বাড়ির পুজো মানেই কি শুধু বনেদিয়ানা আর ঐতিহ্য? পুজো মানে স্বপ্নপূরণ হতে পারে না? চল্লিশ বছরের ব্যবধানে দেখা স্বপ্ন— দুই প্রজন্মের দুই মেয়ের। তেমনটাই হচ্ছে বস্টনের বন্যা আর বাপ্পাদিত্য রায়ের বাড়ির পুজোতে (Durga Puja)। ষাটের দশকে কলকাতায় আপাদমস্তক সংসারী এক মেয়ে, প্রতিমা দেবী, স্বপ্ন দেখতেন তিনি বাড়িতে দুর্গাপুজো করবেন। তবে সেই সময়ে তাঁর ব্যস্ত একান্নবর্তী পরিবারে সেটাকে দিবাস্বপ্ন বলেই ভাবা হত। তা বলে হাল ছাড়েননি তিনি। বেশ পরিণত বয়সে মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি নিয়ে আসেন সুদূর হরিদ্বার থেকে। সবাইকে নিয়ে ধুমধাম করে কয়েকবছর পুজো করেন, তারপর তিনি চলে যান, পৃথিবী ছেড়ে। পরিস্থিতির চাপে বাড়ির বাকি মানুষেরা আর এত বড় পুজো চালাতে পারেন না। মা দুর্গার স্থিতি হয় আরামবাগে, তাঁদের পুরোহিতের বাড়িতে। এভাবেই চল্লিশ বছর পেরিয়ে যায়।

ছোট থেকেই শুনত বন্যা এই গল্পটা, তার মায়ের কাছে। দিদিমার স্বপ্নটা কীভাবে যেন রয়ে যায় তার মধ্যে। তারপর ২০১৯ সালে তার ইচ্ছেয়, তাদের পুরোহিত শেষবার আরামবাগে নিজের বাড়িতে পুজো করে, মাকে পৌঁছে দিয়ে যান বন্যার হাতে। তারপর মায়ের যাত্রা সাগরপাড়ে, সুদূর বস্টনে। এরপরেই কোভিডবছর। সে বছরে প্রায় একা ছোট্ট করে পুজো শুরু করে সে। নিজের মতো করে। তারপরে ম্যাজিক। তার পরের বছর থেকে সেই দুই হাতে বয়ে আনা মা দুর্গাকে একশো হাতে ঘিরে ধরে বন্যার বন্ধুরা, ভক্তি আর ভালোবাসায়। (Durga Puja)
এই বছর রায় বাড়ির পুজো পা দিল চার বছরে। দিন দিন বাড়ছে মায়ের ভক্তের সংখ্যা। দিদিমা আর নাতনির স্বপ্নডানায় উড়ান মায়ের— তাঁরই আশীর্বাদে রাতারাতি রায় বাড়ির পুজো একটা বিরাট পরিবারের পুজোর রূপ নিয়েছে।
ছবি সৌজন্য- লেখক
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।
2 Responses
মহুয়া.. তুমি এতো সুন্দর করে লিখেছো যে ভাষায় প্রকাশ করার নয়.. এতো সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা.. যেন মনে হচ্ছে কোনো গল্প বলছো.. এমন আরও লিখে যাও.. তোমার লেখার গুণমুগ্ধ.. দাদা
প্রতিমার প্রতিমা শ্রদ্ধার প্রণতি নিয়ে প্ৰেমভক্তির বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে বস্টন এর বাঙালি হৃদয় কে