২১শে জুলাই, রবিবারের সকালবেলায় যখন জো বাইডনের ফোনকলটা এল, কমলা হ্যারিস তখন রান্নাঘরে। ওয়াশিংটন ডিসির উত্তর পশ্চিমের পাহাড়ি এলাকায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের ম্যানসনে তখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়। সোয়েটপ্যান্ট আর হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পুরনো হুডি পরিহিত কমলারও বেকন আর প্যানকেক বানানো শেষ। এবার বোনের নাতনিদের সঙ্গে বসে জিগশ পাজল খেলার পালা। জোসেফ রবিনেট বাইডেনের ফোনের পর অবশ্য ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বছর ষাটেকের কমলা দেবী হ্যারিসের দুনিয়াটাই পাল্টে গেল। (US Elections)
ডিপফেক-মানবসভ্যতার মারিয়ানা ট্রেঞ্চ? : কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়
দুনিয়া অবশ্য আগেই পাল্টে গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তাঁর বয়স নিয়ে চারিদিকে একটা গুঞ্জন এমনিতেই ছিল। ২০শে নভেম্বর বাইডেনের ৮২ বছর পূর্ণও হচ্ছে। অর্থ্যাৎ নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা হিসাবে জিতলে ৮৬ বছর পর্যন্ত তিনি ওভাল অফিসে থাকবেন। এত বৃদ্ধ কোনও রাষ্ট্রনায়ককে কি মার্কিনিরা মেনে নেবে? তার উপর যত দিন যাচ্ছে তত প্রেসিডেন্টের ভুলো মনের নানান উদাহরণ হোয়াইট হাউসের শত চেষ্টা স্বত্ত্বেও আর গোপন করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমনই যে অতলান্তিকের দুই পাড়েই বৃদ্ধ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে পরিহাসের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছিল। ডেমোক্র্যাট দলের একটা বড় অংশ চাইছিল বাইডেন এবার সরুন।

কিন্তু বাইডেন এসব শুনতে নারাজ। তিনি নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এইরকম টানাপোড়েনের মধ্যেই এল ২৭ শে জুন আটলান্টার সিএনএন স্টুডিওতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম বিতর্ক। আর বলা যায় সেই বিতর্কই বাইডেনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার শেষ আশাটুকু শেষ করে দিল। বিতর্কে বাইডেনের থেমে থেমে কিছুটা অসংলগ্ন কথাকে উপহাস করে ট্রাম্প বললেন, “বাক্যের শেষাংশে কী যে বলছে সেটা বুঝতে পারছি না। মনে হয় না ও নিজেই জানে ও কী বলছে।” দেশজুড়ে ৫ কোটি দর্শকের দেখা সরাসরি সম্প্রচারিত এই বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য ডেমোক্র্যাট দল বুঝে যায়, বাইডেনের জেতার আশা যেটুকু বাকি ছিল সেটাও নির্বাপিত।
কিন্তু বাইডেন তখনও দ্বিধাগ্রস্থ। তখন দলের হয়ে কথা বলতে এগোন বাইডেনের পরম বিশ্বাসভাজন বিদেশ সচিব অ্যান্থনি জন ব্লিঙ্কন। ৪ জুলাই ব্লিঙ্কনের সঙ্গে ওভাল অফিসের ডাইনিং রুমে মধ্যাহ্নভোজনে বসেন বাইডেন।
কিন্তু বাইডেন তখনও দ্বিধাগ্রস্থ। তখন দলের হয়ে কথা বলতে এগোন বাইডেনের পরম বিশ্বাসভাজন বিদেশ সচিব অ্যান্থনি জন ব্লিঙ্কন। ৪ জুলাই ব্লিঙ্কনের সঙ্গে ওভাল অফিসের ডাইনিং রুমে মধ্যাহ্নভোজনে বসেন বাইডেন। সেখানেই ব্লিঙ্কন বলেন, বিগত চার বছরে কোভিড পরিস্থিতি সামলানো থেকে শুরু করে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কাজ বাইডেন প্রশাসন করেছেন। ফলে চার বছর ট্রাম্প জমানার অস্থিরতার পর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে। এখন ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে গেলে ভাল, আর হেরে গেলে তাঁর কৃতিত্বগুলোও অর্থহীন হয়ে পড়বে। ব্লিঙ্কনের এই কথা শোনার পর বাইডেনের মনে যেটুকু দ্বিধা অবশিষ্ট ছিল তাও চলে যায় তার পূর্বসূরী বারাক ওবামার কথায়। বাইডেন যাকে গুরু মানেন সেই ওবামাও তাঁকে নির্বাচনে লড়তে বারণ করেন।
নিজেকে সবার থেকে সরিয়ে মনস্থির করার জন্য ডেলাওয়ারে নির্জনবাসে যান বাইডেন। সেখান থেকেই মানসিকভাবে বিধস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট কল করলেন কমলাকে। বললেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে তিনি দাঁড়াচ্ছেন না। পরিবর্তে তিনি দলের কাছে কমলার নাম সুপারিশ করছেন। বিগত কয়েক মাস ধরে নিজের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ করে অবশেষে ক্ষান্ত হলেন বাইডেন।

ইতিহাসের সারণীতে পা রাখলেন কমলা দেবী হ্যারিস। প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টনের পর দ্বিতীয় মহিলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে এলেন কমলা। শত দিবস পেরিয়ে ভারতীয় সময় মতো ৬ নভেম্বরের সন্ধ্যায় এসে দেখা গেল এ বারের মতো তাঁর স্বপ্ন সফল হল না। কেন হল না, কমলার সামনের রাস্তাটাই কতটা বন্ধুর হতে পারে এ সব চুলচেরা বিশ্লেষণের আগে কমলার উত্তরণের অবিশ্বাস্য উড়ানের পূর্বকথনটাও একটু শোনা যাক।
কাহিনির শুরু কলকাতা থেকে উড়ানে
আদতে হ্যারিসের কাহিনি শুরু হয়েছে ১৯৫৮ সালের কলকাতা থেকে। বছর কুড়ির তামিল তনয়া শ্যামলা গোপালন প্যান অ্যামের উড়ানে চাপলেন। গন্তব্য দশ হাজার কিলোমিটার দূরের ক্যালিফোর্নিয়া। সম্বল মার্কিন বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাগজপত্র আর ৩৬০০ ডলারের স্কলারশিপ। আর আমলা পিতা পেনগানাদু ভেঙ্কটরমন গোপালনের দেওয়া কয়েকটা ডলার। (পিভি গোপালন তখন কলকাতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিষয় দেখভাল করছেন) শুরু হল সদ্য স্বাধীন এক দেশের এক স্বপ্নমাখা তরুণীর অবিশ্বাস্য পথচলা। ক্রমে শ্যামলা গোপালন হয়ে উঠলেন নামজাদা ক্যানসার গবেষক। ১৯৬৩ সালে বিয়ে করলেন জ্যামাইকা থেকে পড়তে আসা অর্থনীতির ছাত্র ডোনাল্ড গ্যাসপার হ্যারিসকে। ডোনাল্ড হ্যারিস পরবর্তীকালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এমিটেরাস অধ্যাপক হন।
ডোনাল্ডের সঙ্গে শ্যামলার বিয়ে অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। ১৯৭০ সালে যখন দুজনের বিবাহবিচ্ছেদ হয় তখন বড় মেয়ে কমলার বয়স ৬ আর ছোট মেয়ে মায়ার বয়স চার। শ্যামলা একাই দুই মেয়েকে বড় করেন। ২০০৯ সালে অন্ত্রে ক্যানসার হয়ে প্রয়াত হন শ্যামলা। কমলা চেন্নাইয়ে এসে সাগরে সেই অস্থি বিসর্জন দেন। ৭০ বছর আগে তৎকালীন মাদ্রাজে যে সফর শুরু হয়েছিল বিশ্ব পরিক্রমা করে তা চেন্নাইতে সমাপ্ত হল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনেক ‘ব্রেক দ্য সিলিং’ করেছিলেন শ্যামলা। তনয়া কমলাও ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে, সেনেটর হয়ে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে মার্কিন পুরুষতান্ত্রিক প্রাচীরে ধ্বস নামিয়েছেন।
কমলা নিজেই বলেছেন তাঁর আসল অনুপ্রেরণা তাঁর মা। শ্যামলা বলতেন যে তাঁকে বলা হত, কেউ তার জন্য কোনও জায়গা ছেড়ে দেবে না। সময় তার পক্ষে নয়। যে পথে তিনি চলছেন সে পথে কেউ হাঁটেনি।
আর কমলা নিজেই বলেছেন তাঁর আসল অনুপ্রেরণা তাঁর মা। শ্যামলা বলতেন যে তাঁকে বলা হত, কেউ তার জন্য কোনও জায়গা ছেড়ে দেবে না। সময় তার পক্ষে নয়। যে পথে তিনি চলছেন সে পথে কেউ হাঁটেনি। বড় কঠিন কঠোর হবে পরিস্থিতি। কিন্তু শ্যামলা এসবে কর্ণপাত করেননি। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে তাঁর স্বপ্নের বীজ বোনা শুরু করেন। মেয়েদের শ্যামলা বলেন, “তোমাদের পরিচয় অন্যদের জানতে দিও না। তোমরা নিজেদের পরিচয় বোলো।” কমলা জানিয়েছেন, মায়ের কাছে কোনও অন্যায়, কোনও অভিযোগ নিয়ে কথা বললে মা বলতেন কিভাবে এর প্রতিকার করা যাবে। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার জগদ্দল পাথর সরাতে গেলে মহিলাদের যে কঠিন, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে তার উপর জোর দিতেন শ্যামলা। কারণ লোকজন যা দেখতে অভ্যস্থ নয় সেটাই তাদের দেখাতে হবে। ফলে তা করতে গেলে যন্ত্রণা, দুঃখ আসতে পারে তা বলাই বাহুল্য। সেইজন্য নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কমলা দেবীকে যখন বলা হয়েছে তিনি আদতে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঐতিহ্যের মশাল বইছেন কী না, তখন শ্যামলা তনয়া বলেছেন, পারিবারিক ঐতিহ্যরই ধারক ও বাহক তিনি।

বহু বছর বাদে ২০২০ সালে যখন কমলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন তখন ছোট বোন মায়া লেখেন, “কমলা হ্যারিসকে জানতে হলে তাঁর মা শ্যামলাকেও জানতে হবে।”
কেন অধরা কমলার স্বপ্ন
ওভাল অফিসে আসীন হওয়ার স্বপ্ন আপাতত বিলীন শ্যামলা তনয়ার। কিন্তু কেন এমন হল সেই প্রশ্নটা ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। মার্কিন রাজনীতির অন্দরমহলে যাদের নিত্য আনাগোনা সেই বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এই ফলাফলে খুব একটা অবাক নন। অনেকে তো প্রথম থেকেই হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কলামনিস্ট বার্টন সোয়াইম হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী পদে মনোনয়ন নিয় প্রশ্ন তুলেছিলেন জুলাই মাসেই। জুলাইয়ের গোড়াতে তিনি যা লেখেন তার নির্যাস হল, ২০২০ র নির্বাচনে কমলাকে ‘রানিং মেট’ হিসাবে বাইডেনের নির্বাচন করাটাই বিসমিল্লায় গলদ ছিল। কোনও প্রগতিশীল মহিলাকে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট করবেন এই প্রতিশ্রুতির ফলস্বরূপ কমলাকে বাছেন জো। কিন্তু বার্টনের মতে, বিগত চার বছরে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস তাঁর প্রেসিডেন্টের গরিমা বিন্দুমাত্র বাড়াতে পারেননি। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের বড় অংশকে বাইডেনের দিকে টানতেও পারেননি।
বার্টন এই ‘না পারার’ দায়ভার মূলত চাপিয়েছেন বাইডেনের উপরই। কাঠগড়ায় তুলেছেন বাইডেনের একের পর এক বিদেশনীতির ব্যর্থতাকে। তাঁর মতে, কাবুল থেকে লজ্জাজনকভাবে মার্কিন সেনার সরে আসা সারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার মাথা হেঁট করে দিয়েছে। বার্টনের মতে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের গুরুত্বও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন জো। প্রথমে একে ‘ছোট অনুপ্রবেশ’ বলে রুশ আক্রমণের গুরুত্বও কমাতে চেয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এখন যখন অর্থ আর অস্ত্রের স্রোত যাচ্ছে কিভের দিকে, তখন তার যৌক্তিকতা নিয়ে নীরব পেন্টাগন। অর্থ্যাৎ বাইডেনের ব্যর্থতার দায় পরোক্ষভাবে হ্যারিসের উপরও আসছে।
গাজা যুদ্ধে হ্যারিসের ভূমিকা মোটেও পছন্দ করেনি ইজরায়েল। প্রখ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তাঁর সাম্প্রতিকতম বই ‘ওয়ার’-এ এমনই একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
গাজা যুদ্ধে হ্যারিসের ভূমিকা মোটেও পছন্দ করেনি ইজরায়েল। প্রখ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তাঁর সাম্প্রতিকতম বই ‘ওয়ার’-এ এমনই একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। বাইডেনের ফোনের চারদিনের মধ্যে ২৫ শে জুলাই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আমেরিকায় ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইক হেরজগকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসে হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু সাক্ষাতের ফল ভাল হয়নি। ইজরায়েলিদের মনে হয় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় হ্যারিস নমনীয় ভাব দেখালেও প্রকাশ্যে অনেক কঠিন মনোভাব দেখান। যেহেতু তখন হ্যারিস প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, তাই তাঁর গুরুত্ব তখন তেল আভিভের কাছে অনেকটাই। ভুলে গেলে চলবে না মার্কিনিদের একটা বড় অংশ ইহুদি রাষ্ট্রের সমর্থক।

নির্বাচনী প্রচারের সময়ও বাইডেন প্রশাসন থেকে নিজেকে পৃথক করতে পারেননি হ্যারিস। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনিতেই পরিহাস করে বলা হয় ভাইস প্রেসিডেন্টের কাজই হল প্রেসিডেন্টের ফোন ধরা। তার উপর বাইডেন জমানায় মার্কিন ইতিহাসে ‘প্রথম মাদাম ভাইস প্রেসিডেন্ট’ হওয়া ছাড়া আলাদা করে নিজেকে চেনানোর মতো কার্যত কিছুই করেননি তিনি। ফলে নির্বাচনী প্রচারে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় জিতলে তিনি নতুন কী করবেন, দেখা যায় হ্যারিস কার্যত বাইডেনের রাস্তায় হাঁটছেন। ফলে যারা বাইডেন বা ট্রাম্প দুজনের কাউকেই পছন্দ করতেন না, তাদের কাছে তিনি তৃতীয় বিকল্প হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা পেলেন না। কারণ তাদের মনে হল হ্যারিস জিতলে সেটা কার্যত বাইডেন জমানারই সম্প্রসারণ হবে।
তবে একই সঙ্গে অনেকে এও মনে করেন, হ্যারিস লড়াই করার জন্য মাত্র শতাধিক দিন পেয়েছেন। যা ওভাল অফিসের কুর্সির জন্য লড়াই করার পক্ষে যথেষ্ট সময় নয়। ঠিক এই কারণেই হয়তো বড়বড় শহরের ভোটারদের কাছে তিনি পৌঁছাতে পারলেও দেশের বিশাল অংশকে তিনি ছুঁতে পারেননি। শেষ হিসাবে এদের ভোটই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দিয়েছে।
এই ভাবনার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হ্যারিসের পরাজয়ের মূলে হল শহুরে জনগনের সঙ্গে বেশি ওঠাবসা করতে গিয়ে গ্রাম ও মফঃস্বল থেকে দূরে গিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। যেমন যে কোভিড নিয়ে ধন্য ধন্য করা হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনের, ঠিকভাবে দেখলে এতে যারা বাড়ি থেকে কাজ করতে পেরেছে শুধু তারাই বেঁচেছে।
এই ভাবনার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হ্যারিসের পরাজয়ের মূলে হল শহুরে জনগনের সঙ্গে বেশি ওঠাবসা করতে গিয়ে গ্রাম ও মফঃস্বল থেকে দূরে গিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। যেমন যে কোভিড নিয়ে ধন্য ধন্য করা হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনের, ঠিকভাবে দেখলে এতে যারা বাড়ি থেকে কাজ করতে পেরেছে শুধু তারাই বেঁচেছে। বিপুল সংখ্যক জনগনের কর্মচ্যুতি হয়েছে। অথচ একসময় শ্রমিক ও খেটে খাওয়া শ্রমিকই ছিল ডেমোক্র্যাটদের জনসমর্থনের মূল ভিত্তি। সেই সমর্থনে ধ্বস নামার ফলই হচ্ছে হ্যারিসের পরাজয়। তাই ক্লিন্টন জমানার মতো মাটিতে কান পেতে জনগন কি চায় সেটা বোঝা জরুরি হ্যারিসের।
সাংবাদিক চিদানন্দ রাজঘাট্টা তাঁর ‘কমলা হ্যারিস-ফিনোমেনাল ওম্যান’ বইতে বলছেন, “১৯৩২ সালে বেটি বুপ থেকে ২০১২তে জুলিয়া লুই ড্রেফাস-এক ডজনেরও বেশি মহিলা ওভাল অফিসের কুর্সিতে আসীন হয়েছেন। অবশ্য এরা সবাই গল্পের নায়িকা। …২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাতে হিলারি ক্লিন্টনের বিজয়ীর ভাষণ লিখে রেখেছিলেন কমলা। হিলারি পারেননি সেটা পড়তে। কিন্তু সেই রাতেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল আবার কোনও মহিলা এগিয়ে আসবেন।”
হ্যারিস ইতিমধ্যেই মার্কিন ইতিহাসের প্রথম ‘মাদাম ভাইস প্রেসিডেন্ট’ হয়েছেন। ইতিহাস বলবে হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে কোনও নভেম্বরের রাত তাঁর জন্য ওভাল অফিসের দরজা খুলবে কী না। কিন্তু তার আগে দলকে সংহত করে হ্যারিসের এগোতে হবে। সেটাই এখন কমলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মা কিন্তু শত বাধার মধ্যেও মেয়েকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়ে গিয়েছেন। কমলা পারবেন তো সেই বন্ধুর পথে চলতে?
তথ্য সূত্র
চিদানন্দ রাজঘাট্টা-‘কমলা হ্যারিস-ফিনোমেনাল ওম্যান’,
বব উডওয়ার্ড-‘ওয়ার’
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে