Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সমকামিতার জন্য জিনও দায়ী, কেবল ইচ্ছে আর পরিবেশ নয়

ঋতুপর্ণা রায়

সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সমকামিতা কি কোনও অসুখ? স্বেচ্ছায় কি সমকামী হওয়া যায়? এই ধরনের ভাবনা নিশ্চয় প্রত্যেকের মনেই কখনও না কখনও এসেছে। প্রাচীনপন্থীরা অবশ্য সমকামিতা নিয়ে আলোচনা করতেই রাজি নন। তাঁদের মতে এই ধরনের আচরণ অসভ্যতার পরিচয়। কেউ কেউ ন্যাকামি, ভণ্ডামি বলতেও ছাড়েন না। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে যে সমকামিতার পিছনে জিনের গুরুত্বরপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। মানে মানুষ ইচ্ছে করলেই সমকামী বা উভকামী হতে পারেন না। এটা ঠিকই যে কোনও একটি নির্দিষ্টি জিনের কারণে কেউ সমকামী বা উভকামী হন না। কিন্তু সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের পিছনে জিনের ভূমিকা আছে বই কী! হাজার হাজার জিন এর জন্য দায়ী। সম্প্রতি জিনোমের উপর একটি বিশাল গবেষণা করে এই তথ্যই আবিষ্কার হয়েছে।

এই গবেষণাটি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষরা এতে ভাগ নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ২-১০% মানুষই জানিয়েছেন যে কোনও না কোনও সময় তাঁরা একই লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ শুধুই সমকামিতায় বিশ্বাস করেন, কেউ কেউ আবার উভকামী। দীর্ঘ দিন ধরে এদেঁর আচরণ, অভ্যাস পরিমাপ করে জানা গেছে যে জিনের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ যাঁরা সমকামী, তাঁদের পরিবারে সমকামিতা বা উভকামিতার ইতিহাস আছে। এমনকী, ফ্র্যাটারনাল টুইনসের তুলনায় একেবারে যাঁরা হুবহু যমজ, তাঁদের মধ্যে সমকামীর সংখ্যাও বেশি।

তবে ঠিক কোন জিন এর নেপথ্যে আছে, তা খুঁজে বার করতে এখনও পারেননি গবেষকরা। তার কারণ এ যাবৎ যতগুলি পরীক্ষা হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা নেহাতই কম ছিল।

জেনেটিক টেস্টিং সংস্থা, ‘২৩অ্যান্ডমি’-র সিনিয়র গবেষর ফা সাথিরাপংসাসুতি জানিয়েছেন, “এই ধরনের গবেষণা করা খুব একটা সহজ নয়। আসলে বিষয়টি এতই বিতর্কিত যে সহজে মানুষজন জোগাড় করা যায় না। খুব কম মানুষই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ভাগ নিতে চান। আর এই ধরনের পরীক্ষা করার জন্য যে টাকা লাগে, তা-ও পাওয়া যায় না। সীমিত বাজেটে এই ধরনের কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে আসতে সময় লাগে।” দুঃখের বিষয়, এখনও প্রায় ৭০টি দেশে সমকামিতা অপরাধের সমান। কোথাও কোথাও এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ফলে মানুষ নিজের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন সকলের সামনে প্রকাশ করতেও ভয় পান।

নতুন গবেষণাটি অবশ্য এই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। এর আগে যা যা তথ্য সামনে এসেছে, সেগুলোকে মাথায় রেখেই এই গবেষণাটির রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। বলা যেতেই পারে আজ পর্যন্ত সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের যে কটি উপর জেনেটিক স্টাডি হয়েছে, এটি তার মধ্যে বৃহত্তম। লন্ডন ও আমেরিকার প্রায় ৪,৭০০০০ মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা করা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সময় একই লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। জেনেটিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে ব্রিটেনের বায়োব্যাঙ্ক ও ২৩অ্যান্ডমি থেকে। তা ছাড়াও সার্ভে করা হয়েছে বিপুল ভাবে। এমন ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে যাতে অংশগ্রহণকারীদের যৌন পরিচয়, যৌন আচরণ, যৌন কল্পনা সব কিছুই বেরিয়ে আসে।

গবেষণা শেষে দেখা গেছে কোনও একটি জিনকে সমকামিতার জন্য নির্দিষ্ট করা অসম্ভব। তবে পাঁচটি জেনেটিক রূপভেদকে এর সঙ্গে জুড়ে দেখা যেতে পারে। আরও প্রচুর জিন আছে যারাও কোনও না কোনও ভাবে সমকামিতার সঙ্গে যুক্ত। তবে কোনও একটি জেনেটিক প্য়াটার্ন থেকে কারও সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বোঝা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন গবেষকরা। জিন এর জন্য দায়ী হলেও, পরিবেশের ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না। যেমন মানুষের উচ্চতা বা ওজন, জিন এবং পরিবেশ যুগ্মভাবে নির্ধারণ করে, ঠিক একই কথা খাটে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের ক্ষেত্রে। গবেষণার সহ লেখক ‘ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ড’-এর ব্রেনড্যান জিটস জানিয়েছেন,“ এ রকম অনেক জিনই আছে যার কারণে মানুষ সমকামী হতে পারেন। প্রতিটি জিনের অবদান এই ধরনের ওরিয়েন্টেশনে সামান্য হলেও এক সঙ্গে এদের প্রভাব খুব এটা কম নয়। সুতরাং সমকামিতাকে শুধুই লাইফস্টাইল চয়েসের তকমা দেওয়াটা ঠিক নয়। এর পিছনে জিনের ভূমিকা অবশ্যই আছে। তবে শুধুই জিনের কারণে মানুষ সমকামী বা উভকামী হতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি যে হুবহু যমজদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন কিন্তু আলাদা। ফলে বুঝতেই পারছেন আরও কিছু নন জেনেটিক ফ্যাক্টর আছে যা মানুষের ওরিয়েন্টেশন নির্ধারণ করে। এ বার আমাদের সেগুলো খুঁজে বার করতে হবে।”

গবেষণার প্রধান লেখক গানা বলেছেন যে জেনেটিক রূপভেদগুলো ওঁরা খুঁজে পেয়েছেন, তার মধ্যে একটির গন্ধের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। এ বার যৌন আকর্ষণে গন্ধের যে এটা ভূমিকা আছে, তা সবাই জানেন। শুধু যোগাযোগের ধরনটা জানতে হবে। আর একটি চমকপ্রদ তথ্য সকলের সঙ্গে ভাগ করেছেন গানা। পুরুষ ও নারীদের মধ্যে একই জিন আলাদাভাবে কাজ করে। অর্থাৎ পুরুষদের মধ্যে জিনের প্রভাব মহিলাদের চেয়ে অনেক বেশি। তার জন্য হরমোন লেভেলও অবশ্য দায়ী।

সমাজও পুরুষদের যৌনজীবন নিয়ে অনেক বেশি উদার। এক জন মহিলার একাধিক সঙ্গী থাকলে, তা সমাজের চোখে অন্যায়। সুতরাং মহিলারা নিজেদের যৌন ইচ্ছে অনেক সময় চেপে রাখতে বাধ্য হন। তাই এই ধরনের গবেষণায় কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বেজায় কঠিন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত ভাবে বলা যেতেই পারে, যতই অল্প হোক না কেন সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের জিনের প্রভাব আছে এবং আজ তা প্রমাণিত।

Picture of ঋতুপর্ণা রায়

ঋতুপর্ণা রায়

Picture of ঋতুপর্ণা রায়

ঋতুপর্ণা রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস