Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ড. অশোক কুমার ঘোষ

এপ্রিল ৭, ২০২৫

World Health Day
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(World Health Day)

অমরনাথদার সঙ্গে দেখা হতেই প্রশ্নের মুখোমুখি। “আচ্ছা অশোক, বিশ্ব স্বাস্থ‍্য দিবস, সেটা আবার কী? কোনও বিশেষ একদিন স্বাস্থ্য সম্বন্ধে চিন্তা করলেই কি স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে?”
“অমরনাথদা, ব‍্যাপারটা আসলে ঐভাবে ভাবলে ঠিক হবে না। এভাবে ভাবা যেতে পারে যে, নববর্ষের শপথ মানে কি একদিনের শপথ? তা তো নয়, সারা বছরের শপথ। আসলে এই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মুখ‍্য উদ্দেশ্য প্রত্যেক বছর মনে করিয়ে দেওয়া, মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া, স্বাস্থ‍্যের কোন বিষয়ের ওপর আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।” (World Health Day)

World Health Day

“দিনটা নির্দিষ্ট কেন?”
“World Health Organisation (WHO) প্রত্যেক বছর একটা বিষয় নির্বাচন করে একটা বিশেষ দিনের কথা মাথায় রেখে। সেই বিশেষ দিনটা যদি WHO-র জন্মদিন হয়, তাহলে তার থেকে আর ভালো কী হতে পারে? WHOর জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল, আর এই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয় ৭ এপ্রিল ১৯৫০ থেকে — বিষয় ছিল, “Know your health services”, অর্থাৎ তোমার স্বাস্থ্য সেবা ও পরিষেবাকে জানো। শুরু করার জন্যে এর থেকে ভাল স্লোগান আর কী হতে পারে?”
(World Health Day)

আরও পড়ুন: উচ্চতায় সাবধানতা

“এই কারণেই মনে হয় এই দিনে সর্বত্র এত স্বাস্থ‍্য শিবিরের আয়োজন করা হয়।”
“ঠিক বলেছেন। এখানে, ওখানে প্রচুর স্বাস্থ্য শিবির হয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে এর স্বপক্ষে নই। ভেবে দেখুন, আমি একটা এরকম ক্যাম্পের আয়োজন করলাম একটা প্রত্যন্ত গ্রামে, আত্মশ্লাঘা অনুভব করলাম, পিঠ চাপড়ানিও জুটল, কিন্তু বাস্তবটা একবার ভেবে দেখেছেন কি! পরের সপ্তাহ থেকে সেই মানুষগুলো কী করবে? আমি তো সেখানে আর যাব না, তার থেকে এটাই উচিত কাজ হবে যদি তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তাদের প্রাপ্য স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়গুলো ও ঠিকানাগুলো জানানো হয়। তাহলে তাদের আর হাতুড়ে ডাক্তার, ওঝা-বদ‍্যি এবং টোটকার ওপর নির্ভর করতে হয় না। (World Health Day)

১৯৫০-এর পর থেকে প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে নানারকম স্লোগান দিয়ে WHO পৃথিবীর জনগণকে ঘা মেরে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছে। Should Disaster Strike, be prepared (1991), Healthy Cities for better life (1996),  Active aging makes the difference (1999), Mental Health: stop exclusion, dare to care (2001), Road safety (2004),  Working together for health (2006) Antimicrobial resistance: no action today, no cure tomorrow (2011), Food safety (2015), My health, my right (2024)। এরকম বিবিধ বিষয়-কেন্দ্রিক আলাদা আলাদা থিম বেছে নেওয়া হয় প্রত‍্যেক বছর।” (World Health Day)

World Health Day

“বাঃ, জেনে ভাল লাগল। তা, এ বছরের থিম বা স্লোগানটা কী?”
“এবছরের বিষয় 2025: Healthy beginnings, hopeful futures। শুধু বিষয় আউড়ে গেলেই শেষ নয়, সেটাকে কার্যকরী করে তোলার জন‍্যে বছরভর চলবে প্রচার অভিযান, সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এবং বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য, ‘প্রতিরোধযোগ্য মাতা এবং নবজাতকের মৃত্যু এবং মহিলাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন” (End preventable maternal and newborn deaths, and to prioritize women’s longer-term health and well-being) । এর সাথে জনগণকে জানানো হবে সুস্থ গর্ভাবস্থা, সন্তানের জন্ম এবং জন্মোত্তরকালে সুস্বাস্থ্য রক্ষার বিবিধ তথ্য (share useful information to support healthy pregnancies and births, and better postnatal health)। (World Health Day)

‘প্রতিরোধযোগ্য মাতা এবং নবজাতকের মৃত্যু এবং মহিলাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন”

এই স্লোগানের প্রয়োজনীয়তা আছে। পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ৩,০০,০০০জন মায়ের প্রতি বছর জীবনহানি ঘটছে গর্ভধারণকালে অথবা সন্তান জন্মের সময়। ২,০০,০০০ নবজাতক প্রাণ হারায় জন্মের ১ মাসের মধ্যে, আর ২,০০,০০০ জন শিশু জন্মায় মৃত হিসাবে। হিসেবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ৭ সেকেন্ডে ১ জন শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য।”
“তার মানে বলতে চাইছ যে জনগণকে ভবিষ‍্যত সম্বন্ধে আশাবাদী (#Hopeful Futures) করে তোলা আর সচেতন করে তোলা ‘সবার জন্যে স্বাস্থ্য’ (#HealthForAll) এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। এখন মনে পড়ছে ২০২৪ সালের স্লোগান। সেটা ছিল– ‘আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার’ (‘My health, my right’) । তাই না?”
(World Health Day)

World Health Day

“একেবারে ঠিক, এ বছরের থিম, ‘শুরু যদি সঠিক আর সুস্থ হয়, ভবিষ্যত আশাবাদী’ (“Healthy Beginnings, Hopeful Futures”)। ব‍্যাপারটা আদৌ কষ্টসাধ্য নয়, যদি আমরা এই সহজ কথাটা মনে রাখি যে, সুস্থ, সবল গাছ ভাল ফল দেয়। মা যদি সুস্থ থাকে, সন্তানেরও সুস্থ থাকা সম্ভব। মা যদি সন্তানধারণ করার প্রস্তুতি আগে থেকে নেয় তাহলে সোনায় সোহাগা। এটা বিয়ের আগে থেকে হলে আরও ভাল।”
“ঠিক বলেছ, আমরা জানি, কিছু বংশগত (জিন) অসুখ আছে যা সন্তানের মধ‍্যে সংক্রমিত হয়ে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি পিতা মাতা দুজনেই এই অসুখে অসুস্থ অথবা ক্যারিয়ার হন। যেমন, থ‍্যালাসেমিয়া। আশার আলো, এখন অনেকেই কোষ্ঠী গণনার বদলে, প্রাক-বিবাহ কিছু পরীক্ষা করাচ্ছেন।” (World Health Day)

২,০০,০০০ নবজাতক প্রাণ হারায় জন্মের ১ মাসের মধ্যে, আর ২,০০,০০০ জন শিশু জন্মায় মৃত হিসাবে।

“আমার কাছে এক দম্পতি এসেছিল সম্প্রতি। তারা বিয়ের আগে নিজেদের রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিল আর এখন মনস্থির করেছে তিন মাস পর সন্তানজন্মের প্রস্তুতি নেবে। পরামর্শ চাইল তার জন‍্যে কী কী করণীয় সে সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে। ভাল লাগল এটা দেখে যে, মানুষ জাগছে।”
“তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে গর্ভবতী হওয়ার আগে এবং পরে মায়ের কিছু করণীয় আছে, মানে সুস্থ সবল শিশুর জন্মদানের জন্যে?’

World Health Day

“অবশ্যই। গর্ভাবস্থায় মায়ের উচিত নিয়মিত কিছু পরীক্ষা করানো। অন্ততপক্ষে টিটেনাস প্রতিষেধকের ব‍্যবস্থা করা এবং কিছু সাপ্লিমেন্ট যেমন ফোলিক এসিড এবং আয়রনের পরিমাণ পর্যাপ্ত কী না সেদিকে নজর রাখা। আরও খেয়াল করা দরকার যে, গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাভাবিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্যগ্রহণ করা উচিৎ এবং সাধারণ আহারের মাধ্যমে এই পুষ্টিগুন (ফোলিক এসিড, আয়রন) তার পূরণ সম্ভব নয়। সেজন‍্যে এগুলির সাপ্লিমেন্ট দরকার। সন্তানের জন্ম অবশ্যই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হওয়া উচিত। সন্তান জন্মের পরবর্তী টিকাকরণে যেন ভুল না হয়। সব পরিষেবাই সরকারি ব্যবস্থায় লব্ধ।”
(World Health Day)

গর্ভাবস্থায় মায়ের উচিত নিয়মিত কিছু পরীক্ষা করানো। অন্ততপক্ষে টিটেনাস প্রতিষেধকের ব‍্যবস্থা করা।

“অশোক, তোমার কাছ থেকে এইসব জানার পর আশা করতেই পারি যে, এ’বছরের স্লোগান বিফলে যাবে না। সচেতনতা গড়ে তোলার ফলস্বরূপ আমরা এক সুস্থ সবল পৃথিবীর জন্যে অপেক্ষা করতেই পারি যেখানে শিশু এবং প্রসূতিমৃত্যুর সংখ‍্যা উল্লেখযোগ‍্যভাবে হ্রাস পাবে এবং সমস‍্যা নগণ‍্য আকার ধারণ করবে।”
(World Health Day)

Author Ashok kumar Ghosh

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পাহাড়িয়া এবং ভ্রামণিক, আলোকচিত্র শিল্পী (জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত), ললিত কলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত (অনার মেন্সান), ‘Federation International de la Arte Photograhoque’ থেকে Excellence Honors প্রাপ্ত (EFIAP)। এছাড়াও তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমিক ও পুষ্পপ্রেমিক। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের পুষ্প প্রদর্শনীর বিচারক। ওঁর লেখা প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

Picture of ড. অশোক কুমার ঘোষ

ড. অশোক কুমার ঘোষ

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পাহাড়িয়া এবং ভ্রামণিক, আলোকচিত্র শিল্পী (জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত), ললিত কলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত (অনার মেন্সান), ‘Federation International de la Arte Photograhoque’ থেকে Excellence Honors প্রাপ্ত (EFIAP)। এছাড়াও তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমিক ও পুষ্পপ্রেমিক। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের পুষ্প প্রদর্শনীর বিচারক। ওঁর লেখা প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।
Picture of ড. অশোক কুমার ঘোষ

ড. অশোক কুমার ঘোষ

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পাহাড়িয়া এবং ভ্রামণিক, আলোকচিত্র শিল্পী (জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত), ললিত কলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত (অনার মেন্সান), ‘Federation International de la Arte Photograhoque’ থেকে Excellence Honors প্রাপ্ত (EFIAP)। এছাড়াও তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমিক ও পুষ্পপ্রেমিক। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের পুষ্প প্রদর্শনীর বিচারক। ওঁর লেখা প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

2 Responses

  1. স্বাস্থ্য সচেতনতার এই লেখনী অবশ্যই ভীষন ভাবে প্রাসঙ্গিক। অজ্ঞতা দূরীকরণ, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা জারি রাখতে পারলে ” Good beginning…
    Effective result achieve” করা সম্ভব। লেখনী সচল থাকুক, খুব ভালো থাকুন।🌹🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস