(Herge)
আগের পর্ব- [১], [২], [৩], [৪], [৫]
টিনটিন স্রষ্টা জর্জ রেমি বা অ্যার্জে মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন?
আদতে তাঁর সৃষ্টির মতোই জর্জ রেমির জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে রহস্য রোমাঞ্চ। ক্ষুদে বেলজিয়াম রিপোর্টারের মতো তাঁরও ছিল অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। পাহাড় জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই নেশার কারণেই। আর রহস্য তো আদতে জর্জ রেমির অদৃশ্য মধ্য নাম হতেই পারে। রহস্যের মোড়কেই তাঁর জীবন, এক রোলার কোস্টার। যে টিনটিন কাহিনি রেমিকে দেশের সবচেয়ে বড় সেলিব্রটি বানিয়েছে, সেই সৃষ্টির জন্যই, তিনি দেশদ্রোহী হিসাবে নিন্দিত হয়েছেন, দিনের পর দিন পুলিশি জেরার মুখে পড়েছেন, দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দেওয়ালে পোস্টার পড়েছে, কারাবাস পর্যন্ত করেছেন। তাই জর্জেস রেমির জীবন নিজেই এক রোমাঞ্চকর থ্রিলারের চেয়ে কম কিছু নয়। (Herge)
টিনটিন কাহিনির এই পর্বে এসে বরং এক অন্ধকার সময়ে ব্যক্তি অ্যার্জেকেই আতস কাচের তলায় ফেলা যাক।
শুরু হল টিনটিন স্রষ্টার জন্মদিন ২২শে মে তে সেই অন্ধকার সময়ে নিজের লড়াইয়ের কাহিনি… (Herge)

মধ্যরাতের কড়ানাড়া
ঠক ঠক ঠক।
সজোরে কড়া নাড়ার শব্দ।
সঙ্গে সমবেত কণ্ঠের চিৎকার– “রেমি বাড়ি আছ?”
ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪। মধ্যরাত। অ্যার্জে নিজেই দরজা খুললেন। গায়ে রাতের পোশাক। বিছানা থেকে উঠে এসেছেন তিনি। (Herge)
দরজা খুলেই দেখলেন কিশোর, তরুণ, মধ্যবয়স্ক মিলে জনা দশ বারো লোক। রাস্তার আলোতে সব মুখগুলো না বোঝা গেলেও কয়েকজনকে চেনাই লাগল অ্যার্জের। (Herge)
টিনটিন স্রষ্টা কিন্তু জানেন এরা কারা। কেন এসেছে। কী জানতে চায়। কী প্রশ্ন করবে। (Herge)
গত এক বছর ধরে তিনি এই মুহূর্তটারই মুখোমুখি হওয়ার রিহার্সাল দিয়ে আসছেন মনে মনে। তবু যতটা পারা যায় নিজেকে শান্ত রেখে মুখোমুখি দাঁড়ালেন জনতার। শান্ত কণ্ঠে বললেন, “আমিই জর্জ রেমি। বলুন আপনাদের জন্য কী করতে পারি?”
শান্ত অ্যার্জেকে দেখে একটু থমকেই গেল জনতা। একজন মাঝবয়সী এগিয়ে এলেন, “আমরা স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীর লোক। আপনার সঙ্গে কথা বলার দরকার।” (Herge)
শুরু হয় বেলজিয়ামে জার্মান শাসন যা চলে ১৯৪৪ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যখন ২য় ব্রিটিশ সেনা ডিভিশন বেলজিয়াম মুক্ত করে। অ্যার্জে শুনেছিলেন জার্মান শাসনের এই চার বছরে দেশের ভিতরে ও বাইরে বহু প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে ওঠে। তিনি বুঝলেন এই মধ্যরাতের আগন্তুকরা নিশ্চয়ই এইরকমই কোনও গোষ্ঠীর প্রতিনিধি।
এবার অ্যার্জে বুঝলেন কেন এদের চেনা মনে হচ্ছে। ব্রাসেলসের যে অঞ্চলে তিনি থাকেন, এরা সেই অঞ্চলেরই বাসিন্দা। ১৯৪০ সালের ১০মে জার্মানরা বেলজিয়াম আক্রমণ করে। ওই মাসের ২৮ তারিখে বেলজিয়াম সেনা আত্মসমর্পন করে। শুরু হয় বেলজিয়ামে জার্মান শাসন যা চলে ১৯৪৪ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যখন ২য় ব্রিটিশ সেনা ডিভিশন বেলজিয়াম মুক্ত করে। অ্যার্জে শুনেছিলেন জার্মান শাসনের এই চার বছরে দেশের ভিতরে ও বাইরে বহু প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে ওঠে। তিনি বুঝলেন এই মধ্যরাতের আগন্তুকরা নিশ্চয়ই এইরকমই কোনও গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। (Herge)
(পরে অ্যার্জে জেনেছিলেন এইসব প্রতিরোধ গোষ্ঠীর লোকদের যুদ্ধের পরে কাজ হল জার্মান শাসনকালে তাদের বেলজিয়াম সহযোগীদের খুঁজে বার করে চিহ্নিত করা। যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই প্রতিরোধ বাহিনী ‘গ্যালারি অফ ট্রেইটরস’ নামে এক পুস্তিকাও বার করে যেখানে সন্দেহভাজন নাৎসি সহযোগীদের ছবি আর ঠিকানা সহ বিবরণ থাকে। সেখানে টিনটিন স্রষ্টার নাম দু’বার ছবি ঠিকানা সহ রয়েছে। একবার জর্জেস রেমি নামে, অন্যবার অ্যার্জে নামে। দু’জায়গাতেই লেখা হল ‘ডি বেকারের মতো কুখ্যাত নাৎসির সঙ্গে কাজ করেছে এই লোক। নাৎসি পরিচালিত লা সয়ের কাগজেও কাজ করেছে। এর সম্বন্ধে বিশদ তথ্য না মিললেও একে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে। এখানেই শেষ নয়। পুস্তিকাতে বলা হল এই সব দেশদ্রোহীর অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তাই প্রতিরোধী জনতা এদের নির্দয়ভাবে শাস্তি দেবে। হ্যারি থম্পসন তাঁর ‘টিনটিন-অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশনে লিখছেন “এই পুস্তিকা অ্যার্জের গোচরে আসার পর থেকেই রেমি পরিবার এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকে। তবে অ্যার্জে পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। তাই মধ্যরাতে যখন তাঁর বাড়ির দরজায় কড়াঘাত পড়ল তখন ‘যা হয় হবে’ মনোভাব নিয়েই জনতার মুখোমুখি দাঁড়ালেন) (Herge)

“আপনি তো জার্মানদের হয়ে প্রচার করতেন।”
চমক ভেঙে অ্যার্জে দেখলেন ভিড়ের মধ্য থেকে এক সদ্য তরুণ সামনে এসে তাঁর দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করছে।
অ্যার্জে জানতেন এই প্রশ্নটা তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হবে। নিজেকে সহস্রবার মহড়া দিয়েছেন এই প্রশ্নের উত্তরে, তিনি কী বলবেন। শান্তভাবে তাই বলা শুরু করলেন। (Herge)
“আমি তো ভাই ছোটদের জন্য চিত্রকাহিনিকার। আর টিনটিন তো ১৯২৯ সাল থেকে বেরোচ্ছে। টিনটিনের কোনও কাহিনিতে তো জার্মানদের সমর্থনে কিছু লেখা হয়নি। বরং দেশে দেশে সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে টিনটিন লড়াই করেছে। ‘দ্য ব্লু লোটাস’ এ জার্মানদের দোসর জাপানিদের মুখোস খোলা হয়েছে। চিনে কী ভয়াবহ অত্যাচার জাপানিরা চালিয়েছে তা টিনটিন নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেখিয়েছে। এই চিত্রকাহিনি বাদে আর তো কোথাও কিছু লিখিনি বা করিনি। আর কোন দুঃখে জার্মান হানাদারদের সমর্থন করতে যাব? প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আর্থিক দুরাবস্থা থাকতেও আমার বাবা মা জার্মানদের সমর্থন করেননি। আমিই বা এখন করতে যাব কেন?” (Herge)
অ্যার্জে যখন বলা শুরু করেছিলেন তখন জটলার মধ্যে মৃদু গুঞ্জন ছিল। যখন বক্তব্য শেষ করলেন তখন জটলা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে। তবু নব্য যুবক শেষ চেষ্টা করল, “তাহলে জার্মান মালিকানাধীন লা সরে কাগজে কাজ করছিলেন কেন?”
অ্যার্জে যখন বলা শুরু করেছিলেন তখন জটলার মধ্যে মৃদু গুঞ্জন ছিল। যখন বক্তব্য শেষ করলেন তখন জটলা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে। তবু নব্য যুবক শেষ চেষ্টা করল, “তাহলে জার্মান মালিকানাধীন লা সরে কাগজে কাজ করছিলেন কেন?”
এর উত্তরও অ্যার্জের তৈরিই ছিল-তিনি বলতে শুরু করলেন- “যুদ্ধের শুরুতে আমি আর আমার স্ত্রী জার্মাইন ফ্রান্সে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের রাজা তৃতীয় লিওপোল্ড ১৯৪০ সালের ২৮মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে বিদেশে চলে যাওয়া বেলজিয়ামবাসীকে দেশে ফিরতে বললেন। সেই মতো মাসখানেক বাদে ৩০শে আমি সস্ত্রীক দেশে ফিরে এলাম। এসে দেখলাম সব কিছুই পাল্টিয়ে দিয়েছে। রাজা তৃতীয় লিওপোল্ডকে ল্যাকেন দুর্গে বন্দি করে বেলজিয়াম শাসন করছে জার্মান জেনারেল আলেকজান্দার ভন ফাল্কেনহাউসেন। পুরো দেশটাকে জার্মান যুদ্ধে রসদ জোগানদারের ভূমিকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বিন্দুমাত্র জার্মান বিরোধিতা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে। আমি যে কাগজে কাজ করতাম সেই ল্য ভ্যামসিয়েম সেঁকনা আর তার শিশুদের জন্য ক্রোড়পত্র ল্য পিতি ভ্যামসায়েমা দুটোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। (Herge)
অর্থাৎ যুদ্ধের বাজারে বেকার হয়ে পড়লাম। তখনই লা সয়ের থেকে চাকরির প্রস্তাব আসে। লা সয়ের দেশের সবচেয়ে বড় কাগজগুলোর মধ্যে অন্যতম। পেটের দায় বড় দায়। তাই উপায়ান্তর না দেখে চাকরিটা নিয়ে নিলাম। কিন্তু জার্মানদের হয়ে কোনও পোস্টার আঁকা বা নাৎসিদের হয়ে কোনও সভায়, মিছিলে যাইনি। আমার কাজ ছিল চিত্রকাহিনি তৈরি করা। ব্যস সেটাই করেছি একমনে। এবার বুকে হাত দিয়ে বলুন আমার মতো অসহায় অবস্থায় পড়লে আপনারা কী করতেন?”
এমনিতেই বিশ্ববিশ্রুত শিল্পীর সঙ্গে এভাবে ব্যবহার করতে জনতার খারাপই লাগছিল। তারপর অ্যার্জের করুণ কাহিনি শুনে জনতা বিচলিতও হল। এই নির্মম যুদ্ধ সবাইকেই তো তীব্র যন্ত্রণা আর কষ্ট দিয়েছে, কত প্রিয়জনকে হারিয়েছে তারা।
জনতা আর বিশেষ কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল, “পুলিশ হয়তো আসতে পারে।” (Herge)

ঠিকই, এসেছিল। একবার নয়, তিন তিন বার। বেলজিয়াম ন্যাশনাল মুভমেন্ট নামে এক প্রতিরোধ গোষ্ঠী এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে গেল। তারপর একে একে এল স্টেট সিকিউরিটি আর জুডিসিয়ারি পুলিশ। দুই দফাতেই শিল্পীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতারও করা হল। কিন্তু জার্মানির হয়ে অ্যার্জের কোনও প্রচারের প্রমাণ তো নেই। ফলে গ্রেফতার করেও শিল্পীকে ছেড়ে দেওয়া হল। (Herge)
নিষেধাজ্ঞা আর দুঃস্বপ্ন
তারিখটা ছিল ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। অ্যার্জে ভাবলেন ফাঁড়া কাটল। কিন্তু তাঁর ভুল ভাঙতে ২৪ ঘণ্টাও লাগল না। মিত্রপক্ষের এক ঘোষণা প্রচারিত হল ৮ সেপ্টেম্বর যাতে বলা হল জার্মান শাসনকালে যেসব সাংবাদিক আর আলোকচিত্রী নাৎসি মদতপুষ্ঠ কাগজ, পত্রিকা বার করতে সহায়তা করেছে তাদের সবাইয়ের স্ব স্ব ক্ষেত্রে কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। অর্থাৎ আপাতত টিনটিন আঁকতে পারবেন না অ্যার্জে। (Herge)
সিয়ান লি তাঁর ‘দ্য ইন্সপিরেশন বিহাইন্ড টিনটিন-দ্য রিয়েল অ্যার্জে’-তে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুদ্ধশেষে যে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন সেই শঙ্কা কিন্তু অ্যার্জের মনে প্রথম থেকেই ছিল। সিয়ান লি লিখছেন, ১৯৪০ সালে জুন মাসে দেশে ফিরে অ্যার্জে যখন দেখলেন যে কাগজে কাজ করতেন সেই ল্য ভ্যামসিয়েম সেঁকনা আর তার শিশুদের জন্য ক্রোড়পত্র ল্য পিতি ভ্যামসায়েমা দুটোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বারংবার চেষ্টা করেও তা খোলা গেল না তখন অকূলপাথারে পড়লেন। ঠিক সেই সময় সেপ্টেম্বর মাসে লা সেয়র তাঁকে কাগজে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিল। (Herge)
সিয়ান লি তাঁর ‘দ্য ইন্সপিরেশন বিহাইন্ড টিনটিন-দ্য রিয়েল অ্যার্জে’-তে পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুদ্ধশেষে যে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন সেই শঙ্কা কিন্তু অ্যার্জের মনে প্রথম থেকেই ছিল।
সাধারণভাবে এতে অ্যার্জের মতো বেকার হয়ে পড়া শিল্পীর হাতে চাঁদ পেয়ে যাওয়ার কথা। কারণ লা সয়ের তখন বেলজিয়ামের বৃহত্তম কাগজ, বিপুল গ্রাহক সংখ্যা। অর্থ্যাৎ সেখানে টিনটিন বেরোলে মোটামুটি সারা বেলজিয়াম পড়বে। কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকারও আছে। মূলত এই কাগজ রোসেল পরিবারের মালিকাধীন কিন্তু জার্মান হানাদারদের ভয়ে তারা তখন দেশছাড়া। এখন জার্মানরা কাগজটা দখল করে নতুন করে বার করছে। কাগজের মাথায় বসিয়েছে বিতর্কিত নাৎসি সমর্থক বেলজিয়াম সাংবাদিক রেমন্ড ডি বেকারকে। (Herge)
ঠিক এখানেই খচখচ করছিলেন অ্যার্জে। এই সরাসরি জার্মান সংযোগ যে তাঁকে পরবর্তীকালে ভোগাতে পারে তা কিন্তু শিল্পীর অবচেতন মনে ছিল। কিন্ত কাজের এত বড় সুযোগ হাতছাড়াও করতে চাননি। নিজেকে বোঝালেন রাজার কথাতেই তো তিনি বেলজিয়ামে ফিরে এসেছেন। আর কাজ তো শিশু কিশোরদের অ্যাডভেঞ্চার চিত্রকাহিনি আঁকা, যার মধ্যে জার্মান প্রচারের নামগন্ধ নেই। এই সব সাত পাঁচ ভেবে সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে কাজে মন দেন অ্যার্জে। ‘দ্য ক্র্যাব উইথ গোল্ডেন ক্লস’, ‘দ্য শুটিং স্টার’, ‘দ্য সিক্রেট অফ দ্য ইউনিকর্ন’, ‘রেড রেকহ্যামস ট্রেজার’ এর মতো একের পর এক অনবদ্য ক্লাসিক বার হয় লা সেয়রে। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হল না। (Herge)

যুদ্ধ যখন শেষের দিকে তখন লন্ডনে বসে প্রবাসী বিপ্লবীরা জার্মান সমর্থকদের তালিকাও বানান। অ্যার্জে ছিলেন সেই তালিকায়। বেলজিয়ামে জার্মান সহযোগীদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা হয়। অ্যার্জের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া শুরু হয়।
তবে ৮ সেপ্টেম্বর কাজে নিষেধাজ্ঞার পরই আসল দুঃস্বপ্নের শুরু। পরদিন জুডিসিয়ারি পুলিশ তাঁর বাড়িতে হানা দিল। তন্ন তন্ন করে অ্যার্জের বাড়ি তল্লাশি করা হল। কিন্তু আপত্তিজনক কিছুই পাওয়া গেল না। শিল্পীকে ধরে নিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল। পাক্কা তিন দিন বাদে অ্যার্জে ছাড়া পেলেন। (Herge)
তাতেও কি রক্ষা আছে? দিন তিনেক বাদে প্রতিরোধ বাহিনী বেলজিয়ান ন্যাশানাল মুভমেন্টের সদস্যরা মেশিন গান হাতে অ্যার্জের বাড়ি ঘিরে ফেলল। ফের চলল টানা জিজ্ঞাসাবাদ।
তাতেও কি রক্ষা আছে? দিন তিনেক বাদে প্রতিরোধ বাহিনী বেলজিয়ান ন্যাশানাল মুভমেন্টের সদস্যরা মেশিন গান হাতে অ্যার্জের বাড়ি ঘিরে ফেলল। ফের চলল টানা জিজ্ঞাসাবাদ। খানিকটা ব্যর্থ মনোরথ হয়েই মিলিশিয়া বাহিনী ফিরে গেল। এর দু’দিন বাদে হাজির ‘ফ্রন্ট ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ নামের প্রতিরোধ গোষ্ঠীর লোকজন। ফের আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ।
অপমান অন্যভাবেও করা হল। বিপ্লবীদের কাগজ লা পেত্রিতে বেরলো ‘দ্য অ্যডভেঞ্চার্স অফ টিনটিন ইন দ্য ল্যান্ডস অফ নাজিস’ নামে কমিকস ধারাবাহিক যাতে অ্যার্জেকে দেখানো হল নাৎসি সমর্থক হিসাবে। (Herge)
“ফের জীবন শুরু করলেও টিনটিন থাকবেই”
জীবন থেমে থাকে না। কিছুদিন পরে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অ্যার্জে তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করালেন। এরপর নয় নয় করে এক ডজন টিনটিন কাহিনিও রচনা করলেন। তবে এই অধ্যায় তাঁর জীবনে পাকাপাকিভাবে ছাপ ফেলেছিল। থম্পসন আর লি দু’জনেই একমত যে, অল্পের উপর অ্যার্জে বেঁচে গিয়েছেন। একই কাগজে কাজ করার জন্য শিল্পীর অনেক সহকর্মী ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রাণ হারিয়েছেন, দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়েছে। ১৯৭৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে অ্যার্জে স্বীকারও করেন যুদ্ধের সময় তিনি নির্বোধের মতো কাজ করেছেন। গুরু পাপে লঘু দণ্ড হয়েছে তাঁর। তবে তাঁর মৃত্যুর পর বহু বিপ্লবী স্বীকার করেন আমৃত্যু অ্যার্জে গোপনে তাঁদের সাহায্য করে গিয়েছেন। (Herge)
থম্পসন লিখছেন, “টিনটিন না থাকলে জর্জেস রেমির জীবন অনেক সহজ সরল হত। কিন্তু অ্যার্জে বলেছেন সমস্যার জন্য তাঁর কোনও দুঃখ নেই। ফের জীবন শুরু করতে দিলে টিনটিনকে ফের আনবেন তিনি।” (Herge)
তথ্যসূত্র:
(১) টিনটিন অ্যার্জে অ্যান্ড হিজ ক্রিয়েশন-হ্যারি থম্পসন,
(২) দ্য রিয়েল অ্যার্জে-সিয়ান লি
ছবি সৌজন্য- টিনটিন ডট কম
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে