে কেউ, নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে নিজেরই অক্ষম দেহকে বিদায় জানায়। (Little Magazine)
ক্লান্ত সাইকেলগুলো একে একে থেমে একজায়গায় জড়ো হয়। হাঁফায়। মাটিতে সাইকেল ফেলে দিয়ে ভেজা ঘাসে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে। টুকরো ইস্পাতের মতো আলোভরা রাতের আকাশে চোখ রেখে কেউ উদাস গলায় বলে ওঠে- চারপাশটা কেমন অদ্ভুত একইরকম দেখতে হয়ে যাচ্ছে, না? (Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।