পিচগলা রোদ্দুর। গ্রাম্য পরিবেশ। অনেকক্ষণ কোনও দোকানপাট চোখে পড়ছে না। ওদিকে বেলাও গড়িয়েছে। আধঘণ্টা পর পথের ধারে খুব ছোট্ট একটা গ্রাম্য বাড়ির সামনে সাহান গাড়ি থামাল। স্টার্ট বন্ধ করতে করতে বলল, “এখানে খাঁটি শ্রীলঙ্কান থালি পাওয়া যাবে, এরপর দীর্ঘ সময় আর রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে না।” মনে মনে ভাবলাম, এখানে যা-ই পাওয়া যাক তাই চলবে। সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামার পর পরিপাকতন্ত্র তখন বিদ্রোহ ঘোষণা করছে, অপেক্ষার আর কোনও জায়গা নেই।
বোঝা গেল, এটা সাহানের বন্ধুর বাড়ি। ঘর থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এল ওরই বয়সী এক যুবক। দু’জনের খোসগল্প শুরু হল। বাড়ির সামনে বড় উঠোন। তার কিছুটা জুড়ে শামিয়ানা খাটিয়ে অস্থায়ী খাওয়ার ব্যবস্থা। বুফে লাঞ্চ। কয়েকটা মাটির পাত্রে ভাত, মটর ডাল, স্থানীয় শাক, এঁচোড়ের তরকারি, ঝিঙের টক-ঝাল পদ আর মাছভাজা রাখা আছে। প্লেট প্রতি ৩০০ এলকেআর। আইটেমগুলোর নামের সঙ্গে বাংলার যোগসূত্র থাকলেও, স্বাদে কোনও মিল খুঁজতে যাইনি। কারণ, এ কদিনের অভিজ্ঞতায় শ্রীলঙ্কান স্বাদগন্ধের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই পরিচয় হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, মাছটি স্থানীয় লেকের, নাম তিলাপি। চেহারা ও স্বাদে চেনা তেলাপিয়া। এই প্রথমবার মিষ্টি জলের মাছ খেলাম। যদিও, চারপাশ সাগর ঘেরা শ্রীলঙ্কায় সর্বত্র নোনা জলের মাছ সহজলভ্য।
ছায়াঘেরা অনুরাধাপুরা-ট্রিঙ্কোমালি রোড। ছোট ছোট শান্ত গ্রামগুলো একে একে পিছনে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ধানখেত, দূরে অনুচ্চ টিলা। একটা বড় জংশন, হরপোতানা পেরিয়ে দু’পাশে জঙ্গল শুরু হল। গরমকে উপেক্ষা করে এক আনন্দময় যাত্রাপথের সূচনা হল। লালমাটির অঞ্চল। রাস্তার দু’পাশে একের পর এক লেক। সুবিশাল হ্রদের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মরা গাছের ডাল। পাড় ঘেঁসে উঠে গেছে টিলা। শালুক আর পদ্ম ভেসে আছে জলে। পাখির দল শিকারী দৃষ্টি নিয়ে জলের দিকে তাকিয়ে ওঁত পেতে বসে আছে, কখনও আবার একটু শীতলতার খোঁজে ডানা ভেজাচ্ছে। সুবিশাল এক প্রবেশতোরণ পেরিয়ে এলাম। আনুরাধাপুরা জেলা শেষ, ট্রিঙ্কোমালি জেলায় ঢুকে পড়েছি। দু’পাশে পাহাড়ের প্রাচীর। গা থেকে পাথর খুবলে পাহাড়ের রং লাল। দু কিলোমিটার এগিয়ে মূল রাস্তা থেকে ডানদিকে বাঁক নিয়ে কন্নিয়া পৌঁছলাম। এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রামায়ণে বর্ণিত একটি আখ্যান।

খানিক দূরে ট্রিঙ্কোমালির কোনেশ্বরম মন্দিরে রাবণ শিবের উপাসনা করতেন। রাবণের মৃত্যুপথযাত্রী মা নিকষা তখন ছিলেন এই কন্নিয়াতে। রাবণ তলোয়ার দিয়ে কোনেশ্বরম মন্দিরের শিবলিঙ্গটি উপড়ে নিয়ে আসতে চাইলেন মায়ের কাছে। কিন্তু, শিবের অনিচ্ছায় রাবণের সে চেষ্টা বিফলে যায়। নিকষা মারা যান। বেদনাতুর, ক্রোধিত লঙ্কাধিপতি সেই তলোয়ার দিয়েই মাটিতে সাতবার আঘাত করেন। সেই সাত জায়গা থেকে ফিনকি দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। রাবণের ক্রোধের আগুনে সেই জল গরম হয়ে যায়। তাই এখানে উষ্ণ জলের কুন্ড রয়েছে। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটা জায়গায় তিন-চার ফুট গভীর সাতটা চৌবাচ্চা। স্বচ্ছ জল, ধোঁয়া উঠছে। স্থানীয়রা বালতি করে জল তুলে স্নান করছেন। চর্মরোগ সেরে যায়, এমনই ধারণা। এই চত্বরের বাইরে কাছেই এক মনাস্ট্রির ধ্বংসাবশেষ, আনুমানিক খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে নির্মিত।

টিকিট কাউন্টারের ভদ্রলোকটি ট্যুরিস্ট দেখে আলাপ জমালেন। কথায় কথায় জানতে পারলাম, এখান থেকে দু কিলোমিটার দূরে গহীন অরণ্যের মাঝে নিকষার সমাধি আছে। পায়ে হাঁটা পথ। আগে সাধারণ পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হত। কিন্তু, বণ্যপ্রাণী আক্রমণের কারণে সুরক্ষার প্রশ্নে বনদফতরের পক্ষ থেকে এখন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ভদ্রলোক নিজে সেই সমাধি চাক্ষুষ করেছেন। বললেন, “খোলা আকাশের নীচে প্রাচীন এক বেদি, যার গড়ন বা আকার সাধারণ পাথরের মতো নয়।”
ট্রিঙ্কোমালি শহরে ঢোকার মুখে এক কিলোমিটার আগে ব্যাকওয়াটারের ওপর বড় সেতু। তারপরেই ইস্টার্ন প্রভিন্সের জেলা সদর শহরে প্রবেশ। বড় বড় বিল্ডিং, চওড়া রাস্তাঘাট, হোটেল, বাজার নিয়ে বেশ উন্নত। সোনালি বালুকাবেলা আর নীল সাগরের টানে পৌঁছে গেলাম সৈকতে। সমুদ্রের বুকে পাথর জেগে আছে। মাছ ধরার নৌকাগুলো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও আবার জাল শুকোচ্ছে। স্নানের দাপাদাপি, ফেরিওয়ালার হাঁকাহাঁকি… পর্যটক আর স্থানীয়দের ভিড়ে সৈকত জমজমাট। সূর্য এদিকে পশ্চিমাকাশে হেলতে শুরু করেছে। ট্রিঙ্কোমালির প্রধান দ্রষ্টব্য থিরু কোনেশ্বরম মন্দির দর্শনে চললাম। সমুদ্র সমতল থেকে কিছুটা উপরে স্বামী রক ক্লিফের ওপর এর অবস্থান। শ্রীলঙ্কার রামায়ণ স্পটগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই মন্দির সম্পর্কে পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে। রাবণবধের পর ব্রাহ্মণ হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেতে শিবের আদেশে রামচন্দ্র স্থির করেন শিবপুজো করবেন এবং চার জায়গায় শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন। তিনটিই শ্রীলঙ্কায় ও চতুর্থটি ভারতের রামেশ্বরমে। কালপিটিয়া যাওয়ার পথে দেখা মুন্নেশ্বরমের মতো কোনেশ্বরমও সেরকমই একটি মন্দির। তবে কোনেশ্বরম মন্দিরে রাবণ আগে থেকেই শিবের আরাধনা করতেন। পরে রামচন্দ্র নিজের হাতে আরেকটি শিবলিঙ্গ গড়েন।

কিন্তু পুরাণের গল্পকথা সরিয়ে যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব খ্রিস্টপূর্ব ২০৫ সালে এই মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। দাক্ষিণাত্যের চোল রাজারা শ্রীলঙ্কা দখল করার পর এটি সংস্কার করা হয়। পরবর্তীকালে ১৬২২ সালে পর্তুগিজদের আক্রমণে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে তারা একটি দূর্গ নির্মাণ করে। সেই দূর্গের ধ্বংসাবশেষের পাশ দিয়েই মন্দির চত্বরে এসে পৌঁছলাম। পর্যটক টলেমির বিবরণেও এ মন্দিরের উল্লেখ আছে। পার্কিংজোন থেকে হেঁটে মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলাম। দু’পাশে ফুলের ডালা সাজিয়ে দোকানিদের হাঁকডাক চলছে। ইটালিয়ান এক দম্পতির সঙ্গে আলাপ হল। মেয়েটি শর্টস পরায় মন্দিরে ঢুকতে পারেনি। ফুলের দোকান থেকে ওড়নার মতো একটা কাপড় কিনেছে, কিন্তু কীভাবে পরবে বুঝতে পারছে না। তার হাঁটু দুটো ঢাকার জন্যে শর্টসের ওপর দিয়ে লুঙ্গির মতো করে কাপড়টা জড়িয়ে দিলাম। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, শ্রীলঙ্কায় যে কোনও হিন্দু বা বৌদ্ধ মন্দিরে হাঁটু ও কাঁধ খোলা পোশাক পরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
ট্রিঙ্কোমালির কোনেশ্বরম মন্দিরে রাবণ শিবের উপাসনা করতেন। রাবণের মৃত্যুপথযাত্রী মা নিকষা তখন ছিলেন এই কন্নিয়াতে। রাবণ তলোয়ার দিয়ে কোনেশ্বরম মন্দিরের শিবলিঙ্গটি উপড়ে নিয়ে আসতে চাইলেন মায়ের কাছে। কিন্তু, শিবের অনিচ্ছায় রাবণের সে চেষ্টা বিফলে যায়। নিকষা মারা যান। বেদনাতুর, ক্রোধিত লঙ্কাধিপতি সেই তলোয়ার দিয়েই মাটিতে সাতবার আঘাত করেন। সেই সাত জায়গা থেকে ফিনকি দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। রাবণের ক্রোধের আগুনে সেই জল গরম হয়ে যায়। তাই এখানে উষ্ণ জলের কুন্ড রয়েছে।
দ্রাবিড়ীয় শৈলীতে তৈরি মন্দিরটির প্রবেশপথের মুখেই শিবের বিশাল মূর্তি। একদল স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মন্দিরে আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে দুজন শিবমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।মনে হতেই পারে, এ আর কী এমন বিশেষ ব্যাপার! আসলে পোশাক দেখে বোঝা যায় ওরা মুসলিম সম্প্রদায়ের। অথচ মন্দিরে প্রবেশে কিন্তু কোনও বাধা নেই। রামের তৈরি মন্দিরের চাতালে এমন দৃশ্য, সত্যিই মন ভালো করে দেওয়া ছবি। গর্ভগৃহ দর্শন করতে হলে পুরুষদের খালি গায়ে ধুতি পরে প্রবেশ করতে হবে এবং মহিলাদের শ্রীলঙ্কান স্টাইলে শাড়ি পড়তে হবে, এমনটাই রীতি। তাই মন্দির দর্শন হলেও গর্ভগৃহ অদেখাই রয়ে গেল। তবে, ক্লিফের ওপর থেকে সমুদ্র দেখে মন ভরে গেল। যত দূর চোখ যায়, শুধু ঘন নীল জলের বিস্তার। খেলনার মতো ভেসে আছে ফিশিং বোট আর ট্রলার।
অসাধারণ সূর্যাস্তের সাক্ষী হলাম। দিনের আলো ফুরিয়েছে। সমুদ্রতটের সমান্তরালে চওড়া রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটছে। ট্রিঙ্কোমালি শহরে আলোর রোশনাই। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ট্রিঙ্কোমালিতে রাত্রিবাস করার কথা ছিল। কিন্তু অনুরাধাপুরার বিক্রমসিঙ্ঘে আমাদের সফরসূচির সামান্য অদলবদল ঘটিয়ে রাতটা নীলাভেলিতে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেইমতো নীলাভেলির দিকেই এগিয়ে চললাম। সবে তো সন্ধ্যে। দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। আশা করি, থাকার একটা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। একটা মোড় ঘুরে নীলাভেলির দিকে পথ গেছে। সেখানেই বিশাল শুঁটকি মাছের বাজার। দোকানঘরগুলোর সামনের দিকে ওয়াল হ্যাঙ্গিংয়ের মতো ঝোলানো নানান সাইজের সামুদ্রিক শুঁটকি। গোলাকার, লম্বা, কোনওটার দৈর্ঘ্য আবার ছ’ফুটেরও বেশি।

নীলাভেলি পৌঁছতে সাতটা পেরিয়ে গেল। ঘর বুকিং ছাড়াই চলে এসেছি। রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করতে এ-হোটেল, সে-হোটেল ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। বেশিরভাগই বন্ধ। বিচের ধারে হোটেলগুলোর দর ধরাছোঁয়ার বাইরে। একটু ভিতর দিকে একটা লজে দরদাম করে অফ সিজন ডিসকাউন্ট পাওয়া গেল। এক জোড়া অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক ছাড়া আর কোনও বোর্ডার নেই। সান্ধ্যকালীন চা আর স্ন্যাক্স অর্ডার করতে গেলে জানানো হল, পরিষেবা দেওয়ার লোক নেই। কুকও ডিনার রেঁধে একটু পরেই চলে যাবে। তাই চা পাওয়া গেলেও, সঙ্গে ‘টা’ পাওয়া যাবে না। একটু পরেই রাতের খাবার দিয়ে দেওয়া হবে। অনেক বলেকয়ে ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে ডিনার টাইম রাত দশটায় পিছনো গেল। সে আর বিশেষ আপত্তি করল না, ডাইনিং হলের একটা ডুপ্লিকেট চাবি হাতে গুঁজে দিল।
অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ডিনার সেরে সাড়ে আটটা নাগাদ নাইটওয়কে বেরিয়েছে। আমরাও ফ্রেশ হয়ে, চা খেয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। হোটেলের সামনে সরুপানা রাস্তাটা সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। বেশ অন্ধকার। টর্চ জ্বেলে সমুদ্রের ধারে এসে দেখি জনমানবশূন্য, শান্ত, নির্জন। বালির চরায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেলে নৌকা। তারাভরা আকাশের নীচে শুধু ঢেউ ভাঙার গর্জন।

পরের দিনের নিশিযাপন পাসিকুডায়। সাহান বলেছিল, পাসিকুডায় থাকার জায়গা খুব কম, চড়া দামের দু-একটা রিসর্ট ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। সুতরাং, আগেভাগে একটা ব্যবস্থা করে নেওয়াই ভালো। সামর্থ্য অনুযায়ী থাকার জায়গা না পাওয়া গেলে সফরসূচির বদল ঘটাতে হবে। ঘরে ফিরেই ওয়াইফাই ব্যবহার করে গুগল ঘাঁটতে বসলাম। অনলাইন বুকিংয়ে বাজেটফিট রাত্রিবাসের একটা বন্দোবস্ত হল বটে, তবে সেটা পাসিকুডা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। রাত বেড়েছে। পায়ে পায়ে লক খুলে ডাইনিং হলে এসে দেখি টেবিলে খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের অনুমতি আগেই মিলেছিল। টুনা ফিশ ফ্রায়েড রাইস গরম করে খেয়ে নিলাম। ম্যানেজারের কথামতো এঁটো বাসনপত্র টেবিলে গুছিয়ে রেখে, আলো নিবিয়ে, ডাইনিং হলে তালা লাগিয়ে সেদিনের মতো বিশ্রাম।
সকালে লম্বা বিচ ধরে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি। জেলেরা নৌকাগুলো টেনে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যস্ততা। সূর্যোদয় তেমন জমল না। এক টুকরো জমাটবাঁধা কালো মেঘ মাঝেমাঝেই সূর্যটাকে ঢেকে দিচ্ছে। মেঘের আড়াল থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে সূর্যরশ্মি আর স্পটলাইটের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ঘন নীল সাগরের বুকে। এদিকটায় বেশ কিছু তামিলভাষী হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। এমনই একজন তামিল ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হল। তাঁর কাছেই শুনলাম, সুনামির সময় এই এলাকা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর থেকে ট্যুরিস্ট আসাও অনেক কমে গেছে এদিকটায়। অনেক দূরে সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা একখণ্ড পাথরের দিকে তর্জনী তুলে বললেন, “দ্যাট ইজ পিজিয়ন আইল্যান্ড, অবশ্যই ঘুরে এসো।”
লজের রিসেপশন রুমে পিজিয়ন আইল্যান্ডের প্যাকেজ চার্ট টাঙানো আছে। তাতে বোট, গাইড, স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং প্রভৃতির খরচ ধরা আছে। সাহান বলেছিল, তার চেনাজানা একজনের বোট আছে, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাই প্যাকেজের চক্করে আর গেলাম না। ব্রেকফাস্টে টোস্ট, ডিমের পোচ, প্যানকেক, তরমুজের রস, আনারস খেয়ে সকাল দশটা নাগাদ চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিট পর একটা ফাঁকা, নির্জন বিচে এসে উপস্থিত হলাম। নীলাভেলির এদিকটা লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। বাড়িঘর চোখে পড়ল না, শুধুমাত্র কয়েকটা জেলেদের ছাউনি। সাদা বালির সৈকতটা বেশ মনোরম। দূরে পিজিয়ন আইল্যান্ড দৃশ্যমান, তবে আবছা। (চলবে)
*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ১৬ অগস্ট ২০২২
*সব ছবি লেখকের তোলা
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
2 Responses
Khub sundor lekha
ঝরঝরে লেখা।
পুরাণ, ইতিহাসের মেলবন্ধনে তরতরিয়ে গতি।
ভালো লাগলো।