অভিযুক্ত
যে হাত তোমাকে কাঁটা দিয়েছে
তার থেকে সাবধান থেকো
কিন্তু এটা ভুলো না
এ হাতকে বিদ্ধ করে উঠেছে সে
কবি সাহেব
আমি প্রথম পংক্তি লিখি
এবং ভয় পাই রাজার সিপাহিদের
কেটে দিই পংক্তিটিকে
আমি দ্বিতীয় লাইন লিখি
এবং ভয় পাই বিদ্রোহী গেরিলাদের
লাইনটিকে কেটে দিই
নিজের প্রাণের জন্য
নিজের হাজার পংক্তিকে
এভাবে খুন করেছি
ওই পংক্তিগুলোর আত্মা
হামেশাই আমার আশেপাশে থাকে
এবং আমাকে বলে:
কবি সাহেব
আপনি কবি নাকি কবিতা হত্যাকারী?
শুনুন মশায়, বিচারেরও খুনী আছে
বড় ধর্মের পবিত্র আত্মাকেও
খুন করতে শুনেছি
শুধু এই শুনতে বাকি ছিল,
আমাদের এই সময়ের কারণে
কবিও হয়ে উঠেছে
কবিতার খুনী!
একটি নদী
একটি নদী এসেছে
এক ঋষির কাছে
দিশা চাইতে
ওই নদীটিকে
ঋষির তৃষ্ণা খেয়ে ফেলল
অনুভূতি
এখানে অস্তগামী সূর্য আছে
ওপাশে ঝরা পাতা
এখানে বিহ্বল নদী
ওপাশে শূন্য রাস্তা
আমার চারপাশে কেন
টাঙিয়েছ আয়না
সেতু
যাদের জন্য সেতু হয়েছিলাম আমি
যখন তারা আমার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল
শুনলাম আমার সম্বন্ধে বলছে;
সেই চুপচাপ মানুষটা কোথায় গেল!
নিশ্চয়ই পেছনে পালিয়েছে
আমরা প্রথম থেকেই জানতাম
তার মধ্যে দম নেই…
আমার শব্দ
আমার শব্দগুচ্ছ
চলো ছুটি করো, বাড়ি যাও
অভিধানে ফিরে যাও
স্লোগানে
বক্তৃতায়
অথবা বয়ানে মিলে মিশে
যাও, কর গোলামের চাকরি
তারপরেও যদি কিছু বেঁচে থাকে সহানুভূতি
তবে মা, বোন এবং মেয়েদের
কান্নায় মিশে
তাদের নয়নে ডুবে
যাও আত্মহত্যা করে নাও
তারপরও যদি অস্থির থাকো তবে
আরও পেছনে ফিরে যাও
আর চিৎকার করো, চিৎকার করো জোরে…
ওই যা আমি বলেছিলাম একদিন তোমাকে
আমরা এই অন্ধকার গলিতে
প্রদীপের শিখার মতো জাগবো
আমরা যাত্রীদের মাথায়
উড়ন্ত শাখার মতো থাকব
লোরীর* সাথে জুড়বো
গান হয়ে চলবো মেলার দিকে
আলোর সৈন্য হয়ে
ফিরবো রাতের বেলা
তখন কী আমি আর জানতাম
অশ্রুর স্রোতে
আছে এক তীক্ষ্ণ তলোয়ার
তখন আমি কি জানতাম
বলছে যারা
শুনছে যারা
এমন পাথর ছুঁড়বে
যে শব্দ হয়ে যাবে নিরর্থক
ইতিহাস
ইতিহাস তো লিখবে প্রতিটি প্রজন্ম
বার বার প্রদর্শিত হবে
মৃতরা
জীবিতদের আদালতে
বার বার উঠানো হবে কবরের কঙ্কাল
মালা পরানোর জন্য
কখনো ফুলের
কখনো কাঁটার
সময়ের কোনো শেষ আদালত নেই
এবং ইতিহাস কখনো শেষ বারের মতো
লেখা যায় না।
স্থানহীন
এ তোমার শব্দের দরবার
আর
প্রতি মুহূর্তে
ঝলসে দেওয়া হচ্ছে, আমি স্থানহীন
তোমার মুখে কোন দাগও নেই
কী তার ছায়ার বসে পড়ি আমি
স্থানহীন সে নয়,
যার কোনও ঘর নেই
যে নিজের নজরে
নিজেই খারাপ হয়ে যায়
স্থানহীন সে-ই
একটি পশু-কথা
গাড়ি চলছে
গাড়ির পেছনের সীটে
বসে আছে
কিছু মেষশাবক
কয়েকটি নেকড়ে
গাড়ি স্টেশন ছাড়ছে
নদী, জঙ্গল, খেত, পাহাড়
নগর পেরিয়ে শহর ছেড়ে
সাত-আট ঘন্টা চলার পরে
দেখলাম গাড়ির ভেতর
সব নেকড়ে হয়ে গেছে মেষশাবক
সব মেষশাবক হয়ে গেছে নেকড়ে
আপনি বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন
এ সব আমার দেশেই হয়েছে
আর এসবই পুরুষের বেশেই হয়েছে…
ওই দিন
যদি ওই দিন আবারও ফিরে আসে
আমি তার হাঁসের মতো সাদা
আহত শরীরে
মলম লাগিয়ে দেব
কিন্তু যদি রাগ করে চলে যায় দিন
না বলে
যার সম্পর্কে কখনো জানা যায়, ও তো এখানে…
কখনো বা জানা যায়, ওখানে
এবং কোনো সন্ধ্যায়
ও চুপচাপ ঘরে ফিরে আসে
কিংবা কোনো স্টেশনে গাড়ির অপেক্ষা
করা অবস্থায় পাওয়া যায়
রেগে বাড়ি থেকে চলে যায় দিন
বোঝাও যায় না…
দিন তো আমাদের হাতে খুন হওয়া প্রেত
যার ক্ষতে আমাদের হাত
পৌঁছায় না আজকাল
এখন অতীতের কাছেও
পৌঁছায় না আজকের চিৎকার
শতবর্ষ তক…

সুরজিৎ পাতর: কবি সুরজিৎ পাতর (১৪ জানুয়ারি, ১৯৪৫ — ১১ মে, ২০২৪) একজন জনপ্রিয় পাঞ্জাবী কবি ছিলেন। তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, সরস্বতী পুরস্কার, ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার এবং পদ্মশ্রী পুরস্কারে পুরস্কৃত। অনুদিত কবিতাগুলো(Poetry) তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘কভি নহি সোচা থা’ -এর। হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করেছেন চমনলাল। কবিতাগুলো হিন্দবী ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে।

One Response
এমন ভালো কবিতা বহুদিন পড়িনি। অনেক ধন্যবাদ অনুবাদক কে।