Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ইতিহাসের রাস্তায় টিনটিন ও এক অটুট বন্ধুত্বের কাহিনি

Tintin
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Tintin)

আগের পর্ব- [], [], [], []

টিনটিন কি শুধুই কিশোর কিশোরীদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার বা কল্পবিজ্ঞানের দ্যোতক? শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে এসেও অ্যার্জের এই সৃষ্টি যে তার অমোঘ আকর্ষণ বজায় রেখেছে তার মূলে কি ইতিহাসও নেই? পাঠক এই সত্যের সম্মুখীন হন তাঁর পঞ্চম সৃষ্টি ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এ এসে, যা বাস্তবিক পক্ষে বিগত শতকের তিরিশ দশকের অশান্ত চিনা ইতিহাসের এক দর্পণ।
অ্যার্জের চিরায়ত সৃষ্টির অন্দরমহলের এক ঝলক দেখা হল এই পঞ্চম পর্বে। (Tintin)

মার্চ মাসের ২২ তারিখে টিনটিনের পঞ্চম অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এর রঙিন সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার ৮০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে রীতিমতো উৎসবের মেজাজে।

সাংহাইয়ে বেলজিয়ামের উপদূতাবাসে সেদিন সাজো সাজো রব।
মার্চ মাসের ২২ তারিখে টিনটিনের পঞ্চম অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এর রঙিন সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার ৮০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে রীতিমতো উৎসবের মেজাজে। সাংহাইয়ের বেলজিয়াম কনসাল জেনারেল পাসকাল বাফিন নিজেই রয়েছেন অনুষ্ঠানে। রয়েছেন সাংহাইয়ের টিনটিন শপ ও টিনটিন ইমাজিনেশন চায়না সংস্থার কর্ণধার ফিলিপ ওয়াঙও। টিনটিনের এই গল্প ও সামগ্রিকভাবে এই ক্ষুদে বেলজিয়াম রিপোর্টারের জগৎ নিয়েও আয়োজিত হয় দিনভোর মনোজ্ঞ আলোচনা আর ক্যুইজ। সব কিছুর পিছনে একটাই উদ্দেশ্য, চিনের নয়া প্রজন্মের কাছে টিনটিনকে পরিচিত করা। (Tintin)

Tintin

কেন এই তাগিদ? আদতে এই গল্প তো বিগত শতকের তিরিশ দশকের সাংহাইয়ের কাহিনি, যখন পূর্ব চিনের এই মহানগরী আন্তর্জাতিক উপনিবেশ আর জাপানি দখলদারদের মধ্যে বিভক্ত ছিল। কাহিনি শুরুই হচ্ছে সাংহাই থেকে একজন টিনটিনের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে আসার মধ্য দিয়ে। টিনটিন ভারত থেকে জাহাজে করে এসে পা রাখে সাংহাইতেই। কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুও সাংহাই। টিনটিন শহরে পা রেখেই দেখছে কীভাবে জাপানি দখলদাররা চিনাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। কীভাবে ইংরেজরা সুযোগ পেলেই চিনাদের অপমান করছে। এই চিনে, জাপানি দখলদারি এখনও চিনের মনে দগদগে ক্ষত। আর টিনটিনের এই কাহিনি তো এক অর্থে চিনা বিপ্লবীদের হয়ে জাপানি দখলদারদের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প। প্রায় এক শতাব্দী চলে গিয়েছে কিন্তু আন্তর্জাতিক আঙিনায় জাপান এবং চিন আজও প্রবল প্রতিপক্ষ। ফলে এই বেদনাময় ইতিহাসে যখন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদী চরিত্র থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে মেতে উঠবে সাংহাই। (Tintin)

চিনা ভাস্কর চ্যাঙ চোঙ রেনের সঙ্গে অ্যার্জের আজীবন বন্ধুত্ব। বিগত শতকের তিরিশের দশকে এই চ্যাঙই অ্যার্জেকে জানিয়েছিলেন কীভাবে তখন দখলদার জাপান আর পশ্চিমাশক্তি মিলে চিনে পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে।

আরও একটি কারণ রয়েছে। চিনা ভাস্কর চ্যাঙ চোঙ রেনের সঙ্গে অ্যার্জের আজীবন বন্ধুত্ব। বিগত শতকের তিরিশের দশকে এই চ্যাঙই অ্যার্জেকে জানিয়েছিলেন কীভাবে তখন দখলদার জাপান আর পশ্চিমাশক্তি মিলে চিনে পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছে। অথচ ইউরোপের আমজনতা এটা জানতই না। ‘দ্য ব্লু লোটাস’ এই নির্মম সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। আর এই বন্ধুতাকে অমরত্ব দিয়ে গিয়েছেন অ্যার্জেও। চ্যাংকে তিনি নিয়ে আসেন চ্যাঙ চোঙ চেন নামে। এতেই শেষ নয়। চ্যাঙকে নিয়ে অ্যার্জে সিকি দশক পরে ১৯৫৯ সালে লেখেন ‘টিনটিন ইন টিবেট’ যেখানে নিঁখোজ চ্যাঙের খোঁজে সদলবলে টিনটিন তিব্বতে যায়। তাই সাংহাইয়ের এই অনুষ্ঠান আর পাঁচটা সাধারণ বইয়ের অনুষ্ঠান না থেকে পশ্চিমের সঙ্গে চিনের সাহিত্য, শিল্পে সংযোগের কথাও মনে করাচ্ছে। এভাবেই ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এর মতো চিরায়ত কমিকস সাহিত্য, বর্তমান আর অতীতের সেতুবন্ধ হয়ে দাঁড়ায়। (Tintin)

তবে কোথাও তো শুরু হয়! সেই সলতে পাকানোর কাহিনিটা এক ঝলক দেখা যাক। বেলজিয়ামে গোঁড়া পাদ্রীদের সংবাদপত্র ‘ল্য ভ্যামসিয়েম সেঁকনার’ শিশুদের জন্য ক্রোড়পত্র ‘ল্য পিতি ভ্যামসায়েমা’তে ১৯৩২ সালের ২৪ শে নভেম্বর একটা বিজ্ঞপ্তি বেরোলো যাতে বলা হল টিনটিন শীঘ্রই নতুন এক দিগন্তে অ্যাডভেঞ্চারে যাবে। পাঠকরাও স্বভাবতই কৌতুহলী হল। সোভিয়েত ইউনিয়ন, কঙ্গো আর আমেরিকার পর এবার কোথায় যাবে? ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৩৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাপ্তাহিক কমিক স্ট্রিপ হিসাবে যখন ল্য পিতি ভ্যামসায়েমাতে টিনটিনের চতুর্থ অ্যাডভেঞ্চার ‘সিগারস অফ ফারাও’ বার হল তখন দেখা গেল অ্যার্জে, মিশর থেকে সোজা ভারতে এনে ফেললেন টিনটিনকে। (Tintin)

টিনটিনের মাদক চোরাকারবারদের খোঁজে মিশর হয়ে ভারতে অভিযান হল ‘সিগারস অফ ফারাও’ আর সেই একই চোরাকারবারী দলের খোঁজে ভারত থেকে সাংহাই গিয়ে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারের নাম হয় ‘দ্য ব্লু লোটাস’।

বিংশ শতকের পরাধীন ভারতে তখন ছিল বহু দেশীয় রাজ্য। এরকমই এক রাজ্য ছিল গাইপাজামা। এই রাজ্যেই আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারদের খোঁজে নামে টিনটিন। কাহিনির শেষে দেখা যায় সেখানকার মহারাজার কাছে আতিথ্য গ্রহণ করছে টিনটিন। আদতে এই কাহিনির নাম ছিল ‘টিনটিন ইন দ্য ওরিয়েন্ট’। কিন্তু শেষে এই কাহিনি দু’টো ভাগে ভাগ হয়ে গেল। টিনটিনের মাদক চোরাকারবারদের খোঁজে মিশর হয়ে ভারতে অভিযান হল ‘সিগারস অফ ফারাও’ আর সেই একই চোরাকারবারী দলের খোঁজে ভারত থেকে সাংহাই গিয়ে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারের নাম হয় ‘দ্য ব্লু লোটাস’। (Tintin)

হ্যারি থম্পসন তাঁর ‘টিনটিন-অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন’ বইতে জানিয়েছেন, ‘সিগারস অফ ফারাও’ এর পর জর্জ রেমির ইচ্ছা হল টিনটিন এবার ভারতের পড়শি চিনে যাক। কিন্তু চিনের সম্বন্ধে বিশেষ কোনও জ্ঞান রেমির ছিল না। শুধু বেলজিয়ামে তখন চিনা ক্যাথলিকদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। তাঁদেরই একজন ছিলেন পিঁয়ের লাও। আদতে সাংহাইবাসী এই চিনা যাজকের সঙ্গে অ্যার্জে ওরফে জর্জ প্রস্পার রেমির বন্ধুত্ব ছিল। রেমির চিনপ্রীতির সূচনাও ওইখান থেকে। (Tintin)

এখানে বলে নেওয়া ভাল, টিনটিনের প্রথম কাহিনি ‘টিনটিন ইন ল্যাণ্ড অফ সোভিয়েতস’এ দু’জন অত্যাচারি চিনা চরিত্র এনেছিলেন রেমি। কিন্তু চলনে বলনে তারা ছিল একদম মধ্যযুগীয়। এই সময় রেমির সঙ্গে আলাপ হল ব্রাসেলস প্যালেস অফ ফাইন আর্টসের পড়ুয়া ভাস্কর চ্যাঙ চোন রেনের সঙ্গে। রেমির ছবিতে ডিটেলিং-এর আমূল বদলে যাওয়ার পিছনে এই চ্যাঙের ভূমিকাই দেখেন থম্পসন। চ্যাঙের কাছে রেমির হাতে খড়ি হয় চিনা ক্যালিওগ্রাফিতে। শেখেন ‘ক্লিয়ার লাইন’ পদ্ধতির আঁকা। চ্যাঙ তাঁকে হাতে ধরে বোঝান ছবির পারিপার্শ্বিকতা। ফলে রেমির আঁকায় ডিটেলিং অনেক নিঁখুত হয়। যার প্রভাব পড়ে পরবর্তীকালের টিনটিনের কাহিনিগুলোতে। (Tintin)

Tintin

আর ভৌগলিক জায়গাগুলোও নিঁখুতভাবে আঁকাতে ফুটিয়ে তোলার উপরও চ্যাং জোর দেন। ফলে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিটা শহর, রাস্তা, মহল্লা, বাড়ি তাঁর টিনটিন কাহিনিতে নিখুঁতভাবে আঁকতে শুরু করেন অ্যার্জে। আর এর জন্য তিনি শরণাপন্য হলেন নিজের কাগজের ফটো লাইব্রেরি আর সমসাময়িক আলোকচিত্রগুলির উপর। থম্পসনের মতে, এতদিন পর্যন্ত টিনটিনের কাহিনিগুলো নিয়ে অ্যার্জে তেমন সিরিয়াস ছিলেন না। অনেক সময়ই পুরো ব্যাপারটা খেলাচ্ছলে নিয়েছিলেন। চ্যাং-এর নির্দেশনায় সেই চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন এল। (Tintin)

চ্যাঙ হলেন অ্যার্জের রাজনীতির শিক্ষকও। জেনারেল চিয়াঙ কাইসেকের কুয়োমিঙটান তখন চিনা মসনদে আর ১৯২৭ সাল থেকে মাও জে দংয়ের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। দেশের এই অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ১৯৩১ সালে জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে। অন্যদিকে ইংরেজ আর মার্কিনিরাও সাংহাইয়ের একাংশ আন্তর্জাতিক উপনিবেশ নাম দিয়ে দখল করে রেখে শোষন আর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।চিনে একইসঙ্গে ঘটে চলা গৃহযুদ্ধ এবং বহির্শত্রুর আক্রমণ যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তার খবর ইউরোপে তেমন পৌঁছায়নি। (Tintin)

আর পাঁচজনের মতো অ্যার্জেও জানতেন না সম্যকভাবে সমসাময়িক চিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অ্যার্জে, সামনে নিয়ে এলেন চিনে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা। চ্যাঙ এক্ষেত্রে অ্যার্জের চোখ খুললেন বলা যায়।

আর পাঁচজনের মতো অ্যার্জেও জানতেন না সম্যকভাবে সমসাময়িক চিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অ্যার্জে, সামনে নিয়ে এলেন চিনে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা। চ্যাঙ এক্ষেত্রে অ্যার্জের চোখ খুললেন বলা যায়। অ্যার্জেকে বিশদভাবে শোনালেন চিনে দখলদার জাপানি বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের কাহিনি যা ইউরোপের সংবাদ মাধ্যম সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে। এমনকি সাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক উপনিবেশও কার্যত দখলদার জাপানি বাহিনীর সঙ্গে সখ্য রেখেই চলে। (Tintin)

অ্যার্জে ইউরোপের চলতি হাওয়ার পন্থী না হয়ে চ্যাং-এর দেখানো পথই বেছে নিলেন। ফলে টিনটিনের কাহিনি গল্প হয়েও হয়ে উঠল চিনের অন্ধকার সময়ের এক দলিল। অ্যার্জের মৃত্যুর পরে চ্যাংকে তাই বলতে শোনা যায়,”আমরা দু’জনে ছিলাম ভাইয়ের মতো। আমিই বলেছিলাম বাস্তব ঘটনাকে টিনটিনের কাহিনিতে নিয়ে আসতে। তাহলে কাহিনিটার শিল্প আর কল্পনার বাইরেও একটা ঐতিহাসিক মূল্য থাকবে। এইভাবেই ‘ব্লু লোটাস-এর জন্ম হল। তখন সপ্তাহে অন্তত একদিন আমাদের দেখা হতই। ইতিহাস, রাজনীতি,চরিত্রগুলোর পোশাক,কবিতা, গ্রামাঞ্চলের প্রকৃতি-হেন বিষয় ছিল না যা নিয়ে আলোচনা হত না। এমনকি আমি কিছু চিনা চরিত্রও আঁকলাম।“ চ্যাং-এর এই আঁকার নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে কাহিনির কয়েক জায়গায়। (Tintin)

অবশেষে ল্য পিতি ভ্যামসায়েমাতে ১৯৩৪ সালের অগস্ট থেকে ১৯৩৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সাপ্তাহিক কমিক স্ট্রিপ হিসাবে বার হয়। (Tintin)

আর সঙ্গে সঙ্গে দুই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার তুফান আছড়ে পড়ল অ্যার্জের উপর। চ্যাঙ এই কমিকসের জন্য যেসব পোস্টার এঁকেছিল, সেখানে স্পষ্ট ছিল পিছনে ’জাপান মুর্দাবাদ’ লেখা ব্যানার। জাপানিরা তো চটে লাল। বেলজিয়ামে জাপানি রাষ্ট্রদূত হুমকি দিল অ্যার্জেকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার। জাপানিরা দাবি করল কাহিনিটা নিষিদ্ধ করার জন্য। এর জেরে বেলজিয়াম আর জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হল। (Tintin)

ইংল্যান্ড আর আমেরিকা, এই কাহিনিতে মোটেও খুশি ছিল না। ‘দ্য ব্লু লোটাস’এ দেখানো হয়েছে মার্কিন ইস্পাত ব্যবসায়ী গিবন্স হল একজন লোভী, ধূর্ত আর সুযোগ পেলেই চিনাদের অত্যাচার করা মানুষ।

ইংল্যান্ড আর আমেরিকা, এই কাহিনিতে মোটেও খুশি ছিল না। ‘দ্য ব্লু লোটাস’এ দেখানো হয়েছে মার্কিন ইস্পাত ব্যবসায়ী গিবন্স হল একজন লোভী, ধূর্ত আর সুযোগ পেলেই চিনাদের অত্যাচার করা মানুষ। তাঁর সব কাজে মদত দেয় সাংহাই আন্তর্জাতিক উপনিবেশের পুলিশ প্রধান ডসন। এমনকি বেলজিয়াম সেনাবাহিনীরও টিনটিনের এই চিনা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ ছিল না। তাঁদের মতে এটা মোটেই কোনও কিশোর কাহিনি নয়। বেলজিয়াম সেনার এই অভিযোগ অবশ্য অ্যার্জে মেনে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সত্যিই ঠিক কিশোরদের কথা ভেবে লেখা হয়নি। (Tintin)

তবে এসব কচকচি কিশোররা বিশেষ পাত্তা দেয়নি। তারা সাদরে গ্রহণ করেছিল টিনটিনের নয়া অ্যাডভেঞ্চারকে। আর খুশি হয়েছিল চিন। চিয়াঙ কাইসেকের চিন ভাবতেই পারেনি পশ্চিম ইউরোপে তারা কোনওদিন সমর্থন পেতে পারে, জাপানি হামলার স্বরূপ কেউ বিশ্বদরবারে হাজির করতে পারে। কিছুদিন যাওয়ার পর মাদাম চিয়াং কাইশেক অ্যার্জেকে চিনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অবশ্য যুদ্ধ আর দ্রুত বদলে যাওয়া ভূ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অ্যার্জের চিন যাত্রার বাধা হয়ে দাঁড়াল। শেষে ১৯৭৩ সালে তাইওয়ানে শিল্পীর সঙ্গে মাদাম কাইসেকের দেখা হয়। (Tintin)

থম্পসনের মতে, ‘ব্লু লোটাস’-এর বিরুদ্ধে আইনি হুমকি অ্যার্জেকে কাহিনিকার হিসাবে অন্য শিক্ষা দেয়। তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক কমিকসে তিনি আর সরাসরি নাম নেননি। মূল গল্প বলেছেন তবে কল্পিত দেশে কল্পিত চরিত্রের মাধ্যমে। কিন্তু ‘ব্লু লোটাস’-এ সরাসরি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই বিশ্ব কমিকস সাহিত্যে এই কাহিনি এক দিকনির্দেশক হিসাবে নিজের স্থান করে নিয়েছে। (Tintin)

Tintin

আজীবন দোস্তি

এখানে চ্যাঙ-এর সঙ্গে অ্যার্জের বন্ধুত্বের বিষয়টা না আনলে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ‘দ্য ব্লু লোটাস’-এর পরে চ্যাঙ সাংহাইয়ে ফিরে যান। ওদিকে জার্মানিতে অ্যাডল্ফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। শুরু হয়ে যায় প্রকাশ্যে ইহুদি বিরোধী কার্যকলাপ যার প্রভাব ইউরোপ জুড়ে পড়তে থাকে। শুরু হয় ইউরোপ জুড়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এরপর বোঝা যায় ‘হাজার বছরের রাইখ’ শাসনের মোড়কে হিটলার পুরো ইউরোপকে পদানত করতে চান। ফলে বেলজিয়ামের মতো ছোট ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভয়ের চোরা স্রোত বইতে শুরু করে। কয়েক বছর বাদে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলে সেই আশঙ্কা সত্যিতে পরিণত হয়। বেলজিয়াম সহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ জার্মান পতাকা তুলে চলে যায়। তার কয়েক বছর পরে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় শীতল যুদ্ধ। আর মাও জে দং-এর নেতৃত্বাধীন চিনের সঙ্গেও ইউরোপের যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে যায়। এত ডামাডোলের মধ্যে চ্যাং-এর সঙ্গে যোগাযোগও ছিন্ন হয়ে যায় অ্যার্জের। (Tintin)

প্রায় পাঁচ দশক বাদে ১৯৮১ সালে দু’জনের দেখা হয় ব্রাসেলস বিমানবন্দরে এক আবেগঘন মুহূর্তে। এর বছর দুই পরে অ্যার্জে প্রয়াত হন। চ্যাঙ শেষ জীবনে ফরাসী নাগরিকত্ব নিয়ে ১৯৮৫ সাল থেকে প্যারীতে বসবাস করতে থাকেন।

প্রায় পাঁচ দশক বাদে ১৯৮১ সালে দু’জনের দেখা হয় ব্রাসেলস বিমানবন্দরে এক আবেগঘন মুহূর্তে। এর বছর দুই পরে অ্যার্জে প্রয়াত হন। চ্যাঙ শেষ জীবনে ফরাসী নাগরিকত্ব নিয়ে ১৯৮৫ সাল থেকে প্যারীতে বসবাস করতে থাকেন। ফরাসি রাজধানীতেই ১৯৯৮ সালে এই চিনা ভাস্কর প্রয়াত হন। (Tintin)

টিনটিনের নামই শোনেনি!

বস্তুত টিনটিন ও তার দুনিয়া আজও দুনিয়াজুড়ে কোটি কোটি পাঠককে আন্দোলিত করে। কুইবেকের নামজাদা কার্টুনিস্ট গাই দ্যুঁলিলে কয়েক বছর আগে ইজরায়েলে কার্টুনের উপর কয়েকটা কর্মশালা করিয়ে ছিলেন। প্রতিবারই তিনি ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করতেন কোন কার্টুনিস্টের কাজ তাদের সবচেয়ে ভাল লাগে। কেউই প্রায় কোনও উত্তর দিতে পারে না। তবে একটি কর্মশালায় একটি উত্তর শুনে দ্যুঁলিলে প্রায় ভেঙে পড়লেন। মাত্র দু’জন পড়ুয়া বলল তারা টিনটিনের নাম শুনেছে।‘দ্য কমিক্স অফ অ্যার্জে’ বইয়ের ভূমিকায় এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জো স্যাটক্লিফ স্যান্ডার্স লিখছেন, ”টিনটিন আসলে এতটাই বড়। কুইবেকের কার্টুনিস্টের মাথায় তাই ঢুকছে না টিনটিনের নাম না জেনে কীভাবে কমিক্স কাকে বলে সেটা জানতে চলে এসেছে এরা! (Tintin)

তথ্যসূত্র:

(১) টিনটিন অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন-হ্যারি থম্পসন
(২) দ্য রিয়েল অ্যার্জে-সিয়ান লি
(৩) দ্য কমিক্স অফ অ্যার্জে-হোয়েন দ্য লাইন্স আর নট সো ক্লিয়ার- জো স্যাটক্লিফ স্যান্ডার্স সম্পাদিত
(৪) সোভিয়েত দেশে টিনটিন- অ্যার্জে
(৫) টিনটিন ফারাওয়ের চুরুট- অ্যার্জে
(৬) টিনটিন নীলকমল- অ্যার্জে

Author kingshuk banerjee

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

অরূপ গঙ্গোপাধ্যায় 
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
শক্তিপদ ভট্টাচার্য
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com