(Short Story)
কতক্ষণ সে হেঁটেছে এবং হাঁটতে হাঁটতে এই প্রান্তে চলে এসেছে নিজেরই খেয়াল নেই। এখানে রাস্তাটা ঝকঝকে, মসৃণ, ভারি পরিচ্ছন্ন। কোথাও আবর্জনা জমে নেই। এমনকী এতটুকু ধুলোবালি বা এক কুচি বাজে কাগজও চোখে পড়ে না। রাস্তার দু’ধারে মহার্ঘ্য গাছের সারি। (Short Story)
পাতাগুলো তীব্র সবুজ। এইসব গাছ অজস্র ফুলে ছেয়ে আছে। সেগুলোর মাথায় কলরোল তুলে, ডানার নানা রঙের ফোয়ারা ফুটিয়ে উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। পাখি বা গাছ কোনোটাই সে চেনে না। রাস্তাটা ডানদিকে কাচের মতো স্বচ্ছ জলের বিশাল সরোবর। সেখানে কত যে জলপদ্ম। রাস্তায় বাঁ-ধারে অনেকখানি জমির মাঝখানে প্রাসাদের মতো থামওয়ালা বাড়ির পর বাড়ি। এমন সব রাজকীয় ইমারত আগে কি কখনও সে দেখেছে? আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল- না, দেখেনি। এই এলাকাটাও তার সম্পূর্ণ অচেনা। (Short Story)

বিকেল পেরিয়ে গেছে খানিক আগেই। সূর্যটাকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার শেষ ফিকে রশ্মিটুকু আকাশের গায়ে আবছা আবছা লেগে আছে, হঠাৎ লজ্জা-পাওয়া কোনও কিশোরীর লালচে মুখের মতো। রাস্তার বাতিস্তম্ভের মাথার ছ-কোনা কাচের আধারে আলো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। বাঁদিকের বাড়িগুলোতে একইরকম আলো। প্রখর নয়, হালকা নীলাভ। যতদূর চোখ যায় গাছপালা, সরোবর, আকাশ, নরম আলো- সব মিলিয়ে আশ্চর্য মায়াময়। দক্ষিণ দিক নির্মল বাতাস, অদৃশ্য মৃদু স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা, আরামদায়ক এই হাওয়া না থাকলে সমস্ত পরিবেশটায় যেন খুঁত থেকে যেত। (Short Story)
সে ঘোরের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছিল। চারিদিক নির্জন। লোকজন দেখা যাচ্ছে না। যানবাহন নেই। তাই কোনওরকম আওয়াজও নেই। নিঃশব্দ, নিরিবিলি এমন একটা ভূখণ্ড যে পৃথিবীর কোথাও থাকতে পারে, তার জানা ছিল না। একটা বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই প্রকাণ্ড গেট খুলে ধবধবে উর্দিপরা দারোয়ান লম্বা সেলাম ঠুকে ডাকল, ‘হুজুর-‘… (Short Story)
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে সে; হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। দারোয়ানটি মাঝবয়সি। ছ-ফিটের মতো হাইট, শিরদাঁড়া টানটান। লম্বাটে মুখ, যত্ন করে ছাঁটা দাড়িতে মেহেন্দি, চোখে সুরমা। মাথায় পাগড়ির মাঝখানে চুড়োর মতো উঁচু হয়ে আছে সবুজ কাপড়ের কুঁচি। (Short Story)
দারোয়ানটি কেতাদুরস্ত। চোস্ত জবানে সসম্ভ্রমে বলে, ‘অন্দর চলিয়ে’- খানিকটা ঝুঁকে দু’হাত নেড়ে বাড়ির ভেতর দিকটা দেখিয়ে দেয়। (Short Story)
সে উত্তর দেয় না।
দারোয়ানটি একলহমায় তাঁকে লক্ষ্য করে। তারপর বলে, ‘আপনি কি আমাকে পহচানতে
পারছেন না? আমি আনোয়ার হোসেন। আপনাদের বান্দা।’
আনোয়ার হোসেন। এমন নাম সে কখনও শোনেনি। কী জবাব দেবে, ভেবে পায় না।
আনোয়ার হোসেন ফের বলে, ‘চলিয়ে হুজুর-‘ তার কণ্ঠস্বরে আগের সেই সম্ভ্রম।
এবার সে জিজ্ঞেস করে, ‘ভেতরে যেতে বলছেন কেন?’
আনোয়ার বলে, ‘মেমসাহেব আপনার জন্যে সেই দু-পহর থেকে ইন্তেজার করছেন।’
মাথার ভেতরটা এবার পুরোপুরি গুলিয়ে যায় তাঁর। হতভম্বের মতো জানতে চায়, ‘মেমসাহেব কে? আমার জন্য অপেক্ষা করছেন কেন?’
মাথার ভেতরটা এবার পুরোপুরি গুলিয়ে যায় তাঁর। হতভম্বের মতো জানতে চায়, ‘মেমসাহেব কে? আমার জন্য অপেক্ষা করছেন কেন?’
আনোয়ারের দাড়ির ফাঁকে চিকন একটু হাসি ফুটে উঠেই চকিতে মিলিয়ে গেল। সে যা বলে, তা এইরকম— হুজুর যা প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর দেওয়া তার পক্ষে বেয়াদবি বলেই চঞ্চল হয়ে ওঠে, ‘আইয়ে- আইয়ে-‘
যাবে কী যাবে না, ভেবে উঠতে পারে না সে। তার জন্য কি কোনও ফাঁদ পাতা হয়েছে?
সংশয়ের যে বুদ্বুদগুলি মনের ভেতর ফুটে উঠেছিল, প্রবল এক কৌতূহল এক ধাক্কায় সে সব সরিয়ে তাকে যেন টানতে টানতে গেটের ওধারে নিয়ে যায়। (Short Story)
বাড়িটা উঁচু কম্পাউন্ড-ওয়াল দিয়ে ঘেরা। ভেতরে পা দিয়েই সে দেখতে পায় বিল্ডিংয়ের সামনের দিকে একধারে গোলাপবাগান। কত রঙের যে গোলাপ- সাদা, টকটকে লাল, ফিকে হলুদ। পুরো বাগানটা যেন মস্ত এক গোলাপের তোড়া। বাগানের চারকোণে চারটে পাথরের পরী। গোলাপের সুগন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। যেদিকে বাগান, তার উলটোদিকে ফাঁকা জায়গায় সাত-আটটা আমিরি গাড়ি। এমন গাড়ি সে জন্মেও দেখেনি। (Short Story)
তাছাড়া আছে ফিটন এবং একজোড়া তেজি ওয়েলার ঘোড়া। আস্তাবলে বাঁধা ঘোড়া দু’টো অস্থিরভাবে পা ঠুকছিল। একদিকে গোলাপবাগান, আরেকদিকে গাড়ি আর ঘোড়া। মাঝখান দিয়ে নুড়ির পথ। পথের গায়ে বাইরের রাস্তার মতো বাতিস্তম্ভের মাথায় কাচের খোপে নীলচে আলো। আনোয়ার তার পেছনে পেছনে হেঁটে চলেছে। (Short Story)
পথটা যেখানে গিয়ে ঠেকেছে সেখানে শ্বেতপাথরের চওড়া চওড়া সিঁড়ি। ওপরে উঠতেই মস্ত চবুতরে মোটা মোটা থাম। চবুতর পেরোতেই কাচ এবং বর্মা টিকের নকশা-করা দরজা। দরজা খোলা ছিল। আনোয়ার তাকে একতলায় নিয়ে আসে। একটা মস্ত হলঘর ঘিরে অগুণতি বেডরুম। পুরো মেঝে জুড়ে পুরু কাশ্মীরি কার্পেট। সিঁড়ি থেকে বেশ কটা ঝাড়লণ্ঠন ঝুলছে। এপাশে-ওপাশে চার-পাঁচ সেট ভারী ভারী সোফা সেট। তাছাড়া নানা আকারের ক্যাবিনেট। (Short Story)
হলঘরের ডানপাশে ওপরে ওঠার ঘোরানো সিঁড়ি। এই সিঁড়িগুলোও শ্বেতপাথরের। রেলিং কিন্তু কাঠের; তার ওপর চকচকে পেতলের পাত বসানো। সিঁড়িটা আগাগোড়া লাল কার্পেটে মোড়া।
আনোয়ার তাকে সিঁড়ির কাছে নিয়ে আসে। বলে, ‘ওপরে যান হুজুর। মেমসাহেব ওখানেই আছেন।’
সে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি যাবেন না।’
আনোয়ার আস্তে মাথা নাড়ে। তার ওপরে যাওয়ার হুকুম নেই। (Short Story)
কিছুক্ষণ ইতস্তত করল সে। তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভাঙতে লাগল। একদিকে অজানা শঙ্কা, অন্যদিকে দুরন্ত আকর্ষণ। দু’ইয়ের মাঝখানে পড়ে গেছে সে। কিন্তু ওপরে গিয়ে কী দেখবে? আনোয়ার বলেছে, কোনও এক মেমসাহেব তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।
কিছুক্ষণ ইতস্তত করল সে। তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভাঙতে লাগল। একদিকে অজানা শঙ্কা, অন্যদিকে দুরন্ত আকর্ষণ। দু’ইয়ের মাঝখানে পড়ে গেছে সে। কিন্তু ওপরে গিয়ে কী দেখবে? আনোয়ার বলেছে, কোনও এক মেমসাহেব তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। মেমসাহেব যখন নিশ্চয়ই মহিলা? কত বয়স? কী নাম? কেনই বা তাঁর প্রতীক্ষায় রয়েছে? সবটাই যেন অপার রহস্য। (Short Story)
এক-একটা সিঁড়ি ভেঙে সে যতই উঠছে, হৃদপিন্ডের ককানি ততই বেড়ে চলেছে। হঠাৎ তাঁর মনে হয় আনোয়ার হয়তো গোলমাল করে ফেলেছে।
অবিকল তাঁরই মতো দেখতে কারুর আসার কথা ছিল, ভুল করে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসেছে।
একবার পিছনে ফিরে তাকায় সে। সিঁড়ির তলায় আনোয়ার নেই, কখন নিঃশব্দে উধাও হয়ে গেছে, টের পাওয়া যায়নি। (Short Story)
সে একবার ভাবল, ঊর্ধ্বশ্বাসে নেমে এই বিশাল ইমারত থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু প্রবল নিয়তি তাঁকে যেন সামনের দিকে টানতে লাগল। সে বুঝতে পারছে নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কিছুই করা যাবে না।
সে একবার ভাবল, ঊর্ধ্বশ্বাসে নেমে এই বিশাল ইমারত থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু প্রবল নিয়তি তাঁকে যেন সামনের দিকে টানতে লাগল। সে বুঝতে পারছে নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কিছুই করা যাবে না। তাঁকে ওপরে উঠতেই হবে। একটা বাঁক ঘুরে আরও খানিকটা ওঠার পর চোখে পড়ল দোতলার সিঁড়ি যেখানে শেষ, ঠিক সেইখানে এক তরুণী দাঁড়িয়ে। পাথর কেটে তৈরি যেন অলৌকিক এক ভাস্কর্য। গোলাপবাগানে যে পরীগুলো রয়েছে হুবহু তেমনই। তরুণীর গায়ের রং গোলাপি। শাড়ি এবং ব্লাউজ একই রঙের। তবে পিঠ-ছাপানো চুল এবং চোখের মণি দুটি কালো। তাঁর কানের দুলে, আংটিতে, গলার চেনের লকেটে হীরে বসানো। পায়ের হালকা চটি, পাখির পালক দিয়ে বানানো কি? নিশ্চল মূর্তির মতো পলকহীন তাকিয়ে আছে মেয়েটি। (Short Story)
নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সে। এমন পরমাশ্চর্য তরুণী আগে কখনও দেখেনি। তার শ্বাসক্রিয়া পলকের জন্য থমকে যায়। পরক্ষণে টের পাওয়া গেল তাঁর হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে হাজারটা ঘোড়া ঝড় তুলে ছুটে চলেছে। (Short Story)
প্রথমে মনে হয়েছিল মেয়েটি জীবন্ত নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর মুখে হাসি ফুটে ওঠে-নীরব, স্নিগ্ধ এবং মোহময়। পাপড়ির মতো ঠোঁট সামান্য দ্বিধাবিভক্তি হয়ে মুক্তোর সারি দেখা দেয়। মেয়েটির দাঁত।
স্বপ্নাবিষ্টের মতো সে তাকিয়ে আছে, তাকিয়েই আছে। এমন সুন্দর, সুচারু হাসি আগে কখনও দেখেনি।
তরুণী বলল, ‘কী হল, দাঁড়িয়ে রইলে যে! উঠে এসো-‘
“আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল কাশ্মীরে। ডাল লেকে দুটো শিকারায় আমরা কয়েকদিন ছিলাম। তারপর চলে গিয়েছিলাম পহেলগাঁওয়ে। সেখানে লিডার নদীর ধারে দুটো লগ-কেবিনে এক সপ্তাহ কাটিয়েছি। তুমি বঁড়শি দিয়ে ট্রাউট মাছ ধরতে, আমি কাছে বসে থাকতাম। তখন থেকে প্রত্যেক বছর আমরা বেড়াতে যেতাম- সিমলায়, কন্যাকুমারীতে, গোয়া, পণ্ডিচেরি বা কোভালাম বিচে। তুমি, আমি দুজনেই বুঝতে পারছিলাম, আমরা কী চাই।”
এসরাজে হালকা ছড় টানার মতো সুরেলা কণ্ঠস্বর। সেই নিয়তি ফের তাকে টেনে নিয়ে চলল। একতলার মতো দোতলাতেও একইরকম হলঘর। এখানকার কার্পেট আরও পুরু, আরও দামি। পা ফেললে অনেকটা ডুবে যায়। ঝাড়লণ্ঠনগুলো আরও উজ্জ্বল। একতলায় যা নেই এখানে তেমন আরও কিছু আছে। দেওয়ালে নানারকম পেন্টিং, ব্রোঞ্জ, তামা এবং পেতলের দুষ্প্রাপ্য কিউরিও, টবে টবে অগুণতি বনসাই আর অর্কিড। এককোণে বিরাট গ্র্যান্ডফাদার ক্লক। একটা পিয়ানোও রয়েছে। হলঘরটা ঘিরে একতলায় যেমন দেখা গেছে তেমনি সারি সারি বেডরুম। সেগুলোর কোনোটার দরজা আখোলা, কোনোটার পুরোপুরি খোলা। ভেতরে কারুকাজ-করা খাটে দুধের ফেনার মতো বিছানা, সিলিং অবধি উঁচু উঁচু আলমারি বা ড্রেসিং টেবিলের একটু-আধটু অংশ চোখে পড়ে। (Short Story)
তরুণী তাঁকে হলঘরের মধ্যিখানে সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতিটার তলায় যেখানে এক সেট সোফা সাজানো, সেখানে নিয়ে এল। বলল, ‘বোসো-‘
কোনওরকমে কুঁকড়ে-মুকড়ে সোফার এক কোণে বসে পড়ল সে। তরুণী সেন্টার টেবিলের ওধারে তাঁর মুখোমুখি বসল। হেসে হেসে বলল, ‘এত জড়সড়ো হয়ে আছ কেন। তুমি কি আগে কখনও এ বাড়িতে আসোনি? আমাকে দেখোনি? ‘সে চমকে ওঠে। ঢোঁক গিলে বলে, ‘না মানে-আমি। (Short Story)’
তরুণী বলল, ‘হয়তো এবার বলবে আমার নামটাও ভুলে গেছ। ঠিক আছে, মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমি মালিনী।’
এমন নাম আগে কখনও সে শুনেছে কি? আবছা গলায় সে কিছু একটা বলল যা তাঁর নিজের কানেই দুর্বোধ্য ঠেকল। তরুণী অর্থাৎ মালিনী ভুঁরুতে ভাঁজ ফেলে মজার একটা ভঙ্গি করল।
এমন নাম আগে কখনও সে শুনেছে কি? আবছা গলায় সে কিছু একটা বলল যা তাঁর নিজের কানেই দুর্বোধ্য ঠেকল। তরুণী অর্থাৎ মালিনী ভুঁরুতে ভাঁজ ফেলে মজার একটা ভঙ্গি করল। ‘তোমার নিজের নামটা মনে আছে তো?’ (Short Story)
সে থতমত খেয়ে গেল। কোনওরকমে বলল, ‘আমার নাম- আমার নাম-‘
‘নিজের নামটা মনে করতে পারছ না।’ আচমকা মালিনী কলকল করে হেসে ওঠে। সারা হলঘরে যেন একটানা জলতরঙ্গ বেজে যায়। হাসির তোড়ে তাঁর সারা শরীর দুলতে থাকে।
সে আকাশপাতাল তোলপাড় করে হাতড়ে হাতড়ে বেড়াতে লাগল। কী নাম তার? বিজন? তারাপদ? অনুপম? নিবারণ? মনে মনে পঞ্চাশ-ষাটটা নাম উচ্চারণ করে যায়। কিন্তু এর মধ্যে একটা নামও কি তাঁর? মনে তো হয় না। খুবই অসহায় বোধ করে সে। (Short Story)
মালিনী বিচিত্র মেয়ে। সে বুঝি বা মুখ দেখে মনের কথা পড়তে পারে। বলল, ‘নামটা খুঁজে পাচ্ছ না বুঝি?’
সে চুপ করে থাকে।
মালিনী বলে, ‘সত্যি, তোমার মতো আশ্চর্য মানুষ আমি আর দেখিনি। তোমার নাম মন্দার-‘
মন্দার? এমন একটা চমৎকার নাম তার?
সে ভাবল মালিনী যখন জোর দিয়ে বলছে তখন তাই হবে। তবু কোথায় যেন খটকা থেকেই যায়। (Short Story)
একটু নীরবতা।

হঠাৎ তার খেয়াল হয় বাড়িটা বড় বেশি নিঝুম। সে এবং ওধারের সোফার তরুণীটি ছাড়া অন্য কারুকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ তার গায়ে কাঁটা দেয়। অজানা ভয়ে, প্রচণ্ড অস্বাচ্ছন্দ্যে। কপালে গলায় দানা দানা ঘাম ফুটে উঠতে থাকে। দ্রুত চারপাশ লক্ষ করে শুষ্ক গলায় বলে, ‘এ বাড়িতে আর কেউ নেই?’ (Short Story)
মালিনী বলল, ‘আনোয়ার হোসেন ছাড়া বাকি কাজের লোকদের আজ ছুটি দিয়েছি।’ সামনের দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন করে, ‘কেন জানো?’
সে মাথা নাড়ে- জানে না।
মালিনী বলে, ‘তুমি আজ আসবে, সেজন্য।’
অফুরান বিস্ময়ে সে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি আজ আসব, আপনি জানতেন?’
মালিনী ধীরে ধীরে একটা আঙুল তার ঠোঁটের ওপর রেখে বলে, ‘না না না, আপনি নয়, আমাকে তো তুমি করে বলে আসছ। নাঃ, আজ তোমার সব গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। তুমি করেই বলবে।’
মালিনী ধীরে ধীরে একটা আঙুল তার ঠোঁটের ওপর রেখে বলে, ‘না না না, আপনি নয়, আমাকে তো তুমি করে বলে আসছ। নাঃ, আজ তোমার সব গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। তুমি করেই বলবে।’
দ্বিধার সুরে সে বলে, ‘আচ্ছা বলব।’ সে টের পায় ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।
মালিনী কী ভেবে হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়। ব্যস্তভাবে বলে, ‘ওই দেখো, তুমি অনেকটা পথ হেঁটে এসেছ। নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। একটু বসো, আমি আসছি।’ সে ডানদিকের একটা ঘরে চলে যায়। খানিক পর যখন ফিরে আসে, তার হাতে মস্ত চায়ের সরঞ্জাম এবং স্তূপাকার খাবার। সোনালি ক’টা প্লেটে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে তার সামনে রাখে। তারপর নিজের হাতে চা তৈরি করে একটা কাপে ঢেলে তাকে দিয়ে নিজেও এক কাপ নেয়। বলে, ‘খাও-‘ (Short Story)
প্লেটগুলো থেকে ভুর ভুর করে সুগন্ধ উঠে আসছিল। এমন সুখাদ্য জীবনে সে কখনও খায়নি, চোখেও দেখেনি। ঘোরের মধ্যে সে খেতে থাকে। মালিনী আলতো করে চায়ে একটা চুমুক দিয়ে বলে, ‘কেন অপেক্ষা করছি এবার বলব। কিন্তু তুমি যা ভুলো তাই আগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল কাশ্মীরে। ডাল লেকে দুটো শিকারায় আমরা কয়েকদিন ছিলাম। তারপর চলে গিয়েছিলাম পহেলগাঁওয়ে। সেখানে লিডার নদীর ধারে দুটো লগ-কেবিনে এক সপ্তাহ কাটিয়েছি। তুমি বঁড়শি দিয়ে ট্রাউট মাছ ধরতে, আমি কাছে বসে থাকতাম। তখন থেকে প্রত্যেক বছর আমরা বেড়াতে যেতাম- সিমলায়, কন্যাকুমারীতে, গোয়া, পণ্ডিচেরি বা কোভালাম বিচে। তুমি, আমি দুজনেই বুঝতে পারছিলাম, আমরা কী চাই। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল আজ আমরা মনের কথাটা বলব। তাই সেই দুপুর থেকে বসে আছি, বসেই আছি। আজ তুমি আমাকে একটা উপহার দেবে, আমিও তোমাকে দেব। তারপর-’ (Short Story)
রুদ্ধশ্বাসে সে জিজ্ঞেস করে, ‘কীসের উপহার?’
মালিনী বলে, ‘তুমি তা জানো। আমার জিনিসটা আনলে তোমার মনে পড়ে যাবে। তার আগে আরেকটু গল্প করি।’
দিশেহারার মতো বসে থাকে সে। মালিনী একাই কথা বলে যায়। মাঝে মাঝে টুকরো টুকরো হাসির ঝলক। একসময় উঠে গিয়ে কিছুক্ষণ পিয়ানো বাজিয়ে ফিরে আসে। তারপর ফের গল্প। (Short Story)
এমন বাজনা আগে কখনও শোনেনি সে।
তার মনে হয়, গল্পে হাসিতে পিয়ানোর জাদুতে একটা মায়াবি পরিবেশ তৈরি করে চলেছে মালিনী। সে একটি কথাও বলে না, শুধু বিভোর হয়ে থাকে।
এমন বাজনা আগে কখনও শোনেনি সে।
তার মনে হয়, গল্পে হাসিতে পিয়ানোর জাদুতে একটা মায়াবি পরিবেশ তৈরি করে চলেছে মালিনী। সে একটি কথাও বলে না, শুধু বিভোর হয়ে থাকে। (Short Story)
কথা বলতে বলতে মালিনীর চোখ হঠাৎ গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের দিকে চলে যায়। এগারোটা বেজে গেছে। সে ফের উঠে পড়ে। বলে, ‘বেশ রাত হয়ে গেল। তোমাকে তো অনেক দূর যেতে হবে। আরেকটু বোসো। আমার জিনিসটা দেখাই।’ সে বাঁ-পাশের ঘর থেকে একটা মখমলের ছোট কৌটো নিয়ে আসে। সেটা খুলতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। একটা বড় হীরে-বসানো আংটি। (Short Story)
মালিনী বলে, ‘এটা কতদিন ধরে তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আমার জন্য তোমারও একটা আংটি আনার কথা। বের করো-’
সে হকচকিয়ে যায়। কখনও কি বলেছে আংটি আনবে। তার মুখটা বড় ম্লান দেখায়। সে বলে, ‘আমি-আমি-‘
মালিনীর বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে। কয়েক লহমা সে তাকে লক্ষ্য করে। তারপর মৃদু ভর্ৎসনার সুরে বলে, ‘আজও নিশ্চয়ই ভুলে গেছ। সত্যি, তোমাকে নিয়ে পারা যায় না। আর কিন্তু দেরি করা যাবে না। বয়স তো বেড়ে যাচ্ছে। পরদিন যখন আসবে, ওটা কিন্তু আনবেই। তোমার আংটি আমাকে পরাবে, আমারটা তোমাকে পরাব।
মালিনীর বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে। কয়েক লহমা সে তাকে লক্ষ্য করে। তারপর মৃদু ভর্ৎসনার সুরে বলে, ‘আজও নিশ্চয়ই ভুলে গেছ। সত্যি, তোমাকে নিয়ে পারা যায় না। আর কিন্তু দেরি করা যাবে না। বয়স তো বেড়ে যাচ্ছে। পরদিন যখন আসবে, ওটা কিন্তু আনবেই। তোমার আংটি আমাকে পরাবে, আমারটা তোমাকে পরাব। তবেই না-‘ (Short Story)
এই নারীকে একটা আংটি তো সামান্য জিনিস, সারা পৃথিবীর সমস্ত কিছু এর হাতে তুলে দেওয়া যায়। গভীর আবেগে সে বলে, ‘আনব।’ (Short Story)
‘আজ তাহলে এসো-‘
মালিনী তাকে সিঁড়ির মুখে নিয়ে আসে। সেখানে দাঁড়িয়ে ডাকে, ‘আনোয়ার’
একতলার হলঘরে কোথায় ছিল আনোয়ার হোসেন, কে জানে। সে তক্ষুনি সাড়া দেয়, ‘জি’-পরক্ষণে তাকে দেখা যায়, সিঁড়ির নীচে এসে দাঁড়িয়েছে।
মালিনী বলে, ‘সাহেবকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে এসো।’ (Short Story)
‘জি-নীচে নেমে একবার ফিরে তাকায় সে। অনেক উঁচুতে মালিনী অলৌকিক কোনও ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে আনোয়ারের সঙ্গে সে প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে আসে।
একটা সাদা ফিটনে ধবধবে সতেজ ঘোড়া জুতে রাখা হয়েছে। প্রাণীটার গা থেকে তেল যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। আনোয়ার বলল, ‘উঠিয়ে হুজুর’। (Short Story)
নিঃশব্দে উঠে পড়ে সে। ততক্ষণে আনোয়ারও কোচোয়ানের সিটে উঠে পড়েছে। লাগাম ধরে সামান্য টানতেই ফিটন প্রাসাদের মতো বাড়ির গেট পেরিয়ে রাস্তায় চলে আসে। যাকে সে দারোয়ান ভেবেছিল, আসলে সে কোচোয়ান। (Short Story)

সন্ধে নামার মুখে সে যখন এই এলাকায় এসেছিল, চারিদিক তখন নিঝুম। এই মধ্যরাতে তা যেন ঘুমের আরকে পুরোপুরি ডুবে আছে। রাস্তায় আসতেই ঘোড়াটার কাঁধে যেন দুই ডানা জুড়ে গিয়েছিল। সেটা উড়ে চলেছে। অশ্বক্ষুরের ধ্বনি ছাড়া এখন সমস্ত চরাচরে কোথাও কোনও শব্দ নেই। ফিটনের নরম গদিতে বসে থাকতে থাকতে তার মনে হয় এক অলৌকিক উড়ানে চড়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে চলেছে। (Short Story)
অনেকটা দৌড়ের পর ফিটনটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। ওপর থেকে নেমে এসে আনোয়ার হোসেন বলে, ‘হুজুর, এই এলাকার বাইরে আমার আর যাওয়ার হুকুম নেই। মেহেরবানি করে নামুন।’
সে নেমে পড়ে। আনোয়ার সেলাম ঠুকে ফের উঠে পড়ে; ফিটনের মুখ ঘুরিয়ে ফিরে যায়। ঘোড়ার পায়ের শব্দ একসময় দূরে, আরও দূরে আলোয় আঁধারে মেশা একটা বাঁকের আড়ালে মিলিয়ে যায়।
সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সেই অঞ্চলটা ভারি নির্জন। সম্পূর্ণ অজানা। কোনদিকে যেতে হবে বুঝতে পারছে না। তবু দিগ্ভ্রান্তের মতো সামনের দিকে পা বাড়ায়।
সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সেই অঞ্চলটা ভারি নির্জন। সম্পূর্ণ অজানা। কোনদিকে যেতে হবে বুঝতে পারছে না। তবু দিগ্ভ্রান্তের মতো সামনের দিকে পা বাড়ায়।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর সে যেখানে আসে সেই জায়গাটায় প্রচুর আলো। এই মাঝরাতেও বেশ লোকজন দেখা যাচ্ছে, রয়েছে লম্বা লম্বা টিনের বাক্সমতো ঝরঝরে প্রাইভেট বাস। মিনিবাস। বেশ কিছু অটোরিকশাও। রাস্তা খানাখন্দে ভরা; এধারে-ওধারে জঞ্জালের পাহাড়। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ উঠে আসছে। (Short Story)
লহমায় তার হারানো স্মৃতি ফিরে আসে। এই তো আজন্মের চেনা কলকাতা। মনে পড়ে তার নাম নরেশ সরকার। খুব সাদামাটা নাম। বয়স সাঁইত্রিশ। রোগাটে চেহারা। গায়ের চামড়া রুক্ষ এবং ফ্যাকাসে। চুল উঠে উঠে মাথার মাঝখানটা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। কণ্ঠের হাড় গজালের মতো ঠেলে বেরিয়ে পড়েছে। চওড়া ঢিবির মতো কপালে কত যে ভাঁজ। জীবনযুদ্ধ বলে একটা জমকালো শব্দ আছে। তার চিরস্থায়ী ছাপ নরেশের সর্বাঙ্গে। পরনে খেলো কাপড়ের ঢলঢলে ফুলপ্যান্ট আর রং-জ্বলে-যাওয়া কোঁচকানো মোচকানো শার্ট। পায়ে সস্তা চপ্পল। (Short Story)
“কিন্তু সেদিনের অলৌকিক রাত্রির পর সে যেন এক রূপকথার পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে। সপ্তাহের অন্যদিন সময় হয় না। কিন্তু শনিবার একবেলা ডিউটি দেওয়ার পর এবং রবিবার আচ্ছন্নের মতো সেই নিঝুম এলাকায় প্রাসাদটিকে খুঁজে বেড়ায়।”
নরেশের মনে পড়ল, সে গোল্ডেন রোডওয়েজ কোম্পানির বুকিং ক্লার্ক। তারা কলকাতা থেকে ট্রাক বোঝাই করে দেশের নানাপ্রান্তে মাল পাঠায়। সকাল ন’টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা অব্দি ঘাড় গুঁজে তাকে ডিউটি দিতে হয়। মাসের শেষে সব কেটেকুটে হাতে পায় আট হাজার তিনশো ষাট টাকা। তবে ডিউটির পর সপ্তাহে পাঁচদিন ওভারটাইম আছে। তাতেও বেশ কিছু উপরি রোজগার হয়। শনিবার তার হাফ ডে, রবিবার পুরো ছুটি। (Short Story)
নরেশের মনে পড়ে, তাদের ফ্যামিলিতে সবসুদ্ধ ছ’জন মানুষ। তাকে বাদ দিলে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। পুরো সংসারের বোঝা বয়ে বয়ে সে সাঁইত্রিশ বছরেই বুড়িয়ে গেছে; তার শিরদাঁড়া ক্রমশ নুয়ে পড়ছে। সে একজন ধ্বস্ত, বিপন্ন, ভয়বাহী মানুষ। মনে পড়ল তারা থাকে টালিগঞ্জে আদ্যিকালের একটা পাড়ায়, বাহান্ন পাকের এক গলিতে। পাঁচঘর ভাড়াটের সঙ্গে একটা সেকেলে আস্তরণ-খসা ভাঙাচোরা বাড়িতে। (Short Story)
একটা বাস ধরে সে যখন টালিগঞ্জে ফিরে এল, গলির কটা কুকুর ছাড়া আর কেউ বাবা, মা, এক বেকার ভাই, এক বিধবা দিদি এবং তার ছেলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর দিদিকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাবা শ্বাসকষ্টের রোগী, মা জেগে নেই। (Short Story)
নরেশ ফিরে গেছে তার অভ্যস্ত জীবনযাপনে। বাসে ঝুলতে ঝুলতে বা পাতালরেলের ঠাসা ভিড়ে বেঁকে দুমড়ে অফিস যাওয়া, ধুঁকতে ধুকতে ফিরে আসা। এতকাল প্রতিটিদিনে তার আয়ু এক মাস করে ক্ষয়ে যেত।
নরেশ ফিরে গেছে তার অভ্যস্ত জীবনযাপনে। বাসে ঝুলতে ঝুলতে বা পাতালরেলের ঠাসা ভিড়ে বেঁকে দুমড়ে অফিস যাওয়া, ধুঁকতে ধুকতে ফিরে আসা। এতকাল প্রতিটিদিনে তার আয়ু এক মাস করে ক্ষয়ে যেত। (Short Story)
কিন্তু সেদিনের অলৌকিক রাত্রির পর সে যেন এক রূপকথার পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে। সপ্তাহের অন্যদিন সময় হয় না। কিন্তু শনিবার একবেলা ডিউটি দেওয়ার পর এবং রবিবার আচ্ছন্নের মতো সেই নিঝুম এলাকায় প্রাসাদটিকে খুঁজে বেড়ায়। (Short Story)
খুঁজতে খুঁজতে নরেশের বয়স বাড়ে, চুলে পাক ধরে, মেরুদণ্ড নুয়ে পড়ে, ক্লান্তিতে শরীর আরও ধ্বসে যায়, কিন্তু সে যা চায় তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারে না। (Short Story)
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে একদিন তার মনে হয়, তাদের মতো ধ্বস্ত পুরুষদের আকাঙ্ক্ষার কোনও গোপন কুঠুরিতে ওইরকম একটা সৌধ, গোলাপবাগান, বিপুল ঐশ্বর্য আর পরমাশ্চর্য এক নারী থাকে। চকিতের জন্য একবার দেখা দিয়েই তারা চিরকালের মতো বিলীন হয়ে যায়। (Short Story)
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
গল্পটি ‘ত্রিধারা’ শারদীয়ায় পূর্ব প্রকাশিত।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।