তাঁরা হাঁটছেন। শত অসুবিধা নিয়েও তাঁরা হাঁটছেন।
ক্রাচ নিয়ে, লাঠি হাতে, অনেক সময় মিছিলে হাঁটতে থাকা অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে। অনেকের আবার হাঁটার শক্তিটুকুও নেই। তাঁরা মিছিলে চলেছেন হুইল চেয়ারে। তাঁদের শরীরে বার্ধক্য থাবা বসিয়েছে। দেহে জরার শত সহস্র বলিরেখা। কিন্তু মন তাঁদের সতেজ। তারুণ্যের আগুনে উদ্দিপ্ত তাঁরা। তাই বিকেল ৩টেয় শুরু হওয়া হাজার হাজার মানুষের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ মহামিছিল যখন মধ্যরাত পেরিয়ে, আঁধারে মশাল জ্বেলে মুখে মুখে ভাইরাল নানা শ্লোগানে আর গানে মুখরিত হয়ে দক্ষিণের হাইল্যান্ড পার্ক থেকে উত্তর কলকাতার আরজিকর হাসপাতাল পর্যন্ত ৪২ কিমি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করছে, তখন বাড়িতে আরাম করে বসে টিভির পর্দায় মিছিলের লাইভ টেলিকাস্ট না দেখে তাঁরা ছুটে এসেছেন মিছিলের জনজোয়ারে যোগ দিতে। (Protest)
তাঁদের যদিও বয়স হয়েছে কিন্ত প্রাক স্বাধীনতা যুগের উত্তাল আন্দোলনের কথা তাঁদের ভালভাবে স্মরণে নেই। কারণ সেসময়ে তাঁদের বয়স ছিল অত্যন্ত অল্প। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে যখন ধীরে ধীরে রাজনীতির পঙ্কিল আবর্ত নাগরিক জীবনকে নাগপাশে আবদ্ধ করল, তখন মানুষ ক্রমশ ভুলতে বসল রাজনীতির ঝাণ্ডা ছাড়া, রাজনীতির রঙ ছাড়া কোনও মিছিল হতে পারে!
কেন এলেন রাজনীতির থেকে দূরে থাকা এই মিছিলে যোগ দিতে? হাসি মুখে তাঁরা বলছেন, একদম ঠিক কারণেই তো তাঁদের আসা। স্বাধীনতার পর নয় নয় করে ৭৭টি বসন্ত চলে গিয়েছে। তাঁদের যদিও বয়স হয়েছে কিন্ত প্রাক স্বাধীনতা যুগের উত্তাল আন্দোলনের কথা তাঁদের ভালভাবে স্মরণে নেই। কারণ সেসময়ে তাঁদের বয়স ছিল অত্যন্ত অল্প। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে যখন ধীরে ধীরে রাজনীতির পঙ্কিল আবর্ত নাগরিক জীবনকে নাগপাশে আবদ্ধ করল, তখন মানুষ ক্রমশ ভুলতে বসল রাজনীতির ঝাণ্ডা ছাড়া, রাজনীতির রঙ ছাড়া কোনও মিছিল হতে পারে!
আসলে মিছিল বলতে লোকের বদ্ধমূল ধারণা ছিল মিছিলে যে হাজারো লোক আসবে, তারা তো আর এমনি এমনি আসবে না। দূর দূরান্ত থেকে তাঁদের আনতে হবে ট্রেনে বাসে করে। প্রয়োজন হলে নৌকা করে। আর এই আনার কাজটাই করবে কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজনীতির নামাবলী গায়ে চাপানো কোনও গোষ্ঠী। তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের অঙ্গ এটা, সাদা বাংলায় যাকে বলে কোনও চর্চিত বিষয়ে জনগনের ক্ষোভকে সুকৌশলে মিছিলে নিয়ে আসা যাতে ভোটব্যাঙ্ক স্ফিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অর্থাৎ সে মিছিলে আমজনতা হাঁটলেও তিনি নিজের জন্য হাঁটছেন না। আসলে আমজনতা কতকটা বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় নাম লেখাচ্ছেন, হাঁটছেন মিছিলে, যোগ দিচ্ছেন জমায়েতে।
এখানে অবশ্য একটা কথা পরিষ্কার করে বলা দরকার। এখানে কিন্তু রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কথা বলা হচ্ছে না। রাজনৈতিক মিছিলে, জমায়েতে তাঁরা যান দলের নির্দেশ মেনেই। কারণ দলের স্বার্থের সঙ্গে তাঁদের নিজস্ব স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে।
এই সময় আরজিকরের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ প্রশ্ন তুললেন কাজের শেষে বিশ্রামের জন্য নির্যাতিতা কেন ৯ অগস্ট ভোর রাতে একা চারতলার সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য এই সেমিনার রুমেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে মিটিং মিছিল নিয়ে চলে আসা এই প্রচলিত ধারণা ফুৎকারে উড়িয়ে দিল ১৪ই অগস্টের রাত। ৮ অগস্ট রাতে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে কর্তব্যরতা এক মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস হত্যা গোটা বাংলা তথা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। এই সময় আরজিকরের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ প্রশ্ন তুললেন কাজের শেষে বিশ্রামের জন্য নির্যাতিতা কেন ৯ অগস্ট ভোর রাতে একা চারতলার সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য এই সেমিনার রুমেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ফেসবুকের অক্সিজেন ও কলকাতার জেগে ওঠা : কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়
২০২০ সালে প্রেসিডেন্সি থেকে সোসিওলজিতে স্নাতক বর্তমানে সোশ্যাল সায়েন্স গবেষক ২৯ বছরের রিমঝিম সিনহা বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবাদে তিনি ঠিক করলেন ১৪ অগস্ট রাত রাস্তায় থাকবেন। এই বাইরে থাকার জন্য কারুর কাছে কোনও জবাবদিহি করবেন না। আদতে রিমঝিম দেখাতে চেয়েছেন নারীর অধিকার শুধু দিবালোকে নয়, রাতেও রয়েছে তাঁর অবাধ অধিকার। (বস্তুত পরে সুপ্রিম কোর্টও একই আদেশ দিয়েছেন) তাই তিনি ফেসবুকে নারীদের ডাক দিলেন ‘রাত দখল করার’-‘রিক্লেম দ্য নাইট’। এর জন্য বেছে নিলেন ১৪ অগস্ট রাত। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যা হয়ে দাঁড়াল নারী স্বাধীনতার ডাক। আদতে শ্লোগানও হল তাই- ‘স্বাধীনতার মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার জন্য’। তবে রিমঝিম নিজেই স্বীকার করেছেন তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না যে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মহিলা পথে নামবেন।
গগনচুম্বী অট্টালিকা থেকে বস্তিবাসী, অশীতিপর হুইলচেয়ারে বসা বার্ধক্য থেকে স্কুল পড়ুয়া কৈশোর পর্যন্ত সামিল। কোথাও অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যে ইস্টার্ন মেট্রোপলিট্যান বাইপাসে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন, কোথাও জুনিয়র ডাক্তাররা লালবাজারের অনতিদূরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাতভোর বসে বিক্ষোভ জানিয়েছেন।
তবে শুধু ১৪ অগস্ট নয়, তার পরেও বারংবার সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ আন্দোলনে পথে নেমেছেন। গগনচুম্বী অট্টালিকা থেকে বস্তিবাসী, অশীতিপর হুইলচেয়ারে বসা বার্ধক্য থেকে স্কুল পড়ুয়া কৈশোর পর্যন্ত সামিল। কোথাও অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যে ইস্টার্ন মেট্রোপলিট্যান বাইপাসে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন, কোথাও জুনিয়র ডাক্তাররা লালবাজারের অনতিদূরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাতভোর বসে বিক্ষোভ জানিয়েছেন। ৪২ কিমির এই পদযাত্রা হল এই চলমান আন্দোলনের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ।
বস্তুত স্বাস্থ্য ভবনের সামনে কয়েকদিন লাগাতার জুনিয়র ডাক্তাররা যে ধর্ণায় বসেছিলেন তার মূল অক্সিজেন কিন্তু ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন। না হলে সাধারণ মানুষ দূরদূরান্ত থেকে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে ছুটে আসতেন না এঁদের সাহায্য করতে। ভবানিপুর থেকে ফলওয়ালারা এসে ধর্ণায় বসে থাকা ডাক্তারবাবুদের ডাবের জল খাইয়েছেন। কেউ পুজোর জামা না কিনে সেই অ্রর্থে খাবার কিনে দিয়েছেন। সল্টলেকের বহু বাড়ির গৃহবধূরা সকাল সন্ধ্যা আন্দোলনকারীদের জন্য চা ও জলখাবার নিয়ে হাজির হয়েছেন। ধর্ণা আন্দোলনের শেষ দিকে যখন পেডেস্ট্যাল ফ্যান একদল ডেকরেটার ধর্ণামঞ্চ থেকে খুলে নিয়ে গিয়েছে তখন নিউটাউনের বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির ফ্যান দিয়েছেন। শুধু এই সব উদাহরণই নয়, রয়েছে আরও অনেক দৃষ্টান্ত যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁদের সাধ্যমতো সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। এবং তাতে নেই কোনও প্রচারের স্পৃহা। বলাই বাহুল্য একমাত্র বাড়ির আপনজন ভাবলেই এটা করা সম্ভব।
অর্থাৎ এই প্রথম জনগনের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে এই আন্দোলন। পরিসংখ্যানই বলে দেবে নারীদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননার ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর। কখনও প্রতিবাদ হয়, কখনও হয় না। নীরবে নিভৃতি কান্না হয়ে তা ঝরে পড়ে।
অর্থাৎ এই প্রথম জনগনের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে এই আন্দোলন। পরিসংখ্যানই বলে দেবে নারীদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননার ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর। কখনও প্রতিবাদ হয়, কখনও হয় না। নীরবে নিভৃতি কান্না হয়ে তা ঝরে পড়ে। কখনও বা স্থানীয় স্তরে মোমবাতির মিছিল অবধি তা সীমাবদ্ধ থাকে। এত প্রবল সুনামি হয়ে আছড়ে পড়ে না। কিন্তু এবার তা হয়েছে।
কেন?
মধ্যবিত্তের এগিয়ে আসা
১৪ অগস্ট রাতে রাত দখলের আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসা মুখগুলো দেখলেই বোঝা গিয়েছিল নিঃশব্দে এক সামাজিক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। সাধারণভাবে নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণী বেরিয়ে এসে নাগরিক সমাজের সঙ্গে পা মিলিয়েছে। তাই প্রথমদিন থেকেই এই নাগরিক আন্দোলন শুধু যে এক ঝটকায় নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে ফেলল তাই নয়, বাংলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করল। ছোটবড় সব জনপদের হাজার হাজার মহিলা পুরুষ রাস্তায় নেমে পড়লেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগান দিতে দিতে। রাজ্য ছাড়িয়ে দিল্লি, মুম্বই, পুনা, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই থেকে কাশ্মীরে ছড়িয়ে পড়ল প্রতিবাদের ঝড়। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার থেকে সিন নদীর ধারে মঁমার্তে থেকে সুইডেন, নরওয়েতেও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ বিক্ষোভে সামিল হলেন।
ঠিকঠাকভাবে বললে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এগিয়ে আসাটাই এই আন্দোলনের এক্স ফ্যাক্টর। কারণটা বলা যাক। এমনিতে অর্থনীতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিপল রিসার্চ অন ইন্ডিয়াস কনসিউমার ইকোনমির (সংক্ষেপে প্রাইস) মতো থিঙ্কট্যাঙ্কের ২০২১ সালের এক সমীক্ষা অনুসারে বছরে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আয় করা শ্রেণীকে মধ্যবিত্ত বলা যায়। দেশের ৬৩ টা বড় শহরে সমীক্ষা চালিয়ে থিঙ্কট্যাঙ্কটির অভিমত দেশের ১০ লক্ষ বা তার অধিক জনসংখ্যা বড় শহরগুলোর ২৭ শতাংশ বাসিন্দা মধ্যবিত্ত। এই মাপকাঠিতে রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি জনগনের মধ্যে শহুরে এলাকায় ৫৫ শতাংশ পরিবার ও গ্রামীণ এলাকায় ৪৩ শতাংশ পরিবার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে পড়ছে।
পরিসংখ্যান আরও বলছে ভারতের প্রায় ১৭ কোটি পরিবার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৫ জন ধরলে সংখ্যাটা ৮৫ কোটিতে দাঁড়ায়। আর্থ রাজনীতির যে কোনও দিক থেকে দেখলে সংখ্যাটা দেশের পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
পরিসংখ্যান আরও বলছে ভারতের প্রায় ১৭ কোটি পরিবার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৫ জন ধরলে সংখ্যাটা ৮৫ কোটিতে দাঁড়ায়। আর্থ রাজনীতির যে কোনও দিক থেকে দেখলে সংখ্যাটা দেশের পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আরজিকর ইস্যুতে প্রথমবারের মতো এই শ্রেণীই এই নাগরিক আন্দোলনে এগিয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কলকাতা সহ রাজ্য জুড়ে এত ভূকম্পন। দেশের সংবাদমাধ্যম তো বটেই, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকোনমিস্টের মতো ভুবনখ্যাত পত্রপত্রিকাতেও সচিত্র আরজিকর আন্দোলনের খবর।
কিন্তু এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী এগোল কেন? প্রাইস এর সমীক্ষার মতে দ্রুত গতিতে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ইঞ্জিন হতে চলেছে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী। উচ্চশিক্ষার হারও বাড়ছে। আগামী ২৩ বছরের মধ্যে দেশের জনগনের ৬১ শতাংশ হয়ে দাঁড়াবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আরজিকরের মর্মান্তিক ঘটনার রেশ মধ্যবিত্তদের উপর পড়ার অন্যতম কারণ হল সামাজিক বিষয়গুলিতে তাঁদের ক্রমশ জোরাল মতামত, যেটা আর উপেক্ষার জায়গায় নেই। আরজিকরের নিহত চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতিকে তাঁরা নিজেদের পরিবারের উপর আঘাত হিসাবে দেখেছে। নিজের মেধায় মাথা উঁচু করে চলা এক মধ্যবিত্ত স্বপ্নকে এভাবে নিষ্পেষিত হওয়ার বেদনা কোথাও যেন তাঁদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে আঘাত করেছে। এই অসহ্য বেদনা আর তাদের চুপ থাকতে দেয়নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটারের বর্তমান নাম) এর মতো সামাজিক মাধ্যম যা স্মার্টফোনের মাধ্যমে এখন কোটি কোটি লোকের হাতে। ফলে যে কোনও মতামত প্রকাশ ও তা ছড়িয়ে দেওয়া অনেক সহজ। ফলে বিচারের দাবিতে তাঁরা সরব হয়েছেন। তবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তুফান তুললেই যে এই হত্যার বিচার পাওয়া যাবে না এটাও তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন। জানতেন বাস্তব জগতে নামতেই হবে। রিমঝিমের রাত দখলের আহ্বান তাঁদের সেই সুযোগ এনে দিল। তাই আরজিকর ইস্যুতে আন্দোলনের সুনামি রূপ নেওয়ার পিছনে সামাজিক মাধ্যমেরও যে বড় হাত রয়েছে তা বলাই যায়।
আরও একটি কৌশলগত কারণে আন্দোলন কলকাতা ছাড়িয়ে পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যখনই কলকাতায় কোনও আন্দোলন হচ্ছে তখনই রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় স্তরে তা করা হয়েছে।
আরও একটি কৌশলগত কারণে আন্দোলন কলকাতা ছাড়িয়ে পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যখনই কলকাতায় কোনও আন্দোলন হচ্ছে তখনই রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় স্তরে তা করা হয়েছে। ফলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের ব্যাপকতা রয়ে গিয়েছে।
তবে ফলাফল যাই হোক না কেন, আপাদমস্তক অরাজনৈতিক এই আন্দোলন একটা মূল্যবাণ শিক্ষা আমজনতাকে দিয়েছে। নায্য দাবি তুলতে কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়া আবশ্যক নয়, আবশ্যক হল আমজনতার সার্বিক ইচ্ছা। আর এই শিক্ষাই ভবিষ্যতের আন্দোলনের পথ সুগম করবে।
অগস্ট মাস ভারতের ইতিহাসে নানা কারণে স্মরণীয়। ২০২৪ এর অগস্ট অনন্য জনজাগরণের সাক্ষী হয়ে থাকল।
তথ্যসূত্র: রাইজ অফ ইন্ডিয়ান মিডল ক্লাস-আ প্রাইস সার্ভে
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে