Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উপেন্দ্রনাথ ও ইউরিয়া ষ্টিবামাইন

সুমিত্রা চৌধুরী

এপ্রিল ১৯, ২০২৪

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সুকুমার রায়ের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘আবোল তাবোল’। এক অসাধারণ প্রতিভাধরের অসাধারণ সৃষ্টি। অজানা রোগে দীর্ঘদিন আক্রান্ত থেকে অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত সুকুমার। এই অবস্থাতেই প্রস্তুত করছেন বইটির তিনরঙা মলাট, অঙ্গসজ্জা, টেলপিসের ছবি। লিখলেন আবোল তাবোল বইয়ের শেষ কবিতা। কবিতার নামটিও ‘আবোল তাবোল’। পুত্র সত্যজিৎ রায়ের কথায়, তাঁর শেষ রচনা ছিল আবোল তাবোলের শেষ কবিতা। রচনার সময় যে তাঁর উপর মৃত্যুর ছায়া পড়েছিল তার ইঙ্গিত এর শেষ কয়েক ছত্রে আছে—

‘…ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গ মোর।’

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয়ে শেষ রসিকতা করে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন রসস্রষ্টা, শিশুসাহিত্যিক বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ সুকুমার। তারিখটা ছিল ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। তাঁর জন্ম তারিখ ৩০ অক্টোবর ১৮৮৭। আবোল তাবোল প্রকাশিত হয় ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। সম্প্রতি আমরা পেরিয়ে এসেছি সুকুমার রায়ের প্রয়াণ শতবর্ষ এবং আবোল তাবোল এর সৃষ্টি শতবর্ষ। পেরিয়ে এলাম উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মের দেড়শো বছরও (জন্ম ১৯.১২.১৮৭৩ মতান্তরে ১৯.১২.১৯৭৫)।

sukumar ray
পুত্র সত্যজিৎ রায়ের কথায়, তাঁর শেষ রচনা ছিল আবোল তাবোলের শেষ কবিতা।

চলে আসা যাক সুকুমারের শেষ শয্যায়। শেষপর্যন্ত তাঁর রোগটি শনাক্ত করা হয়েছিল—কালাজ্বর (Kala Azar), এক মারণ ব্যাধি। যার নিরাময়কারী ওষুধটির নাম ইউরিয়া ষ্টিবামাইন। আবিষ্কর্তা রসায়নবিদ, প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। ১৯২১ থেকেই এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছিল। বিশেষ করে ব্যাপক রোগাক্রান্ত অঞ্চল- চা বাগানের কুলি বা গরিব রোগীদের ওপর। ১৯২২-এর অক্টোবরে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চে উপেন্দ্রনাথের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হল। রিপোর্টে তিনি লিখিতভাবে জানালেন আটটি কালাজ্বরের রোগীকে এই ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ করা হয়েছে। কিন্তু সুকুমারের চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করলেন না। কেন? আসলে নেটিভ ডাক্তারের আবিষ্কৃত এই ওষুধের ব্যবহারের ওপর ইংরাজ সরকার ছাড়পত্র দেননি। বিশেষ করে কলকাতার ইংরাজ ডাক্তাররা। একটি অমূল্য প্রাণের বাঁচার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল।

ডাক্তার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী বহু বন্দিত এবং বিতর্কিত একটি নাম, যিনি কালাজ্বর আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। ১৮২৪ সালে পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশ) প্রথম কালাজ্বর ধরা পড়ে, কিন্তু স্থায়ী হয়নি। ১৮৫৮-তে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনভার নেওয়ার পর রোগটির ব্যাপকতা বাড়ে। মূলত রেললাইন পাতার জন্য মাটি খোঁড়া, জল নিষ্কাশন ব্যহত হওয়া নানা কারণে রোগটি বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু কেন হয় তার কারণ জানা যায়নি।

১৯০৩ সালে ইংল্যান্ডে গবেষক উইলিয়াম লেশম্যান এবং মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে চার্লস ডোনাভান কাছাকাছি সময়ে আলাদাভাবে ‘স্যান্ড ফ্লাই’ নামক এক ধরনের মাছির মধ্যে কালাজ্বরের জন্য দায়ী জীবাণু আবিষ্কার করেন। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রোনাল্ড রস দুই আবিষ্কারকের নাম যুক্ত করে এই জীবাণুর নাম দেন লিসমানিয়া ডোনাভানি এবং রোগের নাম লিসম্যানিয়াসিস। এবার রোগ নিরাময়। প্রথম দিকে রোগ লক্ষণ প্রায় এক হওয়ায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনিন খাওয়ানো হত। যার ফল হত মারাত্মক। এরপর অনেক চিকিৎসক কালাজ্বরের ওষুধ প্রস্তুতির গবেষণা শুরু করলেন। প্রথম দিকে আর্সেনিকের যৌগ ব্যবহার করা হত। অবশেষে ১৯১৩ সালে টার্টর এমেটিক ব্যবহার করে কিছুটা সুফল মিলল। ১৯১৫ থেকেই কালাজ্বরের ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। দীর্ঘ ছটি বছর দিনরাত কয়েকশত যৌগ দিয়ে গবেষণা করে অবশেষে উপেন্দ্রনাথ আবিষ্কার করলেন ইউরিয়া ষ্টিবামাইন, প্যারাঅ্যামিনো ফিনাইল, ষ্টিবানোয়িক অ্যাসিড এবং ইউরিয়া সহ কেলাস কালাজ্বরের মহৌষধ।

চলে আসা যাক সুকুমারের শেষ শয্যায়। শেষপর্যন্ত তাঁর রোগটি শনাক্ত করা হয়েছিল—কালাজ্বর (Kala Azar), এক মারণ ব্যাধি। যার নিরাময়কারী ওষুধটির নাম ইউরিয়া ষ্টিবামাইন। আবিষ্কর্তা রসায়নবিদ, প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। ১৯২১ থেকেই এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছিল। বিশেষ করে ব্যাপক রোগাক্রান্ত অঞ্চল- চা বাগানের কুলি বা গরিব রোগীদের ওপর। ১৯২২-এর অক্টোবরে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চে উপেন্দ্রনাথের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হল। রিপোর্টে তিনি লিখিতভাবে জানালেন আটটি কালাজ্বরের রোগীকে এই ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ করা হয়েছে। কিন্তু সুকুমারের চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করলেন না। কেন? আসলে নেটিভ ডাক্তারের আবিষ্কৃত এই ওষুধের ব্যবহারের ওপর ইংরাজ সরকার ছাড়পত্র দেননি। বিশেষ করে কলকাতার ইংরাজ ডাক্তাররা। একটি অমূল্য প্রাণের বাঁচার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল।

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্ম ১৬ জুন, ১৮৭৩ সালে (অন্য মতে ১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৫) বিহারের মুঙ্গের জেলার জামালপুরে। বাবা ছিলেন ইষ্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানির খ্যাতনামা চিকিৎসক ডাঃ নীলমণি ব্রহ্মচারী, মা সৌরভসুন্দরী। স্কুলের পাঠক্রম, এনট্রান্স ও এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর উপেন্দ্রনাথ ১৮৯১ সালে রসায়ন ও গণিতে অনার্স সহ বি.এ. কোর্সে হুগলি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৩ সালে একই সঙ্গে দুটি বিষয়ে অনার্স সহ বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর একই সঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নে এম.এ. ক্লাসে এবং মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। ১৮৯৪-য়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. এবং ১৮৯৯-য়ে মেডিক্যালে এল.এম.এস এবং ১৯০০ সালে মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.বি. ডিগ্রি লাভ করেন। পেলেন গুডিভ পদক ও ম্যাকলয়েড পুরস্কার। এরপর এম.ডি. পড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আবেদন করেন। এই আবেদন মঞ্জুর করা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে উপাচার্য ভোট করার সিদ্ধান্ত নেন। বিপুল ভোটে জয়লাভ করে উপেন্দ্রনাথ এম.ডি. কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯০২ সালে এম.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিওলজির ওপর গবেষণা করে পি.এইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। উজ্জ্বল, কৃতী ছাত্রজীবন সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৮৯৯-তে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দিয়ে ফার্স্ট ফিজিসিয়ান স্যার জেরাল্ড বসফোর্ডের ওয়ার্ডে হাউস ফিজিসিয়ান পদে যোগ দেন।

upendranath brahmachari
ব্রহ্মচারী বহু বন্দিত এবং বিতর্কিত একটি নাম,

উপেন্দ্রনাথের গবেষণায় আগ্রহ এবং কর্তব্যপরায়ণতায় মুগ্ধ বসফোর্ড ১৯০১-এর নভেম্বরে উপেন্দ্রনাথকে ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে মেটেরিয়া মেডিকা এবং ফিজিওলজির শিক্ষক-ফিজিসিয়ান পদে নিযুক্ত করেন। এই সময় তাঁর শিক্ষকতা এবং মেডিক্যাল স্কুলে সুপারিনটেন্ডেন্ট স্যার নীল ক্যাম্পবেলের অধীনে গবেষণা খুবই প্রশংসা লাভ করে। ১৯০৫-এ ঢাকা থেকে ফিরে উপেন্দ্রনাথ ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে (পরবর্তী কালে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) ফার্স্ট ফিজিশিয়ান এবং মেডিসিনের শিক্ষক পদে যোগ দেন। এখানে প্রায় কুড়ি বছর অধ্যাপনা, গবেষণা করে ১৯২৩ সালে উপেন্দ্রনাথ অ্যাডিশনাল ফিজিসিয়ান পদে যোগ দেন। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী সেই বিরল দুই ব্যক্তির অন্যতম যারা প্রভিন্সিয়াল সার্ভিসে থেকে মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিতে পেরেছেন। উপেন্দ্রনাথ মেডিক্যাল কলেজ থেকেই ১৯২৭ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর বেসরকারি কারমাইকেল কলেজে (বর্তমানে আর. জি. কর কলেজ) প্রোফেসর অব ট্রপিক্যাল ডিজিস পদে যোগ দেন। উপেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে বিভাগীয় প্রধান এবং অনারারী অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন।

upendranath brahamchari
উপেন্দ্রনাথ অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি শুরু করলেন কালাজ্বরের গবেষণা।

সব কাজের পাশাপাশি চলেছে উপেন্দ্রনাথের কালাজ্বর ও অন্যরোগ নিরাময়ে নিরন্তর গবেষণা। চিকিৎসকরা যখন দেখলেন টার্টার এমেটিক (পটাশিয়াম সল্ট অব অ্যান্টিমোনাইল টারট্রেট) ইন্ট্রাভেনাস মাধ্যমে শরীরে প্রবিষ্ট করালে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তখন উপেন্দ্রনাথ অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি শুরু করলেন কালাজ্বরের গবেষণা। টার্টার এমেটিকের বদলে তিনি ব্যবহার করলেন অ্যান্টিমনি চূর্ণ বা কলয়ডাল অ্যান্টিমনি। এতে খুব ভালো ফল পেলেও পরে অসুবিধা দেখা দিল। এটি সহজলভ্য নয়, দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় না, প্রয়োগের অল্প আগে তৈরি করতে হয়, তৈরির প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল।

ইন্ট্রাভেনাস মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ প্রক্রিয়াও জটিল। ফলে আবারও শুরু হল নিরন্তর সাধনা। ক্যাম্পবেল স্কুলে যে ঘরটিতে তিনি গবেষণা করতেন, সেই ঘরটি সম্বন্ধে তিনি জানিয়েছেন ‘ছোট্ট একটি ঘর’। সেখানে না ছিল গাসের সংযোগ, ট্যাপ ওয়াটার, না ছিল বিজলি বাতি। বাইরে থেকে নিয়ে আসা জল আর একটি পুরানো কেরোসিনের কুপী, যেটা থেকে যত না আলো আর তাপ পাওয়া যেত তার থেকে বেশি ছিল ধোঁয়া। রসায়নবিদ উপেন্দ্রনাথ রাসায়নিক যৌগ দিয়েই গবেষণা চালিয়েছেন। ইতিমধ্যে একজন বিজ্ঞানী ‘অ্যাটক্সিল’ (সোডিয়াম সল্ট অব অ্যাটক্সিলিক অ্যাসিড) প্রয়োগ করে ‘স্লিপিং সিকনেস’ নামক ভয়াবহ রোগ নিরাময় করেছেন। এই অ্যাটক্সিল-এ থাকে আর্সেনিক। উপেন্দ্ৰনাথ আর্সেনিকের বদলে পর্যায় সারণীর একই গ্রুপে থাকা অ্যান্টিমনি বেছে নিলেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে এতদিন পর্যন্ত তাঁর গবেষণার জন্য কোনো সরকারি অনুদান জোটেনি। ১৯১৯ সালে কালাজ্বরের নিরাময়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য ইন্ডিয়ান রিসার্চ ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপেন্দ্রনাথ একটি অনুদান পেলেন।

পূর্বে উল্লেখিত ঘরে গভীর গবেষণার পর উপেন্দ্রনাথ খুঁজে পেলেন কালাজ্বরের মহৌষধ ইউরিয়া ষ্টিবামাইন। ইউরিয়া এবং প্যারা অ্যামাইনোফিনাইল স্টিবনিক অ্যাসিডের একটি যুগ্ম কেলাস যৌগ। অ্যান্টিমনি এবং ইউরিয়া দুটি বেছে নেওয়ার কিছু যুক্তি ছিল। পঞ্চদশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে অ্যান্টিমনিকে বলা হত সর্বরোগ হর (ল্যাটিন নাম ষ্টিবিয়াম)। অ্যান্টিমনির তৈরি সুরাপাত্র থেকে পান করলে রোগ-ব্যধি থাকবে না। মিশরীয় সাধু সন্তরা (মঙ্ক) রোগমুক্তি এবং দীর্ঘজীবন লাভের জন্য অ্যান্টিমনির তৈরি সুরাপাত্র থেকে সুরা পান করতেন। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফল হত ভয়াবহ। এই কারণে ঐ মৌলকে বলা হত অ্যান্টি মঙ্ক। সেখান থেকেই আসে অ্যান্টিমনি। ইউরিয়াই প্রথম জৈব যৌগ যা অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেট থেকে তৈরি হয়েছে। ইউরিয়া কিছুটা চেতনানাশক হিসাবে কাজ করে।

ইউরিয়া ষ্টিবামাইন দিয়ে কালাজ্বরের চিকিৎসায় চূড়ান্ত সাফল্য এল। আবিষ্কারের এক দশক পরে ১৯৩২-এ ভারত সরকার নিয়োজিত কালাজ্বর কমিশনের অধিকর্তা কর্নেল শর্ট জানান কালাজ্বরের চিকিৎসায় ইউরিয়া ষ্টিবামাইন অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং নিরাপদ ওষুধ। বিগত সাত বছরে এই ওষুধ প্রয়োগে হাজার হাজার মরণাপন্ন কালাজ্বরের রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে [we found urea stibamine an eminently safe and reliable drug. In seven years we treated some thousands of cases of Kala-azar and observed thousands more treated in treatment centre.]।

upen brahmachari
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মের ১৫০ বছর অতিক্রান্ত আমরা স্মরণ করি উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর অফুরান দান

শুধু ভারতই নয় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে ইউরিয়া ষ্টিবামাইনের ব্যবহার। চিন, গ্রিস, মিশর, সিসিলি, ইটালি, আফ্রিকা, ফ্রান্স ছাড়াও আরও অনেক দেশে শুধু ইউরিয়া ষ্টিবামাইন আবিষ্কারের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেলেও উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী আরও বহু রোগের ওপর সফল গবেষণা করেছেন। এদের মধ্যে আছে ম্যালেরিয়া, ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার, সেরিরোস্পাইনাল মেনিনজাইটিস, ডায়াবেটিস, ফাইলেরিয়াসিস, লেপ্রসি, সিফিলিস প্রভৃতি।

আগেই বলা হয়েছে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী একাধারে বহু প্রশংসিত এবং বহু বিতর্কিত। এম.ডি. কোর্সে ভর্তি, রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচন, ষ্টিবামাইনের যথার্থতা এবং সাফল্য এমন বহু বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও বিতর্ক কাটিয়ে এগিয়ে গেছেন। তিনি আবিষ্কারেই থেমে থাকেননি। বরং এর বাস্তব, বাণিজ্যিক গুরুত্বটি সম্পূর্ণ উপলব্ধি করে তার খুব দ্রুত সদ্ব্যাবহার করলেন। ১৯২৪ সালে তাঁর কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের (বিধান সরণি) বাড়িতে খুললেন ল্যাবরেটরি ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেখানে ইউরিয়া ষ্টিবামাইন তৈরি হত এবং বিপণনের দায়িত্ব দিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ওষুধের কোম্পানি বাথগেট এন্ড কোম্পানিকে। অচিরে প্রচুর অর্থাগম শুরু হল। গবেষক হিসাবে যতখানি, ব্যবসায়ী হিসাবেও ততটাই সাফল্য এল। নিজে সাধাসিধে জীবনযাপন করলেও বৈভব প্রদর্শন করতে ভালবাসতেন।

আগেই বলা হয়েছে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী একাধারে বহু প্রশংসিত এবং বহু বিতর্কিত। এম.ডি. কোর্সে ভর্তি, রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচন, ষ্টিবামাইনের যথার্থতা এবং সাফল্য এমন বহু বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও বিতর্ক কাটিয়ে এগিয়ে গেছেন। তিনি আবিষ্কারেই থেমে থাকেননি। বরং এর বাস্তব, বাণিজ্যিক গুরুত্বটি সম্পূর্ণ উপলব্ধি করে তার খুব দ্রুত সদ্ব্যাবহার করলেন। ১৯২৪ সালে তাঁর কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের (বিধান সরণি) বাড়িতে খুললেন ল্যাবরেটরি ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেখানে ইউরিয়া ষ্টিবামাইন তৈরি হত এবং বিপণনের দায়িত্ব দিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ওষুধের কোম্পানি বাথগেট এন্ড কোম্পানিকে। অচিরে প্রচুর অর্থাগম শুরু হল।

তাঁর ইনস্টিটিউটের পরিচালনায় পরবর্তীকালে নিজের দুই ছেলে ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেননি। ঘোড়ার গাড়ির বদলে দামি মোটর গাড়ি, লাউডন স্ট্রিটে (বর্তমানে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী রোড) প্রাসাদোপম বাড়ি, ছেলে এম.ডি. পাশ করলে ছেলের ১০০ জন বন্ধুকে রূপোর থালায় ভোজ খাওয়ানো এমন আরও নানা সামাজিক কাজে বৈভব প্রদর্শন করেছেন। সেই সঙ্গে কিনতেন বিপুল সংখ্যক বই। বিশালাকায় লাইব্রেরি বাড়িতে তৈরি করেছেন। বাস্তবে সফল চিকিৎসক সে যুগে অনেকজন ছিলেন, যারা উপার্জনও অনেক করেছেন কিন্তু এত সঞ্চয়, বৈভব কারওরই ছিল না। এদের অনেকেই স্বদেশী আন্দালন, স্বদেশী কোম্পানি নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন। উপেন্দ্রনাথ সে অর্থে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত থাকেননি। প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে অসম্ভব শ্রদ্ধা করলেও তাঁর ভাবমূর্তি অনুসরণ করেননি। উপেন্দ্রনাথ বহু দান করেছেন কিন্তু কথিত আছে কোনও দানই বেহিসেবী ছিল না। বরং এর পেছনে আত্মপ্রচারের একটা উদ্দেশ্য ছিল।

তবে এসব কিছু সত্ত্বেও গবেষণার মূল কাজটি থেকে কখনও উপেন্দ্রনাথ সরে আসেননি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্যাপক ডিডিটির ব্যবহারে কালাজ্বরের বাহক পরজীবি বহনকারী স্যান্ডফ্লাই ধ্বংস হওয়ায় কালাজ্বর ক্রমশ প্রায় বিলুপ্ত হয়। ইউরিয়া ষ্টিবামাইনের ব্যবহারের শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল উপেন্দ্রনাথের মানবসমাজের স্বার্থে উন্নত বিজ্ঞানের নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা। একজন নেটিভ ডাক্তারের তৈরি করা আর কোনও ওষুধ এত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি।
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী প্রয়াত হন ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬ সালে। কালের নিয়মে ইউরিয়া ষ্টিবামাইনের ব্যবহার ফুরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও কালাজ্বর কথাটি উচ্চারিত হলেই ভেসে আসে ডাঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর নাম।

‘আবোল তাবোল’ এর জন্মশতবর্ষ, সুকুমারের মৃত্যু শতবর্ষ, ইউরিয়া ষ্টিবামাইন আবিষ্কারের শতবর্ষ এবং ডাঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মের ১৫০ বছর অতিক্রান্ত আমরা স্মরণ করি উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর অফুরান দান। ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে ডাঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।

কালা জ্বর সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে:https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/leishmaniasis

Dr Sumitra Chaudhury author

ড. সুমিত্রা চৌধুরী বিজ্ঞানমনস্ক ও শিক্ষাব্রতী মানুষ। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা, প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। কর্মজীবনে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি এবং প্রফেশন অসীমা চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি। বোর্ড মেম্বার হিসাবে যুক্ত আছেন আরও একাধিক বিজ্ঞান সংস্থার সঙ্গে...

Picture of সুমিত্রা চৌধুরী

সুমিত্রা চৌধুরী

ড. সুমিত্রা চৌধুরী বিজ্ঞানমনস্ক ও শিক্ষাব্রতী মানুষ। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা, প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। কর্মজীবনে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি এবং প্রফেশন অসীমা চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি। বোর্ড মেম্বার হিসাবে যুক্ত আছেন আরও একাধিক বিজ্ঞান সংস্থার সঙ্গে...
Picture of সুমিত্রা চৌধুরী

সুমিত্রা চৌধুরী

ড. সুমিত্রা চৌধুরী বিজ্ঞানমনস্ক ও শিক্ষাব্রতী মানুষ। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা, প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। কর্মজীবনে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি এবং প্রফেশন অসীমা চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি। বোর্ড মেম্বার হিসাবে যুক্ত আছেন আরও একাধিক বিজ্ঞান সংস্থার সঙ্গে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com