(Mani Lal Bhaumik)
আজ আলোক দিবস। এই আলো বাইরের আলো নয়। যে টুনি-বাল্ব দিয়ে ঘরদোর সাজাব। এই আলো ভেতরের। যে-আলো জ্বালাতে লাগে সন্ধান, সাধনা, সংবেদের প্রদীপ। আমি একটি মানুষকে অনেকদিন চিনি, যিনি তাঁর বালকবেলার দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে হতে পেরেছেন আলোর সন্ধানী এবং সাধক। দাঁড়াতে পেরেছেন আলোকের ঝরনা ধারায়। এবং অনেক মানুষকে দেখাতে পেরেছেন আলোকের পথ। (Mani Lal Bhaumik)
ডক্টর মণি ভৌমিক এমনই একজন দুর্লভ বাঙালি যিনি পেশায় ও নেশায় আজীবন জড়িয়ে আছেন আলোর সঙ্গে।
ডক্টর মণি ভৌমিক এমনই একজন দুর্লভ বাঙালি যিনি পেশায় ও নেশায় আজীবন জড়িয়ে আছেন আলোর সঙ্গে। জন্মেছিলেন তমলুকের অন্ধকার, আশাহীন, দারিদ্রলাঞ্ছিত পরিবেশে। সেখান থেকে ম্যালিব্যুর মার্বেল, এ তো এক অবিশ্বাস্য যাত্রা। কিন্তু আমি ডক্টর ভৌমিকের আর্থিক সাফল্য, বিত্তের আলোর কথা বলব না। বলব তাঁর সেই আলোক সাধনা ও সাফল্যের কথা, যে-আলোর পিছনে সর্বদা কাজ করে চলেছে তাঁর বোধদীপ্ত ইন্টেলেকশন এবং তাঁর অন্তরদীপন। (Mani Lal Bhaumik)

লস অ্যাঞ্জেলেস-এ এবং হাওয়াই দ্বীপে আমি মাসের পর মাস কাটিয়ে তাঁর পাঁচ- ছটি সত্য ও আলোক-সন্ধানী বইয়ের অনুলিখন করেছি। এই বইগুলির মধ্যে তিনি আশ্চর্যজনক ভাবে বুনে দিতে পেরেছেন বৈজ্ঞানিক এষণার সঙ্গে আধ্যাত্মিক সন্ধান, মগ্নতা, উপলব্ধি। ফলে রচিত হয়েছে সামগ্রিক সত্যের এমন এক আলো, যা আমাদের আজ বড় প্রয়োজন, চারিধারের এই অনাচার, ব্যভিচার, অবিচারের অন্ধকারে, হানাহানি এবং বিদ্বেষের পরিসরে। (Mani Lal Bhaumik)
আগেই বলেছি, ডক্টর ভৌমিকের পেশা এবং নেশার সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে জড়িয়ে আছে আলো। তবে এই আলো আলোক সজ্জার আলো নয়। তিনি লেজার আলোর বিজ্ঞানী। এবং এক্সিমার লেজার-এর আবিষ্কারক। এই আবিষ্কারের জোরে, এই নব আলোকনের সৌজন্যে তিনি ‘ফেলো অফ দ্য আমেরিকান ফিজিকাল সোসাইটি’ এবং ‘ফেলো অফ দ্য ইনস্টিটিউট অফ দ্য ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স এঞ্জিনিয়ার্স‘। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজে তৈরি করেছেন নিজের আলোক-সন্ধানী কোম্পানি ‘কসমোজেনিক্স’- যেখানে অহরহ গবেষণা চলছে মহাবিশ্বের কস্মস্ প্রসঙ্গে। নিত্য-নতুন আলো জ্বলছে আবিষ্কারের। উন্মোচিত হচ্ছে কসমিক সত্যের নতুন উন্মেষ। (Mani Lal Bhaumik)
ডক্টর ভৌমিক শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছেন এক বিপুল প্রশ্নের সামনে। এই প্রশ্ন নিয়ে তিনি লিখেছেন বিজ্ঞানে ঈশ্বরের সন্ধান প্রসঙ্গে একটি বই, যার অনুলিখন আমার। এই বই আমাদের এক নতুন আলোয় দাঁড় করিয়েছে। এনেছে নতুন সত্যের উন্মোচন আমাদের জীবনে ও ধ্যানে। জ্ঞানের এই নতুন আলো জানাচ্ছে, এই বিপুল বিশ্বের, এই প্রসারিত সৃষ্টির এক একক উৎস আছেই আছে, যে উৎসকে ঈশ্বর বলতে আধুনিক বিজ্ঞানের কুণ্ঠা নেই। (Mani Lal Bhaumik)
কিন্তু ধ্যানের ঘরটি নিঃসঙ্গ অন্ধকার রেখে আমাদের ভিতরের আলো জ্বালিয়ে আমরা কি চেতনার উৎসবের কথা ভাবতে পারি?
ডক্টর ভৌমিক পশ্চিমা বিজ্ঞানের এই উপলব্ধি ও সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিশিয়েছেন বৈদিক ঋষিদের উপলদ্ধি ও উচ্চারণের আলো, যে-আলো আমাদের জানাচ্ছে এমনই এক সত্তা বা এন্টিটির কথা, যে-সত্তা সকল সৃষ্টির উৎস। ডক্টর ভৌমিক এই সত্তাকেই বলছেন, ইউনিফায়েড ফিল্ড। এবং বিতরণ করেছেন সেই আলোর সমীকরণ, যা প্রমাণ করে ইউনিফায়েড ফিল্ডের অস্তিত্বের বিচিত্র বিস্ফুরণ। (Mani Lal Bhaumik)

বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং আলোকনের সাহায্যে ডক্টর ভৌমিক আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, এই ইউনিফায়েড ফিল্ড বা একক সত্তা, বা অশেষ ইউনিভার্সের বুননের মধ্যেই বিছিয়ে আছে আমাদের বেদনার ব্লু-প্রিন্ট। চেতনার থেকে বিপুল, বিস্তারিত আলো আর কী হতে পারে? অথচ চেতনার আলোকেই আমরা ভুলে থাকি। ভুলে থাকব আলোকদিবসেও। আমরা ইলেকট্রিক আলো জ্বেলে, বা প্রদীপের আলোয় গৃহসাজিয়ে হয়তো বা আলোকদিবস যাপন করার কথা ভাবছি। কিন্তু ধ্যানের ঘরটি নিঃসঙ্গ অন্ধকার রেখে আমাদের ভিতরের আলো জ্বালিয়ে আমরা কি চেতনার উৎসবের কথা ভাবতে পারি? (Mani Lal Bhaumik)
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
ডক্টর ভৌমিক তাঁর একাধিক আলোকসন্ধানী গ্রন্থে এই চেতনার আলোর কথা বারবার বলেছেন, যে-চেতনার ‘অদৃশ্য’ আলো বিছিয়ে আছে মহাবিশ্বের বুননে! এই মহাবিশ্ব চৈতন্যময়, বলছেন ডক্টর ভৌমিক। এবং সেই কারনেই, এই মহাবিশ্বকে ডক্টর ভৌমিক বলছেন, ‘পার্টিসিপেটরি’ ইউনিভার্স আলোক-উৎসবের দিনে এই মহাবিশ্ব নিয়ে ডক্টর মণি ভৌমিকের ভাবনার নতুন আলোটি তাঁর কথাতেই তুলে ধরছি। তিনি থাকেন লস অ্যাঞ্জেলেসের এক পাহাড়-চূড়ায়। সেই নির্জনতায়, আকাশ ধ্যানে মগ্ন থাকেন তিনি। সেই বাড়িতে আমি থেকেছি। তাঁকে জেনেছি তাঁর কসমিক-চর্চার আলোর মধ্যে! (Mani Lal Bhaumik)

‘এটা বিজ্ঞানসম্মত সত্য এবং আমি আমার জীবনে সেই সত্যের প্রমাণ পেয়েছি যে ধ্যান বা মেডিটেশন সত্যিই আমাদের এক বিমূর্ত সর্বব্যাপী সত্তার আলোর সঙ্গে যুক্ত করে। এবং চেতনার এই অদৃশ্য আলো, আজকের বিজ্ঞান বলছে, পার্টিসিপেটরি। অর্থাৎ এই আলো চাইছে এই বিশ্বলীলায় আমরা অংশগ্রহণ করি। তাহলে চেতনার আলো সাড়া দেবে! আলোক দিবসে যেন আমরা এই বিশ্বব্যাপী চেতনার আলোর সঙ্গে মিলিত হতে পারি। মনে রাখতে হবে, চেতনার আলোর একটাই উৎস। দ্য ইউনিফায়েড ফিল্ড! (Mani Lal Bhaumik)
আলোক-দিবসে বাঙালির কাছে বিজ্ঞানের এই নতুন আলোটুকু পাঠালাম, যে- আলোয় মিলিত হচ্ছে ‘বৈদিক বিশ্বদর্শন।’
একবার যদি আমরা কেউ আলোক-উৎসবের দিনে বিশ্বব্যাপী বিস্তারিত চেতনার আলোর সঙ্গে ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারি, তাহলে আমরা বুঝতে পারবই সামহাউ কনশাসনেস ইন ইনভলভড্ ইন দ্য লস অফ দ্য ইউনিভার্স। দর্শন ও বিজ্ঞান ক্রমশ হয়ে উঠছে পরস্পরের পরিপূরক। এটাই আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্য। আলোক-দিবসে বাঙালির কাছে বিজ্ঞানের এই নতুন আলোটুকু পাঠালাম, যে- আলোয় মিলিত হচ্ছে ‘বৈদিক বিশ্বদর্শন।’ (Mani Lal Bhaumik)
স্কটিশ চার্চ কলেজে ইংরেজি-সাহিত্যের লেকচারার হিসাবে পেশাদার জীবন শুরু, পরে বাংলার প্রথম সারির দৈনিকেও নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে ‘কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট’, ‘গিরিশ ও বিবেকানন্দ’, ‘প্রাণসখা বিবেকানন্দ’, ‘নায়ক রবি’ পাঠকদের কাছে সাদরে সমাদৃত।
একেবারে সাম্প্রতিক কালে লেখা রঞ্জনের 'রোববার লাইব্রেরি খোলা',
'মায়াবী টেবিল', 'গদ্য সমগ্র(৩ খন্ড)', 'অবৈধ নিষিদ্ধ', 'উদভ্রান্ত ভালবাসার সর্বনাশ,'
'অখন্ড কাদম্বরী', 'একটি গোলাপি ও একটি বাদামি নায়িকার কাহিনি' এবং আত্মজীবনী 'আমার জীবন রঙের তাস' পাঠক মহলে সাড়া ফেলেছে।