বুধবার বিকেল চারটেয় নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটানের বন্দরে নামলেন গ্রেটা থুনবার্গ। ভারতীয় সময় রাত্রি সাড়ে বারোটা। পনেরো দিন আটলান্টিকের বুকে সহযাত্রী দলটিকে নিয়ে একটি ইয়টে ভেসে এসেছেন তিনি। ১৪ অগস্ট ব্রিটেনের প্লিমাথ থেকে মালিৎসা-২ নামের ইয়টটিতে রওনা দেন সুইডেনের এই ষোড়শী। ইয়টটি কার্বন-ফ্রি, মানে তার চলাচলের ফলে বায়ুমণ্ডলে একটুও কার্বন নিঃসৃত হয় না। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সে সংগ্রহ করে নেয় সোলার প্যানেল এবং অন্য কিছু উৎস থেকে। আর সেই কারণেই গ্রেটা এই বাহনটিতে সওয়ার হয়ে আটলান্টিক পেরিয়েছেন। এই পক্ষকাল ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর কাছ থেকে নানা মেসেজ এসেছে, সঙ্গে তাঁদের ছবি, কখনও বা ভিডিয়ো। বলা বাহুল্য, এই দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার নানান ঝক্কি ছিল। কোনও কোনও ছবিতে দেখা গেছে, উত্তাল সমুদ্রে জলযান এত দুলছে যে তাঁরা ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের মিশন সাকসেসফুল।
গ্রেটা থুনবার্গ এখন দুনিয়ার মানুষের কাছে খুব চেনা নাম। প্রতীকও বটে। পরিবেশচেতনার প্রতীক। বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক। গত বছর অগস্ট মাসে শুরু হয়েছিল তাঁর প্রতিবাদ। স্কুল কামাই করে সুইডেনের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেছিলেন তিনি, পরিবেশে রক্ষায় বড় রকমের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে। দেখতে দেখতে আরও অনেক ছাত্রছাত্রী যোগ দিল তাঁর সঙ্গে, তৈরি হল ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আন্দোলন। নানা দেশেও ছড়িয়ে পড়ল তার প্রভাব। ছোটদের, মানে ভবিষ্যতের নাগরিকদের এই পরিবেশচেতনা মাত্র এক বছরের মধ্যে নাড়া দিল দুনিয়ার মানুষকে, রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ নানান সংগঠনকে, অনেক দেশের সরকারি কর্তাদেরও। আইনের হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক হতে এখনো অনেক দেরি, কিন্তু গ্রেটা ইতিমধ্যেই কেবল বিশ্ববিখ্যাত নন, তিনি বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন। বাঁচার পথ।
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট বা পরিবেশ রক্ষার জন্য আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন গ্রেটা। এবং সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ইউরোপ থেকে আমেরিকার পথে বিমানে ওড়ার বদলে ইয়টে ভেসেছেন, কারণ বিমান মানেই বিপুল তেল পোড়ানো, আর তার ফল— বাতাসে আরও বিপুল কার্বন নিঃসরণ। তাঁর এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অবশ্য, কারণ তাঁর সফরসঙ্গীরা এর পর আমেরিকা থেকে বিমানেই ফিরবেন, বিমানে ফিরবে তাঁর ব্যবহৃত ইয়টটিও।
তবে সেই বিতর্ক যেমনই হোক, প্রতীক হিসেবে গ্রেটা থুনবার্গের এই সমুদ্রযাত্রা গোটা দুনিয়ার নজর কেড়েছে, সেটা বিশ্ব পরিবেশের পক্ষে ভাল। নিউ ইয়র্কে নেমেই তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ চাঁচাছোলা ভঙ্গিতে ঘোষণা করেছেন, ‘প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ থামাতেই হবে। ব্রাজিল সহ দক্ষিণ আমেরিকায় এবং আফ্রিকার কঙ্গোয় বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চলছে, তার সম্পর্কে গ্রেটার মন্তব্য: প্রকৃতি ধ্বংসের পালা যে বন্ধ করা দরকার, এই বীভৎস অগ্নিকাণ্ড তার একটা বড় প্রমাণ। নিউ ইয়র্কের সম্মেলন শেষ করে তিনি যাবেন কানাডায়, এবং তার পরে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে, তাঁর পরিবেশভাবনার কথা জানাতে।
আমেরিকার মাটিতে পা দিয়েই গ্রেটা সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক হাত নিয়ে বলেছেন, ‘তাঁকে আমার একটাই কথা বলার আছে, সেটা এই যে তাঁকে বিজ্ঞানের কথা শুনতে হবে। স্পষ্টতই, তিনি তা শোনেন না।’ শুনবেন, এমন কোনও ভরসা এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে টুইটার-দুনিয়া নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে, ট্রাম্প গ্রেটাকে কোনও জবাব দেন কি না, তা জানার জন্যে।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।