Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শব্দ তুমি চিত্রকল্প বিধি

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

জানুয়ারি ৬, ২০২৫

Sound Of Calcutta
Sound Of Calcutta
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

(Sound of Calcutta) সত্যজিৎ রায়ের কলকাতা কেন্দ্রিক ছবিগুলির মধ্যে শব্দের যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রয়োগ তা দেখে আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরনো কলকাতার হারিয়ে যাওয়া রূপ, রস, গন্ধের নস্টালজিয়া। আমরা জানি শব্দের এক মোহ আছে। পুরাণের ঋষিরা বলেছেন শব্দ ব্রহ্ম, সে সময়ের কথা বলে। কখনও বা সামাজিক জীবনযাত্রার পরিচায়কও বটে। গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে সিনেমা কারিগরির অন্যতম কৃতিত্ব তার সবাক হয়ে ওঠা। স্থিরচিত্র যেমন মুক্তি খুঁজেছে গতির মধ্যে, তেমনই মূক চিত্র প্রগল্ভ হয়েছে শব্দের হাত ধরে। যদি কলকাতা মহানগরের কথাই ধরি, তবে দেখা যাবে তার দৈনন্দিন জীবন ধারণের আবহে তৈরি হয়েছে যে সাউন্ডস্কেপ তা একেবারেই তার নিজস্বতার মোড়কে মোড়া। (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: মদিরা ও সত্যজিতের ফিল্মি চরিত্ররা

পরিবর্তনের ধারা মূলত দৃশ্যরূপে ধরা দেয় আমাদের কাছে। সাদা-কালো ছবির রঙিনে উত্তরণ অথবা ইন্দো গথিক স্থাপত্য থেকে আর্ট ডেকো হয়ে আধুনিক শৈলীর বিবর্তন, এ-সবই এক ক্রমধাবমান ইতিহাস। যেমন কালো ডায়ালের ভারী টেলিফোন হারিয়ে গেছে তার ক্রিং ক্রিং মধুর ধ্বনির আগমনী সঙ্গে নিয়ে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে ক্ষুদ্র মুঠোফোন, যা আসলে ছোট খাট এক কম্পিউটার। হাত ঘড়ি হয়েছে স্বয়ংক্রিয়– অর্থাৎ দিনবদলের অবকাশে প্রয়োজন ফুরিয়েছে তার ধাতব স্প্রিঙে দম লাগানো অভ্যাসের। সকাল ন’টার ভোঁ বন্ধ হয়ে গেছে সে কবেই! দুজনের প্রয়োজনই যেন ফুরিয়ে গেছে কোনও এক রাস্তার শেষ প্রান্তে এসে। (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: দুগ্গা-দুগ্গা

ঘণ্টা বাজা ঘড়িও আজ প্রায় বিলুপ্ত। রাধাপ্রসাদ গুপ্ত এই সম্পর্কে আরেকটু পুরনো সময়ের কথা বলেছেন তাঁর “কলকাতার ফিরিওয়ালার ডাক আর রাস্তার আওয়াজ” বইটিতে। “পুরনো আমলে বড়লোকদের বাড়িতে আর ঘড়ি সারানোর দোকানে কত রকম ঘড়িই না দেখা যেত: ঢেঙা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক, ওরমোলু দেওয়া জমকালো বিশাল টেবিল ঘড়ি, ক্যারেজ ক্লক আর বহু রকমের বাহারি ট্যাঁক ঘড়ি। ……আমরা ছেলেবেলায় রাস্তার ঘড়ির দোকানে ঘড়ির বাজনা শুনেছি। আজকালও লোকে সময় জানতে চাইলে বলে: কটা বাজে? কিন্তু কথাটাই থেকে গেছে। এখনকার কোনও ঘড়িই আর প্রায় বাজে না।”
বেতার এবং দূরদর্শন ব্যস্ত তার সাতদিনের রুটিন পালনে। সুতরাং অধিবেশন শুরু এবং শেষ– তা জানা্ন দেওয়ার দায় নেই। ফলত, ক্রমশ স্মৃতিতে ফিকে হয়ে যাচ্ছে দুটি অসামান্য সুরসঙ্কেত– যা একসময় তৈরি করেছিলেন যথাক্রমে জার্মান সঙ্গীতকার ওয়াল্টার কাউফমান এবং পণ্ডিত রবিশঙ্কর। (Sound of Calcutta)

রাস্তার ধারে ধারে– সে গড়িয়াহাট হোক বা হাজরার মোড়– শ্যামবাজার বা ডালহৌসি অফিস পাড়া– ছোট ছোট কাঠের টেবিলে বসানো কালো রঙের টাইপ মেশিন ঘিরে ছিল কিছু মুখ যাঁদের আঙুল ঝড় তুলত ধাতব চাবিতে; লেখা হত কোনও দরকারি চিঠি বা চাকরির দরখাস্ত অথবা দলিল দস্তাবেজ। সময়ের সঙ্গে উধাও সেই টাইপ মেশিনের শব্দ।

প্রতিলিপিকরণের বিষয়টি ছিল লেখা অথবা টাইপমেশিন নির্ভর। রাস্তার ধারে ধারে– সে গড়িয়াহাট হোক বা হাজরার মোড়– শ্যামবাজার বা ডালহৌসি অফিস পাড়া– ছোট ছোট কাঠের টেবিলে বসানো কালো রঙের টাইপ মেশিন ঘিরে ছিল কিছু মুখ যাঁদের আঙুল ঝড় তুলত ধাতব চাবিতে; লেখা হত কোনও দরকারি চিঠি বা চাকরির দরখাস্ত অথবা দলিল দস্তাবেজ। সময়ের সঙ্গে উধাও সেই টাইপ মেশিনের শব্দ। এখনও তার খানিক রয়ে গেছে আদালত চত্বরে- সেরেস্তার গলিঘুজিতে, জনাকয়েক শ্যামবাজার মোড়েও।
ছিল হাজার এক “কিনু গোয়ালার গলি”–র কোণ ঘেঁষে “টিউ কল” যার পাশ ঘিরে ছিল দৈনন্দিনের পরিচিত কলতান। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেল কলচাপার সেই অদ্ভুত শব্দ! (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: সত্যজিতের সিনেমায় রেল : ফিরে দেখা

তবে মহানগরের রাস্তায় ফিরিওয়ালাদের ডাক এক একটা যুগের পরিচায়ক হয়ে বসত করে। অষ্টাদশ উনবিংশ শতকে রসরাজ অমৃতলাল বসু এবং রামবাগানের দত্ত পরিবারের সন্তান রায়বাহাদুর শশীচন্দ্র দত্তের বিবরণে সে সময়ের ফিরিওয়ালাদের ডাক ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে সংকলিত হয়ে। গড়ের মাঠের কেল্লা থেকে তোপ দাগার শব্দ আর রাত নয়টার তোপ দাগলেই হিন্দুস্থানিদের “বোমকালী কলকাত্তাওয়ালি” বলে বিরাট উল্লাসের পাশাপাশি ছিল সকাল থেকে “কুয়োর ঘটি তোলা”, “লে দেশ্লাই”, “সরাগুড়, তিলকুটো সন্দেশ, মুকুন্দ মোয়া”, “বাত ভাল করি দাঁতের পকা বার করি”, “মিশি লেবে গো” এমন সব ফিরিওয়ালা আর পরিষেবা কারবারিদের আসা যাওয়া! (Sound of Calcutta)

অবন ঠাকুর লিখছেন, “তারপর বেলা পড়ে এলে গরমের দিনে বরফওয়ালা হেঁকে যায়, “বরিফ, বরিফ চাই, বরিফ– কুলপি বরিফ”।

নগরায়ন যেমন বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে নিত্য নতুন ব্যবসার ফন্দি ফিকির। শশীচন্দ্রের লেখনিকালে (মোটামুটি ১৮৪২ থেকে ১৮৮৫) “শিশি বোতল, কাগজ, লোহা বিক্রি”, “কাটাও-শীল-চাকতি-জাঁতা”, “সেলাই জুতিয়া, জুতিয়া বুরুশ”, “চাই বরফ”, “গোলাপি রেউরি”, “নানখাট্টাই“, “চাই বেলফুল” এমনই সব ডাক শোনা গেছে শহরের পথে পথে। অবন ঠাকুর লিখছেন, “তারপর বেলা পড়ে এলে গরমের দিনে বরফওয়ালা হেঁকে যায়, “বরিফ, বরিফ চাই, বরিফ– কুলপি বরিফ”।
জ্যোতিকাকা মশায় লিখেছিলেন এক গান–
“বরিফ বরিফ” ব’লে বরফয়ালা যান।
গা ঢালো রে, নিশি আগুয়ান।” (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী: চলচ্ছবির প্রতিবেশীরা

এরপর আসা যাক যানবাহনে, সে শব্দেও এসেছে এক বিস্তর ফারাক। ঘোড়া গাড়ি ওঠার আগে পালকিই ছিল কলকাতার চলাফেরার একমাত্র যান। “ধাক্কুনাবড় হেঁইয়া নাবড়”, ওড়িয়া পালকি বেহারাদের ধ্বনি মুখরিত শহরে এসে পড়ে ঘোড়ায় টানা গাড়ির চক্র নিনাদ এবং হ্রেষা! আগামীতে রাজপথ বেয়ে চলে যাওয়া যন্ত্রচালিত মোটর গাড়ি এবং বিদ্যুতের তারে টিকি বাঁধা ট্রামের ঘণ্টা মহানগরের শব্দের ক্যানভাসে যোগ করে আরেক নতুন মাত্রা। সময়ের শুরু ১৮৭৩ সালে যেদিন শেয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট অবধি প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলেছিল। “ট্রামের সেই সুন্দর টং টং আওয়াজ সারাদিন শোনা যেত, রিক্সার টুং টুং আওয়াজের সঙ্গে”, বলছেন রাধাপ্রসাদ গুপ্ত। (Sound of Calcutta)

বায়োস্কোপওয়ালা টুং টাং ঘণ্টা বাজিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচাত “এখুনিই সুরু হোবে, আইয়ে খোকাবাবু, এক পইসা মে সারে কল কাত্তা, দূর কি বোম্বাই, লন্ডন আপনা আপনা সামনে”!

গত শতাব্দীর তিরিশ ও চল্লিশের দশকে এসে মহানগরের রাস্তার শব্দে এল তুমুল পরিবর্তন। ফিরিওয়ালাদের ডাক বদলেছে নিত্য নতুন পণ্য সামগ্রীর আগমণে। “হজমি গোলী”, “চাই নিমের মাজন”, “ভেটকি, শুটকি, সবরি শুটকি”, “ল্যাংড়া ঔম”, “পয়সা মে বারে মজা মিঠা সুপারি”, “সিঙ্গারা কচৌড়ি”। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছিল এক জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম। তিরিশ ও চল্লিশের দশকে বায়োস্কোপ প্রদর্শন কেবল প্রেক্ষাগৃহে সীমাবদ্ধ রইল না। পাড়ায় পাড়ায় ছয় কোণা এক ভারী কালো বাক্স মাথায় নিয়ে ঘুরতে লাগল বায়োস্কোপওয়ালার দল। অধিকাংশই পশ্চিমা মুসলমান। (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: দেবরাজ রায় : এক সাদাকালো সময়ের ছবি

বায়োস্কোপওয়ালা টুং টাং ঘণ্টা বাজিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচাত “এখুনিই সুরু হোবে, আইয়ে খোকাবাবু, এক পইসা মে সারে কল কাত্তা, দূর কি বোম্বাই, লন্ডন আপনা আপনা সামনে”! হাউসফুল হলেই সে পাশের হাতল ঘুরিয়ে সুর করে সংলাপ ধরত “দেখো দেখো কলকাত্তা দেখো, হাবড়া কা পুল দেখো, ময়দান পর খেল দেখো, বোম্বাই কা চৌপাট্টি দেখো–”, এরকম বিরামহীন বর্ণনা, সঙ্গে ঘণ্টার একটানা সঙ্গত। পরবর্তীকালে সেখানে যোগ হল গ্রামোফোন রেকর্ড এবং বিশাল এক চোঙা।
সত্তর দশকের কলকাতায় যে সব শব্দরা শ্রবণেন্দ্রিয় স্পর্শ করে যেত তার ধরন ধারণ তখন বেশ অন্যরকম। ট্রামের সঙ্গে যোগ দিয়েছে না না ছাঁদের বাস। তাদের ইঞ্জিনের শব্দে ছিল যেমন রকমফের তেমন তার কন্ডাক্টারদের বুলি বচনের বৈচিত্র্য। ভিড় বাসে “পিছন দিকে এগিয়ে যান” এই নির্দেশের অন্তর্নিহিত অর্থ যে কলকাতার বাসে না চেপেছে সে বোঝেনি, এ কথা হলফ করে বলা যায়। এই দশকের আরেক নতুন সমস্যা হল লোডশেডিঙ। রাতের কলকাতায় পাড়ায় বাতি নিভে গেলে যেমন হাহাকার উঠত, তেমনই তার আগমণে শোনা যেত উল্লাস ভরা চিৎকার। (Sound of Calcutta)

ফেরা যাক ফিরিওয়ালাদের কাছে। কোনও নিদাঘ নির্জন দুপুরে পাড়ার রাস্তায় বাসনের ঝুড়ি নিয়ে হেঁটে যায় এক দেহাতি রমণী, সুর করে ডাক দেয় “স্টেনলেস স্টিলের বাসন রাখবে…”! বাড়ির গিন্নিমা’রা অপেক্ষায় থাকেন পুরনো জামাকাপড় বদলে বাসন কেনার বাসনায়। মনে পড়ে আরেক রকম ফিরিওয়ালার কথা, যারা পুরনো টিনের কৌটোর বদলে দিয়ে যেত নানা ধরণের সস্তার খেলনা। তার ডাক ছিল ভারী অদ্ভুত– “পুরানা কৌটো বদলি”! ধুনুরির ধুনখারার একঘেঁয়ে ট্যাং ট্যাং শব্দ যেন শীত বয়ে আনত। কাঠের বাক্স কাঁধে চাবিওলার ঝমাঝম শব্দ, ছুরি বঁটি কাঁচি শাণ দেওয়ার চিকণ হাঁক “শাণ দেবেন” বা শীল কাটনেওয়ালার “শীল কাটাও” সবই আসলে বচ্ছরভর গার্হস্থ্য প্রয়োজনীয়তার সন্দেশ। সময়ের সঙ্গে কমে গেছে এদের সংখ্যা অথবা মহানগরের শব্দকল্পদ্রুমে এরা হয়ে পড়েছে প্রান্তিক! (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: খেলা ভাঙার খেলা

শব্দের হারিয়ে যাওয়া অথবা মেটামরফোসিসের কারণ হয়তো বা কখনও সেই শব্দ সৃষ্টির উৎসের পরিবর্তন। বহু আগে কলকাতার রাস্তায় ছিল ভিস্তিওয়ালারা। ছাগলের চামড়ার মশকে করে তারা জল এনে ঢেলে দিত রাস্তা ধোয়ার কাজে অথবা গৃহস্থের অন্দরমহলে। “ভিস্তি আ-বে-বে ভিস্তি” এই ডাক হারিয়ে গেল ক্রমশ। কারণ পাইপলাইন বেয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল জল। গাড়ি করে জল বয়ে এনে রাস্তা ধোয়ার কাজ শুরু হতে ভিস্তিদের প্রয়োজনীয়তা ফুরাল আরও খানিক। এখন তারা রয়ে গেছে রিপন স্ট্রিট, বো ব্যারাক, মারকুইস স্ট্রিট ঘিরে মধ্য কলকাতার কিছু অংশে। হরিণঘাটার মিল্ক ডেয়ারির গাঢ় নীল আর সাদা গাড়ির কথা মনে আছে? তার ভিতরে সাজানো থাকত সারি সারি কাচের বোতল। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ আসায় বিদায় নিয়েছে সেই ঠুং ঠাং শব্দ। কাগজের কাপে চা কোথাও মুছে দিচ্ছে পায়ের তলায় মাটির ভাঁড় ভেঙে ফেলবার শব্দ। (Sound of Calcutta)

কয়েক বছর আগেই কোভিডের সময়ে হারিয়ে গিয়েছিল কলকাতার রাস্তার শব্দরা। শহর যেন বোবা হয়ে গিয়েছিল।

কয়েক বছর আগেই কোভিডের সময়ে হারিয়ে গিয়েছিল কলকাতার রাস্তার শব্দরা। শহর যেন বোবা হয়ে গিয়েছিল। রাতবেরাতে অ্যাম্বুলেন্স আর শববাহি গাড়ির সাইরেন তৈরি করেছিল এক বিভীষিকাময় অনিশ্চিয়তার আবহ। এই শহরের বাসিন্দা হয়ে আমার কাছে দুঃখ দিনের অবসানে স্বাভাবিকতা ফিরেছিল ফিরিওয়ালাদের হাঁক ডাকে। (Sound of Calcutta)

শব্দ আসলে ধরে রাখে একটা সময়কে। মনের গহীনে সে সুপ্ত থাকলেও শব্দের স্মৃতি দ্রুত বিবর্ণ হয় দৃশ্য স্মৃতির চেয়ে। এই কারণেই আমাদের জীবনের সাউন্ডস্কেপ সংরক্ষণের বিষয়ে সক্রিয় হওয়া অপরিহার্য। রবি ঠাকুরের কণ্ঠে গানের পাশে আজ যদি ধরে রাখা যেত জোড়াসাঁকোর দক্ষিণের বারান্দা বা রাস্তার সে সময়ের সাউন্ডস্কেপ, তা হয়ে যেত এক ঐতিহাসিক দলিল।
তাহলে কি আমাদের চার পাশের শব্দরা সময়ের সঙ্গে চলে যাবে বিলুপ্তির পথে? এমনকি এক যাদুঘর তৈরি হতে পারে না যেখানে গ্রামোফোনের শব্দের পাশে থাকবে ফিরিওয়ালার ডাক, পথ চলতি যানবাহনের আওয়াজের পাশে রেডিও বা টিভি বিজ্ঞাপনের অংশ, রেল ষ্টেশনের কলতানের সঙ্গে মিশে যাবে খেলার মাঠের আনন্দ উল্লাস, মোবাইল ফোনের ছিমছাম রিংটোনের পাশে শোনা যাবে Windows 95 এর ৩.২৫ সেকেন্ডের প্রারম্ভিক সুর। (Sound of Calcutta)

শব্দ আসলে ধরে রাখে একটা সময়কে। মনের গহীনে সে সুপ্ত থাকলেও শব্দের স্মৃতি দ্রুত বিবর্ণ হয় দৃশ্য স্মৃতির চেয়ে।

পশ্চিমের দুনিয়া এই ব্যাপারে বেশ খানিক এগিয়ে গেছে তাদের সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনাকে মূলধন করে। যেহেতু এই ধরণের মিউজিয়ামের প্রদর্শন শ্রুতি নির্ভর অতএব এর নির্মাণ ইট কাঠ পাথরের নয়, পুরোটাই কার্যত ভার্চুয়াল। Conserve the Sound (https://www.conservethesound.de/) এমনই একটি মিউজিয়াম যেটি তৈরি করেছে জার্মান একটি সংস্থা। আজকের শিশুরা যারা কখনও শোনেনি পুরনো টাইপরাইটার, টেপরেকর্ডার, ডায়াল টেলিফোন, সিনেমা প্রোজেক্টর, গ্র্যান্ডফাদার ক্লক এসবের বাহারি শব্দ– তাদের জন্য সেসব ধরা আছে সেখানে। (Sound of Calcutta)

আরও পড়ুন: মগজাস্ত্রের রণভূমি

ব্রিটেনের বাসিন্দা, Stuart Fowkes, শব্দ নিয়ে খেলা যাঁর পেশা, ২০১৫ সালে তৈরি করেন Cities And Memories (https://citiesandmemory.com/) যার মধ্যে যে কোনও মুহূর্তে কান পাতলে শোনা যাবে পৃথিবীর প্রায় ১২০ দেশের ৬০০০ এর বেশি শব্দ। Field recording, sound art, sound mapping এর মাধ্যমে এখানে ধরা পড়েছে পৃথিবীর নানা শহরের শব্দ, যে শব্দ চেনায় সেই শহরকে। পৃথিবীর এক ধ্বনি মানচিত্রে কখনও শোনা যাবে সামারকান্দের কোনও বাজারের সোরগোল অথবা বারমুডার সমুদ্রে ঢেউয়ের ওঠা নামা, লাটাভিয়ার রিগা শহরে ট্রাম চলাচলের শব্দ কিম্বা পড়শি দেশ ঢাকা শহরে আজানের সুর। (Sound of Calcutta)

তবে কেন সেইসব শব্দের গায়ে লাগবে না হেরিটেজের তকমা

একদিন হয়তো জীবন থেকে হারিয়ে যাবে সংরাবের এই বিশাল ভাণ্ডার। যেভাবে আমরা হারিয়েছি তাদের, যথাযথ সংরক্ষণ না হলে, আগামী প্রজন্মের কাছে অপরিচিত থেকে যাবে তারা। “তবে কেন সেইসব শব্দের গায়ে লাগবে না হেরিটেজের তকমা”– এ প্রশ্ন রেখেছেন স্বয়ং Stuart Fowkes।
পরিশেষে আবার শুরুর কথা- শব্দের একটি মোহ আছে। শব্দ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথা থেকে এসেছি। কোলাহলে মোড়া বিশ্বের মাঝে তাই যেন শব্দেরা হারিয়ে না যায়। (Sound of Calcutta)

তথ্যঋণ
১। “কলকাতার ফিরিওয়ালার ডাক আর রাস্তার আওয়াজ” / রাধাপ্রসাদ গুপ্ত
২। “কমলালয়া কলকাতা” / মিজানুর রহমান
৩। উইকিপেডিয়া
শিরোনাম কবি শুভ্রপ্রকাশ দাসের একটি কবিতা থেকে নেওয়া।

Saptarshi Roy Bardhan

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।

Picture of সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।
Picture of সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com