মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে শৌর্য, হিংসা, বিশ্বাসঘাতকতার গল্পে অনায়াসে এসে মিশেছে রুমালি রুটি কিংবা গোস্ত শোরবার খুশবু। শত্রুর রক্ত আর শিরাজের গাঢ় লাল নেশা মাতিয়ে রেখেছে যুদ্ধক্ষেত্রের তাঁবু। বাংলালাইভের পাঠকদের জন্য ইতিহাস খুঁড়ে সেইসব গল্পের স্বাদ ও গন্ধ তুলে নিয়ে আসছেন রিমি মুৎসুদ্দি।
শীতের প্রচণ্ড দাপট সারা শহর জুড়ে। সমস্ত রাত ধরে প্রবল তুষারপাত হয়ে চলেছে। তারই মধ্যে বিচারাধীন বন্দীদের শাস্তি ঘোষণা হচ্ছে। কাজি ঘোষণা করেছে মৃত্যুদণ্ড। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাণভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত সব বন্দী। ওদের সবার শরীরে আঘাত, ক্ষতচিহ্ন। রক্তের ধারা নেমে আসছে কারও মাথা, মুখ বেয়ে। শীতের কাঁপুনি প্রবল বেগে বাড়িয়ে দিয়েছে মৃত্যুভয়। মাথায় মোটা পশমের টুপি পরে কাজি শাহি ফরমান পড়ে নির্দেশ দিচ্ছে। আর সেই অনুযায়ী জল্লাদ ওদের হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধছে। জল্লাদদের প্রত্যেকের মাথায় সৈনিকের মতো শিরস্ত্রাণ। কারও মুখ দেখা যাচ্ছে না। নিঃস্পৃহ চোখগুলো যন্ত্রবৎ নির্দেশ পালন করে চলেছে। এবার বন্দীদের প্রত্যেককে নিয়ে যাওয়া হবে তুষারে ঢাকা সেই পাহাড়ের কাছে, যেখানে ওদের সবার জন্য একটা করে গর্ত খোঁড়া আছে। জল্লাদের তরবারির আঘাতে পাথরের ওপর ছিটকে পড়বে গরম রক্ত আর সেই রক্তের ওপর অবিরাম তুষারপাত করে যাবে একটা ঠাণ্ডা রাত্রি। যেন এভাবেই পৃথিবীর প্রতিটা আর্তের রক্ত চরম অসহায়তায় নির্বাক দর্শক হয়েও বরফের প্রলেপ দিয়ে ধুয়ে মুছে সাফ করে পরিয়ে দেবে তুষারের শিরস্ত্রাণ। এভাবেই ক্রমে প্রতিটা গর্ত পরিণত হবে এক একটা গভীর খাদে। যে খাদের ভিতর আসলে গরম রক্তের উষ্ণ বাষ্প ভীত সন্ত্রস্তভাবে ক্রমাগত বলে চলেছে, ‘আমি না, আমি না, আমরা না, আমরা না’…
আন্দিজানের মির্জা বাবর জয় করেছেন সমরখন্দ। সাতমাস ধরে সমরখন্দ অবরোধ করে রেখেছিল তাঁর সৈন্য। শেষ পর্যন্ত সমরখন্দের দুর্বল সম্রাট বাইসুনকুর শহর ছেড়ে পালায়। আর একথা ছড়িয়ে পড়তেই শহরের তোরণদ্বার খুলে দেয় একদল সেনা। আসলে অবরোধের কারণে সারা শহরের সঙ্গে সেনাদলও ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও দারিদ্র্যের কবলে পড়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছিল। শেষপর্যন্ত সম্রাট ওদের ছেড়ে পালালে ওরা সমর্পণ করা ছাড়া আর দ্বিতীয় পথ পায় নি।
সমরখন্দ কিশোর মির্জা বাবরের স্বপ্নের শহর। এ শহরের প্রতিটা গম্বুজ, মিনার তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে থাকেন। খুব সহজেই চিনতে পারেন গোব-এ-আমীবের অপূর্ব সুন্দর সেই গম্বুজ যেখানে তাঁর মহান পূর্ব-পুরুষদের সমাধি রয়েছে। শাহী কোকতাশে(নীল পাথরের সিংহাসন)-এর ওপর পাতা হয়েছে পুরু গালিচা। জয়ী মির্জার অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে বিশ্রামের পালা। জোহরের নামাজ সেরে বুস্তাঁ-সাবাই প্রাসাদে নিজকক্ষে বিশ্রামে না গিয়ে তিনি ঘোড়ায় চড়ে সমরখন্দ দেখতে বেরোলেন। অতি ধূর্ত সব বেগ আমীররা চাইল মির্জার সঙ্গী হতে। কিন্তু বাবর শুধু তাহির নামের এক সৈনিককে আর জোহরি নামে সমরখন্দের অতি বৃদ্ধ এক কবিকে সঙ্গে নিয়ে বেরোলেন।
সমরখন্দের রাস্তাঘাট একেবারে খাঁ খাঁ। যেন সুলতান বাইসুনকুরের মতো এ শহর পরিত্যাগ করেছে সমস্ত শহরবাসী। জোহরি বাবরকে একটার পর একটা গলি দিয়ে নিয়ে চলেছেন। রাস্তার ওপর পুরু বরফের আস্তরণ। তাহিরের ঘোড়া খুব সাবধানে মির্জার সঙ্গে সঠিক তফাৎ রেখে এগিয়ে চলেছে। ফাঁকা রাস্তার ওপরও প্রহরীর সজাগ দৃষ্টি। অলিগলির কোন খাঁজে হয়ত লুকিয়ে সশস্ত্র কোনও আততায়ী। একটা গলির কাছে এসে জোহরি ঘোড়া থামায়। মির্জাকে সহবৎ মতো কুর্ণিশ জানিয়ে বলে, ‘জাহাঁপনা, এই সেই বিখ্যাত সমরখন্দী রুটিওয়ালা গলি।’ বাবার আশ্চর্য হন, ‘এত শুনশান? রুটিওয়ালারা কি সব দিবানিদ্রা যাচ্ছে?’
-‘গুস্তাকি মাফ হজুর। দিবানিদ্রা যেতে গেলে পেটে দানাপানির প্রয়োজন। আজ সাতমাস ধরে সমরখন্দ অবরুদ্ধ ছিল। কোথাও কারও ঘরেই আর একবস্তা আটাও মজুত নেই। না হলে এই রুটিওয়ালা গলিতে কতরকমের রুটির খুশবু, হরবখত উনুনে রুটি শেঁকা হয়েই চলেছে। শীতের দিনে এই গলিতে উনুনের আঁচে গরম পোহাতে আমার মতো আম ইনসানরা তো রোজই আসত।’
বিজিত মির্জার মুখের দিকে একবার লক্ষ করলেন বৃদ্ধ কবি। হয়ত কিছুটা সাহস পেলেন। যুগে যুগে কবিদের অনেক বদনাম থাকলেও কবিরাই কিন্তু শেষপর্যন্ত সাহসী হন। কবিদের কন্ঠেই উচ্চারিত হয় প্রথম প্রতিবাদ
-‘রুটিওয়ালাদের ঘরে ক’জন জিন্দা আছে তাও তো জানিনা। আজ কতদিন ধরে না খেয়ে রয়েছে সমরখন্দ।’
বাবর কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই একটা বৃদ্ধা চিৎকার করতে করতে রাস্তার ওপর এসে পড়ে। ‘ইয়া খুদা, তুমি বিচার করো। সব না খেতে পেয়ে মরুক। সব মরুক। তুমিও মরো না খেতে পেয়ে আল্লা।’
বৃদ্ধার পেছন পেছন ছুটে এসেছে আরেকজন বৃদ্ধ। সে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। জোহরি তাকে প্রশ্ন করে, ‘কী হয়েছে মওলানা? এরকম প্রলাপ বকছে কেন তোমার বিবি?’
-‘হুজুর, আমাদের ছোট ছেলেটাও আজ মারা গেল। ক্ষুধার কষ্ট এ মহল্লায় এক এক করে সব প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আর বড় ছেলে নুয়ান ছিল পশ্চিম দরওয়াজায় পাহারায়। শীতের কষ্ট, খাবারের অভাব তবুও শেষ পর্যন্ত কর্তব্যে স্থির ছিল যে কজন প্রহরী, নুয়ান তাদের মধ্যেই একজন। পরাজিত সুলতানের সামান্য এক প্রহরী, আমাদের ঘরের আলো, আমাদের একমাত্র রোজগেরে সন্তান। সে এখন মৃত্যদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে জল্লাদের তরবারির নীচে মাথা রেখেছে।’
বৃদ্ধ আর কথা বলতে পারছেন না। আচমকাই যেন ঝুপ করে একটা নৈশব্দ নেমে এল। কারওর মুখে কোনও কথা নেই। শুধু এক মায়ের একটানা আর্তনাদ যেন হাঁড়িকাঠে মাথা রাখা ছাগশিশুর কান্না।
-‘হুজুর, আমার বিবির গুস্তাগি মাফ করবেন। পুত্রহারা মায়ের মাথার ঠিক নেই।’
নিজের বিবিকে ফিরিয়ে নিয়ে ঘরের দিকে চলে যায় বৃদ্ধ। জোহরির কাঁপা কাঁপা হাত ঘোড়ার লাগাম ধরে নীচে নামার চেষ্টা করে। নীচে নেমে বাবরের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার ভঙ্গিতে বরফের ওপরই বসে পড়ে কবি বলেন,
‘বাইসুনকুর এ শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। শহরবাসী নিজে দরজা খুলে দিয়েছে আপনার জন্য। যারা দরজা খুলে দেয় নি, সেই প্রহরীদের মৃত্যুদণ্ড আজ। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর হয়েও যে সেনারা তাদের সম্রাটের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল তারা সব মরে যাবে আজ। আর যে নিরীহ লোকগুলো যুদ্ধ চায়নি, জয়পরাজয়ের সঙ্গে যাদের সত্যিকারের কোনও সম্পর্ক নেই সেই সাধারণ মানুষদের কারোরই প্রায় ঘরে একদানা আটা নেই, নেই কোনও খাবার তারাও সব এক এক করে মরে যাবে। আপনি সমরখন্দকে বাঁচান হুজুর। এই রুটিওয়ালা গলিতে কিছু আটা পাঠাবার হুকুম দিন? খোদা আপনাকে রহমদিল করে পাঠিয়েছেন আমাদের কাছে। আপনি নবাইয়ের কবিতা ভালবাসেন। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার থেকে বড় কবিতা এ জগতে আছে পয়গম্বর?’
বাবরের চোখে জল ছিল কিনা দেখতে পায়নি জোহরি। তাঁর নিজের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছিল তখন। বাবর হুকুম দিল তাহিরকে, ‘এখুনি এখানে দশ বস্তা আটা আনা হোক। আর ব্যবসায়ী নয় রুটিওয়ালাদের হাতে দেওয়া হোক সমস্ত দায়িত্ব। রুটি তৈরি হবে এখানে। শহরের মানুষের এখানে আজ দাওয়াত। বাবরের নামে গরম রুটি বিলানো হোক সমস্ত শহর জুড়ে। কাসিমবেগ যেন এই দায়িত্ব নেন। আর তাহির তুমি ঝড়ের চেয়েও জোরে ঘোড়া ছোটাও আশিকানের দিকে। ফিরোজদরওয়াজার একটা প্রহরীরও যেন আজ রক্ত না পড়ে এই সমরখন্দের মাটিতে।’
কোমরবন্ধ থেকে তৈমুরের সেই বিখ্যাত ছোরা, যা বাবর বংশপরম্পরায় পেয়েছিলেন, তাহিরের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘মহান তিমুরের এই ছোরাই আমার চিহ্নস্বরূপ তুমি নিয়ে যাও। কাজীকে বলবে, শাহী ফরমান আসতে সময় লাগবে, তাই মির্জা স্বয়ং এই ছোরা পাঠিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধিস্বরূপ। মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হোক। সমস্ত বন্দীদের উপযুক্ত শীতপোশাক পরিয়ে আগে খেতে দেওয়া হোক। আমি নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলব। তারা কী চায় জিজ্ঞেস করব। তারা চাইলে আমার সেনাদলে যোগ দিতে পারে। না চাইলে তারা ঘরে ফিরে যাবে কিন্তু নিজের সম্রাটের প্রতি বিশ্বস্ততা পাপ নয়। সে কারণে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। যাও, তাহির ছুটে যাও। সমস্ত বন্দীমুক্তির উল্লাস যেন আজ শহরের প্রতিটা দেওয়ালে শোনা যায়।’
তাহিরের চোখও খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এমন মির্জার সেবক হওয়াও ভাগ্যের। তার ঘোড়া নিমেষে উধাও হয়। বাবরের জয়ধ্বনি দিতে থাকে জোহর। রুটিওয়ালা গলি আবার জেগে ওঠে। উনুনে আঁচ পড়ে। বাবর ততক্ষণে সমরখন্দের সবথেকে বড় বইয়ের দোকানে সমস্ত বহির্জগত ভুলে মশগুল হয়ে আছেন আলিশেরের কবিতায়। সোনার জলে কাজ করা মলাটখানি তাঁর হাতের ওপর। জোহরের পেছন পেছন একটা ছোটো মতো দল এসে বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁর অপেক্ষায়। বইয়ের দোকানের মালিক মওলানা কতুবুদ্দিন ভয়ে ভয়ে ডাকলেন, ‘জাহাঁপনা?’
বাবরের চোখে ঘোর। আলিশের নবাই তাঁর প্রিয় কবি। তিনি নিজেও চেষ্টা করেন কবিতা লিখতে। কবিতার মধ্যেই মগ্ন তাঁর মন। তাই তাঁর দৃষ্টিতে যোদ্ধার চাহনি নয়, কেমন যেন এক অন্যমনস্ক ভাব। বুঝতে পারছেন না, কেন ডাকছে কতুবুদ্দিন তাঁকে?
-‘বাইরে আপনার জন্য খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন রুটিওয়ালা। এতদিন পরে সবাই খাবার পাবে। আপনার দয়ায়। তাই আপনি যদি ওদের সামান্য কিছু খাবার গ্রহণ করতেন?’
উত্তর না পেয়ে থতমত খেয়ে যায় কতুব।
-‘আমি জানি শাহি রান্নাঘর ছাড়া আর কোথাও মির্জার জন্য খাবার তৈরি হতে পারে না’
-‘তা কেন? আমি তো আজ অতিথি আপনাদের। এই দেখুন না আমার সঙ্গে তো খাজাঞ্চি নেই। আমি কিন্তু এখান থেকে অনেকগুলো বই কিনব। পরে কোষাগার থেকে সব দাম চুকিয়ে দেব।’
বিজয়ী মির্জার বিনয়ে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। সময়টা ছিল ঔদ্ধত্যের, ক্ষমতার। অথচ তরুণ বাবর তার স্বভাবে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁর জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে মাস্তাভাও আর কুমিশ।
মাস্তাভাও তৈরার জন্য ঘোড়ার মাংস টক দুধ দিয়ে জারিয়ে রেখে দেওয়া হত। সেই মাংসে এসে মিশত খুবানি, এলাচ, জায়ফল। ঢিমে আঁচে অনেক্ষণ ধরে সেদ্ধ হতে থাকা মাংসে একটু একটু করে মিশত মসলার স্বাদ। মাঝেমাঝে কাঠ কয়লার আঁচ বাড়িয়ে দেওয়া হত যাতে পাত্রের তলায় লেগে মাংসের গায়ে একটু পোড়াগন্ধ মিশে যায়। এতে স্বাদ গন্ধ দুইই বাড়ে। মাংস রান্না হয়ে এলে অর্ধেক রান্না করা ভাত ওই মাংসের হাঁড়িতে মিশিয়ে দিয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে ঢিম আঁচে সেদ্ধ করা হত। ভাত মাংস প্রায় মিশে গেলে গরম রুটির ওপর ভাত আর মাংসের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হতো রোল। রুটি ভাত মাংসের এই রোলকেই বলা হত মাস্তাভাও।
ঘোড়ার বদলে ভেড়া, দুম্বার মাংসেও তৈরি করা হতো মাস্তাভাও। সমরখন্দ, ওশ, আন্দিজান ও ফরগনার অন্য অনেক জায়গায় এই মাস্তাভাও সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে খুব প্রিয় খাবার।রুটিওয়ালারা মির্জার জন্য বিশেষ করে বানিয়ে এনেছে এই খাবার। কিন্তু মির্জা কে কি শুধুই একপদে খাওয়ানো যায়? যদিও কী করে যে এই একপদ যোগাড় হয়েছে তা রুটিওয়ালারাই জানে। তাও মাস্তাভাও-এর সঙ্গে আরও কী খাওয়ানো যায় মির্জাকে, ঠিক করে উঠতে পারছিল না তারা। কুমিশ তৈরি করতে লাগে ঘোড়ার দুধ। বেশিরভাগেরই ঘরে আর কোনও ঘোড়াই অবশিষ্ট নেই। তবুও যে ব্যবসায়ীদের আস্তাবলে একটা দুটো ঘোড়া রয়েছে, তারা সবাই এই তরুণ মির্জার ভোজের আয়োজনে নিজেদের ঘোড়া দান করেছে। ঘোড়ার দুধে কেশর আর পিস্তা মিশিয়ে খুব ঘন করে জাল দিয়ে তৈরি হয় কুমিশ। নামানোর আগে কিছু খুবানি, সম্ভব হলে ফুলের পাপড়ি (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গোলাপ), পেস্তাকুচি, কিসমিস, বাদামকুচি দিতে হবে। গরম গরম এই পানীয় যেমন সুস্বাদু, প্রবল শৈত্যপ্রবাহে শরীরের জন্য তেমনই আরামদায়ক।
মাস্তাভাও যেমন সাধারণ মানুষের ঘরের খাবার কুমিশ আবার শুধুমাত্র রইস ও খাস আদমিদের হেঁশেলেই তৈরি হয়। মাস্তাভাও যেকোনও মাংস দিয়েই তৈরি করা যায়। এমনকি পাখির মাংস দিয়েও অনেকে মাস্তাভাও রাঁধে। কিন্তু কুমিশ কেবল ঘোড়ার দুধেই তৈরি হয়, যা গরিবের ঘরে মেলা ভার।
আন্দিজান আর সমরখন্দে বাবর সামরিক জয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন, সাধারণ মানুষের মন জয় করতে। কিন্তু ক্ষমতাকে ঘিরে যে শক্তি সেই শক্তিশালী বেগ’রা কেউই খুশি হননি তাঁর এই সিদ্ধান্তে। পরাজিত দেশ লুট করতে না পারার ক্ষোভে এক এক করে বেশিরভাগ বেগ’রা তাদের সৈন্যদল নিয়ে সমরখন্দ ছেড়ে চলে যায় শত্রুপক্ষের শিবিরে। একা বাবরও সমরখন্দ জয় বেশিদিন উপভোগ করতে পারেন নি।
রিমি দিল্লিনিবাসী, অর্থনীতির শিক্ষক। খবরের কাগজে ফ্রিলান্স সাংবাদিকতা ছাড়াও লেখেন গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ। তাঁর প্রকাশিত বই দুটি। ‘মিথ্যে ছিল না সবটা নামে কবিতা সংকলন ও দময়ন্তীর জার্নাল নামে গল্প সংকলন। ভালবাসেন এরোপ্লেনের ডানায় ভেসে থাকা মেঘ আর সেই উথালপাতাল ঢেউ ও চাপচাপ কুয়াশায় খুঁজে পাওয়া নতুন কোনও ক্যানভাস।
9 Responses
পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একই সঙ্গে ইতিহাস ও সেই সময়ের খানাপিনা এত স্বাদু ভাষার খুব কমই পড়েছি।
চমৎকার লেখা। উপন্যাস লেখার উপাদান রয়েছে।
খুব ভালো লিখেছ… ?
দারুণ লেখা। অনেক কিছু জানলাম।গদ্যটাও স্বাদু
একেবারে এক টানে মুগ্ধ হয়ে পড়ার মতো লেখা। অমর মিত্র ঠিকই লিখেছেন উপন্যাসের উপাদান আছে। আর একটু এগিয়ে বাবরের জীবন নিয়ে তোমার কাছে একটি উপন্যাস লেখার দাবি রাখছি।
স্বাদু গদ্যে তরতরিয়ে এগিয়েছে স্বচ্ছতোয়া নদীতে বেয়ে চলা ছিপ নৌকার মত। একবার শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না। একেবারে ঘাড় ধরে পড়িয়ে নেয়।
মাস্তাভাও আর কুমিশে মজে রইলাম।
চমৎকার লেখা। আরও পড়তে চাই।
Opurbo lekha